অভিজিৎ রায়কে হারাবার পর ছ’বছর চলে গেল । এ শোক কোনোদিন হয়ত ঘুঁচবে না, তবু এইটি সত্যি যে মানব সভ্যতা এগিয়েছে বহু ত্যাগ ও আত্মদানে। রক্ত নিয়েছে মূল্য হিসেবে, ইতিহাস সাক্ষী। অগ্রগতির জন্য রক্ত দিয়েছে সম্মুখ সারির সচেতন যোদ্ধারা আর এর সুফলকে ভোগ উপভোগ করেছে বাকি সবাই। আবার এ’ও সত্যি যে শাসক শোষক আর তাদের দালালরা এগিয়ে যাওয়াকে ঘৃণা করে, শুধু তারাই আলাদা হয়ে সুখে থাকতে চায়। নাগরিকের সত্যিকার সুখ শান্তি জ্ঞান বা অধিকার নিয়ে ওদের মাথাব্যথা নেই। ওরা সব সময়ই চেয়েছে নাগরিককে বোকা বানিয়ে তাদের শুষে খেতে। ওদের প্রিয় অস্ত্র, ধর্মাস্ত্র। পেশীভয় ধর্মভয় আর প্রতারণা সব কালেই করেছে শাসকেরা, আমাদের দেশে তো বটেই। ওদের যত ভয় তার সবটাই হল সচেতন, জ্ঞানী অথবা শিক্ষিত নাগরিকদের নিয়ে কারণ এমনি হলে মানুষ যে ন্যায় বিচার, নাগরিক অধিকার, সাম্য দাবি করবে। এমন তো হতে দেওয়া যায় না। মানুষের এগিয়ে যাওয়া দেখলে ভয় পেয়ে যায় যত শাসক শোষক আর তাদের দালালরা আর তাই ওরা থামিয়ে দিতে চায় অগ্রসর যুক্তিবাদী মুক্তমনের মানুষদের। দরকার হলে খুন করে বা খুন করায় তাঁদেরকে থামিয়ে দিয়ে। ওদের সহ্য হয় না জ্ঞানবিজ্ঞান, সহ্য হয় না মানবাধিকার, অসহ্য লাগে নাগরিক অধিকারের দাবি, সহ্য হয় না এগিয়ে যাবার কিংবা মুক্তির আলোতে পথ দেখাবার মানুষদেরকে।

অভিজিৎ রায়’এর মৃত্যুতে উল্লাস করেছিল বাংলাদেশের অনেক মানুষ। মানুষের মৃত্যুতে উল্লাস করবার কিছু নেই। শাসক শোষক ও তাদের দালালদের নিয়ে তৈরী সম্মিলিত প্রতারক চক্র, নাগরিকদের ঠেলে দেয় এবং দিয়েছে আঁধারে ও অজ্ঞতায়। মানুষগুলোকে সরবরাহ করেছে ধর্মের আফিম। জ্ঞানার্জন শিক্ষা ও মানবাধিকারকে তারা করেছে কলঙ্কিত। আলোকিত মানুষদের দিয়েছে বিদ্রোহী, নাস্তিক অথবা গণশত্রুর পরিচয়। শিক্ষকদের রূপান্তরিত করেছে ধর্ম-হুজুরে। জ্ঞানচর্চায় টেনেছে সীমা আর নিজেদের স্পর্ধাকে করেছে অসীম। এ যেন দ্রুত গতিতে পেছন পানে ছুটে চলা। এ যেন এই আধুনিক যুগেও জিওর্দানো ব্রুনোকে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে মারা। ব্রুনো পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণার বিরোধিতা করেছিলেন, যা আজ বৈজ্ঞানিক সত্য। সেই সময় সেখানকার ধর্ম বই ও বোধ, যা ছিল শাসকের প্রিয় ধর্মাস্ত্র, সেই বাইবেলের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল সেই সত্য, তাই ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল ওরা। ওদের সেই ধর্ম বই আজও বদলায় নি, অথচ আজ সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বদলে গেছে সময়। ধর্ম-দালালরা ভেবেছিলো ব্রুনোকে পুড়িয়ে মেরেই সূর্যকে ঘোরানো যাবে পৃথিবীর চারদিকে, বেঁচে থাকবে ধর্মের বাণী ও কুসংস্কার, তা হয়নি। সত্যিটাই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এই প্রতিষ্ঠাকে দেরি করিয়ে দিয়েছে সেই শাসক শোষক আর তাদের দালালরা, সম্মিলিত প্রতারকেরা, কিন্তু থামিয়ে দিতে পারেনি এগিয়ে যাওয়া। সত্য নিজেই উদ্ভাসিত হয়েছে আপন আলোয়। আমাদেরকেও, আমাদের জন্মভূমিকেও থামিয়ে দিতে পারবে না ছদ্মবেশী প্রতারক চক্র। সত্যের হবেই জয়।

সত্যের সন্ধানী অভিজিৎ রায়’এর মৃত্যুতে যারা সেই চেনা পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছিল, তারা যেন না ভাবে যে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করলেই পৌরাণিক কল্পকথাগুলোকে সত্য হয়ে উঠবে, থামিয়ে দেয়া যাবে জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসারকে, উপেক্ষা করা যাবে প্রগতির আহ্ববানকে। এমনটা অতীতে যেমন সম্ভব হয়নি, বর্তমান ও ভবিষ্যতেও তা হবেনা।

অভিজিৎ রায় নক্ষত্র হয়ে জ্বলজ্বল করবে অনন্ত আকাশে, অসীম হয়ে। আজ থেকে লক্ষ বছর পরেও মানুষ সেদিকে তাকিয়ে গর্ব করে বলবে, লক্ষ্যে আমরা ঠিক রয়েছি, আমরা এগিয়েছি, অভিজিৎ’দের মত পথ দেখাবার নক্ষত্ররা কখনো ছিল বলেই।

 

  বিজ্ঞান, যুক্তি, ধর্ম, ইতিহাস, বিবর্তন ও সমাজচিন্তা নিয়ে রচিত অভিজিৎ রায়ের ই-বই ও কিছু মুক্তমনা কার্যক্রমের লিংক 

ই-বই গ্রন্থাগার হিসেবে অভিজিৎ ও অন্যান্য মুক্তমনা লেখকদের লেখা কিছু বইয়ের লিঙ্ক

এখানে ক্লিক করলে দেখা যাবে

 

অভিজিৎ’কে নিয়ে আলাদা একটি পাতা

এখানে ক্লিক করলে দেখা যাবে

 

বিবর্তন নিয়ে কিছু লেখা

এখানে ক্লিক করলে দেখা যাবে

 

বেশ পুরোনো লেখা ও লেখকেরা,

এখানে ক্লিক করলে দেখা যাবে

 

মুক্তচিন্তার উপর আক্রমণ ও হত্যা সম্পর্কিত কিছু লিঙ্ক

এখানে ক্লিক করলে দেখা যাবে

 

ইংরেজি ব্লগ লিঙ্ক

এখানে ক্লিক করলে দেখা যাবে