ভুতেশ্বর সত্যিই কথা রেখেছে। জয় বাবা ভুতেশ্বর ! গোয়ার স্বর্গপ্রাপ্তি হয়েছে।
প্রথমে কথাটা বিশ্বাস হয়নি। দুজন দশজন নয়, শত শত নয়, হাজার হাজার নয়, একবারে ত্রিশ লক্ষ মানুষ ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার মাস্টার মাইন্ড, ভুতেশ্বরের অতি পবিত্র ভুতেস্তানের খুনে নরপতি গোয়া মরণোত্তর স্বর্গ প্রাপ্ত হয়েছেন ! বাবা ভুতেশ্বরের করুনার অন্ত নেই !
গোয়ার রাজসিক স্বর্গবাস স্বচক্ষে দেখার জন্যে মনটা খুব আকুপাকু করছিল। কিন্তু জ্যন্ত মানবের স্বর্গ দর্শনের নিয়ম নেই। তবুও ধরলাম ভুত বাবাকে। যদি কোন ব্যবস্থা থাকে !
ভুতবাবা এই অধমের আকুতি রাখলেন। তিনি স্বর্গচারী ডানা ওয়ালা ছাগী পাঠিয়ে দিলেন। বুধবার দিবাগত আমাবস্যার রাত বারোটা সাত মিনিটে শুরু হল আমার ছাগ যাত্রা। ছাগীটা ছিল কিছুটা মরা ধরনের। প্রথম আকাশ পেরুতেই তার জিহবা বেরিয়ে যাবার দশা। বললাম- কি মশাই, এভাবে চললে স্বর্গে পৌছুতে পৌছতে তো আমার আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাবে। তখন আর আমারে ফিরিয়ে আনার দরকার পড়বে না। তোমার উদ্দ্যশ্যটা কী, বলতো বাপু?
-জনাব, ক্ষমা করবেন। আমি মশাই না, মাসী। পুংলিঙ্গ না স্ত্রী লিঙ্গ।
-ঠিক আছে, ছাগ মাসী। আমরা আর কতক্ষনে স্বর্গে যাব। তোমার গতিটা একটু বাড়ানো যায় না?
ছাগী কিছুটা গতি বাড়াল বটে, তবেঁ লম্বা লম্বা শ্বাস নিতে লাগল। বেচারাকে খুব কাহিল মনে হল। বললাম- থাক, বেশী জোরে যাবার দরকার নেই। বরং একটু ধীরে সুস্থে দেখতে দেখতে যাই। তুমি বরং পরে আকাশে খানিকটা জিরিয়ে নিও।
মনে হয়ে সে খুশী হল। বিড় বিড় করে বলল- আর কত পারি, বলেন। আমি ছাগলের বাচ্চা ছাগল। মানুষের এমন পাশবিক অত্যাচার আর কত সহ্য করি বলেন?
-অত্যাচার! পাশবিক! কে করে এই স্বর্গ দেশে?
-সবাই করে। সব স্বর্গবাসীই করে। তবেঁ আমার মনিব করে সবচাইতে বেশী। সে এই সবের মাস্টার।
-কোন সবের? কে তোমার মনিব?
-কেন গোয়া, যার কাছে আপনেরে নিয়া যাইতেছি।
-ও, তুমি গোয়ার ডিউটি কর। সে বুঝি খুব ঘুরাঘুরি করে?
ছাগী খুব হাসল। কোন কথা বলল না।
-কি উত্তর দিলা না যে?
-আপনে যে কী কন? কোথায় ঘুরাধুরি করব? স্বর্গে তো কেউ ঘুরতে যায় না। যায় ছহবত করতে আর মদ্যপান করতে। খাইতে আর ঘুমাইতে।
-শুধু এই করে কী আর সময় কাটে?
-আর কি চাই?
-কেন, গান বাজনা, শিল্প কলা, চিত্র কলা, উপন্যস, নাটক, সিনেমা- কত কিছুই না লাগে সময় কাটানোর জন্যে…………
ছাগী আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল- শিল্পকলা নিষিদ্ধ বিষয়। জগতে যারা শিল্প সহিত্য চিত্রকলা চর্চা করে তারা স্বর্গ থেকে বিতারিত। স্বর্গ কেবল তাকের জন্য যারা শরীর সর্বস্ব, এবং সুকুমার বৃত্তিহীন।
ও আচ্ছা। তো তোমার কষ্টটা কীসের? গোয়া তোমাকে কী ধরনের পেইন দেয়?
