আমাদের অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভাবালুতা প্রবল । সম্ভবত এই কারণেই এই অঞ্চলে আল মাহমুদ আর আবুল ফজলের ফলন বেশি । আহমেদ শরীফ দুর্লভ । বাপ দাদা মা খালারা আজীবন দেখেছেন যৌবনের বিপ্লবী পড়তি বয়েসে লুঙি-পাঞ্জাবি ধরে পাড়ার মসজিদে যাতায়াত শুরু করে । এজন্য আমি নাস্তিক আমি এইসব বিশ্বাস করি না বলে আত্নীয়দের মধ্যে তেমন কোন ভাবান্তর নাই । তারা ধরেই নিছেন , বয়স খারাপ, পুলাপান অমন একটু বলবেই । হুমায়ুন আজাদ মধ্যবয়সে হঠাৎ মারা না গেলে শেষতক কি হইতো সেটা নিয়াও আমি ঠিক নিশ্চিত না।
আক্ষরিক এবং ভাবগত দুই অর্থেই ত্রিকাল-দর্শী যতীন সরকার তাই শেষকালে এসে ভাবালু হয়ে পড়বেন এতে আমি অবাক নই। পারভেজ আলমের সাথে তার কথোপকথনের দুই পর্ব ভালোভাবে পড়ে মনে হলো সেই একই ভাবালুতা যা ফরহাদ মজহার আল মাহমুদদের গ্রাস করেছে তা ধীর পায়ে তার দিকেও এগিয়ে আসছে।
কথোপকথনে তার প্রথম নোংরা ছাপ হচ্ছে , হালের নাস্তিকদের খুনের জন্য নিহত ও তার সমমনাদের ঘাড়ে দোষ চাপানো। প্রথমে মনে হচ্ছিলো তিনি আসলে মুসলমানদের ভিতরে যারা প্রগতিশীল তারা প্রগতিশীলতার ভালো দার্শণিক ভিত্তি যে তৈরী করতে পারে নাই সেটাকে দুষছেন। কিন্তু দুইটি পর্ব ভালোমত পড়লে বুঝা যাবে আসলে তা না । তিনি সেই পিনাকী বা অঞ্জন রায় বা আব্দুনু নুর মত সেই একই কথাই একটু ঘুরিয়ে বলেছেন মাত্র। ঘুরিয়ে বলার কারণ , তার মতে হিন্দু বা মুসলিম এই পরিচয়গুলো নৃতাত্তিক পরিচয়ের মতই মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ । যেমন আমি বাঙালির দোষের সমালোচনা করলেও, পুরুষতান্ত্রিকতার সমালোচনা করলেও নিজে যে বাঙ্গালি আর নিজে যে পুরুষ এই পরিচয়কে পরিবর্তন করতে পারবো না কোনমতেই । অর্থাৎ মুসলমান প্রগতিশীল বলতে তিনি ভাষার মারপ্যাঁচে মূলত মুসলিম পরিবার থেকে উঠে আসা নাস্তিকদেরই বুঝিয়েছেন।
ভিক্টিমের ঘাড়ে অপরাধের দোষ চাপানো আসলে শুনতে র্যাডিক্যাল শুনা গেলেও, রসুনের গোড়ায় গেলে সেই বিষাক্ত বাটপারি ছাড়া আর কিছু নেই । এই মনস্তত্ত মূলত নিজের অকর্মন্যতা ও কাপুরুষতাকে চটুল কথায় ঢাকার চেষ্টা । মানুষের ভিতরে এম্প্যাথি ও ন্যায়ের বিচার , সামাজিকভাবে বিবর্তিত হওয়ার কারণে বিল্ট-ইন । যেকোন অন্যায়ের মুখে মানুষ দ্রুত বুঝে যায় কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায় । কিন্তু এই ন্যায়-অন্যায় বুঝে যাবার মধ্যে ঝামেলা আছে । একটা কাজ অন্যায় এইটা বুঝে যাবার পর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে প্রতিবাদ করাটা মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায় । কিন্তু যে কাপুরুষ, যে ভিতরে