হেরমান গোয়েরিং ছিলেন প্রভাবশালী নাৎসি অফিসার ও যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের সম্মুখীন হন। অন্যদিকে তারই আপন ভাই আলর্বাট গোয়ারিং ছিলেন নাৎসি বিরোধী কার্যক্রমের একজন সক্রিয় সদস্য। একই মায়ের পেটের ভাই হওয়া সত্ত্বেও দুইজনের চিন্তাধারা ছিল দুই মেরুতে। আলর্বাট তার পারিবারিক নামের কারণে (Göring ছিল তাদের পারিবারিক টাইটেল) দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর জার্মানিতে কোন স্বীকৃতি ছাড়াই মারা যান।
হেরমান ভন এপেনস্টেইন ছিল হাফ-ইহুদি। তিনি সম্পর্কে চাচা বা মামা হতেন। ছবিতে হেরমান গোয়েরিং বামে দাঁড়িয়ে আছে আর ছোট ভাই আলর্বাট ছবির মাঝে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হেরমান গোয়েরিং ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ নাজি নেতাদের একজন। পরবর্তীতে মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্যে তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। কিন্তু ফাঁসি কার্যকর করার কয়েক ঘণ্টা পূরে সে আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে আপন ছোট ভাই নাৎসি বিরোধী কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন, যিনি যুদ্ধের সময় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে হাজারো ইহুদির জীবন বাঁচিয়েছিলেন। যদিও যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ভাইয়ের কারণে তাকেও গ্রেফতার করে জেলে নিক্ষেপ করা হয়। মানুষ ধরেই নিয়েছিল যে- ভাই যেহেতু নাৎসি অফিসার সেহেতু ছোট ভাই এর বিপরীত হবে না।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হেরমান গোয়েরিং বৈমানিক হিসেবে জার্মান বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তিনি তার মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দেন, যা তাকে জার্মান সমাজে খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা এনে দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ২২টি ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করেন।
“রেড ব্যারন” ছিল ম্যানফ্রেড ভন রিচটোফেনের ডাক নাম। যিনি ২৫ বছর বয়সে যুদ্ধের ময়দানে মারা যান। উনি জার্মান বিমান বাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন। শুধু একদিনে তিনি ২২টি ব্রিটিশ বিমান ভূপাতিত করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি মোট ৮০টি বিমান ভূপাতিত করেন। হেরমান গোয়েরিং তার দলের সদস্য ছিলেন। রেড ব্যারন যুদ্ধ মারা যাওয়ার পর তার জায়গায় হেরমান গোয়েরিং কাজ করেন। (রেড ব্যারনও জার্মানির সবচেয়ে দামী ও সম্মানজনক সামরিক পুরষ্কার Pour le Mérite লাভ করেন। Pour le Mérite প্রথম দেওয়া হয় ১৭৪০ সালে আর শেষ বার দেওয়া হয় ১৯১৮ তে।) এখানে মূল প্রবন্ধের বাহিরে একটি বাড়তি তথ্য দিয়ে রাখি; আমেরিকায় “রেড ব্যারন” এর নামে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় পিজা ব্র্যান্ড রয়েছে। মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাহসী যোদ্ধা ম্যানফ্রেড ভন রিচটোফেনের এর ডাক নাম থেকেই এটি নিয়েছে। যদিও অফিশিয়ালি তারা কখনো এটি স্বীকার করে নাই।
হেরমান গোয়েরিং এর ছোট ভাই আলবার্ট প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইম্পেরিয়াল জার্মান সেনাবাহিনীতে সিগন্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। আলবার্ট প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আহত হন। খুব খারাপ ভাবে তার পেটে গুলি লাগে। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে এই গুলি লাগার কারণ ছিল অজানা।
পিতা হেইরিখ (Heinrich Ernst Göring) ছিলেন পেশায় একজন কূটনৈতিক, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার (বর্তমানে নামিবিয়াতে) জার্মান সরকারের অধীনে কাজ করতেন এবং হাইতিতে জার্মান কন্সুল জেনারেল হিসেবে কাজ করতেন।
পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে আলবার্ট ছিলেন সবচেয়ে সর্বকনিষ্ঠ। কাজের কারণে পিতা খুব কমই সময়ে বাড়িতে থাকতেন। আলবার্টের জন্মের এক বছর আগে তার পিতার সাথে তার মায়ের পরিচয় হয়। আলবার্টদের পিতা মারা যান ১৯১৩ সালে।
স্টকহোমের পত্রিকা থেকে, ২২ অক্টোবর ১৯৫৮
১৯২৩ সালের ৮-৯ ই নভেম্বর, অ্যাডলফ হিটলার এবং নাজি পার্টি তৎকালীন জার্মান সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টায় চালায়। এই চেষ্টা করা অভ্যুত্থানটি “বিয়ার হল পুশ (Beer Hall Putsch)” নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। তারা শুরু করেছিল মিউনিখের বাভেরিয়ান শহরের বার্গারব্রু কেলার, এক বিয়ার হল থেকে। সে কর্মসূচীতে হেরমান বাজে ভাবে আহত হন। এরপর হেরমান গোয়েরিং তার সুইডিশ স্ত্রীর সাথে সুইডেনে চলে আসেন। হেরমান মরফিনে আসক্ত হয়ে পড়েন কিন্তু সুইডিশ মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন এবং পরবর্তীতে তিনি জার্মানি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জার্মানিতে ফিরে গিয়ে তিনি নাজি দলে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে আলবার্ট ভিন্ন রকম ক্যারিয়ার গড়ায় মনোযোগ দেন। প্রথমে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জার্মানির জাংকারস (Junkers) কোম্পানিতে চাকরি করেন, পরবর্তীতে সিনেমা ও অস্ত্র-যন্ত্র কারখানাতেও কাজ করেন। নারীদের উন্নত জীবন গড়তে তিনি নারীদের ট্রেডমিলে কাজ করতে উৎসাহ সৃষ্টি করেন। নিজের আপন ভাইয়ের থেকে তার চিন্তার কতোটুকু পার্থক্য ছিল তা এভাবে স্পষ্ট।
আলবার্ট হিটলারকে ঘৃণা করতে, নাজিদের ঘৃণা করতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতার কারণে সহিংসতাকেও ঘৃণা করতেন। এই কারণে তিনি তার ইহুদি বন্ধুদের সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। আলবার্ট নাজি দলে যোগ দেবেন না তা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন আর এই কারণে তিনি অস্ট্রিয়ায় এসে সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে জার্মানি অস্ট্রিয়ার অ্যাস্ক্লাস অভিযান চালায়। অন্যদিকে ভিয়েনায় ইহুদিদের উপর অত্যাচার শুরু করে। একবার যখন জার্মানির এসএস সৈন্যরা রাস্তায় একদল ইহুদিকে কিল, ঘুষি মারছিল তখন আলবার্ট ইহুদিদের বাঁচাতে সেখানে ছুটি যান। এসএস সৈন্যরা তার আইডি কার্ড চেক করে এবং আইডি কার্ডে পরিবারের টাইটেল (Göring) দেখে ইহুদিদের সেবারের মতন ছেড়ে দেয়। কারণ তার নাজি ভাই একই পরিবারের টাইটেল ব্যবহার করতেন।
