Ali Abdul, the Indian, who is suspected of being a prohibited immigrant, was met at No 63 Caroline Street, Redfern, on the 29/07/1930 and conveyed to the customs house for interrogation. DI Thomas V. Maher, customs officer, 29 July 1930.
আজ থেকে প্রায় ৮৫ বছর আগে আলি আব্দুল নামের এক নিরীহ ভারতীয় অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় সুবিশাল এক আইনি ঝামেলায় পড়েছিলেন। লেখাপড়া না জানা সামান্য এক ছোট ব্যবসার মালিক প্রজাকে যদি ইংল্যান্ডের রাজার বিপক্ষে মামলায় লড়তে হয়, তাহলে সেই মামলাকে ‘সুবিশাল’ না বলে অন্য কিছু বলার উপায় নেই, অন্তত সেই প্রজার তরফে। সাদা অস্ট্রেলিয়ার সেই প্রায়ান্ধকার যুগে আলী আব্দুল নামের এই ভারতীয় নাগরিক অস্ট্রেলিয়ায় থাকার অধিকার আদায় করে নিয়েছিলেন আইনের মারপ্যাঁচে আর উপস্থিত বুদ্ধির জোরে। আর সেকারণেই সাদা অস্ট্রেলিয়ার রক্ষকেরা তাকে অবৈধ অভিবাসী অথবা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সাব্যস্ত করে ভারতে ফেরত পাঠাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। সাদা অস্ট্রেলিয়া নামক সেই কালো সময়ের এক বিস্মৃতপ্রায় গল্প এই আলী আব্দুলের গল্প।
এই গল্প কোন মিডিয়াতে আসেনি সেসময়, কোন তোলপাড় ওঠেনি সুশীল সমাজের চায়ের কাপে, কিম্বা হয়নি কোন প্রতিবাদসভা/সমর্থনসভা। ফেসবুকে ইভেন্ট খোলা হয় নি দেশে দেশে। আলী আব্দুল একাই মামলা লড়ে গেছেন নিজেকে অস্ট্রেলিয়ায় বৈধ অভিবাসী প্রমাণ করতে, তার ভাঙ্গা ইংরেজী আর চাঙ্গা মনোবল দিয়ে। ১৯৩০ সালে, তার যখন বয়স ৫৭ বছর, তখন তিনি অস্ট্রেলিয়ান ইমিগ্রেশান দপ্তরের এক সিনিয়র গোয়েন্দা পুলিশের নজরে পড়েন। সেসময় আলী আব্দুল সিডনীর রেড ফার্ন এলাকার আবেরনাথি রোডে একটা ছোট মুদীর দোকানের মালিক ছিলেন। সাদা অস্ট্রেলিয়া পলিসি, যার আসল নাম ‘ইমিগ্রেশান রেস্ট্রিকশান এক্ট ১৯০১’ – সেটির বয়স তখন তিন দশক। কাজেই গোয়েন্দা পুলিশ সিডনীর এক দোকানে একজন ভারতীয়কে দেখে অবাক হয়েছিলেন। ‘এই চিড়িয়া এইখানে কিভাবে এসে পড়ল?’ জাতীয় একটা ভাবনা থেকেই সেই পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে আলী আব্দুল বারবার দাবী করছিল যে সে এই দেশে আছে তিরিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে, অথচ তার হাতে কোন কাজগপত্র ছিল না সেটা প্রমাণ করার। কাজেই তাকে গ্রেফতার করা হয় ‘ইমিগ্রেশান রেস্ট্রিকশান এক্ট ১৯০১’ ভঙ্গ করার অপরাধে। এই আইনের একটু সামান্য ফাঁক ছিল – ১৯০১ সালে সাদা অস্ট্রেলিয়া পলিসি পাশ হওয়ার আগে যদি কেউ এই দেশে এসে থাকে, তাহলে তারা অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে পারবে, তবে তাদের স্ত্রী-পুত্রাদি কেউ তাদের সঙ্গে থাকার জন্য এই দেশে আসতে পারবে না, এবং তারা নিজের দেশে ফেরত গেলে আর ফিরে আসতে পারবে না। আলী আব্দুলের দাবী, তিনি এই আইন মোতাবেক বৈধ, কারণ তার আগমন ১৯০১ সালের আগে, যদিও তার কাছে কোন কাগজপত্র নেই। ভারত সে সময় ব্রিটিশ সম্রাজ্যাধীন, ফলে ভারত/শ্রীলংকা/আফগানিস্তান থেকে ভারতীয়রা শ্রমিক, জাহাজের পাচক, উটচালক সহ নানা ধরনের পেশায় এদেশে আসতেন-যেতেন, যার জন্য খুব একটা কাগজ-পত্র দরকার হত না। পুলিশের দাবী, এতদিন পুলিশের চোখ এড়িয়ে এই দেশে থাকা অসম্ভব – তাহলে অন্তত তার নাম ইমিগ্রেশান দপ্তরের কাগজপত্রে থাকত – কাজেই আলী আব্দুল অবশ্যই সম্প্রতি এই দেশে এসেছে অবৈধ উপায়ে, সম্ভবত কোন জাহাজে করে। আলীর দুর্বল ইংরেজী ছিল আরেকটা প্রমাণ। দেখা যাচ্ছে, বোট পিপল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সমস্যা শুরু হয়েছে ইদানিংকালে নয়, বেশ আগেই!
