লিখেছেন: খান ওয়াহিদুজ্জামান
অনন্ত বিজয় দাশ ও “যুক্তি” ছোট কাগজের প্রথম সংখ্যার সাথে আমার কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে – বছর ছয়েক আগে একটা ও বছর দুয়েক আগে একটা – মোট দুইটা স্মৃতিচারণ লিখেছিলাম সেই স্মৃতি নিয়া – কিন্তু সেই লেখাগুলো এখন কোথায় আছে কে জানে !!
তাই আজ আবার নতুন করে লিখতে বসলাম – যাইহোক , 2007 সালের মাঝামাঝি থেকে 2008 সাল পর্যন্ত “যুক্তি” ছোট কাগজ বিষয়ে – অনন্তের সাথে আমার কয়েকবার মুঠোফোনে কথা হয়েছে ও দেখা হয়েছে ঢাকার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে ।
আজিজ মার্কেট থেকে যুক্তি ছোট কাগজের প্রথম সংখ্যার শদুয়েক কপি এবং দ্বিতীয় সংখ্যার আরো শতখানেক কপি বিক্রি করে প্রচার করেছিলাম নিজের স্ব-উদ্যোগে স্ব-প্রণদিত হয়ে । তখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাহবাগ কাটাবন কেন্দ্রিক লেখক পাঠক ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিককর্মী বুদ্ধিজীবী রাজনীতিবিদ কেউই কিন্তু যুক্তি পত্রিকাকে চিনতো না ।
হলো কি – আমি একদিন শাহবাগের আজিজ মার্কেটে ছোট কাগজ কেনার জন্য ঘোরাঘুরি করছিলাম – ঘুরতে ঘুরতে তক্ষশীলায় ঢুকলাম – নতুন কোনো ছোট কাগজ এসেছে কি না খুঁজতে ছিলাম , দেখলাম – এককোনায় ধুলার আস্তরণ সহ অযত্নে পরে থাকা নতুন একটা ছোট কাগজ – নাম “যুক্তি” – যা আগে কখোনো দেখি নাই বা নামও শুনি নাই ।
প্রচ্ছদ দেখেই আমার এতো ভালো লেগে গিয়েছিলো যে – আমি যুক্তি ছোট কাগজটার ভিতরে বাহিরে উল্টে পাল্টে দেখলাম । লেখকসূচীর সবাইকে না চিনলেও লেখার বিষয়সূচী দেখে আরো আগ্রহান্বীত হলাম এবং তখনই পাঁচটি কপি থেকে আমি একটা কিনে আনলাম । পরে যুক্তি ছোট কাগজটা পড়াতে পড়তে এতো ভালো লাগলো যে – সম্পাদকের সাথে কথা বলার আগ্রহ জন্মালো ।
তারপর – ফোন করে আমিই অনন্তকে খুঁজে বের করলাম এবং তাকে শাহবাগে ডেকে আনলাম । তাকে ফোন করে কথা শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরে – দেখা করে যুক্তি ছোট কাগজটা নিয়া কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করলাম । একদিন শাহবাগের আজিজ মার্কেটে অনন্তর সাথে দেখা করার জন্য একটা সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করে ফেললাম ।
অনন্ত থাকে সেই সূদুর সিলেটে – তাই চাইলেই চট করে সে ঢাকায় চলে আসতে পারে না বুঝি ; তারপরেও সে জানালো যে শীঘ্রই ঢাকা আসবে আমার সাথে দেখা করতে । তো , আমি অপেক্ষা করছি তার জন্য কবে সে যুক্তি নিয়ে ঢাকা আসবে । এর মধ্যে অবশ্য বার কয়েক মুঠোফোনে কথাও হয়ে গেলো আবেগ দমন করতে না পেরে । কারণ , যুক্তি পত্রিকার প্রতিটা লেখা পুনরায় পড়তে চাচ্ছিলাম ।
