গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিকোতে ফ্রিডম ফ্রম রিলিজিয়ন ফাউন্ডেশন (এফএফআরএফ-FFRF) এবং মুক্তমনার যৌথ উদ্যোগে প্রথম বার্ষিক অভিজিৎ সাহসিকতা পুরস্কার (Avijit Courage Award) ঘোষণা করা হয়। যে কোন দেশে কোন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্যে সাহসিকতার সাথে কাজ করছেন এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক এই সম্মাননা (এবং এর অর্থমূল্য ৫ হাজার আমেরিকান ডলার) দেওয়া হবে।
এবছরে প্রথম পুরস্কারটি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম এলজিবিটিকিউ (LGBTQ – Lesbian, Gay, Bi-sexual, Transgender, Queer) সাময়িকী রূপবানকে । ২০১৬ সালে ইসলামি মৌলবাদিদের চাপাতির কোপে রূপবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলহাজ মান্নান তাঁর বন্ধু মাহবুব তনয়ের সাথে প্রাণ হারান নিজ বাড়িতে। বাংলাদেশের সমকামীদের অনেকেই দেশত্যাগ করতে বা নিজের পরিচয় গোপন করতে বাধ্য হয়েছেন। রূপবানের সম্পাদক রাসেল আহমেদও দেশত্যাগে বাধ্য হন। উনি রূপবানের পক্ষ থেকে এই পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের এলজিবিটি সম্প্রদায় যে বর্তমানে শুধু ধর্মীয় মৌলবাদীদের আক্রমণের মুখে আছে তা নয়, বরং বাংলাদেশ সরকারেরর পক্ষ থেকেও তারা এখন চরম বৈরিতার শিকার হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার সমকামী সম্প্রদায়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি শুরু করেছে। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় সমকামিতা বরাবরই একটা ট্যাবু ছিল কিন্তু আমার জানা মতে এদের ওপর এরকম নির্লজ্জভাবে সরকারি হামলাটা তুলনামূলকভাবে নতুন এক সংঘটন।
প্রথম অভিজিৎ সাহসিকতা পুরস্কারের জন্যে রূপবানের নাম উঠে এসেছিল স্বাভাবিকভাবেই। অভি সবসময়েই পৃথিবীর নানাপ্রান্তে ছড়ানো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করত। শুধু সমকামি বা নারী অধিকার নিয়েই নয় সে কাস্মিররের জনতা থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণ বা বাংলাদেশের পাহাড়িরা পর্যন্ত সবাইকে নিয়েই লেখালিখি করেছে। অভির লেখা ‘সমকামিতা, একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মন্সতাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ বইটি বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়দের নিয়ে লেখা প্রথম বই । রূপবান দ্বিতীয় সংখ্যায় অভির একটা সাক্ষাৎকারও ছাপা হয়েছিল। বাংলায় নেওয়া সেই সাক্ষাৎকারের লিঙ্কটা এখানে:
গত একশ বছরে মানব সমাজ সামগ্রিকভাবে নারীদের জন্মদানাধিকার(Reproductive rights), বর্ণ, ধর্ম, শ্রেণি, যৌন বা লিঙ্গ ইত্যাদি মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে অগ্রগতি সাধন করেছিল তার অনেক কিছুই যেন এখন পৃথিবী জুড়ে হুমকির মুখে – শুধু বাংলাদেশেই নয় এই হুমকি আজ বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে উগান্ডা, মধ্যপ্রাচ্য বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সর্বত্র বিস্তৃত। তাই আমাদের মনে হয়েছে, রূপবানকে এই পুরস্কার এবং স্বীকৃতি দেওয়াটা শুধু যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ তা নয় বরং সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই এটা এখন জরুরি।
এফএফআরএফ এর প্রেসিডেন্ট এনি লরি গেইলর আর ড্যান বার্কারকে অভিজিতের নামে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারটা ঘোষণা করার জন্যে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি খুব বাছাই করে কাজ করি, গত কয়েক বছরে অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানই আমার এবং মুক্তমনার সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, কিন্তু আদর্শগতভাবে না মিললে আমি কারও সাথে কাজ করিনা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল থেকে শুরু করে বিখ্যাত অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথেই আমি কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করেছি। কিন্তু এফএফআরএফ এর সাথে কাজ করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (যেটা আমার নিজেরও প্রায় তিন দশকের দেশ, যদিও জাতীয়তাবাদ জিনিসটা নিয়ে আমার ভিন্নধর্মী কিছু বক্তব্য আছে, সেটা আরেকদিনের আলোচনার জন্য তোলা থাকলো) ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিযুক্তিকরণ, নারী অধিকার, যৌনতা এবং সন্তান-জন্মদানাধিকার নিয়ে তাদের ঐতিহাসিক ও বর্তমান কাজের সাথে আমি একাত্মতা বোধ করি। আর ইদানীংকার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কাজ যেন আগের চাইতে আরো বেশি গুরুত্ববহ এবং প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
Ibrahim Khalil Sobak পুরস্কারের স্মারকটির নকশা তৈরি করেছেন । Hillol কে ধন্যবাদ আমার ইংরেজি পোষ্টটার ভাবানুবাদ করে দেওয়ার জন্য। এই উইকেন্ডে স্যান ফ্রান্সিস্কোতে FFRF এর ২০১৮ সালের বাৎসরিক এই কনভেনশনে পুরষ্কারটি ঘোষণা করা হয়: লিঙ্ক
শ্রদ্ধাঞ্জলী অভিজিত রায়ের প্রতি
মন্তব্য…অভিজিৎ দাকে প্রতিনিয়ত মিস করি। তবে বিশ্বে মানবতার জয় হবেই। অভিজিৎ দার ঠাকুরদা এডভোকেট অতুল চন্দ রায়ের হাত ধরে ক্ষত্রিয় সমিতির মাধ্যমে যে সামাজিক সংস্কার শুরু হয়েছিল। তা এগিয়ে নিয়ে গেছেন অভিজিৎ দার পিতা ডক্টর অজয় রায়। অনেক টা পথ অভিজিৎ দাও এই আন্দোলন কে বিশ্বে ছরিয়ে দিয়েছে। আজ আমরাও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মুক্তমন কে সারা বিশ্বে ছরিয়ে দিতে।
অভিজিত রায়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
এই পুরস্কার মানুষের মনে সাহজ যোগাবে নতুন করে চিন্তা করার।।মৃত্যুই সব কিছু নয় মৃতের রক্ত থেকেই জন্ম নিবে নতুন চিন্তক।।মানব সমাজে বৈচিত্র থাকবে সেটা স্বাভাবিক কিন্তু সে স্বাভাবিকতা মেনে নিয়ার সময় হয়তো এখনো আসে নি আমাদের দেশে!
জয়তু মুক্তমনা, জয়তু অভিজিৎ রায়!