জাতি হিসাবে বাঙালী আজীবন দ্বিধান্বিত। নিজের পরিচয় থেকে শুরু করে বিশ্বাস পর্যন্ত সবকিছুতেই তাদের দ্বিধা। দেশ ও জাতির জন্ম-ঊষালগ্ন তাদের চোখে ঘোলাটে। পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয় এদেশের সাধারণ জনগণ। রক্তের দামে কিনে নেয় বাংলাদেশ নামের এই ছোট্ট ভূখণ্ড। মাত্র ৪৪ বছর আগের কথা; অথচ কত সহজে ভুলে গেছে তারা। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আমাদের আলাদা হওয়ার উদ্দেশ্যই ছিল শোষণ মুক্ত সেক্যুলার দেশ গড়া কিন্তু এখন সেই লক্ষ্য বদলে হয়েছে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গড়া। এই বদল নিশ্চয় এমনি আসেনি, এসেছিল এদেশীয় কিছু পাকি জারজদের হাত ধরে। বাঙালী জাতি কখনো নির্বোধ ছিলনা কিন্তু তারা ছিল দ্বিধাবিভক্ত আর আবেগপ্রবণ। অস্ত্র হিসাবে এই দুটিই ব্যবহার করে ঐসব পাকি বীর্যরা।
বাঙালীর আবেগকে তারা ধর্মের দিকে প্রবাহিত করে। বলাবাহুল্য, আজ তারা বেশ সফল।সেকারনেই আজ খুন, হত্যা, ধর্ষন থেকেও ধর্মের অবমাননা এদেশে বড় অপরাধ। অবস্থা এমন জায়গায় পৌছেছে, এদেশে আল্লাহকে ব্যঙ্গ করলে কেউ ততটা নাখোশ নাহলেও মহানবীকে ব্যঙ্গ করলে মৃত্যু নিশ্চিত। আল্লাহ ও মহানবীর মধ্যে কে বড় সেটাই যে জাতি বুঝে উঠতে পারেনি তারা আবার কি ধর্ম করবে! এসব অনেক আগেই বুঝে গেছিল পাকি জারজগুলো, যাদের আজ ভদ্র ভাষায় আমরা যুদ্ধাপরাধী বলি। এদের মুল লক্ষ্যই ছিল পাকিস্তান বিমুখ বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানমুখী করা। দেশে এরা মাদ্রাসা ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম করতে চায় অথচ এদের অনেকের ছেলে মেয়েরা সব বিদেশে আধুনিক শিক্ষায় আলোকিত (?) হচ্ছে! প্রকৃতপক্ষে ধর্ম এদের কাছে শুধু একটা ব্যবসা। যাহোক ধর্ম বিষয়ক কথা বন্ধ, ধর্ম নিয়ে কথা বলা মানেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া। আপাতত মৃত্যু নিয়ে পাঞ্জা লড়ার কোন মুড নাই।
এদেশের কিছু মানুষ এখনো মনে করে এখানে কেউ যুদ্ধাপরাধ করেনি তাই যুদ্ধাপরাধীও নাই। অর্থাৎ দ্বিধার পরিধি যুদ্ধাপরাধ পর্যন্ত পৌছে গেছে। পরিধির শেষ এখানেই নয়, অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক করেন। এমনকি কাওকে এরকমও বলতে শুনেছি, মুক্তিযুদ্ধ কি সত্যিই হয়েছিল! ত্রিশ লক্ষ মানুষ কি শহীদ হয়েছিল, যদি হয়েও থাকে সেটা কে গুনেছিল কিভাবে গুনেছিল ইত্যাদি!? ভাগ্যিস বঙ্গবন্ধু বেচে নেই; নাহলে নিশ্চিত হার্টফেল করতো! অবশ্য যে জাতি তাকে জাতির জনক হিসাবে মেনে নিতে পারেনি তাদের কাছে এরকম কথা নিশ্চয় ততটা নিরাশার নয়। দ্বিধা এখানেও, কারন তাদের মগজে কিছু পোকা জাতির জনক ব্যাপারটা নিয়ে ত্যানা পেচিয়ে দিছে; এব্যাপারে পোকাদের মতামত “আমরা মুসলিম আর মুসলিম জাতির জনক ইব্রাহীম তাই অন্য কাওকে জাতির জনক হিসাবে স্বীকার করা আর দোজখের আগুনের ফুল্কি অনুভব করা এক কথা”। কিন্তু পোকাদের মগজে ঢুকবে কি করে যে ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে জাতি হিসাব করা হয়না; বরং জাতি ব্যপারটা অনেকাংশেই জড়িত ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে – সেই অর্থে আমরা বাঙালী জাতি এবং বাঙালী জাতির জনক হলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সবথেকে মজার ব্যপার, এদেশীয় পোকার দল যাদের সাচ্চা মুসলমান ভাবে অর্থাৎ পাকিদেরও(পাকিস্তানী বললে সম্মানটা বেশী হয়ে যায়!) জাতির জনক আছে। পাকি বীজের জনক মুহম্মাদ আলী জিন্নাহ। একটা দেশের কোন ধর্ম হয়না তাই দেশের মানুষেরও প্রথম পরিচয় তারা কোন জাতি, তারা কি বিশ্বাস করে সেটা নয়। এজন্য আমাদের পরিচয় – আমরা বাংলাদেশী, আমরা বাঙালী।
দ্বিধা আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক নিয়েও? এখানেও আমরা বঞ্চিত করি সেই মানুষটিকে যিনি আমাদেরকে এমন সুন্দর এক বাংলাদেশ দিয়েছেন, আবারো সেই বঙ্গবন্ধুকে। যেন বঙ্গবন্ধু পৃথিবীতে না এলেই তাদের কাছে সবকিছু চিরকল্যানকর মনে হতো। যাহোক, এদেশের বহুলোক এখনো মনে করে মেজর জিয়া ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক। কিন্তু আসলে কি তাই! তাহলে কেন আমরা ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করি! কেন ২৭শে মার্চ নয়? কারন ঐ দিনেই তো মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করেন। ভুল হয়েছে আসলে গোড়াতেই, ঐযে ঘোষক এবং পাঠক চিনতে ভুল। সত্যিকার অর্থে, তার অনেক আগেই ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রের সম্মুখেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন, তার সেই বিখ্যাত ভাষন “রক্ত যখন দিয়েছি আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো…” এটা অন্তত সবার জানা থাকা উচিৎ। এরপর ২৫শে মার্চের গনহত্যার পর ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার আগেই তিনি লিখিত ভাবে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন এবং কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন সারাদেশে প্রচার করার জন্য। এইসময় অখ্যাত এক মেজর এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন – সেই মেজর সাহেব হলেন মেজর জিয়া। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর পলাতক যুদ্ধাপরাধীরা দেশে ফিরে আসার পেছনেও ইনার সুনজর ছিল বলেই জানি।
যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রসঙ্গে অনেকেই ভ্রু-কুচকে বলেন, মুজিবতো সাধারন ক্ষমা করে দিয়েছিল তাহলে আবার বিচার কেন!? এটা ক্ষমতা দখল ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের একটা ষড়যন্ত্র মাত্র। যারা এগুলো বলেন তাদের জানা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়, কারন বঙ্গবন্ধু সাধারন ক্ষমা করেছিলেন ঠিকই কিন্তু সেই ক্ষমা কাদের জন্য প্রযোজ্য ছিল সেটা ভালোভাবে জানা দরকার। এদেশে রাজাকারের সংখ্যা একেবারে কম ছিলনা, তবে তাদের সবার অপরাধ সমান ছিলনা – এরকম