আলবার্ট অস্ট্রিয়ার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন এবং দ্রুত এর উন্নতি সাধন করেন। কিন্তু জার্মানি অস্ট্রিয়ার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিও দখলে নিয়ে নেয়। তাই ১৯৩৮ সালের দিকে ইতালির টোবিস ইতালিনো’তে (Tobis-Italiano) কোম্পানিতে যোগ দিতে তিনি রোমে চলে যান। তার শহর ত্যাগের একমাত্র কারণ ছিল জার্মান নাজিদের নিয়ন্ত্রিত সংস্থাতে কাজ না করার অনীহা।
রোমে আলবার্টের সাথে এক ইহুদি ডাক্তারের পরিচয় হয়, যার নাম ছিল লাজলো কোভাকস। আলবার্টের প্রথম স্ত্রী এরনার (পরে বিচ্ছেদ হয়) চিকিৎসার বদৌলতে তাদের সাক্ষাৎ হয়। ডাক্তার কোভাকস ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন, অন্যদিকে জার্মান আলবার্টের স্ত্রী’কে চিকিৎসা করানোর বিষয়েও কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন কিন্তু খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। আলবার্ট সুইজারল্যান্ডের বার্নে “ওরেলি ব্যাংক”কে একটি অ্যাকাউন্ট খুললেন, যেন যেখান থেকে ডাক্তার কোভাকস খুব সহজেই টাকা তুলতে পারেন। এবং সেই টাকা দিয়ে তারা ইহুদি শরণার্থীদের পর্তুগালের লিসবস দিয়ে পালাতে সাহায্য করতেন। আলবার্ট কখনো টাকা খরচের রশিদ কিংবা কারা যাচ্ছে কীভাবে যাচ্ছে এসবের নথি ডাক্তার বন্ধুর কাছে দেখতে চাননি।
শুধু তাই নয়, আলবার্ট তার নিজের প্রাক্তন বসকেও পরিবারসহ পালাতে সাহায্য করেন। তার নাম ছিল ওসকার পিলজার (Oskar Pilzer)। তিনি ছিলেন একজন ইহুদি সিনেমা পরিচালক। ওসকার কে গ্রেফতার পর আলবার্ট তার পুরাতন বন্ধু স্কাউট দলের প্রধান ডাক্তার জোসেফকে (Josef Charvát) ওসকারের মুক্তির ব্যাপারে একখানা চিঠি লেখেন। কিন্তু চিঠির শেষে তার পুরো নাম লেখার বদলে শুধু গোয়েরিং (Göring) লেখেন। আর চিঠিতে এই টাইটেল দেখে তিনি ভয় পেয়ে ওসকারকে তাৎক্ষনিক মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এভাবে চিঠির মাধ্যমে কমিউনিস্ট আন্দোলনে জড়িত এক ডাক্তারকেও তিনি নাজিদের থেকে মুক্ত করেন।
তবে ভাইয়ের নাজি বিরোধী অবস্থা ও কার্যকলাপ থাকা সত্ত্বেও বড় ভাই হেরমান গোয়েরিং তার ছোট ভাইয়ের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখেন। যতদূর জানা যায়, আলবার্টকে হেরমান কখনো থামানোর চেষ্টা করেননি। কিন্তু আলবার্টের কারণে নিজে সমস্যা পড়তে পারেন এর জন্যে আলবার্টকে সতর্ক করেছিলেন। তবে ভাইয়ের কারণে গোয়েবেলস (Joseph Goebbels) এর মতন অফিসার আলবার্টকে বলেছিল কোন কিছুর প্রয়োজন হলে সে যেন তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে, তার ভাইয়ের মারফতে যোগাযোগ করার প্রয়োজন নেই।
