কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক অসহায় নারী তার কন্যাশিশুকে নিয়ে একাকী বসবাস করছিল। স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে বহু আগে। গ্রামে পরিবারে পুরুষ অভিভাবক না থাকলে যা হয় এই পরিবারটির ক্ষেত্রেও তাই হল। রাজনৈতিক পরিচয়ধারী এক যুবক একদিন একা পেয়ে শিশুটিকে ধর্ষন করল। থানায় মামলা হল। কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলাটা উঠল। ধর্ষক ছেলেটিও গ্রেপ্তার হল। এতটুকু পর্যন্ত ঠিকই ছিল। এরপরই রাজনৈতিক প্রভাব এবং টাকা পয়সার জোর দৃশ্যমান হল। বিচারে বিচারকের রায় হল – ধর্ষক ছেলেটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেয়েটিকে বিয়ে করবে। ধর্ষকের সাথে বিয়ের শর্তে রায়ের পর ধর্ষক ছাড়া পেয়ে গেল। মেয়ের মা গরীব বলে তাদের পক্ষে কোন উকিল ছিল না। ঠিক যেন পাকিস্তানের আদালত-যেখানে ধর্ষনের রায়গুলো এমনই হয়। বিচারক রায় দিল কিন্তু রায়ের কপি প্রকাশ করল না। রায়ের কপি না পেলে হাইকোর্টে আপীল করা যাবে না, আবার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে আদালত অবমাননা হয়ে যাবে।শিশুটি এবং তার অসহায় মা পড়ে গেল উভয় সংকটে । আর রায়ের কপি পাওয়ার জন্য আবেদন করলেন তথ্য কমিশনে। কুমিল্লা জেলা জজ আদালত এই আইন পাশ হওয়ার ৬০ দিন পরও তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন না করায় তথ্য কমিশন আবেদন খারিজ করে দেয়।
অথচ ভারতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন না করে সরাসরি প্রধান তথ্য কমিশনারের কাছে প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চেয়েছিলেন। প্রধান তথ্য কমিশনার কেজরিওয়াল তথা দেশবাসীর কাছে নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা উন্মুক্ত করতে উদ্যোগী হয়।
বাংলাদেশের তথ্য কমিশনের নিষ্কৃয়তা এবং নিজেদের আইন নিজেরাই লংঘনের কারনে শুরু হয় এক অসহায় মা-মেয়ের ফেরারী পলাতক জীবন।এই ঘটনা শুনে আমি দৃশ্যপটে আসি। তথ্য কমিশনের কাছেই জানতে চাই কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা কে?
এই অভিযোগের সুত্রে এবং আইন মন্ত্রনালয়ে বিচক্ষন উদ্যোগে আজ দেশের ৫০ টিরও বেশি জেলা জজ আদালতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। এত গেল একটি ইতিবাচক উদাহরন।
এবার আসি আসল সমস্যায়।
তথ্য কমিশন তথ্য না দেয়ার, মিথ্যা তথ্য ও অসম্পুর্ন তথ্য দেয়ার জন্য যে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জরিমানা করতে পারে।
২৭৷ (১) কোন অভিযোগ নিষ্পত্তির সূত্রে কিংবা অন্য কোনভাবে তথ্য কমিশনের যদি এই মর্মে বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা –
(ক) কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই তথ্য প্রাপ্তির কোন অনুরোধ বা আপীল গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিয়াছেন;
(খ) এই আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনুরোধকারীকে তথ্য প্রদান করিতে কিংবা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন;
(গ) অসদুদ্দেশ্যে তথ্য প্রাপ্তির কোন অনুরোধ বা আপীল প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন;
(ঘ) যে তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ করা হইয়াছিল তাহা প্রদান না করিয়া ভুল, অসম্পূর্ণ, বিভ্রান্তিকর বা বিকৃত তথ্য প্রদান করিয়াছেন;
(ঙ) কোন তথ্য প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়াছেন-
তাহা হইলে তথ্য কমিশন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উক্তরূপ কার্যের তারিখ হইতে তথ্য সরবরাহের তারিখ পর্যন্ত প্রতি দিনের জন্য ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা হারে জরিমানা আরোপ করিতে পারিবে, এবং এইরূপ জরিমানা কোনক্রমেই ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকার অধিক হইবে না৷