রাজাকারও ছিল যারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিদের সংবাদ সরবরাহ করতো। বাবার কাছে শুনেছি, আমাদের এলাকায় যারা রাজাকার ছিল তারা গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে গরু, ছাগল, মুরগী নিয়ে যেত, পাকিদের খাবারের যোগান দিতে (আমাদের বাড়ি থেকেও তিনটা গরু নিয়ে যায়); এরথেকে বড় অপরাধ তারা করেনি সম্ভবত। বঙ্গবন্ধুর সাধারন ক্ষমা ছিল এধরনের রাজাকারদের জন্য যারা রাজাকার হলেও কোন মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডে (খুন, হত্যা, ধর্ষন, লুন্ঠন, ঘরবাড়ি জ্বালানো ইত্যাদি) জড়িত ছিলনা। মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত ঘাতক দালাল বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রণয়ন করা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) আইন ১৯৭৩। ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ চালু করে এই বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে সেই আইনের অধীনেই বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে অনেকেই যুক্তি দেখান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অনেকের (কাদের মোল্লা, সাঈদি বা কামরুজ্জামান) বয়স অনেক কম ছিল (প্রকৃতপক্ষে যা সত্য নয়); সুতরাং তাদের পক্ষে এসব করা সম্ভবই ছিলনা। আচ্ছা ধরেই নিলাম, তাদের বয়স কম ছিল, আচ্ছা কত কম ছিল! সাঈদির বয়স নাকি ১২-১৫ বছর ছিল (যদিও পরে সার্টিফিকেট থেকে জন্মসাল অনুযায়ী সাঈদি তখন ৩০-৩১ বছরের টগবগে জোয়ান)। কিন্তু ১৫ বছরের কম বয়সী কিশোররা যদি অস্ত্র হাতে পাকিদের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে পারে তাহলে তারা কেন খুন হত্যা ধর্ষন করতে পারবেনা, উপরন্তু যখন তাদের পাশে পাকিরা ছিল! এখন অনেকেই বলতে পারেন, যে ১৫ বছরের কম বয়েসীদের মুক্তিযুদ্ধে নেওয়া হতনা, এটা তাদের জানার ভুল। কারন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বয়সের দিকে লক্ষ্য রাখা হয়নি। এক্ষেত্রে দুজনের নাম এই মুহুর্তে বলা যেতে পারে, যাদের বয়স ১৫ বছরের কম ছিল এবং যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল – আতিক রহমান (১৪) এবং আবু সালেক (১২)। এরকম কম বয়সের আরো অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এরপর বলা হলো, এই কাদের সেই কাদের না; এই সাঈদি সেই সাঈদি না; এই সাকা সেই সাকা না… এ গল্পের যেন শেষ নাই। আদালতে সম্পুর্ন দ্বিধাহীনভাবে প্রত্যক্ষদর্শীরা শনাক্ত করার পরেও তাদের দ্বিধা কাটছেনা। আমি ভাই এতো প্যাঁচগোচ বুঝিনা। সবথেকে বড়কথা হলো, এরা যদি তারাই নাহয় তাহলে পাকিদের এতো চুলকাচ্ছে কেন! পাকিরা এই বিচার বন্ধে এতো উদগ্রীব কেন! প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার থেকে বরং ভাবাটা বেশি প্রয়োজন।
সত্যি বলতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে পাকিরা সকল প্রকার চেস্টাই করেছিল, এবং মুক্তিযুদ্ধে যেমন এদেশের কিছু কুত্তা (রাজাকার) তাদের সাহায্য করেছিল; আজো তারা পাকি প্রেমে মশগুল। এদের দেখে মনেহয়, যদি আগামীকাল সকালে উঠে দেখতো এদের জন্ম আসলে পাকিদের বীর্যে হয়েছিল, তাহলে অনেকবেশী গর্ব অনুভব করতো এবং আগের বাবাকে পাছায় লাথি মেরে বের করে দিত। সাকাকে নিয়ে চারপাশে সংশয়, কিন্তু সাকাকে নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ দেখিনা আমি, সে রাজাকার ছিল এটার প্রমাণ সে নিজেই; গুডহিলের কথা নাহয় বাদ থাকলো। যাহোক সকল সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে, গতকাল সাকা ও মুজাহিদের ফাঁসী কার্যকর হইছে। ফাঁসী থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাকা ও মুজাহিদ দুজনেই রাষ্ট্রপতির কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা আবেদন করেছিলো (মুজাহিদতো আরো একপা বাড়িয়ে, ২১শে আগস্টের মামলার দায়ে ফাঁসী পিছানোর ধান্ধাও করেছিল!); স্বভাবতই রাষ্ট্রপতি সেটা নাকচ করেন। মজার বিষয়, এই ক্ষমা চাওয়া নিয়েও দ্বিধায় পড়েছে বাঙালী। ক্ষমার আবেদনের কথা নাকি সাকা ও মুজাহিদ পরিবার জানেই না। তাদের দাবী সাকা ও মুজাহিদ নির্দোষ, সুতরাং তারা ক্ষমা চাইতে পারেন না। সাকার হুকা কচ্ছে তার বাবা বাংলার বাঘ, চট্টগ্রামের সিংহপুরুষ, “বাঘ কখনো মাথা নত করে না”; এটা সরকারের প্রহসনমূলক ষড়যন্ত্র (আচ্ছা এমনতো হতে পারে যে, সাকা বা মুজাহিদ পরিবারের কাছে নির্দোষ থাকতে ও দলের সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার ভয়ে পরিবার বা দলকে এটা জানায়নি!)। এদিকে সাকা নাকি তার ছেলে হুকারে কইছে “৬ ফুট ২ ইঞ্চি তোমার বাবা, কারও কাছে মাথা নত করে না”। সাকা সবটুকু মিথ্যা বলেননি, তিনি ৬ ফুট ২ ইঞ্চি বটে তবে বাঘ নয়, ছয় ফুট দুই ইঞ্চির এক নরখাদক। তাই জেগে ওঠো বাঙালী, দ্বিধান্বিত আর কতদিন, মুক্তিযুদ্ধকে বৃথা যেতে দিওনা।
খুব ভালো লেখা | কিন্তু আমার কিছু প্রশ্ন আছে এই যুদ্ধাপরাধ নিয়ে , উত্তর দিলে বাধিত হব |
১] বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭১ সালে আওয়ামী লিগ সরকার গঠন করে | তারপর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যা পর্যন্ত চার চারটে বছর লিগ ক্ষমতায় ছিল | তাহলে তখুনি কেন যুদ্ধাপরাধীদের সাজা দেয়া হলো না ? তখন সবকিছু টাটকা ছিল | তথ্য প্রমান টাটকা ছিল , স্মৃতি টাটকা ছিল ? এত বছর দেরী লাগলো কেন ?
এইটাই ভীষণ সন্দেহজনক ব্যাপার | যখন ক্ষত টাটকা, স্মৃতি টাটকা , তখন ক্ষতের ইলাজ না করে এত বছর পর কেন ?
২] ১৯৯৬ সালে আবার লিগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরে | এই সময়েও যুধাপরাধিদের কোনো বিচার নাই | কেন ? কি উদ্দেশ্যে ? এইটাও সন্দেহজনক ব্যবহার |
৩] আওয়ামী লীগের ২০০৮ নির্বাচনের ইশতেহারের কথা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করা | ২০০৯ সাল থেকে বিচার শুরু হয় | কিন্তু কেন ? কেন এই ৪৬ বছরের নিরবতা ?
দয়া করে প্রশ্নগুলি বুঝে উত্তরটি দিলে বাধিত হব |
এখন এই বিচার করার কারন এবং এই সন্দেহ গুলো আপনার চোখে কিভাবে ধরা দিয়েছে, সেটা দিলে উত্তর দেওয়াও আমার জন্য একটু সহজ হতো বৈকি।
যাহোক, টাটকা বিচার করার জন্যই কিন্তু ১৯৭৩ সালে ঘাতক দালাল আইন-১৯৭৩ প্রণয়ন করা হয়, এবং বিচার কার্যও শুরু হয়ে গেছিল, চিকন আলী নামের এক রাজাকারকে তৎকালীন সময়ে ফাঁসীও দেওয়া হয় কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর জিয়া সামরিক অধ্যাদেশ জারি করে এই আইন বাতিল করে দেন এবং জেলবন্দিদের ছেড়ে দেন। বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=3022 এবং https://bn.wikipedia.org/s/oqo
আর ১৯৭৫ এর পর থেকে ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত আওয়ামীলিগ ক্ষমতায় ছিল ২ বছর, কিন্তু তখন বিচারের উপযুক্ত পরিবেশ ছিলনা তবু তখনো যে চেস্টা করা হয়নি তা নয়। মোদ্দাকথা যে বিচারটা আগে হওয়ার ছিল সেটা এখন হচ্ছে, যারা তখন অপরাধী ছিল তাদেরই বিচার হচ্ছে তাহলে সমস্যা কোথায়! উপযুক্ত সময় ও তথ্যপ্রমানের আলোকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার একটা দেশ যখন ইচ্ছা তখন করতে পারে।
৪৬ বছরের নিরাবতা বলাটা কি যুক্তিসঙ্গত হলো! ১৯৭৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৩৪ বছরের মধ্যে প্রায় পচিশ বছর ক্ষমতায় ছিল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি। তারা ২৫ বছরে যেটা করেনি সেটা আও্মীলিগের জন্য ১০ বছরে অসাধ্য নাহলেও কঠিন ছিল। তাই ওই সময়টাকে নিরাবতা না বলে পুর্বপ্রস্তুতি বলবো আমি।
বলাবাহুল্য, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে এবং বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যার বিচারকাজ শুরু করা হয়, যেগুলোর সাথে জিয়া প্রতক্ষ্য এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
লেখাটা খুব ভাল লাগল। তবে প্রথম শব্দটা নিয়ে আমার কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। “দ্বিধাগ্রস্থ” মানে তো এটা করব কি করব না, এটা উচিত কি অনুচিত-এরকম একটা মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকা এবং চেষ্টা করার একটা সিদ্ধান্তে পৌছানোর, তাই না? (আমার ভুলও হতে পারে, আমি নিজে এই মুহুর্তে কিছু দ্বিধাগ্রস্থ এই নিয়ে যে, সত্যি কি সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নেই? সত্যি কি মহাবিশ্ব ফিজিক্সের নিয়মে নিজে নিজেই চলছে? আমি বেশকিছু ধরে মুক্তমনা পড়ছি, অভিজিৎ রায়ের লেখা পড়ছি এই দ্বিধা থেকে বেরিয়ে আসতে)
কিন্তু বাস্তবতা হল আমরা জাতি হিসাবে দ্বিবিভক্ত (মানে শব্দটি দ্বিধাগ্রস্থ না হয়ে দ্বিবিভক্ত হওয়া উচিত মনে হয়)। একদল প্রকৃত দেশপ্রেমে, সঠিক জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণীত এবং অন্য দলটি শুধুমাত্র ধর্মবোধের আলোকে স্বজাতিপ্রেমিক বা ধর্মপ্রেমিক।
তবে লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য।
দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত। ভালই বলেছেন, দ্বিধাবিভক্ত দিলে হয়তো বেশী উপযুক্ত হতো। মহাবিশ্ব সম্পর্কে দ্বিধা কাটানোর জন্য মীজান রহমান ও অভিজিৎ রায়ের “শুন্য থেকে মহাবিশ্ব” বইটি একটা সম্পুর্ন বই – পড়ে ফেলুন। যাহোক, ধন্যবাদ আপনাকেও 🙂
অনেক অনেক ধন্যবাদ, আমি ইতমধ্যে বইটি পড়া শুরু করে দিয়েছি। অসাধারণ বই ! ! বুঝতে পারছি, শেষ পর্যন্ত পড়লে অনেক কিছুই নতুন করে জানতে পারবো।
