ভুমিকা
“ইসলামিক বিজ্ঞান” বিষয়ে আমরা অনেকেই জানি। পবিত্র কুরআন শরিফের পাতায় পাতায় বিজ্ঞানের কথাই লেখা আছে এমন অনেক মতামত আমরা পাই ইসলামী স্কলারদের কাছ থেকে। বাংলা ভাষাতেও আমরা ইসলাম ও বিজ্ঞান বিষয়ক এই ধরনের নানান মতামত জানতে পারি বাংলাদেশের ইসলামী স্কলারদের বক্তৃতায়, ওয়াজ মাহফিল থেকে। আগ্রহ উদ্দীপক হচ্ছে এই ধরনের বয়ানের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই প্রমান হিসাবে হাজির করা হয়ে থাকে আমেরিকার বিজ্ঞানের গবেষনাকর্ম কে। আমেরিকায় যেহেতু অগ্রসর গবেষনাগুলো হয়ে থাকে, তাই ইসলামী বয়ানের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে আমেরিকার বিভিন্ন গবেষনার উল্লেখ করাটা ইসলামী স্কলারদের একটি প্রিয় কাজ। এরকমের একটি বক্তৃতা দিয়ে এই লেখাটি শুরু করতে চাই।

বাংলাদেশের একজন ইসলামী স্কলার, একটি ইসলামী ওয়াজ মাহফিলে ব্যাখ্যা করছেন, মুসলমানদের পায়ের গোড়ালির উপরে প্যানট পরার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। এই ইসলামী স্কলার ব্যাখ্যা করছেন যে, আমেরিকায় গবেষণা করে পাওয়া গেছে যে, পুরুষের যৌবনের হরমোন হচ্ছে – টেস্টেসটেরোন, আর এই টেস্টেসটেরোন বিপুল পরিমানে জমা থাকে পুরুষের পায়ের গোড়ালীতে। পুরুষ যদি কোনও কাপড় দিয়ে পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখে, তাহলে সেই টেস্টেসটেরোন গুলো নস্ট হয়ে যায়। সে জন্যেই ইসলামের কঠিন নির্দেশ আছে টাকনুর বা গোড়ালীর উপরে প্যান্ট পরার জন্যে। যেহেতু আমেরিকায় গবেষনা করে পাওয়া গেছে, তাই আমেরিকানরা এখন সবাই টাকনুর উপরেই প্যান্ট পরে থাকেন। এমন কি প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন যখন বাংলাদেশ ভ্রমন করেছিলেন, তখন তিনিও টাকনুর উপরে প্যান্ট পরেছিলেন।আমার বর্ণনা অবিশ্বাস্য মনে হলে, এখানে ভিডিওটি দেখা যেতে পারে। ভিডিও টি দেখুন এখানে

মানুষের শরীরের হোরমোন সম্পর্কে যদি ন্যূনতম ধারনা থাকে, তাহলে পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে এই ইসলামী স্কলার আসলে তাঁর সামনে বসে থাকা মানুষ গুলোর অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা প্রচার করছেন। তিনি তাঁর মস্তিস্ক প্রসুত অবৈজ্ঞানিক ভাবনাগুলো শুধুমাত্র ইসলামের মাহাত্ম প্রচারের জন্যে প্রচার করছেন। এটা অপবিজ্ঞানও নয়, এটা এক ধরনের মিথ্যাচার এবং এই মিথ্যাচার তিনি প্রচার করছেন ধর্মের মহিমা প্রতিষ্ঠা করতে। এখন আপাত ভাবে এটা মনে হতে পারে, আসলে এই বক্তৃতাটি এই ইসলামী স্কলার এর অজ্ঞানতার ফসল, তিনি হয়তো নিজেও তা জানেন না। হয়তো তারই মতন কোনও একজন তাকে এই স্টোরী বা গল্পটি বলেছেন এবং তিনিও কোনও রকমের যাচাই – খোজ খবর না করেই আরো হাজার মানুষের মাঝে এটা প্রচার করছেন। এটা কি প্রতারণা? এটা কি মানুষের সরল বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা নয়? এই ধরনের মিথ্যা গল্প ফেঁদে এইভাবে ইসলামের মাহাত্ম প্রচার কি আসলে ইসলাম কে বড় করে? নাকি ইসলাম যে কেবল অশিক্ষিত ও নির্বোধদের মাঝে টিকে আছে সেই কথাই প্রমান করে?

উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালীর বিজ্ঞান প্রচার
এটাতো গেলো একজন আপাত স্বল্প শিক্ষিত ইসলামী উলামার মিথ্যাচারের কথা। আসুন এবারে দেখি একজন অতি উচ্চ শিক্ষিত ইসলাম প্রচারক এর কথা। যিনি বহুদিন ধরে বাংলা অনলাইন মাধ্যমে ইসলামের মহিমা প্রচার করছেন। রাজা রামমোহন রায়কে ব্যবহার করে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মহিমা প্রচার করছেন। বাংলা ভাষায় নাস্তিক ও মুক্তমনাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন যুদ্ধ করে চলেছেন, সেই রকমের একজন মানুষের একটি উদাহরণ দেখা যাক। নিচের ছবিটি দেখুন –

pinaki_shofi

দেখুন এই মানুষটি প্রথমে একটি বয়ান হাজির করেছেন কোটেশন চিহ্নের ব্যবহার করে, এবং তারপরে দাবী করছেন যে এই বয়ানটি শফি হুজুরের নয় বরং এই বয়ানটি আমেরিকার একটি গবেষনার ফলাফল। এই লেখার শুরুতে উল্লেখিত ইসলামী উলামা সাহেবের চাইতে আমাদের এই উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালী আরেক কাঠি সরেস, তাই তিনি আমেরিকার জার্নাল খানার নামও উল্লেখ করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ সুন্দরী নারীর সাথে সামান্য বাতচিতে পুরুষের মুখের লালা নিঃসরণ বেড়ে যায় এই ফলাফলটি আমেরিকার জার্নাল “ইভলিউশন এন্ড হিউম্যান বিহেভিয়ার” এ প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমে বয়ানটি হাজির করছেন, তারপরে বলছেন যে এটা আমেরিকার একটি গবেষনায় পাওয়া গেছে এমন কি গবেষনাটি কোন জার্নালে ছাপা হয়েছে সেটাও বলে দিচ্ছেন। সুতরাং একথা অবিশ্বাস করার কি কোনও কারণ আছে যে আসলেই – “সুন্দরী মহিলাদের সাথে সামান্য বাতচিতেই পুরুষের মুখের লালা নিঃসরণ বেড়ে যায়”? অবিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই, তাঁর প্রমান হচ্ছে, ছবিটি ভালোকরে দেখুন কতজন মানুষ এই বয়ানটিকে পছন্দ করেছেন আর কতজন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা শেয়ার করে আরো হাজার হাজার মানুষ কে তা জানিয়ে দিয়েছেন। এই বয়ানটি যারা পছন্দ করেছেন তাঁদের মাঝে বহু নারী আছেন, পুরুষ আছেন, ডাকসাইটে বামপন্থী নেতা আছেন, করপোরেট কর্মকর্তা আছে এমন কি ডাক্তারও আছেন। তাহলে এই বয়ানটিকে কি অবিশ্বাস করার সুযোগ আছে? তবুও বহু অবিশ্বাসী মানুষ চারপাশে ঘোরাঘুরি করে। এই সকল অবিশ্বাসী মানুষেরা এই ধরনের বয়ান কে আরেকটু বাজিয়ে দেখে নিতে চায়। তাই মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল ইয়াসিন নামের একজন সরাসরি জার্নালখানার লিংকটি চেয়ে বসেন। কিন্তু বয়ান উপস্থাপনকারী ভদ্রলোক (?) মানে আমাদের ভট্টাচার্য মহাশয়ও কম যান না, তিনি কি এতো সহজে ভড়কে যাবার মানুষ? তিনি খুব ভালো করেই জানেন, বাঙ্গালীর দৌড় ওই লিংক চাওয়া পর্যন্তই … কোনও বাঙ্গালীর এতো সময় নেই যে লিংকের ভেতরে কি আছে তা একটু পরিশ্রম করে দেখে নেয়ার। তাই জনাব ভট্টাচার্য, নিঃসংকোচে অত্যন্ত স্মার্ট ভঙ্গিতে জার্নাল আর্টিকেলটির লিঙ্ক দিয়ে দেন। ব্যস এর পরে কি আর তাঁকে সন্দেহ করার কোনও কারণ আছে? এই দেখুন, তিনি কত স্মার্ট ভাবে লিংকটি দিচ্ছেন।

shofi_PinakI2

ব্যস খেল খতম। যারা এতদিন শফি হুজুর কে গালিগালাজ করেছেন তাঁরা যে কত নির্বোধ, কত খারাপ মানুষ তা প্রমান হয়ে গেলো, হলোনা? শফি হুজুর বলেছিলেন মেয়েরা হচ্ছে তেতুলের মতন, তাঁদের কে দেখলে পুরুষের মুখ থেকে লালা ঝরে, আর আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরাও বলছেন একই কথা। হলোতো?

মন্দ অবিশ্বাসী মন আমার
কিন্তু অবিশ্বাসী মন আমার। তাই লিংকটিতে ক্লিক করে আরটিকেল টি ডাউনলোড করলাম। দুইবার পড়লাম। আরেকজন ডাক্তার নিউরোলজিস্ট বন্ধুকে দিয়ে ‘ পড়ালাম। একই গবেষকের আরো দুইটি একই রকমের গবেষনা আরটিকেল পড়লাম। তারপর ভাবতে বস্লাম, আসলেই কি এই আরটিকেলটিতে জনাব ভট্টাচার্য মহাষয়ের উল্লেখ করা এই ধরনের কোনও কথা লেখা আছে? আরটিকেলটির লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম, আর্টিকেলটি বিনা পয়সায় ডাউনলোড করা যায়। দেখুন তো এই আর্টিকেলটিতে আসলেই কি এই ভট্টাচার্য মহাশয়ের লেখা এই ধরনের কোনও কথা পাওয়া যায় কিনা? ব্যক্তিগত ভাবে একজন চিকিৎসক হিসাবে বলছি, এই আরটিকেলটির শিরোনাম থেকে শুরু করে শেষ বাক্য পর্যন্ত কোথাও এমন কোনও কথা নেই। আমি আবার লিখছি, এই আর্টিকেলটির শিরোনাম থেকে শুরু করে শেষ বাক্য পর্যন্ত কোথাও পুরুষের লালা নিঃসরণ সংক্রান্ত একটি বাক্যও নেই। কোটেশন চিহ্নের ভেতরে যে বাক্যটি এই ভট্টাচার্য মহাশয় আমেরিকার গবেষণা বলে দাবী করেছেন, তা যদি এই আরটিকেল থেকে কেউ বের করে দিতে পারেন, তাহলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে দুই কান মলে, বিনীত ভাবে ক্ষমা চেয়ে এই লেখাটি প্রত্যাহার করে নেবো। বাক্যটি তো দুরের কথা, এই আরটিকেলটিতে “পুরুষের লালা নিঃসরণ” সংক্রান্ত কোনও আলোচন, একটি বাক্যও যদি কেউ বের করে দিতে পারেন, তাহলেও আমি একই কাজ করবো, অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক এই লেখাটি প্রত্যাহার করে নেবো এবং স্বীকার করে নেবো যে হ্যাঁ আসলেই – “সুন্দরী মহিলার সাথে সামান্য বাতচিতেই পুরুষের মুখের লালা নিঃসরণ বেড়ে যায়। প্রফেসর জেমস রনির রিসার্চ ইন্টারেস্ট হচ্ছে নারীর সাথে পুরুষের সামাজিক সম্পরক ও তাঁর ফলে তাঁর আচরনের ও হরমোনের পরিবরতন বিষয়ে, এবং ২০০৩ সালে প্রকাশিত এই আর্টিকেলটির পরেও তাঁর আরো একাধিক আরটিকেল প্রকাশিত হয়েছে একই বিষয়ে। যেখানে পুরুষের মুখের লালা নয়, পুরুষের হরমোন টেস্টেস্টেরোন হচ্ছে মুল রিসার্চ কোয়েসচেন বা মুল প্রসঙ্গ। তাহলে কি পুরুষের মুখের লালা আর টেস্টেস্টেরোন একই বস্তু? নাকি পুরুষের টেস্টেস্টেরন তৈরী হয় পুরুষের মুখের লালায়? দেখুন টেস্টেস্টেরোন নিয়ে একজন ইসলামী উলামা এবং আমাদের উচ্চ শিক্ষিত ভট্টাচার্য মহাশয়ের চিন্তার কি দারুন মিল। একজন টেস্টেস্টেরন দিয়ে ইসলামের টাকনুর বা গোড়ালির উপরে প্যান্ট পরাকে ব্যাখ্যা করছেন, আরেকজন টেস্টেস্টেরোন কে পুরুষের মুখের লালা বানিয়ে শফি হুজুরের মুখের বয়ান কে জায়েজ করছেন। একজন বলছেন পুরুষের টেস্টেস্টেরোন থাকে গোড়ালীতে আর আরেকজন বলছেন পুরুষের টেস্টেস্টেরোন আর মুখের লালা আসলে একই বস্তু যা সুন্দরী নারীর সাথে বাতচিত করলে বেড়ে যায়। আর্টিকেলটির এবস্ট্র্যাক্ট এর স্ক্রিনশট টি দিয়ে দিলাম এবং অধিক আগ্রহীদের জন্যে লিংকটি জুড়ে দিচ্ছি এখানেঃ যারা আগ্রহী এবং যাদের হাতে সময় কম তাঁরা এবস্ট্র্যাক্ট টা পড়ে দেখতে পারেন।আরটিকেল টি পড়ার জন্যে এখানে ক্লিক করুন

