[ প্রাক-ধারণাঃ এই লেখাতে আমরা জানতে পারবো রবীন্দ্রনাথের বাঙলা ভাষা বিরোধিতা, ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ এবং রবীন্দ্রনাথের যুক্তিতর্ক, ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও পুস্তিকার ভূমিকা, পূর্ব পাকিস্তানের জনক জিন্নাহর ঐতিহাসিক ভুল, ভাষা সৈনিক মতিনের অভূতপূর্ব প্রতীবাদের কথা, ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবর রহমান এবং গোলাম আজমের ভূমিকা, ভাষা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে এক নীরব কর্মীর কর্মযজ্ঞ; বিতর্কিত আলোচনার মাঝে থাকবে- ভাষা শহীদরা আসলেই কি ভাষা শহীদ, তাঁরা সবাই কি আন্দোলনের কর্মী ছিল, ছাত্রদের ভাষা আন্দোলনের কারন কি, শুধুই কি ভাষাপ্রেম- নাকি অন্য বিষয়ও ছিল, ভাষা দিবস কেন আটই ফাগুণ না হয়ে একুশ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় ইত্যাদি নানা প্রশ্নের ছোট ছোট উত্তর।]
মানুষ নিজেকে প্রাণী জগৎ থেকে আলাদা করেছে ভাষা দিয়ে। কোনো সুগঠিত ভাষা না থাকলে বন্য প্রাণী থেকে মানুষকে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়তো। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার দাবীতে কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর ছোটখাটো আন্দোলনের কথাকাব্য শুনা যায়; কিন্তু বাঙালির মতো সুগঠিত আন্দোলন এবং ভাষার জন্য জীবন দেওয়ার মহাকাব্যের ইতিহাস কোনো জাতির নেই। এই স্বর্ণময় ইতিহাসের সাক্ষী একমাত্র বাঙালি জাতি। জাতীয় জীবন যখন বিপর্যস্ত, সংস্কৃতি যেখানে বিলুপ্তের পথে, মুজিব যেখানে বিতর্কিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও যেখানে বিকৃত, সব মিলিয়ে নানা দো-টানার মাঝে একমাত্র প্রেরণার উৎস ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস।
বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরুটা ভাষা আন্দোলন থেকেই। বায়ান্নের তীব্র আন্দোলন হতে বাঙালি নিজেকে পাকিস্তান থেকে পৃথক ভাবতে শুরু করে। তবে বাঙলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে প্রথম মত প্রকাশ করে এক ব্রিটিশ নাগরিক ন্যাথেলিয়ান ব্রাথি হেডলেট। ১৭৭৮ সালে “অ্যা গ্রামার অব দ্যা বেঙ্গল ল্যাংগুয়েজ” নামে বাঙলা বইতে তিনি প্রথম দাবী করেন ফার্সির পরবর্তীতে বাঙলা ভাষাকে সরকারি কাজে ব্যবহার করার জন্য। ১৯১৮ সালে ভবিষ্যৎ স্বাধীন ভারত উপমহাদেশে দেশের ভাষা কি হবে তা নিয়ে বুদ্ধিজীবী মহলে আলোচনা সভা হয়। রবীন্দ্রনাথ হিন্দি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। সভার মাঝেই মহাকবির প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধিতা করেন ভাষা গবেষক ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ।
ডঃ শহিদুল্লাহ যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন হিন্দি-উর্দু থেকে বাঙলা ভাষার স্থান অনেক উঁচুতে। বাঙলা ভাষায় অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা থেকে সুগঠিত। হিন্দু-উর্দু থেকে বাঙলায় শব্দ সংখ্যা বেশি, তাই মনের ভাব সুন্দরভাবে প্রকাশ করা যায়। সভায় ডঃ শহিদুল্লাহ’র বক্তব্যে হইচই পড়ে যায়। ১৯২১ সালে ব্রিটিশদের কাছে লিখিত প্রস্তাব করা হয়, “ভারতের রাষ্ট্র ভাষা যাই হোক, তবে বাঙালিদের ভাষা হবে বাঙলা।“ পরবর্তী কোনো এক সময়ে মহাত্মা গান্ধী ঘোষণা দিলেন, “ভারতের রাষ্ট্রভাষা হবে হিন্দি।“ হিন্দিকে সমগ্র ভারতের ভাষার দাবী ওঠার পর থেকে ভারতের মুসলমানরা ক্ষেপে যায়। তাদের পক্ষ থেকে দাবী ওঠে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার। উপমহাদেশে তখন ধর্ম নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল। হিন্দি হিন্দুদের ভাষা- অন্যদিকে উর্দু-আরবি মুসলমানদের ভাষা এই ধরনের মতবাদ ছিল। যদিও পশ্চিম পাকিস্তানিরা মনে করতো বাঙলাও হিন্দুদের ভাষা। তাই ধর্মীয় মতবাদের উপর দেশভাগের পর পাকিস্তানীরা চাপ সৃষ্টিকরে বাঙলা ভাষার উপর। যার ফলেই জন্ম হয় ভাষা আন্দোলনের।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হল। পাকিস্তানিরা প্রথম দিন থেকেই বাঙালিদের নানা কিছুতে বঞ্চিত করে আসছিল। কাগজ তৈরি হতো বাঙলায়, চার পয়সা খরচে। সেই কাগজ পশ্চিম পাকিস্তানে বিক্রি হতো আট পয়সায়, আর বাঙলায় বিক্রি হতো বারো পয়সায়। এইভাবে নানা বিষয় থেকে বাঙালির মনে জন্ম নিতে থাকে ক্রোধ, দ্রোহ, ঘৃণা। মনের ক্ষোভ প্রকাশের প্রধান হাতিয়ার ভাষা, পাকিস্তানিরা প্রথম দিন থেকে সেই ভাষা ছিনিয়ে নিতে চাইলো। তাই বাঙালি সুসংবদ্ধ হতে থাকে এবং তারই প্রেক্ষাপটে এক সময় জন্ম হয় ভাষা আন্দোলনের।
ভাষা আন্দোলনের সাংগঠনিক শুরুটা পাকিস্তান জন্মের ১৬ দিন পরে। বাঙলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য গঠন করা হয় প্রথম ভাষা আন্দোলনের সংগঠন তমদ্দুন মজলিস। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভাষার দাবী আদায়ের লক্ষে “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাঙলা না উর্দু“ শিরোনামে প্রথম পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। বাঙলার কিছু মানুষ চাইতো এদেশের রাষ্ট্রভাষা হোক উর্দু। এতে উর্দু যারা ভালো জানে তারা লাভবান হবে, চাকরিতে সুবিধা পাবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাষার দাবী পক্ষে আদায়ের কথা বলার দুটি কারন ছিল। প্রথমটি ভাষা প্রেম। দ্বিতীয়টি উর্দু না জানলে তাদের উচ্চ পড়াশুনা সব বিফলে। তাই ভাষার জন্য আন্দোলন করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ ছিল না। দুটানা অবস্থার মাঝে ১৯৪৭ সালের ১২ ডিসেম্বর এই বাঙলার বুকে বাঙলা এবং উর্দু সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ হয়, আহত হয় বিশ জন।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ গ্রেফতার হলেন শেখ মুজিব রহমানসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সেদিন মিছিলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী একে ফজলুল হকও অংশগ্রহণ করে। আহত হয় পঞ্চাশ জনের মতো। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ জিন্নাহ প্রথম বাঙলায় আসে। জিন্নাহ পাকিস্তানের জনক। বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অধীনে। তাই জিন্নাহ তৎকালীন বাঙলারও পিতা। দেশ জনকের প্রতি প্রথম দিকে বাঙালির ভালোবাসা ছিল বলে ধারনা করতে পারি। কিন্তু ২১ মার্চ তিনি রেসকোর্সের ভাষণে বললেন উর্দুই একমাত্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। বলা যায় তখন থেকেই জিন্নাহ তার ভালোবাসায় আগুণ জ্বালিয়ে দিলো। ভাষা ছিনিয়ে নেওয়ার এই বর্বর সিদ্ধান্ত বাঙালির চোখে জিন্নাহ হয়ে উঠল আদর্শ নেতা থেকে চরম শত্রু।
