রায়: নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসি, অনিকের যাবজ্জীবন, রুম্মান, নাফিজ ইমতিয়াজ ও নাইম ইরাদের ১০ বছর কারাদণ্ড এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রহমানীর ৫ বছর কারাদণ্ড। রাজীবের বাবা এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান, হত্যাকাণ্ডের উস্কানিদাতা জসীমুদ্দীন রহমানীর মাত্র ৫ বছর কারাদণ্ডে অনেকেই বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মন্তব্যের ঘরে রায় সম্পর্কে আপনার মতামত লিখুন।
আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন। প্রাণচঞ্চল, বিপুল সম্ভাবনাময় এই তরুণ ব্লগারকে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কিছু নরপিশাচ নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। পেশাগত জীবনে রাজীব হায়দার ছিলেন একজন প্রকৌশলী। ধর্ম বিরোধিতায় বেশ উচ্চকণ্ঠ ছিলেন তিনি, লেখতেন থাবা বাবা নামে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে একাত্তরের গণহত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের অভ্যুদয় হলে তিনি তাতে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তার এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে অভিজিৎ রায় লিখেছিলেন–
আরো একটা জিনিস মনে হল এ লেখাটি লিখতে গিয়ে। যারা ভাবেন বিনা রক্তে বিজয় অর্জিত হয়ে যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ধর্মান্ধতা এবং মৌলবাদ বিষয়ক জিনিস নিয়ে যখন থেকে লেখকেরা লেখা শুরু করেছেন, তারা জেনে গিয়েছেন তারা অনেকটা জীবন হাতে নিয়েই লেখালিখি করছেন
রাজীবের মর্মান্তিক খবরে আমি ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ, উন্মত্ত, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এক ফোঁটা বিচলিত নই। জামাত শিবির সহ প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের সময় যে শেষ এ থেকে খুব ভাল করেই আমি বুঝতে পারছি। অতীত সাক্ষী – এরা সব সময়ই মরার আগে শেষ কামড় দিতে চেষ্টা করে। ৭১ এ বিজয় দিবসের দুই দিন আগে কি তারা কেন বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে উঠেনি? কিন্তু পেরেছিল কি তাদের সম্ভাব্য পতন ঠেকাতে? মনে আছে স্বৈরাচারের পতনের ঠিক আগে কি ভাবে প্রাণ দিতে হয়েছিল ডাক্তার মিলনকে? এগুলো আলামত। তাদের অন্তিম সময় সমাগত। ‘পিপিলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে’!
আর বিজয় আমাদের অবশ্যাম্ভাবী।
আজ রাজীব হত্যা মামলার রায়।
আসামী: আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস বিভাগের বহিষ্কৃত ছাত্র সাদমান ইয়াছির মাহমুদ, ফয়সাল বিন নাঈম দীপ(২২), এহসান রেজা রুম্মান(২৩), মাকসুদুল হাসান অনিক(২৩), নাঈম ইরাদ (১৯) ও নাফিজ ইমতিয়াজ(২২) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রসাশনের ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা(প্রধান আসামি, পলাতক)।
২৪শে জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে অভিযোগ গঠিত হয় এবং ১৮ই মার্চ, ২০১৫ বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় ২১শে ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে।
আদালত সর্বমোট ৩৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। গ্রেফতার হওয়া আসামীদের মধ্যে সাদমান ছাড়া সকলেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
রায়: নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসি, অনিকের যাবজ্জীবন, রুম্মান, নাফিজ ইমতিয়াজ ও নাইম ইরাদের ১০ বছর কারাদণ্ড এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রহমানীর ৫ বছর কারাদণ্ড। রাজীবের বাবা এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। অনলাইনে এই রায় নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। মুফতি রহমানীর মাত্র ৫ বছর কারাদণ্ডে অনেকেই বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রাসঙ্গিক লেখা
মুক্তমনায় রাজীব হায়দার (থাবা বাবা) সম্পর্কিত লেখাগুলো একসাথে
‘বিশ্বাসের ভাইরাস’: থাবা বাবার রক্তবীজ- অভিজিৎ রায়
রাজীব হায়দার: যার রক্তে ধর্মের মৃত্যু দেখেছি- সৈকত চৌধুরী
রাজীব হত্যায় রাজাকার ও ধর্মান্ধদের উল্লাস, দেশময় তাণ্ডব এবং কিছু কথা – সৈকত চৌধুরী
শাহবাগের রাজীব ভাই- রায়হান আবীর
রাজীব হায়দার (থাবা বাবা) স্মরণে কিছু ব্যানার এবং পোস্টার
থাবা বাবার জন্য- নীলাঞ্জনা
ব্লগার রাজীব ও দ্বিখন্ডিত গণআন্দোলন- আদিল মাহমুদ
নাস্তিকরাই কেন বার বার?- ফারহানা আহমেদ
মুসলিম দেশে , মুসলিম তদন্ত কমর্র্কতর্া, -প্রসিকিউসন্স ,রাজনৈতিক সুবিধাভোগী সরকারের কাছে এরচেয়ে বেশি আশা করা ভূল !!