Roney_article_screenshot

আরটিকেলটির লিঙ্ক এখানে দিয়ে দিলাম, আর্টিকেলটি বিনা পয়সায় ডাউনলোড করা যায়। দেখুন তো এই আর্টিকেলটিতে আসলেই এই ভট্টাচার্য মহাশয়ের লেখা এই ধরনের কোনও কথা পাওয়া যায় কিনা? ব্যক্তিগত ভাবে একজন চিকিৎসক হিসাবে বলছি, এই আরটিকেলটির শিরোনাম থেকে শুরু করে শেষ বাক্য পর্যন্ত কোথাও এমন কোনও কথা নেই। আমি আবার লিখছি, এই আর্টিকেলটির শিরোনাম থেকে শুরু করে শেষ বাক্য পর্যন্ত কোথাও পুরুষের লালা নিঃসরণ সংক্রান্ত একটি বাক্যও নেই। কোটেশন চিহ্নের ভেতরে যে বাক্যটি এই ভট্টাচার্য মহাশয় আমেরিকার গবেষণা বলে দাবী করেছেন, তা যদি এই আরটিকেল থেকে কেউ বের করে দিতে পারেন, তাহলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে দুই কান মলে, বিনীত ভাবে ক্ষমা চেয়ে এই লেখাটি প্রত্যাহার করে নেবো। বাক্যটি তো দুরের কথা, এই আরটিকেলটিতে “পুরুষের লালা নিঃসরণ” সংক্রান্ত কোনও আলোচনা, একটি বাক্যও যদি কেউ বের করে দিতে পারেন, তাহলেও আমি একই কাজ করবো, অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক এই লেখাটি প্রত্যাহার করে নেবো এবং স্বীকার করে নেবো যে হ্যাঁ আসলেই – “সুন্দরী মহিলার সাথে সামান্য বাতচিতেই পুরুষের মুখের লালা নিঃসরণ বেড়ে যায়।

একটু টেকনিক্যাল হয়ে যাবে, তবুও উল্লেখ করছি, এই গবেষনার প্রধান অধ্যাপক জেমস রনি কিভাবে তাঁর গবেষনার উদ্দেশ্য ও ফলাফল কে ব্যাখ্যা করেছেন।
” This study was designed to assess possible hormonal and behavioral reactions of heterosexual men to cues from potential mates n an ecologically realistic situation”.

এবস্ট্র্যাকট এ এভাবে লেখা হয়েছে – “this study tested for behavioral and hormonal reactions of young men to brief social encounters with potential mating partners”. বলুন ত এখানে সুন্দরী মহিলার কথা কথায় আছে আর পুরুষের লালা ঝরার কথাই বা কোথায় আছে? শুধু এখানে নয়,পুরো আরটিকেল এর কোথাও নেই।

মুল আরটিকেলের আলোচনায় ফলাফল কে এইভাবে বর্ণনা করা হয়েছে –


“Results were generally consistent with the possibility of a mating response in human males. Men in the female condition showed a significant increase in Testerone over baseline levels and were rated as having expressed more polite interest and display behaviors than were men in the male condition.”

