১৫ই আগস্ট দিনটি বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীর জন্য একটি শোকাবহ দিন। বিপুল ভাবগাম্ভীর্যে জাতীয় শোকদিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয় কিন্তু এরই উল্টো চিত্র বেহেশতে।সেখানে এদিন পালিত হয় বঙ্গবন্ধুর বেহেশতে আগমন দিবস হিসেবে। স্বর্গীয় নন্দন কাননে হীরা মণি মুক্তার ঝালরযুক্ত বিশাল সামিয়ানা টানিয়ে নিচে বসে আনন্দোৎসব।বিশ্বের সকল বেহেশতপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দকে অনুষ্টানে আমন্ত্রণ জানানো হয়।স্বাভাবিক ভাবেই অনুষ্টানের মধ্যমণি থাকেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।প্রতিবারের মত আজও নন্দন কাননে অনুষ্টান বসেছে।সোনা আর মরকত পাথরের মিশ্রণে তৈরি হীরক খচিত টেবিল নানা বেহেশতি খাবারে পরিপূর্ণ।সুদর্শন পোষাকে সজ্জিত বালক এবং হুরদের হাতে বিচিত্র নকশায় চিত্রিত পানপাত্র।উপস্থিত ভিআইপিবৃন্দ নাচ গান আবৃত্তিতে উচ্ছল কিন্তু আসরের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধুর মুখে আনন্দের কোনো অভিব্যক্তি নেই।তিনি নির্বিকার বসে আছেন।তাঁকে খুব বিমর্ষ মনে হয়।সর্বজ্ঞাতা ঈশ্বরের তা দৃষ্টিগোচর হয়। তাঁর বিমর্ষতার কারণ জানতে ঈশ্বরের বাণী আসে। বঙ্গবন্ধু অকপটে তাঁর মনের কথাটি বললেন। জানালেন- বছরের এই দিনটিতে বাংলাদেশের কথা খুব মনে পড়ে প্রভু তখন ফেলে আসা দেশটি দেখার খুব ইচ্ছে হয়।
গম গম করে ঈশ্বরের কন্ঠ ভেজে ওঠে। আরে এটা একটা ব্যাপার হল? আপনি যদি ইচ্ছা করেন তবে আজই আপনাকে এক সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে পারি। আমি সর্ব শক্তিমান।আমি যা পারি অন্যে তা পারেনা।
বঙ্গবন্ধু উৎফুল্লভাবে বললেন- আমাকে সে সুযোগ দেয়া হলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব প্রভু।
ঈশ্বরের তরফ থেকে আদেশ আসে- আবেদন মঞ্জুর করা হল।ভোজনান্তে আপনাকে একজন বাংলাভাষী গাইডের অধীনে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হবে।কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন পার্থিব কোনো ব্যাপারে আপনি নাক গলাবার চেষ্টা করবেননা। আমি সর্বজ্ঞাতা ঈশ্বর, আমি আপনার মেজাজের কথা জানি।সেখানে আপনি এমন কিছু দেখবেন যা দেখে আপনার মেজাজ ধরে রাখা কঠিন হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু ঈশ্বরকে অভয় দিয়ে বললেন- শর্তের কথা মনে থাকবে প্রভু।
যথাসময়ে বঙ্গবন্ধুকে একজন দক্ষ গাইডের অধীনে বাংলাদেশ ট্যুরে পাঠানো হল। গাইড তাকে পর্যায়ক্রমে দেশের চাকচিক্যময় স্থাপনা এবং পর্যটন স্পটগলোতে নিয়ে যায়। হাতির ঝিল থেকে দু তিন স্তর বিশিষ্ট উড়াল সেতুতে, পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান অংশ দেখাতে জাজিরা পয়েন্টে কিন্তু এ সবে বঙ্গবন্ধুর কোনো আগ্রহ আছে বলে গাইডের মনে হলনা। অগত্যা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গাইড বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে উড়ে চলল। সবুজ ছবির মত দেশটি দেখে বঙ্গবন্ধুর চোখ জুড়িয়ে যায়।এত সবুজ পৃথিবীর আর কোথাও কি আছে। কবি কি মিছেই বলেছেন ‘ তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা। কিন্তু এই সবুজ স্নীগ্ধ প্রান্তরটিতে এত প্রচন্ড শব্দ হচ্ছে কেন? তীব্র কোলাহলে তিনি কিছুটা বিরক্ত বোধ করেন।গাইডকে জিগ্যেস করেন- এত শব্দ কোথা থেকে আসছে বলতে পার? আমারতো কানে তালা ধরে যাবার উপক্রম।
আপনার স্মরণে শোকসভা হচ্ছে স্যার।গাইড জবাব দিল।একটা দুইটা নয় হাজারে হাজার। গ্রাম গঞ্জ অলি গলি সর্বত্র। সব মাইকের শব্দকে একত্রিত করলে মানবজাতি দ্বিতীয় বিগব্যং এর স্বাক্ষী হতে পারবে।
কিন্তু এতেতো ভয়ানক সাউন্ড পলিউশন হচ্ছে। আমার শোকসভার নামে শান্ত ধরিত্রীকে দূষিত করার অধিকার এদেরকে কে দিয়েছে?