আলবার্ট স্কোদা কোম্পানিতে রপ্তানি ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছিলেন। যারা কিনা জার্মানদের জন্যে অস্ত্র ও গাড়ির যাবতীয় সরঞ্জাম রপ্তানি করতো। এমনকি কারখানায় নাৎসি বিরোধীদের আক্রমণ ও কর্মকাণ্ড কখনো থামানোর চেষ্টা করেননি। উল্টো পাশের শ্রম শিবির থেকে অনেক শ্রমিককে কাজের কথা বলে তিনি নিয়ে আসেন যদিও তার মূল উদ্দেশ্য ছিল শ্রম শিবির বা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে এদের নিয়ে এসে পার্বত্য অঞ্চলে মুক্ত করে দেওয়া। এভাবে তিনি ইতালি,রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, বেলজিয়ামের অসংখ্য ইহুদিদের মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন।
ইহুদি ব্যবসায়ী অ্যালবার্ট বেনপাসাতের পুত্র জ্যাকুইস বেসপাসাত ছিলেন অনেকের মধ্যে একজন, যাকে আলবার্ট নাজিদের থেকে রক্ষা করেছিলেন। যুদ্ধের অনেক পরে জ্যাকুইস বলেছিল; একদিন সে এবং আলবার্ট ভিয়েনায় এক সাথে বসে পিয়ানো বাজিয়ে গান গাচ্ছিল। এমন সময় বাহির থেকে আরও দুই জার্মানের গান গাওয়ার শব্দ তাদের কানে আসে। কারা গান গাচ্ছেন তা দেখার জন্যে আলবার্ট বারান্দায় যান। গিয়ে দেখেন পাশের বারান্দায় দুই জন জার্মান অফিসার বসে আছেন। তারা আলবার্টকে জিজ্ঞেস করেন; তোমরা কারা আর তোমাদের নাম কী? জবাবে, আলবার্ট নিজের পুরোনাম বলেন। সম্পর্কে তারা কী হয় এই প্রশ্নের জবাব আলবার্ট বলেন; ও (ইহুদি বন্ধুটি) আমার ভাই। এই কথার পর জার্মান অফিসরা Heil Hitler বলে মদের তুলে ধরেন অন্যদিকে প্রতি উত্তরে আলবার্ট বলেন; “Kiss me in the ass”।
আলবার্টের পারিবারিক নামের কারণে যুদ্ধের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। কেউ সহজে বিশ্বাস করতে চায়নি তিনি হাজারো ইহুদিদের জীবন বাঁচিয়েছেন যেখানে তার আপন ভাই এতো বড় নাৎসি অফিসার। ওসকার পিলজারের ছেলে জর্জ পিলজার আলবার্টকে “অনৈতিক যুগের এক নৈতিক মানুষ” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
কাজের স্বীকৃতি ছাড়াই মৃত্যু
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাকে গ্রেফতার করে মুক্তি দেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় আবার গ্রেফতার করে প্রাগের কুখ্যাত জেলখানায় পাঠানো হয়! যুদ্ধের সময় সাধারণত জার্মান এসএস (SS) বাহিনী এই জেলখানাকে সেলকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতো। তাকে সেখানে নির্মমভাবে প্রহার ও আদালতের মৃত্যুদণ্ডে ভয় দেখানো হয়। ৬ নভেম্বর ১৯৪৬ সালে, তাকে কোর্টে হাজির করা হয়। যেখানে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ৭৩৭ জনের ফাঁসির আদেশ এবং ৪৫৫ জনের যাবতজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, চেক রিপাবলিকের স্কোদা কোম্পানির শ্রমিকরা সরাসরি সরকারের পক্ষে যোগ দেয় অথচ এরা সবাই আলবার্টের কাছে ঋণী ছিল। অস্ট্রিয়ার সিনেমা পরিচালক, প্রযোজক এবং চিত্রনাট্যকার আর্নস্ট নিউবাচ (Ernst Neubach) আক্ষেপ করে লেখেন; আমরা, তার বন্ধুরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে গ্রাগের মানুষজন কী সহজে ভুলে গেল; আলবার্ট তাদের কারখানার শ্রমিকদের জন্যে কী উপকারটা করেছিলেন।
যুদ্ধের পর আলবার্ট গোয়েরিং জার্মানিতে ফিরে আসেন। কিন্তু তার পারিবারিক টাইটেল ‘গোয়েরিং’ এর কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন। আলবার্ট শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন কিন্তু তার পারিবারিক কুখ্যাতির জন্যে পেনশন পেতেন খুবই কম। জেনে রাখা ভাল, নাৎসি অফিসার ও তাদের পরিবারের কেউ সরকারী ভাতা ও কোন সরকার সাহায্য পায়নি। ১৯৬৬ সালে ৭১ বছর বয়সে আলবার্ট গোয়েরিং মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর এক সপ্তাহ পূর্বে তিনি তার গৃহকর্মী ব্রুনহিলদে কে বিয়ে করেন। কারণ আলবার্ট চেয়েছিলেন মৃত্যুর পর ব্রুনহিলদে অন্তত বিধবা পেনশনটা যেন পান। নাজি বিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত থেকেও আলবার্ট জীবিত অবস্থায় কোন সরকারী স্বীকৃত পাননি।
আলবার্ট গোয়েরিং শত শত, হতে পারে হাজারো ইহুদির জীবন বাঁচিয়েছেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার এই অবদান মানুষ খুব দ্রুত ভুলে গিয়েছিল। যখন হাজার হাজার অস্ট্রিয়ান জার্মান সৈন্যদের আগমনকে স্বাগত জানাতে রাস্তায় নেমেছিল, তখনও আলবার্ট তার অফিসের রুমে বসে ছিলেন।
আলবার্ট অন্যান্য কর্মকর্তা কিংবা ব্যবসায়ীর মতন নিজের রুমে কখনো হিটলারের কোন ছবি রাখেননি কারণ আলবার্ট হিটলার ও তার দলকে ঘৃণা করতেন। তিনি হিটলারীয় অভিবাদন জানাতেও অস্বীকৃতি জানান। হাত উঁচিয়ে সবার মতন নাজি স্যালুটের পরিবর্তে তিনি টুপি তুলে বলতেন; ”Grüß Gott! ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুক। আলবার্ট গোয়েরিং এর ইতিহাস আরেক জার্মান অফিসারের কথা মনে করিয়ে দেয়,যিনি বিশ্ববাসীর সামনে শ্রম শিবিরে গণহত্যার কথা জানানোর জন্যে এক সুইডিশ কূটনৈতিকের কাছে প্রমাণসহ অনেক তথ্য দেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তা কখনো প্রকাশ পায়নি। যুদ্ধের পর যখন তার গ্রেফতার করা হয় তখন তাকে বাঁচানোর জন্যে সেই সুইডিশ কূটনৈতিক ফ্রান্সে ছুটে যান কিন্তু তখন অনেকটা দেরি হয়ে যায়। সেই অফিসার নাৎসি অপমান ও গণহত্যার কালিমা সহ্য করতে না পেরে নিজের সেলে আত্মহত্যা করেন। তার নাম ছিল- কার্ট জারস্টাইন।
মূল প্রবন্ধ: Göring gick emot sin egen bror
হলোকাস্ট ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আগ্রহীদের জন্যে:
সিনড্রোম কে নামক এক মিথ্যা রোগের গল্প
মৃত্যু শিবিরে যারা উৎসবে মেতেছিল
যে ট্রেন বৈঠক বদলে দিতে পারতো নাৎসিদের ইতিহাস
নাৎসি ক্যাম্পঃ মৃত্যু হেঁটে গেছে জীবনের পথ ধরে, পর্ব ১
নাৎসি ক্যাম্পঃ মৃত্যু হেঁটে গেছে জীবনের পথ ধরে, পর্ব ২
অনেক ডিটেইল্ড লিখেছেন, আর পুরো কাহিনীটা খুবই ইউনিক। এই কাহিনী দিয়ে হলিঊডে ভাল একটা মুভি বানাতে পারবে। ধন্যবাদ
সুব্রত শুভ ভাই, আপনার ওই সময়কার ইতিহাস নিয়ে ভাল নলজ আছে তাই একটা কিউরিয়াস প্রশ্ন… হিটলার সহ পুরো জার্মানী যে ধীরে ধীরে ইহুদী বিদ্বেষ এ জড়িয়ে পড়ল এটা কি ১০০ ভাগই জার্মানদের পাগলামি ছিল নাকি তখনকার কিছু ইহুদীদের. pre-war সময়ে ছোটখাটো কিছু সমস্যাও ছিল যেগুলোর ছুতোয় হিটলার বাহিনী ম্যাসাকার শুরু করে। আমি অনেকগুলো ডকুমেন্টারি দেখেছি কিন্তু এ ব্যাপারে আসল কোন কারণ পাইনি।