আলী আব্দুল বনাম দি কিং অফ ইংল্যান্ড মামলায় ক্রাউন প্রসিকিউটরের কাজটা ছিল খুব সহজ – দুর্বল ইংরেজীজ্ঞান সম্পন্ন একজন ভিনদেশী, যার হাতে কোন কাগজপত্র নেই অথচ দাবী করছে যে সে এই দেশে একজন বৈধ অভিবাসী, তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং ১৯০১ সালের ইমিগ্রেশান রেস্ট্রিকশান আইন ভঙ্গকারী প্রমাণ করা। আলী আব্দুলের হাতে কোন কাগজপত্র নেই, অথচ তার সামনে একটাই উপায় – তাকে প্রমাণ করতে হবে যে সে এই দেশে এসেছে ১৯০১ সালের আগে – এছাড়া নিজেকে বৈধ প্রমাণের আর কোন সুযোগ নেই। কারণ, সেই কুখ্যাত আইন অনুযায়ী ১৯০১ সালের পরে কোন অ-সাদা মানুষই অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন করতে পারেন না। মামলায় ছয়জন সাক্ষী ছিলেন – বাদী পক্ষে অর্থাত অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল সরকারের পক্ষে ছিলেন দুইজন, আর আসামী পক্ষে চারজন।
বাইশ বছরের যুবক হিসেবে জাহাজে চেপে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করার প্রয়োজনে। এদেশেই জীবনের বেশীরভাগ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। নানা কায়িক পরিশ্রমের কাজ করে দেশে টাকাপয়সা কিছু পাঠিয়েছিলেনও বটে, তবে তা সামান্য। অজানা অচেনা এই দেশ, তার উপরে ইংরেজীতে তার দখল কম। টিকে থাকতেই প্রাণান্তকর পরিশ্রম করতে হয়েছিল তাকে। অনেক কষ্টে এতদিন পরে গড়ে তুলেছেন তার এই দোকান। মামলায় হেরে গেলে অস্ট্রেলিয়ায় তিন দশকেরও বেশী সময়ের পরিশ্রমে গড়ে তোলা তার ছোট মুদীর দোকান ফেলে লাহোরে ফিরতে হবে। মামলায় জিততে পারার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আলী আব্দুলের মনে প্রশ্ন জাগে, অস্ট্রেলিয়ায় আসাটা কি তার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল? তখন তার মনে পড়ে, এই সিদ্ধান্ত আসলে সে নিজে নেয় নি, তার হয়ে তার পরিবারই নিয়েছিল। অভাবের সংসার, বাবা বাজারের কুলী, বিবাহযোগ্য তিন বোন, চাচা এক ইংরেজ সাহেবের চাকর। সেই ইংরেজ সাহেবের কথায় উতসাহিত হয়ে আলীর বাবা-চাচা মিলে তাকে বোম্বে পাঠিয়ে দেয়, যাতে করে সে ব্রিটিশ সম্রাজ্যের অন্য কোন অংশে যেমন ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাতে পারে। যাতায়াতের বাহন ছিল জাহাজ – ভারতীয়রা সাধারনত জাহাজে কাজ নিয়ে উঠত, ফলে পয়সা দিয়ে ভ্রমণ করতে হত না। দুরের কোন সুবিধাজনক বন্দরে নেমে পড়লেই হল – এভাবেই ভারতীয়রা লন্ডনে, জোহানেসবার্গে কিম্বা দুবাইতে শ্রমিক কলোনী গড়ে তুলেছিলেন। বোম্বেতে আলী আব্দুলের পরিচয় হয় এক ভারতীয় সারেং তথা নাবিকদের দলনেতার সঙ্গে, যে ভারতীয় টাকার বিনিময়ে আলীকে জাহাজে কাজ দেয়। জাহাজ কোথায় যাচ্ছে জানার প্রয়োজন বোধ করে না আলী – যেতে পারলেই হল। তার মনে আছে, কলম্বো বন্দরে তারা জাহাজ বদল করে। তার কাছে থাকা বাকী সব ভারতীয় টাকা সে এখানে আরেক সারেং কে দিয়ে সেই জাহাজে কাজ নেয়। তিন সপ্তাহের এই যাত্রার শেষ মেলবোর্নে।
আলী আব্দুল সেই দুই জাহাজের কোনটারই নাম মনে করতে পারে না। ১৮৯৮ নাকি ১৮৯৭? স্মৃতি তাকে প্রতারিত করে। ব্রিটিশদের সর্বগামী ডাকব্যবস্থার কল্যাণে পরিবারের সঙ্গে তার চিঠি আদানপ্রদান হয়, তবে চিঠি যেতে লাগত ৩ মাস, আর আসতে তিন মাস। এদিকে ছমাসে আলীর যাযাবর জীবনে এক জায়গায় থাকার নিশ্চয়তা ছিল না – নানা পেশায় নানা জায়গায় ঘুরত সে। ফলে চিঠি মাঝেমাঝেই হারিয়ে যেত। তারপরেও প্রথমদিকে কিছু চিঠি পাওয়ার কথা তার মনে পড়ে, তবে সবই হারিয়ে গেছে এই দীর্ঘ সময়ে। তবে তার স্পষ্ট মনে আছে, তার আসার বেশ ক’বছর পরে অস্ট্রেলিয়ার সবগুলো স্টেট ও টেরিটরি মিলে একত্রে ফেডারেশন গঠন করে, এবং তখন সাদা অস্ট্রেলিয়া পলিসি পাশ হয়। কিন্তু আদালতে তার এই স্মৃতিনির্ভর কথাকে অভিজ্ঞ বিচারকেরা পাত্তা দিতে চান না। ইমিগ্রেশানের তদন্ত অফিসার থমাস মাহের, যিনি আলী আব্দুলকে গ্রেফতার এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তার যুক্তিপ্রমাণ সহকারে। বিচারকদের মনে কি ছিল তা কারো জানার উপায় নেই, কিন্তু এই আপাতমূর্খ ভারতীয় যে তার কেইস ডিফেন্ড করতে সাক্ষী সহকারে আদালতে হাজির হবে, তাতেই ক্রাউন প্রসিকিউটর ও ইমিগ্রেশান দপ্তরের আমলারা অবাক। তাদের সম্ভবত ধারনা ছিল যে, কোন লিখিত প্রমাণ না থাকায় আলী আব্দুল তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে দেশত্যাগ করবে। সাদা অস্ট্রেলিয়ার অভিভাবকেরা ব্যাপারটায় যতটা না মজা পেয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশী বিরক্ত হয়েছিলেন। তাদের হাতে তখন অনেক কাজ – ব্রিটিশ সম্রাজ্যের নানান জায়গা থেকে জাহাজ এসে অস্ট্রেলিয়ার নানা বন্দরে ভীড়ত, আর সেগুলো থেকে মাঝে মাঝে দু-একজন এশিয়ান (ভারতীয়, চীনা, মালয় কিম্বা ফিলিপিনো) নাবিক, শ্রমিক, এমনকি মাঝে মাঝে দু’একজন যাত্রীও হারিয়ে যেত। তাদেরকে ধরে ধরে দেশে ফেরত পাঠানোই ছিল ইমিগ্রেশান দপ্তরের কাজ। অনেকসময় হারিয়ে যাওয়া এশিয়ানদেরকে খুঁজতে গোয়েন্দা নিয়োগ করা হত অথবা পুরষ্কার ঘোষণা করা হত।
আলী আব্দুল ছিলেন অশিক্ষিত মানুষ, প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে। লাহোরের গরীব পল্লীতে এক মুসলিম পরিবারে জন্ম। সেসময় মুসলমানদের মধ্যে অভিজাত ছাড়া কেউ ইংরেজী স্কুলে লেখাপড়া শিখতে যেত না। মুসলিমরা মাদ্রাসা-মক্তবে যেত বটে, তবে তাও সমাজের উঁচুতলার মানুষদের জন্য বরাদ্দ ছিল। আলী আব্দুলের পরিবার সেখানে একেবারে দিন আনি – দিন খাই অবস্থায় দিনাতিপাত করত। আলী উর্দু কিম্বা হিন্দীও লিখতে পারত না, আর অস্ট্রেলিয়ায় ৩৫ বছর থাকার পরেও কোর্টে তাকে ইন্টারপ্রেটার নিতে হয়েছিল। কাজেই কোর্টের কাগজপত্রের ব্যাপারগুলো সামলাতে তাকে খুব বেগ পেতে হয়েছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা পুলিশ থমাস মাহের আলীকে যে প্রশ্নগুলি করেছিলেন, তার অন্যতম ছিলঃ
-Do you remember the date you arrived in Australia? (Ali replied in the negative)
-Do you remember the name of the ship from which you landed? (Again, Ali replied in the negative)
-When you landed in Melbourne, where did you go? (Ali had no answer)
এর পরে মাহের আলীকে ডিকটেশান টেস্ট দিতে বলেন – একজন পরীক্ষক ইংরেজীতে একটি বা একাধিক প্যারাগ্রাফ পড়বেন, আর পরীক্ষার্থীকে তা শুনে শুনে কাগজে শুদ্ধ বানানে লিখতে হবে। আমরা যাকে বলি সাদা অস্ট্রেলিয়া পলিসি, তাতে আসলে কোথাও বলা ছিল না যে, অ-সাদারা অস্ট্রেলিয়ায় আসতে পারবে না। এই ডিকটেশান টেস্টই ছিল সেখানকার মূল অস্ত্র – নিয়মটা ছিল এরকমঃ অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনপ্রার্থীকে ইংরেজী অথবা ইমিগ্রেশান অফিসারের পছন্দের অন্য যে কোন ভাষায় ডিকটেশান টেস্ট পাশ করতে হবে। ব্যস। অস্ট্রেলিয়াতে যাকে ঢুকতে দেওয়ার ইচ্ছা নাই, তাকে তারা জার্মান, চেক, পোলিশ, আইরিশ গ্যালিক, লিথুনিয়ান অথবা অন্য যে কোন ভাষার পরীক্ষায় বসিয়ে দিত। ফলাফল যা হবার তাই হত। এক ভাষার যদি কেউ ভাগ্যক্রমে পাশ করেও যেত, তাহলে ইমিগ্রেশান অফিসার তাকে দ্বিতীয় আরো একটি ভাষায় পরীক্ষা দিতে পারত। একেবারে ফুলপ্রুফ ব্যবস্থা। আবার কাউকে যদি অস্ট্রেলিয়ার দরকার হত, তাহলে তাদেরকে এই টেস্টে এক্সেম্পশান দেওয়া হত। আফগান উটচালকদের হয়েছিল সেই বিরল সৌভাগ্য, তবে অন্য সাধারন ভারতীয় কিম্বা অন্য অ-সাদা মানুষদের ভাগ্য তত ভাল ছিল না। ১৯০২ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে এই ডিকটেশান টেস্ট দিয়েছিলেন ৮০৫ জন, পাশ করেছিলেন ৪৬ জন। ১৯০৪-১৯০৯ সালের মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৫৫৪ জন, পাশ করেছেন মাত্র ৬ জন। ১৯০৯ সালের পরে আর কেউ পাশ করেননি। এই ডিকটেশান টেস্টে ফেল করাদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান হলেন সম্ভবত চেকোশ্লোভাকিয়ার ইহুদী সাংবাদিক ও লেখক এগোন এরউইন কিশ, যিনি অস্ট্রেলিয়ায় আসতে চেয়েছিলেন একটি সম্মেলনে যোগ দিতে। তার সমস্যা একটাই – তিনি সমাজতন্ত্রী ছিলেন এবং ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদের কড়া সমালোচক ছিলেন। ডিকটেশান টেস্টে কিশ বেশ কটি ইউরোপীয়ান ভাষায় তার দক্ষতার পরিচয় দেন। তখন উপায়ান্তর না দেখে ইমিগ্রেশান অফিসার তাকে স্কটিশ গ্যালিক ভাষার উপরে পরীক্ষা দিতে বলেন। এই ভাষা স্কটল্যান্ডের একটি অঞ্চলের অপ্রচলিত এবং বিলুপ্তপ্রায় ভাষা, যে ভাষায় স্কটল্যান্ডের মাত্র ১% মানুষ কথা বলে। অনেকগুলো ভাষা জানা কিশ এই পরীক্ষা-নাটকের আসল ব্যাপারটা ধরতে পেরে পরীক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে তিনি ফেল করেছেন বলে ফলাফল ঘোষনা করা হয়। কিশ অবশ্য এত সহজে থামেননি, অস্ট্রেলিয়ায় তিনি ঢুকেই ছেড়েছিলেন, তবে সেই গল্প এখানে নয়। তবে আমার ধারণা, গ্যালিক বা ডাচ ভাষা লাগবে না, মোটামুটি স্ট্যান্ডার্ড ইংরেজীতে যদি এই রকম একটা পরীক্ষা নেওয়া হয় এই ২০১৪ সালে, ১৫-২০% সাদা অস্ট্রেলিয়ানরা ফেল করলে আমি অবাক হব না। আমার ধারণা, ফেলের হারটা আরো বেশিই হবে। পেশাগত কারণে অস্ট্রেলিয়ানদের লিখিত ইংরেজীর দৌড় দেখবার সৌভাগ্য হয়েছে বলেই কথাটা এত জোর দিয়ে বলতে পারছি।
ডিকটেশান টেস্টে আলী আব্দুল ফেল করেন। তিনি তার অস্ট্রেলিয়া যাত্রার যে বিবরণ দেন, তাতে বলেন যে, তিনি ১৮৯৭ বা ১৮৯৮ সালে বোম্বে থেকে কলম্বো হয়ে ডাচ-মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজে করে মেলবোর্নে আসেন। পথে অন্যান্য বন্দর ছিল ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও পোর্ট কালাং। ইমিগ্রেশান বিভাগের বক্তব্য ছিল, আলী সম্ভবত ১৯১৫-১৯১৭ সময়কালে ব্রিসবেনে ভেড়া কোন ডাচ জাহাজ থেকে পালিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকেছে। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ে আলী বেশ কয়েকটি জাহাজের নাম বলেছিল, এবং এই জাহাজগুলোর যাত্রী/নাবিক/কর্মচারীদের তালিকায় আলীর নাম মেলেনি। মিলবে কি করে, আলী তো এক ভারতীয় সারেংকে টাকা দিয়ে জাহাজে কাজ পেয়েছিল। সেই সারেং হয়তো উপরি আয়ের ধান্দায় আলীর নাম হিসাবের খাতাতেই তোলেনি!
যা হোক, সরকার পক্ষের একজন সাক্ষী ছিলেন আলীকে গ্রেফতার করা গোয়েন্দা পুলিশ, যার বক্তব্যের ভিত্তিতে ইমিগ্রেশান বিভাগ তাদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে। আরেকজন সাক্ষী ছিলেন একজন ভারতীয় – রহমত খান – যিনি কোর্টে কোরান হাতে নিয়ে সাক্ষ্য দেন যে আলী আব্দুলের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে ১৯১৭ সালে দক্ষিন ব্রিসবেনে। আলী তাকে বলেছিল যে, সেদিনই সে জাহাজ থেকে নেমেছে এবং ভারতীয় পোশাক ছেড়ে ইউরোপীয় পোশাক পরেছে। এমনকি আলীর মাথায় হ্যাটও ছিল, গায়ে ছিল লম্বা কোট, এবং তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে সে আসলে পালিয়ে থাকার জন্যই এসব পোশাক পরেছে। রহমত খান আরো বলেন, ‘সে একদমই ইংরেজী বলতে পারছিল না। আমি তাকে ভারতীয় ভাষায় জিজ্ঞেস করি, তুমি কোন জাহাজে করে এসেছ? সে কোন জাহাজের নাম বলেনি।’ পরে অবশ্য ফাঁস হয়ে যায় যে, আলী আব্দুলের কাছে রহমত খান টাকা ধার করেছিলেন, এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল না। পুলিশ তাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী বানিয়েছে কিনা, এই প্রশ্ন করা হয় একজন গোয়েন্দা পুলিশকে। সেই পুলিশ উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান। আদালত রহমত খানের সাক্ষ্য খারিজ করে দেয়।
কাগজপত্র কিছু নাই, সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষ, ডিকটেশান টেস্টে ফেল। এর পরে আসে আলী আব্দুলের একমাত্র বাকী রাস্তা – যদি সে ১৯০১ সালের আগে এই দেশে এসেই থাকে, তাহলে এই দীর্ঘ সময় সে কোথায় কোথায় ছিল, কি করেছে, কাকে কাকে সে চেনে, এসবের ভিত্তিতে তার দাবীর সমর্থন করা। আলী আব্দুল সে কাজ বেশ পারঙ্গমতার সঙ্গেই করেন – তিনি অস্ট্রেলিয়ার বেশ কটি স্টেটের নানা ছোট-বড় শহরের নাম একাধারে বলতে থাকেন, যেখানে তিনি কাজ করেছেন ও বসবাস করেছেন। গোয়েন্দা পুলিশ মাহেরের পক্ষে অনেক সময় লেগেছিল সেগুলোর সত্যতা বা অসত্যতা যাচাই করতে। আলী মোটামুটি কুইন্সল্যান্ড, ভিক্টোরিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রায় পুরোটাই চষে বেড়িয়েছেন। প্রি-ডিজিটাল সেই যুগে দেশের নানা প্রান্তের পুলিশ স্টেশানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করা নিশ্চয়ই বেশ সময়সাপেক্ষ ছিল। তাছাড়া ২০/২৫ বছর আগের নথিপত্র সব যে ঠিকঠাকমত ছিল, সেটাও নিশ্চিত নয়। অনেক মানুষ, যারা আলী আব্দুলকে কাজের বা বসবাসের সুত্রে চিনত, তারা হয় মারা গিয়েছিল অথবা অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিল এমনও হয়ে থাকতে পারে। আদালতের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ থমাস মাহের আলীর যাপিত জীবনের পথে পথে সংবাদ সংগ্রহ করে ফিরেছেন বেশ কয়েক মাস, যেটার উপরে আলীর ভাগ্য নির্ভর করছিল। গোয়েন্দা মাহেরের একটা কঠিন সময়ই গেছে বলতে হবে; গড়ে প্রতি ৬ মাস পর পর আলীর ঠিকানা বদল হয়েছিল তার অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর প্রথম বিশ বছর। কোর্টে দেওয়া আলী আব্দুলের বক্তব্য থেকে একটু উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারছি না। তার বক্তব্য শুনলে বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়ের যে কোন লেখাপড়া না জানা সহজ সরল সাধারণ মানুষের ছবিই ফুটে উঠবে আমাদের সামনে। আদালতের সামনে কথা বলতে হলে যে আমরা একটু অন্যভাবে, সাবধান হয়ে, গুছিয়ে কথা বলি, তার মধ্যে সেসবের কোন বালাই নেইঃ
“আমি ভ্যালেটা বা রোসেটা বা এই ধরণের নামের একটা জাহাজে করে অস্ট্রেলিয়াতে আসি। জাহাজের নামটা আমার আসলেই মনে নাই। আমাকে যখন গোয়েন্দা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে, তখন আমাকে সে একটা অন্ধকার ও জানালা-দরজা বন্ধ করা ঘরে নিয়ে যায়। ফলে আমার জ্ঞান হারাবার উপক্রম হলে সে আমাকে এক গ্লাস পানি দেয়। আমি তাকে জাহাজের নাম বলার সময় তিন বা চারটা নাম বলেছিলাম। ………………………মেলবোর্নে আসার সপ্তাহখানেক পরে আমি সিমুরে যাই এবং গোলবার্ন নদীর পাড়ে এক চাইনিজ ফার্মারের ফার্মে কাজ করি বছর দুয়েক। এর পরে মিস্টার ওয়ালেসের কাঠের কারবারে কাজ করি নিউ সাউথ ওয়েলসের করোয়া নামক জায়গায়। এর পরে আমি যাই ব্রেইড উডে, যেখানে ক্রোয়েকার পরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় (উল্লেখ্য, মিসেস ক্রোয়েকার এই মামলায় তার পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন)। কয়েক মাস পরে আমি সিডনীতে যাই মিস্টার ওয়ালেসের ফল বিক্রির ব্যবসায় কাজ করার জন্য। …………” সে এক বিরাট ইতিহাস। দীর্ঘ ৩৫ বছরের ইতিহাস এক নিঃশ্বাসে আদালতে বলেছেন আলী আব্দুল, যাতে দেখা যায়, বিচিত্র পেশার মাধ্যমে তিনি জীবনধারণ করেছেন এবং প্রায় অর্ধেক অস্ট্রেলিয়া ঘুরেছেন।
যাই হোক, আলী আব্দুল তার মাথার উপরে যত সমস্যা নিয়েই কোর্টে হাজিরা দিয়ে থাকুন না কেন, কোর্টে সেদিন তিনি নির্বান্ধব ছিলেন না। চারজন মানুষ তার হয়ে এই মামলায় সাক্ষ্য দিতে সেদিন হাজির হয়েছিলেন। আদালত বসার পরে আসল সাক্ষ্য শুরুর আগেই এই চারজন সাক্ষীর সবাইকে তাদের সঙ্গে আলী আব্দুলের সম্পর্ক নিয়ে এবং তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিষয় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আলী আব্দুল এই মামলায় জিতুক আর হারুক, আমার চোখে তার সাফল্য এখানেই যে, তার হয়ে চারজন সাদা অস্ট্রেলিয়ান সাক্ষ্য দিতে অস্ট্রেলিয়ার দূর-দুরান্তের নানান জায়গা থেকে আদালত প্রাঙ্গনে হাজির হয়েছেন। আলী আব্দুলের সততা, ক্যারিশমা অথবা সরলতা, অথবা তার সাদা বন্ধুদের মানবিকতাবোধ, যে কারনেই এই ঘটনা ঘটে থাকুক না কেন, শেষ বিচারে এর কৃতিত্ব আলী আব্দুলেরই। এই সাক্ষীদের জোরেই তিনি এই মামলা জিতেও গেছেন শেষ অবধি, তবে তাতে তার নিজের কৃতিত্ব ছোট করার উপায় নেই। ইংরেজী বলতে পারেন আধো-আধো, এমন একজন অ-সাদা মানুষ চারজন সাদা সাক্ষী জোগাড় করেছেন সাদা অস্ট্রেলিয়া পলিসির বিরুদ্ধে তার মামলায়, এ বড় কম কথা নয়!