অলস, নিজের দায়িত্বকে এড়াতে চায় , সেই এড়ানো সে আবার একেবারে নিরাবেগ , নির্বিবাদ করতে পারে না । মনের ভিতরের খচখচ থেকেই যায় । সেই খচখচ ভাবকে মোকাবেলা করার জন্য বাটপাড়ি যুক্তির সরবরাহ করে মস্তিষ্ক । ধর্ষিত মেয়ের উপর অপরাধ হইছে এটা স্বীকার করার পর ধর্ষককে বিচারের আওতায় আনার জন্য যে পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে তার চাইতে সহজ হচ্ছে মেয়েটার কাপড় অশ্লীল , তার চলাফেরার ঠিক নাই এগুলো বলে মেয়েটাকে দোষী সাব্যস্ত করে দেয়া । তাতে নিজের কাপড়ের ভাঁজও নষ্ট হলো না, আরাম কেদারা থেকে পাছাটাকেও উঠাতে হলো না কিন্তু ন্যায়ের অবতার হিসাবে দায়িত্বপালন ও হয়ে গেলো । এই প্রক্রিয়া যেমন নারী – পুরুষ দুই পক্ষই চালাতে পারে তেমনি নিজে নাস্তিক হয়েও নাস্তিকের খুনের দোষের সিংহভাগ নাস্তিকের উপর চাপিয়ে দেয়া যায় এইভাবে । বরং নিজে নাস্তিক এবং কাপুরুষ, মেরুদন্ডহীন, অলস অথর্ব হইলেই এই র্যাশনালাইযেশনের দরকার পড়ে বেশি । কারণ এক্ষেত্রে যেহেতু তার নিজের সমমনা কারো খুনের কথা আসছে, সেহেতু প্রতিবাদ প্রতিরোধের ন্যায্য চাপ তার আরো বেশি অনুভব করার কথা অন্যদের চাইতে । সেজন্য কিছু করতে না চাইলে , র্যাশনালাইযেশনের চাপও বেশি ।
তবে হ্যাঁ, এখানে একটা দিকে ভেবে দেখার মতো কথা বলেছেন যতীন সরকার। সেটা হচ্ছে কে নাস্তিক আর কে মুসলমান এই পরিচয় ট্যাগ লাগিয়ে দেবার একচ্ছত্র অধিকার মৌলবাদীদের দিয়ে দেয়াটা ঠিক হয় নাই । ভালো কথা । অর্থাৎ নিজেদের মুসলমান পরিচয়কে রিক্লেইম করতে হবে নাস্তিকদের । কিন্তু নাস্তিকরাতো মুসলমান পরিচয়ের যতটুকু নিজের ভিতর থেকে উঠানো যাবে না, যেমন , মুসলমানের ঘরে জন্ম, তার বাইরে আর কিছু নিজের অস্তিত্তের সাথে রাখতে চায় না । ধর্মীয় পরিচয় এমন কোন বায়োলজিক্যাল জিনিস না যে একে বয়ে বেড়াতেই হবে । পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শণের মত বইয়ের লেখক কিভাবে ধর্মীয় পরিচয়কে এইভাবে শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করতে পারেন এই বয়সে এসে, সেটা বিস্ময়কর ।
নাকি উনার এই কথার পিছনের কারণটা আরো ব্যাবহারিক । মানে নাস্তিক হও ভালো কথা । কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে স্বীকার করো না । পারভেজের মত বা বাইং মাছের মত ত্যাড়িয়ে ব্যাড়িয়ে একটা ধূলার আস্তরণ তৈরী করে রাখো নিজের চারপাশে, যেনো মৌলবাদী তোমাকে নাস্তিক বলে সনাক্ত না করতে পারে আবার নিজেদের দলেও ভাবতে না পারে । এইটা কি আমাদের অঞ্চলে সেই চিরাচরিত অবদমন ও নিজের চিন্তার সাথে অসততা করার যেই বৈষয়িক কূটশিক্ষা আমাদের দেয়া হয়, তারই চর্বিত চর্বন না ?
