পয়লা বৈশাখ।

উৎসব মুখর রাজধানী। সূর্য্য উঠার আগেই ভিড় জমে যায় রমনা বটমূলে। ধর্ম্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এসে মিলিত হয় এক মোহনায়। মিলনের এ আনন্দে মেতে উঠে সবাই। গান গায়, নাচে, নূতন দিনের কবিতা শোনায়।

‘এসো হে বৈশাখ’ – সমবেত কণ্ঠে গেয়ে উঠলে, আহমদ তম্ময় হয়ে শোনে। উঠে। বছরের এই একটা দিন উৎসবে মেতে উঠে সে । খাদ্য ছাড়া মানুষ বাঁচে না যেমন, উৎসব ছাড়াও বাঁচে না।

চারদিকের হৈ চৈ হাঁক-ডাক আর করতালিতে আহমদের মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায় বারবার। নিবিষ্ট চিত্তে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে না পারায় বিরক্ত হয়ে এদিক ওদিক তাকায়। কিছু বলে না। জানে, বলে লাভ নেই। সদ্য কারামুক্ত বন্দীর মত মানুষগুলো আনন্দ করছে, যেন এই প্রথম তারা মুক্ত আকাশ দেখছে। বছরের এই একটি দিন কি অপূর্ব্ব অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মনে – ভাবতে গিয়ে অবাক হয়ে যায় আহমদ।

তার ভাবনায় ছেদ পড়ল। বাম কাঁধের উপর হাত রেখে কে যেন মৃদু চাপ দিচ্ছে। ঘুরে তাকাতেই দেখল, বিষ্ণু। কানের কাছে মুখ এনে বিষ্ণু ফিসফিস করে বলল, দোস, পেট যে আর মানছে না।

কথাটা রিচার্ডের কানেও গিয়েছিল। সে সচকিত হয়ে বলল, না, আর না, চল আগে নাস্তা করে নেই।

তিন বন্ধুর কেউ নাস্তা করে বের হয়নি। শুরু থেকে অনুষ্ঠান দেখবে বলে সূর্য্যোদয়ের অনেক আগেই মেস থেকে বেরিয়েছে। তারা আসন ছেড়ে উঠে পড়ল। লোকে লোকারণ্য । হাঁটা দায়। ভিড় ঠেলে ঠেলে তিন বন্ধু বেরিয়ে এল মূল অনুষ্ঠান থেকে। হাঁটতে হাঁটতে তারা এগিয়ে গেল খাবারের স্টলের সামনে । প্রতিটি স্টলের সামনে পান্তা ভাত, নানা রকম ভর্তা আর ইলিশ ভাজা। পরম তৃপ্তির সাথে আহাররত খদ্দেরদের দেখে , আহমদের মনে হল, এরা অনেকদিন ইলিশ ভাজা আর পান্তা ভাত থেকে বঞ্চিত। দাম জিজ্ঞেস করার সাহস হল না তাদের।

আজ ছুটি । টিউশনির ঝামেলা নেই কারও। সারাদিন ভবঘুরের মত ঘুরের বেড়াবে। একটু বেহিসাবে খরচ করলে বাঁকি বেলা আর ঘুরতে হবে না । সব আনন্দ মাটি করে দিয়ে মেসে ফিরে যেতে হবে। অল্প পয়সায় নাস্তা সেরে নেবার জন্য আহমদ হাঁটতে হাঁটতেই বলল, চল , টিএসসির সামনে, চা আর ব্রেড রোলস দিয়ে নাস্তা সেরে নেই।
ফাটাফাটি ! সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল বিষ্ণু, মাথা পিছু চার টাকা পঞ্চাশ পয়সা।

না খেয়ে সারাদিন হাঁটাহাঁটি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এর চেয়ে ঘরে চলে যাওয়াই ভাল।