কারণ , আমি পরবর্তিতে আজিজের তক্ষশিলা থেকে যুক্তির বাকি চারটা কপি কিনে এনে আমার কয়েকজন বন্ধুকে ইতিমধ্যেই উপহার দিয়েছি পড়ার জন্য । আর আমার কাছে থাকা আমার নিজের সংখ্যাটা পড়ার জন্য জোর করে নিয়ে গিয়েছিলো এক বন্ধু কিন্তু ফেরত দেয়ার নাম নাই ।
তাই অনন্তকে তাগাদা দিলাম – যুক্তি ছোট কাগজের কয়েকটা কপি আমার জন্য নিয়ে আসতে বা কুরিয়ার করে পাঠাতে । অনন্ত জানালো যে – প্রথমবার সে নিজেই পত্রিকা নিয়ে আসবে আমার সাথে দেখা করতে , কারণ সেও নাকি আমার সাথে দেখা করে সামনা সামনি কথা বলার আগ্রহ অনুভব করছে ।
তো , অবশেষে আমরা আজিজে দেখা করলাম এবং অনন্তকে দেখে আমার খুব সাধারণ একজন মানুষ মনে হলেও তাঁর সাথে কথা বলে বুঝলাম – সে ছিলো একজন বিদগ্ধ পাঠক ও সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা একজন বিজ্ঞানমনস্ক মন ও মননের যুক্তিবাদী ও অনবদ্য মানসিকতার একজন অগ্রগামী লেখক ।
তার সামান্য ভুরিওয়ালা স্বাস্থ্যবান শরীরের উপর অস্বাভাবিক গোলগাল একটা মুখের হাসি ও কৌতুহলোদ্দীপক চোখের তীক্ষ্ম অথচ হতঃবিহ্বল চাহনি – এখনো আমার চোখে ভাসছে – – সে যেই অঞ্চলে বসবাস করছে সেখানে বসে তার এইরম ব্যতিক্রম মানসিকতা কিভাবে হলো – এইটাই ছিলো আমার কাছে একটা বিস্ময় !!
তখন আমরা চা খেতে খেতে গল্প করছিলাম “যুক্তি”কে নিয়ে – অনন্তকে আমি হাসতে হাসতে জানালাম – তাদের প্রকাশিত ছোট কাগজটা আমি কি অবস্থায় খুঁজে পেয়েছি । অনন্তও হাসতে হাসতে জানালো – হ্যাঁ , ওদের কাছে বেশ কিছুদিন হয় পাঁচটা কপি দিয়েছিলাম কিন্তু ওরা একটাও বিক্রি করতে পারে নাই – আমি কেনার আগ পর্যন্ত ।
কিভাবে এতো চমৎকার প্রচ্ছদের অনবদ্য সুন্দর একটা ছোট কাগজ প্রকাশ করে ফেললো এবং অর্থনৈতিক সংস্থানটাই কিভাবে হচ্ছে এইসব নিয়া অনন্তকে প্রশ্ন করতে সে জানালো – সমস্যা তো আছেই তারপরেও কয়েজন প্রবাসী শুভাকাঙ্ক্ষীর আর্থিক সহায়তায় কাগজটা বের করা সম্ভব হয়েছে এবং পরবর্তী সংখ্যা বের করারও কাজ চলছে –
আমি তখনো ছোট ছিলাম , আরো 13/14 বছর আগের কথা । অনেক কিছুই তো বুঝতাম না , জানতাম না – এবং আমি নিজেও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় আমার ব্যক্তিগত জীবনে অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলে বুকভরা সমাজ পরিবর্তনের বিশাল স্বপ্ন ছিলো – নতুন যৌবনে সবার যেমন থাকে আর কি !!