জায়গায় জায়গায় আরেকটি উন্নাসিক মনোভাব বিরক্তিকর লেগেছে । তা হলো, তোমরা নতুন নাস্তিকরা ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করোনা, ধর্ম নিয়ে বেশি না জেনেই কথা বলো এই অভিযোগ । তিনি কিভাবে জানলেন আমরা ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করি নাই ? তিনি কিভাবে জানলেন আমরা ধর্ম নিয়ে তেমন বেশি না ভেবেই ধর্মকে বাতিল করে দিচ্ছি । এমন হওয়ার কি কোন সম্ভাবণাই নাই যে, আমরা ধর্মের, বিশেষভাবে যারা মুসলিম ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি তারা ইসলাম ধর্মের অলিগলি সব দেখেশুনেই বলছি যে, ইসলাম একটি বিপদজনক মিথ্যা ? ভালো কথা, তিনি হয়তো মনে করতে পারেন আমাদের লেখা দেখে তার মনে হয়েছে আমরা ভালোমত পড়ি নাই । কিন্তু এই মনে হওয়াটা কি উন্নাসিকতা না ? তিনিই একটু আগে বলছেন, একটা বই কি প্রবন্ধ একেক পাঠক একেকভাবে পড়তে পারে । একই বই পড়ে ভিন্ন রকমের স্বিদ্ধান্তে আসতে পারে । তাহলে তিনি নিজে ইসলাম সম্পর্কে পড়ে যে স্বিদ্ধান্তে এসেছেন, অন্যরা সেই স্বিদ্ধান্তে আসে নাই দেখেই তিনি কিভাবে হুট করে বলে দেন, তোমরা ধর্মের বই পড় না, তোমরা ইতিহাস পড় না ।
ওয়েল ওস্তাদ, আমরা ইসলামের অলিগলি সব ভালোমত পড়েই এই স্বিদ্ধান্তে এসেছি যে এটা মানব সভ্যতার জন্য হুমকি । এবং এই স্বিদ্ধান্ত আমরা গিরগিটির মত রং পাল্টিয়ে , ম্যাক্সিমাম জনগোষ্ঠীর মামুবাড়ির আবদারানুভুতির কাছে নত না হয়ে, সরাসরি সৎভাবেই বলতে চাই । আপনার চিন্তাজগতে আলোড়ন হবে দেখে আপনি সেটাকে নরমসরম , সহনীয় করতে বলছেন বটে, কিন্তু তেমন করতে গেলে পৃথিবীর ইতিহাসের কোন ন্যায়ভিত্তিক উন্নতিই সম্ভব হতো না । দাস-মালিকদের অনুভুতি আর সহনশীলতার তোয়াক্কা করতে গেলে দাস ব্যাবস্থা কোনদিনই উঠতো না , পুরুষের সুবিধার জায়গাগুলো নিয়ে সংবেদনশীলতা দেখাতে গেলে এই সমাজ কোনদিনই নারীর জন্য বাসযোগ্য হবে না।
ছোটবেলায় নিম্নবুদ্ধির পোলাপানের মধ্যে একটা জোকস খুব চলতো । হঠাৎ দেখা । সবার সামনে বলে উঠলো, এই তুই নাকি বেলিরে নিয়া বাথরুমে যাস ? প্রথমবার সবার সামনে লজ্জায় লাল হয়ে যাবার কিছুক্ষণ পর বুঝলাম, ও আসলে বেলি বলতে ইংরেজি বেলি অর্থাৎ পেট বুঝিয়েছে ।
আস্তিক নাস্তিক নিয়ে যতীন সরকার এমন নিম্নবুদ্ধির কৌতুক না করলেও পারতেন । তিনি হয়তো এটাকে চটুল ভেবেছেন । কিছু বামপন্থী ভাবুক আবার এই কথার মধ্যে গভীর ভাবার্থও খুঁজে পেয়েছেন, যেমন পিরের মুরিদরা পিরের গুয়ের মধ্যেও নূরের জযবা দেখে। যা আছে তাতে বিশ্বাস করা আস্তিকতা, তাতে বিশ্বাস না করা নাস্তিকতা । মানে এইযে ম্যাটেরিয়াল দুনিয়া আমরা দেখি তাতে বিশ্বাস করাই আস্তিকতা । তাইলে জনাব, নিতান্ত বদ্ধপাগল ছাড়া কাউকে কি পাওয়া সম্ভব, যে নাস্তিক, মানে যে এই চারপাশের দুনিয়াদারীতে বিশ্বাস করে না? ভাষার মারপ্যাঁচের এই স্থূল রসিকতা নিতান্ত বাংলামূর্খ মোল্লাও বুঝবে যে , আপনি নাস্তিক , কিন্তু শিরদাঁড়া সোজা নাই বলে , আমি জগত সংসারের অস্তিত্তে বিশ্বাস করি তাই আমি আস্তিক বলে বাঁচতে চাইছেন। পাছে আবার মৌলবাদী বন্ধুটি কষ্ট পেয়ে যায় যে তার হৃদয়ের গভীরের বিশ্বাসে আপনার বিশ্বাস নাই এই কথা শুনে।