-ছহবত পেইন। গরু ছাগল দুম্বা উট, কিছুতেই তার অরুচি নেই। গত রাতে সাতশ’ বার সে আমাতে উপগত হয়েছ!
-এতো বিরাট অন্যায়, একটা অবুঝ প্রাণীর উপর এমন পাশবিকতা! কেউ কিছু বলে না?
-কে বলবে? কি বলবে? স্বর্গবাসীর সকল ইচ্ছা পুরন করতে ভুতেশ্বর বাধ্য। তারা যা ইচ্ছে প্রকাশ করবে, ভুত তাই তার জন্যে সিদ্ধ ঘোষণা করবে। এটাই স্বর্গের আইন। দেইখেন- আপনি যেন খুব বেশী তার কাছে থাইকেন না। তার যদি আপনের উপর ইচ্ছা জাগ্রত হয়ে যায়, তাইলেই সর্বনাশ! ভুতেশ্বর আপনাকেও তার জন্যে সিদ্ধ ঘোষণা করে দিবে।
ছাগযান অবশেসে শেষ আসমান পার হয়ে পৌছে গেল গোয়ার স্বার্গ বাড়ীর বারান্দায়। তখন সকাল হয়ে গেছে। বেলা আনুমানিক এগারটা হবে।
বিশাল আলীশান বাড়ী পেয়েছে। শত শত কক্ষ। বিশাল বাগান। চারটে বিস্তীর্ন ঝর্না। পানির, দুধের, মধুর আর মদের ঝর্না।
প্রতিটা ঝর্নার আশে পাশে পান পাত্র নিয়ে বসে আছে ছোট কিশোর বালকেরা। মনি-মুক্তর মত তাদের চেহারা। ভিতর থেকে আদেশ আসা মাত্র শুরু হয়ে যায় শিশুদের হন্তদন্ত যাত্রা।কেউ পানি, কেউ দুধ, কেউ মধু আর একু মদ নিয়ে ছোটে। মদের কদর একটু বেশী।
পাশে বাগানে অনেকগুলি বেঞ্চি পাড়া আছে। বেঞ্চি গুলিতে স্বর্গবালারা উৎকণ্ঠিত অপেক্ষায়। কথন কার ডাক পড়ে। তারা আনত নয়না। প্রত্যেকে গায়ে ট্যাগ লাগানো আছে- আমাকে কোন মানুষ কিম্বা কোন প্রেত কখনো ছোয়নি। তাদের ত্বক এত পাতলা যে, দেহের স্কেলিটন পরিস্কার দেখা যায়। এমন হাড় জিরজিরে কঙ্কালের উপর কেউ উপগত হয়, ভাবতে অবাক লাগে?
তাদের দেখে মধুমালার কথা মনে পড়ল। মধুমালা। বাঙলার কৃষ্ণ নারী। স্বাধীন, সুঠাম, আর নির্ভিক। তার উপর কেউ উপগত হয় না। সে পুতুল না। সে আত্বপ্রত্যয়ী মানুষ। সে এক নিমিষে মদনকে হরন করতে পারে। ৭২ স্বর্গ বেশ্যা মধুমালার কাছে নস্যি।
হাটতে গোয়ার খাস কামড়ার কাছে গেলাম। কামড়ার দরোজা ভেতর থেকে বন্ধ। বাইরে একটা সর্গবালক নগ্ন হয়ে শুয়ে আছে। আরেকটি বালক তার পায়ুপথে তরল জাতীয় পদার্থ ঢালছে।
বললাম- একি হচ্ছে?
শোয়া বালকটি বলল- এখন চলছে স্বর্গবালা নম্বর-৩৯ এর ডিউটি। এর পরে আমার পালা। আমাদের মুনিব একজন বালার পরে একজন বালকে উপগত হন। উনি খুব রসিক আর রুচীবান মানুষ। ভুতেশ্বরের অতিপ্রিয় শিষ্য।
আমি বললাম- আমি তো তার সাথে দেখা করতে এসেছি। ঢাকা থেকে। আমি ঢাকার মদন। তার সাথে এখন দেখা হবে না?
