কোরবানির বিধান হিসেবে প্রচলিত যে গল্পটি সকলেরই জানা তা হল, হজরত ইব্রাহিম আঃ (স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে) আল্লাহর নির্দেশে তার প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল আঃ কে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করার জন্য উদ্যোগ নিলেন। আল্লাহতা’লা তার এই প্রভূর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে খুশি হয়ে তার পুত্রের স্থলে একটি পশুকে স্থাপিত করেন। আর সেই থেকেই আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করার রেওয়াজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে সেটি হতে হবে গৃহপালিত পশু; যার সাথে একটা মায়ার বন্ধন তৈরি হতে হবে, নচেৎ সেটি কোরবানি হবেনা। অর্থাৎ, সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটিই আল্লাহর নামে উৎসর্গ করতে হবে। পশু জবাই এখানে প্রতিকী আয়োজন মাত্র, এর বিশেষত্ব কিম্বা গুঢ়রহস্য খুঁজলে এটি সহজেই অনুমেয় যে এই পশু কোরবানির মানে শুধু “খাও দাও ফুর্তি কর নয়”, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে কোন বিশেষ এক উদ্দেশ্য সাধনের কথাই বলা হয়েছে।
কোরবানি শব্দের অর্থ ত্যাগ, আর এর উদ্দেশ্য নৈকট্য লাভ। এই নৈকট্য লাভ, স্রষ্টার সাথে তার সৃষ্টির, আত্মার সাথে আত্মার, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের, মানুষের সাথে মানুষেরও। মানুষ ত্যাগ করবে তার স্বার্থ-লোভ-মোহ-মায়া-ক্রোধ মানুষের তথা সমাজের প্রয়োজনে। আর তখনই পৃথিবীতে নেমে আসবে স্বর্গ। হবে এই ধরণী সকল মানুষের নির্মল আবাসভূমি। যারা বিশ্বাসী তারা এই মতের সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন না বলেই আমি বিশ্বাস করি।
ধর্মসংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ গবেষণা না করেই বলা যায় একসময় সমাজে স্থিতিশীলতার প্রয়োজনেই ধর্ম আবির্ভূত হয়েছিল। পৃথিবী সৃষ্টির আদিলগ্নেও মানুষ যখন বনে জঙ্গলে বসবাস করত তখনও তাদের মধ্যে খুব প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম না থাকলেও একধরনের ধর্মবোধ ছিল। মানুষ সূর্য, অগ্নি, পাহাড়-পর্বত কিম্বা বড় কোন গাছকে তাদের দেবতা জ্ঞান করত, পূজো দিত, প্রণাম জানাত, শ্রদ্ধায় মাথা নোয়াত । প্রকৃতিতে টিকে থাকার সংগ্রামে যখনই সমস্যাগ্রস্থ হয়েছে মানুষ, নিজেকে কোন এক অলৌকিক শক্তির কাছে সমর্পণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছে । আর তাই নিজেদের কল্পনার জগতেই তৈরি করেছে ঈশ্বর-ভগবান-দেবদেবী।পরবর্তীতে সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে ধর্মও নিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, জায়গা করে নিয়েছে মানুষের জীবন প্রনালীতে, সামাজিক রীতি-নীতি, সংস্কার ও সংস্কৃতিতে।
