লেখকঃ হ্যারি পটার
মাথায় মাঝে মাঝে আগুন উঠে যায়। হায়রে মানুষ! নিজেদেরকে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী বলে দাবি করে, অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্য, সবচেয়ে নীচ কাজগুলোও এরাই করে।
পৃথিবী এবং এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি কেন হল? এই পৃথিবীতে আমরা কেন এসেছি? এই দুটো প্রশ্নের জেরেই এত এত মত, এত এত ধর্ম, এত এত কু-সংস্কার আর এত নাটকের রাজত্ব! কারণ, যেহেতু প্রশ্ন দুটোর উত্তর কষ্ট করে খুঁজে বের করে লাগবে তার চেয়ে বরং কোনো এক অলৌকিক শক্তি এই কাজ করে রেখেছে ধরে নিলেই মিটে যায়! এবং এই তত্ত্ব কমবেশি সবাই মেনে নিয়েছে। কিন্তু এরকম ব্যাপার যদি মেনে নেওয়া যদি ঠিক হয় তাহলে পরীক্ষার সময় পরিক্ষার্থীর কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি জানা না থাকে এবং সে যদি লেখে-“এই প্রশ্নের উত্তর সৃষ্টিকর্তার নিজস্ব ব্যাপার। তার লীলা। সুতরাং এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার জন্যে ভয়ংকর অপরাধ,” তাকে সম্পুর্ণ নম্বরই দিয়ে দেওয়া উচিত!
পৃথিবীর মানুষের চরিত্র বেশ দারুণ! যুগে যুগে যাঁরাই এদেরকে এক করার চেষ্টা করেছে তাদেরকে এরা নাস্তিক বলেছে, ম্লেচ্ছ বলেছে, বলেছে কাফের। পৃথিবিতে শুধুমাত্র নিজের ক্ষমতা রক্ষা করতে গিয়েই সৃষ্টি হয়েছে বিশ হাজারেরও বেশি আলাদা আলাদা ধর্ম ও আলাদা আলাদা সৃষ্টিকর্তা! হ্যাঁ, ব্যক্তিগত স্বার্থ আর ক্ষমতার জোরেই এগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত ইতিহাস তাই-ই বলে। এটাই অবিশ্বাস্য যে এই মানুষগুলোর মতে যে সৃষ্টিকর্তা এত শক্তিমান, সে তাকিয়ে তাকিয়ে এই রঙ্গ কিভাবে সহ্য করছে! তার নামে মানুষ মানুষকে খুন করছে। তার নামে মানুষ তার মতই আরেক রক্ত-মাংসের মানুষকেই তার সাথে জাতের দোহাই দিয়ে বসতে দিচ্ছে না, স্পর্শ করতে দিচ্ছে না। আর পরম করুণাময়(!) সেটি বসে বসে দেখছেন!
যখন বলি যে, এত অন্যায় অবিচার সৃষ্টিকর্তা কিভাবে সহ্য করছেন? তখন উত্তর আসে, “অন্যায় না থাকলে ন্যায় এর মর্ম বোঝা যায় না।” বাহ! তাহলে মোটা মোটা ধর্মগ্রন্থগুলোতে কেন বলা হয়েছে যে “সদা সত্য কথা বলিবে। মিথ্যা বলিবে না। মিথ্যা বলা মহাপাপ?” এই যুক্তি অনুসারে মিথ্যা না বলাই তো মহাপাপ! কারণ, মিথ্যা বলা ছেড়ে দিলে সত্যের মর্ম বোঝা যাবেনা! কিন্তু এই কথা বলতে গেলে এখন পালটা যুক্তি না পাওয়া গেলেও মাথার পিছনে চাপাতির কোপ পাওয়া যাবে!
