গত সপ্তাহে ‘আহলে হাদিস’ তথা বাংলাদেশী সালাফি মতাদর্শী সংগঠন জেএমবি সবার উদ্দেশ্যে কিছু বার্তা ও তাদের কিছু স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। এই স্বীকারোক্তিগুলোর কারণে অনেক হত্যা মামলার জট সহজে খুলে যাবে। জেএমবি তাদের নতুন বার্তায় তাদের সংগঠনের নামের ইতিহাস ও ভারতীয় উপমহাদেশে জিহাদের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে। এছাড়া বিএনপি জামাতকে জোটকে (আওয়ামী লীগ তো আছেই) ত্বগুত ও মুরতাদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পাঠক লক্ষ্য করুন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএ-এর ম্যাগাজিন দাবিক পত্রিকার ১২তম সংখ্যায় আইএসআইএস বাংলা ভাইকে সাজা দেওয়ার কারণে একই ভাবে বিএনপি-জামাত সরকারকে মুরতাদ ঘোষণা করেছে। সেই সংখ্যায় ৭১-এর আল-বদর কমান্ডার রাজাকার নিজামীকে ‘হেড অব মুরতাদ’ ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে আইএস-এর নামে যে হামলাগুলো করা হচ্ছে তা মূলত জেএমবি করছে এবং স্বীকারোক্তি দিচ্ছে আইএস। আইএস একটি সালাফি সুন্নি সংগঠন। ফলে আদর্শিকভাবে জেএমবির সাথে তার মিল রয়েছে। সালাফি সংগঠন আইএস-এর সাথে বাংলাদেশের দুইটি দল খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে ১. জেএমবি ২. হিজবুত তাহরীর।
জেএমবি’র ইতিহাস:
জেএমবি বলছে, জেএমবি নামটি কোন নতুন নয়। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিমদের দ্বারা একটি জামায়াহ তৈরি হয়। যার নাম হয় “জামা’ আতে মুজাহিদীন”। এর নেতৃত্বে ছিলেন সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ এবং তার সেনাপতি ছিলেন ইসমাঈল শহীদ। তাদের নেতৃত্বে এই ভূখণ্ডে কিছু ইসলামিক হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৮৩১ সালে বালাকোটের যুদ্ধে নেতৃস্থানীয় মুজাহিদীনসহ অন্যরা নিহত হলে ইসলামী শাসনের পতন ঘটে। অনেকে জেল, ফাঁসি ও সাজার সম্মুখীন হয়। ফলে জামা আতে মুজাহিদীন-এর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
তারা বলছে, এই অঞ্চল ব্রিটিশরা ছেড়ে গেলেও তাদের কুফরি আইন কানুন সবই রেখে যায়। ফলে আল্লাহ আইন প্রতিষ্ঠা করতে পাকিস্তান, আফগানিস্তানে মুজাহিদীনরা জেগে উঠে। ঠিক একই টাইপ কথাগুলো দেখতে পাবেন দাবিক ম্যাগাজিনের ১৫ সংখ্যায়ও। পাকিস্তান আফগানিস্তানের পর বাংলাদেশে “আল-কায়েদাতুল জিহাদ(আল-কায়দা)” এর আদলে সহীহ আক্কীদাহ-মানহাজের ভিত্তিতে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর মাসে শাইখ আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ফজর-এর নেতৃত্বে একটি জিহাদি তানজীম প্রতিষ্ঠিত হয়। যার সেনাপতি ছিলেন শাইখ নাসরুল্লাহ মাদানী। যার নামকরণ করা হয় পূর্বের ব্রিটিশ উৎখাতের যে জিহাদি তানজীম ছিল তার নামানুসারে-জামা’আতুল মাজুহিদীন সংক্ষেপে জেএমবি।
উইকিলিকসে প্রকাশ হওয়া মার্কিন গোপন তারবার্তায় জানা যায়, জামাত ও বিএনপির জোট ঘটনের ফলে যেসব জামাতপন্থী লোকজন বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি তারাই মূলত জেএমবি গঠন করে। এছাড়া জামাতের অনেক নেতা জেএমবিকে সমর্থন করে ও বিএনপির অনেক মন্ত্রী জেএমবির সাথে যোগাযোগ রাখেন। ২০০৬ সালে এরশাদ দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ক্রিস্টিনা রোকার সাথে সাক্ষাৎকারে বলেন, উগ্রবাদী কমিউনিস্টদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে সরকারের সহযোগিতায় জেএমবির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া জেএমবির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার জামিনের জন্যে তারেক রহমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে হস্তক্ষেপ করেন। গোপন-তারবার্তায় আরও জানা যায় যে, জেমএবির নেতা আবদুল রহমান দক্ষিণ এশিয়ায় আরবি বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন। তিনি পাকিস্তান ও ভারতে সফর করেছেন। ১৯৯৬ সালে তিনি পাকিস্তানে আইএসআইয়ের কাছে শেখা শুরু করেন কীভাবে বিভিন্ন উপকরণ থেকে বিস্ফোরক তৈরি করতে ও একে-৪৭ রাইফেল চালাতে হয়। আইএসআই আব্দুর রহমানকে কাশ্মীরে ব্যবহার করতে চেয়েছিল কিন্তু রহমান সেখানে না গিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং জেএমবি গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া উইকিলিকসের গোপন তারবার্তায় আরও জানা যায় যে, পাকিস্তানের আইএসআই গোয়েন্দা সংস্থাকে মার্কিন কূটনৈতিকরা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যারা তারা বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় সন্ত্রাস রপ্তানি করছে। ২০১২ সালে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
কর্মসূচি হল-
১. দাওয়াত, (আহ্বান/উদ্বুদ্ধকরণ)
২. ই’দাদ (প্রতিক্ষণ/প্রস্তুতি-গ্রহণ)
৩. ক্বিতাল (সশস্ত্র যুদ্ধ)
বিএনপি-জামাত জোটের সাথে জেএমবির সম্পর্ক:
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে যখন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে জেএমবির সম্পর্কে রিপোর্ট প্রকাশ করে তখন বিএনপি-জামাত এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে, জেএমবির অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করে। অনেকটা অনিচ্ছায় বিএনপি-জামাত জোট সরকারকে জেএমবি দমনে পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। অনিচ্ছায় বলছি এ জন্য যে, জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড দমনে যে সব পদক্ষেপ, কৌশল ও রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রয়োজন ছিল, তার কোনোটিই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ছিল না। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কানাডিয়ান ইন্টেলিজেন্স সিকিউরিটি সার্ভিসেস এক রিপোর্টে উল্লেখ করে: Bangladesh government is not doing enough to prevent the country from becoming a haven for Islamic terrorists in South Asia and pointed out that religious extremists are connected to Al Qaeda.[/fusion_builder_column]
প্রথম আলো’র মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতাই জঙ্গি গোষ্ঠীর ‘গডফাদার’ হিসেবে কাজ করেছিলেন। জঙ্গি সংগঠন জেএমজেবির নেতা মওলানা শায়খ রহমান ও বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে বিএনপির একাংশের এবং জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্কটি ছিল ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম (জঙ্গি কর্মকাণ্ডের উপদেষ্টা), ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস দুলু (২০০৪ সালে এপ্রিল মাসে দুলুর বাসায় শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাই দলবল নিয়ে মিটিং করেন), গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির (যিনি মোবাইলে শায়খ রহমান ও বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতেন এবং ওদের বাসায় দাওয়াত দিয়েছিলেন), তৎকালীন মেয়র মিজানুর রহমান মিনু (মাহাবুব নামের এক জঙ্গির কাছে বাংলা ভাইয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকার ব্যাংক চেক দিয়েছিলেন), সাবেক সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফা (যিনি পুঠিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা বাংলা ভাইয়ের হাতে তুলে দেন) ও সংসদ সদস্য আবু হেনার (যিনি আপন ভাতিজার মাধ্যমে বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন) নিবিড় সম্পর্ক ছিল জেএমজেবির সঙ্গে। (সূত্র-বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান: একটি পর্যালোচনা)
নিচে জেএমবির আক্রমণের লিস্ট উল্লেখ করা হল। তারা স্পষ্ট করে বলছে, তাদের উল্লেখিত হামলার বাহিরে তারা কোন হামলা করেনি। যদি কোন হামলায় ত্বগুত বাহিনী (পুলিশ বাহিনী) তাদের নাম জড়িত করে তাহলে সেটার দায় তারা নেবে না। তারা স্পষ্ট করে বলছে, অনৈসলামিক কর্মক্ষেত্র, ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলো হামলাই তাদের মূল লক্ষ্য। যেমন-২০০০-২০০৫ সাল পর্যন্ত শতাধিক এনজিও উপর আক্রমণ করা হয়। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আইএস এর গুরু ওহাব ও তাইমিয়া এমন মাজার বিরোধী তেমনি জেএমবি আইএস-এর মতন প্রচণ্ড মাত্রায় মাজার বিরোধী। ইবনে তাইমিয়া সারা জীবন যুদ্ধই করেছেন সুফিবাদীদের বিরুদ্ধে। তিনি আদেশ দিয়ে যান, ক্ষমতা থাকলে এসব বেদাত জিনিস ভেঙ্গে ফেল আর না পারলে মন থেকে ঘৃণা কর। জেএমবির হামলাগুলোর মধ্যেও অসংখ্য মাজার কিংবা পীরও রয়েছেন। জেএমবি একটি শব্দ খুন ব্যবহার করে তাহলো-ত্বগুত। ত্বগুত শব্দের অর্থ সম্ভবত-যে আল্লাহ ছাড়া অন্যকে স্বীকার করবে কিংবা অন্যের আইন ফলো করে।
হামলার দায়-স্বীকার:
১. ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে ৪টি সিনেমা হলে অশ্লীল সিনেমা প্রদর্শনের জন্যে বোমা হামলা।
২. ২০০২ সালে সাতক্ষীরায় ইটাগাছায় ত্বগুতের পুলিশের টহল বাহিনীর উপর হামলা, ২ জন নিহত।
৩. ২০০২ সালে সাতক্ষীরায় অশ্লীলতা বন্ধের লক্ষ্যে সিনেমা হল ও সার্কাসে বোমা হামলা।
৪. ২০০৩-২০০৫ সাল পর্যন্ত ৫০টির বেশি যাত্রা পালায় বোমা হামলা। কারণ যাত্রা পালা অশ্লীল।
৫. ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা। (এখানে বলে রাখা ভাল, ২০১০ সালে এসে অধ্যাপক আজাদ হত্যায় একটি নতুন তথ্য পাওয়া যায়। কারাগারে আটক জেএমবি প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান পুলিশকে জানায় সাঈদীর উস্কানিতেই তার দলের সদস্যরা অধ্যাপক আজাদের উপর হামলা চালায়।)
৬. হুমায়ুন আজাদের মতন একই অপরাধে ২০০৪ সালের শেষের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইউনুসকে হত্যা করা হয়।
৭. ২০০৩ সালের শুরুর দিকে জয়পুরহাটের কালাইখানা পীরের আস্তানায় ৫ জন খাদেমকে শিরোচ্ছেদ।
৮. ২০০৩ সালে টাঙ্গাইলের তকতার চলা এলাকায় ফাইলা পাগলার মাজারে টাই বোমা ও গ্রেনেড হামলা।
৯. ২০০৪ সালে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানায় হোমিও ডাক্তার মনিরুজ্জামানকে “মেয়ে তুমি মানুষ ছিলে কবে” বইয়ের জন্যে হত্যা করা হয়।