দুঃখজনক হলেও একথা সত্যি যে, যুগে যুগে সময়ের দাবিতে বদলেছে সমাজের অনেক আচার-প্রথা, নিয়ম-নীতি । কিন্তু ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ, অন্য ধর্মের প্রতি বিষোধগার, নিজ ধর্মের মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠায় অন্যের প্রতি অন্যায়, অত্যাচার, অবমাননা, অসম্মান নিয়ে মানুষের নিরলস পরিশ্রম আজও একই জায়গায় একইভাবে অটুট রয়েছে। সকল ধর্মে যেমন কিছু ভালো ভালো নীতিকথা, শান্তির-সৌহার্দ্যের বাণী রয়েছে তেমনি কিছু অযৌক্তিক, অসামঞ্জস্য, অবাস্তব ও হেয়ালীপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। ধর্ম যখন সমাজে সংহতি অর্জনের প্রতিষেধক; তখন এই অযৌক্তিক, অসামঞ্জস্য ও অবাস্তব বিষয়সমূহ জন্ম দিচ্ছে জিঘাংসা, পারস্পারিক ঘৃণা-বিদ্বেষ-যুদ্ধ আর কলহ; যা সেই প্রতিষেধকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ! ধর্মের ফসল ঘরে তুলতে গিয়ে সমাজ এখন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নিদারুনভাবে আক্রান্ত! ধর্মের আফিমে আসক্ত হয়ে কেবল স্রষ্টার নৈকট্য লাভের আশায় অন্ধের মত ছুটছে মানুষ।
খুব খোলা চোখে দেখা যায়, প্রায় গত এক দশক ধরে কোরবানি ধর্মীয় আবরণ ও আভরণে এক হাল ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। যাকে হালের নারীদের হিজাবি ফ্যাশানের সাথে তুলনা করাই যুক্তিযুক্ত । বাংলাদেশের সামর্থ্যবান মানুষেরা কোরবানিকে ঘিরে এক বিশাল শো-ডাউনের সম্মুখ লড়াইয়ে নামেন যা একধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতার নামান্তর । যা ধনবানদের অর্থের দম্ভ প্রকাশ করে, দূর থেকেও কানে বাজে ধনিক শ্রেনীর কাঁচা টাকার ঝনঝনানি। এক একটি গরুর দাম দুই/তিন কিম্বা পাচ লাখ টাকা, ক্ষেত্র বিশেষে আরও বেশিও। পশু ক্রয় থেকে শুরু করে এই আয়োজনের পরবর্তী সকল স্তরে ঈশ্বরের নৈকট্যলাভ কিম্বা ত্যাগ বিষয়টি যে কী ভীষণভাবে অনুপস্থিত সেটা খুব বেশি বিচার বিশ্লেষণ না করেই বলা যায়।
খুব সঙ্গত কারণেই একটি প্রশ্ন এসে যায়, কোরবানির উদ্দেশ্য যদি স্রষ্টার খুশি কিম্বা তার প্রতি আনুগত্য অর্জনই মূখ্য হয় তবে এইসব ধনবানদের আয়ের উৎসসমূহ কী কী? সেগুলো আল্লাহর বিধান এবং রাষ্ট্রীয় আইনের ফাঁক ফোঁকর গলিয়ে কতটা স্বচ্ছ আর সহজ পথে হচ্ছে? অসৎ উপায়ে রোজগারের কোরবানি আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবেনা সেকথা তারা পরিস্কারভাবেই জানেন, কিন্তু মানেন কী? যদি অন্তরে এটা ধারণই না করেন তবে এত বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে এই কোরবানি দেবার আসল উদ্দেশ্য শুধুই কি ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এইসব ধর্মপ্রাণ মোমিনদের অনেকেই কোরবানি ঈদের সময়ে বড় বড় ডিপ ফ্রিজ কেনেন। উদ্দেশ্য, দীর্ঘদিন ধরে এই মাংস দিয়ে ভুড়িভোজ! অথচ, তাদেরই প্রতিবেশি, অসহায়-গরিব বস্তিবাসী এক টুকরো মাংসের জন্য তাদেরই দরজা থেকে ঘাড় ধাক্কা খেয়ে ফিরে যায় । বছরে একবারও মাংস কিনে খাবার সামর্থ হয়না যাদের, পারেনা জোটাতে মাংস রান্নার তেলমশলা । এই কোরবানির মাংসে তাদের অধিকার কতটুকু? কিম্বা ওইসব মোমিন মুসলমানদের বাড়িতে যারা গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত আছে তাদের ভরণপোষণ, চিকিৎসা, কাপড়চোপড় ও বেতন ভাতা প্রদানে কতটুকু ন্যায্যতা পায় তারা? আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে কোন প্রকার ত্যাগ নেই সেখানে, নেই স্নেহ-ভালবাসার কোন সম্পর্ক; নেই ন্যায়-অন্যায়-মানবতাবোধ; আছে কেবল নিষ্ঠুরতা! তাই একথা বলতে দ্বিধা নেই, এই আড়ম্বরপূর্ণ পশু জবাইয়ের মধ্যে ত্যাগের মহিমা লুকিয়ে নেই, সেটি থাকে মানুষের প্রতিদিনের জীবনাচরণে, বিশ্বাসে আর কর্মে।