রেসকোর্সে ভাষণের দু’দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ একই ভুল আবার করেন। জিন্নাহ ঘোষণা দিলো “অখণ্ড পাকিস্তানের ভাষা হবে উর্দু।“ সমাবর্তন সভার মাঝেই বিরোধিতা করে উঠল ভাষা মতিন। তিনি চিৎকার দিয়ে বলনে, “না, না। তা হবে না।“ সমাবর্তন অনুষ্ঠান মঞ্চ হয়ে গেলো রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে ভাষা আন্দোলনের দাবীর ক্ষেত্র। ১৯৪৮ সালে ১৪ নভেম্বর প্রকাশ করা হয় ভাষা আন্দোলনের প্রথম মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক। আন্দোলনের মাঝে দিন-রাত চলতে থাকে। এমন সময় ১৯৪৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রস্তাব করা হয় আরবি হরফে বাঙলা লেখার জন্য। যা ছিল বাঙলা ভাষার জন্য চূড়ান্ত অপমান এবং একটি ভাষা ধ্বংসের বিচক্ষণ পক্রিয়া। দিন চলতে থাকে জুলুমের মধ্য দিয়ে।
১৯৪৯ সালের ৯ জানুয়ারি “মুসলিম ছাত্রলীগ” দিনটিকে প্রথম “জুলুম দিবস” পালন করে। ১৯৪৮ সালের পর থেকে, প্রতিটি ১১ মার্চ ভাষা দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ১৯৫১ সালের ১১ মার্চ ভাষা দিবস পালনের সময় প্রথম রাষ্ট্রভাষা বাঙলা চাই শ্লোগানে প্ল্যাকার্ড এবং পতাকা তৈরি করা হয়। ভাষার দাবী আদায়ের জন্য ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ হরতাল, ধর্মঘট, মিছিল, সমাবেশ, ১৪৪ ধারা সব লেগেই ছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতেও ১৪৪ ধারা ছিল। তাই আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়। ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি আসতে থাকে। আলোচনার শেষ রাতে ভোটে সিদ্ধান্ত হয় ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে না। আন্দোলনে প্রথম সাড়ি নেতাদের পনের ভোটের মাঝে এগারো ভোট ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি কোন মিছিল-সমাবেশ করার বিপক্ষে। তবুও ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২, ৮ ফাল্গুন, বৃহস্পতিবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ক্যাম্পাসে একত্র হতে থাকে। বেলা এগারোটায় সভা হয়।
সভার মাঝেই বক্তাদের বক্তব্যে ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি চলতে থাকে। সব শেষে ভাষা মতিনের জোরালো বক্তব্যে আগুণ ছড়িয়ে পড়ে। শ্লোগান উঠতে থাকতে ১৪৪ ধারা ভাঙার। তীব্র শ্লোগানে নেতারা সিদ্ধান্ত নিলেন ১৪৪ ধারা ভাঙার। চারপাশে পুলিশ, তাই ছোট দল করে ক্যম্পাস থেকে বের হবার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এর মাঝেই পুলিশ কাঁদানো গ্যাস ছুড়তে থাকে। বিকাল তিনটায় আইন পরিষদের সভা ছিল। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আইন পরিষদের দিকে যেতে থাকে। পুলিশ ছাত্রদের উপর লাঠি চার্জ চালায়। ছাত্ররা ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। একসময় পুলিশ বেপরোয়া হয়ে উঠে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মাঝে পুলিশ গুলি চালায়। শহীদ হয় কয়েকজন, আহত হয় ১৭জন।
২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর দেশের রাজনৈতিক অবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। ২৩ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধান্ত হয় শহীদ মিনার বানানোর। মেডিক্যাল নতুন বিল্ডিং তৈরির জন্য পাশেই ইট বালি ছিল তা দিয়ে রাতের মাঝেই নির্মাণ করা প্রথম শহীদ মিনার। ২৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউরের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়। এরপরেও পরের বছর ১৯৫৩ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাঙা শহীদ মিনারের মানুষের ঢল নামে। ১৯৫৪-৫৫ সালে যাতে আন্দোলন করা না যায়, তার জন্য ফেব্রুয়ারির আগেই গ্রেফতার করা হয় সব আন্দোলন কর্মীদের। জমতে থাকা দ্রোহের ভয়ে অবশেষে ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বাঙলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার।
ভাষা আন্দোলনের অনেক বছর পর ভাষা আন্দোলন দিনটিকে ইংরেজি তারিখে কেন স্মরণ করা হয় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তবে উত্তরটাও খুব সহজ। পৃথিবীর পাতায় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসটা রচিত হয়েছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে। বায়ান্নতে আন্দোলনের সময় নেতারা প্রচারের কাজে প্রতিবাদের দিন ঠিক করেছিল ২১শে ফেব্রুয়ারী; কোথাও ৮ই ফাল্গুন লেখা ছিল না। পরে দেখা যায় ৮ই ফাল্গুনটা বিশ্ববাসীর কাছেও পরিচিত পাবে না। তাছাড়া আন্তঃর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হলে আন্দোলনে গ্রেগরিয়ান তারিখ লিখতে হবে। তাই আমাদের ভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৮ সালে কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে চিঠি লিখে যুক্তি দিয়ে অনুরোধ করেন ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস করার জন্য। জাতিসংঘের মহাসচিব পত্রটি গুরুত্ব দিয়েই নিলেন। ইউনস্কো দেখলো বিশ্বের মাঝে বিলুপ্ত ভাষার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। বিলুপ্ত ভাষা রক্ষা এবং ভাষা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৯৯ সালে ইউনস্কোর ঘোষণা আসলো ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস।
ভাষা আন্দোলনের সময় মুজিবের ভূমিকা নিয়ে প্রায় সময় প্রশ্ন উঠে। ভাষা আন্দোলনের একাধিক লেখায় পেয়েছি তিনি তখন ছিলেন দ্বিতীয় সাড়ির নেতা। অবশ্য বয়সেও তিনি দ্বিতীয় সাড়ির ছিলেন; অনেকের থেকে বয়সে ছোট ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলনের কারনেই ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ গ্রেফতার হয়েছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে মুজিব জেলে ছিলেন। আবার অনেকে রাজাকার গোলাম আজমকে ভাষা সৈনিক দাবি করে। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের শুরুতে একটা মানপত্র পাঠ করা ছাড়া তার আর কোনো ভূমিকা ছিল না। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একটি মানপত্রে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয়। ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট অরবিন্দ বোসের এই মানপত্র পাঠ করার কথা ছিল। কিন্তু একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলা ভাষার দাবি সংবলিত মানপত্র পাঠ করলে লিয়াকত আলীর মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই সেদিন হিন্দু অরবিন্দ বোসকে বাদ দিয়ে মুসলমান গোলাম আযমকে দিয়ে সেই মানপত্র পাঠ করানো হয়েছিল।