এসব নিয়ে ভাববেননা স্যার।বাঙ্গালী শব্দে চির অভ্যস্থ। শব্দ আর কোলাহলে এরা আনন্দ পায়। শব্দে শব্দে কানের পর্দা ফেটে যায় তবু বলে আরও জোরে আরও জোরে। প্রতিদিনই এমন হচ্ছে স্যার।পাঁচ বেলা নামাযের সময় লক্ষ লক্ষ মাইক যখন একসাথে গর্জন করে ওঠে তখন এই ধরিত্রী সত্যি কেঁপে ওঠে। এমনকি হিন্দুদের কীর্তনও এখন মাইকে গীত হয়ে থাকে। তারপর আছে লক্ষ কোটি যানবাহনের হাইড্রলিক হর্নের গগনবিদারী চিৎকার।কোনো কারণ ছাড়াই ওগুলো অবিরাম বেজে চলে।
বঙ্গবন্ধু এবার পলিউশন প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে ভিন্ন প্রসঙ্গে যান। আচ্ছা, এই যে এতসব সভা মাহফিল হচ্ছে এতেতো অনেক টাকা খরচ হয়। এত টাকা এরা পায় কোথায়? এতেতো আমার দলের লোকগুলো আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।আমার শোকসভা করতে করতে আমার সোনার ফলোয়ারগণ যে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে গাইড। বঙ্গবন্ধুর গলায় হাহাকার।
গাইড হেসে বলল-না স্যার এরা দেউলিয়া নয় ভীষণভাবে লাভবান হচ্ছে। টাকাতো দেয় ব্যবসায়ী আর ধনীক শ্রেণী স্যার।
আহা,আমার জন্য আমার ব্যবসায়ীদের এত সেক্রিফাইস ? আবেগে বঙ্গবন্ধুর গলা ধরে আসে।
গাইড বাঁধা দিয়ে বলে-স্যার আবেগাপ্লুত হবেননা। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা কেমন চিজ এ ধারণা আপনার নেই। এরা কি ইচ্ছায় টাকা ছাড়ে স্যার? লেবুর মত চিপে আদায় করতে হয়।চাদা আদায়ের জন্য প্রত্যেক নেতা পাতি নেতারই নিজস্ব বাহিনী আছে হাতুড়ি বাহিনী, হেলমেট বাহিনী আরও কত নামের কত বাহিনী। এরাই ব্যবসায়ীদের মেরে পিটে চাদা আদায় করে থাকে। শোকসভায় কটাকা আর খরচ হয় উদ্বৃত্ত টাকা নেতাদের পকেটে যায়।এই দিনে তাদের ভাল আয় ইনকাম হয়।
গাইডের কথা শুনে বঙ্গবন্ধুর মুখে বিষাদের ছায়া নামে।তিনি স্বগত বলতে থাকেন-আমি তাহলে তাদের মুনাফার পণ্যে পরিনত হয়েছি!
এক জায়গার উপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতে নিচের দিকে তাকিয়ে বঙ্গবন্ধুর চোখ স্থির হয়ে যায়।তিনি গাইডকে থামতে নির্দেশ দেন।
এখানে এত লোক জমায়েত কেন? ওখানে কী হচ্ছে বলতো।
গাইড উড়াল বন্ধ করে বলল-ভোজসভা হচ্ছে স্যার।আপনার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে।
ওরা কি মোশতাক আর ফারুক রশীদের অনুসারী নাকি? আমার হত্যাকান্ডকে এরা সেলিব্রেট করছে?ওরা এখনও এত শক্তিশালী?
কি যে বলেন স্যার, এ হল আপনার এক নম্বরের ভক্ত। কয়েক শ গরু জবাই দিয়ে কয়েক লক্ষ মানুষের ভোজের আয়োজন করেছে।
বঙ্গবন্ধু রাগতঃ স্বরে বলেন- আমারতো মনে হয় এটা ভক্ত নয় চাটা।কিন্তু এত টাকা সে পেল কোথায়? বাইশ পরিবারের কেউ নাতো?