এবারে দৃষ্টি ফেরানো যাক কোরবানির পশুর হাট ও পশু জবাই পরবর্তী পরিচ্ছন্নতার দিকে; ঢাকা শহরের কিছু উল্লেখযোগ্য রাস্তা বাদ দিলে প্রায় সমস্ত শহর ধরেই গরুর হাট। কোরবানির প্রায় ১০/১৫ দিন আগে থেকে শুরু হয়ে চলে ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত । আর এই হাটের জন্য মেগাসিটি খ্যাত আমাদের প্রিয় রাজধানী শহরে কোন নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ নেই। এই হাট চলাকালীন শহরের ট্রাফিক অবস্থা, পশু খাবারের উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য সব মিলিয়ে শহরটি নতুন রূপে সজ্জিত হয়; যাকে একটি বড় আকারের দুর্গন্ধময় নোংরা ভাগাড় বললেও যথেষ্ট বলা হয়না । এর পরে জবাই পরবর্তী পশুর বর্জ্য-মল-মূত্র, রক্ত-হাড়-হাড্ডি আর আবর্জনার স্তূপে ঢেকে থাকে রাস্তাঘাট, ফুটপাতসহ শহরের সব অলিগলি । নগরবাসিকে তখন এই আবর্জনা আর দুর্গন্ধময় পরিবেশে অসহনীয় হয়ে বসবাস করতে হয়। প্রশাসনের উদ্যোগে ময়লা পরিস্কারের ব্যবস্থা সে তো দূরাশাই (!)(?)।
সর্বোপরি, আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে কোরবানির হালফ্যাশন! ফেজবুক এখন সামাজিক সকল যোগাযোগের অনন্য মাধ্যম। সুতরাং কোরবানির পশুর গায়ে রংবাহারী পোশাক পরিয়ে, মালা গলিয়ে, স্বপ্নিল, বর্ণিল ঢঙয়ে সেলফি, গরুলফি তুলে দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না আধুনিক ধর্মপ্রাণেরা, অতঃপর গরু কাটার দৃশ্য, রক্তের ফিনকি দেওয়া, যন্ত্রণায় ছটফট করা গরুর ছবিও ফেজবুকে পোস্ট দিচ্ছেন মহানন্দে । আর এসব যে কেবল যদু মধুরাই করছে তা নয়; এদের মধ্যে অনেক বিশিষ্ট ভদ্রলোকও রয়েছেন।
কোরবানিকে উৎসব বলতে আমার কোন আপত্তি নেই; তবে ধর্মীয় তকমা লাগাতে গেলেই বাড়ছে বিপত্তি । বছরব্যাপি ভুড়িভোজের লক্ষ্যে পশু নিধন উৎসব এটি। আমরা সারা বছরই নীরিহ অবোধ প্রাণীদেরকে হত্যা করি নিজেদের উদর পূর্তির তাগিদে। তবে, যখন ধর্মের নামে জবাই করি তার মর্যাদা আর গুরুত্ব বেড়ে যায় বহুগুণে । ধর্মের বিধান দিয়ে আমরা নীরিহ পশু জবাই করি আর উল্লাস করি; কিন্তু করিনা, করতে পারিনা মনের পশুকে জবাই; মন থেকে হিংসাদ্বেষ মুছে ফেলে মানুষে মানুষে বিভেদ ভুলে গড়তে পারিনা ভালোবাসার পৃথিবী । তাই এখনো শিশু আয়লান ভাসে সমুদ্র সৈকতে, মায়ের গর্ভের শিশুর চোখের আলো নিভে যায় ভূমিষ্ঠ হবার আগেই, রাজনদেরকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয় বড় অসময়ে, বাঁচার আকুতি নিয়ে লড়াই করে রাকিবেরা। ধর্মের দোহাই দিয়ে এখনো হচ্ছে ধর্ষণ, হচ্ছে খুন-হত্যা, আর সকল প্রকার বর্বরতা!