১০. ২০০৪ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী জেলার বাগমারা খান, নওগাঁ জেলার রাণী নগর, আত্রাইসহ আশেপাশের এলাকায় লেলিন-কার্ল-মার্কসবাদী অর্থাৎ সর্বহারাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান। তাদের বিরুদ্ধে জেএমবি ৩৫০ টির বেশি অভিযান পরিচালনা করে।
১১. ২০০৪ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর ধর্মান্তরিত গণী গোমেজ ওরফে জোসেম মণ্ডলকে ইসলামিক আইনে হত্যা করা হয়। অপরাধ-ধর্ম ত্যাগ ও অন্যদের ধর্মান্তরিতকরণ।
১২. ২০০৫ সালের ১৪ই এপ্রিল ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান হৃদয় রায়কে খ্রিস্টান ধর্মে অন্যদের ধর্মান্তরিতকরণের অপরাধে হত্যা করা হয়।
১৩. ২০০৫ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে কনসার্টে সাউন্ড ব্লাট এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান পণ্ড করা হয়।
১৪. ২০০৫ সালের ১৭ই অগাস্ট সারাদেশে সিরিজ সাউন্ড ব্লাস্ট এর মাধ্যমে ইসলামিক আইন বাস্তবায়নের আহ্বান ও দাওয়াত পত্র প্রচার।
১৫. ২০০৫ সালের অক্টোবরে লক্ষ্মীপুর জেলার আদালতে হামলা। (আত্মঘাতি হামলা)
১৫. একই মাসে চট্টগ্রাম কোর্টে হামলা। (আত্মঘাতি হামলা)
১৬. ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে ঝালকাঠিতে তাদের ভাষায় মুরতাদ বিচারকের গাড়িতে হামলা। ২ জন বিচারক হত্যা। (আত্মঘাতি হামলা)
১৭. ২০০৫ সালের নভেম্বরে গাজীপুরে আদালতে হামলা। তাদের ভাষায় ত্বগুতের আদালত। (আত্মঘাতি হামলা)
১৮. নভেম্বরে নেত্রকোনা উদীচী অফিসে পাশে পুলিশের উদ্দেশ্যে হামলা। তাদের ভাসায় ত্বগুতের বাহিনী। (আত্মঘাতি হামলা)
১৯. ২০০৬ সালের অক্টোরব থেকে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টঙ্গী, উত্তরা, গাবতলি, গুলিস্তান এলাকায় পুলিশের টহল বাহিনীর উপর গ্রেনেড হামলা করা হয়।
২০. ২০০৭ সালের ২৯ শে মার্চ বাংলা ভাই ও তার সঙ্গীদের ফাঁসি কার্যকরের পনের দিনের মাথায় তৎকালীন রাষ্ট্র-পক্ষের পিপি হায়দারকে গুলি করে হত্যা।
২১. ২০০৮ সালে “জামা’আতুল মুজাহিদীন” পরিচিত দাওয়াহ-এর ১৭ই অগাস্টের দাওয়াহর কারণ ও যৌক্তিকতার সিডি প্রকাশ।
২২. ২০০৯ সালের মে মাসে পুলিশের টহল বাহিনীর উপর গ্রেনেড হামলা।
২৩. ২০১৩ সালের ২১ শে ডিসেম্বর গোপীবাগের লুতফর রহমান ফারুকিসহ ৫ জন মুরিদকে হত্যা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যারা খুন করেছে তাদের ব্রিগেডের নাম-ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ ব্রিগেড। (আগেই উল্লেখ করেছি ১৩ শতকে জন্ম নেওয়া সালাফিদের একজন গুরু সেই তাইমিয়া)
২৪. ২০১৪ সালের ২৩ ষে ফেব্রুয়ারিতে জেএমবির “শাইখ নাসরুল্লাহ ব্রিগেড” মুজাহিদদের মোমেনশাহী কোর্টে নেওয়ার সময় প্রিজনভ্যানে হামলা। বাংলাদেশে এই প্রথম পুলিশের উপর হামলা করে কারাবন্দীদের মুক্ত করার ঘটনা ঘটে।
২৫. ২০১৪ সালের ২৭ শে অগাস্ট চ্যানেল আই-এর উপস্থাপক ইসলামিক চিন্তাবিদ নুরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যা করে জেএমবির “আতাউর রহমান সানী ব্রিগেড”। ফারুকীর অপরাধ তিনি মাজার-পন্থী। আর সালাফিরা মাজার বিরোধী তা পূর্বেই উল্লেখ করেছি।
২৬. ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর পি.ডি.বি. এর সাবেক চ্যায়ারম্যান পীর খিজির খানকে “হাফেজ মাহমুদ ব্রিগেড” হত্যা করে।
২৭. ২০১৬ সালের ২৫শে এপ্রিল বেলা ১১.৩০ ঘটিকায় সার্জেট ইন্সট্রাক্টর রুস্তম হাওলাদাকে হত্যা করা হয়। তাদের ভাষায় তার অপরাধ; মানব রচিত আইনে ইমানদারদের (জিহাদিদের) ফাঁসিসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়ায় সহায়তা করা।