গাইড হেসে ফেলে।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কত শত বাইশ পরিবার যে এদেশে গজিয়ে উঠেছে স্যার। আর টাকা কোথায় পায় বলছেন? এই দেশে টাকা উপার্জনের অযুত নিযুত পথ আছে স্যার শুধু বুদ্ধি খরচ করে বের করে নিতে হয়।এখানে মৃতদেহকেও দিনের পর দিন আইসিইউতে লাইফসাপোর্টে রেখে স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়,এটাও স্বীকৃত এক ব্যবসা। যে নেতাটি লক্ষাধিক মানুষের ভোজ দিয়েছে তাতে আপনার প্রতি তার ভক্তি আর ভালবাসা কতটুকু প্রমাণিত হল তারচেয়েও বড় কথা এর মাধ্যমে সে আগামী নির্বাচনের টিকেট কনফার্ম করে ফেলল।
এর মানে আমার দলে নমিনেশন বাণিজ্য হচ্ছে? বঙ্গবন্ধু গর্জে উঠেন।
শুধু আপনার দলে না স্যার, সব দলেই। সংসদ এখন ব্যবসায়ীদের আড়ৎ। আর তৃণমূল থেকে মুষ্টিমেয় যে কজন নমিনেশন পায় তাদের বেশির ভাগই এলাকার কুখ্যাত ঢাকাত এবং সন্ত্রাসী।জোরজবরদস্তি করে যারা জিতে আসতে পারবে কেবল তাদেরকেই নমিনেশন দেয়া হয়। আপনি জেনে অবাক হবেন স্যার দেশের এক কুখ্যাত চোরাকারবারি, ইয়াবা পাচারকারী গডফাদারকেও পার্টি নমিনেশন দিতে কার্পণ্য করেনি। এর কারণ দল মনে করে যেভাবেই হোক সে জয়লাভ করবেই। নিবেদিতপ্রাণ সৎ নেতাদের শুধু আঙ্গুল চুষা আর হাপিত্যেশ করাই সার।
বঙ্গবন্ধু আবারও গর্জে উঠতে গিয়ে নিজেকে সংযত করেন।ক্রোধ আর যন্ত্রণায় তাঁর মুখের মাংসপেশিগুলো ফুলে উঠেছে। তিনি আহত চিতার মত শ্বাস নিতে নিতে বলেন-গাইড, আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে চল।এইসব দৃশ্য আর তোমার মুখের বর্ণনা আমাকে পাগল করে তুলছে।
স্যার, কোথায় যেতে চান এখন? গাইড প্রশ্ন করে।
কেন্দ্রীয় কারাগারে।
গাইড হো হো করে হেসে উঠে।
বঙ্গবন্ধু তাকে ধমক দিয়ে বললেন-হাসি বন্ধ কর।আমি তোমার সাথে রসিকতা করছিনা।
গাইড এবার বিষ্মিত হয়।স্যার উন্নয়নের এতসব চিত্তাকর্ষক হৃদয়হরা নিদর্শন বাদ দিয়ে জেল দেখতে যাবেন? কারাগারতো দেশের সকল চোর বদমাশ সন্ত্রাসীদের ডিপো স্যার সেখানে আপনি কী দেখবেন?
তুমি সম্ভবতঃ ভুলে গেছ গাইড জীবনের বড় একটি সময় আমার কারাগারে কেটেছে।বঙ্গবন্ধুর কন্ঠ এবার গম্ভীর হয়ে আসে। শোন গাইড, আমাদের উপমহাদেশের কারাগারগুলো শুধু চোর বদমাশে ঠাসা এ ধারণা মারাত্নক ভুল। দেশের অনেক ভাল মানুষেরও স্থান এটা।
গাইড দ্রুত নড়ে বসে। সে হাত জোড় করে মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে বলে-সরি স্যার।সরি। আমি সে অর্থে কথাটি বলিনি।
বঙ্গবন্ধু এবার স্মিত হেসে বললেন-দেশ কেমন আছে কতটুকু এগিয়েছে তা দেশের কেন্দ্রীয় কারাগার দেখেই আমি বুঝে নিতে পারব। পুরা দেশ ঘুরার দরকার নাই। চল সেখানে।
গাইড আর দ্বিরুক্তি না করে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায়।সেখানে গিজগিজ করছে নানা বয়সের নানা লিঙ্গের মানুষ।কারাগার উপচে পড়া কারাবন্দি দেখে এবার বঙ্গবন্ধুর চক্ষু কপালে।তিনি বিপুল বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্ন করেন-কারাগারে এত বন্দি কেন? কারা এরা? এরা কি আমার সোনার বাংলার ব্যাংক লুটেরা, ভূমিদস্যু জল আর বনরাক্ষস,কয়লাখেকো, পাথরখেকো, কোষাগারের সোনাখেকো?এরা কি ইয়াবা ফেনসিডিলের ডিলার, দেশ বিক্রি করে দেয়া চোরাকারবারির দল?
গাইড ফিক করে হেসে বলল- না স্যার, যাদের কথা আপনি বলছেন এরা এক অর্থে দেশের সম্পদ স্যার। এরা দেশ থেকে চুরি-চামারি করে অর্থ কামিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয় তারপর সে দেশের সেরা ধনীদের একজন হয়ে যায়।ফোবর্স ম্যাগাজিনে এদের নাম উঠে এতে দেশের নাম বাড়ে। একজন সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের মতো দেশের পঞ্চাশ শীর্ষ ধনীর একজনে উঠে গেছেন।দেশের জন্য কী বিরল সম্মান স্যার।এতে শান্তিতে নোবেল না পাওয়ার দুঃখ কিছুটা হলেও ঘুচেছে। আর একজনতো রিতিমত প্রিন্স হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন যদিও তার পিতা কোনো রাজা বাদশাহ ছিলেননা। আর এখানে যাদেরকে দেখছেন তারা সব বিরোধী দলের নেতাকর্মী স্যার, দেশে সব সময় নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটায় তাই সব কটা পালের গোধাকে–।
বঙ্গবন্ধু তাকে থামিয়ে দিয়ে হতাশ কন্ঠে মন্তব্য করলেন-পাকিস্তানী সামরিক জান্তা আর তাদের প্রচারযন্ত্র রেডিও পাকিস্তানের ‘নাশকতা’ শব্দটি এখনও বাংলাদেশ বাঁচিয়ে রেখেছে তাহলে? তাঁর মুখে অসন্তুষের চিহ্ন স্পষ্ট হয়। কারাবন্দির ভিড়ের মাঝে এক বয়স্ক বন্দির দিকে এবার বঙ্গবন্ধুর চোখ পড়ে। লোকটি তর্জনী আর বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে গোল বৃত্ত বানিয়ে সঙ্গী বন্দিদের ছবি তোলার কসরত করছে।লোকটির অদ্ভুত আচরণ বঙ্গবন্ধুর মনযোগ আকর্ষণ করে। গাইডকে দেখিয়ে তিনি লোকটির পরিচয় জানতে চান।
গাইড মুখে আতংকের চিহ্ন ধারণ করে বলল- স্যার লোকটা পৃথিবীর নাম করা ছবিয়াল হলেও তলে তলে ভয়ংকর লোক স্যার।এ লোকটিই নাকি উস্কানী দিয়ে স্কুলের বাচ্চা-কাচ্চাদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে দেশ অচল করে দিয়েছিল।তাছাড়া এই লোকটার কারণে সরকার এক সময় কোটি কোটি ডলারের বৈদেশিক মূদ্রা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
গাইডের কথায় বঙ্গবন্ধু আগ্রহী হয়ে উঠেন।তাহলেতো লোকটি আসলেই শক্তিশালী।বলতো শুনি কীভাবে সে সরকারের এমন ক্ষতি করল?
ঘটনা বেশ আগের।গাইড শুরু করে।তার রেকর্ড ঘাঁটতে গিয়ে বেরিয়েছে। ১৯৯১ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ ঘূর্ণীঝড় আঘাত হানে।নিউইয়র্ক টাইমস এই ছবিয়াল আর তার প্রতিষ্টিত দৃক গ্যালারীর কাছে সাইক্লোনের ছবি চায়।কারণ পৃথিবীবিখ্যাত পত্রিকাগুলোতে ভেসে যাওয়া মানুষ আর গবাদি পশুর মৃতদেহের ছবি দেখেই উন্নত বিশ্ব সাহায্যের হাত বাড়ায়। বিকৃত লাশের ছবি যত বেশি বেশি দেখানো যায় সাহায্য ততই বেশি পাওয়া যায়। এটাও একটা আর্ট।একটা দৃষ্টান্ত দিই স্যার, শহরের বড় বড় রাস্তার মোড়ে কিছু হাত পা বিহীন মানব শরীর ‘আমার আল্লা নবীর নাম’ বলে বলে মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা আদায় করে।ঐ মানব শরীরগুলো কোনো না কোনো সিন্ডিকেটের পণ্য। সিন্ডিকেটগুলো যত বিকৃতভাবে এক একটা মানবশরীরকে উপস্থাপন করতে পারে ততই তাদের মুনাফা।আমাদের সরকারগুলোও বিপর্যস্ত জনগণকে উপস্থাপন করতে এই সিন্ডিকেট থেকে শিক্ষা নিয়েছে।