আমার ধারণা আপিলের পর এই দুইটা মৃত্যুদণ্ডের রায়ও বদলে যাবে। পুলিশ যথেষ্ট প্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি; সাক্ষী আনতে পারেনি এটাও কিন্তু রায়ের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে। দুজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় মনে হয় বছরের শেষে সবাইরে খুশি করা; আবার জানিয়েও দেয়া যে- সীমা লঙ্ঘন না করাই ভালো (পরিকল্পনাকারী তো বেচেই থাকল ভবিষ্যৎ সীমা পরিসীমা বুঝিয়ে দেবার জন্য)
কত রঙ্গ যে চেয়ে চেয়ে আরো আমাদের দেখতে হবে তাতো আর বলার আপেক্ষা রাখে না,সবে তো মাত্র শুরু……..বিচারকের একজন নাকি আদালতে বলছে যারা লেখালেখি করে তাদেরকে কড়া সতর্ক করেছে যে তারা যেন অন্যের অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে লেখালেখি করে।অথচ এরা আত্বসীকৃত জালিম,খুনি চাপাতিওয়ালা।প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়ে এরা রাজিবকে খুন করেছে।গড়ফাদার আন্স্রুল্লহ বাংলার প্রধান মুফতি মহম্মদ জসিম উদ্দিন যার নেতৃত্বে হত্যাকান্ডটি ঘটেছে এবং অন্য হত্যাকান্ডগুলি ঘটিয়েছে এটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।অথচ তার মাত্র সাজা হয়েছে ছেলেভূলানো আর মন-ভূলানো ৫ বছর । এর থেকে আর কি বড় মস্কারা এবং ফাইজলামী একটি জাতির জীবনে হতে পারে ???
তার মানেটা কি ?আমরা জানি,যে খুনি তার থেকে আরো বড় খুনি যে খুনের মদতদাতা ও পরিকল্পনাকারী।অথচ মদতদাতাকে বিজ্ঞ ( অ-বিজ্ঞ ) আদালত মাত্র ৫ বছরের জেল দিয়েছেন। এই রায় আবারো পক্ষান্তরে খুনী ও জংগিবাদের চাপাতিওয়ালদের আরো খুন করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে !!