আজিজ মার্কেটে অল্প বেতনের ছোট্ট একটা কাজ করে জীবন চালাতাম (কোন প্রতিষ্ঠানে কি কাজ করতাম সেই প্রসঙ্গ এইখানে আর তুলছি না) এবং মঞ্চনাটকের সাথে কাজ করতাম ও লেখার চেষ্টা করতাম – তবে লেখক বা সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে তখোনো কেউ আমাকে চিনতো না ।
আমার জীবনেই অনেক সমস্যা ছিলো , বাবা নাই , গ্রামের বাড়িতে মা ও ছোটবোনকে টাকাপয়সা কিছুই পাঠাতে পারতাম না – এইটা নিয়া অনেক মনঃকষ্টে ভুগতাম । আর তা ভোলার জন্য সারাদিন পেশাগত কাজ শেষ হলেও বাকি সময়টা সারাদিন বাইরে বাইরেই থাকতাম , ঢাকা শহরে টইটই করে ঘুরতাম ।
মঞ্চ , আবৃত্তি , লেখা , আজিজ মার্কেট ছাড়াও ঢাবির জগন্নাথ হল , কাটাবন , শহিদ মীনার , রাজু ভাস্কর্য , টিএসসি , সোহরাওয়ার্দী উদ্যান , নাটমণ্ডল , পাবলিক লাইব্রেরী , চারুকলা , ছবির হাট , জাতীয় যাদুঘর , সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র , উদীচী , মুক্তিভবন , প্রেস ক্লাব , ছাত্র ইউনিয়নের কার্যালয় ইত্যাদি –
এছাড়া – শিল্পীকলা একাডেমী , বেইলী রোড বা নাটক সরনীর মহিলা সমিতি , বেঙ্গল ফাউন্ডেশন , আঁলিয়স ফ্রঁসেস , বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান , শহীদ তাজউদ্দিন চলচ্চিত্র সংসদে ছবি দেখা , শাহবাগ চত্বরে ও পিজি হাসপাতালের কোনের আড্ডা ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকতে চেষ্টা করতাম ।
তবু , সেই অবস্থাতেও – স্ব-প্রণদিত হয়ে আমি অনন্তকে বললাম আমাকে কিছু কপি দিতে এবং জানালাম – আমি শাহবাগ এলাকায় এই ছোট কাগজটির বিক্রি ও প্রচারের দায়িত্ব নিতে চাই সেচ্ছাসেবক হিসেবে । কারণ , অনন্তের ভেতর আমি এমন একটা আলোকছটা ও প্রতীভার দীপ্তি এবং জ্ঞানের চমক দেখতে পেয়েছিলাম – যা আমাকে শক্তি ও অনুপ্রেরণা দিয়েছিলো ।
– আর যুক্তি কাগজটার কথা কি বলবো – আমার কাছে সেই প্রথম সংখ্যাটাকে মনে হচ্ছিলো এক অনবদ্য সৃষ্টি । যাইহোক – অনন্তর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিলো না – বুঝতে পারতাম তাকে দেখেই ও তাঁর কথা শুনেই । আমাদের যাবতীয় কথাবার্তা যুক্তি ছোট কাগজটা নিয়া হলেও ব্যক্তিগত দুইএকটা কথা তো প্রসঙ্গান্তরে চলে আসতোই ।
এবং আমরা দুইজনেই রাজধানী ঢাকা থেকে অনেক দূরে বলা যায় মফস্বল এলাকাতেই জন্মানো ও বেড়ে ওঠা – গায়ে গাঁয়ের সরল সোদা গন্ধ লেগে থাকা দুইজন উঠতি যুবক । শহুরে নাগরিকদের ভন্ডামী আমাদের ছুঁতে পারে নাই । আমাদের মন ও মনন তখন একটা সবুজের স্বপ্নে মাতোয়ারা ও দিশেহারা ।
শহুরেদের মেকি অভিব্যক্তি ও মিথ্যা আচরণের বহিপ্রর্কাশ আমাদের আহত করে – তাই শহুরেদের সাথে তখনো নিজেদের মানিয়ে নিতে পারি নাই – তাই গ্রামের কাউকে দেখলে চট করে খুব আপন মনে হয় । তার উপর সে যদি হয় একই মানসিকতার ও একই পথের পথিক ।
