মুক্তমনা নাস্তিকরা নিওকনদের এজেন্ট- তারা পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদি ব্লুপ্রিন্টের বি টিম-এই বামাতি অভিযোগ মুক্তমনার জন্মলগ্ন থেকেই শুনে আসছি। এগুলো এতই হাস্যকর কথাবার্ত্তা-এর জন্য কলম খরচ করাও বেকার। অভিজিত নিজেই বহুলেখাতে এই অভিযোগের উত্তর দিয়েছে। আমি আমার মত করে এদের উত্তর দিয়েছি। ইনফ্যাক্ট মুক্তমনার জন্মলগ্নে সেতারা হাশেম ছন্দনাম ( যিনি নিউউয়ার্ক প্রবাসী জনৈক মহিউদ্দিন সাহেব) নিয়ে এক বামাতি, এইসব অভিযোগ করতেন সদালাপে। অভিজিত এবং আমি দুজনেই এই ধরনের বামাতি বিভ্রান্তির উত্তর বহুবার দিয়েছি। বাংলার বামেরা যে বস্তুবাদি দর্শন থেকে বহুদিন আগে থেকেই কক্ষচ্যুত-এই নিয়ে আমার বা অভিজিতের কোন কালেই সন্দেহ ছিল না।
আমি দুভাবে এর উত্তর দেব। প্রথমটা বিশুদ্ধ মার্ক্সবাদি-লেনিনবাদি তাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক অবস্থান থেকে। দ্বিতীয়টা আমার নিজের অবস্থান এই ইস্যুতে।
মার্ক্সবাদ লেনিনবাদি অবস্থান ঃ
ধর্ম নিয়ে মার্ক্সবাদিদের “প্রাক্টিক্যাল” অবস্থান কি হবে এই বিভ্রান্তি বহুদিনের। তবে লেনিন বা এঙ্গেলেসের এই নিয়ে কোন বিভ্রান্তি ছিল না। লেনিন এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য খুব পরিস্কার ভাবে অনেক বক্তব্য রেখেছেন যার মধ্যে সব থেকে সোজা সাপ্টা হচ্ছে ( Attitude of the worker’s party to religion : https://www.marxists.org/archive/lenin/works/1909/may/13.htm )- মার্ক্সবাদ বস্তুবাদি দর্শন। যেকোন বস্তবাদি দর্শনের অ আ ক খ হচ্ছে তাকে ধর্মের ভাববাদি দর্শনের বিরোধিতা করতেই হবে “We must combat religion—that is the ABC of all materialism, and consequently of Marxism. But Marxism is not a materialism which has stopped at the ABC. Marxism goes further. It says: We must know how to combat religion, and in order to do so we must explain the source of faith and religion among the masses in a materialist way-লেনিন, ১৯০৯।
ইনফ্যাক্ট মুক্তমনারা লেনিনবাদের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমালোচনা করলেও ধর্মের ক্ষেত্রে মুক্তমনা বা আমার ব্যক্তিগত অবস্থান লেনিনের বক্তব্যের সাথে শতকরা ১০০ ভাগ সহমত। সুতরাং আজকের বাংলার বামাতিরা যে লেনিন নিয়ে একদম চর্চা করে না-তারা পতিত লেনিনবাদি সেটাত জলের মতন স্পষ্ট।
এবার দেখা যাক সোভিয়েত রাশিয়া কি ভাবে ইসলামিক জঙ্গিবাদ এবং ইসলামের ভাববাদকে ট্যাকল করেছিল লেনিনের লাইনে। শুধু বললেই ত হয় না। সোভিয়েত রাশিয়া কি প্রাক্টিক্যাল পথ দেখিয়েছে সেটাও গুরুত্বপূর্ন। সোভিয়েত রাশিয়া কিভাবে বস্তুবাদি পথে ইসলাম নিয়ে গবেষনা করত -তার একটা সিনোপসিস আমার এই প্রবন্ধে আছে ( https://blog.mukto-mona.com/2013/07/28/36539/ ) -আমি এখানে তার ইতিহাস আরেকটু লিখব।
প্রথম কথা লেনিনের বক্তব্য বুঝতে গেলে, আমাদের বুঝতে হবে “বস্তুবাদি দৃষ্টিতে” ধর্মের বিশ্লেষন বলতে কি বোঝায়? এক কথায় এর মানে ইসলামের ইতিহাস-কোরান-ধর্ম গ্রন্থ ইত্যাদিকে দেখতে হবে সপ্তম শতকের আরবে ঘটিত ঐতিহাসিক শ্রেনী সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে। মহম্মদের যে আল ইসলাম আর্মি-যার জন্যে তিনি কোরানের মাধ্যমে দরিদ্র জনগণকে সংগঠিত করলেন -মক্কা মদিনার ধনী শ্রেনীটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করলেন-তার আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতাতে ভাল করে জানা উচিত।
সোভিয়েত ইউনিয়ান জারিস্ট রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদি নীতি অনুসরন করে এসেছে- অসংখ্য উপজাতি যারা রাশিয়ার আশেপাশে থাকত এবং জারের আমলে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয় -তাদের সোভিয়েতের অন্তর্ভুক্ত করে। এদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম ( তাতার, চেচেন ইত্যাদি)। মুসলিম অধ্যুশিত এই উপনিবেশগুলিতে কিভাবে কমিনিউজমের দৃষ্টিতে ইসলামকে দেখা যায়, সেই প্রচেষ্টা প্রথম থেকেই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ানে।
এই ব্যপারে পথিকৃত জিনাতুল্লা ন্যাভশিভরানভ (১৯২৩) নামে এক তাতার। উনি দেখান ইসলামের ইতিহাসে কমিনিউজমের অসংখ্য ছাপ বিদ্যমান-বিশেষত সুফী আন্দোলনের মধ্যে কমিনিউজমের অনেক “এলিমেন্ট” আছে। উনি ইতিহাস থেকে দেখান সুফীরা বারবার রাষ্ট্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে-সব থেকে বড় উদাহরন সিমানোভার শেখ বদরিউদ্দিন যিনি ১৪১৬ সালে অটোম্যান সম্রাটদের অত্যাচারের বিরোধিতা করে শহিদ হন।
মিখাইল রেইনার (১৯২৬) দেখান ইসলাম আসলেই আরবের ব্যবসায়ী শ্রেনীর , ব্যবসার প্রয়োজনে উদ্ভুত আইনের পদাবলী। তার ভাষায় ইসলামের আল্লা হচ্ছে একজন স্মার্ট ক্যাপিটালিস্ট। তার মতে হজ্জ আদতে ছিল মক্কার ট্রেড ফেয়ার। উনি দেখান কোরানের আদি আয়াত গুলোতে দেখা যাবে বিজনেস এবং ফ্যামিলি কনট্রাক্টের ওপর বেশী জোর দেওয়া হয়েছে-স্পিরিচুয়ায়ল প্রাক্টিস গুলি বেশ অনাড়াম্বর। ইনফ্যাক্ট ইসলামের আদিতে নামাজ বা মসজিদের কোন উল্লেখ নেই। উল্লেখ আছে সঠিক কনট্রাক্ট, সঠিক মেজারমেন্ট, মডারেট প্রফিট ইত্যাদি এমন কিছু বিষয়ে যা রেগুলেটেড মার্কেটের জন্য বা বাজার চালু রাখতে সব থেকে বেশী দরকার। রেইনারের মতে ইসলামের জনপ্রিয়তার মূল কারন এই যে তা সেই সময়ে বাজার অর্থনীতি চালু রাখার জন্য একটি আইনানুগ রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্ম দিতে সক্ষম হয়।
বেইলেভ এই তত্ত্বটিকে আরেকটু উন্নত করেন (১৯৩০)। উনি দেখান ইসলাম মোটেও সর্বহারা না -আসলেই এটি ছিল উঠতি শিক্ষিত বুর্জোয়াদের আন্দোলন মূলত বড় ব্যবসায়ী শ্রেনীদের বিরুদ্ধে। তার মতে আদি ইসলামে বুর্জোয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণীকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই জন্য সুদ বিলুপ্ত করা হল-কিন্ত দাস প্রথা চালু রাখা হল । কেন? কারন এই বুর্জোয়া শ্রেনীটি ছিল দাসমালিক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শ্রেনী।
মোদ্দা কথা সোভিয়েত ওরিয়েন্টালিস্টরা ইসলাম এবং সকল ধর্মকে আর্থ সামাজিক আন্দোলন এবং সামাজিক বিবর্তন হিসাবেই দেখেছেন।
আমার নিজস্ব বক্তব্য ঃ
ধর্মের অবস্থানের প্রশ্নে লেনিন এবং সোভিয়েত স্কুলের ঐতিহাসিকদের সাথে সহমত হলেও , ধর্ম নিয়ে আরো কিছু দৃষ্টিভংগী যোগ করার প্রয়োজন অনুভব করি।
(১) মানুষের জীবনের কোন পরম উদ্দেশ্য নেই । কিন্ত আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সেই জীবনের উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত। জীবনের উদ্দেশ্য কি এই প্রশ্নের উত্তর কোন বস্তুবাদে নেই । ভাববাদেও নেই। কিন্ত ভাববাদিরা দাবী করে তাদের কাছে উত্তর আছে। এই ঢপবাজির জন্য ভাববাদ জিতে যায়। সেটা অধিকাংশ সাধারন লোকেরা বুঝতে পারে না। তারা চাইছে জীবনের উদ্দেশ্যের ” রেডিমেড উত্তর”। জীবনের উদ্দেশ্য কি বলে দাও। এই জায়গায়টায় কোন বস্তুবাদি দর্শন ফোকাস করে না। কারন এই প্রশ্নের উত্তর বস্তুবাদ থেকে সম্ভব না। যার জন্য হাজার বস্তুবাদ করার পরেও রাশিয়াতে চার্চ ফিরে আসে।
(২) বামেদের সাথে ইসলামের জোট কিন্ত খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এর কারন আসল লড়াইটা এখন চলছে -ব্যক্তিস্বতন্ত্রবাদ/ ইন্ডিভিজুয়ালিজম বনাম কালেক্টভিজমের সাথে। ক্যাপিটালিজম বনাম কালেক্টিভিজমের লড়াইটাই এই শতাব্দির মুখ্য লড়াই হতে চলেছে। ইসলাম বা কমিনিউজম কালেক্টিভিজমের ভাববাদি এবং বস্তুবাদি রূপ।
বেসিক্যালি ব্যপারটা এরকম-ক্যাপিটালিজমের কোন অল ইনক্লুসিভ মডেল নেই। ক্যাপিটালিস্ট গ্রোথের সুফল মধ্যবিত্ত শ্রেনী পর্যন্ত নামছে-কিন্ত প্রান্তিক শ্রেনীটির কাছে পৌছচ্ছে না। ফলে ধনের বৈষম্য বিকট আকার ধারন করেছে।
আপনার কাছে টাকা থাকলে, ডাক্তার উকিল, খাদ্য সেক্স যা চান-সবই সহজলভ্য ক্যাপিটালিজমে। আর টাকা না থাকলে সব কিছুর জন্য আপনি সমাজ থেকে, রাষ্ট্র থেকে সাহায্যর ওপর নির্ভরশীল। ফলে এই বঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেনীটির কাছে ( যাদের কমিনিউস্টরা সর্বহারা বলেন ) “কমিউনিটির মাধ্যমে” একটা স্বর্গরাজ্য স্থাপনের বিরাট আপিল আছে। কমিনিউস্ট জন্নত হচ্ছে ক্লাসলেস সোসাইটি। আর ইসলামিক জন্নত হচ্ছে মৃত্যুর পরে সেই স্বর্গরাজ্য যেখানে নারী আর মদের অফুরন্ত অনন্ত ফোয়ারা।
এর মধ্যে গোদের ওপর দুটো বিষফোঁড়া- প্রথমত অটোমেশনের ফলে সম্পদ বাড়ছে-কিন্ত চাকরি কমছে। এদিকে মুসলিম অধ্যুশিত দেশগুলিতে জনসংখ্যা বেড়েছে হুহু করে। অধিকাংশ মুসলিম দেশে খাবার জোটানোই কঠিন অধিকাংশ নাগরিকের।
ফলে ক্যাপিটালিস্ট ওয়ার্ল্ড অর্ডারের ওপর রাগ ক্রমবর্ধমান পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই। কিন্ত যেহেতু হাতের কাছে কোন অলটারনেটিভ সিস্টেম নেই-কমিনিউজম জন্নতের বেলুন সোভিয়েত ফাটিয়ে দিয়েছে-সেহেতু বিচ্ছিন্ন ভাবে এইসব ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠছে-যার মূল চরিত্র তিনটি (১) ক্যাপিটালিজমের মুল ধজ্জাধারী আমেরিকার বিরোধিতা (২) ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতিষ্ঠা (৩) নারী স্বাধীনতা বাতিল করে, সম্পূর্ন পুরুষতন্ত্রে ব্যাক করা।
প্রশ্ন হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে বামেদের সাথে ইসলামিক জঙ্গীদের এই সখ্যতা ? এখানে বামেদের সাথে কমন শুধু (১) পয়েন্টটা-আমেরিকা বিরোধিতা। ২ নাম্বার পয়েন্টে কিছুটা মিল আছে-বামেরা ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করে ধর্মীয় অনুশাসনের জায়গায় কমিনিউস্ট অনুশাসন বা পার্টির প্রতি চূড়ান্ত বশ্যতা চালাতে আগ্রহী।
মূল ইস্যু হচ্ছে ক্যাপিটালিজমের উদ্ভাবনী শক্তির কাছে আসলে ইসলাম এবং বামেরা কোনঠাসা। ক্যাপিটালিজমের ক্ষতিকর দিক গুলি অবশ্য সত্য। ক্যাপিটালিজম নিয়ে মানুষের সীমাহীন হতাশাটাও বাস্তব। কিন্ত ইসলাম এবং কমিনিউস্টদের লোক টানার মুল ভিত্তি আসলে আজগুবী রূপকথা। অধিকাংশ মুসলিম মনে করে হজরত মহম্মদের আমলে যে রাষ্ট্র তৈরী হয়, তাতে লোকে ভাল জাস্টিস পেত। এখন পায় না। ফলে সব ধর্মীয় মুসলিম সেই শরিয়া ভিত্তিক সমাজে ফিরতে চাইছে। যদিও সেই সমাজটা সম্পূর্ন এক কাল্পনিক জগত। কিন্ত তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারন তারা দেখছে গণতান্ত্রিক সমাজে চারিদিকে দুর্নীতি আর দুর্নীতি। যে চোর ডাকাতি করতে পারে সেই রাজা। ফলে অমন এক অলীক কাল্পনিক শরিয়া সমাজের প্রতি তাদের ঝোঁক স্বাভাবিক। সোভিয়েত যে ফানুস ছিল, তা অবশ্য ফেটে গেছে। কমিনিউস্টদের রূপকথা শোনার কেও আর নেই। ফলে তাদের হালে পানি নেই। কিন্ত ইসলামিক জন্নতের ফানুস ফাটেনি-যেহেতু তা পরকালে! যুক্তিবাদের প্রসার ছাড়া এই ধরনের আজগুবি চিন্তাধারা কমার আর কোন উপায় নেই।
