ফাইলি নামে একটি মহাকাশযান 67P চুরিউমভা-গেরাসিমেঙ্কো নামে একটি ধূমকেতুতে অবতরণ করেছে। এই ধূমকেতুটির নাম হয়েছে দুজন রুশ জ্যোতির্বিদের নামে যাঁরা ধূমকেতুটি ১৯৬৯ সনে আবিষ্কার করেছিলেন। ফাইলির মাতৃযান, অর্থাৎ যে কিনা গত দশ বছর তাকে বহন করেছে, সেই রোজেটা (Rosetta) মহাকাশযান 67P ধূমকেতুকে এখনো প্রদক্ষিণ করছে, ৫০০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে তার কেন্দ্র জার্মানীর ডার্মস্টাডে বার্তা পাঠাচ্ছে।
ধূমকেতু ৬৭P চুরিউমভা-গেরাসিমেঙ্কো। ধূমকেতুটির একদিক থেকে অন্যদিক ছয় কিলোমিটারের বেশী নয়।
আমার প্রথম অভিযোগ হল এরকম একটা নাম এই যানটিকে দেওয়া হয়েছে যার উচ্চারণ সম্পর্কে কেউই একমত নন। ইংরেজিতে লেখা হচ্ছে Philae – এর উচ্চারণ শুনলাম ফিলাই, ফিলে, ফিলি, ফাইলাই। ১৫ নভেম্বর ইউটিউবে এইজন্য একটা ছোট কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও দেয়া হয়েছে যেখানে এটাকে বলা হচ্ছে ফাইলাই। অথচ ৭ই জুনের ঐ একই উৎসের একটি ভিডিওতে বলা হচ্ছে উচ্চারণটা ফাইলিও হতে পারে। আমি কেন এটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি? আমার মতে মহাকাশযানের নাম এমন হতে হবে যাতে ভবিষ্যতের মানুষেরা অনায়াসে সেটাকে স্মরণ করতে পারে। এপোলো ১১র চাঁদের ল্যান্ডার যখন চাঁদে অবতরণ করল,আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, “Houston, Tranquility Base here. The Eagle has landed.” ঈগল পাখী অবতরণ করেছে, এর থেকে সহজ কি হতে পারে?
আমি হয়তো একটু বেশী অভিযোগ করছি। আসলে ESA (European Space Agency) এই মিশনের প্রতিটি জিনিসের নাম প্রাচীন মিশর থেকে নিয়েছে। মূল মহাকাশযান হল রোজেটা যার নাম হয়েছে মিশরীয় শহর রোজেটার নামে (বর্তমান নাম রশিদ) যেখানে প্রাচীন মিশরীয় লেখন হাইরোগ্লিফ, ডেমোটিক নামে অন্য একটি লেখনী ও গ্রীক ভাষায় লিখিত একটি পাথর ১৭৯৯ সনে পাওয়া যায়। বিখ্যাত এই রোজেটা পাথরের এই তিনটি লেখনীর তুলনার মাধ্যমেই প্রাচীন মিশরীয় হাইরোগ্লিফের অর্থোদ্ধার হয়। আর রোজেটা মহাকাশযানের কাজ হল ধূমকেতুর অর্থোদ্ধার করা। ঠিক আছে, মানলাম, রোজেটা নামটা খারাপ নয়।
এবার দেখা যাক ফাইলি নামটা এল কোথা থেকে। ফাইলি হল নীল নদের ওপর একটি (বা দুটি) ছোট দ্বীপ যেখানে প্রাচীন মিশরের কিছু চমকপ্রদ মন্দির স্থাপনা ছিল। দুটি দ্বীপ বলে philae কথাটাও আসলে বহুবচন। নীল নদের ওপর বাঁধ দেবার ফলে জলাবদ্ধাতায় ফাইলি দ্বীপ ডুবে যাচ্ছিল, তখন এই স্থাপনাগুলো বাঁচানোর জন্য সেগুলো পার্শ্ববর্তী আগিলিকি নামে একটি দ্বীপে স্থানান্তরিত করা হয়। ঐ একই সময়ে দক্ষিণ মিশরে আসোয়ান বাঁধ তৈরি হচ্ছিল, সেই বাঁধের ফলে নাসের হ্রদ নামে যে জলাশয় সৃষ্টি হচ্ছিল তাতে আবু সিম্বেল নামে একটি জায়গা ডুবে যায়। আবু সিম্বেলে আজ থেকে প্রায় তিন হাজার আগে তৈরি বিশালাকায় কিছু স্থাপনা ছিল।
এখন মনে পড়ছে ১৯৬০য়ের দশকে UNESCO এই স্থাপনাগুলো বাঁচাবার প্রজেক্টে হাত দেয়। আমি ছোট ছিলাম, আমাদের ঢাকার বাড়িতে বাবা Life Magazine রাখতেন। ইংরেজী বুঝতাম না, কিন্তু একটি সংখ্যায় আবু সিম্বেলের মূর্তিগুলোর স্থান পরিবর্তনের যে বিশাল কাজ তার কিছু ছবি ছিল। একটি ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ ছিল। সেই ছোট সময়ে ফারাওদের বিশাল মূর্তি মনে দাগ কেটেছিল। আমাদের এক পরিচিতজন ছোট ছোট রকমারী মূর্তি বানাতো, আগুনে পুড়িয়ে। তাকে বলেছিলাম পিরামিড বা ফারাও এরকম কিছু একটা বানিয়ে দিতে। ১৯৭১ সনে, Life ও Time ম্যাগাজিনের বইগুলো সারা বাড়ির অন্যান্য জিনিসের সাথে লুট হয়ে গিয়েছিল। আজ এতদিন পরে ইন্টারনেটে সেই Life পত্রিকার সেই প্রচ্ছদটা আবার খুঁজে পেলাম।
Life ম্যাগাজিনের ১৯৬৫ সালের UNESCOর আবু সিম্ব্লের স্থাপনা রক্ষার প্রচেষ্টার ওপর প্রচ্ছদ।
ফাইলি হল একটি হতভাগ্য দ্বীপ, তার নামে কি মহাকাশযানের নাম দিতে আছে?
আর আগিলিকি হল আর একটি দ্বীপ যেখানে ফাইলির স্থাপনাগুলোকে সরানো হল। ESA ধূমকেতুর পিঠে কোথায় ফাইলি নামবে সেটা ঠিক করল। নাম দিল জায়গাটার আগিলিকি। ফাইলিকে ছাড়া হল রোজেটা থেকে – বোধহয় প্রায় ২২ কিলোমিটার ওপর থেকে। ফাইলির লাগল প্রায় ৭ ঘন্টা ধূমকেতুর কাছে পৌঁছাতে, একদম শেষে সেটি সেকেন্ডে মাত্র ১ মিটার (ঘন্টায় ৩.৬কিলোমিটার) বেগে ধূমকেতুর বুকে এসে পড়ল।
এই ধূমকেতুটির ওপরিভাগের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর চেয়ে ১০,০০০ গুণ কম, কাজেই প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ১ মিটার গতিবেগে নামলেও সেটি সহজেই ধূমকেতুর উপরিতলের সঙ্গে সংঘর্ষে আবার মহাকাশে ফিরে যেতে পারে, ধূমকেতুতে সেটা নাও ফিরে আসতে পারে। এই জন্য ফাইলির সাথে যুক্ত ছিল হারপুন যা দিয়ে কিনা যানটিকে বেঁধে রাখা যাবে ধূমকেতুর সঙ্গে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। হারপুন কাজ করল না, আর ফাইলি আঘাতট খেল ধূমকেতুর সঙ্গে, যানটি আবার ফিরে যেতে থাকল মহাকাশে। কিন্তু ধূমকেতুর অল্প হলেও কিছু আকর্ষণ আছে, ঘন্টাখানেক পরে ফাইলি ফিরে এল, এরপর আবার হয়তো আর একটি আঘাত এল, তৃতীয়বারের মত ফাইলি যখন ফিরল তখন সেটি ধূমকেতুর বুকেই আশ্রয় পেলে। দুর্ভাগ্যবশতঃ সেটি এমন জায়গায় এসে পড়ল যেখানে সূর্যের আলো খুব অল্প সময়ের জন্য পড়ে, তাই ফাইলির ব্যাটারি চার্জ করা সম্ভব হল না, আর এই লেখাটি যখন লিখছি ফাইলি নীরব হয়ে গেছে। নীরব হবার আগে যানটি বিজ্ঞানের কিছু কাজ হয়তো করেছে, সেই তথ্য নাকি ESA পেয়েছে, এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে তার বিশ্লেষণের জন্য।
কিন্তু আমি এই লেখাটা শুরু করেছিলাম রোজেটা বা ফাইলির কথা বলার জন্য নয়, বরং আজ থেকে প্রায় ন’বছর আগে একটি জাপানী মহাকাশযানের কথা বলার জন্য। সেই যানের নাম ছিল Hayabusa, আর সেটি গিয়েছিলে একটি খুবই ছোট গ্রহাণুতে, তারা নাম তারা দিয়েছিল Itokawa। হায়াবুসা মানে হল বাজপাখী আর ইটোকায়া ছিলেন একজন জাপানী রকেট বিজ্ঞানী।
ইটোকায়া মাত্র ৪০০/৫০০ মিটার লম্বা একটি গ্রহাণু। হায়াবুসা শুধু যে ইটোকায়াতে অবতরণ করেছিল তা নয়, সেটি সেই গ্রহাণুর ধূলিকণা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরে এসেছিল। সেই ধূলিকণা বিশ্লেষণ করে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।
গ্রহাণু ইটোকায়া। এই গ্রহাণুর দৈর্ঘ্য কয়েকশো মিটার মাত্র।
হায়াবুসা যখন ইটোকায়ায় নামে তখন ফেসবুক একেবারে শিশু, স্মার্টফোন ছিল না, টুইটার বলে কিছু নেই। কাজেই সামাজিক মাধ্যমে খবরটা ছড়ানোর কোন অবকাশ ছিল না, কিন্তু হায়াবুসার কৃতিত্ব রোজেটার থেকে কোন অংশেই কম নয়, বরং বেশী বলে আমি মনে করি। এই হল আমার দ্বিতীয় অভিযোগ। ফাইলি প্রথম একটি ধূমকেতুতে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু যে প্রকৌশলে ফাইলি ধূমকেতু 67Pতে নেমেছে সেই প্রকৌশল অবলম্বনেই হায়াবুসা ইটোকায়ায় নেমেছিল। আর তারও আগে NASAর NEAR Shoemaker মহাকাশযান এরস (Eros) নামে একটি গ্রহাণুতে অবতরণ করতে পেরেছিল যদিও অবতরণের পর পরই তার বার্তা স্তব্ধ হয়ে যায়। বিজ্ঞানী বা সাংবাদিক, কেউই এ’কথাটি বলছেন না। ক্ষুদ্র খগোল বস্তুতে মানুষের তৈরি কল অনেক আগেই পৌঁছে গেছে। আর সব ধরণের সৌরীয় গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু, আর ধূমকেতুকে ধরলে চাঁদ, মঙ্গল, শুক্র, শনির চাঁদ টাইটান, এরোস, ইটোকায়ার পরে সাত নম্বর খগোল বস্তু ধূমকেতু ৬৭P তে পৃথিবীর যান নামল।
গ্রহাণু ইটোকায়ার ওপর হায়াবুসার ছায়া দেখা যাচ্ছে।
তবুও রোজেটা হোক বা হায়াবুসা হোক কি শুমেকার হোক, এসব কিছুই মানুষের সম্মিলিত আকাঙ্খার ফসল। যে উৎসাহ নিয়ে আমরা ফাইলির অবতরণের কাহিনী শুনতে চেয়েছি সেটা আমাদের মহাবিশ্ব, আমাদের সৌর জগৎ, আমাদের বাসস্থানকে ভাল ভাবে চেনার জন্যই করেছি। আমাদের সবার মাঝে এই স্পিরিটটি বর্তমান। আমার স্পষ্ট মনে আছে এপোলো ১১র চাঁদে অবতরণের দিনটি। এর কিছুদিন পরে ঐ মিশনের তিনজন – আর্মস্ট্রং,কলিন্স ও অলড্রিন ঢাকায় এসেছিলেন, মতিঝিলের আজকের শাপলা চত্বরে এখনকার সোনালী ব্যাংকের সিঁড়ি থেকে আমি তাদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়েছিলাম। ধূমকেতু 67P চোখে দেখাযায় না, মঙ্গলের কক্ষপথ ছাড়িয়ে পৃথিবী থেকে সেটি প্রায় ৫০০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে ধনু রাশির দিকে। তাকে প্রদক্ষিণ করছে রোজেটা। সেই দিকে তাকিয়ে আমি আজ হাত নাড়ি।
আর আজ থেকে ১,০০০ হাজার বছর পরে আমাদের কোন ভবিষৎ প্রতিনিধি হয়তো ফিরে যাবে এই ধূমকেতুতে। ফাইলিকে টেনে নিয়ে আসবে গহ্বরের ছায়া থেকে সূর্যের আলোকে। হাজার বছর পরে জেগে উঠবে মহাকাশযান। আমরা থাকবো না, কিন্তু আমাদের আশা আর আকাঙ্খা থেকে যাবে, থেকে যাবে আমাদের স্পিরিট। ফাইলি হয়তো আবার কাজ করবে।
বেশ আগের পোস্ট, তবে পড়ে মোহিত হলাম। বাংলায় এরকম বিজ্ঞান আলোচনা খুব জরুরি। লেখক তাই করছেন, জগদীশ বোস ও রবীন্দ্রনাথ দুজনেই তাই চেয়েছিলেন তাই না?