মানুষ বড্ড অলস। নিজের সৃষ্টির রহস্য খুঁজতে তার পরিশ্রম করতে বড়ই অনীহা। তার চেয়ে সহজ পন্থায় নিজের ও এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির কারণ হিসেবে সে যুক্তিহীন ও অজ্ঞতায় পরিপূর্ণ কথাবার্তাতেই বিশ্বাসী। আর এই অজ্ঞতার রাস্তাকে কাজে লাগিয়েই সে হয়ে ওঠে মস্ত বড় ধার্মিক। সাথে সাথে ফুলে ওঠে তার পকেটও! একটা উদাহণ দেই এখানে, ভারতের বিখ্যাত যোগগুরু বাবা রামদেব। উগ্রবাদী ও মৌলবাদিতে বিশ্বাসী এই লোকটা ধর্মের নাম করে আর যোগব্যায়ামের মাধ্যমে কোটি কোটি অনুসারী এবং রীতিমত ডলারে ইনকাম করেছে! তার প্রাইভেট জেট পর্যন্ত রয়েছে। অথচ তার অনেক অনুসারীই দু’বেলা খেতে পায় না। তিনি যখন এতই ধার্মিক তখন তো তার উচিত পায়ে হেঁটে চলাচল করা এবং তার সকল অর্থ গরিব-দুঃখী দের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া! বিলিয়ে দেওয়াই তো ধর্ম! কিন্তু এইসব লোকের কপালেই আমাদের সমাজ “ধার্মিক” ও “সজ্জন” ব্যক্তির ছাপ লাগিয়ে দেয়!
এইসব লোকজন যুক্তিবাদী ও বাস্তববাদী মানুষদের বলে, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদুর।” ঠিক আছে, আপনি একটু পরে চোখ বন্ধ করুন। এবার মনে মনে বিশ্বাস করুন যে দুই মিনিটের মধ্যে আপনার সামনে একটি দশ টাকার নোট চলে আসবে। কিন্তু পৃথিবী লয় হয়ে গেলেও তা আসার কথা না! এবং আসবেও না! এটিই বাস্তব। কঠিন বাস্তব। হে ধার্মিকগণ, বিশ্বাসে সামান্য দশ টাকাই মিলছে না! আর কোথায় আপনারা এই বিশ্বাসের মাধ্যমেই মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য খুঁজছেন! আপনাদের এই ভন্ডামির জন্যেই আজ গ্যালিলিওর মত বিজ্ঞানীকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
সারা পৃথিবী জুড়ে কোণঠাসা মানুষগুলো বুঝতে চায়না যে তারা যে জিনিসের ওপর অগাধ বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছে সেটি কিছু ব্যবসায়ীর সৃষ্টি। আরে বাবা, এই কাগজ আর লিপিই সৃষ্টি হয়েছে মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে। তার আগে নিশ্চয়ই কোনো ধর্মগ্রন্থ ছিল না। অর্থাৎ, এখন পৃথিবীতে বর্তমানে রাজত্ব করা এই নামীদামী ধর্মমতেরও কোনো অস্তিত্ব ছিল না! কিন্তু মানুষ তো সেই দুই মিলিয়ন বছর ধরে এই পৃথিবীতে রয়েছে। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ধর্মগ্রন্থ গুলোতে যত কাহিনী এবং নিয়মনীতি বর্ণনা করা হয়েছে তা আমাদের চৌদ্দগুষ্টির জন্মের আগের কাহিনী। এ যদি সর্বসময়ের সব মানুষের ধর্মগ্রন্থই হয় তাহলে একুশ শতকের মানুষ কী দোষ করল?
এসব তো গেল তত্ত্বের কথা। বাস্তবে যাই। মানে প্রাক্টিক্যাল ঘটনায়। আমার জন্ম তো এই বাংলাদেশে, তাই যথারীতি হিন্দু-মুসলিম নিয়ে মারামারি তে চলে যাই। বেশি আগে যাবোনা। ১৯৯২। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ গুড়িয়ে দিল সাচ্চা হিন্দুস্তানিরা(!)। তার সাথে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর চলল অত্যাচার, খুন। এদিকে ঐ পারের ভাইয়েরা মরছে, মারছে কারা? এপারের মালাউনদের দাদারা! মার শালাদের! হিন্দুদের ধন-সম্পদ ও হিন্দু মেয়েগুলো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের(!) দ্বারা গণিমতের মাল হিসেবে ঘোষিত হল! মাঝখান দিয়ে সৃষ্টিকর্তার দোহাই দিয়ে দুই দেশের মৌলবাদী গুলোর স্বার্থ হাসিল হল আর দুই দেশের লাখ লাখ সংখ্যালঘু হিন্দু আর মুসলিম হল নিঃস্ব। যারা এই মৌলবাদীদের সমর্থন দিয়েছে, তাদের নোংরা মনে কি একবারো মনে হয়নি যে আমি হিন্দু হই আর মুসলিম হই, আমার ধর্মগ্রন্থ(যার দোহাই দিয়ে এত দক্ষযজ্ঞ) বলে যে আমরা সবাই ই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি? তাহলে কোন অধিকারে ভারত পবিত্র(!) করার জন্য মুসলিমদের মারা হয়? কোন অধিকারে হিন্দু মেয়েরা ভোগের পণ্য হয়?