কিন্তু সাইক্লোনের পর এই লোকটা সব ভন্ডুল করে দিল। তার যুক্তি লাশের ছবি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে। নিউইয়র্ক টাইমসকে সে বুঝায় লাশের পাশাপাশি অন্য গল্পও আছে।মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। সে টাইমসকে লাশের ছবি না দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ছবি সরবরাহ করে এতে রাষ্ট্রের কোটি কোটি ডলার বেহাত হয়ে যায়।
আরে, এতো আমার সোনার বাংলার সোনার মানুষ,কে একে গ্রেফতার করেছে? বঙ্গবন্ধু এবার সত্যি গর্জন করে উঠেন। তাঁর গর্জন শুনে কারাগারের বন্দিরা চমকে উঠে।তারা হতবিহবল হয়ে একে অন্যের দিকে তাকাতে থাকে।গাইড দ্রুত তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে তৎপর হয়।
আস্তে স্যার, আস্তে।দেয়ালেরও এখানে কান আছে।উপর মহল জানতে পারলে আমাদের ভিসা তাৎক্ষণিক বাতিল হয়ে যাবে।
আমরাতো কোনো রাষ্ট্রীয় ভিসায় এখানে আসিনি।
অলৌকিক ভিসায় এসেছি কিন্তু ঈশ্বরের কিছু খাস এজেন্ট এবং ফেরিওয়ালার সাথে বর্তমান সরকারের মধুচন্দ্রিমা সম্পর্ক এখন। এদের মাধ্যমে আমাদের ভিসা বাতিল করে দেয়া হবে।
শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে বঙ্গবন্ধু বললেন-আমি শুধু জাতির পিতাই নই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরও পিতা।
ছিলেন।গাইড তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এখন আপনি ইতিহাস। একটি ছবি মাত্র যা সব সরকারী দফতরে টানানো থাকে।
বঙ্গবন্ধুর কপালে ভাঁজের বিস্তৃতি ঘটে। প্রসঙ্গ পাল্টাতেই যেন এবার একদল তরুন কারাবন্দির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে জানতে চাইলেন- এই কোমল বাচ্চাগুলোর অপরাধ কী? এরাও কি ভয়ংকর সন্ত্রাসী?
গাইড মাথা নেড়ে বলল- স্যার ঐ তরুন তরুনীরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরা সরকার পতনের লক্ষ্যে কেউ কোটা সংস্কার আন্দোলনে আবার কেউ নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিল। কিছু মহিলা দেখছেন এরা বিদ্রোহী বাচ্চাদের খিচুরী বিস্কুট পানি খেতে দিয়েছিল। আর গোলাপী রঙের শেলোয়ার কামিজ পরা যুবতিটি, তাকে ধরে আনা হয়েছে এক উস্কানীদাতা মহিলার পরনের কাপড়ের সাথে তার কাপড়ের মিল থাকার কারণে।দেশের মেয়েরা তাদের গোলাপী রঙের জামা কাপড় সব লুকিয়ে ফেলছে নাহয় গোপনে পুড়িয়ে ফেলছে স্যার।পোড়ানোও খুব রিস্কি ব্যাপার। কাপড়-পোড়া গন্ধে পুলিশ এসে হাজির হয়ে যেতে পারে।পুলিশ অপরাধী ধরতে এবার তাদের সেন্সেটিভ ঘ্রাণ শক্তিকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে।বিদেশ থেকে আনা এলসেশিয়ান থেকে তারা এ বিদ্যে রপ্ত করেছে। দেশব্যাপি কঠিন নিরাপত্তা স্যার, রাজাকারদের আর মাথা তোলার সুযোগ নাই।
বঙ্গবন্ধু বিষ্মিত হয়ে বলেন-রাজাকারগুলোকেতো আমি অনেক আগেই সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছিলাম।এই শকুনগুলোর অনেকেইতো দোজখের আগুনে জ্বলছে বাকিদেরও গোরে এক পা দিয়ে বসে থাকার কথা, এই বুড়া-হাবড়ারা আবার মাথা তোলার শক্তি পাবে কী করে?
এটা এক জটিল বাস্তবতা স্যার। দেশ এখন স্পষ্টতঃ দুইভাগে বিভক্ত।একদিকে চেতনাধারী অপরদিকে অনুভুতিওয়ালা।যখন কেউ চেতনাধারীর বিপক্ষে বলে সে তখন রাজাকার তকমা পায় আবার যখন অনুভুতিওয়ালার বিপক্ষে বলে তখন হয়ে যায় নাস্তিক মুর্তাদ।দেশের অন্ততঃ চল্লিশ পয়তাল্লিশভাগ মানুষ যারা চেতনা ও অনুভুতির বাইরে তাদের পরিচয় চক্রাকারে পরিবর্তিত হয়। এরা কখনও হয় রাজাকার কখনও নাস্তিক। রাজাকার হওয়া ঘৃণার নাস্তিক হওয়া ভয়ের কারণ নাস্তিককে হত্যা করার অলিখিত বৈধতা আছে।
গাইড লক্ষ্য করে তার কথা শেষ হতে না হতেই বঙ্গবন্ধুর চেহারায় একটি পরিচিত চঞ্চলতা দেখা দিচ্ছে। তার শিরদাঁড়া টান টান হয়ে যাচ্ছে।সিনা ফুলে উঠেছে ক্রোধে।মুষ্টিবদ্ধ তর্জনী উঠে এসেছে নাক বরাবর। তাঁর গলার কাছে উঠে আসছে ৭ মার্চের বজ্রকন্ঠ। গাইডের ভয় হয় বঙ্গবন্ধু কি ঈশ্বরের দেয়া বিধি নিষেধ ভাঙ্গতে যাচ্ছেন? কিন্তু না,চূড়ান্ত মুহুর্তে নিজেকে তিনি সংযত করেন।ঈশ্বরকে দেয়া তার প্রতিশ্রুতির কথা মনে পড়ে যায়। তাঁর বুকের ভেতরের বাতাস কমে যায়। তাঁর ঋজু শরীর ন্যুজ হয়ে আসে।এই প্রথমবার মাথা নিচু করে বিষন্ন গলায় গাইডকে উদ্দেশ্য করে বলেন-গাইড একটা ব্যাপারে আমার বিষ্ময় কাটছেনা।তুমি ভিন্ন জগতের বাসিন্দা হয়েও কীকরে বাংলাদেশ সম্পর্কে এতসব জান? কখনও দেখি তোমার কথায় তীব্র ব্যঙ্গ বিদ্রুপের হুল। তুমি আসলে কে? কী তোমার পরিচয়?
গাইড কিছুক্ষণ চুপ মেরে থাকে। তারপর বঙ্গবন্ধুর চোখের উপর চোখ রেখে বলে- স্যার আমি কেউ না আবার কেউ। আমি সেই চল্লিশ পয়তাল্লিশ পার্সেন্টের একজন।কিন্তু আমি সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই অস্থিত্বশীল।বাংলার সেই কুখ্যাত মাৎসন্যায়ের কালে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলাম আমি।আমার বিচক্ষণতাতেই গোপালের আগমন এবং উত্থান পালযুগের।কৈবর্ত বিদ্রোহ সহ সকল বিদ্রোহ বিপ্লবে আমি ছিলাম।সিরাজদৌলার যুগে থেকে আমি অসহায় দর্শক।শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি সিরাজের পতন আর উমিচাঁদ মীরজাফরদের প্রাসাদ ষঢ়যন্ত্র। সূর্যসেন ক্ষুদিরামের দেশপ্রেম আর ফাঁসির মঞ্চে তাদের নির্ভীকতার স্ফুলিঙ্গ আমার শরীরে।তিতুমীরের প্রত্যয় আর ইংরেজের কামানের গোলায় তার বাঁশের কেল্লার ভস্মীভূত ছাই আমার শরীরে মাখা তবু আপনার শেষ দিনগুলোতে খন্দকার মোশতাকদের চক্রজালের বিস্তৃতি আর সত্যিকার আপনজন তাজুদ্দিনদের নিঃশব্দ প্রস্থান শুধু অসহায়ের মত চেয়ে চেয়ে দেখেছি। এখনও দেখছি মোশতাকদের প্রেতাত্না গণভবন বঙ্গভবনকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে।
বঙ্গবন্ধু বিচলিত কন্ঠে বলেন-এতই যদি জান তবে কেন সবাইকে সতর্ক হতে বলছনা?
