মানব বিবর্তনের ধারায় মানবজাতির এক অসাধারণ অর্জন তার গল্প বলার ক্ষমতা ! মানুষ যখন সুন্দর করে তাঁর কল্পনাকে প্রকাশ করে তখন তা হয় গল্প, এই গল্প যদি জীবনের কথা বলে তখন তা হয় সাহিত্য ! সাহিত্য কল্পনা হলেও তা থেকে আবার অন্য মানুষেরা আরো নতুন গল্প সৃষ্টি করার রসদ পায় ! এই গল্প মানুষ উপভোগ করে সেই সাথে তাকে নানা ভাবে প্রভাবিত করতে পারে ! কিন্তু এই গল্পকে যখন কোন প্রতারক ঈশ্বর/ আল্লার বাণী বলে প্রচার করে তখন তা হয়ে যায় ধর্ম ! মানব সভ্যতার ইতিহাসে মানুষ নামের এমন অনেক ভন্ড প্রতারকের জন্ম হয়েছে যাঁরা তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ধর্ম নামক এক “বিষ” পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে ! এই ধর্ম নামক “বিষ” এমনি এক শক্তিশালী বিষ যা হাজার হাজার বছর ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত করে রেখেছে ! মানুষ নামক এই প্রজাতিটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য তাঁর চিন্তা করার ক্ষমতা ! তাঁর নুতুন কিছু আবিষ্কার করার ক্ষমতা ! কিন্তু মানুষ যখন থেকে এই ধর্ম নামক বিষের দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন তাঁর চিন্তাশীলতা হ্রাস পেয়ে সে এক ইতর প্রাণীতে পরিণত হয় ! তখন সেখানে সৃষ্টিশীলতা হ্রাস পেতে পেতে শূন্যের ঘরে এসে ঠেকে ! তবে সুখের কথা এই যে পৃথিবীর সকল মানুষই মানুষ নামক ভন্ড ধর্ম প্রচারকদের ছড়িয়ে দেয়া বিষে আক্রান্ত হয়নি !
এই ধর্ম নামক বিষ খেকে মুক্ত মানুষেরাই যুগে যুগে চেষ্টা করেছে সাধারণ মানুষকে এই ধর্ম নামক বিষ খেকে মুক্ত রাখতে বা এই বিষে আক্রান্ত মানুষকে বিষ মুক্ত করে জীবনের পথে আনতে ! বলাই বাহুল্য এই রূপ বিষে অনাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সব সময়েই ছিল অনেক কম ! তাই তাঁরা যখন ধর্ম নামক মিথ্যা মনগড়া গল্প বিশ্বাস না করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছে তখন ধর্ম নামক বিষে আক্রান্ত – মস্তিষ্ক ধোলায়ক্রিত কপট শঠদের রোষানলে পড়েছে ! এমন অনেক ধর্ম নামক অনাক্রান্ত মুক্তবুদ্ধির মানুষদের এই ধর্ম নামক ধ্বজাধারীদের হাতে জীবন দিতে হয়াছে নয়তো জীবন বাঁচাতে দেশ খেকে দেশান্তরে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে !!!
পৃথিবী এখন অনেক এগিয়েছে, কিন্তু এখনো এই পৃথিবীর অনেক দেশেই এই ধর্ম-বিষে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অগুন্তি ! যে দেশে এই ধর্ম নামক বিষে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যত বেশি সেই দেশ এখনো সভ্যতার মাপকাঠিতে অনেক পিছিয়ে ! যে দেশ একদিন সক্রেটিসকে বিষ পানে হত্যা করেছিল, যে দেশ একদিন ব্রুনোকে বিজ্ঞানের সত্য বলার অপরাধে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল তারাও এখন সেই ধর্ম নামক বিষ খেকে মুক্তি লাভ করেছে ! কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই একবিংশ শতাব্দীতেও বহু দেশই সেই ধর্ম নামক বিষে আক্রান্ত হয়েই আছে ! সে দেশগুলির বেশিরভাগ মানুষই কেন জানি এই ধর্ম নামক বিষের কবলে থাকতেই বেশি পছন্দ করে ! বাংলাদেশ এমনি অনেক দূর্ভাগা দেশের একটি ! সেখানে এখনো অধিকাংশ মানুষই এই ধর্ম নামক বিষে আক্রান্ত – আর যারা প্রতিনিয়ত এই ধর্ম নামক বিষ সারা দেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে তাদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাছে ! তারা প্রকাশ্যে চিৎকার করে মাইক্রোফোন সহকারে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে প্রতিনিয়ত এই বিষ ছড়াচ্ছে ! সবচেয়ে আফসোসের বিষয় এই যে সেই দেশের সেকুলার বলে দাবিদার রাষ্ট্রযন্ত্রটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এই সব বিষধর ধর্ম ধ্বজাধারীদের বিষ ছড়াতে সহায়তা দিচ্ছে !
