প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বাড়ছে আমাদের প্রযুক্তি নির্ভরতাও। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র, সব যায়গাতেই আজ আমরা প্রযুক্তির সাথে যুক্ত। দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই এমন স্থান হয়তো পাওয়া যাবে কিন্তু মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই এমন যায়গা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গহীন অরণ্যের মাঝেও দাড়িয়ে থাকে বেরসিক বিটিএস টাওয়ার। গ্রামে গঞ্জে ঘোরার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নিশ্চিত ভাবেই এই সংযুক্তি নতুন নতুন ব্যবসা এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। আমাদের সামাজিক সম্পর্কগুলোও হয়ে গেছে অন্যরকম। কারণ সবাই এখন কয়েকটা বোতাম চাপের দূরত্বে। রোমিও-জুলিয়েটের মত কমিউনিকেশন গ্যাপের কারণে করুণ পরিণতি হবার যুগ আর নেই। তাই আমাদের সাহিত্যও বদলে যাচ্ছে তুমুল বেগে। এ তো গেল তথ্যপ্রযুক্তি। কৃষি, নির্মান, পরিবহন, সংরক্ষণ, সৌর প্রযুক্তিতেও আসছে নতুনের ছোঁয়া। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবেই প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটাকে যতটা না আশার আলো মনে হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে অশনি সংকেত। কারণ এই ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি নির্ভরতার সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে আমাদের বিজ্ঞানমনস্কতা, বিজ্ঞানচর্চা। উচ্চ প্রযুক্তির কিছুই আমরা তৈরি করছি না। কিনে আনছি বাইরে থেকে। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তাই সেই আদি ও অকৃত্রিম সস্তা শ্রম। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় এই অবস্থার পরিবর্তনের আশা দেখা যাচ্ছে না।
মুঠোর মাঝে এমন অলৌকিক প্রযুক্তি থাকলেও আমরা কেন যেন কৌতূহলি হয়ে উঠছি না। আমরা স্রেফ ভোক্তা হয়েই সন্তুষ্ট। কীভাবে এসব কাজ করছে সেই শিশুসুলভ কৌতূহলটা কোথায় যেন হারিয়ে ফেলছি আমরা স্কুলে বড় ক্লাসে উঠতে উঠতেই। ক্লাস ফাইভে পড়া ছেলে-মেয়েরাও যতটুকু কৌতূহলী থাকে ক্লাস নাইনে উঠতে না উঠতে তাদের অনেকেই সেই কৌতূহল হারিয়ে ফেলছে। ক্লাস নাইনে বিজ্ঞান বিভাগে নিবন্ধনের সংখ্যা দেখলেই যেটা বোঝা যায়। তার মানে জুনিয়র হাই স্কুলের (সিক্স সেভেন এইট) এই তিন ক্লাসেই আমাদের কৌতূহলমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এই বয়সশ্রেণীকে লক্ষ্য করে তাই বিশেষ পরিকল্পনা থাকা উচিত। ব্লগে আমরা বিজ্ঞান নিয়ে যে লেখালিখিগুলো করি, সেগুলো জনপ্রিয় ঘরনার হলেও, সেগুলোর উদ্দিষ্ট পাঠক সাধারণত এই বয়সশ্রেনীতে পড়ে না। অধুনা, বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকাগুলো (যেমন জিরো টু ইনফিনিটি) সেই অভাব কিছুটা পূরণ করছে। বিপুল জনগোষ্ঠির তুলনায় এগুলোর বিস্তার অপ্রতুল হলেও বিজ্ঞানের বিষ্ময় মানুষের মাঝে পৌছে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এরা করে চলেছে। বিজ্ঞানমনস্কতা সৃষ্টিতে জনপ্রিয় বিজ্ঞানের অবদান অস্বীকার উপায় নেই কিন্তু প্রকৃতিগতকারণেই জনপ্রিয় বিজ্ঞান আর পুরোদস্তুর বিজ্ঞানের মাঝে একটা যোজন দূরত্ব বিরাজ করে। সেই শূন্য স্থান পুরন করার মত কর্মকাণ্ড এদেশে অপ্রতুল। গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান ক্যাম্প, ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড এগুলো সেই পথের প্রয়াস হলেও, প্রতিটি স্কুলের খুব কম সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীই এসবের আঞ্চলিক পর্বে অংশ নিতে পারছে।
আমাদের তাই দরকার একটু ‘অজনপ্রিয়’ ঘরনার বিজ্ঞান লেখা। জনপ্রিয় বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের আবিষ্কার, বিজ্ঞানভাবনা ইত্যাদিকে সহজপাচ্য করে, মানুষের সামনে তুলে ধরে। জনপ্রিয় বিজ্ঞানের চোখে বিজ্ঞান একটা জাদুর কাঠি, বিজ্ঞানীরা হ্যারি পটার, রোমাঞ্চকর তাদের জীবন। এটা সত্যি বিজ্ঞানীদের জীবন রোমাঞ্চকর, কিন্তু এই বিজ্ঞানী জীবনের প্রকৃত রূপ না মেলে তাদের জীবনী গ্রন্থে, না মেলে জনপ্রিয় বিজ্ঞানে, এমনকি তাদের রাশভারী গবেষণাপত্রেও এর খোঁজ পাওয়া যায় না। এই ব্যাপারটা প্রকাশিত হয়েছে এই চমৎকার কার্টুনে,
বিজ্ঞানী একজন রক্তমাংসের মানুষই। তাকে ঐ সব অভাবনীয় আবিষ্কারের জন্য অভাবনীয় পরিশ্রম করতে হয়। অগণিত উপাত্ত ঘেটে তার মধ্যে কোনো অন্তমিল, কোনো ছন্দ খুঁজে বের করা। সেই অনুযায়ী নতুন হাইপোথিসিস দাঁড় করানো। সেইসব হাইপোথিসিসের গাণিতিক ভিত্তি দাঁড় করাতে পাতার পর পাতা অঙ্ক করা। এইসবই বিজ্ঞানীদের দৈনন্দিন কর্ম। বিজ্ঞানীকে কোনো ম্যাজিক্যাল জিনিয়াস ভাবলে চলবে না। পাতার পর পাতা অঙ্ক করতে তাকেও আমার আপনার মতই খাটতে হয়। লোহালক্কড়ের দোকানে যে শ্রমিক মাথায় করে ট্রাক থেকে রড নামায় সে ব্যাপারটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে যে রড নামাতে কম শক্তি খরচ করতে হয় তা নয়। তাই বিজ্ঞানীকে অনায়াসে দেয়ালজুড়ে গাণিতিক সমীকরণ লিখতে দেখে অবাক বা হতাশ হবার কিছু নেই। তার সাথে একজন অবিজ্ঞানীর তফাত স্রেফ ঐ পরিশ্রম করার অভ্যাসে। এ প্রসঙ্গে কেপলারের একটা কথা মনে পড়ে। তিনি তার গ্রহ নক্ষত্রের গতিপথের সূত্র সংক্রান্ত সুদীর্ঘ্য হিসাবনিকাশ পড়তে পড়তে হাফিয়ে ওঠা পাঠককে বলছেন, “তুমি যদি এইসব ক্লান্তিকর হিসাবনিকাশ পড়তে পড়তে ক্লান্ত হও, তাহলে একবার আমার কথা ভাবো, এগুলো করতে আমাকে অন্তত ৭০ বার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতে হয়েছে”। জনপ্রিয় বিজ্ঞান পড়ে বিজ্ঞানপ্রেমী হয়ে উঠলে বেশিরভাগ সময় (সবার ক্ষেত্রে নয়) বিজ্ঞানের এই সাধনার দিকটা সম্পর্কে ভুল ধারনা সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীদের জীবনের সিংহভাগই যে কেটে যায় এই নিদারুণ হতাশাজনক কানাগলিতে ঘুরতে ঘুরতে, সে কথা বেশিরভাগ সময়ই উহ্য থাকে। থমাস আলভা এডিসনের, বাল্বের ফিলামেন্ট বানাতে হাজারবার চেষ্টা করার গল্প কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিজ্ঞানের যে কোনো পিএইচডি ছাত্রকেই তার গবেষণার বিষয়গুলো নিয়ে এভাবে হাজার রকম চেষ্টা করতে হয়। মূল গবেষণাপত্রে অবশ্য লেখা থাকে শুধু সফল অ্যাপ্রোচের কথাটাই। ভুললে চলবে না, যে প্রযুক্তিগুলো এখন হাতের মুঠোয় ব্যবহার করছি অনায়াসে, যেগুলোর প্রতিটার পিছনে হাজার বিজ্ঞানীর হাজার ঘন্টা কানাগলিতে ঘোরার ভোগান্তি রয়েছে।
বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি ভীতি সঞ্চার না করে এই কষ্টকর অভিযাত্রার কথাও আমাদের তুলে ধরা উচিৎ। সেটা হচ্ছে না বলেই, ক্লাস ফাইভের ইয়ারবুকে যে ছেলেটা লিখছে, হবে পদার্থবিজ্ঞানী বা জেনেটিসিস্ট সেক্লাস নাইনে উঠে জ্যামিতির ‘এক্সট্রা’, আর উচ্চতরগণিতের সামনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ছুটছে ব্যবসায় প্রসাশনে। যদিও এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিজ্ঞান না পড়ে ব্যবসা (এমনকি সাহিত্যেও) ভালো করার উপায় নেই। তাই বড় হয়ে সে হয়ে উঠছে, রপ্তানিযোগ্য অদক্ষ জনশক্তি। আর যারা কায়ে ক্লেশে বিজ্ঞান বিভাগে টিকে যাচ্ছে তারাও শুরুতেই বুঝতে পারছে না যে উপরের দিকে যেতে যেতে এই যাত্রা ক্রমেই আরো কঠিন হয়ে উঠবে। অনেকটা এভারেস্টে চড়ার মত, যতো উচুতে পথচলা ততোই পরিশ্রমসাধ্য।
তাহলে উপায়? বিজ্ঞান শিক্ষার এই বৈতরণী পাড়ি দিতে ছেলে-মেয়েদের উদ্ভুদ্ধ করবো কী করে? শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় এই পরিশ্রম লাঘব করার আর কোনো উপায় যেহেতু নেই, বাকি থাকে একটাই পথ। সেটা হলো বিজ্ঞান চর্চার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যেন কষ্টকর হলেও ব্যাপারটা স্রেফ জীবনের একটা অংশই হয়ে যায়। স্যোশাল নেটওয়ার্ক, মোবাইলফোন, তরুণদের মধ্যে খুব সহজে আনন্দলাভের নানান উপায় মেলে ধরে। সেটা কাটিয়ে বিজ্ঞানের কষ্টকর পথে টেনে আনার কাজ সহজ সাধ্য নয়। তার জন্য দরকার জনপ্রিয় বিজ্ঞানের চেয়ে আরেকটু সিরিয়াস ঘরনার লেখালিখি, টিভি বা রেডিও অনুষ্ঠান, ইত্যাদি।
টিভি রেডিওর ব্যাপারে কিছু করা না হলেও। বিজ্ঞান নিয়ে সিরিয়াস ঘরনার লেখালিখির হতে দেখেছি মুক্তমনাতেই। বিবর্তন, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে মুক্তমনায় এমন অনেক লেখা আছে যা স্রেফ বিজ্ঞানের আবিষ্কারের জয়গাথা না, রীতিমত কাদামাটিতে নেমে হাতেকলমে বিজ্ঞানের কোনো বিষয় ব্যাখ্যা করার মত। যেটা পাঠকের তরফে সেফ আয়েসী পাঠ নয়, রীতিমত সক্রিয় অংশগ্রহন দাবি করে। এবং এই ধরনের লেখালিখি ও পাঠক মিথোস্ক্রিয়াই মুক্তমনাকে করে তুলেছিলো অনন্য! খেয়াল করুন অতীতকাল ব্যবহার করে ‘তুলেছিলো’ বলছি। আর এখানেই এই লেখার শিরোনামের তাৎপর্য।
বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছি মুক্তমনায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা কম আসছে। এমনকি লেখা আসলেও সেটাতে পাঠক মিথোস্ক্রিয়া (কমেন্ট সংখ্যা), বা লেখাটাগুলোতে পাঠকের আগ্রহ (হিট সংখ্যা) আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যাচ্ছে। বিজ্ঞান নিয়ে যে লেখকদের লেখা নীড়পাতা মুখিয়ে রাখতো, তাদের অনেকেই লিখছেন না নিয়মিত। এমনকি বিজ্ঞান নিয়ে লেখা আসলেও সেটা যেন অগোচরেই থেকে যাচ্ছে। সারাদেশে বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহহীনতার মাঝে মুক্তমনা যে উজ্জল ব্যতিক্রম হয়ে ছিলো সেটাই যেন আজ হুমকির সম্মুখীন। এবং এর একটা কারণ হতে পারে, পাঠক ও লেখক রুচিতে বিজ্ঞানের পরিশ্রম সাধ্য তত্ত্বের বদলে রাজনীতির সহজসাধ্য (অগুরুত্বপূর্ণ বলছি না কিন্তু!) আলোচনা বেশি রুচছে। কেননা মোড়ের চা দোকানের আয়েসি মেজাজে রাজনৈতিক আলোচনার তুমুল ঝড় তোলা যায়। যেখানে, বিজ্ঞান সাধনা বেশিরভাগ সময়ই একটা নিসঙ্গ অভিযাত্রা। খুটিনাটি বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলো অনুসরণ করতে অন্য ধরনের মেজাজ দরকার। হয় আমরা (মুক্তমনার লেখক পাঠকরা) সেই মেজাজ হারিয়ে বসছি। অথবা সেই মেজাজের পাঠকরা এদিকে আর আসছেন না। ব্যাপারটা শুধু আমার মনে হচ্ছে নাকি অন্যদেরও মনে হচ্ছে তা নিয়ে একটা জরিপ হতে পারে। কিন্তু সেইসব জরিপের ঝামেলায় না গিয়েও বিজ্ঞান যে হেরে যাচ্ছে সেটা দেখা যায়। এবং তা রীতিমত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই। আমরা এখন সেটাই করবো।
নিবন্ধটির এই অংশে এসে লেখাটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান ঘরণা থেকে ‘অজনপ্রিয়’ বিজ্ঞান ঘরণায় উত্তির্ন করবো আমরা। তার জন্য আমরা কিছু উপাত্তঘাটাঘাটি করবো। আমরা জানি মুক্তমনার লেখাগুলোতে ‘বিষয় শ্রেণী’ যুক্ত করা যায়। এবং লেখকরা বেশ যত্ন নিয়েই বিষয়শ্রেণী যুক্ত করেন। মুক্তমনার নতুন সাইট শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয়শ্রেণী যুক্ত লেখার সংখ্যা, সেগুলোতে হিট সংখ্যা, এবং মন্তব্য সংখ্যা থেকে লেখক ও পাঠকদের রুচিগত বিবর্তনের একটা ধারা বোঝা সম্ভব। এইসব উপাত্ত আর তার কিছু বিশ্লেষণ আমরা করবো এবং সে থেকে দেখতে চেষ্টা করবো, বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার জনপ্রিয়তা আদৌ কমছে কি না। এই আলোচনায় শুধু মুক্তমনা বাংলা ব্লগ বিবেচনা করা হয়েছে।
শুরুতেই নিচের লেখচিত্রটি দেখি,
বিভিন্ন বিষয়শ্রেনীর পোস্ট সংখ্যা,
এখানে বিজ্ঞান, রাজনীতি, ধর্ম, ক্যাটাগরির পোস্ট সংখ্যা দেখানো হয়েছে। x- অক্ষ বরাবর আছে মাস আর y- অক্ষ বরাবর ঐ মাসে প্রকাশিত পোস্ট সংখ্যা। দেখার সুবিধার্থে ডাটাপয়েন্টগুলো একটা স্মুথ কার্ভ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে। এবং একেকটা বিষয় শ্রেণীর ট্রেন্ড বোঝার জন্য স্রেফ ভিজুয়াল এইড হিসাবে একটা সিক্সথ অর্ডার কার্ভ দিয়ে ডাটাগুলো ফিট করা হয়েছে। যা থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১০, ২০১১ সালের দিকে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে লেখার সংখ্যা বেড়ে গেছিলো, এবং ঐ সময় রাজনীতি নিয়ে লেখা তুলনামূলক ভাবে কম। ইনফ্যাক্ট রাজনীতি নিয়ে লেখায় ২০১০-২০১১ সালের দিকে বরং কিছুটা কমেই গেছে। ফলে এর ডানে ও বামে দুটো কুঁজ তৈরি হয়েছে।
মুক্তমনার বিষয়শ্রেণীটা একটা ক্রমোচ্চ শ্রেণীবিভাগ। ফলে বিজ্ঞান বিষয়শ্রেণীর সকল উপশ্রেণীর লেখাই বিজ্ঞান লেখা হিসাবে ধরা হএয়ছে। একই লেখায় যদি একাধিক উপশ্রেণী ট্যাগ করা থাকে, সেক্ষেত্রে ওই লেখাটি একবার মাত্র গণনায় আনা হয়েছে। রাজনীতি ও ধর্মের ক্ষেত্রেও তাই।
তবে এই উপাত্তের একটা দুর্বলতা হলো, বেশ কিছু লেখার বিষয়শ্রেণী লেখকরা নির্ধারণ করে দেন না। ফলে সেটা “ব্লগাড্ডা” বা un-catagorized হিসাবে থেকে যায়। আমরা ধরে নিচ্ছি, সকল বিষয়শ্রেণীর লেখকরাই একই মাত্রায় বেখেয়ালি, ফলে সকল বিষয়শ্রেনীর লেখাই একই অনুপাতে আনক্যাটাগরাইজড হয়ে থাকে। (নয়েজি বৈজ্ঞানিক উপাত্ত বিশ্লেষণে এই ধরনের সুস্পষ্ট অনুমান করতে হয় প্রায়ই)। তা হয়ে থাকলে, এই গ্রাফের যে হাম্প যত বড় সে তত বেশি সংখ্যক লেখা হারিয়েছে লেখকের বেখেয়ালে। তাই, সব লেখা সঠিকভাবে ক্যাটাগরাইজড করা হলেও, ২০১০-২০১১ সালে বিজ্ঞান ও ধর্মের ‘উন্নতি’ ও ওই অংশে রাজনীতির ‘অবনতি’ থেকেই যাবে।
এ ছাড়া, কোনো লেখায় যদি, একাধিক ভিন্ন বিষয়শ্রেণীর ট্যাগ থাকে। মানে যদি ধর্ম, ও বিজ্ঞান উভয়ই থাকে, তাহলে লেখাটা উভয় অংশেই কাউন্ট হবে। (এটাই হয়তো ধর্ম-বিজ্ঞানের লাইনদুটোর সাদৃশ্যের একটা কারণ। কেননা ধর্মের বিভিন্ন ব্যাপারকে সমালোচনা করে প্রচুর বৈজ্ঞানিক লেখা মুক্তমনায় লেখা হয়, যাতে উভয় ট্যাগ এক সাথে থাকে)। একই লেখায় বিজ্ঞান ও রাজনীতি ট্যাগ থাকার সম্ভাবনা কম। তবে দুয়েকটা থেকে যেতে পারে। অপরদিকে ধর্ম ও রাজনীতি উভয় ট্যাগ আছে এমন লেখাও বেশকিছু থাকবে। (ঠিকঠিক সংখ্যাগুলো একটু সময় পেলে যুক্ত করবো)।
তবে আমরা পরে যে গ্রাফদুইটি দেখবো তাতে এই বেখেয়ালে বিষয়শ্রেণীহীন রয়ে যাওয়া উপাত্তগুলো অতটা প্রভাব ফেলবে না। উল্লেক্ষ্য, বিজ্ঞান, ধর্ম, রাজনীতি, এ ধরনের বৃহত্তর ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে না এমন প্রচুর লেখা মুক্তমনায় আসে, যেমন গল্প, কবিতা, গ্রন্থালোচনা, মানবতাবাদ, ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের মূল ফোকাস থাকবে বিজ্ঞান ও রাজনীতি নিয়ে।
উল্লেক্ষ্য, হিট মানেই পাঠক পড়ছে না, তবে হিট মানেই পাঠক ঐ পোস্ট খুলেছে। মুক্তমনার সিস্টেমে একই পাঠক একাধিকবার ওপেন করলে একাধিক হিট কাউন্ট হয়। অর্থাৎ হিট কাউন্ট ইউনিক নয়। কিন্তু তাতে কি! কোনো লেখায় বেশি হিট থাকা মানে পাঠকের আগ্রহ-উদ্দীপনা ঐ লেখা নিয়ে বেশি; সেটা ধরে নেওয়াই যায়।
তবে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে মন্তব্য সংখ্যা, কোনো পোস্টে মন্তব্য করে যে পাঠক সে নিশ্চিত ভাবেই লেখাটা নিয়ে অনেক বেশি ভাবে। এমনকি কোনো পাঠক একাধিক মন্তব্য করলেও, ব্লগটি পাঠকের সঙ্গে কী পরিমান মিথোস্ক্রিয়া ঘটাচ্ছে সেটা তার মন্তব্য সংখ্যা থেকে বোঝা সম্ভব।
মূল পোস্ট সংখ্যার হ্রাসবৃদ্ধি দেখে যেমন লেখকরা কী নিয়ে লিখতে চাচ্ছেন বেশি সেটা বোঝা যায়, তেমনই এই মন্তব্য আর হিট এর গ্রাফ থেকে অনুমান করা সম্ভব পাঠকরা কোন ধরনের লেখায় আগ্রহ পাচ্ছে।
