ধর্ষণ ইস্যুতে ‘ব্যাটল অফ হাররা’ এর প্রসঙ্গ আবারও সামনে এসেছে। যদিও এর নাম হওয়া উচিত ‘ট্রাজেডি অফ হাররা’। ইসলামপন্থীরা সবসময় বলতে চেষ্টা করেন-ধর্ষণের কারণ হল নারীর পোশাক ও পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসন। এটি কেউ অস্বীকার করছে না যে- বিভিন্ন নাটক, সিনেমায় নারীকে শুধু ভোগ্যপণ্য হিসেবে উপস্থাপন করছে। কিন্তু ধর্ষণকে যারা এই যুগের ফসল হিসেবে উপস্থাপন করে তারা হয়তো নির্বোধ কিংবা মিথ্যা বলছে। কারণ পতিতাবৃত্তির মতন ধর্ষণও পৃথিবীর প্রাচীন এক ঘটনা যা মানব সভ্যতার সাথে জড়িয়ে আছে। তো, ইসলামপন্থীরা যেহেতু ধর্ষণকে শুধু এই যুগের ফসল হিসেবে দেখেন সেহেতু তাদেরকে ‘ব্যাটল অফ হাররা’র ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। ধর্ষণের সাথে পোশাকের সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে ক্ষমতার।এই যুদ্ধে ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে ইসলামের প্রথম দিকের মুসলিম নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যারা ছিলেন অনেক সাহাবির স্ত্রী-কন্যা। এসব সাহাবিদের অনেকে নবী মুহাম্মদের পেছনে দাঁড়িয়েও নামাজ পড়েছেন। তাহলে প্রশ্ন আসে ধর্ষণ যদি শুধু এই যুগের ফসল হয় কিংবা কাপড়ের কারণে শুধু এই অপরাধ সংঘটিত হয় তাহলে সাহাবিদের নারীরা নির্যাতনের শিকার হলো কেন? তারা আজকের পশ্চিমা পোশাক পরে চলাফেরা করতো? অনেকে হয়তো এটাকে শিয়া ইতিহাস হিসেবে বাতিল করতে চাইবেন কিন্তু সেটাও সুযোগ নেই। কারণ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ” প্রখ্যাত মুফাসসির ও ইতিহাসবেত্তা আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ) প্রণীত একটি সুবৃহৎ ইতিহাস গ্রন্থে এই ঘটনার বিশদ বিবরণ আছে (৮ম খণ্ডের ৪০২ থেকে ৪১২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত )। পাঠকদের জন্যে পৃষ্ঠাগুলো তুলে দেওয়া হল।
এই যুদ্ধ হয়েছিল ঐতিহাসিক কারবালার ঘটনার পরে। ১০ মহরমে কারবালা নামক স্থানে নবী পরিবারের ৭২ জন খুন হোন। যাদের অধিকাংশই ছিল নারী ও শিশু। শিশু পুত্র আলী আজগরকে কোলে নিয়ে যখন তার প্রাণ বাঁচানোর জন্যে সামান্য পানি প্রার্থনা করা হচ্ছিল তখন একটি তীর শিশু বক্ষকে ছেদ করে। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, নবী মুহাম্মদের নাতী শেরে খোদা আলীর পুত্র হোসেনকে যখন ঘিরে ধরা হয় তখন সেই সৈন্যদের মাঝে বহু হাফেজ জুব্বাধারী, লম্বা চুল ও পাগড়ীধারী সৈন্যও ছিল। আর তাদের সেনাপতি সা’দ ছিলেন মোফাচ্ছিরে কোরান। সেই স্থানে আনুষ্ঠানিক নামাজিরাও ছিল যারা বলেছিল-তাড়াতাড়ি হোসেন এর শিরশ্ছেদ করতে হবে যেন আছরের নামাজ কাজা না হয়।
‘ব্যাটল অফ হাররা’র ঘটনায় সংগঠিত হয় মক্কা ও মদিনা, যা ইসলামের পুণ্যভূমি হিসেবে খ্যাত। আর সেখানেই ইয়াজিদের বাহিনী ধর্ষণ, খুন, উৎপীড়নের মতন ঘটনা সংঘটিত করে। সাহাবি, কোরানের হাফেজ কেউই ইয়াজিদ বাহিনীর তলোয়ারের আঘাত থেকে বাদ যায়নি। এই যুদ্ধে ধর্ষণের জন্ম নেয় এক হাজারের বেশি শিশু, যাদেরকে ইতিহাসে ‘হাররা বিদ্রোহের সন্তান’বলে উল্লেখ করা হত। মাদায়িনী (রা) আবু কুবরা ও হিশাম ইবন হাসান হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন; হাররার ঘটনার পর স্বামী ব্যতীত এক হাজার মহিলা মদীনায় গর্ভবতী হয়েছিল।
ইয়াজিদ তিনদিনের জন্যে মদিনাকে লুটপাটের জন্যে হালাল ঘোষণা করল। আর তাতেই মদিনাবাসীর জীবনে নেমে আসে জুলুম আর অত্যাচার। মুয়াবিয়ার পুত্র স্বৈরাচারী ইয়াজিদের একটি কবিতা খুব আলোচিত! তিনি লিখেছেন;
”হাশিমীরা রাজত্ব নিয়ে যেন তামাশা করেছিল
তার কাছে কোন প্রকাশ ফিরিশতা আসেনি
এবং কোন বাণীও নাজিল হয়নি।“
প্রসঙ্গিক লেখা:
ইসলামের রক্তাক্ত লড়াই ও কাবা ভাঙার ইতিহাস
হোসেনী ব্রাহ্মণ’ সম্প্রদায়ের মিথ ও বাস্তবতা
Leave A Comment