@ নিমো, পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
হিব্রু বাইবেলের ওই আব্রাহামের ছেলে উৎসর্গ করার গল্পটি খুব ই অমানবিক। এটিকে আজকের কোন মূল্যবোধের মাপকাঠিতেই সমর্থন করা যায় না। আমি কাউকে খুশি করতে চাই তার জন্য আর একটি প্রাণ আমি কাউকে ঘুষ দিতে পারি না। এটা চূড়ান্ত বর্বরতা। —- একমত।
@ Bijon Gosh, গঠনমূলক মন্তবব্যের জন্য ধন্যবাদ।
খুব ভালো লেখা। লেখিকাকে ধন্যবাদ। যদিও বিষয়টি পুরনো তবুও এখনো প্রাসঙ্গিক। দেবতার উদ্দেশ্যে পশু বলি দেয়া হিন্দু ধর্মেও আছে সুধু না আরো বিভত্স ভাবে আছে। কারণ হিন্দু ধর্মে নর বলীও দেয়া হয় । .আজকেই টাইমস অফ ইন্ডিয়া কাগজে খবর আছে অন্ধ্র প্রদেশের কোনো এক স্থানে একটি মানব শিশুকে মাকালির কাছে বলি দেয়া হয়েছে। সংবাদটি পড়ে ঘৃণায় যন্ত্রনায় কুকড়ে উঠেছি। এ সবই করা হয়েছে ধর্মের নাম। মাকালিকে খুশি করার জন্যে। অনেকে বলবে ‘ইহা সহি হিন্দুত্ব নয়’। এটা ঠিক কথা হিন্দু ধর্মে কোনো গ্রন্থ নেই যেটিতে এই নির্দেশ দেয়া আছে। তবুও এটা ধর্মের নাম করা হয়েছে এ কথা অস্বীকার করা যায় কি ? আমি ব্যক্তিগত ভাবে একটা বলি দেখেছিলাম। একটি ছাগ শিশুকে বলি দেওয়ার সময় ঢাক ঢোল কাসর ঘন্টা বাজিয়ে ছাগ শিশুর কান্না চাপা দেওয়া হয়েছিল। সেদিন থেকেই বলির সম্পর্কে ঘৃনা জন্মিয়েছে।
@ অনিন্দ্য ,
“সন্তান হননের আদর্শের প্রতিকী প্রথার মধ্যে দিয়ে যে স্বর্গ এ পৃথিবীতে নেমে আসে সে স্বর্গ কি সত্যি আমরা চাই? আমায় মার্জনা করবেন আমি অন্তত চাইনা।“
আপনার সাথে আমি একমত। আমিও চাই না।
তবে খাদ্যের জন্য পশু হত্যা সম্পর্কে আমি একটি ভিন্ন ধারণা পোষণ করি। গাছের প্রাণ আর অন্য পশুর প্রানের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমাদের ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য অনুভূতি দ্বারা যেটা অনুভব করা যায় সেটাই সুধু আমাকে যন্ত্রণা দেয়। এর বেশি কিছুকে অনুভূতির মধ্যে ধরলে জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমাদের শরীর মধ্যে প্রচুর জীবানু আছে যাদের মৃত্যু না হলে আমরা মারা যাব। সে গুলিকে হত্যা আর পশু হত্যাকে এক করলে চলে না। প্রতিবার যৌন মিলনের সময় ২/৩ কোটি শুক্রাণু একটি মাত্র ডিম্বানুর খোজে চলে মাত্র একটি প্রাণ সৃষ্টি করে বাকি গুলো মারা যায়। এই শুক্রানুর মধ্যে প্রানের সম্ভবনা আছে। এই ভাবে ভাবলে জীবন ধারণ অসম্ভব। তাই আমার মতে যেগুলো সাধারণ ভাবে যেগুলি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সেগুলিই হত্যা হিসাবে ধরা উচিত।
