বামপন্থীদের একটা অতিপ্রিয় বুলি হচ্ছে, দেশভাগ ইংরেজরা করেছিল | এই কথা যদি সত্যি হয় তাহলে মানেটা দাঁড়ায় যে ভারতে হিন্দু আর মুসলমান পরস্পর মিলেমিশে বাস করত | ইংরেজরা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল এবং পরিনামে দেশভাগ হয়েছিল | কোনো কোনো বামাতি তো আবার এটাও বলে যে মিল সাহেব তাঁর ইতিহাসে প্রথম হিন্দু আর মুসলমানকে দুই পৃথক জাতি হিসেবে দেখিয়েছিলেন | ইটা তারা বলে আগের মতটাকে জাস্টিফাই করতে | ইংরেজরা কিভাবে ডিভাইড এন্ড রুল করেছিল তা দেখাতে | আমি এর বিরোধিতা করি |
আমার মতে দেশভাগের মূল কারণ ছিল ধর্ম | হিন্দু ও মুসলমান কোনকালেই মিলেমিশে থাকেনি | তারা দুই পৃথক জাতির মতই ছিল | ইংরেজদের কোনো দোষ নেই | তারা যেমনভাবে হিন্দু আর মুসলমানকে দেখেছিল, তেমনভাবেই তারা ইতিহাস লিখেছে | এই লেখায় আমি এইগুলি প্রমান করব |
এই লেখায় আমি দেখাবো যে ভারতে হিন্দু আর মুসলমানদের মধ্যে কতগুলি দাঙ্গা হয়েছিল, সেসব দাঙ্গার কারণ কি ছিল, ইংরেজরা হিন্দু আর মুসলমানকে কি চোখে দেখত এবং কেন |আরেকটা কথা | সবিনয়ে বলি যে ইতিহাসে লিখা থাকলেই কোনো কিছু সত্যি হয়ে যায় না আর লিখা না থাকলেই কোনো কিছু মিথ্যা হয়ে যায় না | যেসব দাঙ্গার কথা বলতে যাচ্ছি সেগুলো ইস্কুলের ইতিহাস বইতে লিখা নাই কিন্তু সত্য ঘটনা | এই তথ্যগুলি চেপে যাওয়া হয়েছে | উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবেই চেপে যাওয়া হয়েছে | যাতে করে দেশভাগের আসল কারণ আমরা কোনদিন বুঝতে না পারি | আসল কালপ্রিটকে জানতে না পারি | উদ্দেশ্য ১০০% সফল হয়েছে | আজ অব্দি সেই ধর্মীয় সংকীর্ণতাকে আমরা সযত্নে বয়ে চলেছি যা দেশভাগের জন্য দায়ী |
সর্বপ্রথমে হিন্দু ও মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক | হিন্দু ও মুসলিম পরস্পর এই ভারতে লড়াই করেই এসেছে | দুজনের মধ্যে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক | দুই সম্প্রদায়ই পরস্পর বহু দাঙ্গা করেছে |
মুঘল আমলে ছোটখাটো কারণে দাঙ্গা হত | দাঙ্গাগুলি একতরফা হত | হিন্দুদের বিরুদ্ধে | কারণ তখন মুসলিম আমল | শাসিত চিরকালই শাসকদের দ্বারা লাঞ্চিত হয় | ১৭১৯-২০ সালে কাশ্মিরে এক মুসলমানের প্রতিহিংসাবশত দাঙ্গা হয় | ১৭২৯ সালে দিল্লিতে এক মুসলমানের হত্যাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা হয় | ১৭৮২ সালের ডিসেম্বর মাসে আসামে মুসলিমরা হিন্দুদের মহরমের সময় তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলে | হিন্দুরা অসম্মত হয় | পরিনামে দাঙ্গা | ১৭৮৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেড়ার জেলায় মুসলিমরা হিন্দু ধর্মীয় উত্সবে সশস্ত্র হামলা করে | ১৮০৯ সালে বারানসিতে হিন্দুরা একটা বাড়ি বানাচ্ছিল মসজিদ আর বিশ্বেশ্বরের মন্দিরের মাঝে | তাই নিয়ে দাঙ্গা শুরু হয় | ১৮৭৪ সালে বোম্বেতে এক পার্সি প্রফেটদের উপর এক বই লিখে | সেই বই নিয়ে দাঙ্গা | ১৮৭৩ থেকে ১৮৮৪ সাল অব্দি মোপলা মুসলমানরা কেরালায় হিন্দুদের কেটেছে |