ভারত এবং হিন্দু ধর্মের অবস্থান একটু আলাদা। হিন্দু ধর্মের নির্যাস ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর দাঁড়িয়ে। যদিও বর্তমানে হিন্দুত্ববাদিরা এটাকে ইসলামের মতন কালেক্টিভিজমের অংশ হিসাবেই দেখেন। ফলে জোর করে গরুর মাংস খাওয়া ব্যান করতে হয়। কিন্ত হিন্দু ধর্ম আচার ভিত্তিক না-তার মূল বক্তব্য সেলফ রিয়ালাইজশন বা ব্যক্তিগত উপলদ্ধির জগত। ফলে এই ধর্ম ক্যাপিটালিজম বা ইন্ডিভিজুয়ালিজমের সাথে খাপ খায় ভাল। এইজন্য ল্যাটিন আমেরিকার বামেরা বহুকাল আগে লেনিন ছেড়ে যীশু “গরীব বন্ধু” ইমেজ থেকে নয়া -ল্যাটিন বামপন্থার সূচনা করেছে। তা মাটির বামপন্থা বলে খাচ্ছে ভাল। ভারতের বামেরা হিন্দু ধর্ম নিয়ে এখনো খাবি খাচ্ছে।
ভারতের বামেরা এই ধরনের “হিন্দু ধর্ম ” সহায়ক বাম আন্দোলন করতে ব্যর্থ – কারন হিন্দু ধর্মে কমিনিজমের এলিমেন্ট গুলি দুর্বল। যদিও ইসলামিক বামপন্থী আন্দোলন পৃথিবীর সব মুসলিম দেশেই মেইন স্ট্রিম একদম। এতে ভাল কিছু হয় নি। ইসলাম আস্তে আস্তে বামপন্থাকে গিলে ফেলেছে।
(৩) আমি ব্যক্তিগত ভাবে ধণতান্ত্রিক সমাজের পক্ষে। ইসলাম এবং কমিনিজমের তথা যে কোন কালেক্টভিজমের বিপক্ষে। এর মানে এই না যে মার্কেট এবং ধণতন্ত্রের ত্রুটি নেই-এবং সেই ত্রুটিগুলি আমি স্বীকার করি না।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে আমার মনে হয়েছে-আমাদের আজকের এই যে বস্তুবাদি উন্নতি- খাদ্য এবং চিকিৎসা সুরক্ষা-এর মূলে আছে প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের আবিস্কার। প্রথমত প্রযুক্তির এই আবিস্কার কোন কালেক্টিভিজমের মধ্যে সম্ভব না। সোভিয়েত এর জ্বলন্ত্ব প্রমান। ইন্ডিভিজুয়ালিস্টিক সমাজ ছাড়া মার্কেট বিকাশ করে না-আর মার্কেট ছাড়া আবিস্কার বাজারে আসে না। দ্বিতীয়ত ক্যাপিটালিজমের সমস্যাগুলি প্রযুক্তির আবিস্কারের মধ্যে দিয়েই সমাধান করা সম্ভব। এর উদাহরন আমরা দেখছি। আজকে যে ওপেন ডেমোক্রাসি বা ডিরেক্ট ডেমোক্রাসি আসছে-তা কিন্ত সম্ভব হচ্ছে এই ফেসবুক বা টুইটারের জন্যই। ধণতন্ত্রই ধণতন্ত্রের সমস্যাগুলি দূর করবে এটাই বাস্তবের ইতিহাস। কমিনিউজম বা অন্য কোন জন্নত দর্শন চালিয়ে যখন ধণতন্ত্রের সমস্যাগুলির সমাধান করার চেষ্টা হয়েছে, তখন আদতেই গণহত্যা ছাড়া আর কিছু হয় নি। ইউক্রেনের হলডোমার জেনোসাইড এর উজ্জ্বল উদাহরন।
বামাতিদের ভ্রান্ত অবস্থানের বিরুদ্ধে এতটা লেখার দরকার ছিল বলে মনে হয় না। কারন বাঙালীদের মধ্যে বামেদের প্রভাব আস্তে আস্তে অনেক হ্রাস পেয়েছে। আরো পাবে। কারন দুই নৌকায় পা দিয়ে কোন নৌকা চালানো সম্ভব না।
লেখাটি ভালো লাগলো
@ বিপ্লব পাল। অসাধারণ লেখা। অনেক কিছু জানতে পারলাম।
গণতন্ত্র একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা। আর ধনতন্ত্র একটা অর্থ ব্যবস্থা। গণতন্ত্র যদি আরো বিকশিত হয় , যদি প্রযুক্তির কল্যানে আমরা ডাইরেক্ট গণতন্ত্র পাই তা হলেও সেটা কি ভাবে বাজার অর্থনীতির খারাপ দিকটা প্রতিহত করতে পারে সেই বাপ্যারে আর একটু বিস্তারিত গেলে ভালো হয়। বাজার অর্থনীতি কি স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব ?
