শাহনাজ রহমতুল্লাহ আমার অত্যন্ত প্রিয় কণ্ঠশিল্পীদের একজন। তাঁর কতো গান শুনে যে আমি সাগরের ঢেউ হয়ে যাই, ফুলের রেণু হয়ে যাই, পাখির ডানা হয়ে যাই! আমি সিক্ত হই, অনেক সময় তপ্ত মনে ঝরঝর বৃষ্টি নামে। বেশ কিছুদিন ধরে ইউ টিউব থেকে চিরুনী অভিযান চালিয়ে খুঁজে খুঁজে তাঁর গানই শুধু শুনছিলাম। এমত অভিযান চলাকালীন অবস্থায় সেদিন চোখে পড়লো এক আশ্চর্যজনক ব্যতিক্রমী ভিডিও। ভিডিওটার উপরে নাম লেখা আছে – শাহনাজ রহমতুল্লাহ। কিন্তু সেই মহিলা দেখতে আদৌ আমাদের শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহর মত না। আমি ভেবেছিলাম, একই নামের অন্য কেউ নিশ্চয় এবং ফানী কিছু করেছে হয়ত। কৌতুহল বশতঃ ভিডিওটিতে ক্লিক করি। গোলাপী রঙের বাহারী রঙচঙে জরী ও চুমকিতে আবৃত এক অদ্ভুত কাপড়ে মহিলা তাঁর কান, মাথা, চুল, হাত ভালো ভাবে আচ্ছাদিত করে রেখেছেন। সামনে হারমোনিয়াম। হারমোনিয়ামে সুর তুলছেন। কিছুক্ষণ পরে তাঁর চেহারাটা আমাদের শাহনাজ রহমতুল্লাহর মতো মনে হতে লাগলো আমার। আরো কিছুক্ষণ পর আমি নিশ্চিত ভাবেই সনাক্ত করতে সক্ষম হলাম যে, ইনি অন্য আর কেউ নন, আমাদের শাহনাজ রহমতুল্লাহই। তবে ইনার এ শোচনীয় অবস্থা কেন? এই মুক্ত আলোর বিহঙ্গের গায়ে ঘোর কৃষ্ণপক্ষের আস্তরণ কে চাপিয়ে দিলো? তারপর মনে হলো, তিনি হয়ত কোনো ইসলামী গান গাইবেন। তাই এই রকম পোষাক পরেছেন গানের প্রয়োজনে। আমাকে সম্পূর্ণ নিরাশ করে গান গাইতে শুরু করলেন প্রিয় শিল্পী – খোলা জানালায় চেয়ে দেখি তুমি আসছ জানাতে সুপ্রভাত……। তারপর একের পর এক।
মনটা বড় দুঃখ ভারাক্রান্ত হলো আমার। ছোটবেলা থেকে দেখেছি উনাকে, শুনেছি উনার মধুঝরা কণ্ঠের গান। দেখেছি উনার মেঘের মত চুলগুলি উন্মুক্ত। দেখেছি সেই উন্মুক্ত মেঘের মতো চুলের রাশি উন্মুক্ত বাতাসে উড়ছে আর উনি গলা ছেড়ে গাইছেন। আজ কেন এমন হলো? কেন নিজের আজন্ম মুক্ত চুলের রাশিকে তিনি বন্দি করে ফেললেন কয়েদীর মতো। চুলরাশির অপরাধ কী ছিল? তাঁর চুলেদের বন্দী দশা দেখে আমার যে বড় বেদনা হলো ওদের জন্য। চুলদের কেন এই শাস্তি তিনি দিলেন একজন উঁচুদরের শিল্পী হয়ে?
আরো কয়েক বছর আগে অভিনয় শিল্পী শাবানার এমন কৃষ্ণগহ্বরকবলিত অবস্থা আমরা দেখেছিলাম। তিনিও নিজের মুক্ত চুলরাশিকে কয়েদীর মতো বন্দি করে ফেলেছিলেন। আমাদের মনে তখনো বেদনা জমেছিল উনার চুলরাশির জন্য। আলো থেকে পালিয়ে উনার কৃষ্ণগহ্বরে প্রবেশ দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছিলাম, করেছিলাম আর্ত চিৎকার। বন্দি দশা থেকে মানুষ মুক্ত হতে চায়। আর এঁরা স্বাধীন মানুষ হয়ে কেন স্বেচ্ছায় বন্দিত্ব বরণ করলেন?