এবার আসা যাক প্রথমে যে বললাম যতীন সরকার ও পারভেজ আলম যে ধীরে ধীরে আলমাহমুদ ও বরবাদ মজহারের সিলসিলায় ঢুকে যাচ্ছেন সে বিষয়ে । কথোপকথনের এক পর্যায় পারভেজ ও যতীন সরকার দুইজনেই এক বিষয়ে একমত হচ্ছেন যে বুদ্ধ, যিসাস ও মোহাম্মদের আন্দোলনকে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে ধাপে ধাপের বিপ্লব হিসাবে দেখা যায় । কেনো তারা এরকম ভাবছেন, এর পিছনের মনস্তত্ত নিয়ে আমার কিছুটা পর্যবেক্ষণ আছে । তা হচ্ছে এই অঞ্চলে এবং পৃথিবী গ্রহের বিশাল একটা অংশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কোন সফলতা না পাওয়াতে এখন বরং তারা মৌলবাদী, ধর্মোম্মাদ গোষ্ঠীকে তাদের অযৌক্তিক বিশ্বাসের তোষামোদের মাধ্যেম নিজেদের দলে এনে বা নিজেরা সেখানে ঢুকে গিয়ে বিপ্লবের স্বপ্নদোষ দেখছেন, সে কারণে হয়তো । আমি কেবল আমার অভিমত বলতে পারি । তাদের মনের ভিতরের কথাতো আর জানি না ।
কিন্তু বুদ্ধ, যিসাস ও মোহাম্মদের আন্দোলনকে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে ধাপে ধাপের বিপ্লব হিসাবে দেখার মধ্যে কিছু মৌলিক সমস্যা আছে। প্রথমটা নিতান্ত বুদ্ধির । আইকিউ পরীক্ষার একেবারে প্রথম দিকে কিছু প্রশ্ন থাকে, যেমন নিচের তিনটার মধ্যে কোনটা অন্যদের চাইতে ভিন্ন সেটা বের করো । গরু ছাগল মুরগি । সামান্যতম বুদ্ধি থাকলে আপনার বুঝা উচিৎ , এর উত্তর মুরগি । বুদ্ধ, জিসাস, মোহাম্মদ এই তিনজনকে দিয়ে প্রশ্নটা করলে , উত্তর হবে মোহাম্মদ। দাসপ্রথা নিয়ে বুদ্ধের তেমন কোন অগ্রগতির কথা আমি শুনি নাই। আরো বিস্তারিত হয়তো তারা পরে বলবেন । জিসাসেরও ঠিক দাসপ্রথা নিয়ে তেমন বড়সড় কোন আপত্তির কথা শুনা যায় নাই । কিন্তু তিনি নিজে দাস কিনেন নাই, বিক্রি করেন নাই । মোহাম্মদকে এই সিরিজে ফালানোটা মৌলিক আইকিউর সমস্যা। মোহাম্মদ নিজে দাসী উপভোগ করেছেন, নিজে দাস বানিয়ে বিক্রি করেছেন। কালেভদ্রে তার মতে দীক্ষা নেয়া কয়েকজনকে তিনি মুক্তি করেছেন। এইটা ঠিক দাসপ্রথার বিরুদ্ধে একটা ফুলের টোকারও মূল্য পায় না।
ইসলামের প্রসারের শুরুর দিনগুলো থেকে শুরু করে, গত শতাব্দীতে শেষমেশ ধ্বংস হওয়া অটোমান খিলাফত পর্যন্ত, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দাস-দাসী ধরে নিয়ে পাইকারি ব্যাবসা ছিলো মোহাম্মদের অনুসারীদের আয়ের অন্যতম একটা বড় উৎস । ব্রিটিশদের ঠ্যাটানি ও লিংকনের অনমীয়নতার কারণে পৃথিবীব্যাপি দাস-ব্যাবসা , লিগ্যালি উঠে গেলেও, মোহাম্মদের অনুসারী আরবরা এখনো কিন্তু বাড়ীর কাজের লোক, কাজের মহিলাদের সাথে ক্রীতদাসের মতই আচরণ করে । ক্রীতদাসের মতই দেখে । কোরানের সেই বিখ্যাত , তোমাদের ডান হাত যাদের ধরে রেখেছে, তাদেরকে লাগানো জায়েজ আয়াতের কথা হয়তো যতীন