বাংলাদেশে প্রায় এগারশর অধিক আইন আছে যা সরকার ও সরকারের বিভিন্ন কতৃপক্ষ জনগনের উপর প্রয়োগ করে। এই আইনগুলো বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রনীত – এছাড়া প্রতি মাসেই কোন না কোন আইন নতুন করে যোগ হচ্ছে। আর মাত্র একটা আইন আছে যা জনগন ঐসব কতৃপক্ষের উপর প্রয়োগ করতে পারে,তার বয়স মাত্র সাত বছর- তথ্য অধিকার আইন ২০০৯। বোঝাই যাচ্ছে এই আইনের গুরুত্ব কতটুকু। প্রায় ১১০০ বনাম ১। এই আইনের বিধানবলে প্রতিষ্ঠিত হয় তথ্য কমিশন যার প্রধান ব্যক্তি প্রধান তথ্য কমিশনার, তাকে সাহায্য করে আরও দুইজন কমিশনার। এ ছাড়া দৈনন্দিন কাজকর্ম করার জন্য আছে আরও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী।

জনগনের উপর প্রায় ১১০০ আইন প্রয়োগ করার জন্য আছে প্রধানমন্ত্রী থেকে চৌকিদার, প্রধান বিচারপতি থেকে গ্রাম আদালত, সরকারী বিভিন্ন সংস্থা ও সেখানে নিয়োজিত বিভিন্ন শ্রেণী ও পদ-মার্যাদার লোকজন। আর তথ্য অধিকার আইনে প্রতিকার পাওয়ার জন্য আছে একমাত্র প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশন। বাংলাদেশে তথ্যের প্রয়োজন হয় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেনীর মাঝে যারা শিক্ষিত ও সচেতন তাদের । উচ্চবিত্ত শ্রেনী যথারীতি অন্যকোন উপায়ে এই প্রয়োজন মিটিয়ে ফেলে। তাদের এই আইন জানার বা এর পেছনে সময় অপচয় করার মত সময় ও তাদের নেই। যেকোন সরকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের যা কিছুরই প্রয়োজন হয় হাত বাড়ালেই তারা বৈধ বা অবৈধভাবে পেয়ে যায়। আবার মধ্যবিত্ত ও নিম্নশ্রেনীর মাঝে নিরক্ষর ও অসচেতন অংশের এই আইন প্রয়োজন নেই। তাদের মাঝে আছে আবার দুটি অংশ। একটি অংশ ঘুষ বা অগ্রহনযোগ্য অন্যকোনভাবে প্রয়োজন মিটিয়ে নেয়। বাকী অংশ তাদের উপর চেপে থাকা অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়।মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেনীর যে অংশ সচেতন এবং কোন প্রকার ঘুষ বা আপসে না গিয়ে প্রয়োজন মিটাতে চায় বা দেশের একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চায় তারাই দৌড়াদৌড়ি করে তথ্য কমিশনে।

প্রতিটি আইন প্রনয়নের পর এর শিরোনামের নিচে কবে থেকে কার্যকর হবে তার তারিখ লেখা থাকে। এই তারিখের পর কোন নাগরিক বা কতৃপক্ষ যদি বলে আমি জানি না, আমি বুঝি না, এই আইন কবে থেকে হয়েছে, কি লেখা আছে ইত্যাদি তাহলে তা গ্রহনযোগ্য হবে না। তথ্য কমিশন বনাম জনৈক ডাক্তারের করা একটি মামলার রায়ে সাবেক বিচারপতি সামসুদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলে গেছেন – এ ধরনের অজুহাত অগ্রহনযোগ্য। A4 সাইজ কাগজে সব মিলিয়ে ৭-৮ পাতার এই আইন । এখনো শুনানীতে কেউ যদি বলে আমি এই আইন সম্বন্ধে জানি না , বুঝি না তাহলে তথ্য কমিশন আমলে নেয়। দিনের পর দিন শুনানিতে ডাকে। তথ্য প্রার্থীর হয়রানির সীমা চরমে পৌছায়।ভুক্তভোগী কেউ এই আইনে তথ্য দেয়ার সময়সীমা ৭৫ দিনের বাধ্য বাধ্যবাধকতার কথা বললেই বেশি বুঝেন, বেশি জানেন, বেশি উৎসাহী হওয়া ঠিক না ইত্যাদি ইত্যাদি নানা টালবাহানামুলক কথাবার্তা বলে তথ্য কমিশনার থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলেই। অথচ বিচারপতি সামসুদ্দীন আহমেদের রায় অনুসারে এধরনের কথা বলাও অপরাধ, এবং যে বা যারা এধরনের আইনবিরোধী কথা বলে তাদের তথ্য কমিশনেই থাকা ঠিক নয়।

