জন্মভূমিকে কে না ভালবাসে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমার দেশপ্রেম অত উচ্চকিত নয় তবে তা একেবারেই নেই তাও নয়। এখন দূর প্রবাসে চিরদিনের জন্য স্থায়ী হয়ে গেলেও প্রায়ই মনে হয় দেশে থেকে গেলে কি খুব খারাপ হত? যখনি বৃষ্টির দুএক ফোঁটা গায়ে এসে পড়ে তখনি মনে পড়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতুত বর্ষাই ছিল। হলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সামনে প্রায় দিগন্তবিস্তৃত ধানক্ষেতের ওপর অবিশ্রান্ত বর্ষণ ত আমাকেও দিশাহারা করে দিত। কালবৈশাখীর যে রুদ্ররুপ আমি দেখেছি তার বর্ণনা কি কোনো ভাষায় সম্ভব? সাহিত্য কি সত্যিই অতটা শক্তি ধারণ করে? আকাশে ক্রমঘণীভূত ভয়ংকর সুন্দর কালো মেঘের মাদকতাও ত আমাকে স্পর্শ করে গেছে। আমার কাছে তখন মনে হত মৃত্যুর পর এই একটা জিনিসের অভাবই হয়ত আমি বোধ করব। অন্ধকার রাতে গ্রামের বাড়ির টিনের চালে অবিরাম বৃষ্টির শব্দের জন্য যেকোনো অপরূপা মোহনীয়া নারীর ডাকও বোধহয় অগ্রাহ্য করতে পারতাম। অবশ্য এ ব্যাপারে সামান্য সন্দেহ আছে, কারণ ওই সৌভাগ্যটি আমার হয়নি। তবে হলেও সাড়া দিতে যে দেরী হত তাতে সন্দেহ নেই।
দেশ ছাড়ার আগে আমার সর্বশেষ পোস্টিং ছিল হাওরের মধ্যে অবস্থিত একটি হাসপাতালে। সেখানে যাওয়ার পথে সাগরসম হাওরের ভালবাসায় হাবুডুবু খেয়েছি তাওত মিথ্যে নয়। শেষবারের মত যখন সেখান থেকে চলে আসি সেদিন প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। এক একেকটা ঢেউ আমাদের ট্রলারটিকে নিয়ে যেন লোফালুফি খেলছিল। ভয়ত পাচ্ছিলামই সাথে এও মনে হচ্ছিল আর কখনোত দেখা হবে না। যেই হাওরে পোস্টিংকে সবাই অভিশাপ মনে করত আমার কাছে তা পুরস্কার বলেই মনে হত। অবশ্য যার ভরা পূর্ণিমার রাতে বিশাল মালবাহী নৌকার ছাদে বসে হাওরের রূপ দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার পক্ষে এর মর্মোদ্ধার করা কঠিন।
আর শীতের কুয়াশাঢাকা সকালের কথাই বাদ দিই কি করে? কুয়াশার পর্দা ভেদ করে মাটির উঠোনে ভেসে আসা একফালি রোদ তাও কি আর কোথাও খুঁজে পাব। আদিগন্ত শিশিরভেজা ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়ায় যে সুতীব্র ভাললাগা তা কি ভোলা সম্ভব? আর আমার দেশের অনেকটা অপরিচিত মানুষেরও যে সহজ,সরল আন্তরিকতার পরিচয় হামেশাই পেয়েছি তাও ত অনুল্লেখ্য নয়। অবশ্য এটা একমুখী নয়। এর শ্রেণীগত দিকও আছে। আমার শ্রেণীগত অবস্থানও হয়ত আমাকে এই সুযোগ করে দিয়েছিল।
