লেখকঃ পলাশ পাল
বাঙালি রোমান্টিসিজম বিলাসী। বীরপুজো করেও আত্মতৃপ্তি লাভ করতে ভালোবাসে। তাতে আপাতদৃষ্টিতে কোনো ক্ষতি নেই, যদি-না তা ইতিহাসের গতিকে পিচ্ছিল করে। ঔপনিবেশিক শাসনকালে ইতিহাসের ওই পিচ্ছিল পথেই আর্বিভাব হয়েছিল সিরাজোদ্দৌলার। একজন অকর্মন্য শাসক বাঙালির কাছে স্বাধীন, নির্ভীক, দেশপ্রেমিকের গৌরবজনক সম্মান পেলেন। তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে ভুরি ভুরি বীরোচিত আখ্যান। যা পড়ে বাঙালির হৃদয় বিগলিত হয়। অথচ বাস্তবে সিরাজের এই সম্মান মোটেই প্রাপ্য ছিল না। তাঁর অপদার্থতা, কুপমন্ডুকতা ইতিহাসের পাতায় লুকিয়ে থাকলেও বাঙালি তাকে পাশ কাটিয়ে যেতেই অধিক পছন্দ করে। যুক্তি ও বাস্তবতা নয়, আখ্যানের ট্রাজেডিক কাহিনিতে সে ডুব মেরে রয়েছে। ব্রিটিশ চলে গেছে, মিরজাফরের বংশ নিশ্চিহ্ন। তবু এই রোমান্টিসিজম থেকে বাঙালির বেরিয়ে আসার কোনো লক্ষণ নেই।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে সিরাজের কোনো তুলনাই খাটে না। তিনি প্রকৃত অর্থেই জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম কান্ডারি। ভারতবাসীর কাছে তাঁর স্থান হিমালয় সদৃশ্য। তাঁর আদর্শ, মুল্যবোধ, রাজনৈতিক ভবনা ও কর্মকান্ড চিরকাল কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণীত করবে। যদিও তার সমগ্র রাজনৈতিক জীবন বিতর্কের উর্ধ্বে নয়, অক্ষশক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি কতটা দুরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন, সেটাও আরেক বিতর্ক। ইতিহাসের সে বিচার এখনো অসমাপ্ত। সে দিকে যাচ্ছি না। সে হবে অন্য কোথাও।
তিনি তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় সত্যি নিহত হয়েছেন কী-না তার সত্যতা যাচাই করা জরুরী ছিল। কিন্তু তা করতে গিয়ে স্বাধীন ভারতে তাকে নিয়ে যে সমস্ত কাল্পকাহিনির সৃষ্টি হয়েছে তার কোনো ঐতিহাসিক গুরুত্ব নেই, অন্তত ইতিহাসের বিচারে। কেউ তাকে সন্যাসী বানিয়েছে, কেউ বা চিহ্নিত করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া বিপ্লবের নেপথ্য নায়ক। তামিলনাড়ুর এক বিধায়ক তো বলেছিলেন—‘নেতাজির সঙ্গে তার নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ হয়’। কখনো শোনা গেছে তিনি নাকি রাশিয়ার জেলে বন্দি কিংবা মঙ্গোলিয়ায় আত্মগোপন করে আছেন। বাঙালির একজন জনপ্রিয় আধ্যাতিক গুরু সদর্পে চ্যলেঞ্জ করেছিলেন—‘নেতাজি বেঁচে আছেন, নেতাজি নেতার বেশেই ফিরবেন’। গত শতাব্দীর গোড়ার দিকেও এই নিয়ে যত্রতত্র দেওয়াল লিখন দেখা যেত। সন্যাসী সারদানন্দ, ভগবানজী বা গুমনামি বাবার কথা না হয় বাদ দিলাম। বাঙালির বয়স বেড়েছে, কিন্তু নেতাজির বয়স বাড়াতে তাদের ঘোর আপত্তি।