অন্যদিকে বিভিন্ন সময় ওই বায়বীয় অনুভূতির সাফাই গেয়েছেন প্রধান মন্ত্রী থেকে শুরু করে স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রী,পুলিশের প্রধান এবং এখন গাইছেন উর্ধতন বিচারকরা…কোথায় যেন এনাদের সবার গলার সুর একই সূর্ত্রে গাঁথা। দেশ যেন একেবারে রসাতলে যাচ্ছে । যাবে না কেন,কারন দেশ ও রাষ্ট্রের মাথা থেকে শুরু করে আমজনতা বায়বীয় না জানা স্বর্গ-সুখ পাবার আশায় নেশায় বুদবুদ।
যার প্রমান এককালের ভন্ড-বদমাইস আমগো শহরের আজমইত্তা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।কিভাবে হয়েছে সেটার ব্যাখ্যা আমাদের সবার কম-বেশী জানা আছে। এরকম টাকার মালিকরাই এবং তাদের ছেলেমেয়েরাই এখন বাংলাদেশের সকল ক্ষমতার উৎস।তাদের ছেলেমেয়েরাই এখন বেশী সকল প্রাইভেট ভার্সিটির শিক্ষার্থী।সে-ই শিক্ষালয়ে কি হয় এবং হচ্ছে সেটাতো আমরা আমজনতা হরহামেশাই সব দেখতে পাচ্ছি। এরাই বাংলাদেশের আইন/আদালত,রাষ্ট্র ও রাষ্টযন্ত্রের সর্বত্র বিরাজমান। আর রাষ্ট্র ওই ১০% লোকের পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছে এবং রাষ্ট্রটিকে হেছকা টেনে ঘোড়ার পিটে একটি মধ্যযুগীয় অন্ধকারের পথে পা বাড়িয়েছে।যার প্রমান এদেশ দেশের সহস্র বছরের জ্ঞান-বিজ্ঞানের মনি-মুক্তা-হীরকদের রক্ষা করতে তো পারেই নাই ,তদুপরি উল্টো তাদের ঘাড়ে বায়বীয় দোষ চাপাচ্ছে।
কিভাবে আদালতের একজন উর্ধতন বিচারক এরকম উক্তি করতে পারে ? হ্যা,পারে,কারন দেশের প্রধান মাথা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সকল কাঠামোতে বিশ্বাসের মরনঘাতি ভয়াবহ ভাইরাস মাথার নিউরনে,শরীরের কোষে এবং রক্তে কিলবিল করছে যার কারনে এখন ঐ ভাইরাস রাষ্টের আপামর জনতাসহ সবাইকে তিলে তিলে ক্যান্সারের মরনাঘাতে মৃত্যুর দূয়ারে নিয়ে যাচ্ছে।
এদেশ সব সম্ভাবনার দেশ এবং ডিজিটাল নব্য বাংলাদেশ। বাহ কি সোনার ডিজিটাল বাংলাদেশ !!!!! সোনা দিয়ে সকলের মাথা সোনারমুকুট দিয়ে ভরানো হবে। সেই সোনা দিয়ে সকলের এজীবন সোনাময় হবে তেমনি অনন্ত-সীমাহীন হীরা-সোনাময় জীবন পরকালেও হবে। কি মজা , কি পরম-আনন্দ।এছাড়া এ জীবনের আর কি চাওয়া- পাওয়া একজন ক্ষুদ্র মানুষের জীবনে থাকতে পারে ????
কলম চলুক দূর্বার গতিতে,ছিন্নভিন্ন হউক সকল চিন্তার জড়তা.……..
যাক, মনে হয়, তাহলে বাংলাদেশে বিচার আছে। যদিও বিচারে মনের আশা পূর্ণ হয়নি। তথাপি ম্নদের ভালো। এই মৌলবাদীদের ফাঁসি দেওয়া উচিত। তা না হলে, দেশে আরও অরাজকতা চলবে। সরকারকেও শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে। আরও অনেক কে মেরেছে, তাদের মৃতুয়র বিচার চাই।
রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ড মামলার রায়ে দুজনকে ফাঁসি, একজনকে যাব্জজীবন, অন্য দুইজনকে ১০ বছরের জন্য কারাদন্ড এবংআন্স্রুল্লহ বাংলার প্রধান মুফতি মহম্মদ জসিম উদ্দিনকে ৫ বছ্র কারদন্ড দেওয়া হয়েছে। মুফতি মহম্মদ জসিম উদ্দিনএর প্ররোচনায় এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছিল, সুতরাং গুরু পাপে লঘু দণ্ড তাকে দেওয়া হল। একে মানা যায়না। আইনির কোন ফাঁকে সে লঘু দণ্ড পেল, তা খাতিয়ে দেখা উচিত এবং এর জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা উচিত। তা না হলে রাজীব হায়দারের আত্মা শান্তি পাবেনা। হত্যাকারীরা দেশে আরও হত্যাকাণ্ড করার সাহস পাবে। এই রায় মন্দের ভালো, স্কিছুটা হলেও শাস্থি হয়েছে।