কিছুদিন আগে এক জায়গায় একটা বই দেখেছিলাম। নবাব ফয়জুন্নেসাকে নিয়ে লেখা একটি নাটক। লিখেছেন অভিনয় শিল্পী ফাল্গুনী আহমেদ। কৌতুহল বশতঃ লেখক পরিচিতি উলটে দেখলাম। এক কালের অভিনয় শিল্পী ফাল্গুনী আহমেদের ছবি দেখে মনটা বেদনাতুর হয়ে গেল। কৃষ্ণগহ্বরকবলিত দশা। মাথার চুলগুলিকে বস্তায় বন্দি করে ফেলেছেন।
এঁদের কেউ কণ্ঠশিল্পী, কেউ অভিনয় শিল্পী। এঁরা এঁদের শিল্পের মাধ্যমে আমাদেরকে জীবনের কথা বলেন, ভালোবাসার কথা বলেন, সুন্দর করে বাঁচার কথা বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা বলেন, আমাদের অধিকারের কথা বলেন, অন্যায়ের সাথে আপোশ না করতে বলেন, সভ্যতার কথা বলেন। আমাদের পথ দেখান। পথ প্রদর্শক যদি ঘোর কৃষ্ণগহ্বরে প্রবেশ করেন স্বেচ্ছায় তবে আমরা কোথায় যাব? কী হবে আমাদের গতি?
এঁরা কি ভাবছেন, সারা জীবন শিল্পের সাধনা করে কবীরা গুনাহ করেছেন? এখন কি ইসলামী বর্বর অন্ধকারের বস্তায় মাথা ঢুকিয়ে তার তওবা করছেন? তবে তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন, ইসলাম ধর্ম তথা আল্লার এইসকল বাণী কি তাঁরা আল্লা অথবা নবী মোহাম্মদের রচিত কোরান থেকে পড়েছেন?
১, পুরুষগণ নারীদের উপর অধিকর্তা। কারণ আল্লা নারীর উপরে পুরুষের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। এবং পুরুষেরা নারীদের ব্যয়ভার বহন করে, ফলে বিদূষীরা পুরুষের অনুগত থাকে। আর যেসব নারীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা দেখো তাদের উপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং পিটাও। – সুরা নিসা, আয়াত ৩৪। (৪;৩৪)
২, যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের রক্ষণাবেক্ষণ করে। তবে নিজেদের স্ত্রী বা অধিকারের দাসীদের বেলায় স্বতন্ত্র কথা, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। – সুরা মুমিনুন, আয়াত ৫,৬ (২৩;৫,৬)
৩, ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী প্রত্যেককে একশত দোররা মারবে। আল্লার বিধান পালনে তাদের প্রতি যেন তোমাদের দয়া না জাগে, যদি তোমাদের আল্লা ও পরকালের উপর বিশ্বাস থাকে। এবং মুমিনদের একটি দল যেন শাস্তি দানকালীন উপস্থিত থাকে। – সুরা নূর, আয়াত ২ (২৪;২)
৩, হে নবী, তোমার জন্য হালাল করে দিয়েছি, তোমার মোহর প্রদত্ত বিবিগণকে, তোমার গণিমতরূপে আল্লার প্রদত্ত তোমার আয়ত্তাধীন দাসীগণকে, তোমার সাথে হিজরতকারী তোমার চাচাত ফুফাত, মামাত, ও খালাত বোনদেরকে এবং বিনা মোহরে তোমার পত্নীত্ব বরণকারী মুসলিম নারী যদি নবী তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছা করে, (এ সুবিধা শুধু তোমার জন্য নির্দিষ্ট, অপর মোসলমানদের জন্য নয়)। আমি জানি সাধারণ মুমিনদের বিবি ও দাসীগণের ব্যাপারে আমি যে সব ব্যবস্থা নির্ধারণ করেছি, তা এজন্য যে, তোমার কোনোরূপ অসুবিধা না হয়। আল্লা ক্ষমাকারী, করুণাময়। – সুরা আহযাব, আয়াত ৫০ (৩৩;৫০)
৪, স্ত্রীদের যাকে খুশি পৃথক রাখতে পারো এবং যাকে চাও সঙ্গে রাখতে পারো। পৃথক যাকে রেখেছ চাইলে তাকেও ডাকতে পারো। এতে তোমার দোষ হবে না। এব্যবস্থা তাদের প্রশান্তির, আর দুঃখ না পাবার উপকরণ। আর তাদেরকে যা কিছু দেবে তাতেই তারা সন্তুষ্টি লাভ করবে। আর আল্লা তোমাদের মনের সব বিষয় জ্ঞাত। বস্তুত আল্লা জ্ঞানবান ও সহনশীল। – সুরা আহযাব, আয়াত ৫১ (৩৩;৫১)
এগুলি ছাড়া আরো রয়েছে এইরকম অজস্র আয়াত। তাঁদের কাছে আমার এই লেখা পৌঁছাবে কিনা জানি না। যদি পৌঁছায় তাঁরা কি উত্তর দেবেন এই আয়াতগুলির? তাঁদের কেউ কি এই আয়াতগুলি সমর্থন কিংবা পালন করেন? যদি না করেন তবে তাঁরা কেমন মোসলমান?
নায়িকা ববিতাকেও দেখলাম পর্দা করছে। তাদের আগের সব রঙ ঢং এর ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে আর এখন নিজেকে ঢাকছেন । বুঝি না । খুঁজে পাই না এর উত্তর।
কুরআনিক ব্যাখ্যার অংশটি চমৎকার হয়েছে। নন্দিত রচনা বটে।
ধন্যবাদ আপনাকে
ভারতের চিত্রনায়িকা সুচিত্রা সেনও কিন্তু শেষ বয়সে নিজেকে পর্দার অন্তরালে নিয়ে যান। মেয়ে, তিন নাতনী ব্যতীত আর কেউ দেখা করতে পারত না। বাইরে গেলে শুধুই রামকৃষ্ণ মিশনে যেতেন। আমার কেন জানি মনে হয় ব্যক্তিজীবনে এরা কাছের মানুষের কাছ থেকে সাংঘাতিকভাবে প্রতারিত হন। এজন্য শেষ বয়সে এসে কেউ ধর্মকর্ম কেউ একাকী জীবন বেছে নেন।
সারা জীবন শিল্পের সাধনা করে শেষ জীবনে কেন কেউ কেউ কট্টর ধর্মান্ধ হয়ে পড়ে তা গবেষণার ব্যাপার। আমার মনে হয়, মৃত্যুচিন্তা একটা কারণ হতে পারে। এছাড়াও হতে পারে অজ্ঞতা। সেই অজ্ঞতা বিজ্ঞানের এবং ধর্মের। বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার কারণে ধর্ম যে ভুয়া তা তারা বুঝতে পারে না। এবং ধর্মের অজ্ঞতা হচ্ছে, ধর্মে কী আছে তা তারা জানেই না। ধর্মগ্রন্থে কতো বাজে ও ভুয়া কথা লেখা আছে তাও জানে না পড়ে দেখে না বলে।
বৃদ্ধ বয়সে ধর্মকে আঁকড়ে ধরা খুবই প্রচলিত একটি ধারা। শাহনাজ রহমতুল্লাহ শেষ বয়সে এসে ধর্মের অনুশাসনগুলো মানতে শুরু করেছেন এ নিয়ে তাঁর সমালোচনা আমরা করতে পারি, কিন্তু তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। যতদূর জানি, ওনার ব্যক্তিজীবন খুব শান্তিময় ছিল না, হতে পারে ধর্মপালনে তিনি শান্তি খুঁজে পেয়েছেন। যদি তাঁর ধর্মপালন অন্যের ক্ষতির কারন না হয়ে, তাহলে আপনার বা আমার পছন্দ না হলেও নিজের পছন্দমত ধর্মপালনের অধিকার তাঁর থাকা উচিত। ওনার গান আমাদের আনন্দ দেয় এটাই বড় কথা। এই প্রসঙ্গে নুসরত ফতেহ আলী খাঁর কথা বলতে পারি। তিনি আস্তিক ছিলেন, পাকিস্তানিও বটেন 🙂 , কিন্তু তাঁর সঙ্গীত ধর্ম, দেশ বা কালে সীমাবদ্ধ থাকেনি, আজও তা দুনিয়া জুড়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে চলেছে।
মঞ্জুর ভাই, সন্দেহ নেই তিনি অত্যন্ত উঁচু মাপের শিল্পী কিন্তু তিনি তো গাইতেন কাওয়ালী আর দমাদম কালান্দার টাইপ গান’ই বেশি। সুফিবাদী। এদেরকে কি ঠিক আস্তিক বলা যাবে? জুন মাসে পাকিস্তানী সিঙ্গার আমজাদ সাবরি’কেও গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। লালন শিল্পী বা কাওয়াল শিল্পী’রা মহা-বিপদেই আছে। পাকিস্তানী নাগরিক কাওয়াল শিল্পী আবিদা পারভীন এদেরকে মৌলবাদীরা যদি আস্তিক নয় এমন অভিযোগ এনে মেরে ফেলে তখন কি বলবেন? বাংলাদেশে পীরদের গন জবাই তো জানেন-ই। সৈয়দ বংশের দাপট এখন বাংলাদেশেও। এই সব মানুষেরও নিরাপত্তা শক্তিশালী করা উচিত বলে মনে করি। ডিন্যায়ালে না থাকাই ভালো মনে হয়।
শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ কবি! আমার চোখে সুফি সাধকরা আস্তিক; খাঁন সাহেব বা অন্যান্য কাওয়ালরাও আস্তিক। ধর্মে বিশ্বাস না থাকলে ‘ইস করম…’, ‘ভরদো ঝোলি…’ বা ‘তাজদার-এ হারম…’ এর মত কাওয়ালী সৃষ্টি সম্ভব না। এগুলো শুনলেই গায়কের ভক্তিরস সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। তবে ওয়াহাবী/সালাফিরা এদের মুসলিম হিসাবে মানবে না। কিন্তু কে মুসলিম, আর কে মুসলিম না তা নির্ধারনের দায়িত্ব ওয়াহাবী/সালাফিদের কেউ দেয় নি, তাদের মতামত আমার কাছে বিন্দুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ না । আল্লাহ আর মোহাম্মদে বিশ্বাসী সুফি সাধকরা আস্তিক তো বটেই, নিজেদের দাবী অনুযায়ে তাঁরা মুসলিমও। আমার মন্তব্যের মূল বক্তব্য এই যে কেউ আস্তিক হলেই যে সে সবসময় গোঁড়া, পরধর্ম-বিরোধী হবে এবং তার সবকিছু পরিতাজ্য হয়ে যায়, এমন ধারনা করা ঠিক না। ভাল থাকবেন!
ঠিক আছে ভাই; আবদুল করিম থেকে ডেভিড (দাউদ); আমার ধারণা সবটাই দেহতত্ববাদী সুফাবাদী ভাবনার অপূর্ব প্রতিফলন। আস্তিকতার লাইসেন্স দিয়ে দিতে অসুবিধার কি আছে 🙂 এরাই পরমত সহিষ্ণু এবং এমনটাই হওয়া দরকার যা মাত্র কয়েক বছর আগে পর্যন্তও খুব ভালো ভাবেই চলছিলো। চর্চাও ছিল। এরা মানুষকে ভালোবেসেই সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলো এতকাল। কিন্তু এরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে তেমন করে ভাবেনি কখনো। মৌলবাদের তীব্র আক্রমণ আসবে তেমন ভাবনাও ভাবেনি মনে হয়। এ সুযোগে সৈয়দ’রা; ওয়াহাবী ভাবনার লোকজন সারা পৃথিবীর নিরীহ মানুষদের ওপর পাশবিক সন্ত্রাস করে শিখিয়ে দিচ্ছে বাজারজাত করা কাকে বলে। আমাদের অঞ্চলে গণ হিজাব, মেহেদী রঞ্জিত দাঁড়ি’র আধিক্য, খোদা হাফেজ থেকে আল্লা হাফেজের অতি দ্রুত প্রচলন, এই সবই তার নমুনা।
নানান বিষয়ে জানাশোনা আছে আপনার তাই ভাবছিলাম পথ দেখানোতে উদাসী মন্তব্য এড়ানোই ভালো হয়তো। যা হোক আপনার লেখা চাই এখানে। অনেক দিন ধরে ফাঁকিবাজি করছেন।
শুভেচ্ছা।
উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ কবি ভাই! নিজের পেশা-সম্পর্কিত বিষয়টুকু বাদ দিলে আমার জ্ঞান অতি সামান্যই। তবে বিভিন্ন বিষয়ে জানার ইচ্ছা আছে, আর গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে শেখাটাই আমার এখানে আসার মূল কারন। একটা সময় ছিল যখন এখানে নানা স্বাদের বিচিত্র সব লেখা পেতাম; হটাৎ সব কেমন উলটে-পালটে গেল!
