দুজন প্রকাশক এবং দুজন লেখককে একই দিনে হামলা করা হয় ২০১৫’র ৩১শে অক্টোবর। শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলকে হামলা করতে গিয়ে সেখানে লেখক রনদীপম বসু এবং তারেক রহিমকে দেখে হামলাকারীরা বিভ্রান্ত হয়ে যায়, কারণ তারা জানতো না সামনে যে তিনজন ব্যক্তি তাদের মধ্যে আসলে কোনজন আহমেদুর রশীদ টুটুল। তারপরও হামলাকারীরা গুলি চালায়, যার একটি গুলি গিয়ে লাগে লেখক তারেক রহিমের পিঠের নীচে, আহত হন প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল এবং লেখক রনদীপম বসু।
বই কেনার কথা বলে তিন যুবক ওই প্রকাশনীর অফিসে ঢুকে হামলা চালায়। এ সময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে কার্যালয়ের বাইরে তালা লাগিয়ে চলে যায়। বেলা সোয়া ৩টার দিকে লেখক রণদীপম বসু ফেসবুকে লেখেন, ‘কুবাইছে, আমি টুটুল ভাই আর তারেক।’ সেই স্ট্যাটাস দেখে তাদের অফিসের তালা ভেঙ্গে উদ্ধার করা হয়, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন এই তিনজন মানুষ। আহমেদুর রশীদ টুটুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার কারণ ছিল, শুদ্ধস্বর বিজ্ঞান লেখক ডঃ অভিজিৎ লেখা ‘সমকামিতা: একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ ও ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ নামে দুটি বই প্রকাশ করা।
এরপরের ভয়াবহ এবং দুঃখজনক ঘটনার বর্ণনা ঠিক এভাবেই এলো বিভিন্ন পত্রিকায়: লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর প্রকাশক টুটুলসহ তিন লেখকের ওপর হামলার ঘণ্টা চারেকের মধ্যেই কুপিয়ে হত্যা করা হলো জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে।
জাগৃতি প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন জানান, আজিজ সুপার মার্কেটের নিচ তলায় তাদের প্রকাশনীর একটি শোরুম আছে। বেলা দেড়টার দিকে শোরুমের সামনে থেকে তৃতীয় তলার অফিসে যান দীপন। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি তৃতীয় তলার অফিস কক্ষে গিয়ে দেখেন দীপন কম্পিউটারে কাজ করছেন। পরে তিনি শোরুমে চলে আসেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অফিসে গিয়ে দেখেন কক্ষের লাইট-ফ্যান বন্ধ। ভেতরে কোনো সাড়া শব্দ নেই। দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখেন দরজাও আটকানো। বিষয়টি তার সন্দেহ হলে তিনি দরজার নিচ থেকে চেয়ে দেখেন রক্ত গড়িয়ে আসছে। তারপরই মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদককে ফোন করেন তিনি। পরে মার্কেট কমিটির লোকজন মিলে অফিসের দরজা ভেঙে দেখেন মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে দীপনের নিথর দেহ।
ফয়সাল আরেফিন দীপনের অপরাধ ছিল, জাগৃতি প্রকাশনী থেকে বিজ্ঞান লেখক ডঃ অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ ও ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামের দুটি বই প্রকাশ করেছিলেন। যদিও আজিজ সুপার মার্কেটে সিকিউরিটি ক্যামেরা ছিল যা থেকে খুনীদের পরিচয় প্রকাশ হতো, কিন্তু কোন এক কালা জাদুকরের জাদুর ছোঁয়ায় হারিয়ে যায় সকল প্রমাণ এবং ভিডিও ফুটেজ।
২০১৩ থেকে লেখক এবং ব্লগার হত্যাকাণ্ড তো চলছিলোই পরিকল্পিত এবং ধারাবাহিকভাবে, সঙ্গে এই দুজন সাহসী প্রকাশকদের ওপর হামলা চালিয়ে, ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যার মাধ্যমে, বাংলাদেশের সকল প্রকাশকদের হুমকি দেয়া হলো, বিজ্ঞান ও নাস্তিক লেখকদের লেখা ছাপানোর পরিণাম সম্পর্কে!
বন্ধ করে দেয়া হলো, মুক্তচিন্তার বিকাশ এবং চলমান ধারাকে, যা একটি প্রগতিশীল আন্দোলনকে দমন করা হলো ধর্মের নামে, অনুভূতিতে আঘাতের নামে। এরপর থেকেই কট্টরপন্থী ইসলামী সংগঠনগুলোর ভয়ে অনেক লেখক এবং প্রকাশকেরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে মুক্তচিন্তা এবং কথা বলার অধিকার খর্ব করে রাতারাতি বাঙালি জাতিকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে আপন প্রাণ বাঁচাতেই নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন আজ বাংলাদেশের বিজ্ঞান লেখক এবং প্রকাশকগণ।
ব্লগার হত্যাকাণ্ড চলছিলই, আস্কারা ফন্দি ফিকিরের ফাঁঁদও পাতা ছিল, বাধ সাধলো বিদেশি খুন, তারপর হলি আর্টিজান!
নইলে ১৯৭১ এর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের আরেক ব্লাসফেমাস নেহাৎ কম রক্ত ঝরায়নি।
তবে এই সব খুনের বিচার আশা করা বৃথা। আর সেই থেকে বইমেলাতে অভিজিতের বই নাই, দীপনপুরেও নাই, পুরো বই পাড়াতেই অভিজিৎ নাই। তার হার্ড কপি ছাপানোর হিম্মত খুব সহজ কথা নয়। সর্বত্রই হালালের মচ্ছব।
তবু কি স্তব্ধ করা গেল অভিজিতের কন্ঠ? মুছে ফেলা গেল মুক্তমনা আন্দোলন? প্রথমে প্রজন্ম শাহবাগ, পরে নিরাপদ সড়ক, এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রাফিতি।…
এইখানে জিতে গেলেন তিনি। 👍
_____
আপডেট: ৪ বছরেও শুরু হয়নি দীপন হত্যার বিচার
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1683571.bdnews
নবম বাঙলাদেশী পুস্তক মেলায় কোন মুক্ত চিন্তার ব ই নেই । খুব খালি খালি লাগল মেলাটা ।