হত্যাকান্ডের পর প্রথম যেদিন থানায় মামলা/এফআইআর/জিডি করা হয়েছিল সেই কাগজ থেকে রায় পর্যন্ত সকল ডকুমেন্ট আদালত থেকে তুলে পিডিএফ ফাইল বানিয়ে এখানে আপলোড করা যেতে পারে।
এরপর চুলচেরা বিশ্লেষন করা যেতে পারে। অনুমানের উপর প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক নয়।
আমি একবার হাইকোর্ট থেকে একটি মামলার সকল ডকুমেন্ট তুলতে পাঁচ হাজার টাকা খরচ লেগেছিল। এই মামলার সকল কাগজপত্র তুলতেও কম বেশি এমনই লাগার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে একজন আইনজীবীর সহায়তা নিতে হবে।
দেশের সকল আদালতে তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ করতে প্রায় মাস দুয়েক আগে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ হয়ে থাকলে প্রতি পৃষ্ঠা দুই টাকা হারে খরচ হবে। সেই ক্ষেত্রে দেশের যে কোন নাগরিক এই কপি পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে, আইনজীবী সাহায্য লাগবে না। খরচ আরো কমে আসবে।
তাই রায়ের কপি তুলে আপলোড করার পর এই পোস্ট পুনরায় দেয়ার জন্য মডারেটরদের প্রতি অনুরোধ রইল।
মনে রাখবেন, যেকোন রায়ের সমালোচনা গ্রহনযোগ্য কিন্তু আন্দাজে কোন কমেন্ট তা যতই ভালোই হোক আদালত অবমাননা হয়ে যেতে পারে।
”
আমিও তাই মনে করি।
মহান, উদার, ইসলামিক সেকুলার বাংলাদেশে অনেকের দৃষ্টিতে ( অনেক মুক্তমনার মতেও) ‘উগ্র’ নাস্তিক রাজীব হায়দারের খুনের জন্য যে দুই জনকে ফাঁসী দেয়া হয়েছে এটাইত আমার কাছে অনেক বলে মনে হয়।
বেচারা বিচারকদের কথা ভেবেই ত খুব আমার খুব মায়া হচ্ছে। একজন ‘উগ্র’ নাস্তিকের প্রাণ হরণ করে ঈমানীদায়িত্ত্ব পালন করা দু জনের ফাঁসী দিতে তার না জানি কত কষ্ট হয়েছে।
আমি যতদূর জানি অভিজিৎদার মৃত্যর পর মুক্তমনা সকল ধরণের ধর্মীয় সমালোচনা ও বিশ্লেষনমূলক লেখার উপর অলিখিত সেন্সরশীপ আরোপ করেছে। সেখানে রাজীবহত্যার রায়ের উপর মতামত চাওয়ার পাশাপাশি এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা যায় কি?
এই রায় মন্দের ভাল।
দুইজনের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন (রানা) পলাতক। সেই পলাতক রানা আবার সরাসরি হত্যায় করে নি সে ছিল পরিকল্পনাকারী ও জঙ্গি সংগ্রহের লোক। অন্যদিকে রাজিব হায়দার’কে হত্যা করা মানে কোপানো সময় কম করে দুই জন অংশগ্রহণ করে। সুতরাং এটি স্পষ্ট যে; হত্যায় অংশ নেওয়া একজনের মাত্র ফাঁসির আদেশ হয়েছে।
কিছুদিন আগে বাংলা নিউজ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়- ‘হিন্দুরা আমাকে ভগবানের মতো ভালোবাসে’ সংবাদটি পাঁচ বছরের সাজা পাওয়া জসীমউদ্দিনকে নিয়ে। সেখানে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একজন মন্ত্রী’র কথাও উঠে আসেন। তোফায়েল আহমদ জসীমউদ্দিনকে নাকি পরামর্শ দেন! কোন বিচারে তার পাঁচ বছর হল তা জানা নেই। আদালত যেহেতু তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে রায় দেয় সুতরাং ত্রুটি ঠিক কোন জায়গায় তা এখনো আমরা জানি না।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদটির ধর্ম আছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা পদেরও ধর্ম আছে। এমনকি বিচারকও। দেশটির অধিকাংশ মানুষ আগে ধার্মিক, পরে মানুষ।
খুনী, তদন্ত সংস্থার প্রধান, বিচারক, তিন পক্ষই মুসলমান। তারপরও দুই’জনকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে। এতটা আশা করিনি।
এমনকি বিচারের রায়ে পর্যন্ত বিচারককে ধর্মের পক্ষে কথা বলতে হয়েছে।
এই অন্ধের দেশে মন্দের রায়ই ন্যায়বিচার।
একই অপরাধের দুইরকম শাস্তি কেন?