অনন্ত আর আমি প্রায় সমবয়সীই ছিলাম । তারপরেও আমার কাছে অনন্তকে আমার চেয়েও বেশী আধুনিক প্রজ্ঞাসম্মত একনিষ্ঠ বুদ্ধিমান গোছালো মনে হতো । মনে হতো আমি অনন্তের কাছে আমি কিছুই না । অনন্তর মেধা ছিলো ওর নামের মতোই অনন্ত অসীম ।
খ্যাতি ও ভোগ বিলাসীতার লোভে উন্মাদ সারবস্তহীন আমাদের সুশীল সমাজ “অনন্ত বিজয় দাস”দের চিনতে না পারলেও – ধর্মান্ধ ইসলামী মৌলবাদী অপশক্তি গুলো ঠিকই বুঝে ফেলে কারা মৌলবাদের ধ্বংস নিশান উড়াতে আসছে , কারা ধর্মান্ধ জাতিকে আলোর পথ দেখিয়ে ধর্মান্ধদের কুস্বার্থে ব্যাঘাত ঘটাতে আসছে – –
তাই তো , ধর্মান্ধ মৌলবাদি অপশক্তি দ্বারা – আরজ আলী মাতুব্বর , শামসুর রাহমান , আহমদ শরীফ , হুমায়ূন আজাদ , তসলিমা নাসরিন , ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল , আহমেদ রশীদ চৌধুরী (টুটুল) , আসিফ মহিউদ্দীন , সানিউর রহমান ইত্যাদিদের বর্বর আক্রমণের শিকার হতে হয় ;
দাউদ হায়দার , তসলিমা নাসরিন এবং আহমেদ রশীদ চৌধুরী (টুটুল) , আসিফ মহিউদ্দীন , অনন্য আজাদ , সানিউর রহমান , আসাদ নূর , ইত্তিলা ইতু , সবাক পাখি , মাহমুদুল হাসান বাঁধন , শাম্মী হক , আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সহ আরো অনেক নতুন প্রজন্মের ব্লগারদের নিজের ভূমী , দেশ ও সমাজ থেকে পালিয়ে যেতে হয় –
এবং বন্যা আহমেদ , সুপ্রীতি ধর , আরিফুর রহমান , লোপা রহমান সহ অসংখ্য প্রবাসী বাঙালী প্রথাবিরোধী মুক্তচিন্তক লেখকরা (এই মুহূর্তে সবার নাম মনে পড়ছে না , মনে আসলেই এখানে যুক্ত করে দিবো । যাদের নাম বাদ পড়েছে তাঁদের নাম মন্তব্যে লিখে আমাকে একটু অনুগ্রহ করে মনে করিয়ে দিন) – তাদের কাজ ও লেখার জন্য দেশে ফিরে আসতে নিরাপদ মনে তো করেই না উল্টা আতংকিত বোধ করে – –
এবং আহমেদ রাজিব হায়দার (থাবাবাবা) , শফিউল ইসলাম , অভিজিৎ রায় , ওয়াশিকুর রহমান বাবু , অনন্ত বিজয় দাস , নীলয় চ্যাটার্জি নীল , ফয়সাল আরেফিন দিপন , নাজিম উদ্দীন সামাদ , রেজাউল করিম সিদ্দিক , জুলহাজ মান্নান , তনয় মজুমদার , শাহজাহান বাচ্চু – ইত্যাদি আলোর পথযাত্রীদের একে একে বর্বর নিষ্ঠুর নৃসংশভাবে হত্যা করা হয় ।
এছাড়া গনজাগরণ মঞ্চের – জগৎজ্যোতি তালুকদার , জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া বাবু সহ আরিফ রায়হান দীপ , অঞ্জলী দেবী চৌধুরী , মীর সানাউর রহমান , সাইফুজ্জামান সহ অসংখ্য ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষকে ইসলামী ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে মৃত্যুকে বরন করে নিতে হয় – যা মানবতা ও মানবাধিকারের জন্য কলঙ্কজনক ।
যাক , প্রসঙ্গে ফিরে আসি – তো , অনন্ত রাজি হলো আমাকে যুক্তি কাগজের কিছু কপি দিতে – এবং তার কিছুদিন পর যুক্তির 20/25টা কপি সহ তাঁর এক বন্ধুকে নিয়ে আজিজে এলো আমার সাথে দেখা করতে – (ওর বন্ধুর নামটা এখন মনে পড়ছে না কিন্তু সে সম্ভবত যুক্তি পত্রিকার একজন ছিলো )।
যুক্তির কপি হাতে পেয়ে আমি তো খুবই খুশি হয়েছিলাম এবং অল্প কয়েকদিনেই সেই কপিগুলো বিক্রি করে ফেললাম । এবং অনন্তকে ফোন করে জানালাম সে যেনো এসে বিক্রির টাকাগুলো নিয়ে যায় এবং আমার জন্য আরো শতখানেক নতুন কপি যেনো নিয়ে আসে ।
পরবর্তীতে অনন্ত – যুক্তি প্রথম সংখ্যার আরো বেশকিছু কপি নিয়ে আসে আর আগের বারের বিক্রির টাকাটা নিয়া যায় । এবং তার কিছুদিন পর একবারে কুরিয়ার করে ও আরেকবার স্ব-শরীরে এসে আরো বেশ কিছু কিছু কপি পাঠিয়ে দেয় । ততদিনে যুক্তির দ্বিতীয় সংখ্যা বেড়িয়ে গেছে – সেইটারো বেশ কিছু কপি দুইবার পাঠায় ।
আমি যুক্তি ছোট কাগজের ওই কপি গুলা সানন্দে বিক্রী করেছি । আজিজ মার্কেটে আসা আমার পরিচিত বিভিন্ন বিদগ্ধ পাঠকদের কাছে ধরে ধরে বিক্রী করেছি , ডেকে ডেকে তাদের কাছে যুক্তি কাগজের গ্রহনযোগ্যতা তুলে ধরেছি । যুক্তির সম্পাদক যে একটা অনন্য কাজ করেছে এবং আমাদের প্রত্যকের যে এই ছোট কাগজটা পড়া একান্ত কর্তব্য সেইটাও বলতে ভুলি নাই – যদ্দূর মনে পড়ে ।
তাদের বেশীর ভাগ লোকই কাগজটা পড়ার পর আমাকে যেচে এসে জানিয়েছেন যে – যুক্তি নামের এমন একটা নতুন ছোট কাগজ দেখে ও এর লেখাগুলো পড়ে তারা বিস্মিত ও আনন্দিত হয়েছেন । তারা আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই ধরনের ব্যতিক্রম একটা নতুন ও যৌক্তিক ছোট কাগজের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি বলে ।
আমার পরিচিত সেইসব লেখক পাঠক ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিককর্মী বুদ্ধিজীবী রাজনীতিবিদ ইত্যাদি বিদগ্ধ পাঠকরা এই বলে বিস্ময় প্রকাশ করেছে যে – তারা জানতেনই না যে ঢাকার আজিজে এমন একটা ছোটকাগজ আছে পরে আছে । এবং পরবর্তীতে তারা – যুক্তির নতুন সংখ্যা কবে বেরুবে সেই খোঁজও করেছেন । – ভাবা যায় !!
2015 সালের 12ই মে ধর্মান্ধ দুর্বৃত্তরা তাকে নৃশংসভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে । অনন্ত আজ মৃত হলেও সে যে মরে নাই । সে যে অনন্ত । সে বেঁচে আছে তাঁর কাজের মাঝে , আমাদের হৃদয়ে – এবং সে অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকবে – – যদ্দিন মুক্তচিন্তার চর্চা চলবে –
“যুক্তি” ছোট কাগজ প্রকাশ করা সহ মুক্তচিন্তার জগতে যেই অনন্ত বিজয় দাস এইরম অনন্য অনবদ্য কাজ করেছে – মুক্তচিন্তার উপরে বিভিন্ন বই লিখেছে ও প্রকাশ করেছে –
যেই অনন্ত বিজয় দাশ মুক্তচিন্তার জন্য কাজ করতে গিয়ে – জীবনের উপর মৃত্যুঝুঁকি এসেছে জানার পরেও থেমে থাকে থাকে নাই – সেই অনন্তকে কি করে ভুলি !!
আসলে – অনন্ত বিজয় দাশ ছিলো আমার কাছে একটা আলোর প্রতিক হিসেবে । অনন্তকে কখোনই ভুলতে পারবো না । তাকে ভোলা যায় না । আজ আমাদের সেই অনন্ত বিজয় দাসের পঞ্চম মৃত্যু বার্ষিকী ।
“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী , ভয় নাই ওরে ভয় নাই ।
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান – ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই ।।”
চমৎকার স্মৃতিচারণ ভাইয়া।
লিখাটি পড়ে মুক্তমনা ই-গ্রন্থাগার থেকে ‘যুক্তি’র সংখ্যা দুইটা ডাউনলোড করলাম, পড়ে ফেলবো শীঘ্রই।
আপনি আরও লিখুন ভাইয়া।
লেখা টা খুব ভালো লাগলো । এক নাগাড়ে পড়ে ফেললাম । আপনি একজন ভালো লেখক ।
মনের ভিতর অনেক কথা লুকিয়ে আছে, বের হতেও বের হয়না, বারবার হারিয়ে যায়, বলতেও ইচ্ছে করেনা। এতো এতো অত্যাচার নির্যাতনের খবরে দুঃখিত মনে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে, বর্তমানে সত্যিই আমার জীবনের কোনো উদ্দেশ্য নাই, উদাস মনে শক্তি পাই না। যার জন্য বলি, সেই ক্ষতি করছে। আপনাদের কর্মকাণ্ড দেখে অবাক হই, এতো শক্তি কিভাবে ধরে রাখেন! এসবে অনুপ্রাণিত, উজ্জীবিত ও উৎসাহ অনুভব করি। মনে হয়, নিজের জীবনের বিনিময়ে অন্যের উপকার করাই আমার একমাত্র কাজ। তবু্ও নাকি অন্যের ভালোর জন্য নিজের প্রতিও কল্যাণকর হতে হয়। কেন বেঁচে আছি আমি জানিনা, শুধু জানি পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখে থাকুক, আর আমার মুক্তমনা মানুষেরা নিরাপদে ভালো থাকুক! 💖💗💓শুভকামনা সবসময়!💓💗💝
ধন্যবাদ। আপনিও নিরাপদে থাকুন।
মুক্তমনের, প্রগতির ও যুক্তির যে মৌলিক, অগ্রসর ও তৃণমূল পাঠক ছিল তা হওয়া সম্ভব হয়েছিল অনন্তের মত নিবেদিত প্রাণ কর্মী ও লেখকদের জন্য আর আপনাদের মত অকৃত্তিম শুভাকাঙ্খীদের জন্য। ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি আপনাকে, তাই জানালাম ধন্যবাদ। সুন্দর করে লিখেছেন।
খুব ভাল লাগলো পড়ে। যে জায়গাগুলোর মধ্যে তোমার ঘোরাঘুরি সেঠা একেবারে কার্বণ কপির মত মিলে গেল। প্রগতি মুক্তমনা মানুষদের এমনই।অনন্তের সাথেযোগাযোগ ও সবকিছু সুন্দর ভাবে জানাগেল। ভাল লাগলোজেনে এখনও কিছু এমন মানুষ আছে।
একেকজন ব্লগার হত্যার খবর যেন বুকে শেল হয়ে বিঁধত, আবার কিছুদিন ট্রমার মাঝে থাকতাম। আমার হাতে তখন প্রযুক্তির ছোঁয়া এসে পৌঁছায়নি, বুঝতামও না কিছু। শুধু এটুকু বুঝতাম তাদেরকে লেখার জন্য করা হচ্ছে, একজন পাঠক হিসেবে এটা যে কতটা কষ্টের বলে বুঝানো যাবে না। আচ্ছা যুক্তি পত্রিকার কোন কপি পাওয়া যাবে, যেকোনো সংখ্যা যতই পুরোনো হোক?
লেখাটি পড়ে ভালো লেগেছে। “যুক্তি” সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য পেলাম। আমিও যুক্তি পড়তাম। তবে নিয়েমিত পড়া হতো না। যখন ঢাকাতে আসতাম আজিজ সুপার মার্কেটে যেতাম শুধু বই কেনার জন্য। এখন তো আজিজের সেই ঐতিহ্য নেই।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ… আর কী বলব…
খান ওয়াহিদুজ্জামান, স্মৃতিচারণটি হৃদয়স্পর্শী। অনন্তবিজয়কে আমি এ মুক্তমনা থেকেই জানি এবং চিনি। এখানে একসময় খুব সরব পাঠকও ছিলাম। ইদানিং সময় করে উঠতে পারি না। তবে আপনাদের লেখা গুলো দেখে ভরসা পাই যে আমাদের প্রজন্মান্তরের মানুষেরা শির উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। আপনার এ ধারার রেখা অব্যাহত থাকুক। লড়াই বেঁচে থাকুক ।
লেখাটি বেশ ছুঁয়ে গেলো।লিখতে থাকুন। কুশলে থাকবেন।
