অভিধানে জাত শব্দটির অর্থ জন্মগত সামাজিক শ্রেণী, অপরপক্ষে শ্রেণী অর্থ সারি বা বিভাগ। শ্রেণী এবং জাতপ্রথা দুই’ই অর্জিত হয় জন্মসূত্রে। জাতভেদ বনাম শ্রেণীভেদ দুটোই এমন এক সামাজিক অবস্থান যা কিনা বিশেষ কোন গোত্রকে নীচু বা উঁচু পদে দলভুক্ত করে সমষ্টিকে বিভক্ত করে।
ম্যাকলেভার এবং ডেভিস যেভাবে এই সমস্যা পর্যালোচনা করেছেন; জাতভেদ এবং শ্রেণীভেদ প্রথা দুই উল্টো মেরুতে অবস্থিত। উভয়ের উদ্দেশ্য সমাজিক ভেদাভেদ তৈরির মাধ্যমে সাম্যতার বিরোধী অবস্থান নেওয়া। দুই প্রথাতেই উঁচু স্তর গোত্রীয়রা দলগতভাবে নীচু অবস্থানের মানুষগুলোর উপর অনৈতিক আচরণ করে, কখনো সমাজিক মূল্যবোধের অজুহাতে কখনো ধর্মের।নীচু অবস্থানের মানুষগুলো বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। যখন শ্রেণীবিন্যাসের প্রশ্ন ওঠে, তখন গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সেই অবস্থানের উত্তরণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে সেই আইন সমাজে প্রচলনের চর্চা গৃহিত হয়।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিবাদের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠিকে দাবী মেনে নিতে বাধ্য করা হয়। অপরপক্ষে জাতভেদ প্রথায় বলে দেওয়া হয় যে তাদের কর্মযোগ জন্মগত এবং ঈশ্বরপ্রদত্ত, সুতরাং পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য বিধানে তারা সেই নিগ্রহ পালন করে বংশ পরস্পরায় বিনা প্রতিবাদে।
পরবর্তী সূত্র ধরে আসা যাক জাতভেদ এবং শ্রেণীভেদ প্রথা দুটো নিয়ে সামান্য আলোচনা করা যাক;
আলোচনার সুবিধার্থে শ্রেণীভেদ দিয়েই শুরু করি। বিশ্বের সর্বত্র, সব সমাজে শ্রেণী বিভেদ লক্ষ্যণীয়। শ্রেণীবিভেদ প্রথায় অর্থ এবং শক্তির মাপকাঠিতে সাধারণ মানুষকে গণ্য করা হয়। সেইকারণেই সমতা অধিকারের লক্ষ্যে বার বার বিভিন্নদেশে নিপীড়িত শ্রেণী সমাজতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছে, করে চলেছে। শ্রেণী বিভেদ বলতে মূলত আমরা বুঝি অর্থনৈতিক পার্থক্যের ভিত্তিতে বিশেষভাবে দলীয়করণ এবং দখলদারিত্বের অসমতা এবং সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করা।অর্থাৎ সহজ ভাষায় শ্রেণী বিভেদ তৈরি করে সমাজে কম আয় অথবা আয়হীন একটি শ্রেণী, যারা কিনা সমাজের উচ্চতর সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শ্রেণীভেদ পদ্ধতিতে অনেক অর্থেই অন্যান্য স্তর বিন্যাসের আকারের চাইতে মানবিকতার মূল্যের স্থান জড়িত; যেমন, দাসত্ব, জীবনযাত্রার অবস্থান এবং জাতভেদ প্রথা।শ্রেণীভেদ প্রথায় কোন নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের প্রচলন নেই, কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে প্রচলিত সামাজিক অনুষ্ঠান পালনে সক্ষমতার বিষয়টি থাকে।
শ্রেণীবিভেদ চিহ্নিত হয় তিন পদ্ধতিতে; ধন, শক্তি এবং অর্থনৈতিক অবস্থান এবং ভাগ হয় তিনভাগে; ১)উচ্চবিত্তে, যারা শাসক, ধনী এবং শক্তিশালী, ২)মধ্যবিত্ত, উঁচু বেতনভুক্ত জনগোষ্ঠী, ৩) নিম্নবিত্ত, যারা দুর্বল এবং দরিদ্র।
শ্রেণীভেদ কোন কোন ধর্মবিশ্বাসের মাধ্যমে তৈরি না হলেও অনেকাংশই জন্মগত এবং বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। যেহেতু পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই নিম্নবিত্তের মানুষ সুবিধা বঞ্চিত, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বংশানুক্রমিকভাবেই একই সামাজিক অবস্থানে আবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু অন্যদিকে, সুযোগ এবং সুবিধার আওতায় এলে উঁচুনীচু ভেদাভেদের সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে যেতে পারে, এবং তারা সমাজে সেই শ্রম এবং অধ্যাবসায়ের জন্য সমাদৃত হয়।যেমন, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শ্রমিক নিম্ন আয়ভুক্ত শ্রেণী, তাদের ঘরের সন্তানেরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। কিন্তু অনেকেই আছেন, এমন ঘরে জন্ম নিয়েও মেধা, মনোবল, পরিশ্রম দিয়ে সমাজের অধিক আয়ের পেশায় উত্তরণ করেছেন।এই ক্ষেত্রে সুযোগ এমন একটি বিষয় যা সকলের ঘটে না।যে সমাজে জাতভেদ প্রথা নেই সেখানে ক্রমেই সে উচ্চতর সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নেয়।অন্যদিকে, কোন ব্যক্তি যখন উচ্চবিত্ত অবস্থায় জন্মে, তার দায়িত্ব থাকে সঠিকভাবে নিজেকে পরিচালক তৈরি করা নিজ মেধা এবং প্রচেষ্টায়, নাহলে বরখাস্ত হতে হয় তাকে উঁচু অবস্থান থেকে।সেই অর্থে দেখা যায় শ্রেণীবিভেদ প্রথায় সামাজিক অবস্থানের গঠন এবং অর্জনের ক্ষেত্রে মেধা একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।অবস্থা উত্তরণের পথধারা দক্ষতাবলে শিক্ষাব্যবস্থার দারস্থ হওয়া, সচ্ছল উপায়ে চলার মতো আয় ব্যবস্থা। শ্রেণীবেভেদও জন্মগত অর্জন। কিন্তু জাতভেদের সাথে পার্থক্য এই যে সুযোগ এবং প্রচেষ্টায় পরিবর্তন সম্ভব। সেই অর্থে এই অবস্থা অনেক বেশি মানবিক জাতভেদের চাইতে।
জাতভেদ প্রথার আলোচনার শুরুতেই জানতে হবে, এই প্রথার প্রচলন শুধুমাত্র ভারত উপমহাদেশে হিন্দু ধর্মালম্বী জনগোষ্ঠীতেই প্রচলিত।পৃথিবীর একটি অঞ্চলের বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের সনাতনী সংস্কৃতি, তাই অন্যদের অনুধাবনের অন্তরায়।কিন্তু উপমহাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কারণে সংখ্যার দিক দিয়েও বিশেষ অবস্থানের কারণে ভাবতেই হয়।
হিন্দুধর্ম মতাবলম্বীদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, হিন্দু দেবতা ব্রহ্মা মানবজাতির কর্মভেদে পাঁচটি বর্ণে বিভক্ত করেছিলেন। সেই পাঁচবর্ণ হলো, ১) ব্রাহ্মণ, যারা পন্ডিত এবং উচ্চবর্ণ, এরা সমাজের আধ্যাত্মিক এবং বুদ্ধিবৃত্তি বিষয়ের কাজে নিয়োজিত থাকবে। ২) ক্ষত্রিয়, যারা যোদ্ধা এবং শাসক গোত্র, ৩)বৈশ্য, যারা ভূমির মালিক এবং বণিক সম্প্রদায়, এখানে উল্লেখযোগ্য যে বৈশ্য সম্প্রদায়ের কৃষিকাজ এবং ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের জন্য ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের নিকটতম সম্প্রদায়। ৪)শূদ্র, শ্রমিক এবং শিল্পী সম্প্রদায়, যারা সমাজের কায়িক শ্রমের গোত্র, কামার, কুমার এবং পটুয়া এই সম্প্রদায়ের।৫)অস্পৃশ্য সম্প্রদায়, যাদের দায়িত্ব অবর্জনা পরিস্কার করা; যেমন মৃতদেহ বহন, সৎকার, অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ পরিস্কার করা। মেথর, জমাদার, ডোম, চন্ডাল এই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং, বর্ণ সৃষ্টির আয়োজন যখন দেবতার হাতে, তখন সমাজে নির্দিষ্ট গোত্রভুক্ত হওয়া জন্মগত, কারণ অবস্থানটি ধর্মীয় বিধান, এবং তখন সেটি দৈবপ্রণালী এবং প্রশ্নাতীত।সেইকারণে, জাতভেদ প্রথায় কঠোর ভাবে উত্তরণের পথ বন্ধ। নীচু বর্ণের সম্প্রদায় সমাজের অধিকাংশ ইতিবাচক সুবিধা বঞ্চিত এবং নির্ধারিত আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উঁচুবর্ণের অনৈতিক কর্তৃত্ব বিধিসম্মতভাবে পুণ্য আদায়ের লক্ষ্যে পালন করে।
শ্রেণীভেদ পর্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছিল উত্তরণের ধারার বিষয়।জাতভেদ প্রথায়ও একইভাবে সামাজিক অবস্থায় গঠিত হয় কিন্তু পার্থক্য এই যে সুযোগ শুধুমাত্র বিশেষ গোত্রের মধ্যেই আবর্তিত হয়।অস্পৃশ্য গোত্র বা শ্রমিক গোত্রকে সুযোগ দেওয়া হয় না।
এই সামাজিক অসামঞ্জস্যতা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ভারতীয় উপমহাদেশের এই অচলায়তন ভাঙ্গতে এখনো পৃথিবীকে অনেকটা পথা হাঁটতে হবে।কারণ, উৎপত্তির উৎস ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে চর্চিত এবং সাধারণ জনগণের মাঝে টিকে আছে সমাদরে শ্রদ্ধায়।ভারতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এই প্রথা ভাঙ্গার চেষ্টায় আইন প্রবর্তন করলেও সামাজিকভাবে একদিকে যেমন গ্রহণযোগ্য নয় অন্যদিকে প্রচলনের যে প্রচেষ্টা নেই সেটা ভারত, বাংলাদেশ, নেপালের বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো থেকেই প্রকাশিত হয়।কারণ, প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকে নির্দিষ্ট উচ্চবর্ণভুক্ত হতে হয়। বিচারের কাঠগড়া পর্যন্ত নিম্নবর্ণভুক্ত মানুষ বিচার পাওয়ার জন্য দাঁড়াতে পারে না। তাদের বিচার করা হয় শুধু। সেইকারণে, উচ্চবর্ণ সম্প্রদায়ের সমাজ উদার আইনের বিরোধিতায় সোচ্চার। ভারতীয় সমাজে সমতার বারূদ নাকে লাগলেই উচ্চবর্ণ গোত্রের সুবিধার বিলুপ্তি ঘটবে। এই প্রথায় মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় ভবিষ্যত, পেশা নির্ধারিত হওয়ার কারণে কোন পুনর্নির্মাণ হয় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘর, কর্মস্থানে ব্যাপকভাবে এই প্রথা চর্চিত। কর্মসংস্থান যখন সংকুচিত হয়ে আসছে তখন আরো উদীয়মান।
এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যারা জন্মগ্রহণ করা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই নয়।এই প্রথায় নিম্নবর্ণ গোত্রের হাহাকার বংশানুক্রমিকভাবে আকাশচুম্বি, কারণ তারা মেধাবলে তাদের স্তর উত্তরণ করার সুযোগ পায় না।তাদের ভাগ্য প্রচলিত পাঁচবর্ণে ঘূর্ণায়মান, এরপর অতল।
ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় সংস্কৃতি অনেক বিস্তৃত হতো বিশ্বে যদি না এই সামাজিক পশ্চাদগামীতা থাকতো।
নৃবিজ্ঞানীরা পর্যালোচনা করে দেখেছেন, চারটি ভিন্ন পন্থায় জাতভেদ প্রথা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ১) কর্ম, ২) অন্তর্বিবা্হ, ৩)শুধুমাত্র নিজগোত্রের মধ্যে সামাজিকতা রক্ষা, ৪)ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিতে সামাজিক মূল্যবোধের সৃষ্টি করে নির্দিষ্ট গোত্রের জোরপূর্বক ক্ষমতা প্রদর্শন, স্বার্থ চরিতার্থ করা এবং অন্যহাতে এই বিশ্বাস এবং মূল্যবোধে অস্পৃশ্য গোত্রের প্রতিবাদ না করতে শেখা, পালন করা, ভাগ্যবিধায় নিজেদেরকে নিকৃষ্ট মনে করা।
শ্রেণীভেদ এবং জাতভেদ দুটোই মানুষ পায় জন্মগতভাবে।দুই’ই প্রকারভেদে সামাজিক সুবিধা প্রাপ্তিতে বঞ্চিত।জাতভেদ প্রথা শ্রেণীভেদের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু শুধুমাত্র শ্রেণীভেদ নয়।লক্ষ্যণীয়, উপমহাদেশে অন্য দেশ থেকে ইব্রাহিমীয় ধর্ম প্রচার হয়েছে, এবং ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে নিম্নবর্ণ সম্প্রদায়ে। তাছাড়া বৌদ্ধধর্মও সম্প্রসারিত হয়েছে, কিন্তু শ্রেণীবিভেদে নিম্নবিত্তের মানুষদের সাথে আচরণ জাতভেদ প্রথার অনুকরণে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বৌদ্ধ, মুসলমান, খ্রীস্টান বা ইহুদীদের মাঝে এই সংস্কৃতি প্রচলিত নয়।বংশ প্রথায় বিশ্বাস, নির্দিষ্ট বংশে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন জাতভেদ প্রথার অন্তর্ভুক্ত। দেখা যায়, নিম্ববিত্তের মানুষগুলো অস্পৃশ্য গোত্রের মানুষগুলোর মতোই উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্তের মানুষদেরকে স্পর্শ করে না।এক সাথে খাওয়া, পাশাপাশি বসার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি উপমহাদেশে। নিম্নবিত্তের মানুষগুলোকে নিম্নশ্রেণী আখ্যায়িত হয় ঠিক নিম্ন গোত্রের অনুকরণে।এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায়, রাস্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার সাথে সাথে পরবর্তী প্রজন্মকে প্রগতিশীল মনন, স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গী এবং বিজ্ঞানভিত্তিক সামাজিক কাঠামোতে বিশ্বাসী এবং আস্থাশীল করে গড়ে তোলা। শত শত বছরের অচলায়তন ভাঙ্গতেও শত বছরের হয়ত প্রয়োজন।
বহু জন্মের সুকৃতির পলে ব্রাহ্মণকুলে জন্ম গ্রহন করে। এমন দূর্ল্লভ ব্রাহ্মণজন্ম হেলায় নষ্ট করা উচিত নহে । বৈষয়িক ভোগের নিনিত্ত ব্রাহ্মণকিলে জন্ম হয় না । বেদাভ্যয়ণ তপস্যা প্রভৃতি ব্রাহ্মণসন্তানের কর্ত্তব্য কর্ম্ম
সম্পতন্ দেহজালানি কদাচিদিহ মানুষে ।
ব্রাহ্মণ্যং লভতে জন্মন্তৎ পুত্র পরিপালয়।। শাঃ ৩২১/২২-২৪
হিন্দুদের বর্ণাশ্রম প্রথা সম্পর্কে এখনও মানুষ অপপ্রচারেই বিশ্বাস রেখেছে দেখে অবাক হচ্ছি। এটা আসলে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে মোল্লাদের কাছে শুনে শেখার ফল। যা হোক, বর্ণাশ্রম প্রথা কি তা অল্প করে বলার চেষ্টা করি। জানেন নিশ্চয় একটা কলেজে চারপ্রকারের শিক্ষক থাকে। প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক। যদি বলি সবাই তো মানুষ, সকলের রক্তের রঙ লাল, সবাই নিজ নিজ বিষয়ে পণ্ডিত, তাহলে শিক্ষক চার প্রকারের কেন? এছাড়া আছে পিয়ন কেরানী। অধ্যক্ষের চেয়ার ফাকা থাকলেও সেখানে প্রভাষকরা বসতে পারবেন না। বসতে বললেও পিয়নরা শিক্ষকদের মত চেয়ারে বসবেন না। কেন?? তাদের মধ্যে মর্যাদা এবং বেতনেও রয়েছে বিরাট বৈষম্য। পবিত্র শিক্ষাঙ্গনে মানুষে মানুষে এরূপ ভেদাভেদ কেন?? এই মুহূর্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান আপনার মতানুযায়ী ছোট জাতের ব্যক্তি। কিন্তু হিন্দু ধর্মানুযায়ী তিনি নিজ কর্মফল অনুযায়ী নিজেকে ব্রাহ্মনত্বে উত্তীর্ণ করেছেন। জন্মের ভিত্তিতে যে বর্ণভেদ সেটা বর্ণপ্রথা; আর হিন্দু শাস্ত্র বলে বর্ণাশ্রমের কথা। বর্ণপ্রথা বল্লালী বালাই। এর সাথে সামাজিক আচরণের যোগ রয়েছে, শাস্ত্রের নয়। বল্লালী বালাই কী তা জানেন তো?
সারা বিশ্ব থেকে জাতপাতের খেলা একবারে মুছে যাওয়া ভাল। অশিক্ষিতদের মধ্যে এখনো আছে। তাদের বুঝিয়ে একে দূর করতে হবে। এখন শুধু ম্নব ধর্ম। মানুষ এক। এর শ্রেণী বা বিভাগ নেই। জয় মানব ধ্রমের হয়।
“হিন্দুধর্ম মতাবলম্বীদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, হিন্দু দেবতা ব্রহ্মা মানবজাতির কর্মভেদে পাঁচটি বর্ণে বিভক্ত করেছিলেন। সেই পাঁচবর্ণ হলো, ১) ব্রাহ্মণ, যারা পন্ডিত এবং উচ্চবর্ণ, এরা সমাজের আধ্যাত্মিক এবং বুদ্ধিবৃত্তি বিষয়ের কাজে নিয়োজিত থাকবে। ২) ক্ষত্রিয়, যারা যোদ্ধা এবং শাসক গোত্র, ৩)বৈশ্য, যারা ভূমির মালিক এবং বণিক সম্প্রদায়, এখানে উল্লেখযোগ্য যে বৈশ্য সম্প্রদায়ের কৃষিকাজ এবং ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের জন্য ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের নিকটতম সম্প্রদায়। ৪)শূদ্র, শ্রমিক এবং শিল্পী সম্প্রদায়, যারা সমাজের কায়িক শ্রমের গোত্র, কামার, কুমার এবং পটুয়া এই সম্প্রদায়ের।৫)অস্পৃশ্য সম্প্রদায়, যাদের দায়িত্ব অবর্জনা পরিস্কার করা; যেমন মৃতদেহ বহন, সৎকার, অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ পরিস্কার করা। মেথর, জমাদার, ডোম, চন্ডাল এই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।”