বলুন তো এখানে কোথায় পুরুষের লালা নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ার কথা লেখা হয়েছে? তাহলে কি টেস্টেস্টেরোন পুরুষের লালা? এখানে তো নয়ই, পুরো গবেষনার কোথাও পুরুষের লালা নিঃসরণ নিয়ে কোনও কথা নেই, আলোচনা নেই। সমগ্র গবেষনায় লালার প্রসঙ্গ টি এসেছে কারন টেস্টেস্টেরোন পরীক্ষা করার জন্যে যে স্যাম্পল নেয়া হয়েছে, সেটা নেয়া হয়েছে মুখের লালা থেকে। এই বিশয়টা চিকিতসক এবং মেডিক্যাল টেকনিশিয়ানরা বুঝবেন ভালো, সাধারন পাঠকের হয়তো বুঝতে একটু কস্ট হবে, তবুও বলছি – ইদানিং রক্তের অনেক পরীক্ষাই মুখের লালা থেকে নেয়া হয়, কারন রক্তের পরীক্ষা করতে হলে শরীর ফুটো করে রক্ত নিতে হয়, সেই তুলোনায় মুখের লালা থেকে স্যাম্পল নেয়াটা অনে সহজ, মেডিক্যাল পরিভাষায় যাকে বলা হয় “নন-ইনভেসিভ” বা সহজ বাংলায় কম বেদনাদায়ক। যেহেতু সাধারন পাঠকেরা লালার স্যাম্পল থেকে টেস্টেস্টেরোন এর পরীক্ষার বিষয়টি বুঝবেন না, সেই কারনেই জনাব ভট্টাচার্য মহাশয়, পাঠকের তথ্যের অসমতার পুরো সুযোগ টি নিয়েছেন। “Salivary TesTerone” কে বানিয়ে দিয়েছেন “Salivary Secretion”। একেই বলে সৃজনশীল প্রতারনা।


কিন্তু কেনও উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালী এমনটা করে থাকে?

যে বৈজ্ঞানিক আরটিকেলটির মধ্যে পুরুষের লালা নিঃসরণ নিয়ে একটি বাক্যও নেই, এমন কি যে গবেষনায় “পুরুষের লালা নিঃসরণ” সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন বা রিসার্চ কোয়েশ্চেন ও ছিলোনা, সেই রকমের একটি গবেষনা আরটিকেল কে উল্লেখ করে এই রকমের মিথ্যাচার করাটা হয়তোবা একজন স্বল্পশিক্ষিত সুবিধাবঞ্চিত ইসলামী উলামার পক্ষে মানায়, কিন্তু আধুনিকতার সকল সুবিধা প্রাপ্ত, উচ্চ শিক্ষিত, চিকিতসা বিজ্ঞান পাঠ করা মানুষ কেনও এই রকমটা করে থাকেন? হিউম্যান বিহেভিয়ার ও হিউম্যান সাইকোলজির জন্যে এটা একটা ভালো গবেষনা প্রশ্ন হতে পারে। তবে আমাদের আলোচিত উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালীটি যেহেতু বহুদিন ধরে হেফাজতে ইসলামের প্রতি তাঁর একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রকাশ করে আসছেন, তাই হয়ত হেফাজতের প্রতি দার্শনিক আনুগত্য একটা বড় কারণ হতে পারে এই রকমের মিথ্যাচার করার পেছনে। প্রশ্ন হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে গিয়ে এই রকমের ডাহা মিথ্যাচার করাটা কতটা সততার পরিচায়ক? পাঠকের কাছে প্রশ্ন থাকলো। আরেকটি কারণ রয়েছে, হেফাজতের আমির আহমদ শফি বাংলাদেশের নাস্তিক মুক্তচিন্তার মানুষদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন, আমাদের আলোচিত উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালীটিও বাংলাদেশের নাস্তিক ও মুক্তচিন্তার মানুষদের প্রতি যুদ্ধ করে চলেছেন প্রতিদিন। যেহেতু আহমদ শফির তেঁতুল তত্ত্বের বিরোধিতাকারীদের একটা বড় অংশ হচ্ছে বাংলাদেশের নাস্তিক – মুক্তমনা প্রজন্ম, তাই তাঁদের কে পাবলিকলি হেনস্থা করার এই সুযোগটি তিনি ছাড়তে চান নি, কারণ তিনি নিশ্চিত করেই জানেন, বাঙ্গালী লিংক চায় বটে, কিন্তু কোনদিনও লিংক চেক করে দেখেনা তাঁর ভেতরে কি আছে। সুতরাং এই দিয়ে যদি নাস্তিক – মুক্তমনাদের খানিকটা বাঁশ দেয়া যায়, ক্ষতি কি?