ততদিনে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে | মুসলিমদের জমানা গেছে | তাই এবার দাঙ্গা গুলোর চরিত্র কিছুটা পাল্টেছে | এবার একতরফা হিন্দুরা মার খায় না | তারা পাল্টা মার দিতে শিখেছে | ১৮৮৯ সালে দিল্লিতে এক হিন্দুর ধর্মান্তরকরণ নিয়ে দাঙ্গা বাঁধে | ১৮৯১ সালে কলকাতায় মসজিদ বানানো নিয়ে দাঙ্গা লাগে |ওই একই বছরে পলাকাদে হিন্দু ধর্মীয় মিছিলের উপর মুসলিম আক্রমন হয় | ১৮৯২ সালে প্রভাসপাতনে মহরম নিয়ে হিন্দুরা দাঙ্গা লাগায় | ১৮৯৫ সালে পোরবন্দর-এ হিন্দুর ঘরের পাশ দিয়ে মুসলিম ধর্মীয় মিছিল বেরোলে হিন্দুরা আক্রমন করে | এইরকম হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে বহু দাঙ্গা হয়েছে , তাদের বিবরণ নিচের লিঙ্কে পেয়ে যাবেন |
the riot torn history of hindu and muslim relationship
দাঙ্গার তালিকা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে হিন্দুরা দাঙ্গা লাগাত গরু কাটা নিয়ে | আজও যেমন লাগায় | মুসলিমরা লাগাত মসজিদের সামনে গান বাজানো বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিয়ে | আরো অনেক কারণ আছে | আমি কয়েকটা বললাম |
ইংরেজরা এইসব দাঙ্গা প্রবন চরিত্র দেখে হিন্দু আর মুসলিমদের দুই পৃথক জাতি ভেবেছিল | ভাবাই স্বাভাবিক | এর সাথে যদি যুক্ত হয় ছোঁয়া ছুই-জল অচল-ছায়া মাড়ানো ধর্ম , তাহলে দুই জনকে দুই মেরুর বাসিন্দা বলে ভাবাটা কি খুব কষ্টকর ? মিল সাহেব এইসব দেখে হিন্দু ও মুসলমানকে দুই পৃথক জাতি বলেছেন | খারাপ বলেননি |
ইংরেজ আমলে দুই সমাজ সংঘবদ্ধ হতে শুরু করে | হিন্দুরা বানায় হিন্দু মহাসভা আর মুসলিমরা বানায় মুসলিম লিগ | দুই দলেরই উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশদের তোষণ করে কিছু সাম্প্রদায়িক সুবিধা ভোগ করা | অর্থাত এখানেও সাম্প্রদায়িকতা চলে এলো | এই দুই দলই আগের মত পরস্পরের সাথে দাঙ্গা করত | দুই দলেরই উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় নিজেদের সম্প্রদায়ের হাতে ক্ষমতা নেয়া |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের আর্থিক ক্ষতি হলে তারা ভারত স্বাধীন করার কথা ভাবতে থাকে | মুসলিম লিগ দেখে ক্ষমতা হিন্দুদের দিকে যাচ্ছে | তখন তারা দেশভাগের প্রস্তাব দিয়েছিল | হিন্দু মুসলমানের দাঙ্গা প্রবন চরিত্র দেখে ব্রিটিশরা বুঝতে পারে যে স্বাধীন হলে ভারতে সিভিল ওয়ার শুরু হয়ে যাবে | তাই তারা দেশভাগের সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি দিয়েছিল | এতে ব্রিটিশদের দোষ কোথায় ?