এখানে উল্লেক্ষ্য, কেউ যদি এখন ২০০৯ সালের কোনো পোস্ট খোলে, তাহলেও সেটার হিট কাউন্ট বাড়বে। আমরা ধরে নিচ্ছি, পোস্ট প্রকাশিত হবার পরপর কিছুদিনের মধ্যেই বেশিরভাগ মন্তব্য ও হিট হয়ে যায়। (বিশেষ ভাবে হাইলাইট করা পোস্ট বাদে। যেগুলো আবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক না)। তাই কোনো একটা মাসের হিট ও মন্তব্য সংখ্যা ঐ মাসের পাঠকদের আগ্রহ উদ্দিপনার নিখুত নির্দেশক না হলেও, কাছাকাছি নির্দেশক।
এতক্ষণ কোন লেখে কোন উপাত্ত কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে সেট আলোচনা করলাম। এখন দেখা যাক, এই লেখগুলো আমাদেরকে আসলে কী বলছে। যেমন চিত্র-১ থেকে আমরা দেখি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে রাজনীতি নিয়ে লেখা এসেছে ৪১ টি। এই স্পাইক পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে কমে আসে। বোঝাই যাচ্ছে, শাহবাগ আন্দোলন এখানে মূল ফ্যাক্টর। এ সময় প্রতি মাসে বিজ্ঞান আর ধর্ম নিয়ে লেখা এসেছে গড়ে ১০ টির কম। আমরা যদি নীল রঙের স্মুথ লাইনটা দেখি, তাহলে দেখবো বিজ্ঞান নিয়ে লেখা সেই ২০১২ এর পর থেকেই যেন ক্রমাগত কমে আসছে।
নিচের লেখচিত্রে, বিজ্ঞান ও রাজনীতি বিষয়ক পোস্টে মাসিক গড় হিট সংখ্যা চিত্রিত হয়েছে,
চিত্র-২ অর্থাৎ বিজ্ঞান ও রাজনীতি পোস্টে পোস্ট প্রতি মাসিক গড় হিট এর চিত্র দেখলে দেখা যায়, ২০১২ এর আগে পর্যন্ত বিজ্ঞান নিশ্চিতভাবেই এগিয়েছিলো রাজনীতির থেকে ২০১২ থেকে ২০১৩ এর মধ্যভাগ পর্যন্ত বিজ্ঞান আর রাজনীতি দুটো নিয়ে পাঠকের আগ্রহ ছিলো কাছাকাছি, কিন্তু তার পরই পাঠকরা বিজ্ঞানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এই চিত্রে মাঝে মধ্যে যে স্পাইকগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো ঐ মাসে প্রকাশিত কোনো বিশেষ টপ পোস্টের কারণে সৃষ্ট বলে আমার ধারণা। যেমন রাজনীতি লাইনের ২০১৩ এর ডিসেম্বরের স্পাইকটি, আরিফ রহমানের একটি প্রায় ৩৩ হাজার বার হিটহওয়া লেখার কারণে সৃষ্ট। সময় পেলে এ ধরনের একক পোস্টভিত্তিক স্পাইক দূর করেও একটা গ্রাফ যোগ করার ইচ্ছা রাখি।
নিচের চিত্রে বিজ্ঞান ও রাজনীতি বিষয়ক পোস্টে মাসিক গড় মন্তব্য সংখ্যা চিত্রিত হয়েছে,
তবে পাঠক মিথোস্ক্রিয়ার সবচেয়ে ভালো নির্দেশক হচ্ছে মন্তব্য সংখ্যা। চিত্র-৩ থেকে দেখতে পাচ্ছি, ২০১১ এর আগপর্যন্ত বিজ্ঞান বিষয়ক পোস্টেই পাঠক বেশি মিথোস্ক্রিয়া করেছে ২০১১ থেকে ২০১২ এর শেষ ভাগ পর্যন্ত বিজ্ঞান, রাজনীতি সমানে সমানে ফাইট দিলেও এর পর থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বিজ্ঞানের পোস্টে পোস্টপ্রতি পাঠকের মন্তব্য সংখ্যা রাজনীতি পোস্টে পোস্টপ্রতি পাঠকের মন্তব্য সংখ্যার চেয়ে কমে গেছে। এটা কি পাঠকদের রুচির পরিবর্তন, নাকি আগের বিজ্ঞান প্রেমী পাঠকরা মুক্তমনায় আর আসছেন না?
এছাড়া ধর্ম নিয়ে পোস্টে হিট ও মন্তব্য সংখ্যা প্রায়সব সময়ই বিজ্ঞান ও রাজনীতি থেকে বেশি থাকে। ধর্ম এবং uncategorized বিভাগের পোস্টে মন্তব্য সংখ্যার মাসিক গড় দেখা যায় চিত্র-৪ এ।
দেখা যাচ্ছে, ২০১০ থেকে ২০১২ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্লগের একটা সুবর্ণ সময় ছিলো তখন সব ধরনের পোস্টই বেশি বেশি আসছিলো। এবং হচ্ছিলো তুমুল আলোচনাও। এর পরই একটা ক্রমহ্রাসমান ধারা দেখতে পাই যেন। ব্যাপারটা কি ফেসবুকে বড় বড় স্ট্যাটাস দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবার সাথে কোনো ভাবে সম্পর্ক যুক্ত?
সে যাই হোক, ফিরে আসি আমার মূল আলোচনায়। বিজ্ঞান হেরে যাচ্ছে রাজনীতির মারপ্যাচে। এবং আমি যেহেতু সেই চিন্তা ধারার যারা মনে করে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ব্যাতীত সভ্যতার অগ্রগতি সম্ভব না। সেই প্রথম পাথর ঠুকে আগুন বানানোর থেকে, ৬টি রোগের টিকা হয়ে ৭ বিলিয়ন মানুষের পেটে খাদ্য, জোগানো পর্যন্ত সবই করে চলেছে বিজ্ঞানের নিরলস অগ্রগতি। আর সেতুলনায় মানবইতিহাসের যত সব বড় বড় বিপর্যয় সেগুলো তো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি, ভুল বোঝাবুঝি, উগ্র জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির কুফল। তাই মানুষকে বিজ্ঞানমনস্কতা ও বিজ্ঞানচর্চায় উদ্ভুদ্ধ করার বিকল্প নেই। “রাজনীতি খুব খ্রাপ” সেকথা বলছি না। বলছি সবাই গিয়ে চায়ের দোকানে আর টকশোর টেবিলে রাজনীতির আলাপ পাড়লে মানব সভ্যতা এগোয় না। রাজনীতিবিদকেও যেমন বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে, বিজ্ঞানীকেও রাজনীতির খোঁজ নেওয়া চাই। কিন্তু সেই ব্যালান্স এতটাই একদিকে হেলে পড়েছে যে কোনো আশার আলো দেখতে পারছি না। একটা সহজ পরীক্ষা করুণ, আশেপাশে কয়েকজন মানুষের সাথে কথা বলে দেখুন, স্বতস্ফুর্থ ভাবে তারা রাজনীতি নাকি বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনায় উৎসাহী? রাজনীতিবিদেরা নির্দ্বিধায় মানুষের ধর্মীয় গোড়ামির ফায়দা লোটে, বিজ্ঞানীকে কিন্তু তা করতে দেখি না। আমাদের রাজনীতি সচেতন হয়তে হবে এজন্য যে তা না হলে কোনো রাজনীতিবিদ এসে আমাদের পিছন দিকে সর্বনাশ করে চলে যাবে। অপরদিকে আমাদের বিজ্ঞান সচেতন হতে হবে বিজ্ঞানীদের হাতে সর্বনাশ হবার আশঙ্কায় নয়। বরং বিজ্ঞান যেন আমাদের জীবনকে আরো উদ্ভাসিত করতে পারে সেই জন্যই। এই দুই সচেতনতা তাই এক সম্মান দাবি করে না। একটা দেশে প্রতি কত হাজার মানুষের জন্য এক জন ডাক্তার দরকার, একজন পুলিশ দরকার, সে নিয়ে হাপিত্যেশ সব সময় দেখি। কিন্তু একটা বিপুল জনগোষ্টিতে প্রতি কত হাজারে একজন বিজ্ঞানী দরকার সেই হিসাব মেলে না। কিন্তু আমাদের এই সমস্যাসংকুল অঞ্চলে যে অনেক বিজ্ঞানী দরকার সে কথা কেউ অস্বীকার করবে না। সেই তুলনায় আমাদের দেশে রাজনীতিবিদ ও রাজনীতিবিশারদের বিপুল ফলন।
এসব ছাড়াও স্রেফ মানুষকে প্রকৃত মুক্তমনা হিসাবে গড়ে তুলতেই বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাতেই বেশি শক্তি ব্যয় করা উচিত। কেননা শুধুই রাজনৈতিক আলাপ আর ধর্মীয় গোড়ামিক কুফল শুনে আমি কাউকে মুক্তমনা হয়ে উঠতে দেখিনি। আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া ব্যাতিত স্রেফ ধর্ম-সমাজ-রাজনৈতিক কারণে বাম ঘরনার হয়ে ওঠা মানুষরা প্রায়শই (ব্যতিক্রম আছে) শেষ বয়সে তুমুল হুজুর হয়ে ওঠে। মুক্তমনাতেই যদি বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনার এমন ভাটা পড়ে তাহলে বাইরের অবস্থাটা কল্পনা করুন। অনতিবিলম্বে আমাদের গতিপথ সংশোধন না করলে, এক সময় হা-হুতাশ করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না। সমাজে ধর্মীয় গোড়ামি বেড়ে গেলে রাজনীতিবিদরা সেটা কমানোর চেষ্টা করার বদলে সে থেকে কীভাবে ফায়দালোটা যায় সেই চেষ্টাই করবে। তাদের কাছে দেনদরবার তাই পন্ডশ্রম। সত্যি সত্যি গোড়ামি কাটাতে সার্বজনীন বিজ্ঞান মনস্কতার বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। আর সেটা করতে হবে বিজ্ঞানলেখকদেরই।
[ওয়ার্ডপ্রেস থেকে মুক্তমনার উপাত্ত দিয়ে এবং পোস্ট ফরম্যাটিংএ সহযোগিতা করেছে শাফায়েত]
আমার মনে হয় না বিজ্ঞান প্রবন্ধ কমার কারন জনপ্রিয়তা বা অন্য কিছু। প্রথমত বিজ্ঞান প্রবন্ধ বোঝার সব থেকে ভাল ফর্মাট এখন ইউ টিউব -এবং না হলে উইকি। ফলে বিজ্ঞান প্রবন্ধ গুলির উপযোগিতা শুধু তাদের জন্য যারা ইংরেজিতে দুর্বল। আমি নিজেই মুক্তমনার বিজ্ঞান প্রবন্ধ খুব বেশী পড়ি না -কারন উইকি বা ইউটিউবেই সাধারনত একই টপিকে বেটার আর্টিকল থাকে।
ফেসবুকের কারনে মুক্তমনার হাল একটু খারাপ। কারন ছোট ছোট প্রবন্ধের, ট্রেন্ডি টপিক-কুইক রিয়াকশন -এগুলো চলছে বেশী। ফলে চিন্তাভাবনা গবেষনা করে লিখতে আজকাল ভাল লাগে না । তবে এই ট্রেন্ড বদলানো দরকার। ভাল গবেষনা করে ধর্ম সমাজ বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের লেখা আসুক।
