[সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক পোস্টটি নাজিল করছি]
নাস্তিক অর্থাৎ সাধারণভাবে অবিশ্বাসীদের যেকোন কিছু করতে একটাই বাধা, তাদের বিবেক বা নীতিবোধ, এটা কিভাবে কাজ করে তা নির্ভর করছে পুরোটাই তার শিক্ষা, রিয়ালাইজেশন, রেশনালিটি, ওপেননেস ইত্যাদির উপরে। ধর্ম ঘেঁষা রক্ষণশীল রাডিক্যাল সমাজ আমাদের যৌক্তিক এবং সুস্থ সংস্কার নিয়ে বেড়ে ওঠায় তেমন কোন ভূমিকাই রাখে না। আমাদের এগুলো কষ্ট করে অর্জন করতে হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। প্রসেসটা যদি এমন হয় যে, আগে নিজেকে লিবারাল এবং র্যাশনাল হিসেবে তৈরী করার পরে কেউ ধর্মে অবিশ্বাস আনে তবে সেটাই স্থায়ী এবং কার্যকর হয় এবং মানবিক মূল্যবোধের চর্চা তাদের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু আগেই ইন্সট্যান্ট নাস্তিকতা, তারপরে “আমি নাস্তিক” পরিতৃপ্তি; এখানে আর নিজের মূল্যবোধ গঠনের সময় বা সুযোগ থাকে না।
বিজ্ঞানমনস্কতার কথা আমি ছেড়েই দিচ্ছি, নাস্তিকেরা ধর্মগ্রন্থ পড়তে ধার্মিকদের থেকেও বেশি আগ্রহী অধিকাংশ সময়। কেন? ধর্মকে খিস্তাতে হবে বলে। কিন্তু কজন নাস্তিক এটলিস্ট প্রাইমারি এন্টি ক্রিয়েশন থিয়োরি, ডারউইনিজম নিয়ে পড়েছেন? বিগ ব্যাং থিওরি, স্ট্রিং থিওরি বা ডকিন্স হিচেন্স ছেড়েই দিলাম, মেন্ডেলের সাকসেশন থিয়োরিই বা কজন জানেন? “নবীপোন্দন সপ্তাহ” যেই উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পার করা হয়, কার্টুনে কার্টুনে ভরিয়ে দেয়া হয় ভার্চুয়াল জগত, তার এক শতাংশ এনথুজিয়াজম কি থিওরি অফ এভোলুশন নিয়ে কার্টুন আঁকার পেছনে ব্যয় করা হয়? আমি নাস্তিক তাই আমি বিজ্ঞানমনস্ক বলে গরিলার মত বুকে কিল মারা মানুষগুলো কি আদৌ বিজ্ঞান পড়েন? আর শুধু নিজে পড়াই নয়, বিজ্ঞানের জ্ঞানকে সহজবোধ্য করে ছড়িয়ে দেয়ার কথা কি চিন্তা করেন? নিজের পরিবারে চলে আসা বোরখা বা সিঁদুরের ব্যবহার কি লজিকালি দূর করার চেষ্টা করেন? চেষ্টা করেন কি, পরিবারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আচার বিচারের সংস্কার এবং কুসংস্কার দূর করার? বিজ্ঞানমনস্ক(!) অবিশ্বাসী হয়েও যদি সুবিধাবাদী হিপোক্রেসি ধরে রাখা হয়, তবে বিশ্বাসী ধার্মিকের সুবিধাবাদী চরিত্র নিয়ে কেন এত উচ্চবাচ্য?
ধর্ম অস্বীকারকারী প্রচলিত ঈশ্বর অবিশ্বাসী মাত্রেই আমরা ঢালাওভাবে নাস্তিক বলে ফেলছি, অথচ ধর্ম অবিশ্বাসীদের আরো কিছু ফর্ম আছে যেটা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। বোধহয় সময় এসেছে এই ফর্মেশনগুলো নিয়ে পরিষ্কারভাবে কথাবার্তা হওয়ার। তাছাড়া নাস্তিকতা নিয়ে আমরা এতই উচ্ছ্বাসে থাকি যেন নাস্তিকতা ইটসেল্ফ একটা ভার্চু! ফলে অবিশ্বাসীদের মধ্যে সত্যিকারের ভার্চু আত্নস্থ করার ঝোঁকটাই কমে যাচ্ছে। নাস্তিকতা মানেই যেন এন্টি ধর্ম, এন্টি সোশাল এস্টাবলিশমেন্ট, সেক্সুয়াল লিবারালিজম, এবং ডিবেট। ব্যাস থেমে যাচ্ছে এখানেই। কিন্তু এটুকু দিয়ে সমাজের কি পরিবর্তন আনা যাবে? স্রেফ বিশেষ একটা ক্লাস্টার হয়ে বসে থাকা ছাড়া আর আত্মগরিমা ছাড়া আর কিছু দেখি না। জানা, বোঝা, সমস্ত ক্ষেত্রে লিবারালিজম, র্যাশনালিজমের চর্চা একদম হচ্ছে না। জানি না আদৌ কবে হবে। আমাদের এই নাস্তিকতার তৃপ্তি কবে শেষ হবে, কে জানে। তবে নাস্তিকদের নিজেদের জন্যই এখন উচিৎ এই আত্মতৃপ্তি থেকে বেড়িয়ে আসা।
অধুনা নাস্তিকদের চরিত্র বিশ্লেষণ করে নাস্তিকতার যে সমস্ত কারণ পাওয়া গিয়েছে তা বিভীষিকাময়।
কেউ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, কেউ আরজ আলী মাতুব্বর পড়ে, কেউ পাশের বন্ধুর প্ররোচনায়, কেউবা পরীক্ষায় ভুল করে সৃষ্টিকর্তাকে সেটা ঠিক করে দিতে বলে কাঁদতে কাঁদতেও ঠিক না হওয়ায় এ প্লাস মিস হওয়ায় নিজেকে নাস্তিক দাবী করছে। আবার পারিবারিক চাপে পড়ে “আমি সংশয়বাদী ছিলাম” বলে নাস্তিকতাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে দুবার ভাবছে না! আবার এদের আরেকশ্রেণির মধ্যে সেলিব্রেটিজম এমনভাবে গেঁথে গেছে যে তারা প্রসিদ্ধ চর্বিতচর্বণ দিয়েই কাজ চালাচ্ছেন। এ কারণেই বোধ করি নতুন কোনো ক্ষুরধার যুক্তিভিত্তিক পোস্ট তেমন একটা আসছে না।
এর যে কারণটা প্রথমে আসবে তা হলো আমাদের “কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা”র প্রবণতা। আমরা ভাবি যে ধর্মের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরলেই মানুষ দলে দলে নাস্তিক হয়ে যাবে। সে লক্ষ্যে আমাদের কেউ কেউ বহুদূর এগিয়ে এসাইলামও পেয়ে গেছেন! সমস্যা হলো আমাদের মাথায় এটা কাজ করেনা যে, সবসময় কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা যায় না। কাঁটা যখন অনেকদিন থাকার দরুণ পঁচে যায় তখন অপারেশন ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। কিন্তু এটাই আমাদের মনে থাকে না। আমরা সবার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসাকেই যথেষ্ট ভেবে বসে থাকি। একজন লোক জন্মানোর পর মুহূর্তেই আযান শুনে এবং বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ার আগপর্যন্ত ধর্মের নানাবিধ প্রয়োগ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে এবং সমাজের সর্বস্তর থেকে এটাকেই সঠিক জীবন বিধান বলে শোনে বলে তার মনে এটা ভিন্ন অন্য কোনো পথের চিন্তাও মাথায় আসে না। তাছাড়া স্কুল-কলেজে আমাদেরকে ধর্মের যাবতীয় ভালো ভালো দিকসমূহ বারংবার দেখানো হয়; ধর্মে যে হিংসাত্নক বাণী আছে সেসব ভুলেও জানানো হয় না। অন্যদিকে বলা হয় কুরানের প্রতিটা অক্ষর পড়লেই দশটা করে নেকি; পাঠক বুঝে পড়লো নাকি না বুঝে পড়লো তাতে নেকির কোনো উনিশ-বিশ হবে না! এমতাবস্থায় কে যাবে কষ্ট করে কোরানের বাংলা পড়তে; যেখানে বাংলায় পড়লে কোনো সওয়াবও নাই?
এভাবেই ধর্ম আমাদের সমাজে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। “ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুটি হাত” এভাবে নামাজের মধ্যে ক্বিরাতরূপে উচ্চারণ করলে কয়জন মুমিন বান্দা ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে!
যাহোক, দিনশেষে দেখা যায় ধর্মগ্রন্থের অসামঞ্জস্যতা দেখিয়ে মুমিনদের উসকে দেয়া ব্যতিরেকে বিশেষ কিছু হয়না। তার চাইতে বিজ্ঞান চর্চা বেশি বেশি করে করলে আখেরে ভালো ফল লাভের সুবর্ণ সুযোগ থাকে। মাদ্রাসায় পড়ুয়ারা কিন্তু কমবেশি হাদিস-তাফসির পড়ে। কিন্তু কজন মাদ্রাসা পড়ুয়াকে নাস্তিক হতে দেখেন? তাদেরকে শেখানো হয় মেয়েরা আপাদমস্তক ঢেকে চলাচলের জন্যই সৃষ্ট! কাজেই যেভাবে বলা হচ্ছে, কাঁটা দিয়ে অত সহজে কাঁটা তোলা সম্ভব হয়না। বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই অপারেশন প্রয়োজন হয়।
ইদানিং “কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা নাকি অপারেশন” ইস্যুতেও নাস্তিক সমাজ দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। দিনশেষে এসব কমিউনিটির জন্য শুভ কোনো ফল বয়ে আনবে না। এটা ভেবে সবার উচিত কিছুদিনের জন্য হলেও নির্দিষ্ট একটা নৌকায় সহাবস্থান গ্রহণ করা।
পুনশ্চ: এ পোস্টের বিপরীতে অর্থাৎ কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার পক্ষে যুক্তি কাম্য।
কৃতজ্ঞতা: অনুসন্ধানী আবাহন
আসলে নাস্তিক হতে হলে আপনাকে বিজ্ঞান বিষয়ে অবশ্যই জ্ঞান রাখতে হবে কিন্তু এর চাইতেও বেশি যেটা প্রয়জন তা হচ্ছে মানুষকে বোঝার চেষ্টা। আপনি ১০০ জন মানুষকে খুব ভাল ভাবে লক্ষ্য করুন, তাদের আচার আচরণ বোঝার চেষ্টা করুন। ব্যাস আপনি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
শর্তই যদি থাকলো তবে তাকে মুক্ত বলি কিভাবে?
মুক্তমনা হলেই যে এটা করতে হবে, সেটা করতে হবে, তা কতটুকু যৌক্তিক?
মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারাটাই কি মুক্তমনা নয়?
আমরা বলে থাকি, ধার্মিকরা শুধু ব্যাক্তিপূজারি, মূর্তিপূজারি হয়ে থাকে । কিন্তু, এখন নাস্তিকরাও সেই রকম ব্যাক্তি পূজারি হয়ে ওঠেছে । কেও তসলিমা পক্ষ, কেও বা বিতর্ক লাগায় হুমায়ন আজাদের পক্ষ নিয়ে , এখন আবার কোন কোন ব্লগে মুক্তামনাদের বলা হচ্ছে , অভিজিত পূজারি । মহানদের গুনগানে মত্ত হওয়া খারাপ কিছু না ।কিন্তু , কারো মতের উপর একদম অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করাটা, নাস্তিক হিসেবে কতটা যুক্তিযুক্ত ।
একেবারেই অযেৌক্তিক। মুক্তমনা সেই যে মুক্ত মনের অধিকারী। অার মুক্তমনের অধিকারী কখনো কারো অনুগামী হয়না।
উপরের সবার উদ্দেশ্যে:
আমার লেখাটার মূল উদ্দেশ্য বোঝাতে ব্যর্থ হওয়ায় আমি দুঃখিত। আমার লেখায় আমি “ধর্মের অসামঞ্জস্যতা দেখানো যাবে না” এমনটা কীভাবে বুঝালাম সেটাই বুঝছি না। আমার লক্ষ্য ছিলো এটা বুঝানো যে “কেবল” ধর্মের অসামঞ্জস্যতা দেখানোর যে ধারা আমরা তৈরি করছি সেটা কখনোই সঠিক রাস্তা নয়। ধর্মের অসামঞ্জস্যতার চর্চা যথেষ্ট হয়েছে। কেবল মুক্তমনাতেই এ সংক্রান্ত শত শত লেখা আছে। এখন যা হচ্ছে তা চর্বিতচর্বণ। এখন আমাদের এ চর্বিতচর্বণ কমিয়ে বেশি বেশি বিজ্ঞান চর্চা করা উচিত।
@ ঔপপত্তিক ঐকপত্য,
“কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা বা অপারেশন” এর কোনটাই সুস্থ লেখালেখির উদ্দেশ্য হতে পারেনা। ‘কিছুদিনের জন্য হলেও নির্দিষ্ট একটা নৌকায় সহাবস্থান গ্রহণ করা’ এর অর্থটা কী? ‘পাহাড়ের খুঁটি না থাকলে মানুষের ভারে দুনিয়া কাঁৎ হয়ে যাবে’ মেনে নেবো? শাফির তেরো দফায় নাকি ওলামা লীগের চৌদ্দ দফায় সমর্থন?
আমি তা মোটেই বিশ্বাস করিনা, যদিও এ অপবাদ আমার মাথার ওপরে দেয়া আছে। শুনেছি কেউ কেউ নাকি বড় অংকের বেতনও পান ইসলামের সমালোচনা করে। আমি মনে করি এটা বিশ্বাসীদের মনের দূর্বলতা প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়।
যারা এমন মনে করেন তারা মুক্তমনা কাকে বলে তা জানেন না।
অবশ্যই হয়েছে। অনেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন যা হয়তো আগে জানতেন না। ঠিক তদ্রূপ আমার আগে যে সকল মণীষীগন ধর্মের অসামঞ্জস্যতা লিখে গেছেন তাদের কল্যাণেই আমি নুতন করে ভাবতে শিখেছি নুতন করে ধর্মকে জেনেছি। কুতর্ক যারা করবে তাদের কাছে আমি যেমন ডকিংস, হকিংস, ডারুইন, হুমায়ূন আযাদ, অভিজিৎও তেমন। ইসলামী ব্লগ (সদালাপ, বাঁশের কেল্লা, সোনার বাংলা) পড়ে নতুন করে কেউ মুসলমান হয়েছে এমন নজীর বোধ হয় কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবেনা কিন্তু মুক্তমনা পড়ে অনেক বিশ্বাসী যে অবিশ্বাসী হয়েছেন তার প্রমাণ মুক্তমনাতেই আছে।
তবে এ কথা আমি নিজেও স্বীকার করি এবং প্রায় চার বছর পূর্বে বলেছিও যে, এখন কোরান হাদিস নিয়ে যা কিছু লেখা হবে তা চর্বিত চর্বণই হবে। কোরানের কোন পৃষ্ঠাই বোধ হয় বাকি নেই যা নিয়ে মুক্তমনায় আলোচনা হয় নি। এক সময় খুবই বিরক্ত লেগেছে লাগাতার একই বিষয়ে একই ধর্মের সমালোচনা বিশেষ করে কথায় কথায় মুমিন, মুসলিম বলে তিরষ্কার মস্করা করা দেখে। অন্য ব্লগে যখন টের পেয়েছি কোন হিন্দু বা অন্য ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে কেউ মুসলমানের সমালোচনা করেছে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করেছি। কিছু হিন্দু ও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ব্লগ আছে যেখানে সারা দিন মুসলমান ও মুসলমানের ধর্মগ্রন্থের বিষোদাগার করে শেষে দাওয়াত দেয় তাদের সত্য ধর্মে দীক্ষা নিতে। এরাও চরম ভন্ড মিথ্যেবাদী প্রতারক। নাস্তিক হলেই যে সত্যবাদী,মানবতাবাদী মুক্তমনা হবে এ ধারনা মানুষ কোত্থেকে পায় তারাই জানে। একজন নাস্তিক তো অশিক্ষিত চোর ডাকাত খুনী স্বার্থপর হতে পারে কিন্তু একজন মুক্তমনা মানবতাবাদী তা কোন অবস্থাতেই হতে পারেনা। লঞ্চ ডুবে, আগুনে পুড়ে, প্রাকৃতিক দূর্যোগে পড়ে কিংবা দুর্ঘটনায় পদদলিত হয়ে মানুষ মরে আর কেউ সেই দুর্দশা দেখে যদি মশকরা করে, হাসি ঠাট্টা করে, কোরান হাদিসের বাণী দেখিয়ে বেহেস্তি বলে বিদ্রুপ করে, সে নাস্তিক হতে পারে মানুষ তো নয়।
আমারও খুব ভাল লাগছে। সব সময়ই আছি নীরবে অথবা সরবে আর সাথে থাকবো ততদিন যতদিন মুক্তমনায় আছেন।
@আকাশ মালিক
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা বলতে ধর্মের অসামঞ্জস্যতা দেখিয়ে ধর্মকে কুপোকাত করার কথা বুঝাতে চেয়েছি। আর অপারেশন বলতে একেবারে গোড়া থেকে বিজ্ঞানচর্চার কথা বুঝাতে চেয়েছি। এসব শব্দমালাকে অপাংক্তেয় ঘোষণা করলেন কেনো তা বুঝে আসলো না।
“কিছুদিনের জন্য হলেও নির্দিষ্ট একটি নৌকায় সহাবস্থান” এর এককথায় অর্থ এক ছাতার নীচে আসা। আমার মনে হয়েছে এ ক্রান্তিকালটা দীর্ঘ হচ্ছে আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ায়।
এসাইলামের ব্যাপারটা বাক্যদ্বয়ের মধ্যে মূখ্য নয়; মূখ্য কাজ- অথচ আপনি গৌণ ব্যাপারটাকেই টেনে সামনে এনে মূখ্য করতে চাইছেন।
এ ব্যাপারে আরো খোলামেলা আলাপ প্রয়োজন মনে করি।
@ ঔপপত্তিক ঐকপত্য,
নাহ, তা করিনি তো। এখন তো বুঝা গেল কী বলতে চাইছেন। যে মাথা ব্যথা প্যারাসিটেমল দিয়ে সারে, সেই মাথা নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার দরকার আছে কী? ব্রেইন টিউমার হলে অন্য কথা। ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন যারা আবিষ্কার করেছেন তাদেরকে অপারেশন থিয়েটার দেখায়ে কী লাভ, তারা নিজেরাই যে কসাই। বিজ্ঞান দিয়ে এদের অপারেশন করেও কোন লাভ নেই। কথা হলো আমরা যখন যেখানে যা লাগে তাই দিয়ে ধর্মের অসারতা প্রমাণ করে যাবো, কোনটা বেশী এফেক্টিভ আর কোনটা নয় তা নিয়ে তর্ক করে সময় নষ্ট করার মা’নে নেই। আমাদের বেগম রোকেয়া, আরজ আলী মাতুব্বর যেমন প্রয়োজন, ডারউইন, হকিংসেরও তেমনি প্রয়োজন।
তা আগে বুঝিয়ে বলতে হয় না? শুধু আমি না, অনেকেই কনফিউজড হয়েছেন আপনার বাক্য চয়ণে। অনেক কিছু কথা উল্লেখ করেছেন যা ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের কাছ থেকে প্রচুর শুনেছি তার মধ্যে দুটো হলো এসাইলাম ও ইহুদী নাসারাদের বেতনভুগী দালাল। যার কোন ভিত্তিই আছে বলে আমি মনে করিনা। মুসলিম ব্যাকগ্রান্ড থেকে আসা একজন মানুষ তার স্বজাতিকে ঘৃণা করবে, স্বজাতিবিদ্বেষ দেখাবে আমি তা বিশ্বাস করিনা।
কোন আলাপকেই ব্যক্তি পর্যায়ে নেয়ার দরকার নেই, আমরা আলোচনা করি নিজ নিজ অবস্থান বা অভিজ্ঞতা থেকে দেখবেন আমরা এক নৌকায়ই আছি। অবশ্য বেশী মাথা মোটা, বিদ্যার ভারে নুহ্য, জ্ঞানের অহংকারী, দাম্ভিক কিছু মানুষ যে থাকবেনা তা তো হয় না, সকলকে নিয়েই তো সমাজ।
লেখা চলুক আলোচনা জারী থাক, আর কষ্ট করে আপন মূলবান সময় ব্যয় করে লেখাটি এখানে প্রকাশ করে আলোচনা বা তর্কের পরিবেশ বা ক্ষেত্র সৃষ্টি করে দেয়ার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ঠিক এটাই বলতে চাইছি। নাস্তিক হওয়াটা খুব সহজ। মনকে পুরোপুরি উন্মুক্ত করা, মুক্তমন, হচ্ছে কই? একটু ধাক্কা দিচ্ছিলাম
হেভি ওয়েট ব্লগার ভায়েরা ইতিমধ্যেই লেখাটির দুর্বল দিকগুলি যথাযথ চিহ্নিত করেছেন এবং বিপক্ষে মোক্ষম যুক্তি সমূহ উপস্থাপন করেছেন। লেখাটি পরে আমিও একটু বিচলিত বোধ করেছি, কারণ লেখক যাদের দিকে তীর্যক দৃষ্টি হেনেছেন, নিজেকে তাঁদেরই একজন বলে উপলবদ্ধি করি। বিজ্ঞান নিয়েই কলেজ ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি যদিও, তবে নিরেট বিজ্ঞান নয়, ফলিত বিজ্ঞান। বস্তুত হকিন্স কেন, আইনিষ্টাইনের আপেক্ষিক তত্বও বুঝি না, বোঝাতেও পারি না। কিন্তু ধর্মগ্রন্থগুলোর অসারতা এবং কপটতা উন্মোচন করার জন্য আদৌ বিজ্ঞানের প্রয়োজন আছে কি? সাধারণ জ্ঞান এবং সরল যুক্তিই বরঞ্চ এর জন্য অধিক কার্যক্ষম। ধর্মকে প্রমান অপ্রমান কোন কিছুর জন্যই বিজ্ঞান নয়। বিজ্ঞান মানুষের সহজাত এবং অবিচ্ছ্বেদ্য অংশ। ধর্ম কৃত্তিম আরোপিত ভ্রমচিন্তা। বিজ্ঞান অজানাকে জানার প্রয়াস। ধর্ম জানাকে অজানা করার উলটো প্রয়াস। বিজ্ঞান ক্রম-অগ্রসরমান একটি বিষয়, ধর্ম ক্রম-বিলীয়মান একটি সাময়িক ‘ফেনোমেনা’। মানব ইতিহাসের একটি স্বল্প সময়ের জন্য ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের পথ অতিক্রমন। একদিন মানুষ ধর্মের মোহ থেকে বের হয়ে আসবে – কিন্তু বিজ্ঞানের সাথে মানুষের বন্ধন চিরন্তন। তাই ধর্মকে কাবু করতে বিজ্ঞানের আশ্রয় নেয়া মনে হয় ‘মশা মারতে কামান দাগা’ ।- (একটু বেশী কাব্যিক হয়ে গেল যাঃ)
আকাশ মালিক ভাই,
লেখক নিজে ব্যাখ্যা দেবেন আশা করেছিলাম। আমাকেই যখন ব্যাখ্যা করতে হবে আগে ডিসক্লেইমার দিই:
এই পোস্টের প্রথম তিন প্যারা আমার লেখা এবং সেটা একটা সম্পূর্ণ লেখা ছিলো , আমার বক্তব্য ওখানেই শেষ ছিলো। আমি লিখেছিলাম অন্য ডেমোগ্রাফি, অন্য সোশাল স্ট্রাকচার, অন্য কালচারের মানুষদের জন্য। একটা এক্সপেরিমেন্টাল লেখা ছিলো, হাউ দে রিএক্ট।
পশ্চিমবঙ্গের একটা গ্রুপে এই লেখাটা দেয়ার উদ্দেশ্য ছিলো, তাদের ফ্রিডম অফ স্পিচ, থট আছে, তারা চাইলে বিনা বাধায় ফিল্ডওয়ার্ক করতে পারে। ফেসবুকে ধোঁয়া তুলে দিচ্ছে সবাই, কিন্তু ওদের সমাজে যেই প্রথাগুলো আছে মানে। সিঁদুর, শাঁখা, অভাবনীয় বাজে বিয়ের নিয়মগুলো, বলে এগুলো তো ধর্ম বা প্যাট্রিয়ার্কি নয় সংস্কৃতি। আমি দেখতে চাইছিলাম এমন একটা পোস্ট দিলে কি রিএকশন আসে। ওদের কাছে তো ফ্রিডম অফ স্পিচ বিলাসিতা। এখানে পোস্ট হিসেবে আসবে আমি জানতাম না।
আমার অংশ আমি ব্যাখ্যা দিতে পারি:
১) প্রথম প্যারায় আমার বক্তব্য এটুকুই, যে নাস্তিক হওয়া খুব সহজ, পার্টিকুলার ঈশ্বরকে বিশ্বাস না করলেই হলো। কিন্তু দ্যাট ডাজ নট মিন, যে নাস্তিক রিজিডিটি, ইনহিবিশন, ডিসক্রিমিনেশন থেকে ইনস্ট্যান্ট মুক্ত হয়ে গেলো। যদি বিপরীতটা হয়, আগে এসমস্ত ইনহিবিশন রিজিডিটি থেকে নিজেকে রাশনাল করে ফেলা যায়, এবং দেন নিজের রিয়ালাইজেশনে ঈশ্বররকে বাতিলের খাতায় ফেলা যায়, আপনি একজন মুক্তমনা নাস্তিক। শুধুই নাস্তিকতা নিজেকে মুক্ত না করে, আসলে কোনই লাভ নেই।
নয়তো
২) ইন্সট্যান্ট নাস্তিক হয়ে যাওয়ার পরে হোক না একটু বিজ্ঞানমনষ্ক। যারা লিখছে তারা, ধর্ম নিয়েই শুধু পড়ে থাকার দরকার কি? পরের ধাপে গিয়ে নিজেকে উন্মুক্ত করুক না। শুধু হাদিস নাম্বার আর আয়াতের তাফসির দেখিয়ে অসংগতি বোঝালেই কি মিটে গেলো? কেন এগুলো অসংগত কে বোঝাবে? আমরা আমাদের টার্গেট অডিয়েন্স সাধারণকে অর্ধেক মেসেজ দিচ্ছি, বাকিটা বলছি না, আবার নাস্তিক হওয়াতে বলছি বিজ্ঞানমনষ্ক অবৈজ্ঞানিক ধর্ম গ্রন্থ ঈশ্বর মানি না। নিজের ঘরেও কিছু করছি না। এত কার্টুনিস্ট, কত উৎসাহে নবী পুন্দানি কার্টুন আঁকে, কার্টুন একই সাথে এভোলুশন থিওরি নিয়েও তো আঁকা যায়, লোকের কাছে সহজে পৌঁছায়
তাছাড়া
৩) ঢালাও আমরা সবাইকে নাস্তিক বলি কেন? আরো অনেক ফর্মেশন আছে তো , এগনস্টিক, স্টইক, সিনিকাল, ডেইটি তে বিশ্বাসী, ইত্যাদি। এগুলো সবার বোঝা উচিৎ। আর নাস্তিকতা মানেই ভার্চু নয়। একতা প্রথম ধাপ মাত্র। আপনি চুপচাপ নাস্তিক হয়ে বসে থাকতে পারেন, কিন্তু আপনি কথা বলছে মানে , আপনি মেসেজ দিত্র চাইছেন। কিন্তু, আমরা কি সাধারণের কাছে পৌঁছাতে পারিছি? নিজেদের মধ্যে লিবারালিজম চর্চা করছি, ইনহিবিশন, রিজিডিটি থাকছে, তাও আত্মতৃপ্তি আম বেটার আমি নাস্তিক,। বেরিয়ে আসুন আত্মতৃপ্তি থেকে , নিজেকে মুক্ত করুন।
এর প্রেক্ষিতে বিশেষ একদল লিবারাল কি বলেন সেটাই জানার উদ্দেশ্য ছিলো
আমি কি বোঝাতে পেরেছি? প্রশ্ন করবেন প্লিজ
@ অনুসন্ধানী আবাহন,
লেখক এখন পর্যন্ত আসেন নি, অনুরুধ রইলো আপনি আপনার মতামতটা ব্যাখ্যা করুন।
@ অনুসন্ধানী আবাহন,
অনেকটা বুঝতে পেরেছি, লেখক না আসায় সব গোলেমেলে হয়ে যাচ্ছে। একটা পারসোন্যাল প্রশ করি আশা করি মাইন্ড করবেন না। আপনি কি ধর্মকারীতে মন্তব্য করেন? বহু বছর আগে জীবনে একবার ধর্মকারীতে ঢুঁ মেরেছিলাম। কোন লেখা কোনদিন দেই নি বা কোন মন্তব্যও করিনি। আজ লেখকের লেখায় আপনার নাম দেখে একটু সন্ধান করি লেখাটার উৎস কোথায়। আর এ থেকেই আপনাদের উভয়কে পেয়ে যাই ধর্মকারীতে। তারপর কোনভাবেই হিসেব মেলাতে পারছিলাম না, এই লেখাটি রিভার্স ফর্মে লেখা না কি অন্য কিছু।
ধন্যবাদ আপনাকে রিসপন্স করার জন্যে।
আকাশ মালিক ভাই,
আমি ধর্মকারীতে কমেন্ট করিনি কখনো। মানে ওখানে কমেন্ট করা না করায় কিছু এসে যায় না। আগে রেগুলার দেখতাম, থাবা বাবা আর কৌস্তভ অধিকারী তখন যুগলবন্দী চলছে। ইদানিং আর ঢোকা হয় না। “ধর্মীয় প্রশ্নের ব্যাঙ্গানিক উত্তর” ফেসবুক গ্রুপে করা কমেন্ট ওগুলো।
হ্যাঁ, রিভার্স সাইকোলজি এক্সপেরিমেন্ট ছিলো, খুব ইন্টারেস্টিং ডিবেট হয়েছিলো। ভালো ফুটেজ খেয়েছিলাম। হিট সিকিং পোস্ট।
আপনি আমাকে চেনেন, আমারব্লগে, অন্য নামে ছিলাম। কৃষ্ণচূড়ার নৈবেদ্য মনে আছে? আমাকে ঠেলে ধাক্কিয়ে লিখিয়েছিলেন।
পি.এস.
আমার একটা কমেন্ট পাবলিশ হয়েছে ১০ ঘন্টায়। একটা ১২ ঘন্টায়। ইহা হয় অতি চাপের ব্যাপার। কমিউনিকেট করাই তো মুশকিল।
@ অনুসন্ধানী আবাহন,
তো কিছু কৃষ্ণচুড়া এখানেও ছড়ান না। লেখা ছাড়ুন, প্রকাশ হউক আর না’ই হউক, সে আপন মহিমায়ই একদিন ফুটবে। পাসওয়ার্ড পান নি জেনে দুঃখ পেলাম। তবে অবশ্যই শীঘ্র পেয়ে যাবেন আশা করি, যেহেতু বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে।
@ আশরাফুল আলম,
আমার মনে হয় না ওপরের উক্তিদুটো লেখকের নিজের কথা। সম্পূর্ণ লেখাটাই পূর্বে অপরের মুখে উচ্চারিত কথাসমুহ দিয়ে লেখা।
আকাশ মালিক ভাই, আমি আছি, লেখক যদি আসেন, আর কমেন্ট যদি পাবলিশ হতে ১০ ঘন্টার কম সময় লাগে, তাহলে, আমার কন্ট্রিবিউশন ব্যাখ্যা দেয়ার একটা সুযোগ পেতে পারি
‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’ এবং ‘অপারেশন’ এ দুটো কি মিউচুয়ালী এক্সক্লুসিভ? একটা করলে আরেকটা কি করা যাবে না? কেন যাবে না?
একটি সর্বব্যাপী সাংস্কৃতিক আন্দোলন অবশ্যই প্রয়োজন। এর জন্য শুধু বিজ্ঞানচর্চা কেন; শিল্পকলার চর্চা, ইতিহাস চর্চা, সবই প্রয়োজন। এবং সেই সাথে প্রয়োজন ধর্মহীনতার চর্চা। এই শেষোক্ত চর্চাটির গুরুত্ব এতটুকু কম নয়। বরং বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে সংঘাত মাত্র জোরেসোরে শুরু হয়েছে সেখানে আরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ। মরচে ধরা লোহার ওপর রঙের প্রলেপ বুলিয়ে লাভ কী- আগে তো শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘসে ঘসে মরচেগুলো তুলে ফেলতে হবে, নাকি?
উপরের সবার উদ্দেশ্যে:
আমার লেখাটার মূল উদ্দেশ্য বোঝাতে ব্যর্থ হওয়ায় আমি দুঃখিত। আমার লেখায় আমি “ধর্মের অসামঞ্জস্যতা দেখানো যাবে না” এমনটা কীভাবে বুঝালাম সেটাই বুঝছি না। আমার লক্ষ্য ছিলো এটা বুঝানো যে “কেবল” ধর্মের অসামঞ্জস্যতা দেখানোর যে ধারা আমরা তৈরি করছি সেটা কখনোই সঠিক রাস্তা নয়। ধর্মের অসামঞ্জস্যতার চর্চা যথেষ্ট হয়েছে। কেবল মুক্তমনাতেই এ সংক্রান্ত শত শত লেখা আছে। এখন যা হচ্ছে তা চর্বিতচর্বণ। এখন আমাদের এ চর্বিতচর্বণ কমিয়ে বেশি বেশি বিজ্ঞান চর্চা করা উচিত।
বিজ্ঞান নিয়ে লেখা পড়া করলেই বিজ্ঞন মনষ্ক মানুষ তৈরী হয় না । সমাজ এখন বিজ্ঞান চাচ্ছে বিজ্ঞানবাদিতা চাচেছ না । বিজ্ঞান ও যুক্তি মনষ্ক মানুষ তৈরী করেতে হলে ধমের অসঙ্গতি তুলে ধরতে হবে বেশী বেশী।
এ ধরণের স্টেরিওটাইপিং না করলেই ভাল। ইসলামে নারীর অধিকার পুরুষের চেয়ে কম, কোরান থেকে সেটা দেখিয়ে দেওয়াটা নিশ্চয়ই খিস্তি নয়! অভিজিত রায় ‘বিজ্ঞানময় কিতাব’ প্রবন্ধে কোরানের অবৈজ্ঞানিক ধারণাগুলো দেখিয়েছেন কারো প্রতি একটুও অসন্মান না করে, সেইটাও নিশ্চয়ই খিস্তি নয়। ধর্মগ্রন্থগুলো একেকটা বিষবৃক্ষ, কাজেই নাস্তিকদেরকে সেগুলোর অসামঞ্জস্য মানুষকে বলতেই হবে। বিজ্ঞান পড়ুন, বিজ্ঞানমনস্ক হোন, কিন্তু ধর্মের সাথে লুকোচুরি করে সমাজ পরিবর্তন করতে পারবেন না। সমস্যার গোড়াকে উপেক্ষা করে বিজ্ঞানচর্চা করলে যা হবে তা হলো, বুয়েটে এবং নর্থ সাউথে আইসিসের ভবিষ্যত সৈন্যদের জন্ম হবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক হবেন হিজবুত তাহরীরের কর্মী (এগুলো বানিয়ে বলা কথা নয়)।
এই মন্তব্যে বিস্মিত হলাম। আহতও বলতে পারেন। যেন শখে লোকে এসাইলাম নিচ্ছে। জাকির তালুকদারের কথা মনে পড়ে গেল। যাই হোক, মানুষকে দলে দলে নাস্তিক বানানো আমাদের উদ্দেশ্য কি? মোটেও তা নয়। সেক্যুলার সমাজ/রাষ্ট্রই আমাদের লক্ষ্য, যেখানে ধর্ম বা ধর্মহীনতা নাগরিকের ব্যক্তিগত ব্যাপার মাত্র। রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকে না, এবং সেখানে রাষ্ট্র বৈষম্যমূলক আচরণ করে না কারো প্রতি। আইনের শাসন থাকলে এবং সেক্যুলার সরকার সব নাগরিককে এক চোখে দেখলে ধর্ম/নাস্তিকতা বড় ইস্যু নয় কখনোই। কেউ যদি কোন কিছুতে বিশ্বাস করতে চায়, সেই বিশ্বাস অযৌক্তিক হলেও বিশ্বাস করার অধিকার তার আছে। কিন্তু সেই বিশ্বাস যেন অন্যকে কোনভাবেই সমস্যায় না ফেলে কিম্বা ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
আপনার প্রথম পয়েন্ট নিয়ে কিছু বলার আছে।
এখানে একটা জেনারেল নোশন তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। ধর্মের অসংগতি তুলে ধরলেই কাজটা শেষ হলো না, পরের ধাপ, অসংগত কেন? বিজ্ঞানমনষ্কতা ছাড়া পরের ধাপে কি করে? শুধুই ধর্মগ্রন্থ আর নিজস্ব রিয়ালাইজেশনে আসা অসংগতি, শুধু এটুকুই? পরের ধাপ কেন নয়?
@আশরাফুল আলম
প্রথম কোট করা অংশের ব্যাপারে:
আজকাল ফেসবুকে যা দেখছি সেসব দেখে বিরক্ত হয়ে এমনটা বলা হয়েছে। যদিও ঢালাওভাবে নাস্তিক শব্দটা ব্যবহার বালখিল্য আচরণ হয়েছে।
দ্বিতীয় কোট করা অংশের ব্যাপারে:
আমি এখানে “সে লক্ষ্যে” ব্যবহার করেছি। অর্থাৎ এসাইলাম পাওয়া-না পাওয়াটাকে আমি গুরুত্বারোপ করিনি। সুতরাং আপনার আহত হওয়াটা অবান্তর।
পাঠশালা থেকে ইউনিভার্সিটি, পঞ্চম শ্রেণী থেকে পি এইচ ডি বিজ্ঞানে সয়লাব, তা পড়ে নাস্তিক হলো কয় জন? পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র ফারাবী, নাফিসে ভরে গেল দেশটা। তার চেয়ে বরং ধর্মগ্রন্থের অসামঞ্জস্যতা দেখিয়ে দিলে বিজ্ঞান না পড়ুয়া অনেক নাস্তিক পাওয়া যেতে পারে। আমি তো কোরান পড়েই অবিশ্বাসী হয়েছি। “ধর্মগ্রন্থের অসামঞ্জস্যতা দেখিয়ে দেয়া” এর অর্থ মুমিনদের উসকে দেয়া নয়। ধর্ম অন্যান্যদেরও আছে, মুমিনদের জ্বলে কেন, চুলকানিটা শুধু তাদের কেন হয় সেটা তারাই জানবে ভাল।
মানুষ ধর্মগ্রন্থ পড়েই নাস্তিক হয়, আস্তিক হয় ধর্মগ্রন্থ না পড়ে। সব চেয়ে বড় কথা কাউকে নাস্তিক বানানোর লক্ষ্যে ধর্ম নিয়ে লেখালেখি হয় না, বরং সত্যটা প্রকাশ করাই আসল উদ্দেশ্য। মানুষ যখন জানতে পারবে, বুঝতে পারবে যে, সকল ধর্মগ্রন্থের লেখকগণ ছিলেন জগতের শ্রেষ্ট ভন্ড, মিথ্যুক, প্রতারক তখন তারা বুঝতে পারবে, কেন সকল ধর্মগ্রন্থ ঘৃণা-বিদ্বেষ, খুন-হত্যা,মার মার কাট কাট বাণীতে ভরপুর। তখন ঐ ভন্ডদের মিথ্যে প্রলোভনে পড়ে একজন বুদ্ধিমান যুবক নিজের বুকে বোমা বেঁধে আত্মহত্যা করতে কিংবা একজন মানুষের পিঠে চাপাতি বসাতে দ্বিতীয়বার ভাববে।
@আকাশ মালিক
আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
//পাঠশালা থেকে ইউনিভার্সিটি, পঞ্চম শ্রেণী থেকে পি এইচ ডি বিজ্ঞানে সয়লাব, তা পড়ে নাস্তিক হলো কয় জন?//
লেখার সময় এ ব্যাপারটা যে মাথায় আসেনি তা নয়। কিন্তু এটা আমি ধর্তব্যের মধ্যে নেইনি কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। আমরা পড়া গলাধঃকরণ করাই, সেই অর্থে শেখাই না। আর আমার চাওয়া “বিজ্ঞানচর্চা”; মুখস্ত কোয়ান্টাম ফিজিক্স নয়।
হ্যাঁ, আমি কিন্তু ধর্মের অাগল খুললে কিছু হয়না তা বলিনি বরং বলেছি “বিশেষ” লাভ হয়না। আপনি নিজেও তো ব্লগে ধর্মের অসামঞ্জস্যতা কম প্রকাশ করেননি। কুতর্ক ছাড়া বিশেষ কি লাভ হয়েছে?
অ: ট: আপনাকে অনেকদিন পর আমার ব্লগে পেয়ে খুব খুব ভালো লাগছে। ভেবেছিলাম ভুলে গেছেন হয়তো!
আমার কিছু মডারেট ধার্মিক বন্ধুর মতে নাস্তিক হতে হলে আগে জানতে হবে, বিজ্ঞান বুঝতে হবে। তারপরে ধর্মরে ডিসকার্ড করা যাবে, নাস্তিক হওয়া যাবে। কিন্তু কেন? প্রায় শতভাগ ধার্মিক তার বাপের ধর্ম পালন করে যাচ্ছে আজীবন – এই কথাটুকু বুঝলেই নাস্তিক/অ্যাগনোস্টিক হওয়া যায়। যে আজকে মন্দিরের প্রতিমা ভাংতেছে সে-ই হয়তো হিন্দুর ঘরে জন্মাইলে গরুখোর কোপাতে বের হতো। এই চিন্তাগুলো করতে কি বিজ্ঞান ভেজে খাওয়া লাগে? বরং এই ধরণের ধারণা এলিটিস্ট বলে মনে হয় যে ডারুইনিজম, বিগ ব্যাং না বুঝলে নাস্তিক হওয়া যাবে না। সুতরাং শুধু শিক্ষিত জ্ঞানী-গুণী মানুষজন নাস্তিক হইতে পারবে, বাকিরা আল্লার নাম নিয়া হালচাষ করবে।
শ্রী ইবনে, আপনার সাথে সহমত। চার্বাকরা নাস্তিক ছিলেন কিন্তু ডারউইন পড়েন নি। আমার বক্তব্য পড়া সবসময়তেই না পড়ার থেকে ভালো কিন্তু সব কিছু না পড়লে বা না পড়ে ওঠা অবধি ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখতে হবে এই আবদার এ আমার প্রত্যয় হোয় না। আর যে যে বিষয় গুলো লেখক পড়ার কথা বলেছেন তার অনেক গুলি-ই অত্যন্ত জটিল ওই বিষয়ে পূর্ব শিক্ষা না থাকলে পড়া আদৌ সম্ভব নয়। বিবর্তন বাদ আমার পক্ষে পড়া সম্ভব কিন্তু কস্মোলজিতে আমি কুপোকাত। রিচার্ড ডকিন্স একদা বলেছিলেন যে আমরা কেবল সাধারন জ্ঞান দিয়ে থিওরেটিকাল ফিজিক্স বুঝতে পারব না। সেটি সত্য। কিন্তু তার মানে কি এই যে “অর্থাৎ আমাকে আস্তিক হয়ে থাকতে হবে?”
কোথায় উল্লেখ আছে লেখার মধ্যে এমন কথা?
যেটুকু লেখায় উল্লেখ আছে, সেটুকু উদ্ধৃতির মধ্যে আটকানো।
আপনার কোট করা অংশের সাথে এটুকু সাথে না পড়লে সঠিক ইন্টারপ্রিটেশন হবে বলে মনে হয় না।
@ইবনে ফজল
আমার পোস্টটি আম নাস্তিকদের উদ্দেশ্যে ছিলোনা। পোস্টের কোথাও কি লেখা আছে ডারউইনবাদ, রিচার্ড ডকিন্স পড়া কিংবা আপনার ভাষায় “বিজ্ঞান ভেজে খাওয়া” নাস্তিকতার শর্ত? অনলাইনে যাদের আমরা “নাস্তিক একটিভিস্ট” হিসেবে জানি তাদের তর্কের স্বার্থে বিজ্ঞান বিষয়ক সম্যক জ্ঞান প্রয়োজন নয় কি?
সহমত, আমিও মনে করি নীরব নাস্তিকতার কোন মানে হয়না। সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ভিত্তিক যুক্তিবাাদী চিন্তাধারার প্রচলন সত্যিই অনেক জরুরী।
এই লেখাটি প্রাসঙ্গিক মনে হলে পড়তে পারেন। নীরব নাস্তিকতা দিয়ে আসলে কিছু বদলায় না।
কোন কারণে লিংকটা আসছে না। আবার চেষ্টা করলাম। লেখাটার নাম ‘নীরব নাস্তিকতা এবং লাকুম দ্বীনুকুম-এর কূটচাল’
https://blog.mukto-mona.com/2015/10/02/47767/