গত ২২শে সেপ্টেম্বর ভারতের ভুপালে পশুপাখীর অধিকার সংরক্ষণ কর্মীরা তাজ-উল-মসজিদের সামনে, ঈদ-আল-আধাতে মুসলমানদের পশু কোরবানি না দেবার অনুরোধ সম্বলিত বাণীর প্ল্যাকার্ড নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল নিরামিষ আহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো তো বটেই, উপরন্তু পরিবেশ, প্রকৃতি ও পশুপাখীদের জন্যেও ভালো। বেনাজির সুরাইয়া ছিলেন এই কর্মীদের একজন। তাঁর পরিধানে ছিল সবুজ রঙের হিজাব এবং লেটুস পাতা দিয়ে মোড়া পরিচ্ছ্দ। তাঁর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল Make Eid happy for all- Try Vegan, অর্থাৎ ঈদ যেন সবার জন্য আনন্দময় হোক, নিরামিষ খাবার খেয়ে দেখার চেষ্টা করতে পারেন।
এই আন্দোলনের আয়োজন করেছিল মুম্বাইয়ের PETA নামে একটি পশুপাখীর অধিকার সংরক্ষণে নিয়োজিত সংস্থা যার সদস্যরা বিশ্বাস করে যে এই পৃথিবীতে পশুদের অস্তিত্ব শুধুমাত্র আমাদের খাদ্য, পোষাক আর আমোদের চাহিদা পূরণ করবার জন্য নয়। কিন্তু জনতার ওপর তাদের এই বাণীর তীব্র প্রতিক্রিয়া হল, তারা PETAর মহিলাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়ে ঘুষি থেকে আরম্ভ করে জুতো ও পাথরও ছুড়ল। পুলিশ সেই কর্মীদের না বাঁচালে ঘটনা আরো খারাপ হতে পারত। পরবর্তিকালে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য পুলিশও বেনাজির সুরাইয়া ও আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করল।
দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মীয় ব্যাপারে শান্তিপূর্ণভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, কিন্তু আমার মতে বেনাজির সুরাইয়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যে বার্তা ভারতের লোকের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন সেটি বাংলাদেশের জন্যও প্রযোজ্য। বেনাজির বলতে চেয়েছিলেন পশুদের হত্যা না করেও পবিত্র ঈদ-উল-আধা পালন করা সম্ভব, প্রাণী হত্যা না করে নিরামিষ পুষ্টিকর খাবার খেয়ে বাঁচা সম্ভব, একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।
কিন্তু বেনাজিরের এই কথা শুধুমাত্র ইসলামের জন্যই প্রযোজ্য নয়, পশুদের প্রতি দয়া সব ধর্মেরই মর্ম। মহাত্মা গান্ধী কলকাতার কালীঘাট মন্দিরে পশুর বলি দেখে খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন। পরে নিজের আত্মকাহিনীতে তিনি লিখেছিলেন যে একজন সাধুকে যখন তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ”এই পশুবলিকে কি আপনি ধর্ম বলে মনে করেন?” তখন সাধু উত্তরে বলেছিলেন, “এমন কোন মানুষ আছে যে পশুবলিকে ধর্ম বলে মনে করবে?” গান্ধী মনে করতেন পশুবলি এমন একটি পাপ যার স্থান নেই কোন ধর্মেই।
কয়েক বছর আগে প্রায় ৯০ জন বাংলাদেশী মুসলমান বন্ধুদের সাথে আমি একটি চিঠিতে সই করি, চিঠিটি অনেকগুলি বাংলাদেশী সংবাদপত্রিকায়ে প্রকাশিত হয়। আমরা চিঠিটিতে ঈদের সময় পশু কোরবানি রীতিটির পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করেছিলাম। ( চিঠিটির মন্তব্য বিভাগে প্রচুর মানুষ এর বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করেন, আমাদের সৌভাগ্য যে ইন্টারনেট মাধ্যমে ইট -পাটকেল ছোড়া যায় না।)