এতকিছু যেখান থেকে আমি পেয়েছি সেখানে এই ‘কিন্তু‘ কেন? কারণ আমি মনে করি আমি যে দেশে জন্ম নিয়েছি তার এত অসামান্য সৌকর্য্য থাকা সত্ত্বেও তার গুরুতর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেই দেশের মানুষও তার ব্যতিক্রম নয় তাদের অনেক অতুলনীয় গুণ থাকলেও। কারণ আমি কোনো অবাস্তব স্বপ্ন,অলীক আশার তরীতে উঠতে রাজি নই। কোনো তথাকথিত হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যে নামক ভাবালুতায় গা ভাসিয়ে দিতে রাজী নই। আমি জানি দেশ বর্তমানে যে অবস্থানে আছে সেখান থেকে তার সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও বৈষয়িক উন্নতি হতে পারে। কিন্তু তার চিন্তা,মননশীলতা ও বৌদ্ধিক জগতে যে প্রকট বন্ধ্যত্ব বিরাজমান তার কোন পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি না। মুক্তচিন্তার যে নিদারুন সংকট তার উত্তরণ নিয়েও কোনো কল্পনার জগতে ভেসে যেতে রাজী নই।
তাহলে কেন আমি এরকম ভাবতে বাধ্য হচ্ছি? এর একটাই কারণ আমাদের দেশটা প্রায় সম্পূর্ণ মুসলিম অধ্যুষিত। পৃথিবীর গত দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে একটি মুসলিম রাষ্ট্র বা রাজ্যও নেই বা ছিল না যারা এর ব্যতিক্রম ছিল। আমাদের দেশ তার অন্যথা হবে ভাবার ত কোনো কারণ নেই। আমি কি মুসলিম বিদ্বেষী? অবশ্যই না। আমি একজন অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও অকিঞ্চিৎকর মানুষ হওয়ার পরও নানা কারণে আমার বন্ধু,পরিচিত,স্বল্পপরিচিত এমনকি অপরিচিত মানুষের কাছ থেকেও যে স্নেহ ভালবাসা পেয়েছি তা খুব মানুষই পায়। তারা প্রায় সবাই মুসলমান। তাদের প্রতি বিদ্বেষ এর প্রশ্নই আসে না। তবে আমি যে নাস্তিক ও যেকোনো ধর্মের সমালোচনার অধিকারে বিশ্বাস করি তা জানলে তাদের আচরণ কি হত তা নিয়ে কিন্তু আমি যথেষ্ট সন্দিহান। তাছাড়া তাদের পূর্বপুরূষেরাই যে সম্পূর্ণ ধর্মীয় কারণে পাকিস্তান তৈরী করেছিলেন তাই বা ভুলি কি করে। যার ফল প্রায় একতরফাভাবে সংখ্যালঘুদেরকেই ভোগ করতে হয়েছে। এই তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেও যে প্রক্রিয়া এখনো চলমান। তাই সে ধর্মটির যে অসহিষ্ণু রুপ আমি তার তীব্র বিরোধী। অনেকেই বাংগালীর সহজ,সরল মানসিকতার কথা বলবেন, ধার্মিক হয়েও অনেকেই অপর ধর্মের প্রতি কত শ্রদ্ধাশীল সেই প্রসঙ্গ টেনে আনবেন। কিন্তু এর সাথে ধর্মের কোনো সম্বন্ধই নেই। এটা আদিম সাম্যবাদী টোটেমভিত্তিক সহজিয়া সমাজের ধ্বংসাবশেষ। যা বহু হাজার বছর পেরিয়ে নাথ, যোগী সম্প্রদায়, বৌদ্ধ সহজযান, বৈষ্ণবদের হাত ধরে আমাদের সমাজে আশার সলতে হয়ে টিমটিম করে জ্বলছে। বাউল সম্প্রদায় যার সরাসরি উত্তরাধিকারী। তবে সেই ম্রিয়মাণ ও ক্ষীণকায় বাউল গোষ্ঠীর ওপর যে অসহিষ্ণুতার তান্ডব দেশজুড়ে চলছে, তার কারণ খুঁজলেও ত সেই ইসলাম ধর্মই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অনেকেই ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন রূপের কথা বলেন। আমি বলি সবই এক খালি পরিবেশনের পাত্রটিই আলাদা।
ইসলাম ধর্ম যেখানেই তার প্রভাব বিস্তার করেছে সেখানেই তার লোকজ সংস্কৃতির মূলোৎপাটনের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। এখানে আফগানিস্তানের সুপ্রাচীব কালাশ সম্প্রদায়ের কথা বলা যায়। তারা সেই দেশের কাফিরিস্তান প্রদেশে বসবাস করত। প্রদেশের নামটি খেয়াল করতে অনুরোধ করছি। যাই হোক এখন কিন্তু এই নামে কোনো প্রদেশ বা কালাশ নামে কোনো সম্প্রদায় আপনি সেখানে খুঁজে পাবেন না। আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে সেই দেশের তৎকালীন রাজা আব্দুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযানের মাধ্যমে তাদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়। যেহেতু তারা তখন আর কাফের নয় প্রদেশের নাম রাখা হয় নূরীস্তান। এখনো কিছু কালাশ সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ পাকিস্তানের চিত্রল উপত্যকায় বসবাস করেন। তবে আর কিছুদিন পরেই যে এই অতি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী গোষ্ঠীটি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। না তারা মরবে না তাদেরকে শুধু মুসলমান বানানো হবে। যে প্রক্রিয়া এখন চলমান। সম্প্রতি শুধু ইসলাম থেকে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হবার জন্য সুদানে একজন মহিলাকে ফাঁসীর আদেশ দেয়া হয়েছিল। অবশ্য পরবর্তীতে চিরদিনের জন্য তাকে দেশ ছাড়ার শর্ত দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া মালয়েশিয়ায় একজন নারীর পিতা মুসলমান ছিলেন বিধায় তাকে অবশ্যই সেই ধর্মই পালন করতে হবে বলে হাইকোর্টে রায় দেয়া হয়। এখন যেটি সুপ্রীম কোর্টে বিচারাধীন। সেই নারী জন্মের পর তার মায়ের বৌদ্ধধর্মই পালন করে আসছিলেন। তার মায়ের সাথে তার পিতার বিয়ে হয়নি এবং সেই পিতাকে তিনি কোনোদিন চোখেও দেখেননি। সন্তানের জন্ম হবার আগেই যেই পিতা তার সমস্ত দায়িত্ত্ব ত্যাগ করেছেন। এই উদাহরণগুলো তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া যারা ইসলামের বিভিন্ন রূপ আর বিভিন্নমাত্রার সহনশীলতার কথা বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলবার চেষ্টা করেন।
তাই ইসলাম ধর্মে যে সমন্বয়ের কোন জায়গা নেই তা বলাই বাহুল্য। বিশ্বের প্রতিটি ধর্মই তার প্রয়োজনে বিভিন্ন জায়গায় লোকজ ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে সমন্বয় করতে বাধ্য হয়েছিল। আমেরিকা মহাদেশের রেড ইন্ডিয়ানদের কথা এখানে বলা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়াবহ গণহত্যা ও অত্যাচারের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও তাদের ধর্ম পুরোপুরি লোপ পায়নি। যদিও প্রাথমিক যুগে খ্রিস্ট ধর্ম সরাসরি এসবের সাথে জড়িত ছিল। চীন ও জাপানে যথাক্রমে কনফুসীয় ও শিন্টো মতবাদের সাথে বৌদ্ধ ধর্মের সম্মিলনের কথাও এখানে বলা যায়। ভারতবর্ষ ও তিব্বতে তান্ত্রিক মতবাদের সাথেও এই ধর্মের মিথস্ক্রিয়া সম্ভব হয়েছিল। ইসলামের ইতিহাসে এরকম একটা উদাহরণও কি খুঁজে পাওয়া যাবে?
আধুনিক মানবসভ্যতায় যদি ফিরে আসি, এখন পর্যন্ত কেন একটা মুসলিম দেশেও ইউনিফরম সিভিল কোড চালু হয়নি,তার দোষ কি শুধু ওয়াহাবী আর সাম্রাজ্যবাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে পার পাওয়া যাবে? কেন কোন মুসলিম দেশে ধর্ম সমালোচনার অধিকার নেই? কেন বিধর্মী,অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিতদের বা অবিশ্বাসীদের চরম লাঞ্ছনা বা হত্যার সম্মুখীন হতে হয় মুসলিম দেশগুলোতে? একই কথা খাটে সমকামীদের ক্ষেত্রেও। অনার কিলিং জিনিসটি কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কেন শুধু মুসলিম দেশগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়? এমনকি পশ্চিমা দেশে অবস্থানরত মুসলিম পরিবারগুলোতে এর ভয়ংকর প্রাদুর্ভাবের উৎসমুল কোথায়? এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য মূল উৎস পাশ কাটিয়ে শুধু আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করে কোনো লাভ হবে? এর জন্য যতদিন না সরাসরি ধর্মকে দায়ী করে এর সংস্কার সাধন করা হবে ততদিন শুধু ধন্য আশা কুহকিনী বলেই দিন কাটাতে হবে। অবশ্য আদৌ এর সংস্কার সম্ভব? যেখানে একে সর্বকালের সব মানুষের জন্য আদর্শ ও নির্ভুল হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইসলামের কোনো কোমল রূপের আশায় বসে থাকলে তা মেঘের উপর প্রাসাদ রচনা করবার মতই হবে।
তাই পরিশেষে এটুকুই বলতে চাই বাংলাদেশ হয়ত একদিন আর্থিকভাবে বা বৈষয়িক দিক দিয়ে বা নিদেন পক্ষে মানব উন্নয়ন সূচকেও অনেক উন্নতি লাভ করবে,এমনকি তুলনামূলকভাবে টেকসই গণতন্ত্রও হয়ত ধারণ করবে; কিন্তু একটি পরিপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ উদার সহনশীল রাষ্ট্রে পরিণত হবে তা নৈব নৈব চ। অন্তত ইসলাম ধর্ম যতদিন পৃথিবীতে আছে ততদিন নয়। যে দেশে ঘরের ভেতরে অবিশ্বাস বা নাস্তিকতার চর্চা দূরে থাক ক্ষেত্রবিশেষে নামাজ,রোজা পালন না করলে বিশ্বাসীদেরই নিগ্রহ পোহাতে হয় সেখানে এর অন্যথা আশা করা নেহাতই বোকামি। তাই আমার জন্মভূমির প্রতি ভালবাসার কোনো শেষ না থাকলেও তাতে একটু আধটু অভিমানের ছোঁয়া চিরকালের জন্যই থাকবে। ভালবাসার নি:সীম আকাশে চিরকালই থেকে যাবে গাঢ় বিষাদের মেঘের আনাগোনা।
আপনার লেখায় কিছু নতুন তথ্য পেলাম । যেমনঃ কালাশ সম্প্রদায়ের কথা। আর আপনার লেখার শেষ প্যারাটির ভাবনা মাঝে মাঝে আমাকেও ভাবায় বৈ কি।
বিষয়টি নতুন নয়। তবুও সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্ট এবং মূর্তি ভাঙ্গা-হিঁদু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমনের পর বিষয়টি নতুন করে প্রাসঙ্গিকতা পেয়ে গেছে ।
ভারত -পাকিস্থান-বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশে আইন হাতে তুলে নিয়ে বিচার করে খুন পর্যন্ত করে দেওয়া সাধারন চরিত্র। তা সে ধর্ম অবমাননা হোক বা চুরি -ডাকাতি বা অন্য কোন অভিযুক্ত। তা সে অন্য প্রসঙ্গ –
