গঠনমূলক কর্ম্ম সম্পাদনে , কর্ম্মলব্ধ ফল তথা অভিজ্ঞতা প্রয়োগের আবশ্যিকতা এড়িয়ে গিয়ে, কেবল তত্ত্বগত আলোচনে পতিত হয়ে থাকলে ; উত্থান অসম্ভব । এই আলোকে গঠনমূলক কর্ম্ম সম্পাদনে ; সংগঠন জরুরী। তা যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, ক্রিয়া সম্পন্নকারী অশুভ শক্তির বিপরীত প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকারী ব্যক্তিগণ কিন্তু ঘোরতরভাবেই অ সংগঠিত ।
আমাদের সোনার বাংলা আজ আফগান থেকে কি খুব দূরে? জাগরণে হয়ত বিলম্ব ঘটে গেছে। আমরা বিন্দুকে বিসর্গে পৌঁছে দেবার দায় , চাইলেই এড়িয়ে যেতে পারি না । দানবিক শক্তির সংগঠিত আচরণের প্রকাশ কিন্তু আজকে ঘটেনি, এবং এদের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশও কিন্তু লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল অনেক আগেই, কিন্তু এড়িয়ে গেছে আমাদের চোখ; অথবা আমরা চোখ মেলে দেখতে চাইনি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে, রাষ্ট্রও সে মিছিলে অংশ নেয়, তার তথাকথিত ধর্ম (ধর্ম্ম নয় ) নিরেপক্ষতাকে একপাশে রেখে আমরা দেখতে চাইনি, অথবা এর ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়েও কোন প্রশ্ন উত্থাপন করিনি।
গড়ে উঠা হাজার হাজার প্রতিষ্ঠানের সদস্যের জীবিকার বিষয়টাও ভেবে দেখার বিষয় হয়ে থাকলেও, আমরা আমলে নেইনি। (এখানে ‘আমরা’ বলতে আমি প্রগতিশীল ব্যক্তি, দল, সংগঠনগুলোকে বুঝাচ্ছি । ) মাঠ তো ফাঁকা থাকে না । দখল করে নিয়েছে, ধর্ম ভিত্তিক দলগুলো । খুব সম্ভবত শাহরিয়ার কবির কোন এক লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, জামাতে ইসলামের কর্ম্মীরা মাসিক বেতন পেয়ে থাকে । দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জ্জরিত একটা দেশে , ধর্ম পালনের পাশাপাশি যদি, বেঁচে থাকার উপায়ও মিলে যায়, তো তাকে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবে, এটা স্বাভাবিক । আমরা কি সেরকম একটি ‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়ে যাইনি ?
আর এই পরিস্থিতিকে যদি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হয়, কী ঘটতে পারে , তা জানার জন্য পাশ্চাত্যের কিতাব খুলে বসার দরকার পড়ে না ।
ফলে আজ শুধু চিন্তক-লেখকরাই আক্রান্ত নন; আক্রান্তের তালিকায় চলে আসছে, শিক্ষক, ব্লগার, হিন্দু, প্রকাশক, গায়ক ( বাউলশিল্পী ) , এমনকি সমকামীদের নিয়ে কাজ করা কর্ম্মীরাও। লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে, এর বিস্তৃতি ঘটবে। ঘটাই স্বাভাবিক । কারণ উত্তেজনকার কর্ম্ম ছাড়া এসব কর্ম্মীদের ধরে রাখা কঠিন।
আরও একটা দিক এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশ থেকে হিন্দুদের বিতাড়নের ফলে, যে কুলাচারিক শূন্যতা তৈরী হচ্ছে, ( অর্থাৎ আগে যে পালাগান, কীর্তন, যাত্রাপালাসহ নানারকম অনুষ্ঠানগুলো হত , সেগুলো প্রায় বিলুপ্ত । এ হল এক দিক; অন্যদিকে তথ্য প্রযুক্তি বিকাশে , মানুষে মানুষে বেড়েছে বিচ্ছিন্নতা।
অপরদিকে ধর্মধারীদের বিচ্ছিন্নতা কিন্তু বাড়েনি; তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ঘিরে , এই যে ঐক্যবদ্ধ হবার , সংগঠিত হবার সম্ভাবনা , এটা কিন্তু বিজ্ঞান মনস্কদের জন্য নেই। তাদের যোগাযোগ যদিও কিছুটা বেড়েছে, ব্লগ বা ফেইসবুককে কেন্দ্র করে; সেটাও কিন্তু এক অর্থে , অসংগঠিত , যার প্রায়োগিক দিক নেই।