– এখন হবে না। উনি দুপুর পর্য্যন্ত ৭২ দাসী আর সমান সখ্যক বালক সঙ্গ করেন। তারপরে তিনি আহার করেন। তারপর বিশ্রাম। বিকেলের আগে আপনি তার দেখা পাবেন না।
– দুপুরের মধ্য এত কম সময়ে এত সহবাস কীভবে হবে? তিনি কী মিনিটে মিনিটে একটা করে সারেন?
– না। স্বর্গের এক এক দিন মর্ত্যের পঞ্চাশ হাজার বছর। তাই সময় এখানে কোন সমস্যা না, সমস্যা সময় কাটানোর।
হিসেব কষতে গিয়ে ঘেমে উঠলাম। বিকেল হতে অন্থত কুড়ি হাজার বছর অপক্ষে করতে হবে। সময় কাটানো যে কত বড় সমস্যা তা স্বর্গে না গেলে বোঝা যায় না!
গোয়া আপনাতে উপগত হইলো কি না তাহা জানিতে মনটা বড়ই আঁকুপাঁকু করিতেছে 🙂
যদি সময কাটানোই সমস্যা হয তবে আমার স্বর্গে যাবার দরকার নেই। অবশ্য নারী জাতির জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা!!!!!!!!
@গীতা দাস,ভিন্ন ব্যাবস্থা! কী ভিন্ন ব্যাবস্থা! বরং তাদের অবস্থা ততোধিক করুন। 72 পিস হুরী ফিনিস করার পরে তাদের ডাক পরতেও পারে, নাও পরতে পারে! তাদের অপেক্ষা অন্রহীন!
কোন কোন ভাষ্য মতে নারীরা হবে হুরদের সর্দারীনি। পতিতা পল্লীর সর্দার্নীর মত, তারা হুরীদের টাইমিং, সিরিয়ালে এই সব দেখভাল করবে হয়তো!
ভুতেশ্বর মহান, এক এবং অদ্বিতীয়।
গোয়ার প্রতি ভুতেশ্বর সর্বদাই বিশেষ অনুভূতিপ্রবন ছিল। তাই গোয়ার স্বর্গপ্রাপ্তি নিয়ে কোন দ্বিধা ছিল না। জয় বাবা ভুতেশ্বর।
@তারিক, বাবা ভুতেশ্বরও মনে হয় এখন অসহায়। সেই রুপকাথার ভুত এখনো ধারন করে আমরা সৃষ্টি করে চলেছি গোয়ারপাল। ছাগীর হাট।
এই কুক্ষন কবে অবসান হবে!
গোয়ার স্বর্গপ্রাপ্তি তার পটল তুলবার আগেই হয়েছিল।
@তামান্না ঝুমু, বোধ হয় তাই। আমরা এক অসহায় বোকার স্বর্গে বাস করছি,
গোয়া মারা গেছে। গোয়া মারা গেছে একথা লজ্জার, গোয়া কে মারতে পারা গেলো না এটা বড়ই লজ্জার।
ভুতেশ্বরের ক্ষ্যামতা দেখে অবাক লাগে। সে ঠিকই কথা রাখে। গোয়া জেলখানাতেও গন্ডা গন্ডা আন্ডা কলা দুধ মধু কচি কচি জিনিস নিজেতে ভরলো আবার ওখানেও ভুতেশ্বরের উপহার গোয়া’তেই বর্ষিত হল। কি অনাচার কি অনাচার। আর বেচারী ছাগী; এই অভাগা দেশ যে পশুপ্রেমে চ্যাম্প; ছাগী কি ভাবে তা জানবে। আহারে ছাগী। ব্ড্ড দুঃখ ভায়া; গোয়াকে মারা গেল না, গোয়া মারা গেল :scratch:
@কাজী রহমান,
এইটাই গোয়াগীরির মজা ! তাই দেখেন- তার শেষ কৃত্যে লাখ লাখ হবু গোয়ার ভীড় জমেছিল। এক গোয়া লোকান্তরে, লক্ষ গোয়া ঘরে ঘরে!
এই দেশ, এই সমাজ শুধু পেছনেই যাবে।