সরকারের জানা নাই । পারভেজের জানা থাকলেও , সে ধূর্ততার সাথে সেটাকে সময়মত ভুলে যেতে পারে । এটা ঠিক মোহাম্মদের প্রথমদিকের অনুসারীদের মধ্যে দাস ছিলো অনেকে । সেটা সামাজিক স্তরবিন্যাসে এর চাইতে উপরের কারো কাছে তার উদ্ভট দাবী গ্রহণযোগ্য হয় নাই বলেই হয়েছে । দাসরা এমনিতে যে অবস্থায় ছিলো, এমনিতে জীবনের যে নীচু নীচু স্তরে ছিলো, তাতে যেকোন কিছুতেই তাদের বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে কারো মাথাব্যাথা ছিলো না । এই কারণে মোহাম্মদের আন্দোলনকে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র কোন অগ্রগতি ভাবলে, দুনিয়াব্যাপী ব্রিটিশদের উপনিবেশ স্থাপণকে বলা যায় বিশ্বের সবচে বড় চ্যারিটি, সবচে বড় মহানুভবতা । উপনিবেশ স্থাপণকে বলা যায় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-বিপ্লবের সুফল পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার উদার উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন ।
এনিহাউ, ইন্টারনেটের দুনিয়াকে প্রবীণদের এত ভয়ের কারণ হচ্ছে, এখানে আপনার সারাজীবনের অর্জনের কথা ভেবে, লাত্থি উষ্ঠা খাওয়ার মত কথা বললে তাতে লাত্থি উষ্ঠা দেয়া থেকে বিরত থাকবে না এমন ঘাড়ত্যাড়া পোলাপান অনেক বেশি । অন্যান্য বিষয়ে আপনার বলা কথা, আপনার জ্ঞান-প্রজ্ঞা সবকিছুই সম্মানজনক । যেটুকু অংশে লাত্থি উষ্ঠা খাওয়ার মত কথা বলবেন সেটুকু অংশে আপনার প্রাপ্য আপনাকে পেতেই হবে । সামন্ত দুনিয়া এখন আর নাই।
অনেক কিছুই জানতে পারলাম । ভালো লেগেছে ।
:rose:
স্বার্থের লোভে অনেকেই হজ্জ পালন করছে ও প্রগতিশীল দল হয়েও মুক্তমনাদের জেলে পুরছে, আফসোস কবে যে দেশটা সেক্যুলার হবে…………
মুক্তমনায় স্বাগতম।
কলম চলুক।
মুক্তমনায় স্বাগতম। ভালো লেগেছে লেখাটি।
মুক্তমনায় স্বাগতম
যতিন সরকার বা পারভেজ আলম কেউই বামপন্থার সোল এজেন্ট না। আজকাল মুক্তমনাদের মধ্যে বামদের দোষী করবার এক দুঃখজনক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সমাজতন্ত্র তার সকল দোষত্রুটি সত্ত্বেও একমাত্র রাজনৈতিক ব্যবস্থা যা পূর্ণ ধর্মমুক্ত সমাজের প্রতিশ্রুতি দেয়।
এই লেখায় কিন্তু বামপন্থা নিয়ে একটা কথাও বলা হয় নাই । যতীন সরকার এবং পারভেজ আলমকে নিয়েই বলা হয়েছে । কমিউনিজম নিয়ে কিছু কথা এসেছে কেবল বরবাদ মজহারের ব্যাখ্যাতে ।
ভাল লিখেছেন।
মুক্তমনায় স্বাগতম।
নাস্তিকতা বহুদিন ধরে চলে আসা চিন্তা। পড়াশুনা জানা যে কেউ এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানে; সমর্থন করুক আর না করুক। কিন্তু ‘কোপা শামসু কোপায়; মুছা জমসু রক্ত মুছে’ এই ধারার চিন্তা অত পুরনো না বোধহয়, অর্থাৎ রক্ত ঝরানোর মত রক্ত মোছাও যে অন্যায় সেটা অনেকেই এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। মনে হচ্ছে সময় লাগবে। আমাদেরই প্রচার করতে হবে দিকে দিকে।
একটা কৌতুহল- এই ‘মুছা জমসু’ গ্রুপটা কি ইতিহাসে আগেও ছিলো?
মুছা জমসু গ্রুপটাতো মূলত সুবিধাবাদী ব্যাক্তিত্বহীন নিজস্ব আদর্শহীন গ্রুপেরই অংশ । সেটা শুরু থেকেই থাকার কথা ।
যতীন সরকার এখন একজন মডারেট কমুনিস্ট (!!!!!) , মডারেট মুসলিম সংজ্ঞার মত। যদিও আমার কাছে মডারেট কমুনিস্ট আর মডারেট মুসলিম কাঁঠালের আমসত্বের মত।
গীতাদি, আমার নিজের বংগানুবাদে “মডারেট” মানে হলো “মিচকে”। তাই মডারেট কম্যুনিষ্ট আর মডারেট মুসলিম দু’টোই হলো “মিচকে”; অনুকূল বাতাসে পাল তোলা সুবিধেবাদী। বাংলাদেশে অনেক মিচকেরাই আজকে ঘাড়ে কোপ পড়বে ব’লে উল্টে-পাল্টে ভুলভাল তথ্য দিচ্ছে,যতীন সরকার হয়ত সে পথই ধরেছেন।
@ভজন সরকার,
দাদা, মিচকে— যথাযথ বংগানুবাদ। সাধুবাদ জানাই।
ভ্রস্ট এবং পুতিগন্ধময় সাক্ষাৎকার বলতে যদি কিছু থাকে, তবে তার উদাহরণ হিসাবে পারভেজ আলমের নেওয়া যতিন সরকারের এই সাক্ষাৎকারটিকে খুব সহজে দিয়ে দেওয়া যাবে।
যতীন সরকার তাঁর বক্তব্যে শুধুমাত্র যদি বৃদ্ধ বয়সের ভিমরতির ছাপ রাখতেন, তাহলে আমার তেমন কোনো আপত্তি ছিলো না, কিন্তু তিনি নাস্তিকতার যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এমন সব কথা বলেছেন, যা তাঁদেরকে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে। এমনিতেই বাংলাদেশে বর্তমানে এই ধরণের লোকেরা জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন, ঠিক সেরকম একটা বিপদসংকুল সময়ে যতীন সরকারদের মতো প্রগতিশীল লোকেরা কোথায় তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন, তা না তিনি তাঁদের মৃত্যুর জন্য বিপদের জন্য তাঁদেরকেই দায়ী করলেন পরিষ্কার ভাষায়। তাঁর কথাতেইঃ
যতীন সরকারের এই বক্তব্যের সাথে আমাদের দেশে ধর্ষিতাকেই ধর্ষণের জন্য দায়ী করার সাজুস্যটা লক্ষণীয়। এখানেই থেমে থাকেন নি তিনি। ব্লগাররা যে মোল্লাদের হাতে তাঁদের কল্লা হারাচ্ছেন একে একে, তাঁর জন্যো তিনি তাঁদেরকে সমানভাবে দুষেছেন। তাঁরাই উস্কানি দিয়ে নিজেদের কল্লা নামাচ্ছে।
যতীন সরকারের মতো লোকেরা আছে বলেই বোধহয় চরম উদাস চরম চরম সব স্যাটায়ার খুব সহজেই লিখতে পারেন। একজন প্রাজ্ঞ লোক হিসাবে তাঁর এইটুকু বোধ নেই যে, সভ্য একটা দেশে শত উস্কানি সত্ত্বেও একজন মানুষকে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে হত্যা করা যায় না। উস্কানি আর চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা, দাঁড়িপাল্লার দুইপাশে সমান ওজন নিয়ে দাঁড়ায় না।
নাস্তিকতা নিয়েও তাঁর চিন্তা ভাবনাটা পরিষ্কার না। কেউ নাস্তিক, এই বিষয়টাকে তিনি মেনে নিতে পারছেন না। সে কারণে নাস্তিকতাকে তিনি ফ্যাশন হিসাবে উল্লেখ করেছেন। হুমায়ূন আজাদের কার্যক্রমকে তিনি উল্লেখ করেছেন নাস্তিকতাতাবাদের আস্ফালন হিসাবে। ফ্যাশন মানুষ তখনই করে, যখন তার সামাজিক মূল্য থাকে, গ্রহণযোগ্যতা থাকে। আমাদের সমাজে একজন মানুষকে নাস্তিক হতে গেলে পুরোপুরি স্রোতের বিপরীতে চলে যেতে হয়। সামাজিক সব মূল্যতো হারায়ই সে, সেই সাথে ইদানিং জীবনটাই হয়ে পড়েছে শংকাময়। এই রকম একটা পরিস্থিতে কেউ যখন নিজেকে নাস্তিক দাবি করে, সেই দাবি কোনোক্রমেই ফ্যাশন হতে পারে না। বরং তাঁদের মতো লোক যাঁরা এখন নিজেদেরকে বামপন্থী লোক বলে পরিচয় দেন, ষাটের দশকের বামপন্থীতার প্রতি সমাজের উচ্চমূল্য দেওয়া এবং অনুকুলতার জন্যেই হয়তো তা হয়েছিলেন। সেই সময় যদি এখনকার মতো মৌলবাদিতার জয়জয়কার থাকতো, তিনি বামপন্থী পথ ছেড়ে নিশ্চয় মৌলবাদীতার ফ্যাশনই ধরতেন, এখন যেমন করছেন। বামপন্থীর পোশাকটা গায়ে আছে ঠিকই, কিন্তু মাথায় নিরাপদ টুপি পরে ফেলেছেন।