প্রায়ই ভাবি কোন একটা বিষয় নিয়ে লিখি, কিন্তু বিভিন্ন কারনে পরিকল্পনা কেবল কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। যাক, চেষ্টা করব খুব জলদি কিছু লিখে ফেলার। ধন্যবাদ!
আসলেও অভিজিৎ’এর শোক সামলাতে সবাই এখনো ম্রিয়মান। সবাই কাছেই আছেন কিন্তু মনে হচ্ছে এখানকার দায়’এর কথা আবার মনে করে, ভালোবেসে এখনো অনেকেই ফেরেনি তারা। আমি খুবই আশাবাদী অনেক লেখকই আবার নিজ দায়িত্বেই সক্রিয় হবেন। নতুনরাও লিখছেন। তাদের শোক দ্রুত হয়ে উঠবে শক্তি। নিশ্চই লেখা দেখতে পাবো অনেকের।
আপনি লিখুন বন্ধু। সবাই লিখুন।
একজন বড় শিল্পী আমাদের ওপর নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেন নিজের অজান্তেই। আমরা অনেকেই প্রিয় শিল্পীর মত করে চুল কাটি, কাপড় পরি।একজন প্রিয় শিল্পীকে যখন তাঁর একজন অনুরাগী দেখে যে তিনি কট্টর ধার্মিক হয়ে গেছেন, এমন কি তিনি ধর্মীয় লেবাজও ধারণ করেছেন তখন সে অনুরাগীর মনে করা অসম্ভব ও অযৌক্তিক নয় যে, এতবড় একজন শিল্পী যখন এই ধর্মে অন্তপ্রাণ হয়েছেন ও এই লেবাজ ধারণ করেছেন তা নিশ্চয়ই অত্যন্ত ভালো কিছুই হবে। এভাবেই অনেকে ধর্ম সম্পর্কে না জেনেই শুধু প্রিয় কোনো মানুষকে তার অনুসারী হতে দেখে অন্ধভাবে সেই অনুসারীকেই অনুসরণ করতে থাকে। তাই একজন প্রভাবশালী শিল্পীর ধর্ম পালন অবশ্যই ক্ষতিকর।
ধন্যবাদ নীলাঞ্জনা! সেভাবে দেখলে একথা ঠিক যে প্রভাবশালী যে কেউ ধার্মিক হলে তা মুক্তচিন্তার প্রসারের জন্য ক্ষতিকর। তবে কেবল শাহনাজ রহমতুল্লাহ-র সাম্প্রতিক ধর্মীয় লেবাস ধারন আমাদের দেশের ইসলামীকরনে বিশেষ প্রভাব রাখবে বলে মনে হয় না। ধর্ম-ভিত্তিক রাজনীতির প্রসার, সংবিধানের মুসলমানী, ব্যাঙের ছাতার মত মাদ্রাসার বিস্তার, দেশের হর্তাকর্তাদের মক্কা-প্রীতি, মোল্লাদের ফতোয়া-বৃষ্টি, মদিনা-সনদের হটাৎ চাহিদা ইত্যাদি, ইত্যাদি এরমধ্যেই যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে, তার কাছে প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাওয়া, একজন অবসর নেয়া বয়স্ক শিল্পীর ধর্ম আঁকড়ে ধরা প্রায় প্রভাবহীন বিষয় বলেই মনে হয়। তাছাড়া আপনি যাকে ‘আলো’ বলছেন তা যদি কেবল তাঁর সঙ্গীতের জন্য হয়, তাহলে অবশ্যই তিনি সুপারনোভা। তবে যদি তাঁকে একসময়ের মুক্তচিন্তার ধারক হিসাবে ভেবে থাকেন তাহলে আশির দশকে তাঁর পাশের বাড়িটিতেই থাকার সুবাদে বলতে পারি যে উনি বরাবরই আস্তিক ছিলেন।