সমস্যা হচ্ছে আমাদের এই শান্তিপ্রিয় জাতি আস্তিক ঠিকই, কিন্তু যারা সরাসরি এই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত না তাদের জন্য দিনে ভাত-কাপড় আর রাতে সোহাগ পেলেই তাদের জীবন ধন্য। কার জন্য কে মরল, কে খেল না খেল তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না। আবার ধর্মগুরুরা ডাক দিলে কিন্তু তাদের মন ঠিকই আনচান করে। কিন্তু এই স্থুল ও নোংরা দিকগুলো রাস্তার কোনে পড়ে পড়ে মার খাওয়া ভিখারী থেকে শুরু করে বিশাল বাঙলোবাড়ির শোবার ঘরের কোনে পড়ে থাকা ক্রন্দনরত নির্যাতিতা স্ত্রী, কারোরই চোখে পড়ে না। কারণ, তাদের মধ্যে বিশ্বাসের ভাইরাস খুব দারুণভাবেই ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। কারো মধ্যে যদি ভুল করে সত্যিটা জেগেও যায়, তাহলে আমাদের শক্তিশালী ব্যবসায়ীগণ ঠিকই তাদের মুখ চেপে ধরে।
আজ ধর্মের ফ্যাশনধারী মানুষের সংখ্যাই বেশি। শ্রীকৃষ্ণের ছবি বিকৃত করলে, মহানবী(স) কে নিয়ে কটুক্তি করলে এদের পরাণ জ্বলে যায়। দা-চাপাতি নিয়ে সেই বেজন্মা(!)কে কুপিয়ে শেষ করতে পারলেই যেন ধর্ম রক্ষা হয়। ওহে ধর্মপত্তুর যুধিষ্ঠিরের দল, আমি নই, তোদের ইতিহাসই বলে মহানবী(স) কে পাথরের আঘাতে মৃত্যুশয্যায় নিয়ে গেছিল পৌত্তলিকেরা। তিনি কি তাদের চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছিলেন? আমি তো জানি, তিনি তার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন,”হে প্রভু, এদের জ্ঞান দাও।“ তিনি চাপাতি নিয়ে ওই পৌত্তলিকদের কোপাতে যাননি। মহানবী(স) কে নিয়ে এই মৌলবাদি গুলো স্রেফ ব্যবসা করে। তাঁর আদর্শ কেউই মানে না। দাঁড়ি রেখে, নামাজ পড়ে বাহ্যিকভাবে তাকে অনুকরণ করে আর ঘরে গিয়ে বউকে পেটায়, রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করলে বাধাও দিতে আসেনা। এদের মতে পৃথিবীতে কোনো মুক্তচিন্তার(প্রকৃতপক্ষে এদের ব্যবসাবিরোধী) মানুষ থাকতে পারবেনা। এরা যদি এতই ধর্মপ্রাণ হয় তাহলে চাপাতি দিয়ে কোপানো এদের কোন ধর্মগ্রন্থে লেখা রয়েছে? সবচেয়ে দুঃখের বিষয় সাধারণ মানুষও সস্তা পুণ্য বা সোয়াব অর্জনের জন্য এদেরকে অকুন্ঠ সমর্থন দেয়। এদের কাছে বোরখা না পরে মেয়েদের বাইরে বেরোনো ভয়ঙ্কর অপরাধ। কিন্তু যে নষ্ট, বিকৃত মানসিকতার জানোয়ারগুলো মেয়েদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করে তাদের বিরুদ্ধে এদের কন্ঠ সোচ্চার হতে শোনা যায়নি। ঘরে শৌচাগার নেই, ঘরের বউকে রাতের বেলা বাইরে যেতে হয় বাধ্য হয়ে। তাতে জাত যায় না, জাত যায় নিকটাত্মীয়ের সামনে মুখের ঘোমটা সরে গেলে। ঘরের কাজের মুসলমান কাজের মহিলা থালাবাসন একবার ধুয়ে গেলে তা পুনরায় নিজে একবার ধুয়ে নেয় ধর্মপ্রাণ হিন্দু গৃহিণী। অথচ নামী রেস্তোরায় যেয়ে যে প্লেটে সে খায় সেটিতে আগে কোনো মুসলমান খেয়ে থাকলেও তার গায়ে লাগে না, সেই প্লেটটি যদি কোন মুসলমান ধুয়ে থাকে তাতেও তার জাত যায় না। এমনকি ওই রেস্তোরার খাবার যদি মুসলমানের রান্না করা হয় তাতেও আমাদের ধর্মপ্রাণ হিন্দুর জাত যাওয়ার ভয় থাকেনা।
মানুষের আজ সময় নেই এই ধর্মব্যবসাকে বোঝার। আজ শিবসেনারা চলন্ত বাসে নারীদের গণধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেনা। তারা আন্দোলন করে গরুর মাংস খাওয়ার বিরুদ্ধে। কারণ, গরুর মাংস মুসলমানরা খায়! আজ পহেলা বৈশাখে নারীর শাড়ির আঁচল ধরে টান দেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলন করে না হেফাজতে ইসলাম। তারা আন্দোলন করে আমাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথের লেখা কাটার জন্যে। কারণ, রবীন্দ্রনাথ হিন্দু লেখক!