কিন্তু তারা সবাইকে করে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদি ক্ষমতাহীন কোন প্রতিষ্ঠানের নিরীহ কর্মচারী হয় তাহলে নির্দয়ভাবে জরিমানা করে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। ছবিতে দেখুন একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানীর ছাপোষা কর্মচারীকে জরিমানা করে কমিশন তার ওয়েবসাইটে গর্বের সাথে বার বার স্ক্রল করে প্রচার করে।
ইনস্যুরেন্স কোম্পানিকে জরিমানা
অপরদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদি বড় কোন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হয়, আর প্রাপ্ত তথ্যে যদি শ কোটি বা হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি থাকে তাহলে কমিশন নিজেকে বড়ই অসহায়বোধ করে। দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো এবং অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা কল বাইপাস করে বছরে গড়ে দশ হাজারকোটি টাকা চুরি করে। এর সাথে অনেকেই জড়িত। পানামা পেপারসে চারজন ব্যবসায়ী আছে যারা দেশ থেকে টাকা পাচার করেছিল এবং দেশে তাদের আয়ের উতস ভিওআইপি ব্যবসা। এদের অফিস ঠিকানা দেয়া কারওয়ানবাজার। লক্ষ্য করুন অবৈধভাবে আয় করে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করছে । দেশের দুই দিকে ক্ষতি করছে।
রায়ে বিটিআরসি একধরনের যন্ত্রের কথা কমিশনে বলে কমিশনকে বোকা বানিয়ে দেয়।তথ্য অধিকার আইনে কমিশনের কাছে এই যন্ত্রের নাম ও তার বিস্তারিত বিবরণ জানতে চাই। কিন্তু কমিশন জানাতে পারেনি। টেলিযোগাযোগ খাতে বিদেশে কল আনা নেয়ার পর যোগবিয়োগ করে যে আয় হয় তা সরকারে রাজস্ব হিসেবে জমা হয়। সেই রাজস্ব আয়ের হিসাব অর্থমন্ত্রী জুন মাসে জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় প্রকাশ করে। সেই হিসেবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সাল থেকে দেশ-বিদেশে কত মিনিট কল আসা-যাওয়া করেছে তা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে থাকার কথা। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কমিশনকে ভালোভাবেই বোকা বানিয়েছে অথবা কমিশনাররা কোন অগ্রহনযোগ্য কারনে বোকা সেজেছিল।
বিটিআরসির জবাব
মিথ্যা তথ্য দিলে কমিশন জরিমানা করতে পারে, কিন্তু করে না। লক্ষীপুর বিআর টিসি আমাদেরকে তথ্য দিয়েছিল লক্ষীপুর থেকে ঢাকা সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২৫৬ টাকা এবং এই টাকাই বাস কোম্পানীগুলো আদায় করে। আমারা ৩০০, ৩৫০ , ৪০০ ও ৪৫০ টাকার বিভিন্ন বাস কোম্পানীর টিকেট কমিশনে দেখিয়েছিলাম। কমিশন কিছুই করেনি।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির তালাশ অনুষ্ঠানে দিনের বেলায় ট্রেন থামিয়ে তেল চুরির দৃশ্য প্রচার করা হয়। আমরা জানতে চেয়েছিলাম এই চুরির সাথে কারা জড়িত। রেলওয়ে কোন তথ্য জানায়নি। তথ্য কমিশনে অভিযোগ করার পর সেই রেলওয়েকেই তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়। যথারীতি রেলের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা কোন দুর্নীতি খুজে পায়নি। এমনকি সংসদীয় কমিটি কতৃক ধরা পড়া তেল চুরির বিষয়টাকেও তারা সঠিক দাবী করে হাবিজাবি তথ্য দেয়। কিন্তু কমিশন নির্বিকার।
তালাশের ভিডিও
রেল কতৃপক্ষের জবাব পাবেন এখানে
সিলেটে রাজন হত্যাকান্ডে মানবাধিকার লংঘন , ঘুষ , দুর্নীতি সকল ধরনের ফোজদারী অপরাধ হয়। পুলিশ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির রিপোর্ট জমা দেয়ার পরই তা পাবলিক ডকুমেন্ট । কিন্তু কমিশন যে অজুহাতে সেই রিপোর্ট প্রকাশে বাধা দেয় একই অজুহাতে আসলে কোন তথ্যই প্রকাশ করা ঠিক নয়। কমিশনের ভেতর লোকজন চায় না এই ঘটনার পুনরাবৃতি বন্ধ হোক। অথচ রাজন হত্যার পরে হবিগঞ্জেও অনুরুপ ঘটনা ঘটেছিল।কিন্তু মুল কারন অনুদ্ঘাটিত থেকে গেলে এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটবে।
সহায়ক পাঠঃ তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ পাবেন এখানে
এসকল দুর্নীতিবাজ বিচারপতি ও বিচারপিতাদের বিচার করবে কোন বিচারক?
বাংলাদেশে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানে এই রকম কিছু ধারা রেখে দায়মুক্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে