গত সপ্তাহে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া রিভারসাইডের (ইউসিআর) আমন্ত্রণে বক্তৃতা এবং আলোচনায় অংশ নিতে গিয়েছিলাম। এই এক বছরে অনেক জায়গায় গিয়েছি, অনেকের সাথে কথা বলেছি, অনেকের সাথে পরিচিত হয়েছি, তবে আর কোথাও গিয়ে মনে হয় এভাবে অনুপ্রাণিত বোধ করিনি। ইউসিআর-এর ৬টি ডিপার্টমেন্ট এবং প্রোগ্রাম যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল। ওখানে দুটো ক্লাসেও আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল – আর্থ সাইয়েন্সের ‘ইউনিভার্স এট হোম’ ক্লাসে এবং পলিটিকাল সাইয়েন্সের ‘জাস্টিস এন্ড হিউম্যান রাইটস’ ক্লাসে।
প্রফেসর নাইজেল হিউসকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এত কষ্ট করে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার জন্য। ওখানে যে আমার এতগুলো প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হয়ে যাবে সেটাও ছিল কল্পনার বাইরে। দীপেন ভট্টাচার্য, ইরতিশাদ আহমদ, কাজি রহমান এবং বুলবুলি রহমান যেন জড়িয়ে রেখেছিলেন এক্কেবারে আমার বাবা মা বোনদের মতো করে। আজাদ ভাইয়ের গান আমাকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে যে জিনিসটা আমি সাধারণত জনসমক্ষে না করারই চেষ্টা করি। অভির জন্য, আমার জন্য এনাদের ভালোবাসা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছি।
আমার লেকচারটা কেমন হয়েছে জানিনা- ফেব্রুয়ারি মাসটা যে এতোটা কঠিন হবে আগে বুঝতে পারিনি, গত দুই সপ্তাহ ধরে ২৪ ঘণ্টা ধরে চলতে থাকা মাইগ্রেনের ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতেই লেকচারটা লিখেছি। তবে ইউসিআর-এর ছাত্র এবং ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের ভালোবাসায় এবং প্রশ্নে বাধ্য হয়েছি থমকে দাঁড়াতে। যে দুটো ক্লাস নিয়েছি সেখানে ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে দেড় ঘণ্টা সময় শেষ হয়ে গেছে চোখের নিমেষে। ওদের জানতে এবং বুঝতে চাওয়ার উৎসাহ দেখে অবাক না হয়ে পারিনি। আমার লেকচারে বহু ছাত্রছাত্রী এবং প্রফেসরদের মধ্যে বহু বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীও উপস্থিত ছিল। তারা লেকচারের পরে ব্যক্তিগতভাবে এসে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বেশ কয়েকজন প্রফেসর আমাকে দুদিন ধরে দুপুরে এবং রাতে খাওয়ার জন্য শুধু নিমন্ত্রণই করেন নি, কী ভাবে তাঁরা আমাদের জ্ঞানকোষ মুক্তন্বেষা তৈরির কাজে যুক্ত হতে পারেন তা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নও করেছেন। এমনকি মুক্তান্বেষাকে একাডেমিক একটি প্রজেক্টে পরিণত করা যায় কিনা সেটা নিয়ে সুদীর্ঘ আলোচনাও করেছেন। মানুষের এতো ভালোবাসা ও সহমর্মিতা, এবং একটা ভালো কাজের জন্য সব ব্যস্ততা সত্ত্বেও এগিয়ে আসা, এতো অন্ধকারের মধ্যে মনুষ্যত্বের এই আশার আলো আমাকে অনুপ্রাণিত এবং উদ্বুদ্ধ করেছে! বেঁচে থাকার জন্য এবং নিজের কাজটুকু করে যাওয়ার জন্য এর চেয়ে বেশিই বা আর কী লাগে?
আমার ভালো লেগেছে, আমি নীরব সমর্থন জানাচ্ছি/
আমি আপনার সংগ্রামের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
মন্তব্য…সত্য কথা বলার বোঝার সত্ সাহস ,দিন দিন আজ অগ্রসরের দিকে ধাবিত হচ্ছে ।যে যতই সামনে যাক বা পিছনে যাক সময় আজ সত্য কথা বলার ,সত্ সাহসের !জগতের রহস্যবেদের ,সামনে যে উষার আলো তার আবাস দিন দিন আরো দৃঢ় হতে যাচ্ছে!
শূণ্য থেকে মহাবিশ্ব আমার জীবনবোধটাই পালটে দিয়েছে, এবং জানি আমার মত অনেকেরই আলোর দিশারী আভিজিত রায়।
সংহতি! আমরা যেন নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজেদের কাজগুলো করে ও বলে যেতে পারি।
নিরন্তর ভালোবাসা আর সমর্থন, দিদি।
আপনার পরিশ্রম ও লড়াই কেবল আপনার একার লড়াই নয়, পৃথিবীর তাবৎ সংগ্রামী মানুষের লড়াই। যারা পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য করার স্বপ্ন দেখে, তাদের লড়াই। এই লড়াইয়ে আপনার অসম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও চেষ্টা আমাদেরকেও অনুপ্রাণিত ও সাহসী করে। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
বক্তৃতা ভালো হয়েছিলো। ইভেন্টের দিনটাও ছিলো অভিজিৎ এর খুন হয়ে যাওয়ার বর্ষপূর্তির দিনটার ৭২ ঘন্টার বৃত্তের ভেতর। চাপাতির কোপ খেয়ে আর বেঁধে দেওয়া মাত্র কয়েক মিনিটের বক্তৃতায় সেইসব বিভীষিকা বর্ণনা করা; একই সাথে যৌক্তিক মুক্তমত প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন কাজ। কাজটি সফল হয়েছিল বলেই তো ইভেন্ট শেষে চুপ করে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণী বাংলাদেশী বংশদ্ভুত সেই মেয়েটি এবং আবেগে কান্নায় জড়িয়ে ধরে বলে উঠেছিল ‘রাফিদা বন্যা, মানুষের ভালো করবার জন্য আপনার আর আপনাদের ত্যাগ, সাহস, যুক্তি এবং দৃড়তা আমাকে অভিভূত করেছে। আমিও যেন আপনার মত শক্তিশালী হতে পারি। আপনার ভালো হোক’।
আমার তো মনে হয় সারা পৃথিবী জুড়েই অভিজিৎ বন্যাদেরকে ভালোবাসবার মানুষের অভাব নেই। সব কষ্টগুলো শক্তি হতে থাকুক বন্যা, হতে থাকুক আলো ছড়াবার উৎস।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা।