Born into brothels ডকুমেন্টারিটা দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বিবেকের অনেক প্রশ্নে জর্জরিত হচ্ছিলাম, আবার কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। Ross Kauffman ও Zana Briski’র কলকাতার রেড লাইট এলাকার বাচ্চাদের নিয়ে বানানো ডকুমেন্টারি এটি। Zana কলকাতার রূপোপজীবিনীদের জীবন খুব কাছ থেকে দেখবেন বলে কলকাতায় রেড লাইট এলাকায় এসেছেন। তিনি এদের জীবনটা বুঝতে চান, উপলব্ধি করতে চান। পেশায় তিনি একজন ফটোগ্রাফার। তিনি ছবি তোলেন এই বাচ্চাদের, খেলেন তাদের সাথে। এভাবে তিনি অচিরেই বন্ধু হয়ে যান এই যৌনজীবী মেয়েদের বাচ্চাদের। নানা বয়েসের অগণিত বাচ্চা এখানে। এই বাচ্চাদের চোখে তিনি পৃথিবীটাকে দেখতে চান। অতি অসুস্থ নোংরা পরিবেশ চারিদিকে, ঘিনঘিনে নোংরা আবহাওয়া।অসুস্থতা গিজগিজ করে এখানে। জীবিকা ও পেটের দায়ে অপরিচিত পুরুষদের হাতে নিজের শরীর তুলে দেয় এখানকার মেয়েরা। তারই মধ্যে প্রতিনিয়ত অনাকাঙ্খিতভাবে জন্ম নেয় ফুলের মত শিশুরা। তারপর ফুলের মত নির্মল শিশুরা নর্দমায় ডুবে যায়। নর্দমা সাঁতরে ও হাতড়ে ওদেরকে বেঁচে থাকতে হয়, টিকে থাকতে হয় জীবন সংগ্রামে। এদের হাতেই ক্যামেরা তুলে দেন Zana। বাচ্চারা ছবি তুলতে থাকে তাদের পারিপার্শ্বিকতার, তাদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের। এইসকল পতিত, অচ্ছুৎ বাচ্চারা তাদের জীবন, তাদের অভিজ্ঞতা, তাদের দর্শন, তাদের স্বপ্ন, তাদের দুঃখকষ্ট, আনন্দ ইত্যাদি বিষয়ে ছলছল করে বলতে থাকে তাদের বন্ধু Ross Kauffman ও Zana Briskiকে। তাই দিয়ে তৈরি করা হয় Born into brothels ডকুমেন্টারি ফিল্মটি।
এই ব্রথেলের একটি বাচ্চা মেয়ে বলছে, আমাদের বাড়িতে যারা ঢোকে তারা খারাপ লোক। মাতাল লোক। খিস্তি দেয়। ‘তুই কি লাইনে নামবি?’ এই ধরনের কথা বলে। দু’দিন পরে ইয়ে করবে বলে গালি দিয়ে যায়।
১০ বছরের পূজা তার কয়েকজন বন্ধুর কথা বলছে, কচি এমনিতে ঠাণ্ডা। হাসিখুশি সব সময়। কিন্তু রাগালে রেগে যায়।
অভিজিৎ এমনিতে ভালো। তবে মুটু। সুচিত্রা খুব ভালো। ঠাণ্ডা মেজাজের। কারুর সাথে ঝগড়া করে না। যাকিছু দেয় সে চুপচাপ তা নিয়ে নেয়।
শান্তিকে কোনো জিনিস না দিলে ও খুব রেগেমেগে যায়।
মাণিককে কেউ খোঁচালে সে রেগে যায়। গৌরকে গরু বললে রেগে যায়।
১০/১১ বছরের কচি উপরের তলার গীতামাসির বাসন মাজার কাজ করে। দোকান থেকে কিছু কিনে এনে দেয়। এজন্য সে সামান্য পারিশ্রমিক পায়। এই বয়েসে, এই পরিবেশে থেকেই কচি বুঝতে পারে, যদি সে পড়ালেখা শিখতে পারতো তাহলে তার জীবনটা অন্য রকম হতো।
তাপসী বলছে, একজনের ছবি তুলতে গিয়ে অনেক খিস্তি শুনেছে সে। কিন্তু সেজন্য তার দুঃখ নেই বা দমে যায়নি সে। সে বলে, কিছু শিখতে গেলে অনেককিছু শুনতে হয়, অনেককিছু সইতে হয়। ওর বড়লোক হবার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। গরীব হয়েও সে অনেক সুখি একটা জীবন যাপন করতে পারতো যদি তার অন্য রকম জীবন থাকতো। সে ফটোতোলা শিখছে, সেলাই শিখছে, লেখাপড়া করছে। যদি সে কোনোভাবে একটা কাজ পায় তাহলে এই জীবন থেকে সে নিষ্কৃতি পেতে পারবে।
ক্যামেরা হাতে পেয়ে ওরা খুশি। ওরা ছবি তুলে চলে। ওদের জীবনে ছবি, চারপাশের ছবি। ওদের প্রতিদিনকার জীবনের বাস্তব চিত্র ধারণ করে ওরা ক্যামেরায়। ছবি তোলা এখানে সহজ নয় একেবারেই। সবাই ক্যামেরাকে ভয় করে। ক্যামেরা দেখলে রেগে যায়, গালি দেয়। তবুও বাচ্চারা ছবি তুলে যায়। একটা ছবিতে দেখা যায়, খাবারের থালাবাসন, উচ্ছিষ্ট খাবার আর জুতো চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে একই জায়গায়। অভিজিৎ বলে, এটাই ওদের বাস্তব জীবন।
বাচ্চাদের কারো কারো ছবি তুলতে ভালো লাগে বেশি, কারো বেশি ভালো লাগে ছবি বাছতে। ওরা ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে গেলে নানান জনে নানান টিটকিরি করে। এরা ক্যামেরা কোথায় পেলো ইত্যাদি রকম কথা বলে। তবুও ওরা ছবি তোলে ওদের জীবনের। ছবি তুলতে ওদের আনন্দ লাগে।
শান্তি বলে, ওর দরজার মধ্যে একটা ফুটো আছে। সেখানটায় সে একটা পর্দা দিয়ে রাখে। যাতে তার মায়ের কাছে বা অন্যান্য রমণীদের কাছে লোকজনের আসা-যাওয়া সে দেখতে না পায়।
আরেকটি বাচ্চা মেয়ে বলছে, সে তার নানীর কাছে থাকে। তার নানী তাকে তার বাবামা’র কাছে থাকতে দেয় না। কারণ তার বাবা তাকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। সে চায় না বিক্রি হতে, তার দিদিও চায় না, ছোটবোনটি বিক্রি হোক।
একজন বলছে, তার মা কী কাজ করে সে জানে। তা মুখে বলতে লজ্জা করে। একজন বলছে, মা যখন কাজ করে তখন সে ছাদে খেলতে চলে যায়।
অনেকে কয়েক প্রজন্ম ধরে এই রূপোপজীবিনী পেশায় আছে। কারুর কারুর মা, মাতামহী ও প্রমাতামহীও এই একই পেশায় ছিল। বংশ পরম্পরা ধরে চলছে এই পেশা। এইখানে জন্মাচ্ছে চাঁদের মত, জোছনার মত, ফুলের মত ফুটফুটে মেয়েরা। অভাব, অনাহার, খিস্তি খেউর পঙ্কিলতা তাদেরকে আচ্ছাদিত করে দেয়। আর কী-ই বা ব্যতিক্রমী পরিণতি হতে পারে ওদের। ওদের মায়েদেরও ত দোষ দেয়া যায় না। সন্তানদের এর চেয়ে ভালো জীবন দেবার সাধ্য তাদের নেই। অন্যকিছু এদের চিন্তায় আসারও কথা না। অনেক বৃদ্ধাও বাস করে এইখানে। তাদের আর রোজগার করার ক্ষমতা নেই। শরীরে রূপ নেই, যৌবন নেই। শুধু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে তারা।
এখানকার মেয়েরা সেজেগুজে চিকন গলির দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকে খদ্দেরের জন্য। খদ্দেররা গলির মাঝখান দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে দেখে মেয়েদের দিকে। কাউকে পছন্দ হলে নিয়ে যায় ধরে। তার সাথে কাটায় কিছুক্ষণ সময় বা কয়েক ঘণ্টা। বিনিময়ে টাকা পায় মেয়েটি। তাতে তার অন্নের ব্যবস্থা হয়।
পূজার বাবা তার মা’কে মারে টাকার জন্য। টাকা দিয়ে সে মদ খাবে। পূজার বন্ধু চায়, পূজা যেন এই পরিবেশ থেকে মুক্তি পায়। নইলে ওর বাবা ওকে বিক্রি করে দেবে। মুনমুনের মা তাকে বিক্রি করে দিতে চায়।
এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১১ বছরে। আরেকজনকে জোর পূর্বক রূপোপজীবীতায় বাধ্য করা হয়েছে। এখানে জন্মানো বাচ্চাদের সবারই অবস্থা ও জীবনের পরিণতি একই রকম। ছেলেরা বড় হয়ে অবৈধ ড্রাগ ডিলার হয়, নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। মেয়েরা হয় বারবণিতা। এখানেই জন্ম, এখানেই মৃত্যু। আর কী করবে এরা, আর কোথায় যাবে?
অভিজিৎ ছবি আঁকে অদ্ভুত সুন্দর। কেউ শেখায়নি তাকে। কোনো সুযোগ সুবিধে পায়নি শেখার। সে নিজে নিজেই আঁকে। রং তুলির আঁচড়ে তার ভাবনাগুলিকে জীবন্ত করে ফুটিয়ে তোলে। এই জায়গায় জন্মেছে সে আশ্চর্য শিল্পী-প্রতিভা নিয়ে। সে তার বাবার কথা বলছে, তার বাবা আগে খুব ভালো লোক ছিল। মোটাসোটা ছিল। একাই দুটো লোককে ফেলে দিতে পারতো। এখন তার বাবা নেশা করে। শরীর কঙ্কালসার। নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে সারাক্ষণ। চোখ খোলারও শক্তি নেই। চোখ সামান্য একটু ফাঁক করে তাকানোর চেষ্টা করে আবার বন্ধ করে নেশায় ডুবে যায়।
অক্সফোর্ড গ্যালারিতে ওদের তোলা ছবির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হয়। বাচ্চাদের সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। গাড়িতে সারাপথে কত আনন্দ ওদের। গান, হৈ-হুল্লোড়, কলকল হাসির ফোয়ারা। চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। নিজেদের তোলা ছবি দেখে ওরা কত খুশি। ওদের তোলা ছবি কত লোকে দেখতে এসেছে।
ওদেরকে বীচে নিয়ে যাওয়া হয়, চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কত খুশি ওরা। মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ছে ওরা, ফুলের মত হাসছে ওরা, পাখির মত কলকাকলি করছে ওরা। পরিপাটি করে সাজে ওরা কোথাও যাবার সময়। চুলে সিঁথি কাটে, সুন্দর জামা পরে, জুতো পরে। সুন্দর লাগে ওদের। ওদের আনন্দ, ওদের উচ্ছলতা আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে যায়। একটু আদর পেলে, একটু সহানুভূতি পেলে ওরা জীবনকে ভীষণভাবে উদযাপন করে। খুশিতে ওদের চোখ ঝিলমিল করে। ওদের চোখেমুখে আনন্দ খেলা করে। অন্য বাচ্চাদের মতই তো ওরা দেখতে এবং স্বভাবে। তবুও আমাদের সমাজ ও সমাজের অনেকের কাছেই কেন ওরা অস্পৃশ্য, কেন ওরা অচ্ছুৎ, কেন ওরা ঘৃণ্য? কোনো নিরপরাধ শিশু কীভাবে অস্পৃশ্য, ঘৃণ্য হতে পারে?
Zana নিরলস চেষ্টা করে যান এই বাচ্চাদের এখান থেকে বের করে আনার জন্য। তিনি বর্ডিং স্কুলে গিয়ে কথা বলেন এদের ভর্তির ব্যাপারে। কোনো স্কুল এদের নিতে চায় না। কারণ এদের জন্ম পতিতালয়ে। এক স্কুল রাজি হয়। কিন্তু এই বাচ্চাদের সবার এইচআইভি টেস্ট করিয়ে রেজাল্ট আনতে বলে; এদের পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে। সবার ফলাফল নেগেটিভ আসে।
বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করানো হয় ওদের। অভিজিৎ আমস্টারডাম যায় ছবির প্রদর্শনীতে। আবার ফিরে আসে কলকাতায়। কলকাতার ফিউচার হোপ স্কুলে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। মাণিকের বাবা তাকে স্কুলে যেতে দেবে না। পূজার মা তাকে স্কুল থেকে ফেরত নিয়ে নিয়েছে। শান্তি স্বেচ্ছায় স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। গৌর এখনো বোর্ডিঙে আছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখছে। সুচরিতার মাসি তাকে ব্রথেল ছেড়ে যেতে দেয়নি। কচি সাবেরা স্কুলে রয়ে গেছে, খুশি আছে এবং ভালো করছে।
আমাদের ও আমাদের সমাজের কাছে অস্পৃশ্য বঞ্চিত এই নিরপরাধ বাচ্চাগুলির সাথে Ross Kauffman ও Zana Briski’র কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই, কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। ভিনদেশী ও ভিনভাষী মানুষ এঁরা। তবুও এই বাচ্চাদের একটা সুস্থ সুন্দর আনন্দের জীবন দেবার জন্য কী আন্তরিক প্রাণান্তকর অক্লান্ত প্রচেষ্টা এঁদের। বিনিময়ে কিছুই ত চান না এঁরা। এমন নিঃস্বার্থ মহৎ মানুষ কী করে থাকেন এই হানাহানি লোভলাসলাময় চটুল পৃথিবীতে?
ব্রথেল কিংবা বিয়ে প্রথা একদিন থাকবেনা। মানুষ তার ইচ্ছেমত শিশুর জন্মদেবে কিংবা ক্লোন বানাবে। তখন এ বোধ আর থাকবে না পৃথিবীতে
প্রথমে ধন্যবাদ সেই সাহসী Ross- Zana কে এবং সেই সাহসী ব্যাক্তিকে যে এত সুন্দর সচেতনতামূলক লেখার জন্য।Ross এবং Zana র ভাগ্য ভাল যে তাদের গলা পর্যন্ত পুঁতে পাথর মারেনি মৌ…. !!!! কোনো ধর্মে কেন মানবতা কে গুরুত্ব দেয়া হয়নি জানিনা, তবে সকল ধর্মগ্রন্থে স্রষ্টার মনতুষ্টিমূলক কর্মকান্ডের বিধান না দিয়ে মানবতার জন্য, মনুষ্যত্বের জন্য Ross-Zana র মত কর্মকান্ড কে অনুপ্রানিত করে এমন বিধান থাকলে পরিপুর্নতা পেত।
বাংলাদেশে ব্রথেল নিয়ে তেমন কোন কাজ বোধহয় হচ্ছে না। উচ্ছেদ করেই সামাজিক কর্তব্যটুকু পালণ করা হচ্ছে সম্ভবত। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের আগ্রহ নেই, যাদের আগ্রহ আছে তাদের সামর্থ্য নেই টাইপ ব্যাপার স্যাপার।
@অনুসন্ধানী আবাহন,
যৌন পল্লী উচ্ছেদ করা তাহলে সামাজিক কর্তব্য !!! আপনার সমস্যা সামর্থ্য কিংবা আগ্রহতে নয়, সমস্যা হল দৃষ্টিভঙ্গিতে।
@অপার্থিব,
আগে বলুন তো, “শ্লেষ” শব্দটির সাথে আপনার পরিচয় আছে কি না।
@অনুসন্ধানী আবাহন,
হুঁ, রাতের আঁধারে যারা বেশ্যালয়ে যায়, এবং যাদের ঔরষে জন্মায় বেশ্যালয়ের শিশুরা তারাও দিনের আলোতে বেশ্যালয় উচ্ছেদের পক্ষে গলা ফাটিয়ে দেয়।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনাকে মুক্তমনায় দেখে ভালো লাগছে।
আসলে আমার কাছেও খুব বেশি পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। এর সঙ্গে যুক্ত করা যায় মডেলদের কথা। মডেলরাও সুন্দর মুখশ্রীকে পুজি করে অর্থ উপার্জন করে,এর মধ্যে কোন ক্রিয়েটিভিটি নেই। মুখশ্রীও যেহেতু শরীরের অংশ কাজেই শরীর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করার উদাহরণটি মডেলদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়। কিন্ত রক্ষণশীল সমাজ ব্যতিরেকে অন্য কোন সমাজেই মডেলিংকে ‘নেগেটিভ’ হিসেবে দেখা হয় না। কারন আমাদের ‘আধুনিক মানসিকতা’ এটিকে যুগের পরিবর্তন হিসেবেই মেনে নিয়েছে। বিপরীতদিকে প্রাচীন কাল থেকেই পতিতা বৃত্তি অধিকাংশ সমাজেই চরম ঘৃণিত পেশা হিসেবে স্বীকৃত । যেহেতু এটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পেশাগুলোর একটি এই ঘৃণাও তাই অত্যন্ত প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। ব্রথেলে থাকা নারী ও জন্মানো শিশুদের প্রতি আমাদের এই ঘৃণা ও অবজ্ঞা সম্ভবত সেই প্রাচীন ঘৃণার কিছু ক্ষুদ্র উত্তরাধিকার।
@অপার্থিব,
ঠিক বলেছেন। বেশ্যাবৃত্তি শরীর ভিত্তিক পেশা বলেই যদি সমাজে ঘৃণিত হয়ে থাকে তাহলে আরো অনেক শরীর ভিত্তিক কাজই ত রয়েছে, সেসব কেন ঘৃণিত নয়?
@অপার্থিব,
আপনি শিওর? “অপ্সরা”, “নগরবধু”, “গেইশা” এই টার্মগুলো আগে শুনেছেন কি ? শুনে থাকলে এটা জানাবেন কি, যে তারা ঘৃণিত ছিলো কি না? বা পতিতাবৃত্তি ঘৃণীত হিসেবে গন্য হচ্ছে কবে থেকে এবং কাদের জন্য তা কি জানেন?
@অনুসন্ধানী আবাহন,
আমার পরিচিত এক উচ্চশিক্ষিত ও অত্যাধুনিক মহিলা তার একমাত্র কন্যার নাম রেখেছে অপ্সরা। তাকে এই শব্দের অর্থ জিগ্যেস করলে বলল, হুরী। আমি তার জবাব শুনে নির্বাক হয়ে গেলাম। একজন পিএইচডি ডিগ্রীধারী মহিলা চাইছে, তার মেয়ে হুরী হোক।
@তামান্না ঝুমু,
শেষ থেকে আসা যাক। একজন মুমিনা কি চাইবে না, তার কন্যা মুমিনা হয়ে জান্নাতে যাক? তো জান্নাতে যেতে হলে হুরী হওয়া ছাড়া মুমিনাদের আর গতি কি? হিসাব তো ঠিকই আছে।
তবে এই উচ্চশিক্ষিতা ভদ্রমহিলা না জেনে বুঝেই কন্যার নাম রেখেছেন অপ্সরা। অপ্সরা আর হুরীর কনসেপ্টের মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান। হুরী হচ্ছে রোবোটিক যৌনদাসী, সে জান্নাতে আছে এই তার পরম পাওয়া, তার আর কোন ইচ্ছে অনিচ্ছে নেই, মানবিক কোন গুণাবলীও পাওয়া যায় না যৌনতা ছাড়া। কিন্তু অপ্সরা বৈদিক নর্তকী, স্বর্গ দরবারে তার নিজস্ব অবস্থান আছে, ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে, তাকে সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়, ফিল্ডওয়ার্ক নিজের সুবিধেমত করে থাকে এবং অনেকসময় অনেক দেবতাকেও একজন অপ্সরার সামনে ইনটেলেকচুয়াল খাবি খেতে হয়েছে।
এই অপ্সরাদেরই খানিকটা পরিবর্তিত চেহারা আমরা দেখতে পাই গৌতমের সমসাময়িক “নগরবধু” কনসেপ্টের মাঝে। যেমন নগরবধু আম্রপালী, যার মত বিদুষী নারী সে সময়ে বৈশালী নগরে আর একজনও ছিলো না
@অনুসন্ধানী আবাহন,
আপনি ঠিক বলেছেন। তবে সাধারণতঃ সাধারণ মানুষ হুরী অপ্সরা কিন্নরী নামের অলীক প্রাণিগুলিকে একই মনে করে। তাদের ধারণা, বিশ্বাসের ভিন্নতা অনুযযায়ী এদের দায়-দায়িত্ব যোগ্যতা ও কার্যক্রম একটু এদিক-ওদিক; তবে মূলত এরা একই।
আমার কাছে বিষয়টা কিছুটা অভিমন্যুর চক্রব্যুহের মতন মনে হয়। বেশ্যালয়ে জন্ম নেয়া শিশুদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবার জন্যে আমাদের হয়ত আরো এক শতক অপেক্ষা করতে হবে। এখানে আমরা যারা এই বিষয়টা নিয়ে আলাপ করছি- তাদের কয়জন প্রস্তুত আছি একজন রুপজীবি মেয়ের সন্তানের দায়িত্ব নিতে- মানে মুখের কথায় নয়- সত্যি সত্যি করে দেখাতে? এই মুভিতে বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব প্রথমে কেউ নিতে চায়নি-এমনকি সেই মিশনারি স্কলের নান পর্যন্ত খুব অবাক হয়েছিল ব্রিস্কি সোনাগাছিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন শুনে! এই দৃশ্যটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ন দৃশ্য মনে হয়েছে আমার।
আর তামান্না, আমি ব্রোথেলকে বাংলায় বেশ্যালয়ই বলবো। ভেবে দেখেন তো- শব্দ একটা নিরপেক্ষ জিনিস নয়? আজ যদি ‘বেশ্যা’ একটা ফুলের নাম হতো- আমি হয়ত আমার মেয়ের নাম রাখতাম সেই নামে। আমরা মগজ বেচি, শিক্ষা বেচি- আর ওই মেয়েরা শরীর বিক্রী করে- পার্থক্য কোথায়? একই তো মনে হয় আমার কাছে!
@মণিকা রশিদ,
আমারও আপত্তি নেই বাংলায় বেশ্যালয় বলতে, মণিকা। আমরা অনেকেই আজো বেশ্যা শব্দটিকে গালি হিসেবে ব্যবহার করি, তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখি। তাই ব্রোথেল লিখেছিলাম, যদিও বেশ্যালয় ও ব্রোথেলের একই অর্থ।
পার্থক্য নেই আমার কাছেও। বরং নিজের শরীর দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেও ওরা আমাদের সমাজের সবার ঘৃণা কুড়ায়। এমন কি যারা গোপনে তাদের কাছে গমন করে তারা পর্যন্ত প্রকাশে তাদের ঘৃণা করে। তাই তাদের জন্য সহমর্মিতা রয়েছে।
একশো বছরেও হবে কিনা কে জানে।
অনেক দিন আগে এই ডকুমেন্টারিটির নাম শুনেছিলাম কিন্ত দেখা হয় নি। চমৎকার এই লেখাটির জন্য লেখিকাকে ধন্যবাদ।
@অপার্থিব,
আপনাকেও ধন্যবাদ।
@অপার্থিব, এই ডকুটা খুব কন্টোভার্সিয়াল- এমন বলেছিলো কোলকাতার আমার এক ফটো সাংবাদিক বন্ধু। মুভিটা দেখে সেকথা আর মনে থাকেনি। আপনাকে এই ডকুতে ব্যবহৃত বাচ্চাদের তোলা ছবিগুলো একটু মন দিয়ে দেখতে অনুরোধ করি- । সোনাগাছি/কালিঘাটের বাস্তবতা আমরা অল্প-বিস্তর জানি, কিন্তু একজন শিশু যে একজন শিশুই – তা সে যে পরিবেশেই বসবাস করুক না কেন- – সেটা এই ছবিগুলোর মধ্য দিয়ে দেখে আমি নির্বাক হয়ে গেছিলাম।
@তামান্না ঝুমু
আমি নির্বাক। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
@রতন কুমার সাহা রায়,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য। আপনাকে মুক্তমনায় অনেকদিন পর পর দেখি কেন?
সত্যিই হৃদয়স্পর্শী তামান্না ঝুমু! মারনাস্ত্রের পেছনে না ছুটে পৃথিবীর এই সুন্দরতম ফুলগুলো ফোটাবার প্রত্যয় উচ্চারিত হোক আজ।
@কেশব কুমার অধিকারী,
পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য মরণাস্ত্র ও যুদ্ধের জন্য যে পরিমাণ শারীরিক ও মানসিক শ্রম ও অর্থ অপব্যয় হয় তার চেয়ে অনেকগুণ কম সদিচ্ছা ও অর্থে এই ফুলদেরকে বাঁচানো যায়, এদের সুবাসে সুবাসিত করা যায় সমস্ত পৃথিবী।
সব সময়ই এই মহৎ মানুষগুলো যুগে যুগে এক দুজন করে ছিল । কিন্তু এরকম মহৎ কাজ করা মানুষগুলোর সংখ্যা কম হওয়ায় এবং এই কাজগুলো অনেক কঠিন হওয়ায় এই কাজগুলো ব্যাপকতা পায়নি সেরকম ভাবে ।
ঘুমন্ত মানুষগুলো যখন জেগে উঠবে তখন এই মহৎ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে । আর এক সাথে অনেক মহৎ মানুষ সম্মিলিত হবে যেদিন সেদিন পৃথিবীর কোন শিশুই তাদের নুন্যতম অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না ।
সমাজে সমস্যা প্রচুর তাই জীবন কঠিন, ফলে মানুষও স্বার্থপর ।
কিন্তু ঘুমন্ত মানুষগুলো জেগে উঠে যেদিব সব সমস্যাগুলোকে একটা একটা করে সমাধান করবে সেদিন কোন শিশুই ব্রথেলে জন্মান শিশুদের মতো অধিকার বঞ্চিত থাকবে না ।
জগতের এই মহৎ মানুষগুলোকে ধন্যবাদ দিয়ে তাদের অবদানগুলোর যথার্থ সম্মান দেয়া সম্ভব নয় ।
@মানবিক মানব,
আপনার সাথে একমত।
আচ্ছা কেউ কি জানেন, আমাদের দেশে এই রূপোপজীবিনীদের বাচ্চাদের দেখা শোনার জন্য কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে কি না?
অনেক টাচি একটা ডকুমেন্টারি।
ধন্যবাদ, তামান্না ঝুমুকে, এই বিষয়টা নিয়ে লেখার জন্য।
মানবিকতা জেগে উঠুক।
@প্রাচ্য,
আমার জানা নেই।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
আমি বাকরুদ্ধ। বাচ্ছাগুলোর সুখী সুন্দর জীবন কামনা করি। জানাস ব্রিস্কিকে শতবার প্রণাম।
httpv://www.youtube.com/watch?v=_kyXFr2g1x8
@আকাশ মালিক,
এরকম জায়গায় প্রতিদিন অসংখ্য শিশু ফুলের মত জন্মাচ্ছে তারপর নর্দমায় ডুবে যাচ্ছে। রোজ ও জানার মত মানুষ যদি এদের জন্য কাজ করে তাহলেই এরা পেতে পারে সুন্দর জীবন। কোটি কোটি স্যেলুট এঁদেরকে।