এখানে জনৈক রসরাজ কাবা তে হিঁদু ভগবান ছাপিয়ে দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে । যদিও তসলিমা তার টুইটারে জানাচ্ছেন ওই ব্যাক্তি একটি পোস্ট দিয়েছে – ‘এই জাতিয় কোন পোস্ট দেওয়ার সাহস বা মানসিকতা কোনটাই তার নেই’ । ফেসবুকে হ্যাক করে অন্যের নামে পোস্ট দেওয়া যায় এ ত সম্ভব। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। আদালত বিচার করুক সে দোষী কি না ।
ভারতে জনৈক মহম্মদ আক্লাখ উত্তর প্রদেশে গোমাংস নিষিদ্ধ জেনেও বাড়িতে ওই মাংস রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত । এখানেও হিঁদু জনতা মহম্মদ আক্লাখকে নিজেরা বিচার করে খুন করে। সারা দেশে নিন্দার ঝড় ওঠে ।
এখানে কিন্তু একটা বিষয় তফাৎ লক্ষণীয় । মহম্মদ আক্লাখকে আক্রমন করলেও তার ‘ অপরাধের’ জন্য অন্য মুসলমানদের গায়ে কেউ হাত দেয় নি । এখানে কিন্তু একজন হিঁদু ব্যাক্তির বিরুধ্যে অভিযোগ এনে পুরো হিঁদু সম্প্রদায়কেই আক্রমন করা হল । এখানেই মুসলমানদের সাথে অন্য ধর্মের তফাৎ ।
দেখে শুনে একটা কথাই বলতে ইচ্ছে করছে – সুধাংশু পালা। এই দেশ অভিশপ্ত । যত শীঘ্র পারিস পালা এই দেশ থেকে ।
কোন সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রথমেই তা চিহ্নিত করতে হবে।সমস্যা যে ইসলাম তা আমাদের দেশের মানুষ এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারে নি।
লেখক সেই সমস্যা চিহ্নিত করেছেন,সামান্য পরিমান সচেতন মানুষ যারা ইন্টারনেট ব্যবহার শিখেছে তাদের মধ্যে কিছু মানুষও ইসলাম কে মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছে।
এই সমস্যা চিহ্নিতকরণ যতদিন বড় পরিসরে করা সম্ভব হবেনা ততদিন হয়ত সমাধানও আসবে না।
ধন্যবাদ।
সব ধর্মই খারাপ, সব ধর্মগ্রন্থই খারাপ। তবে সভ্যতার ক্রমবিকাশে অন্য সকল ধর্মের অনুসারীরা অনেকখানি মানবিক হয়ে গেছে। গ্রন্থে কী লেখা আছে তা তারা জানেও না, মানেও না। আজ এই বিশ্বায়নের দিনে অন্য সকল ধর্মাবলম্বীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব; তা আমরা বিশ্বজুড়ে দেখতে পাচ্ছি। বর্তমানে ইসলাম ও মোসলমানই একমাত্র ফণা-তোলা বিষধর সাপ। তবুও অধিকাংশ মোসলমানই কোরান হাদিস ও নবীজির মতো অতোটা খারাপ নয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে ইসলাম ও মোসলমানদের যে ভয়াবহ রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি তার প্রধান কারণ হচ্ছে নামে মাত্র মোসলমান শাসকগোষ্ঠীর ইসলামকে রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করা। এই শাসক কাম শোষক-শ্রেণী যদি প্রকৃত মোসলমান হতো তবে কোনো নারী মোসলমান কোনোভাবেই রাষ্ট্রপ্রধান হতো না। ইসলাম নিয়ে রাজনীতির সুবিধা ওরা ভালো ভাবে উপভোগ করছে। সর্বনাশ যা হবার তা তো সাধারণ মানুষের। সংখ্যালঘু হলে তো আর কথাই নেই।