কখনো আবার শোনা গেছে, প্লাস্টিক সার্জারি করে নেতাজি তাঁর চেহারা আমূল বদলে ফেলেছেন। একজন তো কাটা হাত-পা-মুণ্ডুর ছবি লাগিয়ে তৈরি করেছিলেন এক নতুন নেতাজির ছবি। আজকাল নানা টিভি চ্যানেলে নানা রকম আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, ভিডিও দেখা যায়। সেরকম একটি চ্যানেলে এক অজ্ঞাত পরিচয়হীন ব্যক্তিকে নেতাজি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এরকমই একজন ব্যক্তিকে ঘিরে নানা রহস্য দানা বেধেছিল। তার চেহারার সঙ্গে নাকি নেতাজির অদ্ভুত মিল। নেতাজি দুহিতা অনিতা পাফ একবার ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আধুনিক বিজ্ঞানের দৌলতে মানুষের আসল চেহারার অনেকটাই বদলে ফেলতে পারে। কিন্তু উচ্চতার রাতারাতি পরিবর্তন একেবারেই সম্ভব নয়—বলেছিলেন অনিতা পাফ। কেননা নেতাজি হিসাবে দাবি করা ওই উন্মাদ ব্যক্তিটি নাকি প্রকৃত নেতাজির চেয়ে অনেকটা লম্বা ছিলেন।
নেতাজি অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে গঠিত তিনটি কমিশনের দুটি (শাহনেয়াজ ও খোসলা কমিটি) বিমান দুর্ঘটনাকে সত্যি বলে মেনে নিয়েছে। একমাত্র চন্দ্র বসু বাদ দিয়ে নেতাজি পরিবারও এই ঘটনার সত্যতা মেনে নিয়েছিলেন। দুর্ঘটনায় পড়া অভিশপ্ত সেই বিমানের চালক একই কথা জানিয়েছিলেন। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানও অভিন্ন হয়নি। নেতাজির সঙ্গী ও দেহরক্ষী হাবিবুর রহমান ও দোভাষী নাকামুরার ভাষ্য একই। একই মত নেতাজির ভ্রাতষ্পুত্র ইতিহাসবিদ সুগত বসু সহ অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের। সম্প্রতি একটি ব্রিটিশ ওয়েব সাইট-ও একই দাবি করে বলেছে যে—১৯৪৫ সালের ১৮ আগষ্ট রাত এগারোটা নাগাদ তাইহোকুর নানমোন মিলিটারি হাসপাতালে বিমান দুর্ঘটনার কারণে নেতাজির মৃত্যু হয়।
যদিও তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন, এমন বিশ্বাসী-গবেষকের সংখ্যাও কম নয়। গবেষক জয়ন্ত চৌধুরী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী শোভললাল দত্তগুপ্তর মতো পণ্ডিতেরা প্রশ্ন তুলেছেন দুর্ঘটনার সত্যতা নিয়ে। মুখার্জী কমিশন বিমান দুর্ঘটনার খবরের সত্যতা না মানলেও নেতাজিকে নিয়ে ওইসব অখ্যানে কান দেয়নি। বিরল ব্যতিক্রম কিছু রোমান্টিসিজম বিলাসী বাঙালি, যারা কীনা যুক্তি বা প্রমান নয়, বিশ্বাসকেই ইতিহাস রচনার মূল ভিত্তি বলে মনে করেন।