শুধু ইসলাম নয় সব ধর্মই সুবিচারের যে প্রতিশ্রুতি দেয় ( হোক তা ভ্রান্ত ) তার জনমানসে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে যে হেতু ‘আধুনিক ” বাজার নিয়ন্ত্রিত সভ্যতার কাছ থেকে সেই সুবিচার সে পায় না।
শুধু সুবিচার নয়, বাজার নিয়ন্ত্রিত মুনাফা পরিচালিত যে সংস্কৃতি আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে ও তার কুফল যখন আমাদের পীড়া দেয় তখন আমরা ধর্মের ভিতর তার থেকে পরিত্রান খুঁজি।
তাই ধর্মের মোহ থেকে মুক্তি পেতে গেলে বিকল্প যেটা পাওয়া যায় সেখানে মানুষের অন্তরের যন্ত্রণা উপশমের উপায় থাকতে হবে। মনে হয় বাজার অর্থনীতি সেটা দিতে পারে না।
বিপ্লব দা,, ঐ ‘সব’ কথাটার মাঝেই সমস্যা হয়তো লুকিয়ে থাকতে পারে। যেমন সব মুসলমান বা সব কমিউনিষ্ট এরকম আর কি। সবাই যদি আপনার মতোই হয় তো সবাই তো আপনার অনুসারী, আপনি হবেন তাদের গড। সমস্যা অনেক কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন, এমন কোন তন্ত্র মন্ত্র কি আছে যা সব্বাইকে ধারণ করে বা করতে পারে? হ্যাঁ আছে। গনতন্ত্র! কিন্তু আমার কেনো যেনো মনে হয় খাঁটি গনতন্ত্রও সম্ভবতঃ অধিকাংশের পেটে হজম হবে না! আপনি কি বলেন? কাজেই এরকম সম্প্রদায়গত বিদ্বেষ হয়তো একটা ক্যটালিষ্ট যা কিনা মানব জাতিকে বরং এগিয়ে যাবার প্রকারান্তরে অনুপ্রেরণাই যুগিয়ে চলেছে!
অসাধারণ একটা লেখার ভিতর দিয়ে গেলাম। কিভাবে একনিশ্বাসে পড়ে ফেললাম বলতে পারবো না। তবে খুব ভাল লেগেছে শেষের দুটি কথা নৌকায় পা দিয়ে কোন নৌকা চালানো সম্ভব না।
বাংলাদেশের বামেরা আসলে ঝিমু টাইপের কিছু একটা। মুলনীতির সাথে কোনই সামঞ্জস্য নাই। এরা না পারছে নিজেরা সামনে যেতে না পারছে প্রসারে লোক ভিড়াতে, ঠিক এইজন্যই ভাবপবাদিরা জিতলেও ধর্মের করাল গ্রাসে আমাদের কে আমার সেই সপ্তম শতকের সমাজে নিয়ে যাচ্ছে হুরপরি দের লোভ দেখিয়ে।
একমত ……………ভাল লেগেছে
খুব ভাল লাগল লেখাটা।
আমি ঠিক দ্বিমত পোষণ করছি না তবে পুরোপুরি একসেপ্ট-ও করতে পারছি না। যেমন, ক্লাইমেট চেঞ্জ – অনেকের মতে কিছু irreversible damage হয়ে গেছে। এবং এই মার্কেট ড্রিভেন বিশ্ব যে ভাবে এগোচ্ছে, বিশেষ করে বিশ্বের গ্রোথ ইঞ্জিন – চীন, ভারত ও আরও কিছু উন্নয়নশীল দেশ, তাতে সমাধান তো দূরে থাক দিনে দিনে পরিস্থিতি বিপদের দিকে এগিয়ে চলছে। এমনকি উন্নত দেশ গুল যারা অন্যদের ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে জ্ঞান দিয়ে যায় তারাও কতটা নিজেদের সুখ বিসর্জন দিতে রাজি আছে তা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। ফল স্বরূপ প্রযুক্তিগত ভাবে এক উন্নত সময়ে বাস করেও আমরা দিনে দিনে পরিবেশকে ক্রমাগত নষ্ট করে ফেলছি। এবং অবশ্যই এটা self destructive কারন পরিবেশ নষ্ট মানে resource নষ্ট যা ক্যাপিটালিজমের জন্য সমস্যার। আবার পরিবেশ নষ্ট না করে এই ৭ বিলিয়ানের জগতে profit maximization ও অসম্বভব প্রায়। তাই এই ক্লাইমেট চেঞ্জ -এর ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে ক্যাপিটালিজম একটা vicious circle পরে গিয়ে নিজেই নিজেকে খাচ্ছে।
যদি এই ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক না হয় তাহলে হয়ত “ধণতন্ত্রই ধণতন্ত্রের সমস্যাগুলি দূর করবে” এটা ভাবা ঠিক নাও হতে পারে। যদিও আমি আপনার সাথে ১০০% একমত যে “কমিনিউজম বা অন্য কোন জন্নত দর্শন চালিয়ে” ধণতন্ত্রের সমস্যা দূর হবে না। উত্তর কোথায় জানা নেই, তবে মনে হয় আমাদের অনেক সমস্যার তৈরি হয় খুব বেশী ইন্ডিভিজুয়ালিজম বা কালেক্টভিজম- এর দিকে ঝুঁকে পরার জন্য। ইন্ডিভিজুয়ালিজম স্বাভাবিক ভাবেই excellence-এর জন্ম দেয়। কিন্তু যে শক্তিশালি (অর্থ, শিক্ষা, ইত্যাদি) সে অনেক এগিয়ে যায় কিন্তু একটা শ্রেণী অনেক অবহেলায় পরে থাকে। এর ফল কোন দেশে, ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি হতে পারে আবার কথাও চুরি ছিন্তাই অরাজকতা তৈরি হতে পারে। বৈষম্যর কারনে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ঝামেলার দেখা দেয়। “ক্যাপিটালিজমের সমস্যাগুলি প্রযুক্তির আবিস্কারের মধ্যে দিয়েই সমাধান করা সম্ভব” কথাটা টেকনিকালি সত্যি হলেও বাস্তবে এই সমাধান গুলো অনেকের হাথেই এসে পৌছায় না। ভারত, বাংলাদেশের কথা ছেড়ে দিন, আমেরিকার মত দেশে ভাল চিকিৎসা বহু মানুষের নাগালের বাইরে। আর কমিউনিজম/ কালেক্টভিজম নিয়ে কিছু বলার নেই, ওটা faliure.
হয়ত নরডিক মডেল – যাতে বাজার অর্থনীতি আর সোশ্যালিজম একটা মিশ্রণ পাওয়া যায় – একটা উত্তর। তবে শিক্ষা ও সংস্কৃতি ছাড়া কোন মডেলই – ক্যাপিটালিজম, কমিউনিজম, নরডিক ক্যাপিটালিজম- দুর্নীতি বা হিংসা বিহীন হবে না।
সম্পুর্ন একমত। আমার জীবনের প্রথম ২৭ বছর বাম শাসিত পস্চিম বঙ্গে থাকার দৌলতে বলতে পাড়ি, কমুনিসম এর সংগে সংগঠিত ধর্মের খুব একটা পার্থক্য নেই।
অসাধারণ লিখেছেন !!