বাংলাদেশে এই ধর্ম নামক বিষে অনাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অগুন্তি না হলেও অনেক আছে সন্দেহ নেই – কিন্তু ধর্ম নামক বিষে আক্রান্ত অগুন্তি বিষধর জীবদের ভয়ে তারা অনেক সময়েই থাকেন নীরব ! এখন পর্যন্ত এই ধর্ম নামক বিষ বিস্তারের বিরুদ্ধে যারা সরব হয়েছেন – যারা বাংলাদেশের মানুষকে বিষে আক্রান্ত পরিবেশ খেকে মুক্তপরিবেশে আনতে চেয়েছেন তাঁদের সংখ্যা মাত্র হাতে গোনা কয়েক জন – তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন আবুজাফর শামসুদ্দিন, দাউদ হায়দার,তসলিমা নাসরিন, ড: আলী আসগর, ড; আহমদ শরিফ, হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিৎ রায় ! দাউদ হায়দার আর তসলিমা নাসরিনকে এই ধর্মান্ধ জীবের রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে করেছে ! কিন্তু এখানেই শেষ হলো না, এই বিষধর ধর্মধ্বাজাধারীরা রাষ্ট্রীয় আস্কারা পেয়ে এতটাই বাড় বেড়েছে যে প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতে শত শত মানুষের সামনে তারা মানবতন্ত্রের দিশারী দুই পুরুষকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ! ধিক সেই অন্ধকারের প্রাণীদের ! ধিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রকে !!!
আমি আমার ফেইসবুকের বন্ধু ওমর ফারুক লুক্সের সাথে একমত – আমরা কার কাছে বিচার চাইব ? সেই রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে যাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে আজ ধর্মান্ধজীবেরা ভয়ঙ্কর খেকে আরো ভয়ঙ্কর হচ্ছে !!!! তাদের কাছে বিচার চেয়ে অভিজিতের চেতনাকে আরো অপমান করা হবে বৈকি !!!
যারা অভিজিতের মত একজন আলোকিত মানুষকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করতে পারে তারা নরক বলে কোন কিছু থাকলে সেখানকার কীট বৈ আর কিছু নয় ! ওই কীটদের জন্য আমার কেবল করুণা – তোদের বিশ্বাসের দেবতা তোদের মানুষ বানাবে কবে !
অভিজিৎ এক মৃত্যুহীন প্রাণ – যতদিন এই পৃথিবীতে মানুষ থাকবে অভিজিতের মত এক মানবপ্রেমী মুক্তবুদ্ধির বিজ্ঞান সাধক ও জ্ঞান তাপসের নাম আলোর অক্ষরে লিখা রবে ! সবশেষে বলি – জয়তু অভিজিৎ !!
দাদা আজ অনেক দিন পর এই মন খারাপ নিয়ে লেখাগুলো পড়ছি। ঐ মাটিতে আমরা বিচার পাই না। নষ্টদের অধিকারে অনেক আগেই চলে গেছে। অভিজিত দার হাত ধরে যে মুক্তচেতনার সৃষ্টি হয়েছি সেই চেতনাকে ধারন করে মানবিক ও বিজ্ঞান মনস্ক সমাজের যাত্রা শুরু হয়েছে। এটাই আমাদের প্রেরণা।
অভিজিৎ এক চেতনার নাম, আমাদের প্রেরণার নাম।