নাস্তিকতা নিয়ে তাঁর ধারণা যে পরিষ্কার না, তার স্বপক্ষে আরো বড় প্রমাণ হচ্ছে যে, মুসলমান পরিবার থেকে আসা নাস্তিকদের তিনি প্রগতিশীল মুসলমান হিসাবে গুলিয়ে ফেলেছেন। তিনি ভেবেছেন যে, আমরাও ইসলাম ধর্মের সংস্কার চাইছি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং রাজা রামমোহন রায়রা যেমন চেয়েছিলেন হিন্দু ধর্মের সংস্কার। ফলে, এই সংস্কার করতে গিয়েই মৌলবাদীদের সাথে আমাদের মূল বিরোধ, এটাই তিনি ভেবেছেন। তাঁর ভাষ্যে,
পারভেজ আলমের কথা জানি না, কিন্তু আমরা যে ইসলাম ধর্মকে বাতিল করে দিয়েছে, বাবার সম্পত্তি বলে মাথায় তুলে রাখি নি, এই বিষয়টা তাঁর মাথাতে বিন্দুমাত্রও আসে নি। আসে নি বলেই তিনি আমাদের জোরজবরদস্তি করে মুসলমান বানাতে চেয়েছেন।
কতখানি মাথায় ঘিলু কম থাকলে বা ভিমরতিতে ধরলে, এই রকম উদ্ভট একটা চিন্তা মানুষের মাথায় আসে জানি না। যে ধর্মটা ইচ্ছা নিরপেক্ষ সত্য, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত, সেটাকে পরম সত্য বলে মাথায় নিয়ে নাচানাচি করতে হবে কেনো কে জানে?
সাক্ষাৎকারে মানুষ অনেক সময় ভুল করে বেফাঁস কথা বলে ফেলে। সেরকম কিছু হলে মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন বলে ছাড় দেওয়া যায় বা এড়িয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু, যতীন সরকারের এই সাক্ষাৎকারটির ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে আছে প্রতিক্রিয়াশীল কথাবার্তা এবং ক্ষতিকর আচরণের পঙ্কিলতা, নর্দমার দুর্গন্ধতা। এরকম প্রতিক্রিয়াশীল ভাষ্য মোল্লাদের কাছ থেকে আসতে পারে, আসাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু, সেটা যখন যতীন সরকারদের মুখ থেকে আসে, তখন তীব্র হতাশ এবং আতংকিত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। মোল্লারা কল্লা কাটছে জ্ঞানের অভাবে, সহিষ্ণুতার অভাবে আর ইনারা সেই কল্লা কাটাকে জায়েজ করছেন তাদের বিশাল জ্ঞানের বহরকে কুৎসিত এবং কদর্যভাবে ব্যবহার করে, আমাদেরকে সবক দিতে দিতে।
মুক্তমনায় স্বাগতম। আপনার মতো একজন শক্তিশালী লেখক মুক্তমনাকে সমৃদ্ধ করবে বলেই আমার বিশ্বাস।
ধন্যবাদ । পরম কাবজাবের কাছে প্রার্থণা , ভালো কিছু যেন যোগ করতে পারি এখানে ।
“কারণ আমি ধর্ম জানি। আমি ধর্ম জানি বইলাই আমি ধর্ম মানি না। পরিষ্কার কথা। যে ধর্ম না জানে, সেই ধর্ম মানে। রিলিজিওন ইস রিগার্ডেড বাই দা কমন ম্যান এজ ট্রু, বাই দা ওয়াইজ ম্যান এজ ফলস, এন্ড বাই দা রুলারস এজ ইউজফুল। রুলাররা তো রিলিজিওন মানুক, না মানুক, তার ব্যবহার করে। এই যে যেমন এরশাদ, জগতের সবচাইতে বড় লম্পট ব্যাক্তি, সে করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।” যতীন সরকারের সাক্ষাৎকার থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলছি, উনি ধর্ম জেনে নাস্তিক হতে বলেছেন বোধ হয়।কারণ উনি নিজেও নাস্তিক। তবে সাক্ষাৎকারে ধর্ম নিয়ে তার মোলায়েম সুর বেশ শ্রুতিকটু লেগেছে বৈকি।