ভাষা দিবস আমাদের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আছে তেমন কোন সন্দেহ নেই। তবে ভাষা দিবস বেশ কিছু পৌরাণিক কাহিনীও আছে। যেমন,- সব ভাষা শহীদ আন্দোলনের মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয় নি; এমনকি ভাষা শহীদ বলে যাদের জানি তাঁদের অধিকাংশ আন্দোলনে অংশগ্রহণও করেন নি – তবে এটিও সত্য যে ভাষা আন্দোলন না হলে তাঁরা গুলিবিদ্ধ হতেন না। মূল্যবোধে আঘাত এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকে আমাদের গবেষক সমাজ এই বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকায় ভাষা শহীদ মর্যাদার বিষয়টি আমাদের চোখে ডগমেটিক রূপ পেয়েছে।
ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার শাশুড়িকে ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারীতে ঢাকায় আসেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রদের আবাসস্থল গফরগাঁও নিবাসী হুরমত আলীর রুমে উঠেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে কি হয়েছে দেখার জন্য তিনি রুম থেকে বের হয়ে আসেন। তখনই পুলিশ গুলি শুরু করে এবং এলোপাথাড়ি গুলিতে জব্বার মারা যায়।
ভাষা শহীদ রফিকের বাড়ি নিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের পারিল গ্রামে। রাহেলা খাতুন পানুর সঙ্গে প্রেম থেকে পারিবারিকভাবে বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়। রফিক ঢাকা আসেন বিয়ের শাড়ি-গহনা কিনতে। ২১ তারিখ সন্ধ্যায় তার বাড়ি ফিরবে রফিক। কিন্তু এর আগেই পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলিতে মেডিকেল হোস্টেলের বারান্দায় গুলি খেয়ে পড়ে রইল রফিক। ভাষা শহীদ আবুল বরকতের ক্ষেত্রেও একই সত্য। তিনি রাস্তায় নয়, রুমের বারান্দায় গুলি খেয়েছিলেন।
ভাষা শহীদ শফিউর শহীদ হয়েছিলেন ২২ ফেব্রুয়ারি। ২২ তারিখ সকাল দশটার দিকে ঢাকার রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে সাইকেলে চড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন শফিউর রহমান। দশটার দিকে ২১শে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ পুণরায় গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলি শফিউর রহমানের পিঠে এসে লাগে। তবে সালাম একমাত্র ভাষা শহীদ, যিনি আন্দোলনের মাঝেই গুলি খেয়েছিলেন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ এপ্রিল এই মহান ভাষা সৈনিক মৃত্যুবরণ করেন।
@সবার প্রতি,
অামি খুবই দুঃখিত, লজ্জিত এবং ক্ষমা প্রাপ্তি রেফারেন্স উল্লেখ না করায়। ব্যাক্তিগতভাবে অামি নিজের বাসস্থান থেকে বহু দূরা থাকয় সুনিদিষ্ট রেফারেন্স দিতে পারছি না। তবে অামি যেসব তথ্য নিয়েছি তার অধিকাংশ কিছু “শাহজাহান সাজু” এর লেখা “ভাষা শহীদ” বইতে অাছে। লেখাটি যখন তৈরি করেছিলাম তখন রেফারেন্স এড করা ছাড়া বাকিসব করা ছিল। এরপর থেকে দৌঁড়ের মাঝে রেফারেন্স এড করতে পারি নি। কথা দিচ্ছি একটু সুযোগ পেলেই সব রেফারেন্স এড করে দিবো। সাথে ভবিষ্যতের সব লেখায় রেফারেন্স সাথেই পাবেন। দূর্ঘটনার কারনে অামার অপারগত ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখুন প্লিস।