সুতরাং দেশভাগের জন্য দায়ী সংকীর্ণ ধর্মীয় আবেগ আর সাম্প্রদায়িকতা | ইংরেজরা কোনভাবেই দায়ী নয় | বামাতিরা মিথ্যা কথা বলে মুসলিম ভোট পাবার জন্য | আবার হিন্দু ও মুসলিমরা একে অন্যকে দোষারোপ করে | সেটাও সত্যি নয় | আসল কথা হলো তারা দুজনেই দায়ী | বা আরো ভালোভাবে বললে তাদের সংকীর্ণ ধর্মীয় আবেগ দায়ী |
উত্তর দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আবার বলছি, আমি আপনার সাথে প্রায় একমত। ধর্মীয় সংকীর্ণতা হিন্দু-মুস্লিম সম্পর্কে বরাবরি থেকে গেছে। এবং তার পরিণাম দেশভাগ। কিন্তু এটা তার অনিবার্য পরিনাম ছিল না বলেই আমার মনে হয়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিধান্ত যদি অন্যরকম হত তবে ফলটা আলাদা হত। তবে এনিয়ে খুব সংক্ষেপে গভীর যুক্তিতে ঢোকা এই স্বল্প পরিসরে কঠিন। তার ওপর “মাসির গোপ থাকলে মামা হত” ধরনের যুক্তির সম্ভবনা থাকে। তবে আমার মনে হয় না ইংরেজদের উদ্দেশ্য নিয়ে খুব ভুল বলেছি।
নেহেরু আদর্শগত দিক থেকে সমাজতন্ত্রী ছিলেন। তাঁর নিজের ভাষায় “Profit is a dirty word”। এটাও পরিষ্কার হয়ে গেছিল যে দেশ স্বাধীন হলে তাঁর ক্ষমতাই সবচে বেশি হবে। সম্পূর্ণ ভারতীয় উপমহাদেশের ওপর তাঁর ক্ষমতা থাকলে তাঁর ফল ব্রিটেনের মত ধনতান্ত্রিক শক্তিগুলোর পক্ষে ভাল হত না। সমস্ত ঠাণ্ডা জুদ্ধের সময় ভারত আলিখিতভাবে সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গী ছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান তাঁর ইতিহাসের প্রথম থেকেই ধনতান্ত্রিক শক্তিগুলোর কাছে উন্মুক্ত ছিল- তা পণ্যই হোক অথবা অস্ত্রশস্ত্র। এমনকি আশির দশকে গেলে হয়ত আপনি পাকিস্তানের আমেরিকাবিরধি/পশ্চিমাবিরধি জনমত খুঁজে পেতেন না। ৭১ এর মুক্তিজুদ্ধের ইতিহাস খুলে দেখলেও আপনি আমেরিকা-পাকিস্তানের এই সখ্য দেখতে পাবেন। তাছাড়া পাকিস্তান বরাবরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমারিকার/ধনতান্ত্রিক বিশ্বের একটা সামরিক ঘাটি হিসেবে কাজ করেছে, বিশেষকরে আফগান জুদ্ধের সময়। এর পরেও কি আপনার মনে হয় দেশ ভাগ হয়ে ব্রিটেনের লাভ হয়নি?
আমি আপনার দেয়া লিঙ্কটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম, তথ্য নিয়ে না। দাঙ্গার লিস্ট আরও লম্বা হলেও অবাক হব না। সমস্যাটা হল অতি-সরলীকরণ নিয়ে। ভেবেই দেখুন, ভারতে ১২২টির ওপর মূল ভাষা আছে, উপভাষা আছে ১৫৯৯ টি। দুই প্রদেশের মধ্যে রেষারেষি আজও কিছু মাত্র কম না। বিশেষ করে স্বাধীনতার প্রথম দিকে আলাদা দেশ তৈরির কথাও আনেকে বলেছেন। কিন্তু সেটা হয়নি। অনেক কাঠ খর পোরাতে হলেও এখন কিন্তু সেই কথা খুব একটা শুনবেন না। হিন্দু মুসলিম সম্পর্কেও কি এটা হওয়া একেবারেই অসম্ভব ছিল?