যাহোক, ‘ইস্টিশন’ পত্রিকায় যতীন সরকারের সাক্ষাৎকার নিয়ে যে আলোড়ন উঠেছে দূরের পাখির এ লেখাটি এরই একটি উদাহরণ। ধন্যবাদ ‘দূরের পাখি’কে প্রয়োজনীয় লেখাটি লেখার জন্য।তবে উনার সাক্ষাৎকার থেকে উদ্ধৃতি সহযোগে ব্যাখ্যা, দ্বিমত বা যুক্তি উপস্থাপন করলে যারা সাক্ষাৎকারটি পড়েননি তাদের জন্য লেখাটি পড়তে আরও সুবিধা হতো। এমন আরও লেখা পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
মোক্ষম অংশগুলো নিচে ফরিদ ভাই উদৃত করে দিয়েছেন দেখছি ।
এক কথায় দারুন।
আসলে সময়ের সাথে,জীবনের সাথে তথা নতুন নতুন জ্ঞান বিজ্ঞান, প্রযুক্তিমনা ও প্রযুক্তিবিদ্যার সাথে প্রতিনিয়ত যদি কারো জীবনের সম্পর্ক না থাকে তাহলে সে যত বড় মনষি হউক না কেন একটা সময়ে তার মতিভ্রম হয়-ই। বাংলাদেশের অবস্থা হচ্ছে একদম এখন সেই অবস্থা।
বাংলাদেশের ডান,বাম,মধ্যম সব আতেল-বুদ্ধিজীবিরা সবাই এখন বর্বর মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থায় ফেরত যেতে একে অন্যের সাথে যেন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। সেখানে আমজনতা শুধু তাদের অনুসারী মাত্র।
হুমম । এলিস ইন দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ডের রেড কুইনের মত । ক্রমাগত দৌড়াইতে না থাকলে জায়গাতেই থাকা যাবে না ।
দূরের পাখি সামনে কেন আস না। না আসলে চিনবো কি করে ? তোমার লেখনী মাঘ মাসের পূরণিমার রক্তবর্ণ চাঁদের মতো। স্নিগ্ধতার মধ্যে রক্তিম আভার বিছূরন। তাতে চোখের ক্ষতি না হলেও, ম্নের গহন কোনে দ্গ কেটে যায়। আশাকরি তোমার লেখা ব্রত্মান মনুষ্য সমাজের বাস্তব্বাদীদের সাহস যোগাবে। যারা মৌলবাদীদের ভয়ে এখনো পর্দার আড়ালে, তারাও বেড়িয়ে আসার সাহস পাবে। নাস্তিকদের আমি যুগ- উপযোগী চিন্তা ধারার মানুষ বালতে চাই। আস্তিক ও নাস্তিক শব্ধটি ধর্মীয় শাস্র থেকে আসা। এই শব্ধটিকে ব্রত্মান যুগের বাস্তব্বাদীদের আভিধান থেকে বাদ দেওয়া ভালো। কে আস্তিক ও কে নাস্তিক, এটা কে সীলমোহর লাগাবার মালিক হচ্ছে সব ধর্মীয় তথাকথিত ক্রতারা। এরা যুগ যুগ ধরে এই অধিকার ভোগ ক্যারে আসছে। সাধারন মানুষ কোন্দিন তাদের উপর প্রতিবাদ ক্রেনি। আতীতে রাজা থেকে প্রজা প্র্যন্ত এদের মাথার উপর রেখেছে। এখন নীচে নামতে চায়না। এদের টেনে নামাতে হবে।
লেখাটা এখানে দিয়ে দারুণ করেছেন। মুক্তমনা ব্লগে লেখার কথা আপনাকে অনেকদিন আগে বলেছিলাম। এখন এখানে দেখে খুব ভাল লাগছে। দারুণ লেখা। মুক্তচিন্তক লেখকদের বিরুদ্ধে যে বামাতী-আমাতী-জামাতী ষড়যন্ত্র চলছে তার মোক্ষম জবাব।
এই পারভেজ আলমের লেখার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝে আসেনা আমার। ইসলামের ইতিহাস নিয়ে লম্বা প্যাঁচাল পেড়ে উনি কি যে প্রমান করতে চান কে জানে??? তবে এই লোকের রুচিহীনতার প্রমান পাইছি অভিজিতদা মারা যাবার পর-নিজেকে বিতর্কে জয়ী ঘোষনা করে লেখা পোষ্টের মাধ্যমে। অভিজিতদা তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাইছিলেন, ওইটা নাকি অভিজিতদার আপস করার চেষ্টা ছিল!!!!
সহমত।