যিনি এই লেখাটি পড়ছেন, তার কাছেই সরাসরি প্রশ্ন করব, বলতে পারেন? আর কত? আর কত অন্যায় অবিচার গ্লানি সহ্য করার পর সেই সৃষ্টিকর্তা মুখ তুলে তাকাবেন? আজ ধর্মের নামে, সৃষ্টিকর্তার নামে যা হচ্ছে তাকে খালি চোখে একটা কথাই বলা যায়, “ভন্ডামি।”
সৃষ্টিকর্তা যদি থেকেই থাকতেন তাহলে এই ভন্ডামিই গুলো কখনই হত না। আজ হবার সুযোগ পাচ্ছে। কারণ, এই মানুষ গুলোই এই ভন্ডগুলোই আজ আমাদের মনে বিশ্বাসের ভাইরাস ঢোকাচ্ছে। এই ভন্ডগুলো বলতে চাইছে তাদের সৃষ্টিকর্তার নামে কিছু বললে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। এই ভন্ডগুলো আবার তাদের সৃষ্টিকর্তাকে সর্বশক্তিমান বলে। যিনি সর্বশক্তিমান তিনি নিজের রক্ষা নিজেই করতে পারেন। যে ভন্ড নিজের জীবনেরই গ্যারান্টি দিতে পারেনা সে নাকি সর্বশক্তিমানকে রক্ষা করবে! কিন্তু এই ভন্ডামি ঠেকানোর কেউই নেই। সর্বশক্তিমান বলে যদি কেউ থাকতেন তিনি নিশ্চয়ই ঠেকাতেন।
আর আমার এই লেখাটা পড়ে কারো সামান্যতম উপকার হোক বা না হোক অন্তত একজন হিন্দু আর একজন মুসলিম যদি আমায় খুন করতে চান তাও আমার লেখা সার্থক! কারণ, একজন হিন্দু আর একজন মুসলিম “একত্রে” আমাকে খুন করতে চান! কাজী নজরুল ইসলাম যেটা করতে চেয়েছিলেন সেটা আমি করতে পারব! এইটাই সবচেয়ে বড় সার্থকতা বোধহয়!
সবশেষে, এইটাই বলব, আপনাদের সৃষ্টিকর্তা, আপনাদের ধর্ম আমি মেনে নেব একটা ছোট্ট কাজ করে দিতে পারলে। আপনাদের সামনে সদ্য জন্ম নেওয়া মাত্র ৫ টি শিশুকে রেখে বলতে বলব যে-“বলুন, এদের মধ্যে কে হিন্দু? কে মুসলিম? কে বৌদ্ধ? কে খ্রিস্টান? কে জৈন? কে ইহুদি?” পৃথিবীর কোনো মানুষ যদি বলতে পারেন যে ঐ শিশুগুলি কে কোন জাতের তাহলে আমি সব মেনে নেব। আমাকে যে শাস্তি দেওয়া হবে তাই মেনে নেব। কিন্তু যদি না পারেন তাহলে আপনাকে একটা সহযোগিতা করি আমি। এই যে ৫ টি শিশুর কথা বললাম আমি? এই ৫ টি শিশুর প্রত্যেকেই “মানুষ।” দয়া করে এই পরিচয়টাকে ভুলবেন না।
“সবার ওপরে মানুষ সত্য,
তাহার উপরে নাই।”
সত্যিই, সবার ওপরে আমরা মানুষ। কোনো ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তাই তার উপরে নেই। কারণ, আমাদের সবার গায়ের রক্তই লাল।”
কলম চলুক দুর্বার গতিতে…….অসাধারণ লেখা আপনার।
অসাধারন তবে আধুনিক মৌলবাদ নিয়ে লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
আপনার সাথে আমি এই ব্যাপারে একমত। ইসলাম পরিষ্কার বলে দিয়েছে যে এই পৃথিবী অবাধ ন্যায়ের ক্ষেত্র নয়। এই পৃথিবীতে বহু লোক খারাপ কাজ করে পার পেয়ে যায়। শুধু এটাই নয়, অনেকে অনেক ভাল কাজ করে এর ন্যায্য প্রতিদান পায় না। বরং উল্টোটাও হয়। বহু ভাল লোকেরা কষ্ট পেয়েই এই জীবন পার করে দেয়। এটা কি ন্যায়?
আমাদের মনে রাখতে হবে, এই পৃথিবী একটা সমীকরণের অংশ। আপনারা স্কুলে সমীকরণের অংক করছেন, যেখানে সমান চিহ্নের ডানে বামে দুটি অংশ থাকে। আপনি যদি সমীকরণের বাম অংশে একটু পরিবর্তন আনেন তবে ভারসাম্য রক্ষার জন্য ডান অংশেও পরিবর্তন করতে হয়।
বিচার দিবস হবে সেই #ভারসাম্য রক্ষার দিবস। যারা এই বিচার দিবসকে বিশ্বাস করে না তাদের কাছে শুধুমাত্র এই পৃথিবীই অবশিষ্ট থাকে। এই পৃথিবী দিয়েই সে স্রষ্ট্রাকে বিচার করতে শুরু করে। যখন দেখে এত অনাচার, অবিচার এই পৃথিবীতে, তখন সে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় স্রষ্ট্রা নেই।
আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ সব ব্যাপারে নিখুঁত ও নির্ভুল। বিচারের বেলাতেও তিনি নিখুঁত।”
অনেকেই এরকম ভাবেন। পৃথিবীর কেউ কষ্ট ভোগ করছে, কেউ সুখে আছে, কেউ অত্যাচার করছে, কেউ অত্যাচারিত। সকল অন্যায়, অবিচারের একটা বিহীত হবে পরকালে যাতে করে ভারসাম্য প্রতিষ্টা হয়। কিন্তু ধর্ম পরকালের যে ধারণা দেয় তাতে কি ভারসাম্য আদৌ প্রতিষ্ঠিত হয়?
বিচার দিবসে ইসলামে বিশ্বাস না করার কারণে আগুনে পুড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে অনন্তকাল। এতে কোন ধরণের ভারসাম্য আসবে? আর কোরানে দোজখের যে বিভৎস বিবরণ – আগুনে পুড়ে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসবে, চামড়া একবার জ্বলে গেলে আবার নতুন চামড়া গজাবে, খেতে দেয়া হবে ক্ষত-নি:সৃত পুঁজ। এ হচ্ছে মহান করুণাময়ের বমি-উদ্রেককারী রুচিবোধের নমুনা। এ করে নাকি ভারসাম্য আসবে!
অসাধারণ লেখনী।
যুক্তি দিয়ে ভক্তিবাদীর রুদ্ধদার খোলা যায় না। অজ্ঞতাই যাদের অহংকার, বিনয় বচনে তাদের তৃপ্তি হয় না। চোখ বন্ধ করে আকাশে সাজিয়েছে যে অলৌকিক উদ্যান, তার শেকড় ধরে টানা টানির পুরোটাই ব্যার্থশ্রম। ঐ শেকড় অনেক গভীর, ঐ শেকড় ওদের প্রচন্ড নিরাপত্তা হীনতার, ওদের অলৌকিক বিশ্বাসের দেউলিয়াত্বে। তবু যুক্তির বুহ্য সাজাই, প্রতিহত করতে চাই মানবতার এই সংক্রামক ত্রাস। আমাদের পরিশ্রমট, আমাদের সময়, আমাদের মেধা, এসব ঠিক যায়গায় ব্যায় হচ্ছে কি?