আমরা লিখেছিলাম নবী হযরত মুহাম্মদ যিনি “পুরো সৃষ্টির রহমত” হিসেবে এসেছিলেন (আল কুরান ২১:১০৭) তিনি পশুদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে বলেছিলেন। সুন্নি ইসলামের অন্যতম হাদিথ গ্রন্থ, শাহি আল-বুখারিতে লেখা আছে হযরত মুহাম্মদকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে পশুপক্ষীদের প্রতি দয়ামায়া দেখালে কি পরকালে কেউ পুরস্কৃত হয়। হযরত মুহাম্মদ উত্তরে বলেন, “যে কোনো প্রাণীকে দয়ামায়া দেখালে তার পুরস্কার নিশ্চয়ই আছে।” কিন্তু ঈদের সময় পশুদের সাথে যে দুর্গতি ঘটে তা দয়ামায়া থেকে অনেক দূরে। কুরবানির আগে এই পশুদের বহুদূর (অনেক সময় ভারত থেকে) থেকে পানি ও খাবার ছাড়া হয় হাঁটিয়ে নিয়ে আসা হয়, অথবা ট্রাকে গাদাগাদি করে অবর্ণনীয় দুদর্শার মধ্যে চালান দেওয়া হয়। এমন কি একটি ক্ষেত্রে ভারত সীমান্তের ঐ পার থেকে পাহাড়ের ঢাল দিয়ে পশুদের ঠেলে গড়িয়ে দেবার ঘটনাও আছে। তাই এর মধ্যে অনেক পশুই গরমে, না খেতে পেয়ে অথবা অন্যান্য অত্যাচারে যাত্রা শেষ হবার আগেই মারা যায়। কুরবানির সময় তাদের পা বেঁধে গলার উপর দিয়ে ছুরি চালালে জীবন ও মরণের মধ্যে লড়াইয়ে তারা ছটফট করতে থাকে আর তাদের শেষ নিশ্বাস না পড়া পর্যন্ত কয়েক মিনিট পার হয়ে যেতে পারে। আর এই মর্মান্তিক দৃশ্যটি সংঘটিত হয় বাদবাকি অপেক্ষারত আতঙ্কিত পশুদের সামনে।
এই পুরো ব্যাপারটা না মানবিক না হালাল এবং যে ইসলাম আমাদের ভালোবাসা ও দয়ামায়ার ব্যাপারে সংবেদী হতে শেখায় তার সাথে এর কোনও সঙ্গতি নেই। তাই আমরা সেই চিঠিতে লিখেছিলাম আমিষ পদার্থের বদলে শব্জী, ফলমূল, অথবা অর্থ ইত্যাদি দান করলে ইসলামের নীতি মেনে চলাও হবে এবং হযরত ইব্রাহিমের কাহিনীকে স্মৃতিতে জাগ্রত রাখা যাবে। আল কুরানে লেখাই আছে আল্লাহাতালার কাছে কুরবানি দেওয়া পশুটি বা তার রক্ত পৌছায় না, পৌঁছায় শুধু মানুষের ধর্মানুরাগ (আল কুরান ২২;৩৭)।
আজ আমি আবার আমার সব মুসলমান বন্ধুদের কাছে পশু কোরবানি দেবার রীতিকে পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। ইসলামের মর্ম যদি উদারতা এবং সমবেদনাই হয় তাহলে পশু কুরবানি দেওয়া ছাড়াও আরও অনেক পদ্ধতি খুঁজে নেওয়া যাবে পবিত্র ঈদ পালন করার জন্য। ঈদকে শুধু মানুষের জন্য নয়, সৃষ্টিকর্তার সব প্রাণীদের জন্য আনন্দের উৎসব করে তুলুন। সবাইকে ঈদ মুবারক।
মানুষের কাছে সবচেয়ে পি্রয় জিনিস নিশ্চয়ই তার নিজের প্রান । মহান আল্লাহতায়ালাও বলে গেছেন নিজের প্রিয় জিনিসটি আল্লাহতায়ালার নামে কুরবানি দিলেই আল্লাহর কাছে কুরবানি কবুল হয় । কথিত নবী টাইপের এক মুসল্লিও আল্লাহর উদ্দেশ্যে তার সন্তানকে কুরবানি দিয়েছিলেন । জানি না নিজের সন্তানকে কুরবানি দেওয়া কতটুকু কবুল হয়েছে । তিনি বলেছিলেন, নিজের প্রানের চাইতে তার সন্তানটিই তার কাছে প্রিয় ছিল । এটা কিভাবে সম্ভব ? তিনি কি নিজের জীবনকে কুরবানির হাত থেকে বাঁচানোর জন্যেই অজুহাত হাসিল করে নিজের সন্তানকে হত্যা করেছিলেন ? বর্তমান যুগের সকল মুসল্লি ভাইদের কাছে জানতে চাই, আপনাদের মাঝে এমন কি কেউ নেই যে নিজের জীবনকে প্রিয় জিনিস মনে করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেকে কুরবানি দিতে পারেন ? নাকি আপনাদের সকলের কাছে গরু, ডুম্বা নামক অবলা জীবগুলোই নিজের প্রানের চাইতে বেশি প্রিয় ? যদি তা না হয় তাহলে কেন গরু, ডুম্বা অবলা জীবগুলোই আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানির শিকার হয় ?