তোর কি, ঘরে গেলেই তৈরী খাবার, ভাবনা নেই, আক্ষেপের সুরে বলে উঠল বিষ্ণু।

আহমদ যোগ করল, আমাদের মত মেসে থাকলে বুঝতে।

বিষ্ণু হাসতে হাসতে বলল, ঘরে বাইরে কোন তফাৎ নেই।

নাস্তার পর রিচার্ড সত্যি সত্যি বিদায় নিল।

আহমদ আর বিষ্ণু সারাবেলা এদিক ওদিক ঘোরাঘুরির করে বিকালে গিয়ে হাজির হল শিশু একাডেমি। হাইকোর্ট থেকে দোয়েল চত্বর পর্য্যন্ত যান চলাচল বন্ধ। তবুও হাঁটা দায়। ছোট বড় নানা বয়সের মানুষের ঢল। মেলা ফেরত প্রায় সবার হাতে বিচিত্র সব পণ্য। ভেঁপু বাঁশি আর ঢাক-ঢোলদের বিচিত্র শব্দে কানে তালা লাগার উপক্রম। আহমদ হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। পাঁচ-ছয় বছরের একটি ছেলে, এক হাতে বেলুন, অন্য হাতে মাটির খেলনা। যেন কেউ ছিনিয়ে নেবে, ভয়ে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে অভিভাবকের সাথে হেঁটে যাচ্ছে। নিজের ছোট বেলার গ্রাম্য জীবনের মেলা ফেরত দৃশ্যটি চোখের সামনে ভেসে উঠলে, সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পা বাড়াল।

সারা বিকেল দু’বন্ধু প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখল। যদিকে তাকায় চোখ আটকে যায়। যা চোখে পড়ে তাই কিনতে ইচ্ছে করে। কী কিনবে, এ নিয়ে দু’জনে দু’টানায় পড়ে গেল।
প্রকৃতির বুকে তখন ঝড়ের গোপন প্রস্তুতি সম্পন্ন। কেউ টের পেল না । সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত। মানুষের কোলাহলের আড়ালে প্রকৃতির থমথমে ভাবটা ঘনীভূত হয়ে, শেষে ভাঙ্গতে শুরু করল। দমকা বাতাস বইতে লাগল।

আর তখনই চারদিকে ছুটাছুটি হয়ে গেল। মানুষের হৈ চৈ হাঁক-ডাক ঝড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে লাগল। প্রবল পাক খেয়ে খেয়ে বাতাস হুমড় খেয়ে পড়ল সমগ্র প্রাঙ্গণে। কয়েকটি ডালপালা কোথা থেকে যেন উড়ে এল। প্রায় স্টলের ছাউনি উড়ে গেল, কতক দুমড়ে মুচড়ে পড়ল। যে যেভাবে পারছে, আসপাশের দালান-কোঠায় ঠাঁই নিচ্ছে।

আহমদ তম্ময় হয়ে দেখছিল ঝড়ের তাণ্ডব নৃত্য। বিষ্ণুর ধাক্কা খেয়ে সম্বিত ফিরে। শালা , তুফান আওনের আর সময় পাইল না। দিল সব মাটি কইরা।

প্রায় আধ ঘণ্টা পর ঝড় থামল। ঝড়ের সাঁ সাঁ শব্দ থেমে যাবার সাথে সাথে মানুষজন সব হুড়মুড় করে নিরাপদ আশ্রয় থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করল। সবার চোখে মুখে আতংকের ছায়া। তাদের হাঁক-ডাক, আর্তনাদে সমগ্র প্রাঙ্গণের বাতাস ভারী হয়ে উঠল। বাড়ী ফেরার তাড়নায় লোকজন দ্রুত রাস্তায় নেমে আসছে।

আহমদ আর বিষ্ণু কার্জন হলের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে হাঁটা শুরু করল। গেট পার হয়ে ফুটপাতের উপর দাঁড়াতেই ডানদিকে চোখে পড়ল তিন/চার বয়সের একটি বালক। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। দুই বন্ধু কয়েক মুহুর্ত্ত এদিক ওদিক তাকাল। বালকটির আসপাশে কেউ নেই। বিষ্ণু ফিসফিস করে বলল, খুব সম্ভব হারিয়ে গেছে।

