গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে ইসলামি জঙ্গি হামলার করুণ সমাপ্তি হলো। এটাই প্রথম নয়, শুরু কয়েক বছর আগে। আবদুর রহমান শায়েখ ও বাংলা ভাই শুরু করেছিল। এরপর থেকে চলছেই, আরোও দৃশ্য অভিনীত হবে।
বাংলাদেশী এক জিম্মির বরাদ দিয়ে তার মা বলেছেন, “জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে। সুরা পড়তে পারার পর তাদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়। পারভীন (পুত্রবধূ)হিজাব পরা থাকায় খাতির করা হয়।” তার মানে অমুসলিম নাগরিকরা অনিরাপদ। কে তাদের নিরাপত্তা দেবে? সরকার ও রাষ্ট্র তো এ সবকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই খারিজ করে দিচ্ছেন।
প্রধান মন্ত্রী বলেছেন, ‘অপারেশন সফল হয়েছে, কমান্ডো অপারেশনে ১৩ জনকে বাঁচাতে পেরেছি। কয়জনকে বাঁচাতে পারিনি, তবে সন্ত্রাসীদের ছয়জনই মারা যায়, একজন ধরা পড়েছে।’ এই বুঝি সফলতার নমুনা? দুইজন পুলিশ অফিসার ও বিদেশিসহ কয়জন নিহত?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কি পদে আছে? থাকলে নিশ্চয়ই মিডিয়ায় কি বলবেন তা নিয়ে ভাবছেন। নিশ্চয়ই বলবেন না, রমজানে এসব রেস্তোরায় খেতে যাওয়া কেন?অথবা এটি নিছক ডাকাতি! বা পথভ্রষ্ট কিছু যুবকের পাগলামি— মাতলামি। তাঁর ভাষ্য শোনার জন্য জাতি আগ্রহের সাথে অপেক্ষায়।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে আতঙ্ক ছড়াতে পুরোহিতদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম।শ্যামানন্দদের মৃত্যুর পরও কি তা হুমকির পর্যায়েই আছে?
এসব প্রশ্ন কার কাছে করব আর উত্তরের দায় ই বা কার?
ব্লগার রাজীব হত্যার পর আসামী – অপরাধী ধরা পড়েছিল। হত্যাও বছরখানেক থেমেছিল। অভিজিৎ রায়ের হত্যার পর আর তারা থামেনি। নির্দিষ্ট বিরতিতে হত্যা চলেছেই। কারণ জঙ্গীরা বুঝে গেছে এতে রাষ্ট্রের প্রশ্র্য় রয়েছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে খুনও হালকা হয়ে যায়।
আমি কি লিখলাম এর জন্য আমি খুন হতে পারি এবং আমার খুনের জন্য আমার মুক্ত চিন্তা দায়ী। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এমন ইংগিত দিলে খুন বাড়াই স্বাভাবিক। নিরীহ পূজারী কিভাবে ইসলামের বিবেচনায় খুনের লক্ষ্য হয় তা আমার মাথায় আসে না!
এ যাত্রা কি রক্ষা পেলাম আমরা? পরের যাত্রায় কি রক্ষা পাবো? পরবর্তী হামলার কথা ভেবে আমি শংকিত।
ধারাবাহিক ভাবে একটার পর একটা অস্বাভাবিক মৃত্যু, ধর্ষণ, গুম, লুটতরাজ । যতই ভাবছি পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো হবে, দেশের অগ্রগতি হবে, মানুষের চোখে মুখে দেখা যাবে স্বস্তির কোমল ছায়া, ততই প্রতিনিয়ত বিরামহীন দুঃসংবাদ।ভয়াবহতা দিনে দিনে তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করছে । দেশ কে নিয়ে আমার স্বপ্ন গুলো তাই অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আমার মন…জানি আপনাদের ও
জঙ্গিদের মেরে বেকারীটি মুক্ত করা গেছে, যাদের মারেনি তাদের উদ্ধার করা গেছে ঠিকই, কিন্তু জঙ্গিরা যা করতে চেয়েছিল তা অর্জনে তারা শতভাগ সফল। তারা বিদেশী নাগরিকদের, বিশেষত অমুসলিমদের হত্যা করতে চেয়েছে, দীর্ঘক্ষণ বেকারী দখলে রেখে আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হতে চেয়েছে, বাংলাদেশকে বিদেশীদের জন্য একটি বিপদজনক দেশ হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছে আর নিজেরা জীবিত ধরা পড়তে চায়নি। এসব বিবেচনায় নিলে অভিযানের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কেবল নামেই ‘থান্ডার-বোল্ট’ হলে চলবে না, ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনায় অতি-দ্রুত একশনে যাওয়ার প্রস্তুতি থাকা দরকার।
জঙ্গিদের হাতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক হত্যাকান্ডগুলো বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে যে সরকার যেভাবে দেখে অভ্যস্ত বিষয়টি কোনমতেই সেরকম একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ব্লগার রাজীব হত্যার পর থেকে চলে আসা ‘অমুসলিম’ (যারা জঙ্গিদের ধর্ম বা আদর্শে বিশ্বাসী নন)-হত্যা যে একটি নীলনকশা অনুযায়ী ঘটে চলেছে, স্বাভাবিক বুদ্ধির যে কেউই তা বুঝতে পারবেন। আর এসব হত্যাকান্ডের দৃষ্টিগ্রাহ্য উত্থান শাহবাগ আন্দোলনের পর থেকেই। এর ভিত্তিতে জামাত-শিবির আর অন্যান্য বিজাতীয় নামের জঙ্গি দলগুলোর মধ্যে গোপন সমন্বয় অস্বীকার করা যায় না।
এই ফোরামসহ অনেক ইলেকট্রনিক আর প্রিন্ট মিডিয়াতেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইসলাম আর জঙ্গিবাদের উত্থান ও এর বিকাশ প্রতিরোধে কি করা দরকার তা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। সুশীল সমাজসহ সরকারের নীতি নির্ধারকদের অনেকেই এসব জানেন। তবে বর্তমান সরকার দেশে ধর্মীয় উগ্রতার বিস্তার রোধ করতে চাইলেও এর পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শ ও দ্বিচারিতা, দলীয় নেতাকর্মীদের অনৈতিক কর্মকান্ড ও উশৃঙ্খলতা, এবং যেকোন মূল্যে গদী আঁকড়ে রাখার প্রবণতার কারনে তা সম্ভব হবে না।
সুরা শিখে নিব আর হিজাব পড়ব — তবুও এদেশেই থাকব।