একসময় বাংলাদেশে ‘সায়েন্স ওয়ার্ল্ড’ নামে অসাধারণ একটা ম্যাগাজিন ছিল। স্কুলে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ম্যাগাজিনটি বিক্রি করতো আর আমি বেশিরভাগ সময়ই প্রথম কাস্টমার ছিলাম। প্রথম কাস্টোমার না হলেও আমি প্রথম পাঠক অবশ্যই হতাম। সেটা পড়তে গিয়েই অভিজিৎ রায়ের সাথে দেখা।
তখন ২০০৬ সাল। তখনও আমাদের মফস্বলে ব্লগ তো দূরের কথা ইন্টারনেট ব্যবহার মানেই ছিল কয়েক কিলোবাইটের ছবি-রিংটোন ডাউনলোড করা। তাই ব্লগে না, অভিজিৎদার লেখার সাথে ঐ ম্যাগাজিনেই আমার পরিচয়। তার লেখা প্রথম পড়া প্রবন্ধ ছিল “ইনফ্লেশন থিওরিঃ স্ট্যান্ডার্ড বিগ ব্যাং মডেলের বিদায় কি আসন্ন”?
এই লেখা পড়ার পর মহাবিশ্ব সম্বন্ধে জানার আগ্রহ জন্মায়। কিন্তু মফস্বলে আর কোনো সোর্স না থাকায় একসময় এই আগ্রহে ভাটা পড়ে। ওখানকার বাজারে যে বিজ্ঞানের বইগুলো ছিল লুকিয়ে এক পাতা-দুই পাতা করে পড়া শেষ হয়ে যায়। একসময় ম্যাগাজিনটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে লেখাটি আমার কাছে থেকে যায়। এস.এস.সিতে রেজাল্ট খারাপ করার পর বাইরের বই পড়া কমিয়ে দেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার পর আবার আরেক বন্ধুর মাধ্যমে অভিজিৎ রায়কে আবিস্কার করি। এবার আরো বিস্তৃত, আরো বিশালভাবে। ৬-৭ দিনের মধ্যেই রাত জেগে অভিজিৎ রায়ের সকল ব্লগ পড়া শেষ করে ফেলি। স্কুল জীবনের অনেক পাজল সল্ভ করি। কিন্তু এতে দাঁড়িয়ে যাই ‘অন্তিম প্রশ্নের মুখোমুখিঃ কেনো কোনো কিছু না থাকার বদলে কিছু আছে’। এরপর থেকে ছুটে চললাম প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে। এখনও খোঁজে চলেছি সেই উত্তর। এর কোনো তল নেই। তবে একটা কথা জানি দাদার লেখা না পড়লে হয়তো আজ এরকম পাগলের মত উত্তর খোঁজে যেতাম না। যতটুকু জেনেছি তার থেকেও বেশি পড়তে উৎসাহিত হয়েছি তার লেখায়। তাই আমি সব পড়েছির দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি! তার জন্মদিনের শেষ প্রহরে আজ তাই তাকে স্মরণ করি।
আপনার মতো এরকম অসংখ্য জনের মধ্যে অভিদা এই জ্ঞান অর্জন ও সত্য জানার তীব্র পিপাসা জাগিয়ে দিয়েছেন।
হুম। আসলে আমাদের মধ্যেই দাদা বেঁচে থাকবেন।