কৌতূহলবশতঃ দু’জনে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। প্রতি মুহুর্ত্তে তারা আশা করচিল, হয়ত এক্ষুণি বালকটির অভিভাবক ছুটে এসে তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে। বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হবার পরও সে-রকম কিছু ঘটল না। তারা তখন হতাশ হয়ে পড়ল।

বিষ্ণু বলল, কী করবি?

কী করব ভাবছি।

নিয়ে যেতে চাস?

রেখে গেলে নির্থাৎ ছেলে ধরার খপ্পরে পড়বে, তাতে………।

এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গবেষণা করে লাভ নেই। যা ভাববার, যা করবার মেসে গিয়ে করব, বলে বিষ্ণু পা বাড়াল বালকটির দিকে।

আহমদও ছুটল পিছু পিছু।

চারদিক প্রায় নির্জ্জন হয়ে এসেছে। মাঝে মধ্যে দু’একটা রিক্সা ঘণ্টি বাজিয়ে চলে যাচ্ছে। সবারই ঘরে ফেরার তাড়া।

আহমদ উবু হয়ে নাম জিজ্ঞেস করল। বালকটি তার কথায় সাড়া না দিয়ে পূর্ব্ববৎ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। বিষ্ণুর দিকে তাকিয়ে আহুমদ বলল, কী করবি?
চল নিয়ে যাই।

যদি কোন অসুবিধা হয়।

যা হবার হবে, এখন ভাইব্যা লাভ নাই।

সারা পথ তারা গভীর উৎকণ্ঠায় কাটাল। প্রতি মুহুর্ত্তে তারা আশংকা করছিল, এই বুঝি বালকটির আত্মীয়-স্বজন সামনে এসে দাঁড়াবে, আর ছেলে ধরা বলে চেঁচিয়ে উঠবে; কিন্তু সে-রকম কিছুই ঘটল না।

তিনতলা বাড়ীর সিঁড়ি সংলগ্র একটি ছোট্ট রুম। মালিকের নিজ গ্রামের ছেলে আহমদ। তার উপর উভয়ে পালাক্রমে মালিকের ছেলেমেয়েদের পড়ায়। তাই ফ্যামিলি বাড়ীতে তারা ঠাঁই পেয়েছে।

পরদিন সকালে রিচার্ড এসে অবাক। সে বালকটির দিকে চোখে চোখ রেখে বলল, কী ব্যাপার?

মেলায় হারিয়ে গিয়েছিল, বিষ্ণু বলল।

সর্ব্বনাশ ! এখন কী হবে? রিচার্ডের কণ্ঠ থেকে বিস্ময় ঝরে পড়ে।

ভাবছি, পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দেব, বলল আহমদ।

দেখে তো মনে হচ্ছে ধনীর দুলাল।

ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে এ সুবাদে তোদের বেকার জীবনের অবসান হতে পারে, বলে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল রিচার্ড।

আগে তো অভিভাবকের সন্ধান পাই, তারপর অন্য ভাবনা, বলল বিষ্ণু।

অনেক শলা পরামর্শ করে তিনবন্ধু মিলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দিল । তারা ভেবেছিল,

বিজ্ঞাপণ ছাপা হবার একদিনের মধ্যেই অভিভাবকের সন্ধান মিলে যাবে। তিনদিন চলে যাবার পরও সে-রকম কিছু ঘটল না। আজকাল কারও উপকার করতে গেলেই বিপদ। কেন যে মূর্খের মত কাজটা করতে গেলাম, ভেবে অস্থির হয়ে পড়ে আহমদ। কিন্তু মুখে সে কথা না বলে , বলল , ভাল কাজ করতে গেলে বিপদ হয়-ই।

ওদিকে অনেক চেষ্টার পরও বালকটির নাম-ধাম কিছুই জানতে পারল না তারা । কোন কিছু জিজ্ঞেস করলেই ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে, নয়তো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।
বালকটির ভবিষ্যৎ নিয়ে মহা ফাঁপরে পড়ে গেল তারা। নিজদের কাছে কতদিনই বা রাখা যায়? তিন বন্ধু চুপচাপ।

নীরবতা ভাঙ্গল রিচার্ড, বলল, এতিমখানায় রেখে এলে কেমন হয়?