রোমান্টিসিজম, আবেগ কিংবা বিশ্বাস দিয়ে ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়। ইতিহাস নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করা, আর ইতিহাসচর্চাও সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। ইতিহাসের প্রয়োজন পর্যাপ্ত তথ্য, প্রমান ও তার চুলচেড়া বিশ্লেষণ। নেতাজিও যে আর পাঁচজনের মতো রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন সে কথা ভুলে গিয়ে তাকে দেবতা হিসাবে পুজো করলে, তা যাই হোক, ইতিহাস নয়। বড়োজোর আখ্যান বলা যেতে পারে।
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নেতাজি সংক্রান্ত ৬৪টি ফাইল প্রকাশ করেছে। আগামি ২৩ জানুয়ারী নেতাজির জন্মদিনে কেন্দ্রও নেতাজি সম্পর্কিত কয়েকটি গোপন নথি প্রকাশ করবে–এমনটাই শোনা যাচ্ছে। তবে রাজ্যের মতো সেও যে একটা অশ্বডিম্ব প্রসব করবে তা হলফ করে বলা যায়। কেননা, ও পথ যে রাজনীতির। ভোট আসছে, তাই নেতাজি নামক ঢাকের বাদ্যি আরো চড়া হবে। ভোটের বাজারে নেতাজির অন্তর্ধান আজো মহা মূল্যবান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেই দিলেন, ‘তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনা তিনি মানতে পারেন না’। তাই সে কথা ভিন্ন। রাজনীতির ময়দানে এ বিতর্কের সমাধান নেই। তবে হুজুগে বাঙালি এই ফাইল, বিতর্ক থেকে সত্যিকারের ইতিহাস খুঁজতে আগ্রহী হবে নাকি আবার নতুন কোনো অখ্যানের জন্ম দেবে আশঙ্কার কারণ সেটাই। কথায় যে বলে—বিশ্বাসে মিলায় সুভাষ, ইতিহাসে নয়।
মন্তব্যঃ লেখাটি মুক্তমনার জন্য কতটা উপযুক্ত, পাঠকদের কাছে কতটা আকর্ষণীয় হবে জানি না। তবু নিজের কিছু ভাবনাকে ‘মুক্তমনা’ বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নেবার জন্য এই চেষ্টা।
বাঙালি ইতিহাসকে মিথের পর্যায়ে নিয়ে যেতে খুব ভালবাসে।
নেতাজীর মৃত্যু নিয়ে অনেক মতবাদ আছে এবং তাঁকে নিয়ে এখনো রাজনীতি হচ্ছে। তিনি একজন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতা হিসাবে দেশে বিদেশে বহু আলোচিত। তাঁকে নিয়ে রাজনীতি হবে, তাতে সন্দেহের কিছু নেই। স্বাধীনতার ৬৯ বৎসর পরে ও ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর ছায়া যে আবশ্যিক, তা প্রত্যেক নাগরিকই বুঝেন এবং নেতাজীর প্রতি তাদের যে দুর্বলতা আছে তা রাজনীতিবিদগন ভালোভাবেই জানে। সেইজন্যই নেতাজীকে নিয়ে এত টানাটানির ননস্টপ খেলা চলছে।
ব্রিটিশ যতই ব্লুক যে, নেতাজীর মৃত্যু বিমান দুর্ঘটনায় হয়েছিল, তা প্রতিষ্ঠিত হতোনা, যদিনা নেহেরু সরকার মেনে না নিত। নেহেরু নিজের স্বার্থে কোন কিছু মূল্যায়ন না করে ব্রিটিশ প্রচারিত সংবাদের উপর স্রকারি তক্মা দেওয়া ও জাপানে নেতাজের দেহভস্ম থাকার কথা সবীকার করাটা একটা বিরাট ভুল। নেতাজীর মৃতুয়র রহস্য জন্মান্সে ইন্দন হিসাবে উস্কে দেওয়ার মুলে নেহেরু। আর সেই ট্র্যাডিশন নেতাজীর ১১৯ বছর বয়সেও চলছে। সঠিক তদন্ত এখনো না হওয়ার পিছনে কি বিশ্ব রাজনীতি যুক্ত? তার শেষ কবে?
