লিখেছেন: সাগর মল্লিক
কৃষক শ্রমিক এখনো মানচিত্র খেতে শেখেনি। এরা যদি জেনে যায় মানচিত্র চিবিয়ে খেলে ক্ষিদের জ্বালা মিটে তবে গোটা মানচিত্রটা চিবিয়ে খাবে একদিন। সেদিন আর বস্তা পঁচা জিডিপির গল্প শোনাতে পারবেন না। যে জিডিপি খেলে ক্ষিদের জ্বালা মিটে না তা চাই না আমাদের। আমরা চাই মাটির সানকি ভর্তি ভাত!
জিডিপির টাকা চিবিয়ে খেলে কি আপনার ক্ষিদে মিটবে? এই যে আপনারা খাবেন, তো কি খাবেন মশাই? কি কিনবেন? কোথা থেকে কিনবেন? কাদের কাছ থেকে কিনবেন? তোরা যে যা বলিস ভাই আমার দুবেলা দুমুঠো ভাত তো চাই। আগামী পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য আমাদের কৃষির কাছে ফিরে যেতে হবে। মাটিই আমাদের একমাত্র ভবিষ্যৎ! এই কৃষিকে টিকিয়ে রাখলে খেয়ে পরে বাঁচবে দেশ। তো এখন কথা হল এই কৃষিকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা কি কি কি পদক্ষেপ নিলাম?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় বারবার বলেছেন, একটুকরো জমি ফেলে রাখবেন না। এই দুর্দিনে কৃষক ভাইয়েরা আমাদেরকে বাঁচাতে পারে। তো এই দুর্দিনে কৃষকদের বাঁচাতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হল সেটা দেখা যাক।
১) শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করার জন্য = ৫ হাজার কোটি
২) ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প খাতের জন্য = ৩০ হাজার কোটি
৩) ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের জন্য = ২০ হাজার কোটি
৪) রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের জন্য = ১২ হাজার ৫০০ কোটি
৫) রপ্তানি পণ্য পরিবহনে = ৫ হাজার কোটি
মোট = ৭২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা
কই? কৃষকের ভাগেরটা দেখছি না তো ভাইজান। আমার চোখে হয়ত লেবা পড়েছে। একটু দেখিয়ে দেবেন মশাই? আমি তো দেখছি ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও মুনাফাখোরদের জন্যই পুরো বরাদ্দটা রাখা হয়েছে। জরুরি বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য ও মৌলিক চাহিদা বাবদ। চিকিৎসা খাতে বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন ছিল এই সময়ের প্রধান দাবি। কৃষি খাতে বরাদ্দ দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হতো। কিন্তু এসব কিছু না করে কেবল কারখানা ও ব্যবসার জন্য পুঁজিপতিদেরই বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে এদেশের কৃষক শ্রমিকেরা। ৭৫ এর পরে কৃষিবান্ধব কোন বাজেট দেখিনি আমরা। বর্তমান সময়ে প্রতিবছর বাজেট বক্তৃতায় আমরা শুনেছি কৃষকবান্ধব এবং শ্রমিকবান্ধব বাজেট হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে কৃষক শ্রমিকের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। দেশের মোট জিডিপি বেড়েছে। সরকার অবশ্য আমাদের মিথ্যা গল্প শোনাইনি। অর্থনীতি বেড়েছে অদম্য গতিতে কিন্তু সেটা পকেটস্থ করেছে এক শ্রেণির লোক। এদেশে সম্পদের সুষম বণ্টনের কোনো পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। সহজ কথা হলো রাষ্ট্রের হাতে টাকা আছে, এদেশে হুহু করে মিলিওনিয়ার বেড়েছে, ধনীর ঘরে জনগণের টাকায় ভর্তি হয়েছে। আজ এই মহামারীর দিনে জনগণ যদি না খেয়ে মরে সেটা শুধুমাত্র সরকারের সদিচ্ছা এবং সঠিক বন্টনের অভাবে। সময় এসেছে জনগণের টাকা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়ার। আর এই ব্যবস্থা অবশ্যই রাষ্ট্রকে করতে হবে।
কৃষকের ফসল ফলানোর জন্য চাই সময় মতো কৃষি বীজ, সার এবং সেচ ব্যবস্থা। কিন্তু সরকারি ব্যবস্থপনায় তা কখনো সময় মতো পায়নি কৃষক। সার কীটনাশকের দাম এখন উর্দ্ধগতি। সরকারি ধানের বীজ আসে দু’মাস পরে, পাটের বীজ সময় মতো পায় না। বাধ্য হয়ে চড়া দামে কিনতে হয় সার বীজ। এদিকে করোনায় যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি হওয়ার কাচা মালের(সবজি) দাম নিম্নগতি (অবশ্য মধ্যপন্থিরা এখানে সুবিধাভোগী)। টাকার অভাবে অনেকে ফেলে রাখছে আবাদি জমি। সেচ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক জমি অনাবাদী পড়ে থাকছে। এসবের সুষম বন্ধন নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মুখে খাবার তুলে দিতে হলে কৃষক বাঁচাতে হবে। এটাই একমাত্র দূরদর্শী পদক্ষেপ।
ভাষনটা এমন হতে পারতো,
কৃষক ভায়েরা আপনাদের বীজ লাগবে? সার লাগবে? সেচ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ লাগবে? শ্যালো মেশিনের ডিজেল লাগবে? আমি দেব। সময় মতো আপনাদের ঘরে পৌঁছে যাবে সব। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য দেওয়া হবে। আপনারা একটুকরো জমি ফেলে রাখবেন না। দেশের এই অবস্থায় দেশকে খাওয়ায়ে পরিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের।
আমি নিশ্চিত, শুধু সময় মতো কৃষকের দোরগোড়ায় সার বীজ পৌঁছে দেন এরা সোনা শস্যে মুড়িয়ে দেবে দেশকে। কৃষি পন্যের বিক্রি এবং বিপণনের ব্যবস্থা করুন। গ্রাম ছেড়ে উদ্বাস্তু হতে শহরে যাবে না মানুষ। এরাই খাওয়ায়ে পরিয়ে রাখবে দেশকে। যে দেশের কৃষক জমিনে সোনা ফলাতে পারে, সে দেশের মানুষ না খেয়ে মরতে পারে না। শুধু বলুন আমি আছি!
সাগর মল্লিক
ইংরেজি বিভাগ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
Leave A Comment