আমি নারী; প্রকৃতির ধারক-বাহক
সহস্র শতাব্দী সৌরবর্ষ বেঁচে থাকি প্রকৃতির করুণায়
তাই তোমরাও করুণা কর ।
শিল্পীর ক্যানভাসে ঠাঁই হয় আমার সুঢৌল স্তনের ভাঁজ
আমার উরুর গোপন খাঁজ-আমার অধরের উষণ আবেদন
তোমাদের রঙ-তুলির আঁচরে আমি ‘র’ ম্যাটেরিয়াল ।
আমি নারী; প্রকৃতির শষ্যক্ষেত্র
শত-শতাব্দী ধরে তোমার কঠিন বীর্যে কর্ষণ করেছো
আগাছা উপড়ে তৈরি করেছো তোমার নিষ্কন্টক ফসলের বীজতলা
চেয়েছো বৃষ্টিজল, খুঁজেছো উর্বরতা উৎপাদন বাড়াতে ।
আমি নারী; রমনী
রতি রমনের বাইরেও আমার আরেক পরিচয় আছে
আমি মানবী ।
শরীরের উর্বরতার মতো তুমি আমার মস্তিস্কের উর্বরতা খোঁজনি
স্তনের ভাঁজের মতো তুমি আমার মননের বন্ধুরতা বোঝনি
অধরের উষ্ণ পরশের মতো তুমি আমার হৃদয়ের উষ্নতা চাওনি
তোমার কর্ষিত ছিন্নভিন্ন বীজতলায়-
আমার মৌলিক মানবিক বিনির্মানের যে ফসল ফলেছে তাকে লালন করনি
পুরুষ! আমার উর্বর জমিতে তুমি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার টিলার মাত্র।
(১৯৯৮, দিনাজপুর)
খুব সুন্দর কবিতা। চিন্তার খোরাক যোগায়। তবে এত দিন যাবত পুরুষ যা করে এসেছে তাতে মনে হয় হোমো সাপিয়ানস কে প্রকৃতি যে ভাবে programme করে ছেড়ে দিয়েছে সেখানে পুরুষও বোধয় অসহায়। নারীও কি সেই progeammed পুতুল নয় ? সবে মাত্র আমরা অন্য রকম ভাবে ভাবতে শিখছি।
” প্রস্তর যুগের এই সর্বশেষ উল্লাসের মাঝে
কোথায় পালাবে বলো,কোন ঝোপে লুকোবে বিহ্বলা?
স্বাধীন মৃগের বর্ণ তোমারও যে শরীরে বিরাজে
যখন আড়ার থেকে ছুটে আসে পাথরের ফলা,
আমাদের কলাকেন্দ্রে, আমাদের সর্ব কারুকাজে
অস্তিবাদী জিরাফেরা বাড়িয়েছে ব্যক্তিগত গলা । ”
— কবি আল মাহমুদ। (সোনালী কাবিন)
শক্তিশালী বক্তব্যধর্মী কবিতা। জানি কবিতায় অনেক উপমা থাকে। তবে আমার মনে হয় কিছু কিছু শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হওয়া দরকার। যেমন-
আলোকবর্ষ কিন্তু সময়ের একক নয় – দূরত্বের একক। এক বছরে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে সেই দূরত্বকে এক আলোকবর্ষ বলা হয়। তাই এখানে আলোকবর্ষ শব্দটা একটু খাপছাড়া মনে হচ্ছে।
কলম চলুক।
এককথায় চিন্তাজাগানিয়া বলিষ্ট কবিতা যার মাধ্যমে পুরুষতান্ত্রিকতার মস্তিকের গভীরে আঘাত করার সামিল।
গভীর চিন্তা করলে যে কেউ বুঝতে পারার কথা যে নারীর কারনেই পুরুষ নামের কীটটি এই ধরনীতে ধাবড়াইয়া হামড়াইয়া লম্প-জম্প করার সুযোগ পায়,যার কারনে মানুষ নামের প্রজাতিটি এখন ৮ শত কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
নারীজাতি তাদেরকে উৎপাদন করার কারনেই তারাই আবার নারীদের উপর জোর-জবরধ্বস্তি করতেছে, অথচ প্রকৃতিতে বেঁচে থেকে উত্তারাধিকার ও ভারসাম্য রক্ষার জন্য নারীর নিন্মদেশে পুরুষ নামের কীটটির আশ্রয় নিতে হয় আবার এই নিন্মদেশের আশ্রয়কারীরাই নারীকে সবচাইতে বেশি এই পৃথিবীতে নিগৃহীত করে।
নিগৃহীতকারী মূলতঃ হচ্ছে রাষ্ট্র নামক যন্ত্রটি, যার পিছনে ধর্ম,ধর্মের ট্যাবু,সামাজিক ট্যাবু,দারিদ্রতা, অর্থনীতি,অপরাজনীতি,কুসংস্কার,অপশিক্ষা,কুশিক্ষা,সামাজিক বৈষম্য ও জীবনের অনিরাপত্তাসহ অনেক শত শত হাজার হাজার ঘটনা কাজ করে থাকে।