আপনার মন্তব্য বেশ ভাল লাগল বিক্রম কিশোর মজুমদার মহাশয়।
ইতিহাসও বিশ্বাসের ভাইরাস থেকে মুক্তি পায় না।
খুবই কাজের লেখা। খুবই সময়োপযোগী লেখা। বাঙ্গালীর এই মিথ সর্বস্বতাকে অবিরাম আঘাত করে যাওয়া একান্ত প্রয়জনীয় হয়ে উঠেছে। আমি আশা করব নেতাজির রাজনৈতিক দূরদর্শিতা নিয়ে একটি তথ্য ও যুক্তি ভিত্তিক লেখা শীঘ্রই আপনার কাছ থেকে পাবো। খুব দরকার। ধন্যবাদ লেখাটির জন্যে।
ঠিক বলেছেন , নেতাজি কে নিয়ে রহস্যের শেষ নেই । উনাকে নিয়ে আর কি কি রাজনীতি হবে ভগবানই জানেন , যাকে বলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। নেতাজির জন্য দেশ স্বাধীন হলে আজ অন্য ভারত দেখতে পেতাম , এই দুরনিতিগ্রস্থ দেশ দেখতে হত না। এই স্বাধীনটা আর ব্রিটিশ
অপশাসনের মধ্যে কোনো ফারাক নেই।
শ্রী গাঙ্গুলি, কিভাবে নেতাজির পথে দেশ স্বাধীন হলে আজ দেশের অবস্থা অন্যরকম হোতো তা যদি একটু বুঝিয়ে বলেন তবে ভালো হয়। আর অন্য রকমটাই বা কি রকম? তথ্য আর যুক্তি সহযোগে বলবেন নিশ্চই।
শ্রী আনিন্দ্য,
আমি আপনার উত্তর দিয়ে দিয়েছি আলি আসমান মহাশয় কে , একবার পড়ে নেবেন। সময়ের অভাবে এখন আপনাকে আলাদা করে রিপ্লাই দিতে পারলাম না। কোন অসুবিধা থাকলে জানাবেন নিশ্চয় ।
শ্রী অনিন্দ্য,
আমি যে রিপ্লাই দিয়েছি তা কি আপনার খারাপ লেগেছে ? ভাল খারাপ যাই লাগুক না কেন জানাবেন। এই সাইট টার
নাম যখন মুক্তমনা তখন সব কিছু খুলেই বলা ভাল তাই না। আপনার রিপ্লাই এর অপেক্ষায় থাকলাম।
শ্রী গাঙ্গুলী,
প্রশ্নটা ভালো লাগা বা মন্দ লাগার নয়। প্রশ্নটা সহমত কি দ্বিমতের। এবং আমি আপনার সাথে সম্পুর্ণ সহমত হতে পারিনি। প্রথমতঃ ওই টিট ফর ট্যাট বিষয়টা শুনতে যুক্তি সঙ্গত লাগলেও যে ট্যাট-টি ব্যবহার করছি সেটি কতটা যুক্তি যুক্ত সেটিও ভেবে দ্যাখা দরকার। ব্রিটিশ শক্তি খারাপ এ নিয়ে কোন দ্বিমত থাকতে পারে না কিন্তু তাই বলে তাকে সরানোর জন্য নাৎসী-জার্মানি বা জাপানের দ্বারস্থ হওয়া কে আমি কোন সুবিবেচনা মনে করিনা। যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার আগের জাপানের কুকীর্তি আমরা জানি…আশা করি নেতাজি-ও জানতেন, সেখানে জাপানের হাত ধরে ভারত আক্রমণ কিভাবে অসম্ভব রাজনৈতিক দূরদর্শীতার পরিচায়ক তা আজও বুঝে উঠতে পারিনি। এবং এই দূরদর্শিতার ফল কিন্তু আন্দামানে ‘৪২-‘৪৩ এ হাতে নাতে পাওয়া গেছে। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে জাপানী বাহিনীর সেই অকথ্য অত্যাচারের বিরধীতা কিন্তু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি করে নি। তারা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির পতাকা উত্তোলনে বেশী উৎসাহী ছিলেন , দেশীয় মানুষেরর মৃত্যুতে ততটা চিন্তিত ছিলেন না। আমি ভাবি, যেটা কেবল আন্দামান কে সইতে হয়েছে, অক্ষশক্তি মহাযুদ্ধে জিতলে হয়ত সারা দেশটাকেই তা সইতে হত! আর কর্পোরেট দালালীর কথা যে বললেন সে তো যেকোন পুঁজিবাদী দেশের সরকার-ই তাই। জাপান এলেও তাই-ই হোত। সর্ব শেষ ওই বেসিক নিড তার পর ডিসিপ্লিন তার পর শিক্ষার এই ক্রম টি র সাথে আমি সহমত নই। আমার মনে হয় শিক্ষা বিহীন ডিসিপ্লিন মানুষ কে যন্ত্রে পরিণত করে। অপর দিকে প্রকৃত শিক্ষা যে চেতনার উন্মেষ ঘটায় তা আপনিই মানুষকে ডিসিপ্লিন্ড করে তোলে।
ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
আর ভালো কথা শ্রী আলি আসমানকে রিপ্লাই দিতে গিয়ে শুরুতেই আপনি বলেছেন, “প্রথমেই আপনাকে বলি বানান গুলি ঠিক ক্রুন। স্বাধীনটা বানান টা আপনি ভুল লিখেছেন, ফারাক কে ফ্রাক লিখেছেন।” আমার মনে হয় ক্রুন-টিও অশুদ্ধ বানান। আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখাও। আর ভালো হয় এখানে এই রকম তুচ্ছ ad hominem এর অবতারনা না করলে।
আপনার মন্তব্য দেখলাম , সাড়া দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি যতটা পেরেছি উত্তর দিলাম । দেখুন মহাত্মা গান্ধীর ওপর অতটা বিশ্বাস করতে পারি না , তিনি মানুষের শক্তি কে পশু শক্তি তে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন , তার নিয়ম অন্তত আজকের দিনে খাটে না, (তিনটি বাঁদর এবং বিলাতি দ্রব্য বর্জন এবং অহিংস নিতি)। লোহা দিয়েই লোহা কাটতে হয়। সেই যুগে নেতাজীর কাছে অক্ষ শক্তি ছাড়া অন্য অপশন ছিল না, আর মানুষ মাত্রই ভুল করে , নেতাজীও একজন মানুষ ছিলেন , হতে পারে কিছু ভুল তারো হয়েছে। অক্ষ শক্তি শেষ হচ্ছে , কিন্তু ব্রিটিশ শক্তিও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে , মানে এই শুকোতে থাকা গাছে (ব্রিটিশ) ধাক্কা দিলে মড় মড় করে ভেঙ্গে পড়বে , তার জন্য একটা যুদ্ধ চাই, এবং এর ফলে একটা গন বিদ্রোহ উঠতেই পারে, যেটা খুব দরকার।
আপনার কথা অনুযায়ী অক্ষ শক্তি শয়তান কিন্তু এ ছাড়া অন্য উপায় ছিল না (পাশ্চাত্য সাদা চামড়া তো বরাবর নেকড়ের জাত , বলেছি আগে)। এক গ্লাস জলের ৯০% ভর্তি ১০% ফাঁকা, আপনি ১০% ফাঁকা টাই কেন দেখছেন ৯০% কেন দেখতে পাচ্ছেন না শ্রী অনিন্দ্য। এই সাইট এর নাম যখন মুক্ত মনা আমাদের সব কিছু মুক্ত মন নিয়ে বিবেচনা করা উচিত নয় কি? ভাল থাকবেন । —————– বন্দে মাতরম , জয় হিন্দ।
ইন্দ্রনীল মহাশয়,
” নেতাজীর জন্য দেশ স্বাধীন হলে আজ অন্য ভারত দেখতে পেতাম, এই দুরনিতিগ্রস্থ দেশ দেখতে হত না” –
প্রশ্ন (১) কাদের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে – বুঝিয়ে বলবেন কি?
(২) অন্য বলেতে কি দুর্নীতি হীন ভারতের কথা বলছেন?
(৩) দুর্নীতিহীন কেন হত যদি বুঝিয়ে বলেন,
(৪) সব্ধীন্তা ও ব্রিটিশ অপশাসনের মধ্যে কোন ফ্রাকের কথা বলছেন, যদি বুঝিয়ে বলেন।
আলি আসমান মহাশয়,
প্রথমেই আপনাকে বলি বানান গুলি ঠিক ক্রুন। স্বাধীনটা বানান টা আপনি ভুল লিখেছেন, ফারাক কে ফ্রাক লিখেছেন।
এবার আসল কথায় আসা যাক । ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্বন্ধে জানেন আশা করি। নেতাজী যখন ব্রিটিশ দের উপর আক্রমণ হানেন তখন ২য় বিশ্বযুদ্ধ , ব্রিটিশ রা অক্ষশক্তির আক্রমণে অনেকটাই ম্রিয়মান তখন। এইরকম একটা আঘাত দরকার ছিল ব্রিটিশ শক্তির উপর। এতেই ভারতীয়রা গন বিদ্রোহের সুযোগ পেয়ে যাবে(কেউ মানুক না মানুক) । শুধুমাত্র অহিংস
