তোমাকে চিঠি লিখি না অনেক দিন। আজকের দিনে চিঠি না লিখলে তুমি অভিমানী হাসি হেসে বলতে, “হুঁহুঁ, তুমি কতদিন ধরে আমাকে চিঠি লেখ না সেটার হিসাব কিন্তু আছে আমার কাছে।” যে কম চিঠি লিখত সেই যেন হেরে যেত। এটা বোধ হয় তোমার করা নিয়মগুলোর একটা, তাই না? এভাবে নিষ্ঠাভরে হাতে চিঠি লেখাটা কিভাবে শুরু হয়েছিল আমাদের মধ্যে? এক বাসায় থেকেও বছরের পর বছর চিঠি লিখেছি আমরা একজন আরেকজনকে। অদ্ভুত সব নিয়ম ছিল তোমার। তোমার সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর অবাক হয়ে দেখলাম ঝগড়ার পর যে প্রথম আত্মসমর্পণ করে সেই নাকি জেতে! খুব অদ্ভুত লেগেছিল এই ধারণাটা প্রথমবার শুনে। গোঁ ধরে, শক্ত হয়ে বসে থেকে জেতাটাই নাকি জেতা নয়, বরং মহত্ত্ব দেখিয়ে আগে এসে ভাব করাটাই নাকি জেতা!তোমার কাছেই শিখেছিলাম যে ঝগড়ার সময় মুখে যা আসে তা বলে দেওয়া যায়না। তখনো দায়িত্ব নিয়ে, ফলাফলের কথা মাথায় রেখে কথা বলতে হয়।
সেদিন আমার-তোমার হাতে লেখা কয়েকশো চিঠি নিয়ে মাটিতে পা ছড়িয়ে বসেছিলাম। আমি তোমার লেখা চিঠিগুলো সযতনে তুলে রেখেছিলাম। হাসপাতাল থেকে বাসায় এসে তোমার ড্রয়ারগুলো খুলে দেখলাম তার একটাতে তুমিও একইভাবে আমার চিঠিগুলো সব একসাথে করে জমিয়ে রেখেছ। আর তো কোনদিন তুমি চিঠি লিখবেনা, তাই আমার তোমার সব চিঠিগুলো মিলিয়ে দিয়েছি এক সাথে। তোমার সেই সিঙ্গাপুর থেকে পাঠানো ফেড-এক্সের বড় বড় প্যাকেটগুলোতে।
২০০৩ সালে লেখা একটা চিঠিতে দেখলাম তোমাকে এই রবীন্দ্রসংগীতটা পাঠিয়েছিলাম,
অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া–
দেখি নাই কভু দেখি নাই এমন তরণী বাওয়া॥
কোন্ সাগরের পার হতে আনে কোন্ সুদূরের ধন–
ভেসে যেতে চায় মন,
ফেলে যেতে চায় এই কিনারায় সব চাওয়া সব পাওয়া॥
পিছনে ঝরিছে ঝরো ঝরো জল, গুরু গুরু দেয়া ডাকে–
মুখে এসে পড়ে অরুণকিরণ ছিন্ন মেঘের ফাঁকে।
ভেবে দেখলাম, সবই আসলে এখনো একইরকম আছে, শুধু গানটার সবগুলো ক্রিয়াপদ আজ অতীত কালে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। আমরা শেষ চিঠি আদান প্রদান করেছিলাম ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে, সেই জাপানিজ রেস্টুরেন্ট এ বসে, দেশে রওনা দেওয়ার একদিন আগে। তোমাকে সেদিন যে চিঠিটা লিখেছিলাম সেটা আবারো পড়লাম। পড়তে পড়তে মনে হলো, আচ্ছা, এটাই কেন তোমাকে লেখা শেষ চিঠি হতে হবে? তুমি না হয় আর লিখতে পারবে না, কিন্তু আমি তো পারি। উত্তর না হয় নাই বা পেলাম, পার্থিব তিথিডোরে বাঁধা আর নাইবা থাকলাম। উত্তরই বা কেন পেতে হবে তোমাকে লিখতে হলে? দেখেছ, আমার কত ধৈর্য বেড়েছে, কতই না খারাপ কথা বলেছ জীবনে আমার ধৈর্যের অভাব নিয়ে! মনে আছে তুমি আমাকে বলতে, ‘তুমি কাজ বন্ধ করে দু’মিনিট বসলে পৃথিবীর ঘোরা বন্ধ হবে না, পৃথিবী কিন্তু ঠিকই ঘুরবে।’
তুমি হাসছ নিশ্চয়ই রবীন্দ্রসংগীত দেখে। রবীন্দ্রনাথের সাথে আমার ভালোলাগা খারাপ লাগার সেই অস্তি-নাস্তির বিরোধটা কোনদিনও আর মিটলোনা কিন্তু। রবীন্দ্রসংগীত না থাকলে আমি এই দেড় বছরে বারবার যেন মারা যেতাম। রবীন্দ্রনাথের সাথে আমার কতই না বিরোধ – তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, তার নারী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে- কিন্তু তার গানে এসে যেন এক অজানা ভাল লাগায় বিলীন হয়ে যাই । জানো, আমাদের সেই বাসাটার লম্বা করিডোরে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা হেঁটেছি আর গান শুনেছি। এটাই আমার থেরাপি, এটাই আমার নিজেকে একসাথে ধরে রাখার অস্ত্র যেটা কক্ষনো আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। এত ভাল ভাল ডাক্তার, এত সাইকিয়াট্রিস্ট এর ভিড়ে এই গানগুলোই ছিল আমার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।
তোমার জন্মদিনটা কাছে আসতে থাকলে আমি ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠতে থাকি। কী অদ্ভুত না? ২৬ শে ফেব্রুয়ারিতে এমনটা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কেন যেন ওই দিনটাতে এরকম লাগেনি। তোমার জন্মদিনটা আমার দিকে কী যেন এক অবোধ্য অসহনীয় ভার নিয়ে ধেয়ে আসতে থাকে। তৃষাও বারবার বলছে এ দিনের কথা। জানো, ও এখনো তোমার হয়ে ওকালতি করার চেষ্টা করে। সেদিন বলছিল, ‘ড্যাড কত্ত সুখী একটা মানুষ ছিল, তুমি যদি ওকে ব্যায়াম করার জন্য এত জোরাজুরি না করতে তাহলে ওর অতটুকু দুঃখও থাকতো না।’ সেই আগের মতোই মনে হচ্ছিল কষে দুটো থাপ্পড় দেই। জানো, তুমি যে ওকে ফাজলামি করে বলেছিলে তোর মা বাংলা জানেনা ও এখনো সেটাই বিশ্বাস করে।
এ বছর তোমার বয়স ৪৫ হতো। আমি নিশ্চিত যে স্নিগ্ধা তোমাকে আবারো আরেকবার মনে করিয়ে দিতো যে তুমি আমাদের চেয়ে তিন বছরের ছোট হলেও পঁয়তাল্লিশের পরে সবাই আসলে বয়সে সমান হয়ে যায়। আর তুমি খুবই উল্লসিত হয়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বলতে, তোমাদের মত বয়স্ক মহিলাদের চেয়ে আমি সবসময়েই ছোট থাকবো!