@সবার প্রতি, অামি খুবই দুঃখিত, লজ্জিত এবং ক্ষমা প্রাপ্তি রেফারেন্স উল্লেখ না করায়। ব্যাক্তিগতভাবে অামি নিজের বাস্থান থেকে বহু দূর থাকায় সুনিদিষ্ট রেফারেন্স দিতে পারছি না। তবে অামি যেসব তথ্য নিয়েছি তার অধিকাংশ কিছু শাহাদুজ্জামান সাজুর লেখা ভাষা শহীদ বইতে অাছে। লেখাটি যখন তৈরি করেছিলাম তখন রেফারেন্স এড করা ছাড়া বাকিসব করা ছিল। এরপর থেকে দৌঁড়ের মাঝে রেফারেন্স এড করতে পারি নি। কথা দিচ্ছি একটু সুযোগ পেলেই সব রেফারেন্স এড করে দিবো। সাথে ভবিষ্যতের সব লেখায় রেফারেন্স সাথেই পাবেন। দূর্ঘটনার কারনে অামার অপারগত ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখুন প্লিস।
শুধু একটা বই কে বেশিরভাগ তথ্যের সূত্র হিসাবে নিলে সেটা নির্মোহ হবে কি? বিশেষ করে এ ধরনের অপরিচিত ক্লেইমগুলো নিয়ে লিখতে গেলে আরো কিছু উৎস থেকে ‘ক্রস ভ্যালিডেশনও’ করা উচিত বলে মনে করি।
নতুন লেখক হিসেবে স্বাগতম।
প্রথম লেখায় একটু আধটু দোষ ত্রুটি থাকবেই। কিন্তু পোস্ট দিয়েই হারিয়ে গেলেন কেন? আলোচনায় অংশ নিন। এরকম চুপ থাকলে ব্লগিং আপনার জন্য নয়।
কই পাইলেন ভাই এইসব ইতিহাস!!!
২৭ ডিসেম্বর করাচীতে নিখিল পাকিস্তান শিক্ষক সম্মেলনে পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান বাংলা ভাষা আরবি হরফে লেখার প্রস্তাব ও যৌক্তিকতা উত্থাপন করেন। এই ফজলুর রহমান সম্ভবত সালমান এফ রহমানের পিতা ছিলেন। যিনি এই অযৌক্তিক নিয়ম চালু করতে চেয়েছিলেন।…. ভাষা শহিদরা সবাই ভাষার জন্য আন্দোলন করে নি এই কথাটা প্রথম বলে তোপের মুখে পড়েন-সবার শিক্ষক আবদুল রাজ্জাক।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সাক্ষাৎকারটা (হেফাজত নিয়ে আলাপের অংশটা বাদে) এই লেখার সাথে প্রাসঙ্গিক তাই লিংক দিলাম।- বাঙালি জাতীয়তাবাদের এখন আর দেওয়ার কিছু নেই
লেখায় তথ্যসূত্র উল্লেখ করা দরকার ছিল।
আপনি যেগুলিকে ছোট ছোট উত্তর বলে মনে করেছেন, তার প্রত্যেকটি নিয়ে বিস্ত্রত আলোচনা আবশ্যক। প্রথমত রবীন্দ্রনাথ ও শহিদুল্লাহের ভাষা সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে একটি দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখি।
আশা করি লেখক সটীক, এবং reference সমেত আলোচনা করবেন।
ঋতব্রত
লেখার তথ্যসূত্র উল্লেখের জন্য ব্লগার সাংকৃত্যায়নকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
“ভাষা আন্দোলনের নির্মোহ ইতিহাস” কিন্তু তথ্যসূত্র কোথায়?
“১৯১৮ সালে ভবিষ্যৎ স্বাধীন ভারত উপমহাদেশে দেশের ভাষা কি হবে তা নিয়ে বুদ্ধিজীবী মহলে আলোচনা সভা হয়। রবীন্দ্রনাথ হিন্দি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। সভার মাঝেই মহাকবির প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধিতা করেন ভাষা গবেষক ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ।”
১৯১৮ সালে ৩৩ বছর বয়সের মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ কোন কৃতিত্বের স্বীকৃতিতে বুদ্ধিজীবী ছিলেন এবং আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত ছিলেন? জানালে বাধিত হব।
উকিপিডিয়া :
১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত চব্বিশ পরগণার বশিরহাটে আইন ব্যবসা করেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেনের সহকর্মী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ওবাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২২ থেকে ১৯২৪ সালে পর্যন্ত আইন বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ফ্রান্সেরসোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে পি.এইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।