আলী আব্দুলের পক্ষের প্রথম সাক্ষী ছিলেন ৬০ বছর বয়সী বিধবা মিসেস ক্রোয়েকার। তার প্রতি প্রসিকিউটরের প্রথম প্রশ্ন, আপনার কি ভারতীয়দের সঙ্গে বন্ধুত্ব আছে? এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘না, আমি তাদের সেই অর্থে বন্ধু নই, আমাদের বাসায় তারা আসে না, বা আমরা তাদের বাসায় যাই না’। পরের প্রশ্নঃ তাহলে কেন একজন সাদা ভদ্রমহিলা একজন ভারতীয়ের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে, যদি না… … … । মিসেস ক্রোয়েকার তখন রেগে যান, এবং তার স্বামীর সঙ্গে আলী আব্দুলের পরিচয়, কাজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিবরণ আদালতের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমার স্বামীর সঙ্গে আলী আব্দুলের পরিচয়ের সময় আমি গর্ভবতী ছিলাম, এবং আমার সন্তানের জন্ম হয় ১৮৯৯ সালে। কাজেই আলী আব্দুল ১৯০১ সালের আগেই অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন। আমার স্বামী তার চরিত্রের ব্যাপারে খুবই উচ্চ ধারণা পোষন করতেন। তারা বাড়ির বাহিরেই বেশি বসতেন, বিশেষ করে স্থানীয় পানশালায়, যদিও আলী আব্দুল মদ্যপান করেন না বলে আমি শুনেছি।
দ্বিতীয় সাক্ষী ভিক্টর জোসেফ ফিলিপ সেন্ট্রাল পুলিশ কোর্টে তার স্টেটমেন্ট দেন এরকমঃ আমি ওল্ড বেলমোর বাজারে আলী আব্দুলের কাছ থেকে ফল কিনতাম। সেই বাজারে সাদা অস্ট্রেলিয়ান, কিছু ইতালিয়ান ও চাইনিজ ব্যবসা করত, এবং আলী আব্দুল ছিল একমাত্র নিগ্রো। এর প্রায় ৭/৮ বছর পরে আমি যখন আমার নিজের ব্যবসা শুরু করি, আলী তখন সেখানে ক্রেতা হিসেবে আসত। আমি তাকে দেখা মাত্রই চিনতে পারি, কারণ তার মত চেহারার আর কাউকে আমি এই এলাকায় দেখিনি। তাকে দেখে আমি বেশ ইমপ্রেসড হয়েছিলাম। তাকে আমার ভালো মানুষই মনে হয়েছিল। সে আমার কাছ থেকে বাকীতে মাল নিত। শুধু আমি কেন, ফল বাজারের যে কোন মহাজনই তাকে বাকী দিতে রাজী হত, যার মানে হচ্ছে সে ছিল আসলেই একজন ভাল চরিত্রের লোক। তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ১৯০০ সালের দিকে। এর সাত বছর পরে আমি আমার নিজের ফল ব্যবসা শুরু করি।
সিডনীতে ফলের পাইকারী বাজারের এলাকা তখন বেশ রমরমা। নিম্নমানের মেসবাড়িতে বড় ফলবাজারের আশেপাশের এলাকাগুলো ভরে গিয়েছিল। রুরাল এলাকা থেকে ফার্মাররা ফল বেচতে আসত, দূর-দুরান্ত থেকে আলী আব্দুলের মত ভ্রাম্যমান ফল বিক্রেতারা আসত ফল কিনতে। তাদের থাকার জন্য এসব মেসবাড়ির বিকল্প ছিল না। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বাজারের সময়গুলিতে বেশ জমজমাট থাকত এসব এলাকা, আশেপাশে অনেক খাবারের দোকান আর সস্তা চাইনিজ দোকানপাটে ভীড় লেগে থাকত। উনিশ শতকের একেবারে শেষের দিকে ফল ছিল অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির একটা বড় কৃষিপণ্য, আর তার বাজার মানেই অনেক পয়সার লেনদেন, সেই সঙ্গে বড় ব্যবসায়ী, ফলের ফেরিওয়ালা ও টাউট-বাটপারদের আস্তানা। সেই বাজারে আলী আব্দুলের চরিত্রের সে সার্টিফিকেট, তাকে অগ্রাহ্য করে এমন স্পর্ধা সম্ভবত সাদা অস্ট্রেলিয়ার কোর্টেরও ছিল না। আলীর তৃতীয় সাক্ষী, এন্থনী হাওলী, কোর্টে স্মরণ করেন যে, তার বিয়ের ৭/৮ বছর আগে তার সঙ্গে আলীর পরিচয় হয়েছিল, এবং তার বিয়ে হয়েছিল ১৯০৭ সালে। চতুর্থ সাক্ষীও বলেন যে, তিনি আলীকে তিরিশ বছর ধরে চেনেন। এসব সাক্ষীর ফলে ইমিগ্রেশান দপ্তরের সন্দেহ যে আলী ১৯১৫-১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে, এবং রহমত খানের সাক্ষ্য যে আলী ১৯১৭ সালে জাহাজে করে ব্রিসবেনে এসে নামে, এর সবই খারিজ হয়ে যায়। কোন জাহাজে করে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিল, সেটা মনে করতে আলী আব্দুলের ব্যার্থতাকে সবাই শুরুতে সন্দেহজনকভাবে দেখলেও, তার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাপারটা খুব একটা অবিশ্বাস্য মনে হয় না। তাছাড়া যে সারেং তাকে জাহাজে কাজ দিয়েছিল, সে হয়তো টাকার বিনিময়ে আলীকে অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে জাহাজে তুলেছিল – সেকালে এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার ছিল।