বারবার কেন চমকে উঠি বলতো? দেড় বছর পার হয়ে গেল? দেড় বছর কি অনেকটা সময়? নাকি অল্প সময়? নাহ এই প্রথম ভাবিনি সময় পেরিয়ে যাওয়ার কথা। প্রায়ই ভাবি, প্রায়ই মনের ক্যালেন্ডারে বসে বসে দিন গুনি, সপ্তাহ গুনি, সেই ২৬ তারিখ থেকে শুরু করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে যতবারই ভাবি ততবারই চমকে উঠি! কিন্তু কেন উঠি চমকে? সময় তো বয়ে চলারই কথা, তাই না? কিন্তু তারপরও এই নিত্য-বহমান অনিত্যের স্রোতে বারবার যেন ধাক্কা খাই। মাথা আর মনের এই যুদ্ধটার অর্থ কি আমরা কোনদিন বুঝবো? আমরা কি কোনদিন জ্ঞানের সেই মোহনায় পৌঁছব যখন এরা দুজন সম লয়ে চলবে? নাকি এরা আসলে সম লয়েই চলে, এদের আপাত-দ্বিচারিতার গূঢ়ার্থটা আমরা ধরতে পারি না। এত জ্ঞানবিজ্ঞানের ছড়াছড়ি চারদিকে, কিন্তু আমরা এখনো কতকিছুই জানি না, কতকিছুই বুঝি না। এটা নিয়েও আমরা কতই না আলোচনা করেছিলাম, নাকি বিতর্ক করেছিলাম, নাকি স্রেফ ঝগড়া?
কী অদ্ভুত এক আসা যাওয়ার পার্থিব গল্পে ভুলে থাকি আমরা। কত গল্প, কত ছল, কত বলা কথার মালা, কত না বলা কথার কষ্ট। কিন্তু একবার আসলে তো যেতেই হবে, গল্প একবার শুরু হলে তো নটে গাছটাও মুড়োবে, তাই না? আজকাল প্রায়ই ভাবি, দুঃখ আর আনন্দ কি আসলেই দুটো বিপরীত ধারা? নাকি একই ধারার দুটো রূপ, একই স্কেলের দুই প্রান্ত। দুটি বিপরীত প্রান্ত বাঁকিয়ে গোল করে ধরলেই ওরা এক জায়গায় মিলে যাবে না?
দুঃখ পেলেই কেন কষ্ট পেতে হবে? অতীতের কোন খারাপ স্মৃতি, কষ্টের স্মৃতি আমাদের ব্যথা দেয়, আবার দেখ অতীতের ভাল স্মৃতিগুলোও বেদনা দেয়। তখন আবার ভাল গল্পগুলো এখন আর নেই কেন ভেবে আমরা শোকে মুহ্যমান হই। কেন তা হবে? যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলে কি তাই হবার কথা? সুখের কোন স্মৃতি ছিল এতোটা সময় ধরে, সেটা কি একধরনের আনন্দের প্রবহ হয়ে উঠতে পারে না?
মনে আছে, তোমার আমাকে সময়ের বৈজ্ঞানিক ধারণাটা বোঝানোর কথা ছিল আর আমার তোমাকে মিউটেশনের বংশগতীয় ব্যাখ্যা বোঝানোর কথা ছিল? আমি আমার কাজটা সম্পূর্ণ করেছিলাম। তুমি কিন্তু করোনি। এটা অবশ্য ঠিক, বেশ কয়েকবারই চেষ্টা করেছিলে তুমি। যতবারই মনে হয়েছে বুঝেছি ততবারই আবার পরক্ষণেই মনে হয়েছে কিসব গাঁজাখুরি কথাবার্তা। রাজর্ষির ঠিক এমনটা হয়েছিল মহাভারত নিয়ে আমাকে শেখাতে গিয়ে। পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কিছু বললেই তুমি বেশ তেড়ে এসে বলতে ‘পদার্থবিজ্ঞানের নীতিগুলো না থাকলে তোমার জীববিজ্ঞানের ‘জ’ও শুরু হতে পারতো না।’
সে যাক, সময় নিয়ে যা বলছিলাম, তুমি যে শুধু সময়ের ধারণাটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাওনি তাইই নয়, আমাকে এ বিষয়ে আরও বিভ্রান্ত করে দিয়ে চলে গেছ। ২৬ শে ফেব্রুয়ারির পর থেকে আরও তালগোল পাকিয়ে গেছে সবকিছু, সময় ব্যাপারটা আমার মাথায় পুরোই অবোধ্য হয়ে গেছে।
আদিতে তো সময় ছিল না, এখন কেন আছে? সময় না থাকলে কীবা হতো বলতো? তাহলে কী অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যেত? আর সময়ের সাথে মানুষের সচেতনতার ব্যাপারটা যুক্ত করলে তো আর কথাই নেই। ধরো সময় কি সবসময়ই পরিবর্তনের সাথে যুক্ত? আমাদের সচেতন সত্তা কি শুধু বর্তমানের সাথেই সম্পর্কিত? কিন্তু বর্তমানটা তো বড্ড ক্ষণিকের। এই আছে, এই নেই। আমরা তো অতীতের কথা মনে রাখতে পারি আবার ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় দিন গুনি। তাহলে কি আমাদের সচেতন সত্তা বর্তমানের ক্ষণিকের গণ্ডি পেরিয়ে অতীত আর ভবিষ্যতেও বিস্তৃত? কিন্তু সেটাই বা কী করে সম্ভব?
দেখো আমাদের অস্তিত্বের কত কিছুই না বৈপরীত্যে ভরা! এই অন্তহীন মহাবিশ্ব আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে একেবারেই উদাসীন। কোন উদ্দেশ্য নেই, লক্ষ্য নেই, বিক্ষিপ্ততার তান্ডব সর্বত্র। কিন্তু তার মাঝেই আবার আমাদের উদ্ভব তো ঘটেছেই, আর আমরা পাগলপারা হয়ে এই উদ্দেশ্যহীনতার উদ্দেশ্য খুঁজে চলেছি কতভাবে। এই দ্বৈধতা আমাদের অস্তিত্বের, আমাদের চেতনার সর্বত্র বিস্তৃত। যেমন ধরো, আমরা উদ্দেশ্যহীন এই মহাবিশ্বের জ্বলন্ত সব বিধ্বংসী অগ্নিকুন্ড দিয়ে পরিবেষ্টিত হয়ে থেকে, নিজেদের ধূলিকণার চেয়েও তুচ্ছাতিতুচ্ছ অস্তিত্বের বাহাদুরিতে আপ্লুত হয়ে কী সুন্দর করে ভেবে নেই আমার সারা জীবনটা দুধেভাতে-সুখেই কাটবে। মহাবিশ্বের অনন্ত মহাপ্রলয় আমাদের গায়ে আঁচড়টাও কাটতে পারবে না। সেটা কি আর হয়? ‘সংসারের এই দোলায় সংশয়েরি ঠেলা’ তো অমোঘ নিয়মেই লাগবে। চোখ বন্ধ করে বানানো সাজানো বাগানে তো আঘাত লাগবেই। বিশ্বের নিয়মের বিপক্ষে দাঁড়ালে তো নিয়ত দুঃখ পেতেই হয় তখনি তো “বেজে উঠে পঞ্চমে স্বর, কেঁপে উঠে বন্ধ এ ঘর”। কিন্তু তারপরেই আবার সেই আদি প্রশ্ন চলে আসে, তাহলে দুঃখ ব্যাপারটার অর্থই বা কী।
মাথা আর মনের দ্বন্দ্বে জর্জরিত হয়ে আছি তো সেই ছোটবেলা থেকেই। মনে আছে তুমি বলতে এই পৃথিবীতে আমরা বড্ড মিসফিট। জানো আমি যখন বলি যে আমি এত কিছুর পরও নিজেকে এই ছন্নছাড়া পৃথিবীর অনেক মানুষের চেয়ে ভাগ্যবান মনে করি তখনো কিন্তু বুঝেই বলি। এখানেও সেই দ্বৈধতা। ওই ছোটছোট অভাগা চিবক মেয়েগুলো, আইসিসের হাতে ইয়াজিদি যৌনদাসীরা, প্যালেস্টাইনের হররোজ নিপীড়িত মানুষ আর হাজার হাজার সিরিয়ান আফগানিস্তানী সবহারা উদ্বাস্তু মানুষগুলোর চেয়ে ভাগ্যবান তো বটেই আমি। চারদিকে কতই না হানাহানি মারামারি, লোভের আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে কত দেশ কত সভ্যতা। বলতো এই ‘ধরাকে শুচি করার সেই অগ্নিস্নান ঘটবে কবে’?
অথচ এই ছোট্ট পৃথিবীটা উদ্দেশ্যহীনতার অঞ্জলি ভরে আমাদের যা দিয়েছিল তা দিয়েই কিন্তু দিব্যি ভাল থাকতে পারত আমাদের এই সাতশো কোটি সদস্য। কিন্তু তাই কি আমরা হতে দিতে পারি? পারি না। তাই জীবনানন্দকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, পৃথিবীর এই ভীষণ অসুখ তবে কীসে সারবে? সারবেনা হয়ত কখনই। কিন্তু সারানোর চেষ্টাটাও থামবে না কোনদিন।
আমাদের সম্পর্কটা কতখানি ভাল ছিল সেটা নিয়ে কেউ বলতে আসলে কেমন যেন বিরক্ত হয়ে উঠি। দুটো মানুষের বছরের পর বছর একসাথে থাকাটাই অনেক কষ্টসাধ্য একটা ব্যাপার। সেই দুটো মানুষ যদি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন দুটো মানুষ হয় তাহলে কাজের পরিমাণটা আরও অনেক বেড়ে যায়। আর তার উপরে আবার প্রকৃতির নিয়মে সদা নিভে আসা প্রেমের বাতিকে বারবার প্রজ্বলিত করে একসাথে থাকা তো রীতিমত একটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। সেই দুঃসাধ্য সাধনেই ব্রতী হয়েছিলাম আমরা দুজনে। অন্যসব যুগলের মতই ঝগড়া তো আমরা কম করিনি, ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রান্তে এসে পৌঁছেছিলাম বহুবারই। আর একটু মৃদুমন্দ বাতাস লাগলেই টুপ করে পড়ে যেতে পারতাম যে কোন সময় ওপ্রান্তে। দুজন মিলে শিখেছিলাম শুধু প্রেম থাকলেই দুটো মানুষের একসাথে থাকা হয় না। একসাথে থাকতে হলে প্রেমের সাথে সাথে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মমতা, দায়িত্ব, আকর্ষণ ইত্যাদি থাকাও অপরিহার্য। আমাদের জন্য আরেকটা বাড়তি জিনিস অত্যন্ত জরুরি ছিল – একে ওপরকে নিত্য শিখতে, গড়ে উঠতে, সামনে এগুতে সাহায্য করছি কিনা।
তুমি লুকিয়ে ফারাবির মত ইতরটার সাথে বিতর্ক (আমার মতে নোংরা ক্যাচাল) করার পর কত্তগুলো দিনই না খারাপ ছিল আমাদের সম্পর্ক! আমি বাসা থেকে বেড়িয়ে চলে গিয়েছিলাম। এটা আর জোড়া লাগার কথাও ছিল না। চিঠিগুলো সাক্ষী হয়ে আছে সেই উত্তাল সময়টার। ওই সময়ের চিঠিগুলো পড়ে বুঝলাম দুজনার কী পরিমাণ অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আবার জোড়া লেগেছিল আমাদের সম্পর্কটা। না জোড়া লাগা বললে ভুল হবে, আবার নতুন করে শুরু করেছিলাম, নতুন করে প্রেমে পড়েছিলাম মাথা দিয়ে, মন দিয়ে, আরও কিছুদিন একসাথে থাকতে চাই আমরা দুজন এটা ভেবে। জানো স্নিগ্ধাকে ২৫ শে ফেব্রুয়ারি রাতে (তুমি যেদিন দীপনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে) বলেছিলাম, ও যখন আমাকে নামিয়ে দিচ্ছিল আমাদের বাসায়, ‘গত কতগুলো মাস ধরে আমাদের এত্ত ভাল একটা সময় যাচ্ছে যে আমার ভয় হয় এটা বেশীদিন থাকবেনা’। তারপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যা ঘটলো….। কুসংস্কারে বিশ্বাস করতে পারলে হয়তো ভাবতে পারতাম যে ওটা প্রিমোনিশান বা দৈব-পূর্বাভাস টাইপের কিছু একটা ছিল হয়তো। মাঝে মাঝেই ভাবি, আমাদের দুজনার মাঝের সংযোগটা ঠিক কোথায় ছিল? তা কি সীমাহীন সম্ভাবনার মাঝে পরিণদ্ধ ছিল? সাধারণত সমাজে যা থাকে- অর্থনৈতিক, সামাজিক, সন্তানের স্বার্থ এসব কোন কিছু দিয়েই বাধা ছিল না আমাদের সম্পর্ক।
তুমি আমাকে লিখতে বলতে। এই একটা জিনিস নিয়েই জোরাজুরি করেছো তুমি, আর কিছু নিয়ে কি করেছো কখনো? মনে পড়ে না। আমি লিখি না কেন – আমার পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে, রাজনীতি এবং অর্থনীতির চিন্তাগুলো নিয়ে, আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি নিয়ে – মুক্তমনায় আরও লিখি না কেন, এ নিয়ে কতই না বলেছ, বারবার বলেছ। জানোই তো তুমি, ব্যক্তিগত কোন বিষয় নিয়ে লেখালিখি আমি খুব অপছন্দ করি। আমার কেন যেন মনে হয়, আমার ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ-ভালোবাসা-পাওয়ার আনন্দ-হারানোর কষ্টগুলো একান্তই আমার, এখানে আমার খুব কাছের দুই একজন ছাড়া আর কারো প্রবেশ থাকা উচিত নয়। আর তাছাড়া আমি এগুলো জানানোর প্রাসঙ্গিকতাও খুঁজে পাইনি কখনো! ফেসবুকে তোমার জন্মদিনটা দেখা যায় বলে কতই না হাসাহাসি করছিলাম, শ’য়ে শ’য়ে ‘শুভ জন্মদিন’ শুনে মনটা নারসিসিস্টিক ভালোবাসায় ভরে গেছে কিনা জানতে চেয়েছিলাম। মনে পরে আমার ক্যান্সারের সার্জারির সময় আমাকে নিয়ে যে লেখাটা লিখেছিলে সেটার জন্য কত বিপদে পড়েছিলে তুমি?
অনেকেই বলে আমাদের চিঠিগুলো পাব্লিশ করা উচিত। এই কথাটা শুনলেই একধরণের স্বার্থপর ক্ষোভে মনটা ভরে ওঠে আমার। মনে হয়, ইশ, এগুলো এখন একান্তই আমার। আমাদের একজন কমন বন্ধু কিছুদিন আগে বেশ মজার একটা কথা বলেছে। বলেছে আমার নাকি সাহস নেই ব্যক্তিগত জিনিসগুলো সবার সাথে শেয়ার করার। এভাবে কখনোই ভেবে দেখিনি কিন্তু। আমার সাহস কম এ কথাটা শুনতে আমি একদমই অভ্যস্ত নই, তাই জোরে হেসেই উঠেছিলাম। কিন্তু সে যাই হোক, এবার ভেবেছি আমার এই জমা হয়ে থাকা কথাগুলো প্রকাশ্যেই লিখব তোমার জন্মদিনে। হয়তো তুমি খুশী হতে দেখলে, এই ভেবে। তোমার মুক্তমনাতেই না হয় লিখলাম। তোমাকে এখন সত্যিকারের চিঠি লেখার কোন দৈব-সুযোগ থাকলে দৈব-পোষ্ট বক্সে এভাবেই লিখে চিঠিটা ফেলে দিয়ে আসতাম।
তুমি সব বইতে লিখতে যে আমি তোমার সব চেয়ে বড় সমালোচক। কিন্তু জানো আমি এখন ভেবে দেখলাম তুমিও আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলে। সারকাজম, হাসিঠাট্টা, খোঁচাখুঁচি তো আমাদের সবধরনের কথাবার্তা, যোগাযোগের একটা অবশ্যম্ভাবী অংশ ছিল। তুমি আমাকে যেভাবে চিনতে, যেভাবে সমালোচনা করতে সেটা মনে হয় না আর কেউ কোনদিন করেছে। তুমি আমার চেয়েও বেশী কড়া ফেমিনিস্ট ছিলে। হাসাহাসিও তো করতাম আমরা সেটা নিয়ে অনেক। তাই কখনোই তোমার সামনে আমার শক্ত আবরণটুকু ভেদ করে অত্যন্ত গভীরের অরক্ষিত অংশগুলো উন্মোচন করতে দ্বিধা বোধ করতে হয়নি আমাকে।
তুমি ডাক দিয়েছ কোন্ সকালে কেউ তা জানে না,
আমার মন যে কাঁদে আপন মনে কেউ তা মানে না।।
ফিরি আমি উদাস প্রাণে, তাকাই সবার মুখের পানে,
তোমার মতো এমন টানে কেউ তো টানে না।।
আকাশে কার ব্যাকুলতা, বাতাস বহে কার বারতা,
এ পথে সেই গোপন কথা কেউ তো আনে না।।
জানো, আমি তোমাকে দিনের নানা কাজে সারাদিন কখনই মিস করি না, কিন্তু ছোট ছোট জিনিসে মনে পরে যায় কতকিছু। রেস্টুরেন্টে বসে পানির গ্লাসটা টেবিলে উল্টে ফেলে দিলে তোমার কথা মনে পড়ে। মনে হয়, তুমি থাকলে বলতে, ‘এই যে আমাকে আর তৃষাকে সারাক্ষণ টেবিল ম্যানার নিয়ে জ্ঞান দাও, আসলে মেসটা তুমিই সবচেয়ে বেশী কর।’ সন্ধ্যাবেলাগুলো কেমন যেন দুঃসহ হয়ে ওঠে, মনে হয় আমি আর এর ভার নিতে পারছি না, দিনটা ফুরোলেই তো পারে। মনে আছে আমার এত প্রাইভেট থাকা, বিভিন্ন সময়ে অনমনীয় সব কর্পোরেট সিদ্ধান্ত নেওয়া দেখে তুমি বলতে ‘বাম মতাদর্শে বিশ্বাস কর কিন্তু আসলে তুমি একটা ইন্ডিভিজুয়ালিস্টিক ক্যাপিটালিস্ট অ্যাসহোল।’ আমরা দুজনেই দুজনের সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলাম, হয়তো সেটাই আমাদের পরবর্তী স্তরে ওঠার পাথেয় হিসেবে কাজ করতো।
ওহ জানো, প্রায় ভুলেই যাচ্ছিলাম একটা কথা বলতে। আমি যে ইউনিভার্সিটিতে কাজ করতে এসেছি সেখানে একজন বাংলাদেশী শিক্ষক বাংলার ক্লাস নেন এ দেশীদের জন্য। তিনি সেদিন বললেন তার এক ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টাডিজের ছাত্র তোমার লেখা সমকামিতা বইটা নিয়ে এসেছে পাঠ্য হিসেবে। আমেরিকান এই ছেলেটি বাংলাদেশের সমকামিদের নিয়ে কাজ করছে। এটা তুমি শুনলে কতখানি খুশী হতে সেটা ভেবেই আকুল হয়ে উঠছি। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে, না? তোমার লেখাগুলো যেন প্রান্তিক বিষয়গুলো তুলে ধরে বাংলা ভাষাভাষীদের সামনে। তোমার লেখাগুলোর প্রভাব কতখানি সেটা দেখাতেই তো আমাকে দেশে নিয়ে গিয়েছিলে। জানো ২০১২ তে দেশ থেকে আমাকে লেখা তোমার সেই ইমেইলটা আছে আমার কাছে। তুমি একা গিয়েছিলে সেবার দেশে। তুমি বইমেলা শেষে আমাকে লিখেছিলে আমি তোমার সাথে এর পরেরবার দেশে না গেলে তুমি আর কোনদিন দেশেই যাবেনা। তখন বলেছিলাম, ২০১৫ তে যাবো তৃষা কলেজে চলে গেলে। ওর স্কুল থাকাকালীন সময়ে তো ফেব্রুয়ারি মাসে ওকে একা রেখে আমাদের দুজনার দেশে যাওয়া সম্ভব না। মাঝে মাঝে মনে হয় আমিই যেন তোমার চলে যাওয়াটা স্কেজুয়াল করে রেখেছিলাম!
তোমার সাথে আমার বেশ কয়েকটা ঝগড়া বাকিই থেকে গেল। আমি কিছুতেই তোমার উপর থেকে একটা রাগ সরাতে পারছি না। তুমি কেন এত্ত অসতর্ক, এত নির্লিপ্ত ছিলে সবকিছু নিয়ে? এটা নিয়ে তোমার সাথে কতই না ঝগড়া হয়েছে। মনে আছে তোমার কিছু হলে আমার কী হবে ভাবো কিনা জিজ্ঞেস করেছিলাম একদিন? তুমি বলেছিলে, ‘তুমি অনেক শক্ত মেয়ে, তুমি নিজেই নিজেরটা দেখতে পারো, আমারটাও পারো।’ এই কথাটা ভাবলেই আমার অনেক রাগ হতো, মনে হতো দায়িত্ব এড়ানোর জন্য বল এট, আমি তোমার সবকিছু দেখে শুনে প্রটেক্ট করে রাখতে পারলে তুমি আমারটা দেখবে না কেন? মনে আছে, ল্যাটিন আমেরিকায় কাজের জন্য ভ্রমণ করতে শুরু করার পরে একদিন বসে তোমাকে ব্যাঙ্ক একাউন্টের কোথায় কিভাবে লগ ইন করতে হয় সেটা লিখে দিয়ে গেছিলাম? তুমি জানতেও না তোমার পেচেক গুলো কোথায়, কোন একাউন্টে যায়!
জানো মাঝে মাঝে মনে হয় কেন আমি প্রতিদিন মেলায় যেতে রাজি হলাম? কেন সেই দিন বাধা দিয়েও শেষ পর্যন্ত গেলাম? কিন্তু সাথেই সাথেই আবার সেই চিন্তাগুলোর রশি টেনে ধরি। বাধা তো তোমাকে ১৩ বছরে বারবার বহুবার সবকিছুতেই দিয়েছিলাম। আমাদের বেশিরভাগ ঝগড়ার কারণ তো সেটাই ছিল। ভাবি আমাদের ডিভোর্সও তো হয়ে যেতে পারতো, তাহলেও তো তুমি থাকতে না। তুমি চলে যেতে পারতে, আমি চলে যেতে পারতাম, কোন দুর্ঘটনায় আমি বা তুমি মরে যেতে পারতাম। কত কিছুই তো হতে পারতো! কিন্তু বেশীরভাগ সময়ে, তুমি এবার দেশে গিয়ে যেভাবে আনন্দের আবেশে ভেসেছিলে সেটা মনে করেই নিজেকে থামাই। একুশে ফেব্রুয়ারিতে রিকশা করে ঘুরে ঘুরে তোমাদের ঢাকা ইউনিভার্সিটির সেই পুরনো বাসা, পুরনো উদয়ন স্কুল, ছোটবেলার সেই আড্ডা মারার জায়গাগুলো দেখাতে দেখাতে তুমি যেরকমভাবে খুশী হয়ে উঠছিলে সেটার জন্য হলেও তো আমার বাধা দেওয়া ঠিক হতো না। ২৬ শে ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যায়ও আমরা হাত ধরে মেলা থেকে বেড়িয়ে আসার সময় ‘চলো আমরা ইলোপ করি’ বলে যেভাবে হেসেছিলে সেটার জন্য হলেও আমার তোমাকে নিষেধ করা ঠিক হতো না।
তুমি প্রায়ই হেসে বলতে ‘এত যে ঝগড়া কর, একদিন আমি না থাকলে বুঝবা’। তুমি যা যা বোঝাতে চেয়েছিলে তার সবটা গত দেড় বছরে বুঝেছি কিনা জানি না তবে একটা ব্যাপার বুঝতে পেরেছি- তোমার অনেক দোষ-গুণই অনেক মানুষের মধ্যে আছে, অনেক কিছুই হয়তো পাওয়া যাবে অন্য মানুষের মধ্যে। কিন্তু একটা মানবিক বৈশিষ্ট্যের বড্ড আকাল পড়েছে এই পৃথিবীতে- উদারতা। আমি-তুমি খুব সচেতনভাবেই অনেক কিছুতে ভিন্ন মত পোষণ করতাম দার্শনিক, রাজনৈতিক এবং তত্ত্বগতভাবে, বিতর্ক করতাম, ঝগড়া করতাম – অনেকের চেয়ে বেশীই হয়ত করতাম। আর দশজন সাধারণ মানুষের মতই প্রায়শই আমাদের সম্পর্কও ঢেকে যেত রাগ, দুঃখ, হিংসা, জিদ, প্রতারণার কালো মেঘে। কিন্তু মানসিক উদারতার বৃহত্তর বর্ণালিতে এসে সেই ভিন্নতাগুলো, সংকীর্ণতাগুলো কেমন করে যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত। খুব অবাক হয়ে দেখি, চারদিকে মানুষের মধ্যে অনেক কিছু আছে, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সচেতনতা, বুদ্ধি, যোগ্যতা, অযোগ্যতা – কিন্তু উদারতাটা কেমন যেন একটা দুষ্প্রাপ্য দ্রব্যে পরিণত হয়ে গেছে। তোমার ওই হাসিমাখা উদারতাটুকুই না হয় থাকা আমার একান্ত হয়ে।
তুমি ২০ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তোমার নতুন বইটা, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো এক রবি বিদেশিনীর খোঁজে’ আমার হাতে দিয়ে হেসে উৎসর্গের পৃষ্ঠাটা পড়তে বলেছিলে। আমার উপর তোমার এই বিশ্বাসটাই না হয় আমাকে শক্তি দিক সব কষ্টগুলো ধারণ করে আবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
” আমার বিশুদ্ধ একটা মৃত্যু আছে
যা আপনার নেই ”
অভিজিৎদা কি শেষ নিশ্বাসে ঘাতকের বাপদের এমন কিছু একটা হেসে হেসে বলছিল ?
অথবা
” আমি তো অছি, আমার শরীর আছে,
বয়স নেই। …
যেদিন মৃত্যু হবে আমার সবাই বলবে – কই, মৃত্যু তো হয় নি ! ”
না, এই কথা গুলো, নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের এই লাইন, গুলো হয়ত মনে পড়ছিল অভিজিৎদার, হাসছিল, একদম শেষ বেলাই । আসলে, মৃত্যু নিয়ে তার কোন ভাবনাই ছিল না, তবুও তো আজ তার জন্মদিন। মৃত্যুর পর দুই বছরের বেশি সময় ধরে, পৃথিবী সূর্যকে ঘুরে ফেলল টানা দুবারের বেশী, সাথে সাথে ঢাকা অথবা কলকাতার কোন এক ক্লাস সেভেনের ছেলেও হইত বলে ফেলল,
“বোঝাই যায়, ব্রুনোর নশ্বর দেহ যখন আগুনের লালচে উত্তাপে ছাই হয়ে যাচ্ছিল, ‘ধর্ম বেচে গেল’ ভেবে ধর্মবাদীরা কি উদ্বাহু নৃত্যই না করেছিল সেদিন! তারপরও ইশ্বর আর তার পুত্ররা সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘোরা শেষ পর্যন্ত থামাতে পেরেছিলেন?”
যে মেয়েটা শিবের মাথাই জল ঢালেনি কাল, আজ দেখা হয়েছিল তার সাথে, সেও আবার অভিজিৎদাকে চেনে, জন্মদিনের উপলক্ষ হিসেবে সেও নাকি কাল শিবকে রসিকতা করে বলছে,
” আমি বললামঃ আপনার চেয়েও আমি পূর্ণ
এই দেখুন – আমার অহংকার
এই দেখুণ – আমার বিষাদ, আমার বোধ, জ্ঞান ।
আপনার মতো নিরহংকার, আনন্দময়, অকপট
যেন চির – পাখি আমি নই।
কাল থেকে কালে আমার যাত্রা নেই।
আমার পুত্রের সুখ আমার চাঁদ। ”
যা রোজ পৃথিবীকে ঘোরে। আপনার সে সব নেই ।
এই ভাবেই কত কত ছেলে – মেয়ের কৈশোরকাল পুরোটা বলছে অভিজিৎ দা – অভিজিৎ দা, জন্মদিন জন্মদিন । কোথা থেকে আবার অনন্ত বিজয়, ওয়াশিকুর বাবু, রাজীব হায়দার, নীলাদ্রি নিলয়রা সব চলে আসল। সবাই মিলে বলতে লাগল অভিজিৎ দা, অভিজিৎ দা। জন্মদিন জন্মদিন। আমিও বললুম।
Tomak khub miss korchi ovi Dada..Ami aj refugee.tumi Jodi beche thakte hoyto amak aj refugee hote hoto Na..tumi to chole gecho day by day duniar manus gulo hayna er theke o nikristo hoya jacche .. missing you badly dada
আমাদের আলোর পথিক হারিয়ে গেছেন, আমরা ক্রমশ অন্ধকারের দিকে হাটছি। আসুন আমরা সবাই অভি নামের এ আলোকে অনুসরন করি!
এত সহজ, এত ঝকঝকে, এত বাস্তব…
কতটা কষ্ট পার করে এতটা সহজ হওয়া যায় দিদি…
এ চিঠি ঠিক পৌঁছবে অভিদার কাছে…আকাশের ঠিকানায়, ঠিক পৌঁছবে…৷
অনেক দিন পরে এলাম। অদ্ভুত লাগছে। ভালো মন্দ মিশিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বন্যা আহমেদের চিঠি নিয়ে কী লিখবো। সবাই যা বলেছেন তার চাইতে সুন্দর করে বলার ভাষা নেই। অভিজিৎ নেই। এই বিষয়টা আজো ভাবতে পারিনা। নানান এই সব কারনে মুক্তমনায় আমার অনুপস্থিতি।
আমার ক্ষমা করবেন অভিজিৎ। আপনি আমাকে হাত ধরে মুক্তমনায় এনেছিলেন। আজ আপনি নেই। এই বাস্তবতা মেনে নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে ।
সবার অনুভূতি আবেগ একরকম নয়। তাই আমায় ক্ষমা করুন।
Bonya+Abhi= love+reason+science and philosophy+atheism= bliss of immortality
Abhi is alive today in our minds as much as Rabindranath is alive in our hearts!!
বন্যা, তোমার এই চিঠিটা পড়ে আমার খুব আনন্দ হয়েছে তোমার জন্য। না, অন্য সবার মতো তোমার এই অদ্ভূত সুন্দর প্রকাশকে সাধুবাদ দেবার জন্য এ’কথা লিখছি না। আমি তো জানি-ই তুমি কতো ভালো লেখো। তুমি আসলে এর চেয়েও ভালো লিখতে পারো।
আমার আনন্দ হয়েছে, এই চিঠিটা আমাকে তুমি পড়তে দিয়েছো বলে।
আমার আনন্দ হয়েছে, তোমার এমন একটা সম্পর্ক ছিলো যা তোমাকে বাঁচিয়ে রাখছে জেনে।
আমার আনন্দ হয়েছে, অভি’র মৃত্যুর ভেতর দিয়ে এই অসাধারণ সম্পর্কটা টিকে গেলো বলে।
আমি জানি, তুমি ভ্রূ কুঁচকে ফেলেছো। আমি জানি, তুমি বিরক্ত হয়ে গেছো। আমি জানি অভির চলে যাবার বিনিময়ে এমন চিঠি তুমি কখনোই লিখতে চাও নি।
কিন্তু, জানো তো, প্রত্যেক মৃত্যুই এই অনন্ত সময়ের আগে-পরে প্রস্থানমাত্র, যার ইঙ্গিত তুমি এই চিঠিতেও দিয়েছো। কিন্তু সম্পর্ক খুব অনিত্য। অথচ তোমার-আর অভির সম্পর্ক আর কোনদিন ফুরাবে না। অভি সেই সাড়ে তেতাল্লিশের যুবক প্রেমিকই থেকে যাবে, যার সাথে তোমার নিত্য খুন-সুঁটির সংসার। আর কোন মলিনতা কোনদিনই ওকে ছুঁতে পারবে না, এবং এই সম্পর্ক নিয়ে তোমাকেও না। কেমন অপার্থিব, তাই না? ওর স্মৃতি কীভাবে তোমার গাঢ় বেদনা থেকে অনন্ত আনন্দে নিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে, সেই দেখাটাই আমার আনন্দ।
জানো তো, আমি কেবল একজন দর্শক।
দুঃখ-দহন ছাপিয়ে আনন্দ দেখাই আমার কাজ।
তোমার আনন্দ দেখে আমার খুব ভালো লাগলো।
অভির স্মৃতি তোমাকে এমনসব আনন্দ-কথা লেখানোর অবিরল উৎস হোক।
তোমার চিঠি পড়ে এই-ই আমার প্রতিক্রিয়া।
ভালোবাসা জেনো।
অনেক বছর আগে দেখেছিলাম দীপন ও অভিকে ফরিদা আপার গেটের সামনে। আপা বলেছিলেন, শাহীন আমার ছেলে ও ওর বন্ধু তমাদের অজয়দার ছেলে। এরপর স্যারের সাথে অনেক জায়গায় দেখা হয়েছে পরিক্ষা নিতে যাওয়ার সুবাদে। সাহা ইন্সটিটিউটে দেখা হল অনেক পরে স্যারের সাথে, গিয়েছিলাম কফারেন্সে যোগ দিতে। দেশ ছাড়ার পরে পড়তে শুরু করলাম মুক্তমনার লিখা। অভিজিত হয়ে গেল আমার প্রিয় লেখক। প্রায় ৭ বছর পরে দেশে গেলাম ২০১৫তে, বন্ধু লেখক শাহীনের আমন্ত্রনে গেলাম বইমেলায়,জেদিন আমি গেলাম তারপরের দিনই ওরা কেড়ে নিল আমার প্রিয় লেখকের জীবন। অজয় স্যার ও ফরিদা আপা, দুজনের কথা আর ভাবতে পারিনা।
শুভ জন্মদিন আমার প্রিয় লেখক!
আজ সারাদিন একটু এলোমেলো লাগছিল।কোন কাজ না করে চুপ করে বসে থাকব বলে কোথাও যাই নি। অদৃষ্ট কি করে যেন টেনে আনল বন্যার লেখাটাতে।
খবরের কাগজ মারফৎ পরিচয় এই বিষম কলঙ্কিত ঘটনাগুলোর সাথে। তবে সে পরিচয় মূলত ছিল মস্তিষ্কের, মননের, চিন্তনের। আজ মনে হয় ঘটে গেল এক আত্মিক সংযোগ। অভিজিৎ এর জ্বালানো মশাল থেকে আগুন নিয়ে এখনো অনেক পথ হাঁটা বাকি।
বন্যা, আমি তোমার বলিষ্ঠ শোক স্পর্শ করলাম।
ভুল সময়ে ভুল করে ভুল দেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন অভিদা।
এর প্রায়শ্চিত্ত করে গেলেন তার জীবন দিয়ে।
আলো হাতে চলিয়াছে আধারের যাত্রী,
অভিদার হাতে ছিল সেই আলোকের মশাল।
অভিদার জ্বেলে দেয়া মশাল বয়ে নিয়ে যাওয়াই হোক আমাদের ব্রত।
ধন্যবাদ দাদা,আমাকে ধর্মের ভন্ডামি থেকে মুক্ত করার জন্য
আপনি অনেক ভালো লিখেন, এ জন্যেই অভিজিৎ রায় আপনাকে এত লিখবার তাড়া দিতেন। যথারীতি আপনার এই লেখা পড়তে গিয়ে বারবার চোখ উষ্ণতায় আদ্র এবং যাপসা হয়েছে। মানুষটার সাথে আমার কোনোদিন দেখা হয়নি, আদতে হতো কিনা জানিনা! কিন্তু তার চলে যাওয়া আমাকে ব্যাপকভাবে ব্যথিত করেছে, তাই যেদিন তার দেহ টাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসলো…. আমিও এই মধ্যবিত্ত ঘেরাটোপ থেকে মাথা তুলে দেখতে গিয়েছিলাম। দাড়িয়ে থেকে থেকে চোখ ঝাপসা হয়েছে ক্রমাগত। এমন একটা মানবিক প্রাণকে এভাবে চলে যেতে দেখে মানুষের প্রতি এক ধরনের আস্থাহীনতায় ভুগছিলাম তীব্রভাবে, জানি সভ্যতা এসব নিয়েই এগিয়ে এসেছে এতখানি। একজন বিজ্ঞানমনস্ক অভিজিৎ রায় কে প্রস্তুত করবার জন্যে কি বিপুল পরিমান সময়, নিষ্ঠা, উপযোগীতা, পারিপার্শ্বিকতা, বৈচিত্র্যময়তার সম্মিলন ঘটাতে হয়েছে এই রহস্যময় প্রকৃতির! তাকেই কিনা এমন এক সমাপ্তি দেখে যেতে হলো জ্ঞান হারাবার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয়, সত্যিই যদি মৃত্যুর পরে অন্য কোনও পৃথিবী থাকতো….তবুও তো অভিজিৎ দার সাথে দেখা হবার সুযোগটা থাকতো! জানি এ এক মিথ্যে আবেগ। তার জন্মদিনে যেন হাজারো মানবিক এবং বিজ্ঞানমনস্ক প্রানের উদয় ঘটে, এ প্রত্যাশাই করি। আপনি ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।
শুভ জন্মদিন। আপনার উদারতা সংকীর্ণদের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিক। আপনার মুক্ত মানসিকতায় সব কুসংস্কার চির লুপ্ত হোক।
বন্যাপা, লেখাটা পড়তে কষ্ট হয়েছে। দুমড়ে মুচড়ে গেছি। এখন মনে হচ্ছে এই রক্তক্ষরণের দরকার ছিল। এই বছরের প্রথম অরোরা দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর কখনো লিখব না। উপলক্ষটা অরোরা না, ওটা শুধুই বাহানা। বেলুনের আঁকার যত বড়-ই হোক, এক চিমটি পিনের কাছে সে বরাবর-ই অসহায় ।
আজ শুভ এক রকম জোর করেই আপনার লেখাটা পড়াল। আমি লিখব কিংবা লিখতে পারব কিনা জানি না, তবে এই লেখাটা আমাকে খাঁদের প্রান্ত থেকে টেনেহিচড়ে বাঁচিয়ে নিয়ে এল।
আমরা যারা অভিদার মৃত্যু কে পুঁজি করে বেঁচে গেছি, এমনিতেই অভিদার প্রতি আমাদের আমৃত্যু ঋণ । আজও এই লেখাটা আমাকে নতুন করে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল ।
শুভ জন্ম অভিদা ।
Dear Editor, please let me write in Banglish today…..please…. I am so sorry that I cannot write Bangla!!
Lehhati pore khub druto duti jinish mathai esheche>
1. Mone hoi, Rabindranather kono short story porlam
2. Othoba mone hoi> Uttam/Suchitrar kono hit kora shaat dashoker bangla chobi dekhlam *Saptahpodi* probably has the best association.
Anando, bishannata, anger shob kichu ekakar hoei geche lekhati pore.
Abhike Biplobi salam ebong apnake ojoshro bhalobasha from a thunder struck ebong oshohai ek bangali, banglar baire, onek baire thekhe!
শুভ জন্মদিন – প্রিয় মানুষ, প্রিয় লেখক, আমার হিরো।
শুভ জন্মদিন অভিজিৎ দা!
অভিদাকে নিয়ে লেখা বন্যাদির কোনো লেখাই পুরোটা পড়ে শেষ করতে পারিনি। এর মধ্যেই মাথায় কিছু একটা হয়ে যায়, ঝিম ধরে বসে থাকি। মানুষ স্বর্বংসহা, হয়ত একদিন সাহস হবে সব লেখা পড়ে ফেলার…
বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি । আর হ্যাঁ দিদি, ওই ইতরটার নামটা কি লেখা থেকে মুছে দেওয়া যায় না ?
এই লেখাটায় এক ভিন্ন বন্যাকে যেন দেখলাম। লেখার ভাষা, লেখার ধরণটাই অন্য সব লেখা থেকে আলাদা বিশেষ কিছু লাগছে, বোধ হয় চিঠিতে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি এর একটা কারণ হতে পারে।
অভিজিৎ বেঁচে থাকবেন তার হাতে গড়া লক্ষ লক্ষ লেখক পাঠকের ভিতরে অন্তরে মনে মানসে চিরকাল। আমরা চলে যাবো, হারিয়ে যাবো, ইতিহাস আমাদের অনেককেই মনে রাখবেনা। কিন্তু অভিজিৎ, পৃথিবী তার প্রয়োজনেই অভিজিতকে চিরদিন মনে রাখবে। অভিজিতের পরিচয় আমি এক কথায় প্রকাশ করি ‘তিনিএকজন ভাল মানুষ ছিলেন’। আজ ইংল্যান্ডে ঈদ উদযাপন হচ্ছে। এই দিনে একদিন অভিজিৎ একটি ফেইসবুক ষ্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, সেটা নিচে তুলে দিলাম-
অভিজিৎ রায়কে চিনতামনা। ঠিক চেনা জানা ছিল বলে যা বোঝায় সেরকমটা বলবার উপায় নেই। অনেকেই উনাকে চিনতেন, আমার চেনা মানুষের কেউ কেউ। আমি চিনতামনা। তার লেখা পড়েছি, বুদ্ধির মুক্তিতে প্রতি নিয়ত তার অবদান গুলো চোখের সামনে দেখতে দেখতে জানতাম উনি অভিজিৎ রায়। কিন্তু সেই রাত্রে যখন প্রথম খবর পেলাম ভয়ঙ্কর সেই ঘটনাটার সেদিন নিজের অজান্তেই চেঁচিয়ে উঠেছিলাম কি করে সম্ভব হয়। সেই তোলপাড় করা হতভম্ব হয়ে যাওয়া সময়টাকে স্মরণ করি। এমনটা হওয়ার কথা নয়, কেননা তিনি আমার চেনা-শোনা মানুষ ছিলেননা। কিন্তু হলো। কোথা থেকে এমন একটা মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায় বোঝাই যায়না। আজ তার জন্মদিনে বন্যা আপার লেখাটা পড়তে পড়তে আবারও মনে হয় অচেনাতো কোন দিন ছিলেননা। ভাই হারানোর যন্ত্রনার মধ্যে টের পাই লেখা লেখি দিয়ে কখন যেন অপরিচিত মানুষটা কাছের মানুষ হয়ে গিয়েছিল। অভিজিৎ রায়ের জন্মদিনে মনে হয় এই আলোর উচ্ছাসটির মৃত্যু নেই, এ বার বার জন্মাতেই থাকবে। শুভজন্মদিন অভিজিৎদা।
অসং্খ রেফারেন্স, পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট দিয়ে বস্তুনিষ্ঠ একটা ব্লগ কিভাবে লিখতে হয় তা আমি শিখেছি অভিজিৎ রায়ের কাছ থেকে।তার লেখা ব্লগে বিপরীত মত তুলে ধরার সুযোগ থাকে না বললেই চলে। কোন অংশ না বুঝলে কমেন্টে ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন।বাংলায় ব্লগ লেখার ব্যতিক্রম এক ধারা প্রচলন করেছিলেন দাদা। এখন পত্রিকার সংবাদের মাঝে ঘটনা প্রমানের জন্য বিভিন্ন লিংক থাকে, তা উনার লেখা ব্লগে প্রথম থেকেই ছিল।
পাঠকদের মাঝেও তিনি একটা ব্লগ পড়ার পর সেইরকমভাবে স্বাধীনচিন্তা করার ক্ষমতা দিয়ে গেছেন।যে চিন্তা পাঠক প্রয়োগ করে খবর পাঠেও।যে কারনে কোন পত্রিকা চাইলেই কোন খবর বানাতে পারে না, পাঠকই প্রতারণা ধরে ফেলে।
ভুল সময়ে ভুল দেশে জম্ম নেয়া প্রিয় লেখকের প্রতি রইল একজন ক্ষুদে ভক্তের জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
শুভ জন্মদিন অভিদা।
আমি না পারছি আস্তিক হতে না নাস্তিক তবে এই মানুষটার প্রতি ছিলো অগাধ সম্মান আর দুর্বলতা. জন্মদিনে কলমের কালিতে বেঁচে থাকো হে প্রিয় মানুষ
Beautifully composed. Avijit Roy shall be perpetually remembered by all as a soldier of science, reason, and humanism. Hats off to those daring to stand up against the dogma clouding Bangladesh.