মানুষ খুনের ওয়াজ করা অপরাধ নয় বলেই হয়তো!
শুনলাম ইচ্ছে করে তদন্কারীরা তদন্তে গাফিলতি করেছে আর ধর্মের পক্ষে বিচারক পর্য্যবেক্ষণ দিয়েছে। এগুলো কিসের লক্ষণ? এদের দন্ড কমে যাওয়া থেকে খালাস পাওয়া মনে হচ্ছে সবই সম্ভব।
প্রথমত যেটা হয়েছে তাতে আমি অসুন্তুষ্ট, তবে এককভাবে বিচার বিভাগের উপর দ্বায় চাপানোকে যুক্তিযুক্ত মনে করছি না, কারন আমাদের দেশের তদন্ত রিপোর্টের কথাতো আর আমাদের নাজানা নয় ।
রায় যেভাবেই হোকনা কেন আমি মনে করি জসীমউদ্দিন রহমানীর সাজা জঙ্গিদের আরো উস্কানি দিবে।
এই রায় মন্দের ভাল। এই রায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্র ধর্মীয় মৌলবাদীদের এই বার্তা দিল যে তথাকথিত ‘ঈমানী দায়িত্ব’ পালন করতে গিয়ে রাষ্ট্রের আইনের বরখেলাপ হলে রাষ্ট্র তা মেনে নেবে না। আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই গং দের পর এটাই খুব সম্ভব মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সবচেয়ে জোরদার আইনি আঘাত। অন্যদিকে ব্লগার হত্যায় প্ররোচনা দেয়া রাহমানী আর তিনজন হত্যাকারীকে স্বল্প মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে যা এই রায়কে সমালোচিত করেছে। হত্যায় প্ররোচনা দেয়া হত্যাকাণ্ডের মতই গুরুতর অপরাধ। মনে রাখতে হবে যে, রাহমানীর প্ররোচনা কেবল রাজীবই নয়, আরও অনেকেরই জীবন বিপন্ন করেছে। পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপির একটা লিংক থাকলে ভাল হতো।
মৌলবাদের ভাইরাসটা আরো একধাপ এগিয়ে দিল এই রায়। জানেই যখন খুন বা খুনের জন্য প্ররোচিত করার শাস্তি মাত্র কয়েক বছরের কারাদন্ড, তখন তারা কথিত ধর্মের নামে, জিহাদের নামে আরো বেশি উৎসাহিত হবে খুন করার জন্য। আমি মনে করি এই রায় পরোক্ষ ভাবে যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে তাদের মারার জন্য উৎসাহিত করল মাত্র।
আমি একজন উকিল হিসেবে বলতে পারি যে কোনো অপরাধের আবেটার বা উস্কানিদাতা যে হবে সে ওই অপরাধের সাজা অনুযায়ী সাজা পাবে | এটা আমাদের ভারতীয় দন্ডবিধি অনুযায়ী বলছি | খুনের শাস্তি ফাঁসি ,তাহলে তাতে উস্কানিদাতাও ফাঁসির হকদার হবে | তবে বাংলাদেশের দন্ডবিধি কি বলে জানি না |
এটা বিচারের নামে প্রহসন। পুলিশের তদন্ত রিপোর্টে কী লেখা হয়েছে আর কী গোপন করা হয়েছে সেটা জানার দরকার আছে। তখন বুঝা যাবে ভুত শরিষায় কেমন আছে।
দুইটার ফাঁসি, বাকিগুলোর জন্য কী ব্যবস্থা? এরা জেল থেকে বেরুলেই তো কামড়াকামড়ি করবে। যাকে পাবে তাকে কামড়াবে- ব্লগার, লেখক, বাউল, উদারপন্থী, মাজারপন্থী …