আরেকটি কারণ রয়েছে, হেফাজতের আমির আহমদ শফি বাংলাদেশের নাস্তিক মুক্তচিন্তার মানুষদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন, আমাদের আলোচিত উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালীটিও বাংলাদেশের নাস্তিক ও মুক্তচিন্তার মানুষদের প্রতি যুদ্ধ করে চলেছেন প্রতিদিন। যেহেতু আহ্মদ শফির তেঁতুল তত্ত্বের বিরোধিতাকারীদের একটা বড় অংশ হচ্ছে বাংলাদেশের নাস্তিক – মুক্তমনা প্রজন্ম, তাই তাঁদের কে পাব্লিকলি হেনস্থা করার এই সুযোগটি তিনি ছাড়তে চান নি, কারণ তিনি নিশ্চিত করেই জানেন, বাঙ্গালী লিংক চায় বটে, কিন্তু কোনদিনও লিংক চেক করে দেখেনা তাঁর ভেতরে কি আছে। সুতরাং এই দিয়ে যদি নাস্তিক – মুক্তমনাদের খানিকটা বাঁশ দেয়া যায়, ক্ষতি কি?

সবশেষ কারণ টি হচ্ছে, এই উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালীটি হচ্ছেন একজন ট্যাবলয়েড মস্তিস্কের মানুষ। ট্যাবলয়েড মস্তিস্কের মানুষেরা কখনই বিশয়ের গভীরে প্রবেশ করেন না। তাঁরা ট্যাবলয়েড এর শিরোনাম এবং ছবি দেখে সিদ্ধান্ত নেন। অধ্যাপক জেমস রনির এই গবেষণার ফলাফলটিকে দেখুন ইংল্যান্ডের দুইটি পত্রিকা কিভাবে প্রকাশ করেছে। প্রথমে দেখুন ইংল্যান্ডের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকা কি শিরোনাম দিয়েছে এবং কিভাবে খবরটিকে প্রকাশ করেছেঃ সংবাদ টি পড়ার জন্যে এখানে ক্লিক করুন

Daily mail

আমাদের আলোচিত উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালীটি এমন কি এই ট্যাবলয়েড এর সংবাদটিও ভেতরের অংশটুকু পড়েন নি, পড়লে তিনি বুঝতে পারতেন গবেষনাটি আসলে ছিলো টেস্টেস্টেরন এর ঘনত্ত নিয়ে পুরুষের মুখের লালা নিঃসরণ নিয়ে নয়। তিনি শিরোনাম থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা প্রচারের, কারণ শিরোনামটিই যথেষ্ট হেফাজতের আমির আহমদ শফির বক্তব্যটিকে প্রমান করবার জন্যে। কারণ কেউ তো এই সংবাদের ভেতর টা পড়ে দেখবেন না। অধিক আগ্রহী পাঠকদের জন্যে এই সংবাদটির লিংক দিয়ে দিচ্ছি এখানে। বলে নেয়া ভালো যে, মেইল অনলাইন হচ্ছে ইংল্যান্ডের একটি কুখ্যাত বর্ণবাদী পত্রিকা এবং বিজ্ঞানের বিষয় কে বিকৃত প্রকাশ করবার জন্যে তাঁদের বেশ কুখ্যাতি আছে।

এবারে দেখুন একটি মূলধারার পত্রিকা এই একই খবর কিভাবে প্রকাশ করেছে। দেখুন একই সংবাদ মেইল অনলাইন এবং টেলিগ্রাফ এর মধ্যে কতটা আকাশ পাতাল পার্থক্য। কিন্তু আমাদের এই উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালী তাঁর নিজের পাতায় সংবাদটি পরিবেশনের জন্যে কোনও মূলধারার সংবাদপত্র বেছে না নিয়ে বেছে নিয়েছেন একটি কুখ্যাত ট্যাবলয়েড এর সংবাদ কে। কারণ তিনি জানেন ট্যাবলয়েড পত্রিকাটির শিরোনামটি দিয়ে হেফাজতের আমিরের কথাটিকে প্রমান করাটা সহজ এবং তিনি খুব ভালো করে জানেন, বাঙ্গালী কখনই কোনও কিছু চেক করে দেখেনা। টেলিগ্রাফ পত্রিকার সংবাদ টি পড়তে হলে এইখানে ক্লিক করুন

Telegraph_screen_shot

অতএব,কি আসে যায় বিজ্ঞান নিয়ে মিথ্যা কথা রটালে? কি আসে যায় বিজ্ঞানের ভুয়া ব্যাখ্যা করে দিয়ে আহমদ শফি হুজুরের বয়ান কে প্রচার করলে? বাঙ্গালী তো কখনও পরীক্ষা করে দেখবেনা। সুতরাং চলুক এই নিরাপদ মিথ্যার বেসাতি।

শুধু আমরা হচ্ছি বেয়াদব, তাই আমাদের কাজ হচ্ছে এদের মুখোশ টা খুলে ভেতরের অসৎ চেহারাটি দেখিয়ে দেয়া।