প্রশ্ন থেকে যায় এইভাবে প্রতি বছর হাজার হাজার অবলা জীব বলিদান কি আসলেই মহান আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে কুরবানি নাকি আপনাদের সংস্কৃতি ?
@lala, আপনার জ্ঞানের অভাব আছে আপনি ইসলাম এর অ ও জানেন না তাই ইসলাম নিয়ে ফালতু সমলচনা করার কোন অধিকার নেই আপনার ইসলাম নিয়ে সেই সমলচনা করবে যে কোরআন পাঠ করেছে আমার মনে হয় না আপনি কোরআন পড়েছেন আগে পবিত্র কোরআন পড়ুন পড়তে না পারলে বাংলা মানে পড়ুন আশাকরি আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন । কারন ইসলাম নিয়ে আলোচনা এই কমেন্ট বক্স করা সম্ভব না । ইসলাম এর প্রতিটি পদক্ষেপ সত্য এটা সুধু ইসলামিক মানুষী বলেছে এমন টা নয় অনেক বড় বড় বি ধর্মি ইসলাম একমাত্র ধর্ম এটা মেনেছেন ।
@আতিক রাঢ়ী,
খাওয়ার জন্য পশু হত্যা মেনে নেয়া গেলেও পশুগুলিকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যার মেনে নেওয়া যায় না। এ ছাড়া যখন পশুগুলি মৃত্যু যন্ত্রণায় চিৎকার করছে তখন তাকে ঘিরে আনন্দ উল্লাশকে (ছোট ছোট শিশুরাও তাতে সামিল হয়) কি যুক্তিতে মেনে নেওয়া যায়?
হিন্দুদের পশু বলি প্রথাকে নিন্দা করে হিন্দু কবি আক্ষেপ করে লেখেন , ” মায়ের কাছে সন্তানকে বলি দিয়ে তুমি মাকে প্রসন্ন করিতে চাও ?”
হায় রে, মুসলমান কবি যে কবে লিখবেন একথা !
@অনিন্দ্য পাল,
আমার কমেন্টটা পড়ার পরে খটকা লাগলো। নিজের করা কমেন্টটা আবার পড়লাম। বলতে চেয়েছলেম, প্রথমটা সমর্থন করি না, না কথাটা বাদ গেছে কমেন্টে। :-Y
কোরবানি বলি অথবা ত্যাগ যে অর্থে ই বলি উৎসব করে হত্যা এবং হত্যা করে সওয়াব সৃষ্টিকর্তা অথবা আল্লার হুকুমের সাথে যাই না ।ইব্রাহীম তাঁর প্রিয় সন্তান কে জবাই করেছিলেন রূপক অরথে দুম্বা জবাই হয়েছিলো এবং বলেছিল মানুষের বদ চিন্তা অপকর্ম ইত্যাদি জবাই করতে ,এখন কি হচ্ছে ঘুষের চুরির লোটের টাকা দিয়ে ভারত থেকে আসা চোরাই গরু জবাই করে বেহেশতে গিয়ে ৭০ হুর সরাবান তহুরা ইত্যাদির আশাই ……………
আপনি তো পশু হত্যার বিরুদ্ধে অনেক কথাই বললেন। আমি বেশি তর্কে যাবো না। শুধু একটা কথাই বলব যে, আপনার পায়ের জুতা খানা কি প্লাস্টিকের তৈরী??