তাঁর সঙ্গীতের জন্যই তাঁকে আলো বলেছি। সুপারনোভা অবশ্যই বলা যায় তাঁকে। আগে তিনি যেরকম আস্তিক ছিলেন তা মোটেও কারো জন্য ক্ষতিকর কিছু নয়। মনে মনে নামেমাত্র বিশ্বাসী, ধর্মকর্মে উদাসীন, পোশাক-আশাকে অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ কারুর ক্ষতির কারণ নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্বাসী প্রগতিশীল মানুষ কয়েক বছর আগেও এরকম ছিলো। কিন্তু পোশাকে-আশাকে যখন একজন বড় শিল্পী সাম্প্রদায়িক হয়ে যান সেটার একটা নেতিবাচক ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাঁর অনেক অনুরাগী কিছু না বিবেচনা করেই তাঁর মত লেবাজ ধারণ করে সেই লেবাজীয় ধর্মকে মহৎ কিছু বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারে।
তয় ব্যাপার হইলো, আপনার লেখা কই? তাড়াতাড়ি ছাড়েন একখান।
এইটা কি হইলো বিপ্লব ভায়া; হিজাব নেকাব আর সুচিত্রা সেন’এর আড়ালে যাওয়া এক হইলো? আপনার কাছে এইটা আশা করি নাই কিন্তু 🙂
এদেরকে দিয়ে করানো হয়, এরা নিজে থেকে কিছু বলে বা করে বলে মনে হয় না। হয়তো সেজন্যই এরা কিন্তু অভিনয় শিল্পী, কণ্ঠ শিল্পী। যারা বলবেন; বলাবেন; গাওয়াবেন, করাবেন ; সেইসব নাট্যকার, গল্পকার, গীতিকার, লেখক (কার !), শিক্ষক (কার!), নানান (কার!) এখন বিবিধ ভয় লোভে ৫৭ রকম আঁচল তসবি হিজাবের অন্তরালে। অথাৎ বলাবার মানুষের বড়ই অভাব। ব্যতিক্রম অবশ্য আছে, তবে ওরা সংখ্যায় খুবই কম। যা’ই হোক, এই যে হঠাৎ করে সূরা হাদিস এইসব হাজির করা কিন্তু ঠিক হয়নি। এত্তো এক্স রেটেড খারাপ খারাপ কথা কি বলে বেড়াবার মতো ব্যাপার? এসব থাকে পর্দা হিজাবের অন্তরালে। ৫৭ ধারাকে ভয় লাগেনা?
আসলেই কি? সব ক্ষেত্রেই কি? কেউ এসে একজন স্বাধীন স্বাবলম্বী মানুষকে বললো, তোমার মাথা চুল ও মগজকে ধর্মীয় বর্বর কারাগারে বন্দি করে ফেলো দেখি, আর অমনি সে তা করে ফেলবে?
বড় ভয় লাগে, দাদা। তাই তো সব সময় সূরা পড়ে ফুঁ দিয়ে দিয়ে চলি।
সব ক্ষেত্রে বলিনি তো 🙂
ছোটবেলা থেকেই ওই সব ধর্মভয় সমাজভয় ইত্যাদি শিশুর মনে গেঁথে দেওয়া থাকে কাজেই যখন অনুকূল পরিবেশ মেলে তখন ওই সব ভয় বটগাছ হয়ে পড়ে। মুশকিল হচ্ছে বেশির ভাগ বড় হয়ে যাওয়া মানুষেরাও ওইসব ভয় থেকে বেরুতে পারে না বা চায় না। আর এ’সবের সাথে মানুষটির উপর যদি কোন ঋণ দায় চাপানো যায়, কোন অক্ষমতার সুযোগ নিয়ে নেওয়া যায় তা’হলে তো কোথায় নেই। অবশ্য তার’চে বড় সমস্যা মনে হয় সাধারণ মেয়েরা নিজ থেকেই এইসব ব্যবস্থার সাথে আপোষ করে বসে। কেউ নিজেই যদি নিজের সাথে শত্রুতা করতে থাকে তা’হলে কতটুকু আর?
হাহা এইটা জব্বর বলসো। তবে যাহা ৫৭ তাহাই ৫৭, ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে 🙂
এই সমাজে মেয়েরা যদ্দিন পর্যন্ত্ শক্ত হয়ে বিদ্রোহ না করবে তদ্দিন ওই সূরা আর মন্ত্রপাঠ’ই সম্বল। সূরা অর নো-সূরা, আমার চোখে মুক্তকেশী বাঙালি নারী’ই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী।
জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত আমার জীবনের অধিকাংশ সময় আমাকে ধর্মের চেয়েও বিভৎস পরিবেশে অতিবাহিত করতে হয়েছে। আমাকে বাধ্য হয়ে ওদের বাধ্য হয়ে থাকার ভান ধরে থাকতে হয়েছে। একটা মুক্ত পরিবেশের জন্য, একজন সুন্দর মনের মানুষের সাহচর্যের জন্য আমি মনে মনে হাহাকার করতাম। এরকম আরো অনেকের কথা আমি জানি যারা কট্টর ধর্মীয় পরিবেশে বড় হয়েছে, এমন কি ওদেরকে মাদ্রাসায় পড়তে হয়েছে পর্যন্ত। ধর্মগ্রন্থ নিজের ভাষায় পড়ার পরেই সম্পূর্ণ নিজের বিবেকের তাড়নায় ওরা ধর্ম ছেড়ে নাস্তিক হয়েছে। আমাদের মুক্তমনাতেই রয়েছেন এরকম অনেকে।
আবার কাউকে কাউকে দেখেছি, মুক্ত পরিবেশে বড় হয়েও নিজ থেকেই অন্ধত্বে নিমজ্জিত হয়ে গেছে।
শিশুদের মুক্তভাবে বড় হতে দেওয়া উচিত – এ ব্যাপারে আমি শতভাগ সহমত ব্যক্ত করছি। কিন্তু কোনো বিশ্বাসী পিতামাতাই কি তাদের সন্তানকে ধর্মশিক্ষা না দিয়ে ছাড়বে? তবে সেটা ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকাই তো বাঞ্ছনীয়। রাষ্ট্র কেন স্কুলে স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষা বাদ্ধতামূলক করে দিয়ে মানুষে মানুষে সাম্প্রদায়িকতা ও হানাহানি সৃষ্টি করে?
বিশ্বাসী অভিবাবকরা সন্তানকে শিশুকাল থেকে ধর্মশিক্ষা দেবেই। সুতরাং এটি শিশু নির্যাতন বলেই গণ্য করা যায়। জ্ঞান হবার পরও শিশুটির ওপর সেই শিক্ষার প্রভাব থাকার কথা।
যে শিশুর জ্ঞান হয়নি তার ভেতর ভয় ঢুকিয়ে দেওয়াটাই তো অন্যায়। শিশুটি ঘরের বাইরে বেরুবেই। তখন?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা। রাষ্ট্র কেন ঠিক করে দেবে নাগরিক কেমন হবে? বরং উল্টোটাই সত্যি, নাগরিকই ঠিক করবে রাষ্ট্র কেমন হবে।
শাহনাজ রহমতুল্লাহ নামক অসামান্য শিল্পী চিরদিন স্থান দখল করে নেবেন, শ্রোতাদের ভালবাসার মণিকোঠায়। যদিও তিনি গান ছেড়েছেন বেশ আগেই।
শুনেছি, ব্যক্তি জীবনে হতাশা থেকেই অন্তরালে চলে গেছেন তিনি, সেটি অবশ্য ভিন্ন প্রসংগ।
এই লেখায় ধর্মীয় দেশনার অবতারণা অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে। তবু “বিমূর্ত এই রাত্রি”র শিল্পীকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
উনার গান ভালোবাসি, শিল্পী হিসেবে ভালোবাসি উনাকেও। সেই ভালোবাসা অটুট আছে। এমন অসামান্য শিল্পীর মাথাকে সাম্প্রদায়িক জেলখানায় বন্দি দেখে মর্মাহত হয়েছি। তাই লিখলাম।