@বিপ্লব পাল,
আপনার মন্তব্যে একটা ভিন্ন হাইপোথিসিস পাওয়া গেল। ইউটিউব একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে। ওদিকে ধর্ম-রাজনীতি নিয়েও ইউটিউবে প্রচুর চ্যানেল/ভিডিও আছে। সেই হিসাবে, ওগুলোর উপরও ইউটিউবের প্রভাব থাকার কথা। এবং সবগুলো লেখচিত্রের নিম্নগতিতে ফেসবুকের সাথে সাথে এই ফ্যাক্টরেরও অবদান থাকতে পারে। কিন্তু রাজনীতি ও বিজ্ঞান আর্টিকেলে পাঠক মিথোস্ক্রিয়ার এই ‘ফ্লিপ’ ইউটিউব দিয়ে ব্যাখ্যা হয় না সম্ভবত। তার উপর বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক পাঠক ইংরেজীতে স্বচ্ছন্দ নন।
তবে যা বুঝতে পারছি, পাঠক দের মাঝে এক ধরণের প্রচ্ছন্ন পোলারাইজেশন আছে। যেমন আপনি মুক্তমনায় বিজ্ঞানের লেখা বেশি একটা পড়েন না। তেমনি আমি ধর্ম-রাজনীতি বিষয়ক লেখায় পারতপক্ষে ঢুকি না; চর্বিতচর্বন এড়াতে।
বিজ্ঞান লেখায়, স্রেফ ইনফরমেটিভ লেখার চেয়ে নিজস্ব কমেন্টারি যুক্ত লেখা বেশি আসা উচিৎ। কারণ সেটার অভাব উইকিপিডিয়া দিয়ে পূরণ হয় না। আলোচনারও সুযোগ সৃষ্টি হয়।
আসলে বিজ্ঞান হেরে যাচ্ছে না ,বিজ্ঞান কে পরিকল্পিত ভাবে দেশ হতে বিলিন করার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে শরকার । দেশ আর অধিকাংশ মানুষ যদি যদি বিজ্ঞান বুজে তাহলে আই ধর্মীয় ভাওতাবাযি বন্ধ হয়ে যাবে না । আমি inter 1st year আর ছাত্র তাই আমি ভাল করে জানি আমাদের বই আ কত মারাত্মক ভুল এবং অসংগতি আছে । আই নিম্ন মানার বই গুল তো সরকার এই অনুমদন দিয়েছে । তাহলে তারাই ছক্রান্ত করে আমাদের মেধা শুনন চাচ্ছে !!!!!!!!!!! কিন্তু কেন??? কারন তাদের রাজনিতির মুল ভিত্তি ধর্মান্ধতা এবং ধরমিয় উন্মাদনা । আর বিজ্ঞান তো এই সব ভিত্তিহিন বিষয় কে আগে বাতিল আর খাতাতে ফেলে দেয় । :-Y
@আব্দুল্লাহ আল মহিত,
শিক্ষা নিয়ে ক্রমাগত দেনদরবার করার পরও দেশের (ইতিহাসের সকল) সরকারের উদাসীনতা আপনার মন্তব্যের আশঙ্কাটাকেই যেন সত্যি বলে প্রতীমান করছে। 🙁
@তানভীরুল ইসলাম, শুধু তাই নই !!! নিম্মন মান এর শিক্কা উপকরণ এবং শিক্কার বাণিজ্য করন, শরকারি কলেজ গুলর দুরাবস্থা, পাব্লিক পরীক্ষায় ধালাউ ভাবে নাম্বার প্রদান ও দাপক ভুমিকা রাকছে বিজ্ঞান শিক্ষার দুরাবস্থার জন্য । আমাদের সামাজিক বাবস্থার জন্য সবাই প্রকৌশল এবং ডাক্তারি এর মত বিষয়ই এর পিছনে ছুটছে । ফলে শুদু মাত্র ডিগ্রি আর জন্য পরাসুনার কারন এ যেমন নিম্ন মান এর ডাক্তার এনং প্রকৌশলী তইরি হচ্ছে তেমনি মউলিক বিষয়ই এর উপর দখল নআ থাকাই বিজ্ঞান এবং দর্শন এর উপর বাংলা ভাষায় তেমন ভাল বই বের হচ্ছে না । যার দরুন ছাত্র রা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে । আমাদের দেশে বর্তমান এ বিজ্ঞানি এর খুব প্রয়জন…………মউলিক গবেষণার প্রয়োজন, কিন্তু তা হচ্ছে না……………কারন আমাদের দেশ এ এই খাতে বরাদ্দ খুব কম……………আমার মনে হই দেশ কে পিছিয়ে রাখাতে সব সরকার এর এটি আক্তি ষড়যন্ত্র । বাংলাদেশ এর কোন সরকার গবেশনা কে গুরুত্ত দিয়েসে বলে আমার মনে হয় না । :\'( :-Y
লিখাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, এবং একইসাথে উদ্বেগজনক। কিছু বাস্তবতা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। যেমন – সাহিত্য-শিল্পকলা অতি সহজেই মানুষের মনে রেখাপাত করতে সক্ষম হয়, তার অন্যতম কারণ হোল মানুষের দেহ, মন, আবেগ ও কল্পনার সাথে সৌরজগত, ঋতু- প্রকৃতির একটা সুক্ষ্ম যোগাযোগ রয়েছে। এ কারনেই মানুষ তার কল্পনাশক্তির দ্বারা অনেক অসাধ্য সাধন করার স্বপ্ন দেখে, এবং পৃথিবীর সবচে’ দ্রুতগতি সম্পন্ন – মন – এর মাধ্যমে নিমিষেই অনেক কিছু ভাবে, সারা পৃথিবী ঘুরে আসে। জুল ভারন তো সেই ‘৫০ দশকের আগেই (ক্ষমা চাইছি যদি সময় ভুল হয়) চাঁদে ভ্রমন করে এসেছেন কল্পনায়। কিন্তু বিজ্ঞান?
মানুষ হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে কম বেশী স্বার্থপর। কারণ বেঁচে থাকতে হলে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্থান অতীব জরুরী। এগুলোর সাথে আর্থনীতিক ব্যাপারটা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আর অর্থ মানেই স্বার্থ। কতো সহজেই অর্থ আয় করতে পারি, সে চিন্তাতেই ব্যস্ত থাকি আমরা সবাই।
অন্যদিকে বিজ্ঞানের পথ একটু শুষ্ক, আবেগহীন, বাস্তব এবং দুর্গম। কারণ বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সময়, ত্যাগ-সাধনা, পরিশ্রম, ব্যর্থতা, অনুসন্ধিৎসা ও তীব্র ইচ্ছাশক্তি। বিজ্ঞানের এই যে আপাতঃ আবেগহীনতা, শুষ্কময়তা এবং দুর্গমতা, তা সহজেই মানুষের কাছে ভীতিকর হয়ে আবির্ভূত হয়। কিন্তু বিশ্ব আজ যেখানে দাঁড়িয়ে, তা বিজ্ঞানের কারনেই সম্ভব হয়েছে। সুকান্ত বলেছিলেন – “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।” কাজেই, মানুষের কাছে ক্ষুধা বা “প্রয়োজনীয়তা” শব্দের অর্থ অনেক ব্যাপক। শুষ্ক বিজ্ঞান তার নীরস কাজের মাধ্যমে মানুষের দৈনন্দিন ক্ষুধা বা প্রয়োজন মেটাতে, মানুষের জীবনকে সরস করতে সবার অগোচরে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
সহজভাবে ফেসবুক, টুইটার, ইত্যাদিকে উদাহরন হিসেবেই ধরলে বোঝা যায় যে বিজ্ঞান আমাদের কি দিয়েছে! এক্ষেত্রে অবশ্য আমাদের সময় ও মনোযোগ কেড়ে নেয়ার জন্য বিজ্ঞানকে খানিকটা দায়ী করা যায় বটে। মানুষের সৃষ্টিশীলতা ও কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত। আর আমরা, বিশেষ করে বাঙ্গালীরা জাতিগতভাবেই কিছুটা অলস প্রকৃতির, কল্পনা বিলাসী, তর্কপ্রিয় এবং চাহিদাও অল্প। অবশ্য বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই বিজ্ঞানের চেয়ে বাণিজ্য ও অর্থনীতির চর্চা বেড়ে গেছে। এখানেও কিন্তু বিজ্ঞানের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ঠিকই ধরেছেন, মুক্তমনা’য় ও ইদানীং বিজ্ঞান তেমনভাবে আসছেনা। দেশেও বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির মাত্রা হ্রাস পেয়েছে।
বিজ্ঞানকে সবার নিকট উপস্থাপনের বিষয়টি বিবেচনার দাবী রাখে। আগামী প্রজন্মের নিকট বিজ্ঞানকে সহজভাবে, আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করাটা অত্যন্ত জরুরী। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরকারি পৃষ্টপোষকতা ছাড়া বিজ্ঞান চর্চা একেবারেই অসম্ভব। একইভাবে বেসরকারি খাতকে ও এগিয়ে আসতে হবে বিজ্ঞানের চর্চায়, বিজ্ঞানের উন্নয়নে। বই পড়া’র অভ্যেস আবারো ফিরিয়ে আনাও প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন জাগে, লেখা না থাকলে পড়বে কি? কাজেই বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে মুক্তমনা ও ভুমিকা রাখতে পারে।
@আশিস বড়ুয়া,
সাহিত্য-শিল্পকলা কখনো কখনো বিজ্ঞানের চেয়ে সহজে মানুষের মনে রেখাপাত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু খেয়াল করুন এই এলেখায় সাহিত্য শিল্পকলা নিয়ে বলা হয়নি। আমার মনে হয় বর্তমানে এই টকশোবাজি, আফ ফেসবুকেরাজনীতি নিয়ে আহা-উহুর যুগে বিজ্ঞানের সাথে সাথে অনলাইন কমিউনিটীতে সাহিত্য-শিল্পকলার চর্চাও অনেক কমে গেছে। আমরা যে বয়সে সেবা প্রকাশনীর বই পড়েছি হুমায়ূণ আহমেদ- মুহাম্মাদ জাফর ইকবাল দের গল্পের বই নিয়ে মেতে থেকেছি এখনকার ছেলেমেয়েরা কি সেটা করছে? নাকি ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ?
আমরা একদল মানুষ পাচ্ছি যারা ফেসবুকে দুটো স্ট্যাটাস দিয়ে ভাবছে, ‘খুব বুঝি রাজনীতি সচেতন হওয়া গেল’। আর আরেকদল এমনকি সেদিকেও মাড়াচ্ছে না। বিজ্ঞান তো বহু দূর!
জুল ভার্ন ১৮শো সালের দিকে ছিলেন। 🙂
পৃথিবীর যেসব দেশ আজ বিজ্ঞানে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা সবাই সেটা করতে সক্ষম হয়েছে তাদের দেশের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। গণতান্ত্রিক দেশে সরকারকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে বাধ্য করতে আগে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
@তানভীরুল ইসলাম,
জুল ভারন এর ব্যাপারে সংশোধনীর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। প্রকৃত অর্থে সাল/ শতাব্দী আমি ভুলে গিয়েছিলাম।
অবশ্যই আপনার লেখায় সাহিত্য ও শিল্প-কলা’র ব্যাপারটা উল্লিখিত ছিল না। এক্ষেত্রে সাহিত্য ও শিল্প-কলা ও আর্থনিতিক বিষয়গুলোকে শুধুমাত্র তুলনার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে।সাহিত্য-শিল্প-কলা বা বিজ্ঞান চর্চা – দুটোই কিন্তু সৃষ্টিধর্মী। আর পার্থিব বিত্তের পেছনে ছোটার কারণেই আমাদের মনের খোরাকের যোগান কমে গেছে। আর টকশো-, রাজনীতি- এসব তো ব্যবসা, অতি সহজে অর্থোপার্জনের উপায়। এরা যা বলে, নিজেরাও তা বিশ্বাস করে না। কাজেই জনসচেতনতা তৈরির কোন বিকল্প আছে বলে মনে হয়না।
সামগ্রিকভাবেই মানুষের শুদ্ধ বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কম থাকে, যদিও প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা দারুন পারঙ্গম। মনে আছে ২০০৭ সালে আমরা তৎকালীন কতিপয় আইইউটিয়ান যখন ব্লগিং শুরু করি, তখন আমি, মহিব, জিহাদ টুকটাক দিনপঞ্জি টাইপ আউল ফাউল লেখা লিখতাম। তাতে বেশ সাড়াও পেয়েছিলাম, বিশেষ করে মহিব। অপরদিকে আমাদের সাথে মিলেই মুহাম্মদ ব্লগিং করতো বিশাল বিশাল বিজ্ঞানের প্রবন্ধ লিখে। সারাদিন শেষে হয়তো তিন-চারটা মন্তব্য মিলতো সেসব লেখাতে, তাও ‘পরে সময় নিয়ে পড়বো’ এমন মন্তব্য। আমাদের চাটুকারি লেখাগুলো আমাদের দ্রুত ব্লগ জগতে পরিচয় বাড়াতে সাহায্য করেছিলো। কিন্তু সেইসময়ের লেখাগুলো আজ কালের অতলে হারিয়ে গেলেও মুহাম্মদের সেইসব বিজ্ঞান ব্লগ এখনও অনেককে পড়ে মুগ্ধ হতে দেখি। ধর্ম-রাজনীতি এসব বিষয়ে লেখা সহজ, তেমন সহজ পড়া এবং প্রতিক্রিয়া দেওয়া। কিন্তু বিজ্ঞান লেখা লিখতে যেমন শ্রম দেওয়া প্রয়োজন, পড়তেও তাই।
মুক্তমনার প্রসঙ্গে বলতে গেলে সেই আইইউটিতেই ফিরে যেতে হবে। তখন কিন্তু আমি কিংবা মুহাম্মদ আমরা কেউই ধর্ম অবিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু মুক্তমনায় আসতাম শুধুমাত্র অভিনব সহ নতুন বিষয়ের বিজ্ঞানব্লগ পড়ার জন্য। বিবর্তন সম্পর্কে আমার একাডেমিক পরিচিতিও ঘটেছিলো মুক্তমনার মাধ্যমেই। বন্যাপার লেখায় আখতারুজ্জামান স্যারের বিবর্তনবিদ্যা বই সংগ্রহ করে প্রথম বিবর্তন নিয়ে শুধু বিজ্ঞানভাবনা জানতে পারি। সেই সব বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের লেখা পড়েই আমাদের মন মুক্ত হয়, ধর্ম সে তো তাসের ঘর, হঠাৎ একদিন ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যায় এমনিতেই। মুক্তমনায় এখন এপারেন্টলি বিজ্ঞান লেখা কম মনে হলেও মূল্য বিচারে সেগুলো অনেকদিন টিকে থাকবে। পাঠক বদলাবে কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক অমর লেখাগুলো চিরতরুণ থাকবে। তাছাড়া আপনার গ্রাফে আমাদের মুক্তমনা বিবর্তন আর্কাইভের লেখাগুলোর পাঠক-সংশ্লিষ্টতার ডাটা নেই। অথচ ব্যক্তিগত আলাপ সূত্রেই দেখেছি বিবর্তনে আগ্রহী অসংখ্য মানুষ সেই পাতাটা বুকমার্ক করে রেখেছেন, কোনো বিষয়ে খটকা হলে তারা প্রথমেই বিবর্তন আর্কাইভে গিয়ে সেই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কোনো প্রশ্ন আছে কিনা তা খুঁজে উত্তরটা বোঝার চেষ্টা করেন।
সামগ্রিক ভাবে যদি বাংলাদেশের কথা বলেন, তাহলে আপনার সাথে গলা মিলিয়েই বলবো শুদ্ধ বিজ্ঞান চর্চা এখন একেবারেই সীমিত। জাতিগতভাবেও আমরা একটু অলস প্রকৃতির, বেশিরভাগ সময়ই কোনো কিছুকে কাজ করতে দেখলেই আমরা খুশি হই, কেনো এবং কিভাবে কাজটা হচ্ছে তা বুঝার কথা আমাদের চিন্তাতেও আসে না। আর শুদ্ধ বিজ্ঞানে আগ্রহ এবং কৌতুহল সবই কম থাকায় আমরা প্রযুক্তি উদ্ভাবনেও পিছিয়ে, যার ফলে উন্নত বিশ্বের দারস্থ হতে হয় প্রায় সবক্ষেত্রেই, যদিও মেধায় আমরা তাদের চেয়ে পিছিয়ে নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদেরকেই কাজ করতে হবে। স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান ক্যাম্প করা, বিজ্ঞান পত্রিকা বের করা, বিজ্ঞান বিষয়ক অনুষ্ঠান করা এসব তো এখন অনেক কমে গেছে। সেই দায়িত্ব আবার শুধু যারা ব্লগ লিখেন তাদের নয়, বরঞ্চ এজন্য দরকার প্রচুর আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবক। স্বেচ্ছাসেবকদের অভাব নেই, যারা দায়িত্ব নিয়ে কোনো কিছু শুরু করেছেন তারা কেউই ব্যর্থ হন নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেক প্রকাশক বলতেন, বাংলাদেশে বিজ্ঞান বিষয়ে বই লিখলে সেটা বিক্রি হয় না। অথচ মুক্তমনার লেখকদের অনেকগুলো বিজ্ঞান সম্পর্কিত বই বেস্ট সেলার হয়েছে যা প্রমাণ করে পাঠকের অভাব নেই, অভাব শুধু খাবারের।
@রায়হান আবীর,
মুহম্মদ যখন লিখতো আমি নিজেও তার একজন একাগ্র পাঠক ছিলাম। তুমি জিহাদ মুহিবের লেখাগুলোরও মুগ্ধ পাঠক ছিলাম আমি। ধর্ম-রাজনীতি নিয়ে জনপ্রিয় প্রবন্ধ লেখা বিজ্ঞান বিষয়ে লেখার থেকে শতগুণে সহজ। তবে তুমি তোমাদের যে লেখাগুলোকে ‘চাটুকারি’ লেখা বলছো, ওগুলো সৃষ্টিশীল লেখা। এবং কখনো কখনো জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখার চেয়েও সেগুলো মূল্যবান। সৃষ্টিশীল লেখার মজা হচ্ছে, কোনো সৃষ্টিশীল মানুষ যখন ওগুলো লেখে তখন সে অনুভব করে না কী অসাধারণ কাজ সে করছে, বরং মনে হয় লিখলাম আবজাব যা মনে আসে তাই। ওসব লেখার মূল্য বোঝা যায় সৃষ্টিশীল-অনুভূতিপ্রবণ মনটা নষ্ট হয়ে গেলে। তখন হাজার মাথাকুটেও লেখা সম্ভব হয় না। মানব জীবনের টুকরো অনুভূতি, হাসি-কান্না এইগুলো অমূল্য। সকল মানবতাবাদী কর্মকাণ্ডই ওই ‘একটি ফুলকে বাঁচানোর জন্য’-ই। 🙂
এই কথাটা চিরকালই সত্যি। দুঃশ্চিন্তার বিষয় (চিত্র-২,৩ অনুযায়ী) এই প্রভাব বেড়ে চলেছে।
এইটা খুব দামি কথা। যার ভিতরে বিজ্ঞানমনস্কতার ঠাই নেই, যুক্তিবোধ যার গড়ে ওঠেনি, কোনো বিতর্ক বা যুক্তির মাধ্যমেই তার ধ্যানধারনার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব নয়। তাই ফোকাসটা মূলে, তথা বিজ্ঞান মনস্কতার প্রসারে, ফেরানো উচিৎ।
হ্যাঁ, বিবর্তন আর্কাইভের ডাটাটা আসলে নেই। ওটা ওয়ার্ডপ্রেসে না, বরং স্ট্যাটিক সাইটে। অন্য ডাটাগুলো যে পদ্ধতিতে পেয়েছি সেই একই পদ্ধতিতে ওই ডাটাপাবার উপায় ছিলো না। তবে ওই ডাটা না থাকলেও, চিত্র-২, ও চিত্র-৩ এর অর্থ বদলায় না। কারণ বিবর্তন আর্কাইভ অনেকদিন ধরেই আছে। আর বিবর্তন আর্কাইভে পাঠকের ‘মিথস্ক্রিয়ারর উপায়’ (কমেন্ট সেকশন) নেই। আমি দেখতে চাচ্ছিলাম, পাঠকরুচির মাসওয়ারি পরিবর্তন। যেটা ব্লগে তাদের কার্যক্রম থেকে ধারণা করা সম্ভব। বিবর্তন আর্কাইভ নিঃসন্দেহে মুক্তমনার একটা সেরা অর্জন। আমিও প্রায়ই এটা কনসাল্ট করি, পরিচিতদেরও ধরিয়ে দেই। কিন্তু চিন্তা করো, এমন দিন যদি আসে যখন এই আর্কাইভে আর কেউ ঢুকছে না তখন? অনেকটা নগরের মাঝে সুবিশাল লাইব্রেরী খুলে বসে থাকলাম কিন্তু কেউ এলোনা পড়তে। এই পরিস্থিতি কিন্তু খুবই সম্ভব। যে বৈজ্ঞানিক তথ্য/সত্য আবিষ্কার করা সম্ভব সেটা চর্চাহীনতায় হারিয়েও ফেলা সম্ভব। একটা ভিন্ন ধরনের থট এক্সপেরিমেন্ট করা যাক, ধরো হঠাৎ বাংলাদেশী ছাড়া দুনিয়ার আর সব মানুষ ভ্যানিস হয়ে গেল। তখন মানবজাতির জ্ঞানবিজ্ঞানের কী অবস্থা হবে? বই পুস্তক লাইব্রেরী কম্পিউটার সব যদি থেকে যায় তখনো?
তোমার মন্তব্যের শেষ প্যারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত আমার নিজের জন্য। ব্লগে এত বড়বড় কথা লিখি কিন্তু সকল সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও নিজেই কী করছি? প্রতিদিন আয়নার সামনে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হই। 🙁
ব্লগগুলিতে অংশগ্রহনকারীরা সংখ্যায় মূল জনসাধারনের নগন্য হলেও স্যাম্পল হিসেবে তারা মোটামুটি সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে বলা যায়। প্রতিটা সময়েই বাংলাভাষীদের মাঝে এক এক বিষয় গুরুত্ব পায়, সে অনুযায়ী ব্লগের লেখার বিষয়বস্তুও বদলে যায়। শাহবাগ আন্দোলনের উত্তপ্ত সময়ে বিবর্তনবাদ বা ব্ল্যাকহোল বিষয়ক লেখা তেমন আসবে না নিঃসন্দেহে ধরে নেওয়া যায়।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রভাব কোনমতেই অগ্রাহ্য করা যায় না। ২০১০/১১ সালের দিকে দেশের রাজনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল, যুদ্ধপরাধী বিষয়ক ইস্যু তখনো সেভাবে আলোচনায় আসেনি। তাই সে সময়টাকে স্বাভাবিক বিবেচনা করা যায়, বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা দেখা গেছে প্রচুর। পাঠক পাবেন না জানলে কার নিজের সময় খরচ করে বিনা পয়সায় লিখতে ইচ্ছে করে?
এর পর ফেসবুকিয় আগ্রাসনের পর ব্লগ জগতেই ঘটে গেছে ছন্দপতন। লেখকরা অনেকে ফেসবুকে সময় দেওয়া অনেক সহজ এবং মজার বলে সেখানে সময় দিচ্ছেন। এছাড়াও ফেসবুকিয় অভ্যাস আমার ধারনা সামগ্রিকভাবেই সিরিয়াস ব্লগিং এর প্রবনতার যায়গায় লেখক পাঠক উভয়কেই শর্টকাট পদ্ধুতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সময় নিয়ে ঘাটাঘাটি করে দীর্ঘ রেফারেন্স ওয়ালা লেখা পড়া এবং পড়ার মত সময় এবং ধৈর্য্য কমে আসছে। তার পরিবর্তে গরম গরম ইস্যু কেন্দ্র করে যার যেমন মনে হয় লিখে যাওয়াটাই এখন ব্লগ জগত দখল করে নিচ্ছে।
@আদিল মাহমুদ,
ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে আমার নিজের অ্যাটেনশন স্প্যান অনেক কমে গেছে সেটা লক্ষ্য করেছি। এমনকি বন্ধুবান্ধবদেরও এ বিষয়ে অভিযোগ করতে দেখেছি। খুব ভালো হতো যদি অনেক ডাটা থাকতো। মানুষের অ্যাটেনশন স্প্যানের উপর স্যোশাল নেটওয়ার্কের প্রভার নিয়ে সন্তোশজনক সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত তখন। আমি নিজেকে যেহেতু খুব ব্যতিক্রম কিছু ভাবি না, সেহেতু অনেকেই আমার মত করে অ্যাফেক্টেড হচ্ছেন বলে মনে করি।
আর এই ২০১৪ সালে কিন্তু আমরা মোটামুটি রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় আছি। তারপরো বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহের নিম্নগতি বহাল আছে। এই ব্যাপারটা দুঃশ্চিন্তার।
@তানভীরুল ইসলাম,
লোকে যখন শর্ট কাটের মজা পায় তখন তাকে ফেরানো মুশকিল। আমিও অনেকদিন ইচ্ছে করেই ফেসবুক জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতাম। এখন মজা পেয়ে সেখানেই বেশী সময় দেই। ফলাফল হয়েছে অবধারিত, ব্লগে একটু গুছিয়ে লেখার মত সময় ধৈর্য্য কোনটাই আর নেই।
২০১৪ আপাত চোখে স্থিতিশীলতায় আছে, অন্তত বড় ধরনের জ্বালাও পোড়াও গোছের কিছু হচ্ছে না, সামনেও হবে এমন আলামতও নেই। কিন্তু ফেসবুক জগত মাতিয়ে রাখার মত ইস্যুর কোন অভাব নেই। ফেসবুক থেকে ব্লগে মনোযোগ শিফটের প্রবনতা না আসলে মনে হয় না বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক পাঠক কোনটাই পাওয়া যাবে বলে। ফেসবুকের ৩ লাইন বা বড়জোর এক পাতায় যাইই হোক অন্তত বিজ্ঞান চর্চা করা যায় না।
লেখা সময় উপযোগী।
কিন্তু কারন খুজতে হবে, কেন
@আযিযুল মোললা,
পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
অনেক ধন্যবাদ তানভীরুল ইসলাম – এরকম শ্রমসাধ্য একটা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের জন্য। মুক্তমনার লেখা ও প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতেও যে বিজ্ঞানের হেরে যাওয়া জিতে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় – তা দেখে কিছুটা অবাকও হয়েছি। আসলে শিরোনামটা দেখে আঁতকে উঠেছিলাম। মনে হচ্ছিলো বিজ্ঞান কিসের সাথে প্রতিযোগিতা করছে এবং তাতে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানের?
তাহলে এই প্রবন্ধের মূল কথা হলো মুক্তমনার পাতায় বিজ্ঞানের যেটুকু আলোচনা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি হয় ধর্ম-রাজনৈতিক আলোচনা। কিন্তু এটা কি শুধু মুক্তমনা ব্লগে? সারা পৃথিবীতেই তো এই অবস্থা। এর কারণটাও তো আমরা সবাই জানি। ধর্ম সম্পর্কে বা রাজনীতি সম্পর্কে মন্তব্য কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াও করা যায়। (আমি বলছি না যে মুক্তমনার পাঠকেরা যখন কোন মন্তব্য করেন – ভালো করে না জেনেই করেন।) কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক কোন লেখায় মন্তব্য করতে হলে তো সেই বিষয়ে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার। বিজ্ঞানের কতগুলি শাখা। সবগুলো শাখায় ভাসা ভাসা কিছু জ্ঞান হয়তো থাকে অনেকের – কিন্তু গভীর জ্ঞান সবগুলো শাখাতে ক’জনের থাকা সম্ভব?
মুক্তমনার পাতায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ কমে গেছে এটা খুবই সত্য কথা। শুধু বিজ্ঞান কেন একটা সময় গেছে – যখন আমি নিজেই সমস্যায় পড়েছি যখন দেখেছি দিনের পর দিন প্রথম পাতা থেকে লেখা সরছে না বলে নতুন লেখা দিতে পারছি না। কারণ কোন নতুন লেখাই আসছিল না। তখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্যরকম ছিলো। মানুষ অনেক বেশি উন্মুখ ছিলো অন্য কিছু নিয়ে, মুক্তমনার জন্য সময় ছিলো না। এখন মুক্তমনা আস্তে আস্তে আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। সবকিছুর সাথে বিজ্ঞানও আসবে।
‘জনপ্রিয় বিজ্ঞান’ ও ‘অজনপ্রিয় বিজ্ঞান’ নিয়ে অনেক আলোচনা করা যায়। তবে আমি মনে করি না যে জনপ্রিয় বিজ্ঞানের চোখে বিজ্ঞান কোন জাদুর কাঠি। হ্যারি-পটার আর জনপ্রিয় বিজ্ঞান কীভাবে এক কাতারে যায় তাও বুঝতে পারছি না। যদি কোন বিজ্ঞানীর জীবনীতে বিজ্ঞানীর নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও চড়াই উৎরাই এর বিবরণ না থাকে তাহলে তা ঐ জীবনী লেখকের ব্যর্থতা। বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীকে সাধারণ মানুষ যতটুকু জানে – তা ঐ জনপ্রিয় বিজ্ঞানের খাতিরেই। আইনস্টাইন বা স্টিফেন হকিং এত জনপ্রিয় কেন? মিডিয়ার কারণে। মোবাইল ফোন কে আবিষ্কার করেছেন তা আমরা ক’জন জানি? সফল বিজ্ঞানী হতে গেলে যে প্রচন্ড পরিশ্রম করতে হয় তা বোঝে সবাই। যেমন বোঝে ভালো ক্রিকেটার বা সঙ্গীতশিল্পী হতে গেলেও লাগে কঠোর অনুশীলন সুযোগ ইত্যাদি।
বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশনার ব্যাপারটা যে কত কঠিন তা ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন। ‘নেচার’ বা ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশের জন্য উপযুক্ততার পাশাপাশি প্রকাশনার খরচও দিতে হয় লেখককে (কিছু ব্যতিক্রম বাদে)। প্রায় সব নামী সায়েন্স জার্নালের ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। তারপরও বিজ্ঞান প্রকাশনা থেমে নেই। নতুন নতুন জার্নালে পৃথিবী ছেয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানচর্চা নিজস্ব গতিতেই চলতে থাকবে এটা আমার বিশ্বাস।
ক’দিন আগে চট্টগ্রামের বাতিঘরে লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এসেছিলেন। তাঁর অসীম জনপ্রিয়তার কারণে এত ‘ভক্ত’ এসে জুটেছিল যে অনুষ্ঠান মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। জাফর স্যারকেও বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানী হিসেবে জানে। অন্যদিকে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম চট্টগ্রামের রাস্তায় বাজারে দোকানে সভায় প্রায় একা একা ঘুরেছেন। আমাদের দেশের সামাজিক আচরণ আমরা জানি। কিন্তু তাতে কি বিজ্ঞানের এতটুকু ক্ষতি হয়েছে? বিজ্ঞানের হেরে যাওয়া কিংবা হারিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিজ্ঞান তার কাজ করবেই। নতুন প্রযুক্তি আসবে। তা আমরা ব্যবহার করবো। যেরকম অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কাজে লাগিয়ে রোগ মুক্তির পর রোগী প্রাণভরে আল্লাহ্’র গুণগান ব্যাখ্যা করতে শুরু করেন। তাতে বিজ্ঞানের গায়ে কি ফোস্কা পড়বে?
@প্রদীপ দেব,
শিরোনামটা একটু আঁতকে ওঠার মতই হয়ে গেছে। তবে হারজিতের ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করি। বিজ্ঞানচর্চাকে একটা মিম হিসাবে ধরলে সেটা প্রতিযোগিতা করছে রিসোর্স, মানে মানুষের, জন্য। উপরের এক মন্তব্যে উল্লেখ করেছি, এখানেও বলা যায়, যুগে যুগে অনেক জনগোষ্ঠি জ্ঞান-বিজ্ঞানে তার নিজের সময়ের শীর্ষে উঠেছে আবার সেখান থেকে অধপতিতও হয়েছে। ব্যাপারটা ঘটেছে মানুষকে যথেষ্ট পরিমানে সম্পৃক্ত করতে না পারার কারণে। জনগোষ্টির বিজ্ঞান চেতনা কমে গেলে ধর্মীয় গোড়ামি, পলিটিক্যাল ডগমা ইত্যাদি সেই যায়গা দখল করে নেয়। একই ভাবে বিজ্ঞান চর্চা কমে গেলে প্রযুক্তিগতভাবে ঐ জনগোষ্ঠি পরনির্ভর হয়ে ওঠে, এর কোনোটাই মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সহায়ক নয়, বরং জনগোষ্ঠির ভবিষ্যতের প্রতি বড় হুমকি।
এই লেখাটার মূল কথা কিন্তু এটা নয়। কারণ সারা পৃথিবীতেই কম-বেশি এই অবস্থা। এবং কেন বিজ্ঞানের চেয়ে ধর্মরাজনৈতিক আলোচনাকরা সহজ সে বিষয়ক কিছু হাইপোথিসিস এই লেখায়ও এসেছে। কিন্তু সারাদুনিয়ার এই অবস্থার মধ্যেও মুক্তমনা দীর্ঘ্যদিন উজ্জল ব্যতিক্রম ছিলো। আপনি যদি চিত্র-২ ও চিত্র-৩ লক্ষ্য করেন, দেখবেন মুক্তমনায় আগে (2012 পর্যন্ত) বিজ্ঞানের আলোচনারই জয়জয়কার ছিলো। গত দুবছরে ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আর দশটা যায়গার মত এখানেও বিজ্ঞানের জনপ্রিয়তা তলানিতে চলে যাচ্ছে। এটা যে হঠাৎ কোনো বিচ্ছিন্ন অবজার্ভেশন নয়, বরং আমাদের বেখেয়ালে দীর্ঘ্য সময় ধরে ঘটতে থাকা একটা ধীর স্থিত প্রক্রিয়া সেটা বোল্ড হরফে দেখানোই এই লেখার একটা লক্ষ্য। আগে আমাদের কনভিন্সড হতে হবে যে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে, তবেই না সংশোধনের প্রয়াস আসবে?
এই আশাবাদ আমারো, কিন্তু গ্রাফের স্লোপ সেই কথা বলছে না বলেই আমি এই ‘অশনি সংকেতের’ কথা তুলেছি এই লেখায়। আশাকরি বিজ্ঞান নিয়ে যারা লেখালিখি করেন তারা এই লেখাটি দেখে গাঝাড়া দিয়ে লিখতে বসবেন।
ক্রমাবনতি প্রসংগে বাংলাদেশে SSC তে বিজ্ঞানবিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যাটার একটা তালিকা এখানে যুক্ত করি।
[img]http://i.imgur.com/1aWzk3y.png[/img]
[তথ্যসূত্র- ব্যানবেইস]
আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি, কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগে আমাদের শিক্ষার্থী সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে ক্রমাগত।
‘জনপ্রিয়’ ও ‘অজনপ্রিয়’ বিজ্ঞান প্রসঙ্গে-
জনপ্রিয় বিজ্ঞানে বিজ্ঞানীদের স্ট্রাগলের কথা প্রায়ই উঠে আসে। কিন্তু সেটা জীবনী আলোচনায়। বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কারের আলোচনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধু বিজয়গাথার দিকে ফোকাস করা হয়। এই বিজয় পেতে যে কতশতবার হারতে হয়েছে সেটা উহ্য থাকে প্রায়ই। কম বেশি সবাই জানে যে বড় বিজ্ঞানী হতে হলে প্রচুর খাটতে হবে। কিন্তু সেই ‘খাটার প্রকৃতি’ কীরূপ সে সম্পর্কে ধারণা আমাদের প্রচলিত জনপ্রিয় বিজ্ঞান দেয় না। এই লেখায় যুক্ত কার্টুনটাতে যেভাবে কথাটা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। যেকোনো সুক্ষ্ম পদার্থবিজ্ঞানের ল্যাব এক্সপেরিমেন্টএই বেশিরভাগ সময় (বছরের পর বছর) ব্যায় হয় ‘ডিবাগিং’ করতে করতে এটা কয়জন জানে? সবাই ভাবে ক্রিয়েটিভ সব আইডিয়া মাথায় আসবে আর সেগুলো চমৎকার সব এক্সপেরিমেন্ট করে রিফিউট বা স্ট্যাবলিশ করবো, এই হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, অসাম! কিন্তু বাস্তবে ঘটনাগুলো যেভাবে ঘটে সেই চিত্র সব সময় পপুলার বিজ্ঞানে আঁকা হয় না।
পশ্চিমে যে আরো কিছুদিন বিজ্ঞানের জয়জয়কার চলবে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি বলছিলাম আমাদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির কথা। এমনিতেই আমরা স্বস্তা কায়িক শ্রমের প্রধান রপ্তানিকারকে পরিনত হচ্ছি দিনে দিনে। তার মধ্যে বিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহউদ্দীপনা যেভাবে কমছে, বিজ্ঞান চর্চার প্রতি নবীনদের উদ্ভুদ্ধ করতে আমরা যে হারে ব্যর্থ হচ্ছি, সেই সঙ্গে জনমনে ধর্মীয় গোড়ামি যে হারে বাড়ছে, তাতে “নিজস্ব গতিতে” এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবার আশা দেখি না। কিছু করলে করতে হবে আমাদেরই।
– তানভীরুল
– অভিজিৎ
শাহবাগ আন্দোলনের বছর বইমেলার কাটতি কমে যাওয়া নিয়েও শোনা গেছে। মনে আছে ফারসীম ভাই ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে গ্রন্থনামা-২০১৩ নামক প্রবন্ধ লেখেছিলেন। সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় তখন আমাদের অল্পই ছিলো। আমি ওই লেখায় মন্তব্য করেছিলাম –
বাংলাদেশের ব্লগ আর ফেইসবুক রাজনীতিদিবদের সে সময় পোয়াবারো। সেই সময়গুলোর কথা চিন্তা করুন। বিজ্ঞান বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার বা পড়ার ধৈর্য কার ছিলো? তেল নাই, গ্যাস নাই, আবার বিজ্ঞান!
এখন শাহবাগ তো বহুকালে একবার আসে, ধরা দেয় মধ্যবিত্ত প্রগতিশীল পড়ুয়াকে। অন্যদিকে যখন তখন মিছিলে যাওয়া মাদ্রাসার ছাত্র, সহিংস ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িতরা, বামঘরানার আজকেই-বিপ্লব-করা ছাত্রদের কথা ভাবুন। তাদের তো প্রতিদিনই শাপলা চত্বর, প্রতিদিনই শাহবাগ। তাদের অশান্ত মনে বিজ্ঞানের স্থান কোথা থেকে আসবে?
অনেকে ভাবতে পারে, বিজ্ঞান চর্চার জন্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার এমন শাসকশ্রেণীবান্ধব পেটিবুর্জোয়া তত্ত্ব দিচ্ছি। হতে পারে। আমার কাছে উপাত্ত নেই তথ্যটা যাচাই করার। তবে বলবৎ রাজনীতি মধ্যবিত্ত পড়ুয়াকে শান্ত না রাখতে পারলে সে একসময় রাজপথে যাবেই। সেই আন্দোলন থেকে বেটার ভালো কিছু বের হয়ে আসুক। ফরাসী কিংবা আমেরিকান বিপ্লব, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ। এবং এরপরে জয় ও স্থিতিশীলতা আসুক। সেই জয়, সেই এনলাইটেন্মেন্টকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মনোনিবেশ করুক, নিজের ও সমাজের কল্যাণে কাজ করুক। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে পার্পেচুয়েট করারাই এখানে মূল শত্রু। তারাই এখানে বিজ্ঞানকে হারানোর জন্যে যুদ্ধ করছে।
@রূপম (ধ্রুব),
শাহবাগ আন্দোলন একটা সময়ের দাবী ছিলো। এবং সেই সময় মুক্তমনা সহ সকল ব্লগ এ যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে সেটাই কাম্য। এতবড় একটা আন্দোলনের মাঝে বই মেলার বিক্রিবট্টায় স্বাভাবিক ধারা বজায় থাকবে না সেটাও অনুমেয়। যেমন পোস্ট সংখ্যার দিক থেকে চিত্র-১ এ যেমন দেখছি অই সময় রাজনীতি নিয়ে লেখালিখি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ঐ বিশেষ পরিস্থিতিতে এমন প্রতিক্রিয়াই হবার কথা।
যে ব্যাপারটা দুঃশ্চিন্তার সেটা হলো, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পরেও মুক্তমনার স্বাভাবিক ব্যলান্স ফিরে আসেনি। গত দেড়বছরের অধিক সময় ধরে পাওয়া উপাত্ত (চিত্র-২,চিত্র-৩) সেটাই বলছে। মুক্তমনার ডাটা আমরা দেখলাম বলে নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি, তবে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে প্রায় সকল ব্লগ, অনলাইন পোর্টালেই এই অবস্থা। এমনকি ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিজ্ঞানের আলোচনা তলানিতে ঠেকছে।
@তানভীরুল ইসলাম,
আমার মনে হয়েছে শাহবাগের পরে একটা সোশ্যাল অর্ডার তৈরি হয়েছে, যেটা যুদ্ধংদেহী। অনলাইনে যারা টপ টু বটম যুদ্ধংদেহী ছিলো, তারা এর কর্তৃত্ব নিতে সক্ষম হয়েছে, শাহবাগ আন্দোলনের প্রথমভাগে জড়িতরা অবধারিতভাবেই পারে নি। প্রায় সবগুলো প্ল্যাটফর্মে সেই যুদ্ধংদেহীদের সর্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনলাইন অ্যাক্টিভিটি এখন তাদের কর্তৃত্ব, তাদের ইস্যু ও তাদের ভাষার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের উপর নির্ভরশীল। যেটা মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানচেতনার সহায়ক নয়।
অনেকে এই নতুন সোশ্যাল অর্ডারে নিজেদের অবস্থানটা তৈরি ও নিশ্চিত করতেই পেরেশান। এখন এই পক্ষতা প্রদর্শনটার চাপ ও কাটতি উভয়ই বেশি। যুক্তি ও বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি সে জায়গায় অনেকটা নিরপেক্ষ গন্ধযুক্ত ও সন্দেহজনক। ফলে সেইরকম লেখালেখি করাটা কিংবা সেরকম লেখালেখির আলোচনায় মনোনিবেশ করাটা অনেকটা অলাভজনক, অনেকসময় বিপদজনক। সরকারের দিক থেকেও অনলাইন অ্যাক্টিভিটির ব্যাপারে পদক্ষেপগুলো মোটের উপর গিয়েছে যুদ্ধংদেহীদের পক্ষে ও মুক্তচিন্তা চেতনার বিপক্ষে, যেটা আওয়ামী লীগ সরকারের নিকট অনাকাঙ্ক্ষিত। একটু বেশি মোটাদাগে হয়তো বললাম, কিন্তু ব্যাপারটা কিছুটা ওরকমই মনে হয়েছে আমার।
অনেক তথ্য বহুল রচনা ধন্যবাদ তানভীরুল ইসলামকে । আমি মনে করি বিজ্ঞান এগিয়ে যাবে বিজ্ঞান থেমে নেই থেমে থাকবে না ।ধর্মের বেড়াজাল চিরতরে ভেঙে দিবে বিজ্ঞান ।
খুব দামী কথা! আসলেই বিজ্ঞানের বিকল্প নেই এবং বিজ্ঞানের জয় অবশ্যম্ভাবীও বটে। বিজ্ঞান হারতে পারে না, যা হচ্ছে, তা খুব সাময়িক! আজ সাধু-সন্তরা পর্যন্ত বিজ্ঞানকে নিজেদের বলে দাবী করছেন, তীব্র প্রতিযোগীতা চলছে তাদের মাঝে, যারা বিজ্ঞানকে এককালে দুহাতে ঠেলে ঠেকাতে চেয়েছেন, তারাই আজ প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়েছেন নিজেদের কব্জায় নিতে, এ থেকেই কি প্রমান হয় না, বিজ্ঞানের জয় হবেই?
মুক্তমনা ছিল বিজ্ঞান লেখায় অপ্রতিদ্বন্দী, বলতে গেলে, এর মূল আকর্ষন ছিল বিজ্ঞানের উপর চমকপ্রদ সব আর্টিকেল। আর আমার মতে, বিজ্ঞানের ব্যাপক অনুধাবন, অনুসরন এবং চর্চাই প্রগতিশীলতার মূল নিয়ামক, স্বপ্ন দেখা তরুনদের একমাত্র অবলম্বন!
ভাল অ্যানালিসিস, তানভীর ভাই!
@গুবরে ফড়িং,
বিজ্ঞান নিজে আসলে বেশ শক্তিশালী। আমি বলতে চেয়েছি জনমনে বিজ্ঞানের জনপ্রিয়তার নিরিখে হার-জিতের কথা। কোনো একটা জনগোষ্টি যদি বিজ্ঞানচর্চা না করে সেখানে বিজ্ঞানের হারঘটে। যেমন অতীতে আরব অঞ্চলে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা হয়েছে, যেটা একসময় ধর্মের কাছে হেরে যায়। এখন পশ্চিমে বিজ্ঞান এর জয়জয়কার। কিন্তু সাধারণকে একটা নিয়মিত হারে বিজ্ঞানের দিকে টানতে না পারলে একদিন পশ্চিমেও অন্ধকারযুগ নেমে আসতে পারে। আর আমাদের এদিকে বিজ্ঞান এমনিতেই অতটা জনপ্রিয় না, তাও যা ছিলো সেটাও গত দুই-আড়াই বছর ধরে ক্রমাগত কমতির দিকে। ব্যাপারটা আশঙ্কাজনক।
খুব ভাল লেখা, প্রয়োজনীয় লেখা। ২০০৯ – ২০১১ সালের সময়গুলো মুক্তমনা আসলেই যেন ছিল বিজ্ঞান লেখার স্বর্ণযুগ। বিবর্তন, জেনেটিক্স, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা, বিবর্তন মনোবিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গণিত প্রভৃতি নিয়ে কত লেখা যে আসতো। সেইদিনগুলো আসলেই মিস করি। একটা জেনারেশন যেন গড়ে উঠেছিল বিজ্ঞান এবং দর্শনের পোস্ট ঘিরে – শাফায়েত, মুহম্মদ (শিক্ষানবিস), রায়হান, সংশপ্তক, বন্যা, তানভীরুল, বিপ্লব, অনন্ত, সৈকত, জওশন, প্রদীপ দেব সহ অনেকেরই কালোত্তীর্ণ সব বিজ্ঞানলেখার গন্ধে যেন মৌ মৌ করতো মুক্তমনা। তাদের অনেকেই আর লেখালিখি করেননা। তাদের লেখার অভাববোধ করি প্রতিনিয়ত।
তারা লেখেননা কেন? মনে হয় তরুণ রক্ত ফিকে হয়ে এসেছে। আগের ‘জোশ’ আর নাই। কেউ কেউ বিয়ে করে হাত মা মুছে ঘোর সংসারীও হয়েছেন। কেউ ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। কারো কারো আগ্রহ এবং ধরণও বদলেছে মনে হয়। ব্লগ ছেড়ে সারাদিন ফেসবুকে পড়ে থাকেন! 🙂
তবে এই লেখালিখি বন্ধের পেছনে ফেসবুক তো আছেই, বাংলাদেশের রাজনীতির মেরুকরণও দায়ী কিছুটা। মুক্তমনার বিজ্ঞান লেখকদের অনেকেই প্রগতিশীল দর্শনের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে লিখতেন। সেসব লেখক বিজ্ঞান নিয়ে লিখলেও বিজ্ঞান এবং ধর্মের সংঘাতের ব্যাপারটা প্রচ্ছন্ন হয়ে উঠতো। দেশে যেভাবে মুক্তচিন্তার মানুষজনের উপর হেনস্থা শুরু হয়েছিল, তাতে করে লেখালিখির উপর তো প্রভাব পড়বেই। আর মুক্তমনারা তো রাজনীতির প্রতি উন্নাসিক নন। বিশেষত শাহবাগ আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়গুলোতে লেখালিখির ধরণও কিছুটা পাল্টেছে।
পরিস্থিতি ভাল হলে আবার সেই সময়গুলোতে ফিরে যেতে পারব আশা করছি। আর হ্যা, এত নিরাশার ভীড়ে আশার আলো যে দেখছি না তা নয়। ফারসীমের মতো জনপ্রিয় লেখক এসেছেন। গোলাম সারোয়ারের মতো শক্তিশালী লেখক লিখছেন সাইটে। বিজ্ঞান নিয়ে না হলেও তসলিমা নাসরিনের মতো লেখিকারা লিখতে শুরু করেছেন মুক্তমনায়। তার চেয়েও বড় জিনিস লক্ষ্য করছি – আপনার এবং শাফায়েতের কোলাবরেশন। যেভাবে আগেকার পোস্টের ডেটা নিয়ে চার্ট ফার্ট করে এরকম একটা লেখা উপহার দিলেন, তা সত্যই প্রশংসনীয়। এ থেকে বড় কিছু বের হয়ে আসবে – এ নিয়ে আমি আশাবাদী!
@অভিজিৎ দা,
ক্যারিয়ার এবং অন্য সব চিন্তা আগেও সবার ছিলো, অন্য কোনো ফ্যাক্টর থাকতে পারে। যেমন,
১) ফেসবুকে অল্প পরিশ্রমে কিছু লিখেই অনেক ইন্টারআকশন পাওয়া। মুক্তমনা ব্লগের মত মন্তব্য-আলোচনা না হলেও কোটিকোটি লাইক, আর ‘ভাল্লাগসে’ টাইপ মন্তব্য তো পাওয়াই যায়।
২) ব্লগ এর ব্যাপারে হতাশা। অনেকে হয়তো ভাবে ব্লগে লিখে ইভেনচুয়ালি খুব বেশি মানুষের কাছে পৌছানো যায় না, যেটা পত্রিকা বা বই লিখে সম্ভব। পত্রিকা-বই এর পাঠকও সেইসব কন্টেন্ট অনেক বেশি গুরুত্বসহকারে পড়ে। মুক্তমনায় সিরিয়াস পাঠক সব সময়ই ছিলেন কিন্তু এই গ্রাফগুলো বলছে গত দেড় বছর ধরে পাঠকরুচির পরিবর্তন হচ্ছে। এটা বিজ্ঞান লেখকদের নিরুৎসাহিত করে থাকতে পারে।
এই অবস্থাটা যে খারাপের দিকে মোড় নিচ্ছে সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতেই এইসব চার্ট…
অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত আমাদের বিজ্ঞান বিষয়েও ১০০ মার্কস আর ধর্মবিষয়েও ১০০ মার্কস। এ থেকেই বোঝা যায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাই বা বিজ্ঞানকে কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে। ওই বয়সে অনেক ছেলেমেয়েদের স্রেফ একটু বিজ্ঞান শেখার সুযোগ দিলে , বিজ্ঞানের আনন্দটুকু ধরিয়ে দিলে আমার মনে হয় আগামী প্রজন্মটাই পরিবর্তন হয়ে যেত। আর বিজ্ঞানের প্রতি সত্যিকারের ভালবাসা আছে এমন ছেলে-মেয়ে কিন্তু অনেক আছে। কিন্তু আমাদের মুখস্তনির্ভর ও জিপিএ নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা তাদের সুকুমার বৃত্তিটুকুকে অঙ্কুরেই নষ্ট করে ফেলে।
ক্লাসের ছেলেময়েদের একমাত্র প্রতিযোগিত হয় , কে কত নাম্বার পেয়ে কত ভাল পজিশন পেতে পারে। কিন্তু ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার একটা পরিবেশ কি আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি? আর এরজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষক। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকতা পেশায় যাচ্ছে যাদের আর অন্য কোন চাকরী করার সুযোগ নেই তারা। আর যারা যাচ্ছে তারা কোচিং ব্যবসায় নিমগ্ন। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক অবস্থা।
তাই সত্যিকথা বলতে কি যতদিন আমরা অন্তত মধ্যমানের মেধাবীদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকতা পেশায় আনতে না পারছি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার একটা ঢালাও পরিবর্তন আনতে না পারছি ততদিন হয়ত কিছু ভাগ্যবান ছাত্র আপনার মতো বিজ্ঞানী হতে পারবে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে এক ভয়ংকর হতাশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে জাতি নিমজ্জিত হবে।
আর এই পরিবর্তন আনার ক্ষমতা যাদের আছে , তারাই আজ ক্ষমতার নেশা ও ক্ষমতাকে প্রয়োগ করার নেশায় উন্মত্ত। পরিবর্তনটা আনবে কে?
হ্যা. পরিবর্তনটা আনতে পারে একমাত্র যুবসমাজ। কিন্তু তারাই বা কতটুকু অগ্রসর হতে পারে? একজন মেধাবী ছাত্র ভার্সিটি পাশ করার পর তার আশেপাশের সমাজ তাকে তাড়না করে তোমার এখন চাকরী করতে হবে , প্রচুর টাকা কামাতে হবে। আমি ঢাকা ভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান প্রথম হওয়া একজনের কথা জানি, যার জীবনের শেষ লক্ষ্য পূরন ছিল একটা বিশাল বাড়ি করে তার মেয়েদের প্রত্যেককে একটা ফ্লাট দেয়া। (যদিও মেয়েরাও কিন্তু সবাই উচ্চশিক্ষিত)
আমাদের উচ্চশিক্ষিতরা টাকার পাহাড় গড়ে তার আশেপাশের মানুষকে চমক লাগিয়ে দিতে চায়, বিজ্ঞানের সৌন্দর্য প্রচার করবে এরকম কয়জন আছে? যারা আছে তারা এই হতভাগা দেশকে ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি দেয়। আমি তাদের দোষ দেই না। কারন এই দেশে মেধাচর্চারই কোন সুযোগ নেই।
সবার যে বিজ্ঞানী হতে হবে এবং বিজ্ঞানের গভীর তত্ব বুঝতে হবে এর কোন আবশ্যিকতা নেই। কিন্তু অন্তত বিজ্ঞান যতদিন আমাদের পথেঘাটের চায়ের টেবিলের আড্ডায় ঝড় তুলতে না পারবে ও বিজ্ঞানীদের সম্মান করার মানষিকতা যতদিন আমাদের দেশে না থাকবে ততদিন আমাদের এই হতভাগ্যতা দূর হবে না। কারন হচ্ছে আমাদের দেশে শিক্ষিত অনেকেই পরবর্তীতে তাদের মেধার চর্চার চেয়ে কি করে খুব দ্রুত টাকা কামানো যায় এই ধান্দায় থাকে। কারন সমাজ টাকাকে সম্মান করে জ্ঞানকে নয়। তারা পড়ালেখাকে মনে করা টাকা কামানোর একটা উপায় মাত্র।
@রনবীর সরকার,
এদেশে স্কুল কলেজে আগ্রহ করে শিক্ষকতা পেশায় সহজে কেউ যায় না। কারণ ওসব স্থানে যে বেতন কাঠামো তাতে শিক্ষকসুলভ আদর্শ জীবন যাপন প্রায় অসম্ভব। নীতিবান শিক্ষক বলতেই আমাদের মনে চরিত্রবান, এবং অবধারিতভাবেই ‘দরিদ্র’ একজন মানুষের চিত্র চলে আসে। এই অবস্থা পরিবর্তন না হলে কোনো পরিবর্তনই সম্ভব নয়। ব্লগে বা নানা মাধ্যমে লিখে হয়তো কিছুটা বিজ্ঞান সচেতনতা আমরা তৈরি করতে পারবো কিন্তু, শিক্ষকদের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারলে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি অসম্ভব। যাদের বিকল্প সুযোগ থাকবে তারা এই স্তরের শিক্ষকতা পেশায় আসবে না।
বিজ্ঞানকে সমাজের মধ্যে প্রবেশ করাতে মিডিয়ার ভূমিকাই মূখ্য। কিন্তু আমাদের দেশে বিজ্ঞানবিষয়ক অনুষ্ঠান কোনো চ্যানেলে হয় বলে জানি না।
plot.ly এর মত উপকারী জিনিসের সন্ধান দিবার জন্য ধন্যবাদ।
স্বাগতম।