লেখা এবং মন্তব্য থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম। সংসার, সন্তান, চাকরি সবকিছু মিলিয়ে নতুন পড়ার সময় বের করাটাই এখন কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।
মুক্তমনার জন্যই এখন যা কিছু পড়তে পারি, জানতে পারি।
পড়ে খুব ভালো লাগলো 🙂
@ঔপপত্তিক ঐকপত্য, অনেক ধন্যবাদ। ঔপপত্তিক ঐকপত্য? এর অর্থটা জানালে খুশী হতাম।
@রিজভীউল কবির, চমৎকার লিখেছেন। আপনার বিশ্লেষণের সাথে আমি একমত। স্বল্প আয়তনের রচনায় বেশী কিছু লেখা যায় না। আসলে “অভিযোগ” কথাটা ঠাট্টাচ্ছলে। লেখাটার মাঝে tounge-in-cheek ঠাট্টাসমূহ আশা করি খেয়াল করেছেন, রোজেটার অভিযান নিশ্চয় অনন্য, তাকে খাটো করার কোন ইচ্ছেই আমার নেই। হায়াবুসা নামে যে একটি মহাকাশযান ছিল সেটা অনেকেই জানেন না। সেই জন্যই তার অবতারণা।
@দীপেন ভট্টাচার্য, 🙂 :good:
@দীপেন ভট্টাচার্য,
তা’হলে দীপেন’দা, রিজভীউল কবির আর আপনার মন্তব্যের সূত্র ধরে টুকটাক এডিট আর ডিসক্লেইমার দিয়ে দিলে ভালো হত মনে হয়।
@কাজী রহমান, হা, হা, 🙂 জিনিসটা যে এত সিরিয়াসলি নেয়া হবে ভাবি নি, এখানে ডিসক্লেইমার দেবার কিছু নেই, আমার লেখায় আমি কিছু দাবিও করছি না, এটা একটা স্মৃতির লগ মাত্র। রিজভীউল কবির যা লিখেছেন তাতেই হবে, উনি আলাদা করে বড় করেও লিখতে পারেন।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
ঠিক আছে; আপনি যা ভালো মনে করেন।
শুভেচ্ছা।
@দীপেন ভট্টাচার্য, লেখার আহ্বান জানানোর জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। রোজেটা নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। নতুন করে আপাতত লেখার তেমন কিছু নেই। তবে ফিলেই কি সায়েন্টিফিক ডিসকভারি করলো সেটা নিয়ে ভবিষ্যতে লেখা যেতে পারে। এখানে বলে রাখি, রোজেটার ব্যাপারে পাঠকদের জানানোর জন্য মুক্তমনা তে একটি লেখা নিবেদন করেছিলাম গত ফেব্রুয়ারী,২০১৪ এ “আদিসত্তার খোঁজে মিশন রোজেটা” নামে। মুক্তমনা মোডারেটরগন লেখাটি ছাপানোর যোগ্য বিবেচনা করেননি। এটা আমার লেখনীর ব্যার্থতা। কেউ যদি লেখাটি পড়তে চান তাহলে নিচের লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে পড়তে পারেন।
https://drive.google.com/file/d/0Bxm04lx1Z4VCSmxmVDRIRlotUEU/view?usp=sharing
@রিজভীউল কবির,
আপনার লেখা আমরা পাইনি। তবে যেহেতু ফেব্রুয়ারিতে পাঠিয়েছিলেন, সে মাসখানেক আগের কথা, অজস্র ইমেইলের ভীড়ে আমাদের পক্ষ থেকে ইমেইল মিস হয়ে যাওয়াও বিচিত্র নয়। যে কোন কারণেই হোক, আপনার লেখা মুক্তমনায় প্রকাশিত না হবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
আপনি ইমেইলের দিকে নজর রাখুন। আজ কালের মধ্যেই আপনাকে মুক্তমনায় একাউন্ট করে দেয়া হবে। প্রবন্ধ পোস্ট করাতে কোন সমস্যা হবে না তখন।
মুক্তমনায় লেখার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
@মুক্তমনা এডমিন,
আমাকে মুক্তমনার সাথে রাখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
রোজেটা বিষয়ক আমার লেখাটি আমার ব্যক্তিগত আর্কাইভে রেখেছি এবং কোথাও প্রকাশ করিনি। লেখাটি যদি আপনাদের বিবেচনায় প্রকাশযোগ্য হয় এবং মুক্তমনার নীতিমালা পরিপন্থী না হয়, তাহলে লেখাটি বিজ্ঞান আর্কাইভে পিডিএফ ফাইল হিসেবে রেখে দেয়া যায় কিনা, এটা বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।
@রিজভীউল কবির,
আপনাকে একাউন্ট করে দেয়া হয়েছে। আপনি নিজে পোস্ট করে দিলেই ভাল হয়। আমরা বর্তমানে পিডিএফ ফাইল সংরক্ষণ নিরুৎসাহিত করি। একটি বড় কারণ সার্চ ইঞ্জিনে বাংলা পিডিএফ আসে না।
আপনি লেখক হিসেবে যে কোন সময় আপনার লেখা পোস্ট করে দিতে পারেন ছবি সংযুক্ত করে।
ধন্যবাদ,
মডারেটর।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
১০০০ বছর পর আমাদের জানার পরিধির মধ্যে মহাকাশকে এখনি জানতে বড় স্বাধ হয়!
@সুষুপ্ত পাঠক, সত্যি। মহাজাগতিক সময়ের মাঝে আমাদের ক্ষণকালীন অস্তিত্ব কেন জানি এক ধরণের হতাশারও জন্ম দেয়। পৃথিবীর পাথরের মাঝে কোটি কোটি বছরের স্মৃতি সঞ্চিত, আমরা সেই স্মৃতির পুনর্গঠন করতে পারি, কিন্তু শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি না। এক হাজার বছরে পরে আমরা থাকব না, আমাদের উত্তরসূরীরা থাকবে না, আমরা যা দেখি নি তারা সেটা দেখবে। কি দেখবে সেটা ভাবার মধ্যেই আমাদের রোমাঞ্চ, যেমন রোমাঞ্চ হয় সাই-ফাই ছবিতে আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশযানের কাহিনী দেখে।
এ সময়টাতে গভীর আগ্রহ নিয়ে আমি শুনছিলাম মার্কিন রেডিও এন.পি.আর। ওরা বলছিলো ফাইলি দু বার ল্যান্ড করেছে। হার্পূন ফেইল। কিন্তু ড্যাটা দিয়েছে মাইলি। নোঙ্গর নেই তাই তারপর হয়তো পড়ে গেছে খাঁদে; যেখানে সূর্যালোক পৌঁছুচ্ছে না। কাজেই রিজার্ভ ব্যাটারিই জ্যান্ত রেখেছে মাইলিকে। ব্যাটারি শেষ তো ড্যাটা শেষ। যতক্ষণ না পর্যন্ত আবার সূর্যালোক পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ নতুন কিছু আর নেই।
অথচ ওরা এই ব্যাপারে কোন কিছুই বলেনি। আমি অন্তত শুনিনি। বদমাশের গুদাম এক একটা।
সমসাময়িক ঘটনা আর সত্যিকারের নিকটঅতীত নিয়ে লিখবার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
@কাজী রহমান, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আসলে রোজেটার দলবল সামাজিক মাধ্যমকে খুব ভালভাবে ব্যবহার করেছে। রোজেটা কয়েক মাস আগে ধূমকেতুর কাছে পৌঁছবার পর থেকেই অনেক ধরনের অ্যানিমেশন ইত্যাদি দিয়ে সবাইকে মোহিত করে রেখেছিল। যাইহোক বিজ্ঞান থেমে থাকে না। জাপানীরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় হায়াবুসা ২ নামে আর একটি যান প্রস্তুত করছে সেটা এই বছর ছাড়ার কথা।
লেখক দুটি অভিযোগ করেছেন। দ্বিতীয় অভিযোগটি বিজ্ঞান চর্চাকারীদের দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে যথেষ্ট আলোচনার দাবী রাখে, যেখানে তিনি কিছু উদাহরনের মাধ্যমে এটা বোঝানোর প্রয়াস পেয়েছেন যে রোজেটা মিশন এর কৃতিত্ব ততটা নয়, যতটা দেয়া হচ্ছে। তিনি এও বলতে চেয়েছেন যে, হয়ত ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক প্লাটফর্ম রোজেটা মিশন কে একটা জনপ্রিয়তা দিযেছে এবং হায়াবুসার কৃতিত্ব রোজেটার চাইতে অনেক বেশি। তাঁর বক্তব্য “ক্ষুদ্র খগোল বস্তুতে মানুষের তৈরি কল অনেক আগেই পৌঁছে গেছে। আর সব ধরণের সৌরীয় গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু, আর ধূমকেতুকে ধরলে চাঁদ, মঙ্গল, শুক্র, শনির চাঁদ টাইটান, এরোস, ইটোকায়ার পরে সাত নম্বর খগোল বস্তু ধূমকেতু ৬৭P তে পৃথিবীর যান নামল।”, যেটা পরোক্ষভাবে রোজেটা মিশনকে হেয় জ্ঞান করে।
লেখকের এই মন্তব্য আমাকে এই ধারণা দেয় যে, হয় তিনি রোজেটা মিশন এবং ধুমকেতু ৬৭পি সম্বন্ধে ভালভাবে অবহিত নন অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে রোজেটা মিশনকে তুচ্ছজ্ঞান করার চেষ্টা করছেন। লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত না হয়ে রোজেটা মিশন কেন অন্যান্য solar system exploration মিশনের চাইতে বেশি কৃতিত্ব দাবী রাখে এবং কেন মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে এটা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সেটা বলার চেষ্টা করছি।
প্রথমে আমাদের জানা প্রয়োজন ধুমকেতুতে অবতরনের প্রতিকুলতা যে কোন গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু অবতরনের চাইতে অনেক বেশি। যে কোন ধুমকেতু উচ্চ গতিসম্পন্ন এবং এটি পরিবেষ্টিত গ্যাসীয় ধূলিকণার বলয়ে, যেমনটি ৬৭পি ধূমকেতু। এহেন উচ্চ গতিসম্পন্ন বস্তুকে ঘিরে রোজেরটার জন্য অরবিটিং পথ তৈরী করাটা ছিল (rendezvous manoeuvres) এই মিশনের অন্যতম দুরূহ কাজ। খেয়াল করুন, রোজেটা ৩০০০ কিমি/ঘণ্টা বেগে ৬৭পি ধুমকেতুকে ধাওয়া করছিল, সেখান থেকে অনেকগুলো rendezvous manoeuvres প্রয়োজন হয় আরো গতিশিল ৬৭পি ঘিরে অরবিটিং পথ তৈরী করতে। এমন চ্যালেঞ্জ আজ অবধি কোন মিশনে নেয়া হয়নি। গানিতিক ভাবে নিখুত অরবিটিং পথ তৈরী করা গেলেও বাস্তবে ৬৭পি ধুমকেতু সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কমই জানতেন, তাই এর অনিশ্চয়তার মাত্রা ছিল অনেক বেশি।
অন্যদিকে গ্রহ, উপগ্রহ এবং পৃথিবীর কাছাকাছি গ্রাহানু তুলনামুলক ধীরগতির। এদের জন্য অরবিটিং পথ তৈরী করাটা অভিজ্ঞতার আলোকে বেশ সহজ এবং নিশ্চিত। আর হায়াবুসা মিশন সম্পর্কে বলা যায়, গ্রহানু ইটোকায়া কে ঘিরে হায়াবুসাকে কোন অরবিটিং পথ তৈরী করার প্রয়োজন হয়নি ইটোকায়ার অবস্থান পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি থাকার কারণে।
আবার লক্ষ্য করুন, রোজেটাকে দশ বছর ধরে যাত্রা করতে হয়েছে ৬৭পি ধুমকেতুর কাছে পৌঁছতে। এযাবৎ কোন কৃত্রিম উপগ্রহকে একটি বিশাল কক্ষপথ ধরে (যেটি কিনা বৃহস্পতির কক্ষপথকেও ছাড়িয়ে যায়) এত দীর্ঘ সময় পরিচালিত করা হয়নি, যেটা কিনা আবার প্রথিবীর কাছাকাছি ফিরে আসবে। এমন বিশাল কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ চালনা করা মানুষের ইতিহাসে প্রথম। আপনি হয়তো জানেন, কৃত্রিম উপগ্রহ চলার পথে বিভিন্ন প্রতিকুল অবস্থার কারণে তাঁর গতিপথের সংশোধন করা হয়। রোজেটা যখন সূর্য থেকে বহু দূরে চলে যায় (৬৬০ লক্ষ কি.মি. দূরে)তখন তাঁকে শীতনিদ্রা পাঠানো হয় এবং তখন প্রায় তিন বছর এর সাথে পৃথিবীর কোন যোগাযোগ ছিল না। রোজেটার যাত্রা ছিল অনিশ্চয়তায় ভরপুর। রোজেটার যাত্রাপথ কোন ভাবেই অন্যান্য solar system exploration মিশন এর যাত্রা পথের মত অনুকুল ছিল না।
লেখক দাবী করেছেন হায়াবুসা গ্রহানু ইটোকায়াতে অবতরণ করেছিল, যা আমার মতে আংশিক সত্য। হায়াবুসা যেটা করেছিল, সেটা হচ্ছে touch down soft landing, এতে হায়াবুসা গ্রহানুর পৃষ্ঠদেশের লাগোয়া ভাবে ভাসতে থাকে (পুরো ওজন মাটিতে দেয় না) এবং একটি যান্ত্রিক বাহু বের হয়ে এসে নমুনা সংগ্রহ করে। এ জাতীয় landing কে অবতরণ বলা হয় না।
তিনি আরো বলেছেন “ফাইলি প্রথম একটি ধূমকেতুতে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু যে প্রকৌশলে ফাইলি ধূমকেতু 67Pতে নেমেছে সেই প্রকৌশল অবলম্বনেই হায়াবুসা ইটোকায়ায় নেমেছিল।” এটাও সত্যের অপলাপ। কেন, বলছি।
হায়াবুসা গ্রহানুর এত কাছে যেতে পেরেছিল কারন ইটোকায়া গ্রহানুটি পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি অবস্থানের কারনে একটি heliocentric orbit (সুর্য কে কেন্দ্র করে) তৈরি করা সম্ভভ হয়, যেটি কাজে লাগিয়ে হায়াবুসা ধীরে ধীরে গ্রহানুটির পৃষ্ঠদেশের কাছাকাছি যেতে পারে। অন্যদিকে, ফিলেই কে রোজেটা-অরবিটার থেকে ছুড়ে ফেলা হয় এবং সেটা আনুমানিক ২-৩ কিমি/ঘন্টা বেগে ধূমকেতুতে আছড়ে পড়ে। হায়াবুসা আদতে অবতারনই করে না যেমনটি ফিলেই করে। আরো লক্ষ্য করুন, গ্রহানুর পৃষ্ঠদেশে কোন গ্যাসীয় আবরন কংবা ধুলিকনার মেঘ নেই, তাই হায়াবুসার জন্য গ্রহানুর কাছাকাছি যাওয়াটাও নিরাপদ। কিন্তু, এই অক্টোবর মাসেই ধুমকেতুটি তাঁর পৃষ্ঠদেশে গ্যাসীয় আবরন এবং ধুলিকনার মেঘ তৈরি করা শুরু করে সূর্যের অভিমুখে চলার কারণে, সূর্যের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে। এমন প্রতিকুল পরিবেশে ফিলেইর অবতরণ যে সহজ হবে না বোঝাই যাচ্ছে।
আর গঠনগত দিক থেকে হায়াবুসার সাথে রোজেটা-অরবিটার এর তুলনা করা চলে, কিন্তু ফিলেইর সাথে নয়। কিন্তু, ধূমকেতু ৬৭পি এর চারিত্রিক ও গুনগত বৈশিষ্ট্য, গতি এবং প্রতিকুলতা এতটাই প্রকট যে রোজেটা-অরবিটার এর ধূমকেতুর পৃষ্ঠদেশের কাছাকাছি নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই ছোট্ট ফিলেই কে পাঠাতে হয়। এখানে উল্লেখ্য, হায়াবুসা তে একটি রোবট যন্ত্র ছিল, নাম মিনেরভা, যেটির সাথে ফিলেইর তুলনা করা যায়। সে রোবটটিকে হায়াবুসা থেকে আলাদা করা যায়, ঠিক যেমন ফিলেইকে রোজেটা-অরবিতার থেকে আলাদা করা যায়। মিনেরভাকে সফলভাবে কাজে লাগানো যায়নি।
বিভিন্ন প্রতিকুলতা বিচারে রোজেটা মিশনটি ছিল একটি অনন্য মিশন এবং অন্য যে কোন unmanned solar system exploration মিশনের চাইতে চ্যালেঞ্জিং। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে রোজেটা মিশন ছিল একটি অসাধ্য সাধনের মিশন এবং তাঁদের ভাষায় ফিলেই’র ৬৭পি তে অবতরণ হচ্ছে মানব ইতিহাসের একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এই মিশনের মর্ম অনেকে বুঝলেও লেখক এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।
দীপেনদা, অসাধারণ লাগলো লেখাটা। ফিলে ল্যান্ডিং এর সময় জাপানও যে আগে গ্রহাণুতে নেমেছে সেটা মনে পড়েছিলো। সেটাও যে সফট ল্যান্ডিং ছিলো তা জানতাম না। কবে যে আমরাও এমন সব অভিযান করবো!
@তানভীরুল ইসলাম, সহৃদয় মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আকাশের মাঝে আমাদের ঠিকানাটা ঠিকমত বুঝে নিল সব মানুষ এক হবে একদিন, দূর গ্রহে যাবার জন্য রকেট ইঞ্জিন বানাবে সবাই একসাথে। আমাদের উত্তরসূরীরা সেই অভিযান থেকে বাদ যাবে না, আপনার আশা পূর্ণ হবে।
অসাধারণ! রুদ্ধশ্বাসে পড়লাম!
অনেক আগে দীপেনদার ভয়ানক সুন্দর একটি সায়েন্স ফিকশান পড়েছিলাম। যদিপ তাড়াহুড়ো করে শেষ করে দেয়া হয়েছিল।
দীপেনদা, আপনার আরও গল্প পড়তে মন চাইছে, সেই অতৃপ্তিটাও রয়ে গেছে, লিখুন না আবার!
@গুবরে ফড়িং, লেখাটি সময় নিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। হ্যাঁ, ঐ যে সায়ান্স ফিকশানের কথা বল্ছেন সেটা সত্যি তাড়াহুড়ো করে শেষ করে দেয়া হয়েছিল। তবে পরে আমি সেটা একটু ঠিক করার চেষ্টা করেছি, আকারেও বেড়েছে। বইটা প্রথমা থেকে কোন এক সময়ে বের হবে। দু-একটা গল্প এদিক সেদিক ছড়িয়ে আছে, মুক্তমনায় দেব সময় করে। আপনার আগ্রহের জন্য খুব ভাল লাগল। ভাল থাকবেন।
পৃথিবীর সব গল্প একদিন ফুরাবে যখন,
মানুষ রবে না আর, রবে শুধু মানুষের স্বপ্ন তখন
– জীবনানন্দ দাশ
ধন্যবাদ দীপেনদা, লেখাটি মুক্তমনায় দেয়ার জন্য। মুক্তমনায় নিয়মিত লিখলে খুশি হব।
@অভিজিৎ, আপনি নিজে যেমন লেখক, লেখক তৈরি করাও আপনার এক পেশা। অনেক ধন্যবাদ। আপনার উল্লিখিত জীবনানন্দের ছত্রদুটি মহাবিশ্বের মাঝে আমাদের ঠাঁই আর অস্তিত্বের অর্থ খোঁজার আবেগের আকুলতাকে যথার্থভাবেই প্রকাশ করেছে। ভাল থাকবেন।