এইযে বললাম অসহায়ত্ব। সতর্ক করতে গেলে স্রেফ রাজাকার হয়ে যাব স্যার। অনেকেই রাজাকার হবার ভয়ে উটপাখির মত বালিতে মুখ গুঁজে পড়ে আছেন।রাজাকার শব্দটি বড় ঘৃণার স্যার।দেশপ্রেমিক কোনো নাগরিক রাজাকার তকমা মাথায় নিতে চায়না।
বঙ্গবন্ধু গাইডকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললেন-তোমার সবকিছুই ঠিক আছে গাইড,শুধু এক জায়গাতেই মস্ত একটা ভুল করে ফেলেছ। আমি আমার সোনার বাংলা দেখতে এসেছিলাম কিন্তু তুমি ভুল করে আমাকে পাকিস্তানে নিয়ে এসেছ।
গাইড হেসে বলে-এটাও সঠিক স্যার।সোনার বাংলা আসলে এক ইউটোপিয় স্বপ্নের নাম।রবীন্দ্রনাথ কবি মানুষ,তিনি স্বপ্নে এক রূপক ভূখন্ডের ছবি এঁকেছিলেন।আপনি রাজনীতির কবি, তাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে চেয়েছিলেন।কিন্তু আসলে কিছুই পাল্টায়নি।যেই লাউ সেই কদু। খোলস পাল্টেছে ঠিক কিন্তু শাঁসটি রয়ে গেছে একই রকম।
বঙ্গবন্ধুর চোখ হতে মুক্তার মত একফুটা অশ্রু সূর্যের আলোতে চিকচিক করে উঠে। গাইড তা লক্ষ্য করে বলল-স্যার চলেন আপনার মন ভাল করার মত কোনো জায়গায় নিয়ে যাই।
বঙ্গবন্ধু গাইডের কাধে হাত রেখে বলেন-যা দেখার, তা এই কারাগার থেকেই পেয়ে গেছি গাইড। চল এবার আমরা বেহেশতেই ফিরে যাই।
অসাধারন।।সংক্ষিপ্ত লিখনির মাধ্যমে বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে।।
ধন্যবাদ।
অসাধারন ভাইয়া! খুব ভাল লেগেছে৷বাংলার সুচনাকাল থেকে আজ অবদি পুরো অবস্থাটাকে সংক্ষিপ্ত কলমে আবদ্ধ করে ফেলেছেন ৷
ভাল লেগেছে এজন্য আমিও কৃতার্থ ভাইয়া।ধন্যবাদ
চমৎকার।
ধন্যবাদ।
সব্যসাচী দার কথাটাই বলবো । অসাধারন লিখেছেন । দেশের একেবারে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছেন ।
”যেই লাউ সেই কদু” কথাটি যথার্থ
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
ভাল লেগেছে পড়তে!
চলনে-বলনে বঙ্গবন্ধুর মতো ক্যারিশমেটিক নেতা বাঙ্গালী আর কখনও পায় নি! একজন মানুষ যখন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার নেতা হয়ে ওঠেন, একটি জাতির আশার প্রতীক হয়ে যান, তখন মানতে হবে যে তিনি বিশেষ কিছু। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের তিনিই প্রাণপুরুষ আর কেউ নয়। বাংলাদেশ আর মানুষ নিয়ে তিনি যে আশাবাদী ছিলেন, দেশ গঠনের সদিচ্ছা যে তাঁর পুরোপুরি ছিল সে নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
দুঃখজনকভাবে সদ্য স্বাধীন দেশের নানাবিধ জটিলতায় বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার বাস্তবায়ন হতে পারেনি। তাঁর শাসনকাল নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন মত রয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় যে মানুষটি সবার নেতা হয়ে উঠেছিলেন বর্তমানের বাংলাদেশে তিনি যেন কেবল একটি বিশেষ দলের সমর্থকদের নেতা। এজন্য কি কেবল স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিই দায়ী?
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের ইতিহাস বোঝার জন্য বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দুটোই হতে দেয়া উচিত যাতে আমরা কোন মিথ নয়, আসল বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে পারি। আওয়ামী লীগের পরিধি ছাড়িয়ে তিনি যেন আবার দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি বাংলাদেশীর প্রাণের নেতা হয়ে ওঠেন সেজন্যই এই খোলামেলা আলোচনার দরকার।
যাচাই-বাছাই করা সত্য নিয়েই ইতিহাস। আমাদের দেশের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা হোক, সত্য প্রতিষ্ঠিত হোক; আর রাজনৈতিক পালাবদলের সাথে সাথে গায়ের জোরে ইতিহাসের পরিবর্তন চিরতরে বন্ধ হোক।
আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত।আসলে বঙ্গবন্ধু চর্চায় স্বাধীনতাবিরুধীচক্র অন্তরায় নয় বড় অন্তরায় তাঁর নিজ দল।স্বাধীনতা বিরুধীচক্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে বড়জোর এই চর্চাকে নিষিদ্ধ করতে পারে অথবা তাকে বিকৃত করতে পারে কিন্তু সে প্রচেষ্টা কার্যকর হবেনা।নিষিদ্ধের খড়গ বরং তার প্রতি অনুসন্ধিৎসুদের আগ্রহকে আরও বেগবান করবে।কিন্তু আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধুর ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে দুই ভাবে। প্রথমতঃ তারা তাঁকে সকল ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে এক অতিমানব হিসেবে প্রচার করতে আগ্রহী। তিনি কোনো ভুল করতে পারেন এটা তারা মানতে নারাজ।কেউ তাঁর কোনো কাজের বা সিদ্ধান্তের সামান্যতম সমালোচনা করলেই তাকে স্বাধীনতা বিরুধীচক্রের সাথে গুলিয়ে ফেলে।এ প্রক্রিয়াতেই সম্ভবতঃ ধর্মগুরুদের অতিমানবীয় চরিত্রগুলো গড়ে উঠেছে। শুধু স্তব করে যাও, সমালোচনা নৈবচ,নৈবচ। এভাবেই রক্ত মাংসের আসল মানুষটি ঢাকা পড়ে গেছে স্তাবকতার মেদ চর্বিতে।কিন্তু বর্বতমানের এই বস্তুনিষ্টতার যুগ অত্যন্ত নির্মোহ আর নির্মভাবে সেই মেদ চর্বিকে চাকু দিয়ে কেটে আসল মানুষটিকে পৃথিবীর মানুষের সামনে উপস্থাপন করছে আর মানুষ পরম বিষ্ময়ে দেখছে অতিমানবিক মোড়কের ভেতরের কদর্য মানুষগুলোকে। তবু কিছু মানুষ থেকেই যাবে যারা চোখের দেখাকে ভ্রম মনে করে পরম্পরাগত বিশ্বাসেই স্থির থাকবে এজন্য এই ছাইপাশগুলোও আরও কিছুকাল অস্থিত্ব ধরে রাখবে কিন্তু বঙ্গবন্ধুতো নবী নন,তিনি কোনো ধর্মও প্রচার করেননি। তিনি একটি নিপীড়িত জাতির নেতা।তাঁকে কেন এই অতিভক্তির আবর্জনায় ডুবানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।
দ্বিতীয়তঃ বর্তমান আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধুকে কিছুতেই দলীয় গন্ডির বাইরে যেতে দিচ্ছেনা। একদিকে তারা বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার বিরুদ্ধে আইন করছে (অবমাননার ব্যাখ্যা কীভাবে দেয়া হয়েছে জানিনা।শুধু কি অশালীন শব্দ প্রয়োগকেই অবমাননা বলা হবে না কি তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনাকেও অবমাননার পর্যায়ে বিবেচনা করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়) অন্যদিকে নিজেদের দলীয় প্রচার প্রপাগান্ডায় বঙ্গবন্ধুকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা সম্ভবতঃ তাদের এক ধরণের হীনমন্যতাপ্রসূত কেননা তারা হয়তো মনে করে বঙ্গবন্ধু সার্বজনীন হয়ে গেলে তারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাবে।এ ধারণা তাদের নৈতিক দুর্বলতাকে নির্দেশ করে।
উপরুল্লেখিত দুই ভ্রান্ত ধারণা থেকে আওয়ামীলীগের মুক্তি ঘটুক, আওয়ামী বলয় থেকে বঙ্গবন্ধুও মুক্তি লাভ করুন তিনি সর্বজনের হোন এটাই আমাদের কামনা।
“আমি সেই চল্লিশ পয়তাল্লিশ পার্সেন্টের একজন।কিন্তু আমি সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই অস্থিত্বশীল।বাংলার সেই কুখ্যাত মাৎসন্যায়ের কালে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলাম আমি।আমার বিচক্ষণতাতেই গোপালের আগমন এবং উত্থান পালযুগের।কৈবর্ত বিদ্রোহ সহ সকল বিদ্রোহ বিপ্লবে আমি ছিলাম।সিরাজদৌলার যুগে থেকে আমি অসহায় দর্শক।শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি সিরাজের পতন আর উমিচাঁদ মীরজাফরদের প্রাসাদ ষঢ়যন্ত্র। সূর্যসেন ক্ষুদিরামের দেশপ্রেম আর ফাঁসির মঞ্চে তাদের নির্ভীকতার স্ফুলিঙ্গ আমার শরীরে।তিতুমীরের প্রত্যয় আর ইংরেজের কামানের গোলায় তার বাঁশের কেল্লার ভস্মীভূত ছাই আমার শরীরে মাখা তবু আপনার শেষ দিনগুলোতে খন্দকার মোশতাকদের চক্রজালের বিস্তৃতি আর সত্যিকার আপনজন তাজুদ্দিনদের নিঃশব্দ প্রস্থান শুধু অসহায়ের মত চেয়ে চেয়ে দেখেছি। এখনও দেখছি মোশতাকদের প্রেতাত্না গণভবন বঙ্গভবনকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে।” চমৎকার।একটি স্যাটায়ার গল্পেও যে বঙ্গবন্ধুকে যথাযত ভাবে উপস্থাপন করা যায় এবং দেশের একটি ব্রিফ চিত্র তুলে ধরা যায় এ গল্প তার প্রমাণ। মুগ্ধ হলাম।
ধন্যবাদ।
অসাধারন!!!!!
ধন্যবাদ আপনাকে।