২৮. ২০১৬ সালের ৭ই মে রাজশাহী জেলার তানোর খানাতে “আব্দুল আউয়াল ব্রেগেড” শহিদুল্লাহকে হত্যা করে।
ফিদায়ি বা আত্মঘাতী আক্রমণ:
জেএমবির প্রধানের দাবি, তাঁদের দলে আলাদা করে আত্মঘাতী বা ফিদায়ি ইউনিট ছিল না। তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বোমা হামলার পরবর্তী ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সদস্য ফিদায়ি (আত্মঘাতী) হতে উদ্বুদ্ধ হয়। আক্রমণের স্বীকারোক্তির তালিকায়ও দেখা যাচ্ছে ২০০৫ সালের আগে তারা কোন আত্মঘাতী হামলা চালায়নি।
তাদের নতুন বার্তায় নবী কিংবা ইসলাম নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে তাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানানো হলেও দেখা যাচ্ছে নাস্তিক লেখক ছাড়া তারা কোন ব্লগারের উপর হামলা করেনি। সুতরাং ব্লগারদের উপর যে হামলাগুলো হয়ে আসছে তা আইএস কিংবা জেএমবি করেনি করেছে আনসার বাংলা। যারা ভারতীয় আল-কায়দার শাখা হিসেবে নিজেদের পরিচয় নিচ্ছে। বাংলাদেশে প্রথম জঙ্গি হামলা করে জঙ্গি সংগঠন হুজি। হুজির মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামীলীগ। এছাড়া তারা আহমদিয়াদের মসজিদেও হামলা চালায়। যেমনটি-পাকিস্তানের তস্কর-ই-তৈয়বার মূল লক্ষ্য হচ্ছে আহমদিয়া সম্প্রদায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সশস্ত্র হামলা চালায় দুইটি সংগঠন এক. হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), ২. জামা’ আতে মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এছাড়া জেএমবির নামের সাথে মিল রেখে তাদের কিছু শাখা গ্রুপও ছিল। যদিও সবগুলোই নিয়ন্ত্রিত হতো জামা’আতে মুজাহিদীন-এর প্রধানের নির্দেশে। বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি হওয়ার সাথে সাথে জেএমবি ধ্বংস হয়ে গেছে কিংবা স্থবির হয়ে গেছে এমটি ভাবা হলেও বাস্তবতা বলছে তারা তাদের কার্যক্রম আগের মতনই চালিয়ে যাচ্ছে। হুজির মতন সংগঠন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেও জেএমবির কার্যক্রমে এতো বছরেও নিষ্ক্রিয়তা আসেনি। বরং বলা যায় সালাফি সুন্নি সংগঠন আইএসআইএস-এর সাথে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশে আরো শক্তিশালী জিহাদী দল হিসেবে আর্বিভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবারো ধন্যবাদ
সালাফি/ওহাবী এগুলো হলো আধুনিক উগ্রমতবাদ। সালাফিদের সম্পর্কে জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন-সালাফি সংগঠন আইএসআইএস ও তার আদর্শিক অবস্থান
মাজহাব চারটি তার মধ্যে হানাফি মাজহাব একটি। ১। হানাফী মাজহাব। ২। মালেকী মাজহাব। ৩। শাফেয়ী মাজহাব। ৪। হাম্বলী মাজহাব।এর মধ্যে সবচেয়ে কট্টর মাহজাব হল হাম্বলী মাজহার। হাম্বল ৫০ হাজার হাদিস সংগ্রহ করেন। তাই মাজহাবের মধ্যে অনেক ইসলামিক আইনে মতপার্থক্য আছে। গুগলে একটু খাটাখুটি করলে সাধারণ ধারণা পাওয়া সম্ভব।
ভাল লাগলো । ত্বগুত, সালাফী, হানাফী, মাজহাবী, ওহাবী শব্দগুলো আরও ডিটেইলস জানার ইচ্ছা রইল, ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ সুব্রত শুভ।
এ হামলাগুলোর দায় কোথায় স্বীকার করেছে জে এম বি?
তারা তাদের সাইটে (বর্তমানে অফ) একট পিডিএফ ফাইল প্রকাশ করে সকল হত্যাগুলোর দায় স্বীকার করে। গত কাল আবার Dhaka Tribune তাদের সেই স্বীকারোক্তির ফাইলটি প্রকাশ করে। পিডিএফ ফাইলটি-এখানে