তাহলে আপনি কি বলতে চান যে ব্রিটেন আর সমস্ত ধনতান্ত্রিক দেশ একজোট হয়ে দেশভাগকে সমর্থন জানিয়েছিল তাদের স্বার্থের জন্য ? আমি কিন্তু দেশভাগের সময় সমস্ত ধনতান্ত্রিক দেশের কোন মহাজোটের কথা শুনিনি | ওদিকে বৃটেনের নিজের কোনো লাভ নেই কারণ তারা চলে যাচ্ছে | তাহলে কাদের স্বার্থে ব্রিটিশরা দেশভাগ করেছিল ? ব্যবসা করবার পথে নেহেরু কাঁটা হয়ে দাঁড়ালে সে কাঁটা সরাবার উপায়ও ধনতান্ত্রিক দেশগুলির ভালো জানা আছে |
লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে বিষ খাইয়ে তাসখন্দে মারা হয়েছিল কারণ তিনি আমেরিকার নোংরা গম নিতে চাননি বলে | এরপরেও বলতে চান যে নেহেরুর হাতে একছত্র ক্ষমতা পশ্চিমী দুনিয়ার কাছে বিপদের কারণ | কোনভাবেই নয় দাদা |
যাদের কথা বলছেন তারা সংখ্যায় কম এবং হিন্দু জনগোষ্ঠির অন্তর্গত | তাই তাদের আলাদা দেশ তৈরি হয় নি | আর একটা বিষয় খেয়াল করবেন যে দেশভাগের সময় কিন্তু কোনো হিন্দু বাধা দেয় নি বরং গান্ধীজি বাধা দিয়েছিলেন বলে নাথুরাম গডসে তাকে গুলি করেছিলেন | এর থেকে কি প্রমান হয় ? হিন্দুদেরও দেশভাগে মৌন সম্মতি ছিল | তাই নয় কি ? সুতরাং এখানে বৃটিশের গল্প কিকরে আসছে ? ইটা দুটো সম্প্রদায়ের নিজস্ব মারামারির ব্যাপার |
ব্রিটিশরা ভয় পেয়েছিল যে তারা দেশভাগ না করলে সিভিল ওয়ার শুরু হয়ে যাবে | তাই দেশভাগ তারা করেছিল | যে ক্ষতি ৪৭এর দাঙ্গায় হয়েছিল তা অতি কম | আরো বড় ক্ষতি হতে পারত | আর তাছাড়া ৪৭এর দাঙ্গায় হিন্দুরাও বহু মুসলিম কেটেছিল | সেকথা অবিশ্যি কেউ বলে না |
ইংরেজরা কাশ্মিরের সমাধান কেন করে যাননি সে বিষয়ে কিছু বলবেন..
আমি জানি, ভারত/পাকিস্তান দু-দেশের মধ্যে দাঙ্গা অভ্যহত থাকবার জন্য.. আমি কি ভুল জানি?
ভারত পাকিস্তান দুদেশের মধ্যে দাঙ্গা অব্যাহত থাকলে ইংরেজদের ঠিক কি লাভ হতে পারে রুবেল ভাই ? আপনার কমন সেন্স কি বলে ? বানিজ্যিক লাভ ? দাঙ্গায় কোনো বানিজ্যিক লাভ হতে পারে না | দাঙ্গাতে যেমনটা আমরা দেখি ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষতি হয় | দাঙ্গার পরিবেশে সরকারের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে না | আজ পশ্চিমী দেশগুলিই মোদিকে সহিষ্ণুতা বজায় রাখতে বলছে | যদি ভারত পাকিস্তানে দাঙ্গা থেকে পশ্চিমী দেশগুলির কিছু লাভ হত তাহলে ক্যামেরন-ওবামারা মোদিকে সহিষ্ণুতা বজায় রাখতে বলত না | সহিষ্ণুতা বলা বাহুল্য হিন্দু-মুসলিম সহিষ্ণুতা |
তাহলে কি রাজনৈতিক লাভ ? ঠিক কি রকম রাজনৈতিক লাভ ? | দাঙ্গা থেকে তাহলে ঠিক কি ধরনের রাজনৈতিক লাভ ইংরেজদের হতে পারে ? ভারত-পাকিস্তানের দাঙ্গা থেকে যদি কারো লাভ হয় তাহলে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলির লাভ হয় | তা ইংরেজরা কি সাম্প্রদায়িক শক্তি ?
তাহলে কি লাভ বাকি রইলো ? রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লাভ যদি না থাকে তাহলে কি লাভ বাকি রইলো ? এই কথার জবাব শুধুই তারা দিতে পারে যারা বলে যে কাশ্মির সমস্যার সমাধান ইংরেজরা করে নি ভারত পাকিস্তানের দাঙ্গা অব্যাহত রাখার জন্য |
এবার আমার ব্যাখ্যাটা শুনুন | কাশ্মির সমস্যাটা বড়ই জটিল | কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতে যোগ দিয়েছিলেন তাই ভারত বলে কাশ্মির ভারতের অঙ্গ | ইটা ভারত স্বাধীন হবার পরের ঘটনা | তখন ইংরেজরা চাইলেও কিছু করতে পারত না | পাকিস্তান বলে কাশ্মির তাদের অঙ্গ , ভারত অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছে |
লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন-এর সময়ে পাকিস্তান কাশ্মির দখল করার জন্য সন্ত্রাসবাদী পাঠিয়েছিল , ভারত তার সেনা পাঠায় | দুদলের মধ্যের যুদ্ধে যখন ভারত জিতে যাচ্ছিল তখন নেহেরু যুদ্ধ বন্ধ করেন | যেটুকু অংশ ভারত জিততে পারল না সেটুকু হয়ে গেল পাক অধিকৃত কাশ্মির | নেহেরু আর ইংরেজদের পারস্পরিক যোগসাজশেই এই ধরনের ত্রিশঙ্কু অবস্থায় কাশ্মির পড়ে আছে | নেহেরু কখনই ইংরেজদের বলেন নি যে কাশ্মির সমস্যার সমাধান কর |
আমার মনে হয় ভারত পাকিস্তান আর কাশ্মিরীরা এক টেবিলে বসে কাশ্মির সমস্যার সমাধান করতে পারে | এর জন্য ইংরেজদের সাহায্যের দরকার নেই |
আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে যুক্তি কিছুটা আছে, সেটা মেনেনিলাম। কিন্তু কয়েকটা জায়গায় একটু খটকা রয়ে গেল।
১। আপনি ঐতিহাসিক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার যে reference-টা দিলেন, তার url-টা খেয়াল করেছেন কি? এটা কিন্তু সম্পূর্ণ বর্ণ-হিন্দুত্ব বাদী । একটু নিরপেক্ষ হলে বিশ্বাসযোগ্য হত। ওয়েব পেজটার নিচের দিকে লিঙ্ক দিচ্ছে “Plastic Surgery’s Earliest Cases Date to Ancient Egypt, India”. এটা হাস্যকর।
২। আপনার দেয়া দাঙ্গার লিস্টটা যদি মেনেও নেই, তবে দেখবেন এই দাঙ্গা গুলোর থেকে অনেক বেশি মানুষ ওই সময় মারা গেছে রাজায় রাজায় মারামারি তে। বরং দাঙ্গা গুলোর মাঝের শান্তির সময়টা অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী। তাছাড়া হিন্দু-মুস্লিম, সব শাসকই দুটো ধরমকেই তোষণ ও ব্যবহার করেছে সুবিধা মত (আপনি প্রায় যে কোন হিন্দু কি মুসলিম রাজার নাম করতে পারেন, আমি দুটো দিকেরই উদাহরণ দিয়ে দেব)। আপনি বরং দলিত-আচ্ছুতদের সাথে বর্ণ হিন্দুদের ইতিহাসটা দেখুন। দেখবেন হানাহানি অনেক বেশি। আম্বেদকর ত প্রায় সরাসরি গান্ধীজীকে বলেই দিয়ে ছিলেন “Gandhiji, I have no homeland.”
৩। পুরনো বামপন্থিদের কথা আজ না বলাই ভাল। ভারতে তারা পায়ের নিচের মাটি প্রায় পুরোটাই হারিয়েছে। এমনকি এক কমরেড আমাকে এমন বলেছিল, “সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী সঙ্গী হোল ইস্লামিক মৌলবাদীরা।” এর পর তার সাথে আর বেশি যুক্তি তক্ক করে ওঠা হয়নি।
আমার মনে হয় দেশভাগের জন্য দুপক্ষের ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতা তো নিশ্চয়ই দায়ী। কিন্তু শেষ দুটো fatal stroke হোল কংগ্রেস-মুসলিম লিগ দ্বন্দ্বে আর ইংরেজদের ভবিষ্যতের বাজার তৈরি করার ইচ্ছা।
কংগ্রেস আর মুসলিম লিগ দন্দ্বটাই তো ধর্মীয় সংকীর্ণতার ফলে হয়েছে | সুতরাং সেই ধর্মই চলে আসছে |
আর দেশ ভাগের ফলে ইংরেজদের বাজার কিভাবে তৈরী হলো যদি দয়া করে একটু বোঝান | যদি দেশটা অখন্ড থাকত তাহলে বাজারের আয়তনটা বেশি হত না খন্ড দেশের বাজারের আয়তনটা বেশি ? তারপরে পাকিস্তানে কট্টর মুসলিম সমাজ পাশ্চাত্য দ্রব্য তেমন ব্যবহার করে না | দেশটা অখন্ড থাকলে তাদের কাছে অন্তত সেগুলো পৌছানো যেত কিন্তু পাকিস্তানে ইউরোপীয় দ্রব্যের বাজার আছে কিনা আমরা জানি না |
সুতরাং দেশভাগে ইংরাজের কোনো সুবিধাই হয় নি দাদা |
মানছি কিন্তু নিরপেক্ষ রেফারেন্সও তো দিয়েছি | সেটা কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির | আর হিন্দু ছাড়া হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার আর কোনো রেফারেন্স তো পেলাম না | বামপন্থী শিক্ষা তো আমাদেরকে কোনো দাঙ্গার লিস্ট দেয়নি |
এই লিস্টটা শেষকথা নয় | আরো হয়ত দাঙ্গা হয়েছে আমরা সেটা জানি না | সুতরাং লিস্টটা দেখে ইটা মনে করা ঠিক নয় যে দুটো তারিখের মাঝে কোনো দাঙ্গাই হয়নি |
রাজায় রাজায় মারামারি রাজনৈতিক কারণে হয় , ধর্মীয় কারণে নয় |
একদম সত্যি কথা।
যুক্তিবাদী কোন যুক্তিতে আমার মন্তব্যখানি উড়িয়ে দিলেন ঠিক বোধগম্য হল না। কি যুক্তিবাদী কি যুক্তিহীন সবাই দেখি সমান অসহিষ্ণু ।
আপনার মন্তব্যটা ঠিক কি এরশাদ ভাই ? কোন মন্তব্যটা আমি উড়িয়েছি ? দয়া করে বললে বাধিত হব |
ধর্মকে পুজি করে বড় বড় রাগব বোয়াল ছোট ছোট মাছকে তাদের কন্ঠলে আনে।এছাড়া ধর্মের যে মুল মন্তর মানবতা তা অনেক আগেই বিলিন হয়ে গেছে।
তাই বলি ধর্ম মানুষকে কিছুই দিতে পারেনা সুধু প্রত্যারিত ই করতে পারে।
আপনাদের ভালো লেগেছে জেনে খুবই খুশি হলাম |
ইংরেজরা দেশ ভাগ করেছিল – এটা শুধু বামদের কথা না, আরো অনেকেই বলে। দেশভাগের প্রধান কারণ যে ধর্ম সেটা অনেকে মানে না।
এর আগেও ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে আপনার লেখাটা পড়েছি। জাতীয়তাবাদের উচ্ছাস বাদ দিয়ে নির্মোহ দৃষ্টিতে ইতিহাসের দিকে তাকানোটা সত্যিই ভালো লাগছে। আমার মনে হচ্ছে আপনার কাছ থেকে আমরা এক সময় একটা বড় লেখা পাবো, হয়তো একটা বইই। ভারতের স্বাধীনতা ও তৎকালীন ইতিহাস নিয়ে বিশ্লেষনী একটা গবেষনার বইই হবে সেটা। অপক্ষোয় থাকলাম।
আমি চেষ্টা করব | ধন্যবাদ |
ভালো লাগলো 🙂
অল্প কথায় বেশ গুরুত্বপুর্ন কিছু তথ্য জানলাম।
সোভিয়েত ইউনিয়ন এর পতন এর পর বাম পন্থিদের এক মাত্র অবলম্বন এখন মুসলিম আর মুসলিম দেশ গুলো। সাথে পেট্রো ডলার এর ছোয়া তো আছেই। পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীরা এই চক্রের চোরাবালিতে পুরো ডুবে গেছেন। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের কথা যতটা না বলা যাই ততই ভাল। আমাদের এই বামপন্থীদের দের বিষ চক্র থেকে বেড়িয়ে ইতিহাস চর্চা শুরু করতে হবে। না হলে আমাদের ইতিহাসে মুসলিমরা চিরকাল দুধের শিশু তুলসীপাতাই রয়ে যাবে ।