লেখাটা আমার খুব ভালো লেগেছে
চমৎকার স্মৃতিচারণ। ধন্যবাদ
অভিভূত হলাম🙂
“অনন্ত বিজয়েরা বেঁচে থাকুন অজস্র বিজ্ঞানমনস্ক কলমযোদ্ধাদের মাঝে”
সুন্দর স্মৃতিচারণের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনাকে, অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম আপনার লেখা থেকে।
লেখাটা ভাল লাগল
সবথেকে প্রথমে আপনিও শুভেচ্ছা নেবেন।
লেখাটা পড়ে just চোখদুটো ঝাপসা হয়ে গেল।
অনন্তবিজয় দাশকে যখন হত্যা করা হয়, তখন আমার এইসব বিষয়ে অতটা চর্চা ছিল না, তাই তখন খারাপ লেগেছিল কিন্তু অতটা বেশি কিছু জানা ছিল না এইসব বিষয়ে।
পরে গীতা, কোরআন, বাইবেল এইসব ধর্মগ্রন্থগুলো নিয়ে পড়তে শুরু করি। পড়া শুরু করার পরেই ধর্মের অসাড়তা স্পষ্ট হতে থাকে।
তারপর তো বিভিন্ন মুক্তমনাদের লেখা পড়তে থাকি।
এখন আমার কাছে ধর্ম বলতে শুধু মানবধর্ম।
বাকি প্রত্যেকটা ধর্ম বিষাক্ত, অপ্রয়োজনীয়, কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের গুদামঘর।
আশা রাখি, অদূর ভবিষ্যতে একদিন পৃথিবী থেকে অচল-অসাড় ধর্মের নামে রক্তক্ষয় বন্ধ হবে, ধর্ম নামের জিনিসটাই অবলুপ্ত হবে। সুস্থ আর সহনশীল মানসিকতার একটা সমাজ গড়ে উঠবে যেখানে জাতি-লিঙ্গপরিচয়-শ্রেণি-বর্ণ-যৌনঅভিমুখীতা-সামাজিক পরিচয় নির্বিশেষে সবার জন্য সমানাধিকার প্রতিষ্টা হবে; যে সমাজের স্বপ্ন অনন্তবিজয় দাশরা দেখেছিলেন। 😢
বাহ্!
বেশ ব্রিফ ডিলেইলড….
সময়ের প্রয়োজনীয় লেখা
স্মৃতির সিন্দুকে থাকুক অনন্ত’রা
একদিন এই পৃথিবী যদি মানুষের হয়…
অনন্য। স্বপ্নের সবুজ সংকেতে, এই সদিচ্ছা ও প্রয়াস- সমাজে একধাপ নতুনত্বর পথে, পরিবর্তনের পথে, ক্রমবিকাশের পথে, উত্তরণের পথে…!
এই লেখায় অনন্তদা সম্পর্কে আপনার আবেগ,অনন্তদার উত্তান,শুরু সেই দিনগুলির একটা চিত্র পাওয়া যায়। উনাদের বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল বলে সম্ভবত সংগঠন ছিল। যুক্তির প্রথম ২টি সংখ্যা আমিও পড়েছিলাম। আর,সবচেয়ে কষ্টের হলো,ওসমানীতে যেদিন উনার ক্ষত বিক্ষত লাশটা আমাদের দেখতে হয়েছে। বেশিক্ষণ আমরা সেখানি থাকতে পারিনি। মনে আছে সেদিন মিছিলে প্রায় ঘন্টাখানেন স্লোগান দিতে হয়েছিল,কিন্তু কিভাবে সম্ভব হয়েছিল জানি না
👍
আপনার লেখা ভাল লাগে। তবে গল্প পড়তে ইচ্ছে করে আপনার।
ধন্যবাদ আপনাকে, অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম আপনার লেখা থেকে। উত্তরোত্তর আপনার সমৃদ্ধি প্রত্যাশা করছি। ভালো থাকবেন।
শুধু কয়েকটা নাম বাদ দিয়ে পুরো লেখাটা খারাপ লাগেনি।
আমি নিজেও অনন্ত বিজয় দাশের ব্যাপারে বেশি কিছু জানতাম না, খালি তার রেখে যাওয়া নিদর্শন গুলোই প্রত্যক্ষ করতাম। আপনার লেখায় যেনো তাকে আরো কাছ থেকে জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর লেখনী। আমার খুব ভালো লাগলো। সংগ্রামী সেলাম আপনাকে।
খুবই ভালো লিখেছেন।অনন্ত নামের মানুষটার ব্যাপারে নতুন কিছু জানতে পারলাম আরো।
শ্রদ্ধাও বাড়ল মানুষটার প্রতি।
ধন্যবাদ পুরোটা তুলে ধরার জন্য ভাই।
আমরা খুবি দুর্ভাগা যে, অনন্তদের মতো মানুষকে আর কোনো স্বচক্ষে দেখতে পারবো না।
অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে এবং ‘মুক্তমনা ব্লগ’কে।
স্মৃতিচারণমূলক এই লেখাটি ভালো লেগেছে। এটা পড়ে “যুক্তি”র লেখার উপর খুব আগ্রহ আসছে। যদি কোনো সংখ্যা আপনার কাছে থাকে তবে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
ধন্যবাদ…….
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত বাণী….
“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী , ভয় নাই ওরে ভয় নাই ।
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান – ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই ।।”
একজন যুক্তিবাদীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে কখনোই যুক্তিবাদের কন্ঠরোধ করা যায় না। যে কথা সত্যি ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ আজ আর আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু ওনার চিন্তা, ভাবনা ও আদর্শ মৃত্যহীন।
স্মৃতিচারণ মূলক লেখাটি আমার খুবভালো লেগেছে। এই রকম লেখা আপনার লেখনি থেকে বেরিয়ে আসুক, এই কামনা করি।
এটা পড়ে “যুক্তি”র লেখার উপর খুব আগ্রহ আসছে। যদি কোনো সংখ্যা আপনার কাছে থাকে তবে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
অসাধারণ লেখা।উজ্জ্বল প্রতিভা।
অনন্য। স্বপ্নের সবুজ সংকেতে সদিচ্ছা একধাপ উত্তরণের পথে।
ভাল স্নৃতি চারন লেখা । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে আমার “যুক্তি” পড়া হয়ে ওঠেনি । তাই এ ব্যাপারে আরো ডিটেইলসে লিখলে ভালভাবে জানতে পারতাম দাদা।
‘যুক্তি’ ম্যাগাজিনের সবগুলো সংখ্যাই আমাদের ই-গ্রন্থাগারে রাখা আছে। ফ্রি ডাউনলোড করে পড়তে পারেন
https://blog.mukto-mona.com/2009/10/27/2884/
ভালো লাগলো।
অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যুক্তি ও অনন্ত’র কথা জানানোর জন্য। সত্যের জয় হবেই।
স্মৃতিচারণমূলক এই লেখাটি ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে। ধন্যবাদ ‘মুক্তমনা ব্লগ’কে। সবার জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো।
অামিও “যুক্তি ” পত্রিকাটি পড়ে এবং মুক্তমনায় উনার লেখা পড়ে ফেসবুকে ফ্রেন্ড হয়েছিলাম। তারপর নাম্বার নিয়ে কথা বলেছিলাম…।যুক্তির একটি সংখ্যায় সিউড্যুসাইন্স নিয়ে লেখা বের হয়েছিলো…যা নিয়ে উনার সাথে কথা হয় অনেকক্ষন..।উনি বিষয়টা নিয়ে একটা বই লিখবেন বলেও উল্লেখ করছিলেন..।খুব ভাল লাগলো লেখাটি..।এখনও উনার কথার টিউনটি কানে বাজে..
মুক্তমনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ অনন্ত বিজয় দাসকে নিয়ে আমার স্মৃতিচারণটা প্রকাশ করে আমাকে চমকে দেবার জন্যে । মনের মধ্যে একটা ক্ষীণ আশা থাকলেও – আমি তো ভাবতেই পারি নাই যে আমার লেখাটা আপনারা এতো দ্রুত প্রকাশ করবেন । সত্য আমি আনন্দিত – আজ সারাদিন ধরে এই লেখাটা দাঁড়া করেছি – স্বার্থক হলো । সত্যিই আমি অভিভূত । আবারো – আন্তরিক ধন্যবাদ মুক্তমনাকে ।
খান ওয়াহিদুজ্জামান ,
স্মৃতিচারণটি পড়ে চোখ ভিজে উঠলো। অনন্তদের মৃত্যু নাই।
মুক্তমনায় আরো লিখুন।