ভাই অনেক সত্য চেপে গেছেন।এটা জানার সীমাবদ্ধতা না ইচ্ছাকৃত!লিখলে অনেক লিখতে হবে।ধৈড়য্য নাই।শুধু বলব কোন জাতির জনক আত্মসমর্পণ করে নাই এবং বাকশাল ও করে নাই।আর বলব দয়া করে সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের”অরক্খিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা” “তাজউদ্দীন নেতা ও পিতা” “জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা” প্রভৃতি।আর যুদ্ধাপরাধীদের খমার কথা,১৯৬ জন যুদ্ধাপরাধী ফেরৎ কার স্বার্থে দেয়া হল এবং কথিত মৈএী চুক্তির শর্তগুলি দয়া করে পড়বেন ও পরে আরেকটা কলাম লিখবেন
জানার সীমাবদ্ধতা তো সবারই থাকে। হ্যা, আমাদের জাতির জনক বাকশাল করতে চেয়েছিলেন কিন্তু কেন সেটাই আসল কথা। তৎকালীন অবস্থা বিবেচনায় এবং বাংলাদেশের উন্নতি ত্বরান্বিত করার জন্য বাকশাল প্রবর্তন করতে তিনি অনেকটা বাধ্যই হয়েছিলেন। বাকশাল সম্পর্কিত বঙ্গবন্ধুর নিজের ভাষন রইলো এখানে।
বিপুল সংখ্যক (>৩৫ হাজার) যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে বেশিরভাগেরই তেমন গুরুতর কোন অপরাধ ছিলনা, ফলে সত্যিকারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে ভালভাবে সম্পন্ন করা যায় এজন্য সাধারণ যুদ্ধাপরাধিদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হয়েছিল। আর যতদুর জানি এদেশীয় জনগনের জন্যই যুদ্ধাপরাধি ফেরত দেওয়াটা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।
তাজুদ্দিনের নেতা ও পিতা পড়েছি, বাকিগুলো সময় পেলে পড়বো। যাহোক, এতো বিস্তারিত বা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা আমার উদ্দেশ্য ছিলনা। আমি হাল্কা চালে যে যে বিষয় গুলো নিয়ে বাঙালির দ্বিধা সেগুলোই উল্লেখ করেছিলাম আর কি!
আমি বুঝিনা পাকিদের সাথে কেন সম্পর্ক রাখা হয়। কেন পাকিদের জিনিস আমদানি করা হয় । দুত পাঠান হয়।
ঠিকই বলেছেন, :good: আজ ইজরায়েলের জায়গায় থাকা উচিৎ ছিল পাকিস্তান।
তবে দুর্ভাগ্য এটাই আমি নিজে যেমন পাকিস্তানি জিনিস ব্যাবহার করিনা, তেমন অনেকেই আছেন
পাকিস্তানী জিনিস ছাড়া বেশ অসুবিধা হয়।
যুদ্ধাপরাধীরা জাতির কলঙ্ক। এদের বিচারের মাধ্যমে কলঙ্ক মোচন হচ্ছে – এতে কোন দ্বিধা নেই।সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হলে জাতির সবচেয়ে বড় কলঙ্ক মোচন হবে।
কলঙ্ক মোচন হচ্ছে বটে- দ্বিধা নেই কিন্তু কলঙ্ক যে মোচন হচ্ছে এখানেই তো দ্বিধা!
ফাঁসীগুলো রাজনৈতিক কারণে হচ্ছে নাকি যুদ্ধাপরাদের কারণে হচ্ছে! এই লুপ থেকে এখনো অনেকে বের হতে পারেননি :yahoo:
ধন্যবাদ 🙂
দ্বিধা জিনিসটার আরামের দিকটা হলো যার যা দায়িত্ব বা কর্তব্য তা পালন করা থেকে বিরত থাকা যায়। আমরা দেশ আর দশের সমস্যা নিয়ে আলোচনার তুবড়ি ফোটাই কিন্তু তাতে সুকৌশলে একটা জিনিস বাদ দিয়ে রাখি তা হলো সেই সমস্যা বা সংকট নিরসনে আমার ভূমিকা কি হবে। দ্বিধা সেই সুযোগটাই করে দেয় যাতে আমার ভূমিকা নিস্ক্রিয় বলে আমার দোষ হয়না। আমাদের দ্বিধার পেছনে লুকিয়ে আছে আমাদের নিস্ক্রীয় থাকার স্পৃহা। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ ঠিক জায়গাটিতেই আঙ্গুল রেখেছেন। তবে মনে হচ্ছে লেখাটি আরো একটু বড় হলে মন্দ হতোনা।
আপনাকেও ধন্যবাদ 🙂 যা বলেছেন :good: দ্বিধা বড্ড আরামের।
সত্যি বলতে বাঙালির দ্বিধা নিয়ে লিখতে চাইলে সেটা এক ব্লগে কুলাবে কিনা সন্দেহ!