আন্দোলন দিয়ে ব্রিটিশ তাড়ানো যায় না। দরকার TIT FOR TAT, সেটাই সফল ভাবে করেছিলেন নেতাজী। আর তিনি ভবিষ্যৎ ভারত সম্পর্কে বলেছিলেন যে , প্রথমে মানুষের basic need fullfill করা , তারপর ডিসিপ্লিন শেখানো , এবং তার পরে শিক্ষা , তবেই দেশ উন্নত হবে। আজকের যে ভারত , রাজনীতি এবং corporate দালাল দ্বারা লুণ্ঠিত , এর সঙ্গে ব্রিটিশ অত্যাচারের তো কোন ফারাক দেখি না। স্বাধিন ভারতের নেতা হিসাবে নেতাজির মত একজন মানুষকেই চাই , গান্ধিজিকে না , যিনি মানুষের ক্ষমতা কে পশু শক্তিতে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন। আশা করি যা বললাম এর থেকে আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।———- ধন্যবাদ
আলি আসমান মহাশয়,
আপনি যানতে চাইছেন দেশ স্বাধীন কাদের জন্য হয়েছে অজস্র বিপ্লবির আত্মত্যাগ এর মাধ্যামে। আর বিদেশি শক্তি
তখন দুর্বল হয়ে আসছিল, ২য় বিশ্বযুদ্ধের কারনে, এই দেশকে ওই ইউরোপীয় নেকড়েরা অনেক লুঠে ছিল, লুঠে নেওয়ার আর কিছু ছিল না। তাই ওই ইউরোপীয় নেকড়েরা দেশ ছেড়ে চলে যায়, সত্যি কথা এইটি। সে আপনি একটু
তলিয়ে চিন্তা ক্রুন বুঝে যাবেন।
আলি আসমান মহাশয়,
আমার কথা কি আপনার খারাপ লেগেছে ? এর আগেও আপনি রিপ্লাই দিয়েছিলেন , আমার কমেন্ট ভাল লাগল না খারাপ সেটা কিন্তু জানালেন না , যদি কিছু খারাপ লাগে মাফ করবেন, চেষ্টা করব যথা সম্ভব নির্ভুল লিখতে। কারণ এর আগে আপনি আমার কমেন্টের কিছু না কিছু রিপ্লাই দিয়েছেন, আপনার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি বলে মনে হচ্ছে। আরেকটা অনুরোধ , এই মুক্ত মনা ব্লগে আমি ধর্মের কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখতে পাই , কিন্তু আধুনিক কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে (নোংরা আধুনিকতা) কোন প্রতিবাদ দেখি না, আপনারা পুরনো ব্লগার , দয়া করে যদি এই ব্যাপারে সাহায্য করেন , সমাজ এর অনেক উপকার হবে বলে আশা করি।
ইন্দ্রনীল বাবু, প্রথমত, আপনার কথা খারাপ লাগবে কেন? আপনি আমার মন্তব্যের উত্তর দিয়েছেন মাত্র। এখানে ব্যক্তিগত ভাবে খারাপ লাগা বা না লাগার কিছু যায় আসেনা। আমি কয়েকদিন ব্লগ দেখিনি আর অন্য কাজে একটু ব্যস্ত ছিলাম। বানান ভুল ধরবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। যদিও সেটা টাইপিং ভুল। অনেক সময় যুক্তাক্ষর টাইপ করতে গিয়ে ভুল হয়ে যায় বা হতে পারে। তবে ভুল ভুলই।
দ্বিতীয়ত, আমার যে প্রশ্ন আপনার কাছে ছিল, তা সঠিক ভাবে উত্তর পাইনি। আপনি উপর উপর কিছুটা প্রলেপ দিয়েছেন শুধু।