যাই হোক, আলী আব্দুলকে প্রথম গ্রেফতারের ছয় মাসের মাথাতেই তার মামলার নিষ্পত্তি ঘটে। রায় হয়ঃ আলী আব্দুল অবৈধ অভিবাসী। তাকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদন্ডের পরে তার নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হোক।
কি, একটু চমকে গেলেন? আলী আব্দুল কিন্তু দমেন নি। আপিল করার জন্য বেইলে মুক্তি পেলেন তিনি। আপীল হল। দীর্ঘ যুক্তি-তর্ক শেষে হাই কোর্টের রায় হলঃ আলী আব্দুল নির্দোষ। তার মামলা পরিচালনার সমস্ত ব্যায়ভার রাষ্ট্রপক্ষকে পরিশোধ করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
আলী আব্দুল, তোমাকে স্যালুট জানাই।
অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল আর্কাইভস এবং কোর্টের রেকর্ডস ঘেঁটে আলী আব্দুলের এই গল্প ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনেছেন হানীফা দীন, পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত এক অস্ট্রেলিয়ান, যার ভারতীয়-পরিচয়বাহী পূর্বপুরুষেরা আলী আব্দুলের সমসাময়িক অস্ট্রেলিয়ায় ফেরিওয়ালা এবং শ্রমিকের কাজ করেছেন।
লেখাটা দেখার পর থেকেই মন্তব্য করব ভেবেছিলাম। কিন্তু নানা কারণে করা হয়ে উঠেনি।
আপনার লেখার হাত আসলেই খুব ভাল। এ ধরনের বৈচিত্রময় বিষয় নিয়ে আরো লিখুন। ! :good:
@অভিজিৎ দা,
আপনাকে ধন্যবাদ, অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য।
খুব ভাল লাগল। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে কি?
@পলাশ,
ধন্যবাদ আপনাকে। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটে নি সম্ভবতঃ, কারণ এদেশে কেউ অভিবাসী হয়ে বসবাস করতে আসে নি, বরং এসেছে শাসন তথা শোষণ করতে।
অন্যরকম বিষয়; অদ্ভূত অসম লড়াই আর দাবি আদায়ের এক শক্তিশালী কাহিনী। সত্যিই আলী আব্দুল স্যালুট পাবার যোগ্য। চমৎকার। নাক ডুবিয়ে পড়ে ফেললাম।
হানীফা দীন’এর কারণ না’হয় বুঝলাম, আপনি এমন একটা যুদ্ধ নিয়ে লিখতে উৎসাহ বোধ করলেন কোত্থেকে জানতে কৌতূহল হচ্ছে। সময়রেখার কথাছবি’গুলো অনেক তথ্যপূর্ণ। দারুন।
এত কিছুর পরও নিম্ন আদালতের বিরুদ্ধাচরণ অথচ আপিলের পর জয়লাভ বিচার ব্যবস্থাকে কিছুটা সম্মান দিয়েছে। আদালত যে সাধারণের শেষ ভরসা হতে পারে তা প্রমান হয়েছে। স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের আদালত ব্যবস্থাও যেন সুন্দর হয়।
@কাজী রহমান,
আমি দেশান্তরী হয়েছি আজ প্রায় বছর পাঁচেক আগে, স্ত্রী-সন্তানাদিসহ। দেশ ছেড়ে নতুন দেশে আসার পরে, মিডিয়াতে চোখ বুলালেই কেন যেন দেশান্তর তথা অভিবাসন সংক্রান্ত খবরগুলো আমার চোখে বেশি বেশি পড়ত, অথচ এই আমার কাছেই সেই খবরগুলো আগে তেমনভাবে চোখে পড়ত না। পত্রিকা খুললে, টিভির দিকে তাকালে, রাস্তাঘাটে হাঁটতে গেলে আমার চোখে অভিবাসন সংক্রান্ত কিছু না কিছু একটা প্রসংগ পড়েই যেত। তখন অস্ট্রেলিয়াতে ভোটের মৌসুম, আর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের কথাবার্তায় ‘অভিবাসন ঠেকাও’ জাতীয় একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাবের পরিচয় দিয়ে ভোটারদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টায় রত। কাজেই, আমার ভাবনার খোরাকের অভাব হত না। সবার কথাবার্তা এবং নানান খবর দেখে আমার মনে হতে থাকল, অভিবাসন আসলে এই সব উন্নত দেশের কাছে একটা নতুন উতপাত, যেটা এক্কেবারে সম্প্রতি শুরু হয়েছে এবং তাদের সুখের সংসারে এই বহিরাগতরা অন্যায্যভাবে অনুপ্রবেশ করে অশান্তি ছড়াচ্ছে। আগে এরকম কিচ্ছুটি ছিল না!