ওদের জন্য লিখে কতটুকু লাভ হয়, জানি না। ওরা আরো শক্ত করে ধরে ওদের অজ্ঞানতাকে। এই বিপথগামীদের পথে আনার আদৌ প্রয়োজন আছে কি? বরঞ্চ আমাদের মূল্যবান শ্রম আর সময় দেয়া উচিত নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের প্রতি, তরুণদের প্রতি। যাদের জানার কৌতুহলটা এখনো বাঁধনছাড়া। একটা প্রজন্ম শিশু থেকে যৌবনে পৌঁছুতে মাত্র দেড় যুগ সময় নেয়। চিন্তা করুন – মাত্র ষোল বছর পর আমাদের সমাজটা বদলে যেতে পারে।
শিশুদের জন্য মুক্তমনা একটা সাইট খোলা যায় না? তাতে থাকবে যেমন চিত্তবিনোদনের জন্য গেইমস, জ্ঞান বিজ্ঞানের চিত্তাকর্ষক সব খবর। আরো থাকতে পারে শিশুদের জীবণে না না সমস্যা আর চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে দাড়াবার পরামর্শ। এটা যদি করা যায়, আমাদের ক্ষোভের হাহুতাশগুলোকে সত্যিই অগ্রগামী সুবাতাসে রূপান্তরিত করতে পারি…।
অসাধারন লিখা।
“কেউ মালা কেউ তসবি গলে
জাতের বিচার ভিন্ন বলে,
আসার কিংবা যাওয়ার কালে ।
জাতের বিচার রয় কার রে,
সব লোকে কয় লালন কি জাত , সংসারে।”
অপূর্ব লেখা। আপনার প্রশ্নের উত্তর একটাই দিতে পারি দাদা, আমরা দুর্বল চিত্ত। পরিস্থিতি , পরিবেশ আমাদের এইরকম করে রেখেছে।
রোজা রাখলেই যদি পুন্য অর্জন হয়ে যেত , তাহলে পৃথিবীর ক্ষুধার্ত মানুষ রা আজ সব বড়লোক হয়ে যেত। বড়লোকের অহংকার দেখাবার একটা উৎসব দুর্গা পুজা কেও আমরা হিন্দু বাঙ্গালির শ্রেষ্ঠ উথসব মেনে নিয়েছি। যে দুর্গা পুজো কিছু লোক কুক্ষিগত করে নিজেদের অহংকার প্রদর্শন করে তা সাধারণ মানুশের উথসব নয় একদম। বলি আর কুরবানির নামে পুন্য অর্জনের জন্য নিরিহ পশু হত্যা করি , তাতে কেউ অনুশোচনা করি না। আসলে কি দাদা , আমাদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। ধর্ম , রাস্ট্র , বিদেশি এসব মানুশের দুর্বুদ্ধির ফল , আসলে পৃথিবী তো একটাই, আমরা পৃথিবী বাসি মানুষ । গোটা পৃথিবী একটা রাস্ট্র। আমরা যে দুর্বল চিত্ত, আপনাদের মত মানুষ আমাকের সাহস দিক , একটু সাহস , আরো সাহস, আমরা ভেঙ্গে পড়েছি দাদা, বাঁচান আমাদের। কোথাও ধর্মীয় মৌলবাদ, কোথাও আধুনিক কুসংস্কার (কলেজ র্যাগিং, চিকিথসা কেলেঙ্কারি, শিক্ষা কে ব্যাবসায় পরিণত করা, মিডিয়া কেলেঙ্কারি)। আমাদের সাহস চাই দাদা , আমরা আসলে সবাই দুর্বল চিত্ত।
আরেকটি অনুরোধ, ধর্মীয় মৌলবাদ এর পাশাপাশি আধুনিক মৌলবাদ নিয়ে লিখুন। বাজার সংস্কৃতির বাজে দিক তুলে ধরুন। আমাদের ইচ্ছা বলে জা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা অন্যায়।
————- পরিশেষে এই লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাই লেখক কে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক নিস্বাশে পড়ে ফেললাম।
এটি আমার প্রথম লেখা। অবশ্যই চেষ্টা করব আধুনিক মৌলবাদ নিয়ে লেখার। ধন্যবাদ।