চমৎকার ! সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল বিষ্ণু।

বালকটি হিন্দু, না মুসলমান, না খ্রিস্টান , কিছুই তো জানি না। এতিমখানায় কি নেবে ? বলল আহমদ।

দেশটার সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজন মুসলমান, মুসলমান হওয়াই স্বাভাবিক। বলল রিচার্ড।

কিন্তু মেলায় তো শুধু মুসলমানরাঈ যায় না, হিন্দু খ্রিস্টানরাও যায়। বরং মুসলমানদের মধ্যে কেউ কেউ মেলা বিরোধী। বলল আহমদ।

বিষ্ণু কোন কথা না বলে চুপচাপ উঠে গিয়ে একটানে বালকটির হাফপ্যান্ট খুলে ফেলল। নাহ্‌, ব্যাপারটা আরও অনিশ্চিত হয়ে গেল।
আচ্ছা , বালকটির ধর্ম্ম সনাক্তকরণের কোন উপায়ই কি নেই ? বলল রিচার্ড।

কে জানে? এমন বিপদে পড়ব, বলল বিষ্ণু।

এখানে বসে বসে তর্ক্ক করে কোন লাভ নেই। বরং এতিমখানায় নিয়ে যাই, দেখি কী হয়? বলল আহমদ।

গুড, এক সঙ্গে বলে উঠল রিচার্ড এবং বিষ্ণু।

বিকালে বালকতিকে নিয়ে তারা হাজির হল এতিমখানায়। সবকিছু শুনে পরিচালক সাফ জানিয়ে দিলেন, বালকটির নাম-ধাম-ধর্ম্ম পরিচয় না জেনে তদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।
অনেক অনুনয় বিনয় করেও আহমদ পরিচালককে রাজী করাতে পারল না ।

বিষ্ণু ক্ষুব্দ কণ্ঠে বলল , আচ্ছা বালকটির ধর্ম্ম সনাক্তকরণের কোন উপায় কি জানা আছে আপনাদের?

না, আমার জানা নেই। তবে আপনারা কোন আলেমের কাছে যেতে পারেন। তিনি হয়ত এ ব্যাপারে আপনাদের সাহায্য করতে পারেন।

ফিরতি পথে তারা এক আশ্রমে গেল। সেখানেও একই অবস্থা। বালকটির নাম-ধাম-ধর্ম্ম-বর্ণ না জেনে , তাদের পক্ষে রাখা সম্ভব নয়।

অগত্যা তিন বন্ধু বালকটিকে নিয়ে বিষণ্ন মনে মেসে ফিরে এল। এখন যে করেই হোক, বালকটির নাম-ধাম-ধর্ম্ম-বর্ণ উদ্ধার করতে হবে। নামটা জানা গেলেও, ধর্ম্ম বর্ণ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যেত।বালকটির নামোদ্ধারের জন্য তিন বন্ধু পালাক্রমে অনেক চেষ্টা করল; কিন্তু কিছুই বের করতে পারল না । কোনকিছু জিজ্ঞেস করতে গেলে , সে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে, নয়তো তার ঠোঁট দু’টো বেঁকে যায়।

অবশেষে তিন বন্ধু একজন আলেমের কাছে গেল। ধর্ম্ম বিষয়ে আলেমের অনেক নাম-ডাক। বালকটিকে একপাশে বসিয়ে, যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্ব্বক আহমদ বলল, আচ্ছা হুজুর , মানুষের ধর্ম্ম সনাক্তকরণের উপায় কী?