@ অনিন্দ্য, পড়ার জন্য ধন্যবাদ! আমিও আপনার সাথে একমত; এই লেখার শেষ প্যরাটি লক্ষ্য করলে দেখবেন আমিও ধর্মের নামে জীব হত্যাকে সমর্থন করিনি। যেটুকুন সমর্থন মনে হয়েছে ওটা স্যটায়ার; আমি মনে করি, মানুষই ঈশ্বর, মানুষেরই মাঝে ভগবান; যারা পুণ্য অর্জন করতে চায় তারা মানুষের সেবায় (যাদের প্রয়োজন) নিবেদিত হলেই পূণ্য অর্জন সহজতর হয়।
ভালো লেখা।উপসংহারে আপনি যে হত্যাকে ঘিরে উল্লাসের বিরোধীতা করেছেন সেটি খুব-ই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আপনার সাথে একমত যে পশু হত্যাটি আসলে সমস্যা নয়, সে যাই খাব তাই কিছুর না কিছুর হত্যা (গাছপালা-শাক-সব্জি)হবে।অনেকে বলেন গাছপালার ব্যথা লাগে না প্রানীর লাগে…তারা সেন্টিনেন্ট ইত্যাদি কিন্তু আমার প্রশ্ন হ’ল প্রান প্রান-ই। তার সেন্টিনেন্স থাকুক আর নাই থাকুক। হত্যা হত্যাই। ফলে কোন না কোন হত্যা ছাড়া আমাদের অস্তিত্বই থাকে না। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। কিন্ত হত্যাকে ঘিরে উল্লাস বা উদ্যাপনটা বর্বর, ঘৃন্য। এটা কেবল ইসলাম এ নয় হিন্দু ধর্মের বলির খত্রেও একি কথা প্রজোয্য।
তবে একটি জায়গায় আপনার থেকে আমি ভিন্ন মত পোষন করি। আমি নৃতাত্বিক গবেষক নই সামান্য পড়ে শুনে মনে হয়েছে যে সব ট্রাইব মূলত পশুপালনের ওপরে নির্ভরশীল তারা ধর্মের মাধ্যমে পশু হত্যা করে থাকে। সে ভারতের বৈদিকযুগে আর্য নামক ট্রাইবও না পশুর উৎসর্গ করত। কিন্তু হিব্রু বাইবেলের ওই আব্রাহামের ছেলে উৎসর্গ করার গল্পটি খুব ই অমানবিক। এটিকে আজকের কোন মূল্যবোধের মাপকাঠিতেই সমর্থন করা যায় না। আমি কাউকে খুশি করতে চাই তার জন্য আর একটি প্রাণ আমি কাউকে ঘুষ দিতে পারি না। এটা চূড়ান্ত বর্বরতা। ও অপ্রেশান। যেমন লট্ সোডমে করেছিলেন। তিন এঞ্জেল কে বাচাতে নিজের কুমারী মেয়েদের ধর্ষিতা হতে পাঠিয়ে দিলেন! এটা কোন ধরনের লয়াল্টি?এটি কোন ধরনের পিতৃত্ব? কোন ধরনের মনুষ্যত্ব? কীসের শান্তি এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়? সন্তান হননের আদর্শের প্রতিকী প্রথার মধ্যে দিয়ে যে স্বর্গ এ পৃথিবীতে নেমে আসে সে স্বর্গ কি সত্যি আমরা চাই?আমায় মার্জনা করবেন আমি অন্তত চাইনা।
আরজ আলী মাতুব্বরের এই লেখাটা আপনার লেখাকে সমর্থনও করে আবার বিরোধীতাও করে।
@ বিপ্লব কর্মকার, ধন্যবাদ ।