তৃতীয়ত, আপনি লিখেছেন যে, “নেতাজীর জন্য দেশ স্বাধীন হলে আজ অন্য ভারত দেখতে পেতাম, এই দুরনিতিগ্রস্থ দেশ দেখতে হত না” (১) এখানে নেতাজীর জন্য না দ্বারা কোন শব্ধটা appropriate হবে? (২) আপনি লিখেছেন যে, “অজস্র বিপ্লবির আত্মত্যাগ এর মাধ্যামে। আর বিদেশি শক্তি”র জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে। যদি তাই হয়, তবে আপনি ‘নেতাজীর জন্য’ কথাটা লিখলেন কেন? (৩) আপনি লিখছেন যে, “ইউরোপীয় নেকড়েরা অনেক লুটে ছিল, তারপর অবশিষ্ট কিছু ছিলনা, তাই তারা দেশ ছেড়ে চলে যায়। এটাই কি ঠিক কথা? তারপরে ওকি দেশে সম্পদ ছিলনা? ব্রিটিশ কি সেইজন্য, ভারত ছেড়ে চলে যায়? (৪) তাহলে স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের আত্ম ত্যাগের ম্রযাদা কতটুকু? (৫) বিপ্লবীরা ছাড়া অনেক স্বাধীনতা আন্দোলনকারী ছিলেন, তাদের আত্ম ত্যাগের কি কোন ম্রযাদা নেই।
এখানে বলা উচিত যে, স্বাধীনতা আন্দোলনে যে যেভাবে পেরেছে, কম বেশী অংশ নিয়েছিল। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং কিছু বিদেশী শক্তির সাহায্য ও সহায়তায় নেতাজীর ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আক্রমণ হানার জন্য ভারতের স্বাধীনতা তরান্বিত হয়েছিল। এটা অস্বীকার করা যায়না যে, নেতাজীর এই আক্রমণ নাহলে, ব্রিটিশরা অত তারাতারি ভারত ছেড়ে যেত কিনা সন্দেহ ছিল। নেতাজীর দ্বারা আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন ও আক্রমণ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এক যুগান্তরকারী ঘটনা। ভারতের আর কোন নেতা এই রকম প্রচেষ্টা করেছেন কি? আশাকরি আপনি আমার সাথে সহমত পোষণ করবেন।
আপনি নেতাজীর উক্তি সম্বন্ধে যা লিখেছেন, তা ঠিক। কিন্তু তিনি আরও বলেছিলেন, ব্রটিশদের অপশাসনে ভারতীয়দের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে, দেশে দুর্নীতির চলছে, প্রথমে এরদিকে নজর দিতে হবে। প্রথমেই ভারতীদের আত্ম ম্রযাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি আরও বলেছিলেন, ভারতীয় সৈনিকরা ইউরোপীয় সৈনিকদের থেকে কোন আংশে কম নয়। সুতরাং এই সৈনিকদের সাহায্য পেলে আমি ব্রিটিশদের ভারত থেকে তাড়াতে পারবে। কিন্তু কিছু ক্ষমতা লোভীর অপ্রয়াসে নেতাজীর সফলতা আসেনি, কিন্তু তার আঘাতে ব্রিটিশ ভয় পেয়ে ছিল, এটা মানতে হবে।
এই সমস্ত ক্ষমতা লোভীরা ঠিক্মত দেশ শাসন করতে না পারার জন্য দুর্নীতিতে দেশ ঢুবে আছে। অর্থ লোভীরা ও রাজনৈতিক নেতারা দুর্নীতিতে ঢুবে আছে। সেইজন্য বর্তমানে দেশের এই হাল। স্বাধীনতার পর শাসন ও শিক্ষা ঠিক ভাবে হয়নি বলে দেশে দুর্নীতির আখরা হয়ে গেছে।
আপনি আধুনিক কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে লিখতে পারেন। আমার মনে হয় ভালো হবে। বিভিন্ন বিষয় নামে আধুনিক কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে অনেকেই লিখেছেন। ভালো করে দেখে নিন। আমার লেখার সেই সময় নেই এবং আমার লেখার হাত নেই, আমি শুধু মন্তব্য করি।
পরিশেষে ইন্দ্রনীল বাবু আপনাকে বলবো যে, আপনার মত একজন সহযোগী ভদ্র বন্ধু পেয়ে ভালো লাগছে। এইভাবেই বন্ধুতব গড়য়ে উঠে। আপনার বন্ধুত্ব গড়ার আগ্রহ, আমার খুব ভালো লেগেছে। আশাকরি আমাদের বন্ধুত্ব ভবিষতে অটুট থাকবে।
আমি যতটা পেরেছি উত্তর দিয়েছি দাদা, হ্যাঁ আমিও মনে করি নেতাজী ভারত আক্রমণ একটি গুরুত্ব পূর্ণ ঘটনা,
আর আমি কোনো বিপ্লবিকে ছোট করছি না। যতটা পেরেছি আপনাদের উত্তর দিলাম।