ধন্যবাদ। বাংলাদেশের মানুষ স্বভাবগতভাবেই সহজসরল তার কারণ এবং কেন এই গুণটির সাথে ইসলাম ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই তা আমি লেখায় উল্লেখ করেছি।
কিন্তু তারা ধর্মেত মুসলমান এবং শুধু এই কারণেই তাদেরকে খুব সহজেই উস্কে দেয়া যায়। অন্যান্য সকল ধর্মের সাথে ইসলামের পার্থক্য এখানেই। ইসলাম ধর্ম মূলগতভাবেই চরম অসহিষ্ণু। ভয়টাও সেখানেই। এই ধর্মের যতরূপই থাকুক। এই একটি ক্ষেত্রে সবাই এক।
ধন্যবাদ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্য ধর্মগুলোর প্রাসঙ্গিকতা নেই বললেই চলে। তাই ইসলাম ধর্মের নাম নেওয়া। আর কিছু ব্যতিক্রম বাদে অন্য ধর্মগুলো এমন নিরামিষ রূপ ধারণ করেছে, বৈশ্বিকভাবেও একই কথাই বলা চলে।
“ইসলাম ধর্ম যত দিন আছে ততদিন নয়” এখানে ইসলাম বাদ দিয়ে শুধু ধর্ম লিখলে ভাল হত বোধহয়। কারন শেষ রাতে সবাই একত্রেই মিলিত হয়(অনেকটা রসুনের মত)।যাই হোক সুন্দর লেখা।
ধন্যবাদ। আসলে সমস্যাটাত বৈশ্বিক। এর সমাধানসূত্রকে শুধু বাংলাদেশের ক্ষুদ্র গন্ডীতে খুঁজলে চলবে না। এর সাথে বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের প্রভাবে বিরাজমান প্রবল অর্থনৈতিক বৈষম্যকেই হিসেবে আনতে হবে।
কর্পোরেশন দ্বারা প্রভাবিত সাম্রাজ্যবাদী রাষ্টসমূহের বিশ্বের সবপ্রান্তের সম্পদের ওপর দখল প্রতিষ্ঠা করবার যে আগ্রাসী মনোভাব তাকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। তাই সমাধান পাওয়া খুবই কঠিন।
আর ধর্ম হিসেবে ইসলাম অনেক বেশি অর্গানাইড। এর সংস্কার ছাড়া কোন কিছু আশা করা কঠিন। আবার সেই একই কারণে তা অনেকটা অসম্ভব। কারণ কোরানেই বলা আছে এটা নির্ভুল, সংস্কারের প্রশ্নই এখানে অবান্তর। তাই সীমাবদ্ধতা ঢাকার জন্য বিভিন্ন রূপের অবতারণা অনেক প্রগতিশীল ব্যক্তি করে থাকেন। কিন্তু বীজ থাকলে ত থেকেত মহীরুহ হতেই পারে। গোঁড়ায় হাত না দিয়ে শুধু ডালপালা নিয়ে ভাবলে কোন লাভ আছে কি?
তাই চাইলেও আমি আশাবাদী হতে পারছি না। নিরাশাই এখন আমার আশ্রয়।
পৃথিবীর অনেক দেশের মুসলিমদের তুলনায় বাংলাদেশী মুসলিমদের একটা বড় অংশ পরধর্মের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল, একথা সত্যি । তবে মূল প্রশ্ন হচ্ছে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে ধর্ম কি রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের মূল চালিকা শক্তি হবে নাকি ধর্মকে কেবল ব্যক্তিগত পরিসরে সীমাবদ্ধ রেখে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। যদি প্রথমটা সত্যি হয় তাহলে এই দেশে অন্য ধর্মের অনুসারীদের কোন গতি নেই। আর দ্বিতীয়টি সত্যি হলে আপনার অভিমান বা বিষাদের কোন কারন থাকবে না; যদিও আমাদের জীবদ্দশায় সেই সাম্যের বাংলাদেশ দেখে যেতে পারব এমন ভরসা পাই না।