সেই কবে প্রথম নারীবাদী লেখিকা মেরি উলস্টোন ক্রাফট ” এ ভিন্ডিকেশন অফ দি রাইটস অফ উইমেন্স ” লিখে গেছেন যা মানবজাতির নারীকূলের সবচাইতে রেডিকেল স্টেটমেন্ট যেটা মনে হয় আমাদের দেশের যারা নারীবাদী আন্দোলন-সংগ্রাম করেন তাদের সবার পড়া উচিত সাথে নরকূলেরও পড়া একান্ত আবশ্যকীয় মনে হয়।
সালমা ইয়াসমিন নিতির লেখা কবিতাটি পড়ে ভালো লাগলো। তথাপি বলবো তিনি নারীকে আব্রু ছাড়া করেছেন। এটা না করলে ভালো হতো। নারী সম্বন্ধে সবাই জানে, তারপরেও বে-আব্রু করা উচিত বালে মনে করিনা। নারী ‘মা’, ‘জয়া’, ভগ্নী, কন্যা। নারীকে স্নমান সহকারে দেখা উচিত।
সবার আগে নারী একজন মানুষ, পরিপূর্ন মানুষ। পুরুষ “বাবা”, স্বামী, ভাই, পুত্র — তাকেও আমরা সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতে চাই। আমাদেরও সেই সুযোগ দেয়া উচিত। ঠিক বলিনি?
আপনি ১০০% ঠিক বালেছেন। নারীকে সম্মান দিলে, নারীও পুরুষকে সম্মান দিবে। নারী পুরুষের কাম্না,ভালবাসা, প্রেম ও পারথিব জগৎতের আশ্রয়। আপনার কথা আনুযায়ী, নারী ও পুরুষএর প্রথম পরিচয় ‘মানুষ’। এই মানুষ রক্তমাংসে গড়া। প্রকিতির রুটিন আনু্যায়ী শিশু থেকে কৈশোর, তারপর যৌবন, তারপর মধ্যবয়সী, সর্ব শেষে বৃদ্ধাবস্থা। এর মধ্যে যৌবনই সব চেয়ে মারাক্ত। এই সময় নারী ও পুরুষের মিলন সময়। এই মিলন কেহ স্বর্গীয় রূপে মিলিত হয়, আবার কেহ আসুরিক ভাবে মিলিত হয়। এছাড়া আরও মিলন ভাব আছে। প্রথম দুটিরই সমাজে চল। আসুরিক ভাবে যারা নারীকে চায়, তাদের এই চাওয়ার মধ্যে বল প্রয়োগ থাকে এবং স্থান-কালের ভদ থাকেনা। তখনি নারী লাঞ্ছিত, নিপীড়িত, নিগৃহীত ও অস্মানিত হয়। আসুরিকভাব কয়েক প্রকার। এই সমাজে ভালমন্দ সবই থাকবে, তবে মন্দকে ভাল করতে হবে।
বাহ্। ভালো লেগেছে। সঙ্গত ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে বাকি সবাইকে আবার একাকার করে ফেলাটাও মনে হয় খুব একটা ঠিক হবে না। তবু হোক প্রতিবাদ, হোক প্রতিরোধ।
আপু সুন্দর লেখা ।
তবে শিল্পীরা কোনো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নারীকে আঁকেননি । নারীকে তারা বরং অমরত্ব দিয়েছেন । নারী তাঁর চিরকালের প্রেরণার উৎস! সেটা করতে গিয়ে নারীকে শ্রদ্ধা না করে কোনো শিল্পী কোনো দিনো নারীকে তাঁর শিল্পকর্মে স্থান দিতে পারতেন না ।
আমরা আমাদেরকে কোন অবস্থানে দেখি সেটা নির্ভর করে আমাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর ।
ধন্যবাদ ।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য আপু। জীবনের প্রয়োজনে শিল্প; শিল্পের প্রয়োজনে জীবন নয়; আপাতদৃষ্টিতে এটা মনে হওয়াই খুব স্বাভাবিক শিল্পীরা নারীকে সম্মান করেই তার ছবি আঁকে, কিন্তু ওই যে বললাম, কার প্রয়োজনে কে? আর তাই সম্মানের বিষয়টি সবক্ষেত্রে সত্য না ও হতে পারে। কবিতা তো শুধু শিল্প নয়, সে জীবনের কথা বলে, দ্রোহের কথা বলে…। শুভকামনা, ভাল থাকবেন।