শীতের বিকেলে কুয়াশা নেই। শীত আছে, হালকা। একটা হুডি গলায় পেঁচিয়ে পেছনে ঝুলিয়ে ফিরছিলাম অফিস থেকে। টের পেলাম অনেক দিন পরে এটা যে আনন্দময় একটা বিষয় সেটা ভাবার আমার সময় হল। ঢাকার রাস্তায় ফুটপথে হাজার মানুষের মিছিল থাকে বিকেলে। নিথর দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িসমূহের মাঝ দিয়ে এঁকে-বেঁকে যেতে যেতে রাস্তার লাইট-পোস্টগুলোতে আলো জ্বলতে দেখলাম। গাড়ির হেডলাইটও।

এসময়ে কিছু ভাবা যায় না, হাঁটা ছাড়া। কিন্তু আমার ভাবনাও হাঁটতে শুরু করলো। আমি এক পা দেই তো, ভাবনা দেয় দুই পা। দ্রুতই আমাকে ছাড়িয়ে যায়। অনেক দূরেই।

শাসকরা কি মানবিক হতে পারে? রাজনৈতিক শাসকদের ক্ষমতার নেশা থাকে, সে নেশায় মানবতার সংযোগটা আসলে কি প্রকারের? সাধারণ মানুষ যখন তাদের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা নিয়ে, যার অনেক কিছু জীবন শেষ করে দেয়, শাসকদের বিচারের বা সমাধানের দিকে তাকিয়ে থাকে তখন একজন শাসক আসলে কি দেখে? তার সমাধানের সক্ষমতা, ক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ, নাকি মানবতা? মানবিক হলে কি শাসক হওয়া যায়? মানবিক মানুষ সবসময়েই অমানবিকতার সাথে সাংঘর্ষিক হবে। নাকি আমি কিছু মিস করে যাচ্ছি!

রাষ্ট্র কিভাবে চলে? এর ভিত্তি কি আসলে বিভাজনের সংস্কৃতির উপরে দাঁড়িয়ে থাকে? যেমন এই সড়কের মাঝের ডিভাইডারটুকুই রাষ্ট্র? এর অপর-পাশে ভিআইপি ব্লকেড..আর এই পাশে সাড়ি সাড়ি অপেক্ষমাণ গাড়ি! রাষ্ট্র কেবল একপাশে শাসকের গাড়ির জন্য রাস্তা ক্লিয়ার করে রাখে, আর অন্য পাশে হাজারো জনতাকে এমনকি হেঁটেও পার হতে দেয় না শাসকের ঘরের সামনে দিয়ে!

আমাদের রাষ্ট্র মানার প্রয়োজনীয়তা ঐতিহাসিক প্রয়োজনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। আমাদের মানবিক হবার প্রচেষ্টাও সে অভিজ্ঞতার আধুনিকতম অংশীদার হয়। আমরা মানব-হিতৈষী,আমরা মানব-ধর্মের দিকে ধাবিত। ধর্ম-রীতি-সংস্কৃতির সার্বজনীন গ্রহণে। বিত্ত আর বর্ণের বৈষম্য অস্বীকারে। কিন্তু বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে?

শীতের বিকেলে হাঁটতে ভালোই লাগছিলো। হালকা ঠাণ্ডার পরশে এই ভিআইপি রোডব্লকও হালকা সমস্যা ছাড়া আর কিছু কেউ ধরে নেয় না। কিন্তু তাই বলে এর অমানবিক অংশটিও শুধরে যায় না। এটা অবশ্যই শাসকের বৈশিষ্ট্যে থাকতে পারে না। জনগণের রিজেক্ট করতে হবে।

আমার ঘরে ফেরা খারাপ হয় না। মেনে নিয়ে বিকল্পকে নিয়ম বানিয়ে নেই। অপেক্ষমাণ গাড়ির সব মানুষগুলো তেমন নিয়ম বানিয়ে ফেললে হয়তো ভিআইপিদের অপেক্ষায় কাটানো সময়ের একটা সমাধান হয়ে যেতো। কিন্তু আশঙ্কা হলো আমাদের এমন শত শত সমস্যার বিকল্প নেই, যেমন শাসকেরও বিকল্প নেই!