অর্থাৎ প্রায়োগিক দিক নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের ।
একটা গল্প দিয়ে আপাতত বিদায় ।
মাকড়শার জালে আটকা পড়ে প্রতিদিন মাছিরা মারা পড়ে। একদিন মাছিরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিল, সবাই একসাথে মাকড়শার জালে ঝাঁপিয়ে পড়বে। যেই কথা সেই কাজ।
হ্যাঁ, কাজ হয়েছিল তাতে ।
আসুন,আমরা শুধু হইচই না করে, মাছিদের মত ঐক্যবদ্ধ হই, একসাথে ঝাঁপ দেই মাকড়শার জালে ।
চাই সংগঠন । সে সংগঠনে ‘শত ফুল প্রস্ফুটিত হোক’।
( যোজন বিয়োজনে উৎসাহিত করা হচ্ছে )
ধন্যবাদ আপনাদের সকলকে। হ্যাঁ সংগঠন লাগে প্রতিবাদের জন্য। এক বাঙালি মুসলিম বিদ্রোহি কবি কাজি নজরুল ধর্মের উপর মানুষ সত্য প্রমান করেন।
ধন্যবাদ, ইন্দ্রনীল গাঙ্গুলী।
বলতে চেয়েছি, অনুষ্ঠানগুলো হিন্দুদের নয় কিন্তু আয়োজক ছিল মূলতঃ হিন্দু সম্প্রদায় । বিষয়টি পরিস্কার করে এখানে উল্লেখ করার জন্য ধন্যবাদ ।
শূন্যতায় শাসকশ্রেণীর বড় সুখ – যথার্থ বলেছেন।
পালাগান, কীর্তন, যাত্রাপালাসহ নানারকম অনুষ্ঠানগুলো শুধু হিন্দুদের ছিল না, এ আমাদের লোক বাংলার সংস্কৃতি।সাংস্কৃতিক শূন্যতায় শাসন সহজ। আর এ সহজ পথেই হাঁটছে শাসক মহল।
বিনাশযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে অনেক আগেই, সন্দেহ নেই ; কিন্তু নীরব হয়ে থাকাও তো খুনকে উৎসাহিত করার নামান্তর। সামাজিক রোগবালাই-এর বেলায়, ক্যন্সার কেন , যে কোন বিনাশী রোগের মোক্ষম দাওয়াই হল, সংগঠিত প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, বিদ্রোহ ।
ভাবনাগুলোকে উস্কে দেবার জন্য ধন্যাবাদ।
ক্যান্সার যখন সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে তখন কি আর কোনো চিকিৎসায় কাজ হয়? এখন শুধু হিন্দু হওয়ার অপরাধে খুন করছে, ধর্মান্তরিত হওয়ার অপরাধে খুন করছে, গান গাওয়ার অপরাধে খুন করছে, লেখার অপরাধে খুন করছে, লাইক বা কমেন্টের অপরাধে গ্রেফতার করে খুনীদের উৎসাহ দিচ্ছে সরকার মহোদয়। সংগঠনে কি আর কাজ হবে?
প্রগতিশীল মানুষদের একাট্টা হওয়া আর এদের নিয়ে সংগঠন ভাবনার ব্যপারখানা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন; সন্দেহ নেই। সংগঠন নিয়ে লেখা দরকার তো আছে। আর একটু সহজ করে লিখলে অনেকেই হয়ত বেশ আনন্দ নিয়ে পড়তো। আমি ওই অনেকের একজন।
ধর্মব্যবসায়ীরা তো সবসময়ই সফল; এখন আরো বেশি সফল ও সংগঠিত। এদের সাফল্য ভর করে আছে হাজারো বছরের ধর্মভয়ে। তাই ফসল তুলতে খুব একটা খাটতে হয় না ধর্মবাজদের। তা’ছাড়া বিষবৃক্ষের এই সব শেকড়ে আজকের বড় শিশুদের মা বাবারাই তো জল ঢেলেছেন, জেনে না জেনে সাহায্য করেছেন ধর্মবাজদের, সবসময়। এটা বন্ধ হওয়া খুব দরকার। অন্যদিকে খুব করে খাটতে হয় প্রগতি ভাবনার মানুষদের, যারা প্রায়শঃ একা একাই কাজ করেন। এরা যখন ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার বা এই ধরনের সামাজিক মাধ্যমে তাদের কথা বলেন তখন ঐসব মাধ্যমগুলোই এদের সংগঠিত করে তোলে। কাজেই ‘প্রায়োগিক দিক নেই’ ঢালাও ভাবে এমন কথা বলাটা মনে হয় সঙ্গত হয় না।
শুভেচ্ছা থাকলো।
আপনার মূল্যবান বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, কাজীদা । আরও সহজ করে বলার চেষ্টা করব।