গত সাত বছরে এ নিয়ে চারজন প্রধান তথ্য কমিশনার দায়িত্বপালন করে। তার মধ্যে মোঃ জমিরের সময়কাল সবচেয়ে উজ্জ্বল বলে ধরা হয়। তার সময়েই বিভিন্ন বিধি-প্রবিধি প্রনীত হয়, আপীল কতৃপক্ষের কাছে উপস্থিত হওয়ার বিধিমালার ৬ নং কালো ধারা বতিল করা হয়। তার নেতৃত্ব, সুক্ষাতিসুক্ষ বিচার বিবেচনা প্রশংসার দাবীদার। সরকারও পুরস্কার স্বরুপ প্রতিমন্ত্রীর মার্যাদা দিয়ে তাকে সম্মানীত করে। তথ্য কমিশনের ইতিহাসে তার অবদান স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে।এরপর তথ্য কমিশনে প্রধান তথ্য কমিশনার হয়ে আসেন মোঃ ফারুক। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হলে যে সমস্যা হয় এই সময়ে ছিল সেই সমস্যা। শুনানীকালে জড় পদার্থের মত তিনি বসে থাকতেন আর মাতবরি করত আরেকজন কমিশনার । ফলে যা হবার তাই হল। জনগনের হয়রানি বৃদ্ধি পায়,অবাধ তথ্য প্রবাহে এক ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া কমিশনের ভেতর অন্যায় সুযোগসুবিধা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে তথ্য কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্তকলহ তো ছিলই।যে তথ্য অধিকার আইনে কোথাও তথ্য প্রার্থীকে শাস্তি বা সতর্ক করার কথা বলা হয়নি, সেখানে একজন তথ্য প্রার্থীকেই তথ্য চাওয়ার জন্য শাস্তির সুপারিশ করে বসে। এটা আপত্তিযোগ্য এবং তথ্য অধিকার আইনের সাথে সাংঘর্ষিক।
Sidantopotro_93_2013-page-001
Sidantopotro_93_2013-page-002
বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশনসংক্রান্ত হয়রানির তথ্য চাওয়ার জন্য আরেকজনকে সতর্ক করে দেয়। অথচ হয়রানি সংক্রান্ত তথ্য উম্মুক্ত হলে তথ্য কমিশনের সমস্যা থাকার কথা নয়। আলোচ্য প্রতিষ্ঠান আজ পর্যন্ত তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়নি এবং তথ্য অধিকার আইনের এই ধারা লংঘন করে বসে আছে ।
DO
তথ্য প্রার্থীকে আজ পর্যন্ত যাচিত তথ্য না দিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে অথচ তথ্য প্রার্থী আবেদন করার পরও এবং তথ্য অধিকার আইন লংঘনের করেও উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তথ্য কমিশন কিছুই করেনি।
Sidantopotro177_2015-page-001
Sidantopotro177_2015-page-002
উপরুন্তু তথ্য কর্মকর্তার নাম জানতে চেয়ে যে উদ্ভট জবাব পাওয়া গেছে তা নিম্নরুপ
obshor-page-001
এই আইন না বুঝলে বা বেশি বুঝে ফেললে যে সমস্যা হয় তার একটি হল- এই আইনে যা নেই তা উল্লেখ করা। তথ্য অধিকার আইনে তথ্য কমিশনের উর্ধতন কতৃপক্ষ বলে কিছু নেই। একটি রায়ে এই উর্ধতন কতৃপক্ষ বলে এক উদ্ভট কতৃপক্ষের আগমন ঘটানো হয়েছে।
Sidantopotro171_2015-page-001
urdhoton_last

একটা প্রতিষ্ঠানের কাছে কতটুকু তথ্য চাওয়া যাবে তার কোন সর্বনিন্ম থেকে সর্বোচ্চ সীমা নেই। কিন্তু যখনই কোন বড় ধরনের দুর্নীতি উদঘাটন হতে যায় তখনই কমিশনারদের ষড়যন্ত্রের শেষ থাকে না। ২০০৪ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার একটি উপজেলার সকল প্রার্থীর তথ্য চাওয়া হয়েছিল। ৭৫ দিনেরও অধিক সময় পার করে মাত্র দুজনের তথ্য দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। প্রধান তথ্য কমিশনার ঢালাওভাবে তথ্য চাওয়া হয় বলে চরমভাবে বিরক্ত হন। ফলে একই অভিযোগ নিয়ে বাকী প্রার্থিদের তথ্য পেতে আবার কমিশনে যেতে হচ্ছে। সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনারের কারনে এই অকারন হয়রানি।

যে কোন শুনানীতে আভিযোগকারী থাকে একজন সাধারন নাগরিক বা ভুক্তভোগী কেউ। তার বিপরীতে থাকে সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান বা হয়রানীকারি কোন প্রতিষ্ঠান। মামলার শুনানীর দিন দেখা যায় অভিযোগকারী বসে বাইরে রাখা চেয়ারে আর বিবাদীকে কমিশন রুমে বসিয়ে আপ্যায়ন করে। শুনানী শুরু হলে কিছুক্ষন আগে আপ্যায়িত হওয়া অফিসারকে দুর্নীতির মাত্রা বুঝে ধমকের সুরে কথা বলে কোন কোন কমিশনার । নাটক আর কাকে বলে!

জনগনের তথ্য প্রাপ্তির পথে একটি বড় বাধা হল তথ্য কমিশন কতৃক আবিষ্কৃত “সাব জুডিস”। তথ্য অধিকার আইনে কোথাও সাব-জুডিস নিয়ে কিছু বলা নেই।
শুধু একটি ধারায় বলা হয়েছে –
dhara
লক্ষ্য করুন এখানে দুটি শর্ত আছে , ১। আদালতে বিচারাধীন ২। স্থগিতাদেশ
উভয়টি একইসাথে থাকতে হবে। আদালতে বিচারাধীন কিন্তু স্থগিতাদেশ নেই তাহলে তথ্য প্রাপ্তিতে কোন বাধা নেই। এই বিষয়ে ভারতীয় তথ্য কমিশনের দুটি রায় প্রানিধানযোগ্য। তথ্য প্রকাশ করলে ন্যায় বিচারের পথ রুদ্ধ হয় না বরং তথ্য লুকিয়ে রাখলে ন্যায় বিচারের পথ রুদ্ধ হয়। যেহেতু বিষয়টা গুরুত্বপুর্ন এবং আমাদের দেশে বহু বিচারপ্রার্থী তথ্য কমিশনে অন্যায় সিদ্ধান্তের ভুক্তভুগী তাই এ সংক্রান্ত খবর এবং দুটো রায়ই তুলে দিলাম।
খবর

Under the RTI Act, disclosing information on matters which are sub-judice does not constitute contempt of court, unless there is a specific order forbidding its disclosure. This is the fourth in a series of important judgements given by Shailesh Gandhi, former CIC, that can be used or quoted in an RTI application

The public information officer (PIO) cannot deny information on matters which are sub-judice by citing Section 8(1)(e) of the Right to Information (RTI) Act, unless there is a specific order forbidding the disclosure, ruled the Central Information Commission. While giving this important judgement, Shailesh Gandhi, former Central Information Commissioner, also disagreed with a previous decision of the Commission.

“The appellate authority had claimed exemption under Section 8 (1)(e), but the PIO has given no reason to justify how this can apply. The only exemption of Section 8 (1) which might remotely apply is Section 8 (1)(b) which states, ‘information which has been expressly forbidden to be published by any court of law or tribunal or the disclosure of which may constitute contempt of court;’ can be denied. This clause does not cover sub-judice matters, and unless an exemption is specifically mentioned, information cannot be denied,” the Commission said in its order issued on 18 February 2009.

Delhi resident Ashwani Kumar Goel sought information regarding the creation of the posts of additional senior public prosecutors, vacancies and their ad-hoc promotions and subsequent regularizations during the period 1994 to 2005, from the government of NCT of Delhi. The PIO denied the information saying that the matter is sub-judice in the Delhi High Court.

The First Appellate Authority (FAA), while noting that the applicant (Mr Goel) is seeking information for use in the court case to promote his professional and private interests, asked him to obtain the information from Delhi High Court, since the matter was sub-judice. “Further, it was also informed that no large public interest is served from the information as asked by the appellant and can be denied under section 8(1) (e) of RTI Act,” the FAA said in its order.

Dissatisfied with the answers from both the PIO and the FAA, Mr Goel then approached the CIC. During the hearing on 18 February 2009, representative of the PIO cited an earlier decision (No. CIC/MA/A/2005/00001) given by the CIC on 14 March 2006. The CIC decision states that “The matter is sub-judice. The appellate authority has correctly advised that information in question could be obtained through the court, which is examining the matter.”

After hearing both the sides, Mr Gandhi, in an order said, “I respectfully have to disagree with the earlier decision cited by the appellant since it is per incuriam. This Commission rules that a matter being subjudice cannot be used as a reason for denying information under the Right to Information Act.”

দুইটি সিদ্ধান্ত
SG-18022009-38-page-001
in2_2

Decision_28082006_11-page-001
Decision_28082006_11-page-002
in_31
আর আমাদের তথ্য কমিশনের হয়রানিমুলক সিদ্ধান্ত
Sidantopotro154_2015-page-001
Sidantopotro154_2015-page-002

সরকার নতুন প্রধান তথ্য কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে। তিনি কম্পিউটার কেসিঙয়ের ভেতর সোনার বার চোরাচালানের অভিযোগ থাকা একজনের মালিকানাধীন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন। তিনি কি পারবেন জনগনের কাংক্ষিত তথ্য এই আইনের সুষ্ঠ ও সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে তথ্যদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে আনতে?