অস্ট্রেলিয়া বলতে গেলে এই প্রায় সেদিনও সাদাদের দেশ ছিল, এবং অভিবাসন এখানে একটা নতুন বস্তুই বটে। তবে পৃথিবী নামক আমাদের এই গ্রহের জন্য অভিবাসন বা দেশান্তরই সবচেয়ে সাধারন বিষয়, যা হরহামেশাই হয়ে আসছে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে মানুষের ঘরছাড়া হওয়ার গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে – অস্ট্রেলিয়াও তার বাইরে নয়। তবে আমার জানার কমতি ছিল/আছে। এখানকার ইতিহাস পড়তে শুরু করলাম, সেখানে কিছু এরকম গল্প পেলাম। পরিব্রাজক ক্যাপ্টেন কুক, ম্যাথিউ ফ্লিন্ডার্স ছাড়াও আলী আব্দুল, মুহাম্মদ আলম, আফগান উট চালকেরা, ফায়েজ মোহাম্মদ, এরকম নানা নাম সেখানে আছে। অবাক হয়ে দেখলাম, আজকে যে আফ্রিকানরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হালকা-পলকা নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের নানান দেশে অবৈধ অভিবাসী হওয়ার আশায় ছুটে যাচ্ছে, অথবা আফগান-শ্রীলংকানরা ইন্দোনেশিয়া থেকে নৌকায় অস্ট্রেলিয়ায় আসছে অবৈধ পথে – তারা আসলে হাজার হাজার বছর আগের তাদের পূর্বপুরুষদের যাত্রারই পুনরাবৃত্তি করছে মাত্র। এতে এত অবাক হওয়ার কিছু নেই।
সাদা অস্ট্রেলিয়ায় নিজে একজন অসাদা মানুষ হিসেবে তাদের ইতিহাস ও সংগ্রামকে জানার আগ্রহ তৈরী হল সেখান থেকেই। আপনি সময় করে পড়েছেন বলে ধন্যবাদ।
@আশরাফুল আলম,
বেশ বুঝতে পারছি পরবাসীর যুদ্ধ, আনন্দ বেদনার দিনরাত্রি খুব কাছ থেকে দেখবার সুযোগ হচ্ছে আপনার। ওদের নিয়ে লিখুন। আপনি সুন্দর করে লিখতে পারেন; প্রবাসীদের জীবন নিয়ে লিখুন। দেশ থেকে দুরে; বহুদূরে যারা, তাদের ভালোবেসে লিখুন। তার আগে মিশে যান ওদের সাথে; ওদের সুখ দুখের রঙ চিনতে; তারপর, লিখুন।
আর একটা কথা, একটু খেয়াল করলে দেখবেন আপনি ছেড়ে আসা স্বজন স্বদেশের অভাব যেমন ভাবে অনুভব করছেন, ফেলে আসা স্বজন স্বদেশ হয়তো ঠিক ততটা অনুভব করছে না। কারনটা সহজ; ওরা জন্মভূমে; দেশে এবং স্বজন ঘেরা, আপনি নন। এটাই বাস্তব।
আপনার ভাবনা সঙ্গত কারণেই পাল্টেছে। এটা ঠিক আছে সন্দেহ নেই। তবু জানেন নিশ্চই; বিশ্ব নাগরিক এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় গিয়েছে জীবনের প্রয়োজনে, আমাদের জানা যে কোন সময়ে। কারা যে আদিবাসী বলা মুশকিল। তবু বৈজ্ঞানিক ভাবে আদিবাসীদের সনাক্ত করা যায় কিছুটা। মজার ব্যপার হোল, সাধারণ ভাবে বলা যায় যে আজ এমন কোন উন্নত (!) দেশ নেই যা আদিবাসীর। ওদের করা হয়েছে নিজভূমে অপাংতেয়। সব খেয়েছে ধূর্ত দখলদারেরা। সমমনা সুবিধাবাদী ধূর্তগুলো দল বেঁধে আইন করেছে শুষে খাবার; ইচ্ছেমত। এবং তা’ই হচ্ছে পৃথিবী জুড়ে আজ।
বেনিয়া ব্রিটিশ দখলদার অস্ট্রেলিয়া কব্জা করেছে; জীবানু ছড়িয়ে আদিবাসী মেরেছে, দখল নিয়েছে দেশ; ঠিক যেমন মেরেছিলো স্প্যানিশ সাম্রাজ্যবাদীরা মিশনারির নাম করে উত্তর আমেরিকার নেটিভদের মেরে। ওরাই আজ প্রভু। কিছুই নতুন নয় এসব। যা হতে পারে নতুন তা হল ওদের নিয়মেই খেলে ওদের আইন বদলাবার শক্তি অর্জন করা। এসবের শুরু হয়েছে আগেই, কিন্তু বড্ড দুর্বল ভাবে। আজকের মানুষ হিসেবে আমি মনে করি আমাদের ভাবনায় থাকা দরকার অধিকার আদায়ের সুচিন্তিত সবল পথনির্দেশনা; আত্মতৃপ্তি বা আহাজারি নয়। ইতিহাস থাকুক বন্ধু, তবে সাথে থাক আলোর পথের দিশা।
ভাবুক
অনেককাল আগে।
যখন কিছুই শেখেনি মানুষ; ভাবনা ছাড়া,
দিনরাত ধরে,
পশুর মতই গিলেছে বনবাদাড়ের ঐ যাচ্ছেতাই।
মরতে মরতে;
একসাথে হওয়া কাকে বলে জানলো; বাঁচতে।
বেঁচে দেখলো,
কিছু দাঁতাল শুয়োর; মত্ত পশুরাই প্রতিপক্ষ,
এবং মুলতঃ;
খাবারের তরে দাগ কেটেছে পেশল জন্তু।
তখনও মানুষ
বেঁচেছে, মুক্ত মেধাবী অস্তিত্বে ভর করে।
অথচ আজকে,
হিংস্র ক্ষমতাপেশল পূজারী জন্তুমানব, উলঙ্গ উল্লাসে,
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে,
ঈশ্বরভীত কম্পমান নোয়া মানুষগুলোকে ছিঁড়ে খায়,
অবিরাম বারবার,
জাতিকেটে দাগ টানে, লোভী, মৌ-লোভী মানুষ,
শুষে খেতে;
ভয় দেখিয়ে শূন্যে বানায় স্বরচিত স্বর্গনরক;
লুটেরা স্বার্থমানব।
অযত্ন অবহেলায়
গাছ পোড়ে মাঠ পোড়ে, পোড়ে বরফ
কালের অপেক্ষায়।
অনিয়মের নিয়মে,
তবুও কোথাও; অল্প কিছু ঘাড়ত্যাড়া মানুষ।
নিজের মনেই
অঁগাস্তে রোদিনের ভাস্কর্যের মত ভাবতে বসে,
সাগর আকাশ
একাকার করে উত্তর খোঁজে, আলোর তরে,
বাইরে ছুঁড়ে
বাঁধাই খাতা, ভালোবাসে জিজ্ঞাসা; নিবিড় কৌতূহলে,
একান্তে, মুক্তমনে।
@কাজী রহমান,
আপনার সুচিন্তিত দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। কবিতাটি অসাধারণ!
আমরা যদি আজকের আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিন আমেরিকা বা ইউরোপের দিকে তাকাই, তাহলে যা দেখতে পাই সেটি মানুষের নিরন্তর অভিবাসন প্রক্রিয়ারই ফসল – সে অভিবাসন কখনো স্বেচ্ছায়, কখনো অনিচ্ছায়। হোয়াইট হাউসে একজন অ-সাদা প্রেসিডেন্ট যার নামের মধ্যাংশ হুসেইন এবং দাদার বাড়ি কেনিয়ায়, মাইক্রোসফটের সিইও একজন ভারতীয়, জার্মানীর ফুটবল দলে একজন কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়, ব্রিটেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার বাটার চিকেন কারি। ব্রাজিলের ভাষা পর্তুগীজ, ইংরেজী এবং বাংলা দুই ভাষাতেই পন্ডিত মানে বিজ্ঞ ব্যক্তি, মেলবোর্নের মেয়র একজন চাইনীজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের সেরা ব্যাটসম্যানের নাম শিবনারায়ণ চন্দরপল, যার মাতৃভাষা ইংরেজী। যেদিকেই তাকান, মানুষের দেশান্তরী হওয়ার দীর্ঘ ইতিহাসের প্রতিধ্বনি দেখতে পাবেন, অথচ আমরা সেটা ভুলে যেতে পছন্দ করি নানান কারণে। ইতিহাসের শিক্ষা আমাদেরকে আলোড়িত করতে পারে না। তাই আজ দেশে দেশে এত জাতিগত হিংসা, বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা। ঔপনিবেশিক আমলে এবং ইতিহাসের নানা অভিবাসন-ঝড়ের সময় মানুষ নানা অন্যায় অত্যাচার অপরাধের মধ্য দিয়ে গেছে, ইতিহাসে তার ভুরিভুরি প্রমাণ আছে। আদিবাসীরা হয়েছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত; বলা যায়, তারা প্রগতি ও সভ্যতার চাকার তলায় পিষ্ট হয়েছে এবং আজো হচ্ছে। বাংলাদেশের পাহাড়ীরা কিম্বা অস্ট্রেলিয়ার এবোরিজিনরা তার উদাহরণ। সে সব ইতিহাস মাথায় রাখা জরুরী।
আপনার এই কথার মধ্যে সত্যিকারের দিকনির্দেশনা পেলাম। ওদের নিয়মে খেলেই ওদের আইন বদলাবার শক্তি অর্জন করা অতীব জরুরী, এবং তার জন্য যেমন আমাদের শেকড়কে ভুললে চলবে না, একই সাথে কুয়োর ব্যাঙ হয়ে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও চলবে না।
এই শেকল পরা ছল, মোদের এই শেকল পরা ছল।
শেকল পরেই শেকল তোদের করব রে বিকল।
সমস্যা হলো, কেউ কেউ ইতিহাসকে নিজের ব্যক্তিগত প্রজেক্ট বানিয়ে নিয়ে শত শত বছরের বঞ্চনার প্রতিশোধ নিতে চান শর্টকার্টে, দুই একটা বোমা মেরে, টুইন টাওয়ার ভেঙ্গে। আবার কেউ কেউ নিজের আসল শেকড় ভুলে গিয়ে ওদেরই একজন হয়ে যান, তারা হারিয়ে ফেলেন তাদের নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ফলে ইতিহাসের বিনির্মানের প্রশ্নটাই অবান্তর হয়ে পড়ে। এই দুই দলের থেকে সমদূরত্বে থেকে ইতিহাসের নতুন পাঠ তৈরী করার দায়িত্ব প্রবাসী প্রজন্মের উপরে। দেখা যাক, তারা সফল হবে কি-না।
@আশরাফুল আলম,
নিজেকে বিশ্ব নাগরিক ভেবে আর খোলা মনে চোখে মেলে দেখলে পুরো পৃথিবীটা হয়তো নিজের দেশ ভাবা যেতে পারে। সবাইকে আপনও ভাবা যেতে পারে। দলবদ্ধ হয়ে বদলানোও যায় নতুন আবাস ও জীবনাচরণ। তবে সে যাত্রায় খুব বেশি গোঁড়ামো করা চলবে না। নিজ জাতিতেও সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল। নতুন যা ভালো তা টিকে থাকে মানুষের ভালবাসায় ও চর্চায়; যা খারাপ তা ঝরে যায় বর্জনে তথা চর্চা না করবার কারনে। সংস্কৃতিতে জাতি ও দেশের বিকল্প নেই; দেশটিও স্থানিক। তবে দেশ ছেড়ে জন্মভূমির সংস্কৃতির কিছুটা যারা হৃদয়ে ধারণ করে নিয়ে আসেন পরবাসে তাদের করতে হয় আপোষ; সেই জীবনেরই প্রয়োজনে। পুরানো আর নতুন মিলে হয়ে যায় আর একটি নতুন ভূবন। এখানে ব্যর্থ হবার কিছু নেই। নির্মান বিনির্মানও নানা শর্তে বেষ্টিত। নতুন দলবদ্ধ সমাজ ও মানুষ কি ভাববে আর কি করবে সেটা সময়ের ব্যপার; সেটা স্থানিক ভাবনা, পরিকল্পনা আর কাজের ব্যপার বলেই মনে করি।
শুভেচ্ছা বন্ধু।
@কাজী রহমান,
তেমনটাই তো ইচ্ছা। শেকড়ছাড়া হয়েছি নতুন শেকড় গজাবো বলেই। এই যাত্রায় আপনার কথাগুলো মাথায় রাখার চেষ্টা করব। ভালো থাকবেন।
আলী আব্দুলের মত এরকম কত মানুষকে চিনি, কত মানুষের গল্প শুনি, যারা জীবিকার অন্বেষায় পাড়ি জমিয়েছিল আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য ইমিগ্রেন্ট দেশে। যুগ যুগ ধরে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে কেউ কেউ পেরেছে বৈধ কাগজ বানাতে, কেউ বা পারেনি। দেশে রেখে গিয়েছে স্ত্রী-সন্তান। সন্তানেরা বড় হয়ে গেছে অনেকের। কারুর সন্তানের বিয়ে শাদীও হয়ে গেছে। স্বামী-স্ত্রী দু’জন দু’দেশে বুড়ো হয়ে গেছে। স্বামী শুধু হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। স্বজনদের কাছে যেতে পারছে না। আরো কত কষ্টের কাহিনি যে আছে।
আলী আব্দুল শেষ পর্যন্ত বৈধতা পেয়েছিলেন কি?
লেখাটি বিশেষ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
@তামান্না ঝুমু,
হ্যাঁ, পেয়েছিলেন। আসলে আদায় করে নিয়েছিলেন, কারণ তিনি আদতে অবৈধ ছিলেন না, তাকে অবৈধ সাব্যস্ত করেছিল বৈষম্যমূলক ‘হোয়াইট অস্ট্রেলিয়া পলিসি’। উপরের লেখায় একেবারে শেষের দিক থেকে তিন নম্বর প্যারাগ্রাফে আছে।
আলী আব্দুলকে প্রথম গ্রেফতারের ছয় মাসের মাথাতেই তার মামলার নিষ্পত্তি ঘটে। রায় হয়ঃ আলী আব্দুল অবৈধ অভিবাসী। তাকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদন্ডের পরে তার নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হোক। আলী আব্দুল তাতে দমেন নি। আপিল করার জন্য বেইলে মুক্তি পেলেন তিনি। আপীল হল। দীর্ঘ যুক্তি-তর্ক শেষে উচ্চ আদালতের রায় হলঃ আলী আব্দুল নির্দোষ। তার মামলা পরিচালনার সমস্ত ব্যায়ভার রাষ্ট্রপক্ষকে পরিশোধ করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।