বিশ্বের একমাত্র সাংবিধানিক হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল ২০১৫ সালে ২০শে অক্টোবর সংবিধান পরিবর্তন করে তাদের দেশকে সেক্যুলার রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষনা করেছে, কারণ, আধুনিক রাষ্ট্রের ধারনার সাথে ধর্ম এখন আর কোনভাবেই মানানসই নয়। রাষ্ট্র এখন কোন ধর্মীয় রাজা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় না, ধর্ম প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত কোন রাষ্ট্র এবং এর শাসক চালিত হন না। বর্তমান সভ্য সমাজে রাষ্ট্র মানুষের কল্যানার্থে মানুষের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। এর লক্ষ্য বিশেষ কোন ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা নয়, বরং ধর্মীয় পরিচয়ের উর্দ্ধে থেকে এর অভ্যন্তরস্থ সার্বজনীন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধনই রাষ্ট্রের লক্ষ্য। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও কিছু মুসলমান অধ্যুষিত দেশ ব্যতিত এখন বিশ্বের আর কোন দেশ সংবিধানে ঘোষনা দিয়ে ধর্মকে রাষ্ট্রীয় অধিকার প্রদান হয় না, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ধর্মকে ধারন করা হয় না। রাষ্ট্রের কাছে মানুষের পরিচয় শুধুই তাঁর নাগরিকতায়, ধর্মে নয়। আধুনিক বিশ্বে ধর্ম একটি লজ্জাজনক মধ্যযুগীয় বিষয়।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধানের মূল স্তম্ভ ছিলো চারটি; জাতীয়তা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নামক এক প্রহসন, যা একাত্তরের মূল চেতনার পরিপন্থি। একটা আধুনিক, সভ্য দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম নামক মধ্যযুগীয় ঘোষনা কিভাবে থাকে তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। বিশ্ব রাষ্ট্র ব্যবস্থাগুলো যেখানে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করছে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থেকে ধর্মকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, সেখানে আমরা একটি ধর্মকে রাষ্ট্রের ধর্ম হিসেবে ঘোষনা করেছি। মজার বিষয় হলো, এরপরও আমরা দেশকে সেক্যুলার রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করি।
২০০৮ সালে আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা ভেবেছিলাম এবার মনে হয় দেশ ৭২এর সংবিধানে ফিরে যাবে, রাষ্ট্রধর্ম নামক প্রহসনটি বিদায় হবে, দেশ সত্যিকার অর্থেই সেক্যুলার হিসেবে প্রতিষ্ঠটা পাবে। তখন সংবিধান সংশোধন প্রনয়ন করার জন্য আওয়ামিলিগের তোড়জোড়ও ছিল লক্ষ্য করার মত। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে কো-চেয়ারম্যান করে সংবিধান সংশোধন কমিটিও গঠন করা হয়, দিনের পর দিন চলে আলোচনা, গবেষনা, চলে মত বিনিময়। আদালত ৫ম সশোধনী বাতিল করে রায় দিলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “আদালত পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করার অর্থ ৭২-র সংবিধানে ফিরতেই হবে”। দেশের মুক্তিকামী মুক্তচিন্তকগণ একটা আশার আলো দেখেছিলেন, এবার মনে হয় রাষ্ট্রের ঘাড় থেকে রাষ্ট্র ধর্ম নামক প্রহসনটা নামতে চললো, দেশ মনে হয় এবার সত্যিকার অর্থেই সেক্যুলার হতে চললো। অসাড়ের তর্জন গর্জন সাড় প্রমাণ করে যেই লাউ সেই কদু হলো। সকল মুক্তিকামী মানুষদের আশায় গুড়েবালি দিয়ে ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বদলে আওয়ামিলীগ মনযোগ দিলো নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার দিকে।
যাই হোক, মুক্তিকামী মুক্তচিন্তক, মুক্তমনাদের আশায় গুড়ে বালিও তবু মেনে নেয়ার মত ছিলো। কিন্তু, জামাত শিবিরের হাত ধরে, তাদের ইন্দন ও পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে যখন জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, একের পর এক মুক্তমনা, ভিন্নমতাবলম্বী লোকেদের কোরানিক নির্দেশ মোতাবেক (কোরান ৪৭:০৪) হত্যা করতে শুরু করেছে, সরকার তথা আওয়ামিলীগ এদের বিচার দূরে থাক, জঙ্গিদের সুরেই কথা বলতে থাকে তখন তাদেরকে উস্কানিদাতা না বলে কোন উপায় থাকে না। অন্যায়ের প্রতিবাদ না করার অর্থ আপনি অন্যায়কে মেনে নিলেন। যেখানে নীরবতাই অন্যায়ের প্রশ্রয়, সেখানে সরকার এবং এর উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ বরং মুক্তচিন্তকদেরকে উলটো তাদের লেখালেখির জন্য সাবধান করে দেন। এসব ঘটনা কি রাষ্ট্রীয়ভাবে জঙ্গিবাদের দিকে দেশকে উস্কে দেয়া নয়?
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিবর্গ যখন হত্যাকান্ডের বিচার না করে খুনীদের সুরেই কথা বলেন, তখন বুঝতে বাকী থাকে না, উস্কানীর পেছনে কারা, কারা মুক্তচিন্তকদের হত্যার জন্য উস্কানি দিচ্ছেন। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির দাবীদার আওয়ামিলীগ যখন মোল্লাদের মাথায় হাত বোলানোর জন্য, কাঠামোল্লাদের ভোট পাবার জন্য গোটা দেশকে জিয়া আর এরশাদের মতই দাবী যে তাদেরও অনুভূতি আছে, তারাও ধর্মীয় অনুভূতি নামক অলীক তামাশায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে যান, তখন প্যান্ডোরা বক্সের শেষ উপাদানটিও কর্পূরের মত উবে যায়।
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আইজিপি কিংবা মন্ত্রীমহোদয়গণের চোখ রাঙানি, তাদের বেঁধে দেয়া সীমারেখার দোহাই হয়ত মেনে নেয়ার মত ছিলো। কিন্তু, এক দিনে যেখানে দুই স্থানে চাপাতিওয়ালারা তাদের মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যার চেষ্টা করে, একজনকে হত্যাও করে (ভাগ্য ভাল থাকায় হয়ত অন্যরা বেঁচে গেছেন) তখন কোথায় দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে, তা না করে সেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রী উলটো লেখালেখির জন্য লেখক প্রকাশকদের সতর্ক করে দেন। তখন আর বুঝতে বাকী থাকে না দেশ এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের পুরোটাই এখন নষ্টদের দখলে।
বাংলা ভাষাভাষী ও বাঙালীর প্রাণের মেলা হলো অমর একুশে বই মেলা। লেখক, সাহিত্যিক থেকে শুরু মুক্ত বুদ্ধি, জ্ঞান চর্চা আর অজানাকে জানা প্রধান উপকরন বই।এই বইয়ে কি লিখতে হবে, কি না লিখতে হবে, বই থেকে কে কি জানবে, কে কি কারণে বই কিনবে, কি পড়বে তা একান্তই লেখক আর পাঠকের ব্যক্তিগত ব্যপার। কিন্তু, মোল্লাতন্ত্রের অংগুলি নির্দেশের কাছে রাষ্ট্র আজ এতটাই নতি স্বীকার করেছে যে এখন বইয়ে কি ছাপা হবে, কি লিখা হবে, কি ছাপা হবে না, কি প্রকাশ করা যাবে না তা নির্দেশ দিয়ে দেয়ার মত দুঃসাহস দেখায় বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালকের মত হর্তাকর্তারা। যা বই লিখা, প্রকাশ এবং জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে এক বিরল মাথামোটার দৃষ্টান্ত বৈ কিছু নয়।
তবে, বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মুক্তিচিন্তক ও জ্ঞানান্বেষণকারীদের বই লেখা আর প্রকাশের ব্যক্তিস্বাধীনতার দাবী করাটাও এক ধরনের বাতুলতা ছাড়া কিছুই নয়। সংবিধান যেখানে রাষ্ট্রের একটা ধর্ম নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরস্থ প্রকাশনাগুলোকেও সেই ধর্মসম্মত হওয়াটা স্বাভাবিক।
যতদিন সংবিধানে জগদ্দল পাথরের মত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বসে থাকবে ততদিন রাষ্ট্রের কাছ থেকে লেখালেখির ব্যাপারে সীমারেখা টেনে দেয়া, উস্কানীর সবক চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে রাষ্ট্রের সকল কিছুতে ধর্মীয় আগ্রাসন, চলতেই থাকবে সকল কিছুতে ইসলামায়ন।
সর্বোপরি এসবের বিরুদ্ধে এখনই রুখে না দাঁড়ালে চলতেই থাকবে ধর্মনিরপেক্ষতার(!) বাংলাদেশে ধর্মায়ন তথা ইসলামায়ন। আর এ জন্য চাই, মুক্তচিন্তকদের ঐকান্তিক এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। আর প্রচেষ্টাটা শুরু করতে হবে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বিদায় করার মাধ্যমে। এছাড়া, এদেশে মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অলীক একটা কল্পনাই থেকে যাবে।
চমৎকার পর্য্যবেক্ষণ। প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় সেটা ছিলো একটি অন্যতম দারুন পথ যেটা ধরে এই ধর্মান্ধতা থেকে বেশ কিছুটা মুক্তি মিলতো। সেটি নাগরিককে দিতে পারতো চিন্তা, চেতনা, যুক্তি আর নাগরিক অধিকারচর্চার ন্যায্য শক্তি। রাষ্ট্রও নিজের মতো করে চালাতে পারতো দেশ। ধর্মও হয়তোবা হতেও পারতো ব্যক্তি ধর্মভীরু’র একান্ত পছন্দের ব্যপার।
অথচ নাগরিকের চাকুরেরা নিজেদেরকে লোভী শাসকই বানিয়েই রাখল। নাগরিকের সুদূরপ্রসারী ভালোমন্দ ভাবলো না। ধর্মান্ধতায় ঢোকা সহজ কিন্তু বেরুনো নয়। এখন বেরুবার পথ নেই সহজে। নাগরিক’কে ধর্মের ভয় দেখায় জন্মের পর থেকে নিজেরই আপন মানুষ; আপন ঘরে। শাসকের আদরে বিদ্যালয়গুলোও শেখায় ধর্মান্ধতা। একটু বড় হয়ে নাগরিক দেখে ভন্ড জনপ্রতিনিধি, শাসক; ধর্মান্ধ নেতাকর্মীরা ধর্মমোল্লাদের সাথে শাসন ক্ষমতা ভাগাভাগি করে চলেছে। ওরাও দেখাচ্ছে সেই একই ভয়; ওরাও লালন পালন করছে সেই একই অন্ধত্ব। তারপর আবার সেই শঠতা, নাগরিক ঠকিয়ে গদি রক্ষার আর স্বার্থলুটের সেই পুরনো খেলা। সেজন্যই দুর্গন্ধময় বর্জ্যগামলাচাটা শাসক চামচারা বলতেই থাকে; উস্কানি দেবেন না, গুমর ফাঁক করে দেবেন না; নাগরিককে বোকাই থাকতে দিন। এই খেলাটা ওরা খেলতেই থাকবে। তাইতো নাগরিকের জ্ঞ্যানমুক্তির ভাবনা উস্কে দিলে ওদের কলজে হিম হয়ে যায়। দুর্গন্ধময় বর্জ্যগামলা চাটাদের সবকিছু যে ওতেই সীমাবদ্ধ 🙂 ।
আশা করতে দোষ নেই, আশা করি নতুন নাগরিকরা দেশের মানুষকে ভালো রাখবে। শক্তিশালী লেখাটি উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ।
প্রত্যেকেরই নিজস্ব ধর্ম থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ধর্ম কারও ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। আসলে, পৃথিবীতে ধর্মের কোনো দোষ নেই। দোষ শুধু ধর্মঅপব্যবহারকারীদের। যারা স্বার্থের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে ধিক্ তাদের।
আমার ধর্ম আমার কাছে/ রাষ্ট্রের কি বলার আছে। অথবা ধর্ম যার যার/ রাষ্ট্র সবার — এসব স্লোগান এখন মস্তিষ্কের কোথাও লুকিয়ে রাখতে হবে, ঠোঁটের কোনে আনা বারণ।
দেখা যাক কী আছে ৪৭:৪ এ
47:4
অতঃপর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দার মার, অবশেষে যখন তাËেদরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করবে! একথা শুনলে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়, আল্লাহ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না।
এবার দেখা যাক আল্লাহ অন্যত্র কী বলতেছেন।
উপরের আয়াতটি নীচের আয়াতের সংগে ঘোরতর সাংঘর্ষিক।
সুরা ইউনুস ৯৯ “তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তি করিবে ইমান আনিবার জন্য?”
দেখা যাচ্ছে উল্লিখিত আয়াতটিতে (47:4) আল্লাহ পাক-
১) জোর পূর্বক বাধ্যতামূলক ভাবে অন্য মতালম্বীদের ইসলাম ধর্ম গ্রহনের জন্য মানুষ হত্যা করতে বলতেছেন ।
২) মুসলিম সাধারণ জনগনের হাতে অন্যকে বিনা বিচারে হত্যা করার আইন তুলে দেওয়া হয়েছে, যারা ইসলাম ত্যাগ করবে তাদের যেখানে পাওয়া যায় নির্বিধায় হত্যা করার জন্য ।
আর ঐযে ঠিক সেটাই ঘটে চলেছে। ‘ধর্মান্তরিত হওয়ায়’ ঝিনাইদহে খুনের অভিযোগ”
এর ফলে সমাজে আইন শৃংখলা ভেংগে গিয়ে শান্তির চাইতে বরং অশান্তির আগুন জ্বলছে।
৩) অথচ আল্লাহপাক ধর্মীয় ব্যাপারে সমাজে শান্তি স্থাপনের জন্য খুব স্পষ্ট ও জোরালো ভাষায় ঘোষনা করেছেন-
১০ সুরা ইউনুস ৯৯ “তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তি করিবে ইমান আনিবার জন্য?”
তাহলে কী দাড়াল?
তার মানে আয়াত দুইটি পরশ্পর ঘোরতর সাংঘর্ষিক হয়ে গেল।
মনে রাখা উচিৎ-
১) আল্লাহ পাক কখনো এমন আয়াত অবতীর্ণ করতে পারেননা যার দ্বারা জনগন আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে তারই সৃষ্ট বান্দাদের মধ্যে অশান্তির আগুন জ্বলতে থাকবে।কেহ কাকেও নিজেরা নিজেরা ফতোয়া দিয়ে হত্যা করার অধিকার নাই। তা করলে সমাজে অশান্তির আগুন জলবে।
হত্যা করতে পারে একমাত্র সরকার বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।
২) আল্লাহ পাকের আয়াত কখনো সাংঘর্ষিক হতে পারেনা কারণ তিনি সুদুর অতিত ও সুদুর ভবিষ্যৎ সবই তার অসিম দৃষ্টির মধ্যে। সাংঘর্ষিক বাক্য হওয়াটা মানবীয় গুনাবলী, কারণ মানুষ অতি দুর্বল ও অতি সীমিত জ্ঞ্যনের অধিকারী, যার জন্য সে অতিত ভবিষ্যৎ কিছুই জানতে পারেনা। এই অতিত ভবিষ্যত না জানার কারণে মানুষে আগে এক রকম ও পরে ঘটনার মোড় পরিবর্তিত হয়ে গেলে তখন অন্য রকম বলতে বাধ্য হয়।
কিন্তু এই ধরনের ঘটনা আল্লাহর কথাবার্তায় হওয়া কখনোই সম্ভবপর নয় ।আল্লাহ পাক এ থেকে পবিত্র। তিনি সুদুর অতিত ও ভবিষ্যত কোন কিছুরই অজ্ঞতা হতে মুক্ত ও পবিত্র।
কারণ?
কারণ, আল্লাহ পাক যা একবার বলবেন সুদূর অতিত ও ভবিষ্যৎ দষ্টিতে রেখেই বলবেন।
তাহলে কী দাড়াল?
১) উপরের (47:4) জোর করে ধর্মে আনায়নের জন্য হত্যাযজ্ঞ চালানোর আয়াতটি আল্লাহর নয়। আপনারা কেহ (জানিনা তারা কারা)কোন স্বার্থ সিদ্ধির উদ্যেশ্যে এমন ভাবে সমাজে শান্তি শৃংখলা ভেঙ্গে দেওয়ায় উদ্যেশ্যে আল্লাহর নাম দিয়ে প্রচার চালিয়ে বিশ্বে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছেন।
২) কেয়ামতের বিচারের দিনে আমি আল্লাহর নিকট অভিযোগ করে জানাব ” আল্লাহ, এরা তোমার নাম দিয়ে মিথ্যা আয়াত প্রচার করে তোমার মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করেছে, সমাজে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে, তোমাকে দ্বিমুখী বানিয়েছে, তুমি এদের বিচারের কাঠ গড়ায় দাড়িয়ে দাও।”
তখন তোমরা মজাটা বুঝবে।
এখানে বড় বড় ইসলামী বিশেষজ্ঞগন ঘুরা ফিরা করতেছেন, তারা গেলেন কোথায়? তারা এখানে এসে অন্ততঃ কিছু কথা বার্তা বলুন? আমরা আপনাদের নিকট থেকে কিছু জ্ঞ্যান অর্জন করি?
পারলে আমাকে খন্ডন করুন যদি আমি কোন অযৌক্তিক কথা বলে থাকি? আমি এখানে আছি।
মহদয়ের সমীপে জানাইতে চাই যে সূরা ইউনুছ মক্কায় অবতীর্ণ, তখন মোহাম্মদের লোকবল, শক্তি কোনটাই ছিল না। প্যাগানরা যেনো তার উপর পৌত্তলিক ধর্ম চাপিয়ে না দেয়, তাই আত্মরক্ষার্থে এই আয়াতের অবতারনা।
আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ মদিনা সনদ অনুযায়ী চলছে। পাথর ছুঁড়ে মারা ও হাতকাটা এখনো চালু হয়নি। কেমন মদিনা সনদ বুঝি না।
একদম,
এটি একটি সময় উপযোগী লেখা। ধর্ম ধর্ম করে অনেক দেশ শেষ হয়েছে। ইসলামের একনায়কতন্ত্র শুধু বাংলাদেশ নয় , আরো অনেক দেশেই বিদ্যমান। তবে হিন্দু ধর্মেও কিছু কম অত্যাচার নেই। খাপ পঞ্চায়েত এর অত্যাচার , শুনে থাকবেন। ৮০ এর দশকে রুপ কানোয়ার হত্যা (সতী দাহ প্রথা
এই যুগে) শুনে থাকবেন। না জানলে নেট ঘেঁটে দেখে নিন। সাম্রতিক একটি হিন্দি ছবি NG10 এ দেখান হয়েছে অসবর্ণ বিবাহ করায় মেয়ের বাড়ি মেয়ে ,
জামাই দুজনকে জন সমক্ষে নির্মম ভাবে হত্যা করল , এবং এই সব ঘটনা আজো ঘটে। ইসলামিক দেশে বাক স্বাধীনতা নেই , তেমনি হিন্দু প্রধান ভারতে
আইন গত ভাবে না হলেও সামাজিক ভাবে বাক স্বাধীনতা নেই। উক্ত সিনেমাটিতে একজন সভ্য লোক এর প্রতিবাদ করায় তাকেও হত্যা করা হয়।( সিনেমাতে)। হিন্দু ধর্মের কুসংস্কার দেখেছি ,কয়েক জায়গায়, যার প্রতিবাদ করলে চরম হেনস্থা হতে হয়। হিন্দু ধর্মের কুসংস্কার এর বিরদ্ধে অনেক কিছু ভারতে লেখা হয় ঠিকই কিন্তু এসবের আড়ালে যে সব কুসংস্কার চলে , তার প্রতিবাদ করলে হতে হয় চরম হেনস্থা আজকের দিনেও। সব দেখে তো এখন আমার মনে হচ্ছে, ধর্ম আফিমের নেশা ছাড়তে এবং ছাড়াতে হবে সবাইকে , পারলে আজি , এক্ষুনি। আপনার লেখা টি পড়ে চমৎকার লাগল, আরো লিখুন।
আমি সবার মত আপনাকেও অনুরধ করছি , ধর্মের মৌলবাদ , কুসংস্কার বিরদ্ধে লেখার পাশাপাশি , আধুনিক কুসংস্কার (কলেজে র্যাগিং, কর্পোরেট দুর্নীতি , শিক্ষা চিকিৎসা কে ব্যাবসায় পরিণত করা) এর বিরুদ্ধেও লিখুন। ধর্মের কুসংস্কার এর বিরদ্ধু অনেক লেখা পেলেও আধুনিক কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে কোন লেখা দেখি না , এর বিরুদ্ধেও লিখতে লাগবে , কারণ না হলে মানুষ ধর্মের মৌলবাদ থেকে যেদিন বেরোবে সেদিন তার সামনে থাকবে আরেক মৌলবাদ যার নাম হল , “বিষাক্ত আধুনিকতা”। এই ধর্মীয় মৌলবাদের জগতের বাইরে যে আধুনিক জগত রয়েছে তা দিন দিন বিষাক্ত হচ্ছে? আমি নিজে ভুক্ত ভুগি। আপনারা (মুক্ত মনার কান্ডারি রা) দয়া করে এই বিষাক্ত আধুনিক্তার বিরুদ্ধে লিখুন। আমি আপনাদের সাহায্য চাইছি , প্লিজ সাহায্য করুন ।
আরও স্পষ্ট করে বললে যে বাজার সভ্যতা আমাদের সামনে বিকল্প হিসাবে পাই তা অত্যন্ত কুরুচিকর এবং হৃদয়হীন । সেই সংস্কৃতি ‘স্বাধীনতা’ ও ‘ইচ্ছা ‘ নামে মহিমান্বিত করা হচ্ছে সত্যি কি সেটা তাই ? আমার স্বাধীনতা/ ইচ্ছা বলে যেটি চালানো হচ্ছে তার পেছনে পুঁজি নিয়ন্ত্রিত ক্ষুরধার মস্তিষ্ক পরিচালিত ও রাজনৈতিক মদত পুষ্ট যে সংস্কৃতি আছে তার বিরোধিতা করার ক্ষমতা আমাদের আছে কি ?
যেদিন বাজারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়ে মানুষের ‘ইচ্ছা’ ‘স্বাধীন’ সংস্কৃতির ধারক হবে শুধু মাত্র সেই দিন বলা যাবে ধর্ম ছাড়াও সুন্দর সভ্যতা গড়া যাবে । ভেবে দেখুন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, তলস্তয়, গান্ধী, মারক্স, মাও সে তুং, সত্যজিৎ এবং আরও আরও যে মানুষগুলো আমাদের সুন্দর মনুষ্যত্বর পথ প্রদর্শক তার সাথে আজকের বাজার সর্বস্ব মূল্যবোধের কি সত্যি কোনও তুলনা চলে ?
ঠিক দাদা , আমি যখন ট্রেন কে (সমাজ) এক স্টেশন (ধর্মীয় মৌলবাদ) থেকে অন্য স্টেশনে(আধুনিকতা) নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছি , তখন ২য় স্টেশন টা ঠিক তেইরি কিনা ভেবে দেখতে হবে।