জলাতঙ্কে আক্রান্ত কুকুরকে হত্যা করতে হয় নাহলে সে অন্যকে কামড়াবে, রোগ ছড়াবে এবং তা জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। Lyssavirus নামক এক ধরণের ভাইরাস জলাতঙ্ক ছড়ায়। এতে আক্রান্ত প্রাণির মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। ধর্মান্ধতার ভাইরাসও অনেক ক্ষেত্রে একই কাজ করে, যার বাস্তব প্রমাণ আপনারা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন।
রহমানীর হইছে ৫ বছরের জেল মাত্র, যে হত্যাকারীদের গুরু। হের লেখা হত্যার ফতোয়া অনলাইনে ঘুরে বেড়ায়। ধিক!
আবার ফেব্রুয়ারি, আবার ভাইয়ের লাশ
বীর রাজীবের বুকের রক্তে লালচে পূব-আকাশ!
https://www.youtube.com/watch?v=Olaj5uj_aBk
প্রহসনের রায়। মানি না।
কোন পাল্লা দিয়ে জসীমুদ্দীন রাহমানী নামক নরপিশাচটার অপরাধ মেপে পাঁচ বছরের শাস্তি দেওয়া হলো? এই মৌলবাদী জঙ্গী প্রতিটা লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ হত্যার সাথে জড়িত। রাজীব ভাইয়ের হত্যাকারীদের আদেশ দাতা তো সেই। উস্কানী প্রদানের সকল তথ্য প্রমান থাকার পরেও কোন হিসাবে পাঁচ বছরের শাস্তি?
রাজীব হায়দারের হত্যাকাণ্ড হয়তো নানা কারনেই সবার কাছে স্মরনীয় হয়ে থাকবে। তবে আমার মনে হয় এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই অন্ধবিশ্বাস মুক্ত একটা সেকুলার বাংলাদেশ সাহসের সাথে সামনে এসে দাঁড়ালো। ধর্মবিশ্বাস বাদেও মানুষ থাকতে পারে এটা আগের আমল গুলোয় কারো চিন্তাতেও ছিলনা। পরে মুক্তচিন্তার শুরু হলেও একটা চেপে রাখা, মুক্তমনাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার একটা প্রবনতা শক্তিশালী ছিল। এই হত্যাকাণ্ড থেকেই সাহসের সাথে বাংলাদেশের মুক্তমনারা সামনে এগিয়ে এসেছেন। ফলটা মধুর হয়নি, রক্তপাত অজস্র হয়েছে, কিছু অসামান্য মানুষকেও আমরা হারিয়েছি, কিন্তু এসবই প্রমান করে অন্ধবিশ্বাস সত্যি করে হেরেই গেছে। তাদের কলমে আর জবাব ছিলনা, তাই চাপাতি উঠে এসেছে। এখন দেশকে এগিয়ে নিতে, দেশে ধর্মীয় জঙ্গীবাদী আগ্রাসন ঠেকাতে সেকুলার বাংলাদেশ ভিন্ন আর কোন পথই নেই। রাজীব হায়দার এই জন্যই আমার কাছে স্মরনীয় হয়ে রইবেন যে তার নৃশংস মৃত্যুর ঘটনাই আমাদের সামনে এসে দাঁড়ানোর সাহস যুগিয়েছে। আমরা আর পিছু হটবোনা।
ওরা হারবেই। বন্যা আহমেদ তার “তোমাদের ঘৃণা করতেও ঘৃণা হয় আমার” লেখাটাতেও ঠিক এই সুরেই বলেছিলেন-