শুধু চোখটাই ঝাপসা হল না হয়ত হয়তবা তোমাকে ছাড়া সমস্তকিছুই ঝাপসা। অভিদা তুমি যখন ছিলে তখন আমি মুক্তমনাতেই ছিলাম না আর আজ যখন তুমি নেই তখন প্রতিদিন প্রতিক্ষন আমার মুক্তমনায় বিচরন। তোমাকে যেন একান্তই আপন মনে হয় মনে হয় কাছেই আছ তুমি তাই আজ আমি সাহসি। তোমার জন্যই শুধু আমি মুক্তমনা জানো অভিদা মুক্তমনায় আমি একটা লেখা লিখব তোমাকে নিয়ে তাই তোমাকে নিয়ে অনেক স্টাডি করেছি এবং করছি। শুভ জন্মদিন অভিদা খুব মিস করি তোমাকে। বন্যাপা ভালো থেকো।
অভিজিৎ দা ,খুব মিস করছি 🙁
শুভ জন্মদিন অভিদা।
আমি প্রাণপণে ভুলে থাকার চেষ্টা করি। তার সাথে কখনো ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু মুক্তমনায় সেই ইংরেজি ব্লগ থেকেই বহু বছর যাবৎ নিয়মিত আসা-যাওয়া থাকায় মনের অজান্তেই অভিজিতদার সাথে কবে মিশে গেছি টের পাইনি। তার মৃত্যু যে গভীর ক্ষত রেখে গেছে আজো সারেনি। তার মৃত্যুর আগে আমি জানতাম না তাকে এত ভালবাসি। মনে পড়ে সর্ব প্রথম নিউজটা শুনার পর হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম, আমি জীবনে এমন কান্না আপনজনদের জন্য কেঁদেছি বলে মনে পড়ে না।
আমি নিশ্চিত আমার মত দুরের বহু মানুষের মনে এমন ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তার মৃত্যুতে। এ ক্ষত সহজে সারাবার নয়।
শুভ জন্মদিন অভিজিৎ দা। আপনাকে বুকে ধারণ করে আছি।
পড়তে পড়তে চোখের অশ্রু সামলানো সম্ভব হলো না। শুভ জন্মদিন অভি দা।
“কিন্তু উদারতাটা কেমন যেন একটা দুষ্প্রাপ্য দ্রব্যে পরিণত হয়েছে।” অভিজিতের মাঝে উদারতা ছিল সমনামা সেই নক্ষত্রটির মতই উজ্জ্বল। বন্যা আহমেদের হৃদয়-নিংড়ানো লেখায় সেই উদারতা বিন্দুমাত্র ম্লান হয় নি। অভিজিতের জন্মদিনে তাঁকেও শুভেচ্ছা।
ব্যক্তিগত আবেগ ,অনুভূতি খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে পুরো লেখা জুড়ে যদিও মানসিক অস্থিরতা প্রতীয়মান । আর্টসেলের অবশ
অনুভূতির দেয়াল এর কয়টা লাইন কেন জানি মনে বার বার উঁকি দিচ্ছে-
ভীড়ের মাঝে আবার ভীড়ে
আমার শরীর মিশে কোলাহলে
দুঃখ ভুলে মিশে যাই মুখোশ স্রোতে
অনেক দুরের একলা পথে
ক্লান্ত আমি ফিরি তোমার কাছে
মুখোশ খুলে বসে রই জানলা ধরে
আপনি এসেছিলেন বলেই, মুক্তমনা ব্লগ গড়েছিলেন বলেই আমার চিন্তা-ভাবনার জগৎটাকে অন্যভাবে গড়ে তুলতে পেরেছি। আপনি এসেছিলেন বলেই মুক্তচিন্তার লড়াইয়ে তরুণরা ঝাঁকে ঝাঁকে যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের কূটীল রাষ্ট্রযন্ত্রীরা আপনাকে ধরে রাখতে পারে নি, ক্ষমতার স্বার্থে তারা আপনাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আমরা এই রাষ্ট্রে এখনো প্রকৃত খুনীদের বিচার করতে পারি নি, এই লজ্জা আমাদের। কিন্তু আপনি যে পথের সন্ধান দিয়েছেন সেই পথেই আমরা চলছি।
শুভ জন্মদিন অভি’দা।
বিনম্র শ্রদ্ধা!
আমার চোখ ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছিল।
অনেক বার থামতে হলো বন্যা। এত ঝকঝকে লেখাও অনেকবার ঝাপসা হলো। যখন একটু আবার দেখতে পেলাম; ফের পড়লাম, থামলাম, আবার পড়লাম।
আসলেও; জন্মদিনে এইটাই অভিজিতের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। :rose:
শুভ জন্মদিন অভিদা। আপনি জন্মেছিলেন বলে, লিখেছিলেন বলে, শিখিয়েছেন বলে এ জগৎটাকে বুঝতে শিখেছি, মানুষ হবার মিছে গর্ব ছুড়ে ফেলে ক্ষুদ্র কিন্তু সীমাহীন সম্ভাবনাময় এ জীবনে সবাইকে সাথে করে, মিলেমিশে, ভালোবেসে পরিপূর্ণ করার পথ চিনেছি। আপনার কাছে আমাদের প্রজন্ম ঋণী, একই সাথে লজ্জিত আপনাকে ধরে রাখতে না পারার ব্যর্থতার জন্য।
বন্যাপা, ঠিকই বলেছেন এমন চিঠি আপনাকে মুক্তমনায় দিতে দেখলে অভিদা আত্মায় আস্থা না রাখলেও আত্মহারা হয়ে যেতো খুশিতে। জন্মদিনের সেরা উপহার!