এখানে দুইটা বিষয় এসেছে,
১) ধর্মের নামে পশু বলি
২) বিরামিষ খাওয়া
প্রথমটা সমর্থন করি, দ্বিতীয়টা প্রকৃতি বিরুদ্ধ। আমাদের দাঁতের গঠনই বলে দেয় আমরা আমিষ, নিরামিষ সর্বভুক প্রাণী। তা ছাড়া মেরু ও মরু অঞ্চলে মানুষের পক্ষে নিরামিষ খেয়ে জীবন ধারণ সম্ভবই ছিলো না। উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। প্রাণী হত্যার প্রসঙ্গ আসলে জীবন ধারণ মুসকিল।নিরামিষভোজি হলে বাংলাদেশে আবাল গরুগুলিতে জন্মানোর সাথে সাথে মেরে ফেলতে হবে। কারণ এদেরকে খাওয়ানোটা তখন অর্থহীন হবে। সেটা লোকচক্ষুর আড়ালে করলেও নিষ্ঠুরতা তাতে কিছু কমে না। ভারতীয়রা চোরা পথে তাদের আবালগুলো বাংলাদেশে পাচার করে নিষ্ঠুরতার হাত থেকে বাঁচতে। :))
@আতিক রাঢ়ী,
ঠিক বলেছেন।
অরণ্যে রোদন স্যার; নেহায়েতই অরণ্যে রোদন। মানুষ এমন একটি প্রাণী যারা পুর্বপুরুষদের প্রথাগুলিকে (কুপ্রথা হলেও) বিনা প্রশ্নে মেনে চলে। সর্ব বর্ণের, সর্ব ধর্মের, সর্বকালের মানুষের মধ্যেই এই প্রবণতা। সুতরাং কোরবাণী বা পশুবলির উৎসবকে বন্ধ করার নিস্ফল চেষ্টা না করে তাতে সামিল হওয়া বা অবজ্ঞা করাই উত্তম নয় কি!
সগীরালি।
ধরেন ভারত সরকার কোনদিন আইন করে হিন্দুদের বলি প্রথা বন্ধ করে দিয়েও পার পাবেন, হিন্দুরা সেটা মেনেও নিবেন (স্মরণ করুন সতিদাহ, বিধবা বিবাহ আইন) কিন্তু কুরবানীতে গরু জবাই বন্ধ- আল্লাহো আকবর! কিয়ামত হয়ে যাবে ব্রাদার! ইসলাম হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ মনোনীত সহি ধর্ম, সেই ধর্মের কোন প্রথাই সমালোচনার সুযোগ নেই। আল্লাপাক পরিস্কারভাবেই পশু জবাই করতে বলেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ব্রাহ্মচারী নন! তিনি আমিষজীবী।
কিন্তু ৫৭ ধারায় অনেক কিছু করা যায়!
@সুষুপ্ত পাঠক, আইন করার দরকার নেই, এমনিতেই কালের নিয়মে ধিরে ধিরে বলি প্রথা বিলুপ্ত হতে চলেছে। ১৫ বছর আগেও আমাদের গ্রামের কালী বাড়ীতে কালী পূজার রাতে ২-৪ পিস বকরির ধর গর্দান আলাদা করা হত, আজকাল কুমড়ো দিয়ে কাজ সারে। কারন আজকাল মাংস খাওয়ার জন্য বলি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়না আম জনতা কে।
ব্রয়লার মুরগি জিন্দাবাদ। 😀
আমি সকল ধর্মকে সন্মান ও শ্রদ্ধা করি। ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার কোন মনমানসিকতা নেই। তবুও বলতে বাধ্য হলাম, ধর্মে দোহাই দিয়ে পশুদের যে করুণা দৃশ্য সৃষ্টি করা আমরা মানুষ হিসেবে আত্ন উপলদ্ধি করতে না পারি তাহলে মানুষ আর পশুর পার্থক্য কোথায় থাকল। যে সৃষ্ঠিকর্তা তার সৃষ্টিকর্ম নিদারুন ভাবে ভোগ করতে উদগ্রীব সে কেমন সৃষ্টিকর্তা। যে মা সন্তানের রক্ত পান করে সে কেমন মা।
লেখক লিখেছেন “ইসলামের মর্ম যদি উদারতা এবং সমবেদনাই হয় তাহলে পশু কুরবানি দেওয়া ছাড়াও আরও অনেক পদ্ধতি খুঁজে নেওয়া যাবে পবিত্র ঈদ পালন করার জন্য।”
ইসলাম তো কোন পরিবর্তন গ্রহণ করে না। তাহলে কিভাবে অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করা সম্ভব?
ধর্ম যে কত নৃশংস পশুবলি তার একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।