আলেম হাঁ করে চেয়ে রইলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন না, এরা কী বলতে চাইছে, বললেন, বুঝতে পারলাম না।

ধরেন ধরেন, একজন মানুষের নাম-ধাম কিছুই জানি না, তার ধর্ম্ম কীভাবে সনাক্ত করব ?

কেন, টুপি, দাড়ি পোশাক-আশাক দেখে তো মুমিনকে চেনা যায়।

যার এসব কিছুই নেই, তাকে ? জিজ্ঞেস করল রিচার্ড।

মানে?

মানে, একটি বালক , যে কথা বলতে পারে না, তার ধর্ম্ম সনাক্ত করব কেমন করে?

মহা মুস্কিল। ওর গায়ে তাবিজ কবজ, কিছুই নেই ?

না।

পৈতা?

না।

ক্রুশ?

ঐসব কিছুই নেই হুজুর।

বালকটির প্যান্ট খুলে ফেলার আদেশ দিলেন, হুজুর।

বিষ্ণু বলল, ওর নুনু কাটা হয় নাই।

আমার নামাজের সময় হয়ে গেল।আমি এখন যাই।

মসজিদ, মন্দির , গীর্জা ঘুরে কোথাও বালকটির ধর্ম্ম সনাক্তকরণের কোন উপায় তারা খুঁজে পেল না। তিনজনই হতম্ভব। ব্যাপারটা এরকম হবে, কেউ ভাবতে পারেনি।
একটা জীবন্ত মানুষ , সে সত্য নয়; সত্য হল , তার জন্ম পরিচয়, ধর্ম্ম। ধর্ম্ম বর্ণ কথাটা মনে উদয় হতেই, তার মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরতে লাগল। জন্মের পর ধর্ম্মের সিল মেরে না দিলে, বালকটিকে নিয়ে এ সমস্যায় পড়তে হতো না । যে কোন আশ্রয়ে রেখে এলেই চলত।

চোখের সামনে বসে থাকা বালকটির উপর চোখ পড়তেই আহমদের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। উপস্থিত বালক ছাড়া আর সব তার কাছে মিথ্যে মনে হল। আর তখনই তার নিষ্ক্রিয় বিশ্বাসের ভিত নড়ে উঠল।

কিরে , দার্শনিকের মত গালে হাত দিয়ে কী ভাবছিস?

ছোট্ট ঘরটিতে এতক্ষণ যে স্তব্ধতা বিরাজ করছিল, রিচার্ডের কথায় সেই স্তব্ধতা ভেঙ্গে গেলে সবাই সচকিত হয়ে উঠল। আহমদ মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, ভাবছি।
ভেবে আর কী হবে, একটা উপায় তো বের করতে হবে, বলল, বিষ্ণু।

নিজেদের ক্ষমতাও নেই যে ওকে রেখে দেব, আক্ষেপের সুরে বলল, রিচার্ড।

ধর, আমরা একে রেখে দিলাম…

আহমদের কথা কেড়ে নিয়ে বিষ্ণু এবং রিচার্ড একসাথে বলে উঠল, একে লালন-পালন করবে কে?

আহ্‌,বিরক্তির সাথে বলল আহমদ, ধর, একে আমরা লালন-পালন করে বড় করলাম। যেহেতু ওর ধর্ম্ম জানি না, তাই ধর্ম্মীয় শিক্ষা দেয়া হল না । সেক্ষেত্রে বালকটি কি বড় হয়ে, আমাদের বিবিধ ক্রিয়া-কলাপ দেখে হাসি ঠাট্টা করবে ? আরও ষ্পষ্ট করে বললে, আমাদের কি পাগল ভাববে?

বিষ্ণু আর রিচার্ড হাঁ করে আহমদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।

( প্রায় ত্রিশ বছর আগের লেখা )