আমার মনে হয় লেখক বর্ণ প্রথায় কিছুটা ভুল করেছেন। হিন্দু ধ্রমে বর্ণ ৫ ভাগে নয়, ৪ ভাগে বিভক্ত। ক্রম অনুযায়ী বর্ণ ভিবক্ত, জন্মে বর্ণ ভাগ হয়না। উদাহরণ সরূপ ব্লা যায়, স্ত্যকাম জাবালা। যিনি জন্ম সূত্রে পতিতার সন্তান। কিন্তু বিদ্যা-শিক্ষায় ও ক্রমে ব্রাহ্মণ বর্গে স্থান পান। এছাড়া আর উদাহরন আছে। তবে পরবর্তী কালে উচ্চ ব্রণের লোকেরা নিজেদের জন্ম সূত্রে বর্ণ প্রিচ্য বহন করতে থাকে, সামাজ অনৈতিকভাবে ভাবে তা মেনে নেয়। ব্রাহ্মণ শ্রেণী এর ফয়দা সবচেয়ে বেশী তোলে। স্টহিক ভাবে বললে, ব্রাহ্মণ জম্নে শূদ্র, পরে দ্বিজ, বিপ্র ও পরে জ্ঞানে ব্রাহ্মণ।
বৈশ্য শ্রেণীর কৃষিকাজ নয়, তাদের কাজ ব্যবসাবাণিজ্য। কৃষিকাজ শূদ্রের ক্রম। লেখক ৫ম শ্রেণীতে যাদের দেখিয়েছেন, তারাও শূদ্র শ্রেণীর। তবে তারা অন্ত্যজ্য শ্রেণীর। শূদ্রের মধ্যেও উচ্চ শ্রেনীর মধ্যে পড়ে কায়স্থ, মাহিষ্য প্রভৃতি।
কিন্তু বর্তমানে কর্ম অনুযায়ী শ্রেনী বিভাগ আনেক এবং সমাজে ব্রণশ্রেণীর জলচল উঠে গেছে। এতে স্মাজ দেশের পক্ষে শুভ বারতা এসছে। এখন জাতপাত, ধ্রমের বিভাগ প্রায় উঠে যাচ্ছে। আমাদের পরবর্তী জেনারেশন এর সুফল ভোগ করবে আহসাক্রি।
ভাল লাগল পড়ে,
দুনিয়াতে জা দেখা যায় আছে ২ টোই জাতি , have আর have nots.
আর জাতি যদি বলতে হয় তাহলে ঃ– একটা পুরুষ জাতি , আরেকটা মেয়ে জাতি , আর বাকি সব মানুষের বজ্জাতি।
মনে পড়ে যায় লালন ফকিরের সেই গান ঃ– “সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে”
চমৎকার বস্তুনিষ্ঠ একটি লেখা। শত শত বছরের অচলায়তন ভাঙ্গতেও শত বছরের হয়ত প্রয়োজন। তবুও স্বপ্ন দেখি, হবে জাত-পাতহীন এক মানবিক জীবনের আয়োজন।
বর্ণপ্রথা বা জাতপ্রথা এক ভয়াবহ অভিশাপ। শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্যই নয় মানবতার জন্যও।
তবে আপনার এই লেখাটী কতটূকু সমাধান দিল তা জানি না।
এই লেখাটীর উৎস দিলে ভালো হত। বিশেষ করে পৌরাণিক ব্রহ্মা না বৈদিক ব্রহ্মা।
মজার ব্যাপার হচ্ছে হিন্দু শাস্ত্রেই আবার জাত প্রথার বিরুদ্ধেই বিশেষত আপনি যেভাবে উল্লেখ করেছেন এবং সমাজে যেভাবে প্রচলিত অর্থাৎ জন্মগতভাবেই নির্ধারিত বর্ণপ্রথা বিরুদ্ধে।
গীতায় স্পষ্ট বলা আছে যে কর্ম সূত্রে বর্ণ জন্মসূত্রে নয়। এই মুহুর্তেশ্লোক্টি কত নম্বর তা মনে করতে পারছি না। বৈদিক সভ্যতায় সবাই শুদ্র হয়েই জন্ম নেয়। সে ব্রাহ্মণের সন্তানই হোক আর শূদ্রেরই হোক। কর্ম ও জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে দ্বিজত্ব বা নতুন বর্ণ ধারণ করে।
কিন্তু সমাজে বাস্তবতা ভিন্ন। কেই যদি জন্মসূত্রেই বিশেষ মর্যাদা পেয়ে অন্যকে শোষোণ করতে পারে তাহলে সে করবেই। ধর্ম গ্রন্থের ফাকফোকড় গলে বা তার সাহায্য নিয়েই।
এক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর বা রাজা রাম মোহন রায়ের মতো মনীষীগণ যারা গোঁড়া হিন্দু সমাজকে ধর্মগ্রন্থের আলোকে ব্যাখ্যা দিয়ে সতীদাহ প্রথারদ আর বিধবা বিবাহ প্রচলন করেছেন, সেরকম এক্টী আন্দোলন প্রয়োজন।