[বিপ্লব পাল তার শেষ পোস্টে (https://blog.mukto-mona.com/?p=42497) দারুন একটি প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। মূলত সেখানে ছোট আকারে একটা মন্তব্য লিখতে গিয়েই বুঝতে পারি- বিষয়টি এমনই গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল- ছোট একটি কমেন্টে আমার আলোচনাটা সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়! তাই নতুন করে এই পোস্টের অবতারণা।]
বাংলাদেশ- উদার না মৌলবাদী সমাজের পথে? এই প্রশ্নটির সাথে যুক্ত- বর্তমানে বাংলাদেশকে আমরা কিরকম সমাজ বলতে পারি, আগে কি ছিল? আজকের যে অবস্থা আমরা দেখছি- মৌলবাদের বা উদারতার যে উপকরণ চারদিকে দেখি- সেসবের ভিত্তি কি বা কোথায়? এ বিষয়টি যদি আমরা খুজে বের করতে পারি- সামনের দিনগুলো সম্পর্কেও আমরা একটা ধারণা পেতে পারি, কেবল তাই না- আগামীদিনের একটা উদার সমাজ আমরা যারা প্রত্যাশা করি- তারাও বর্তমানের করণীয় সম্পর্কে একটা দিশা বের করতে পারি! আর ঠিক এই জায়গা থেকেই- আলোচ্য প্রসঙ্গটি দারুন গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
বর্তমান বাংলাদেশকে কিরকম সমাজ বলা যেতে পারে? আমার কাছে একে একেবারে মৌলবাদী মনে হয় না- আবার উদারও বলতে পারি না! মিশ্র সমাজ বলা যেতে পারে! বিগতদিনে জামাতীদের যেমন দেখেছি- তেমনি আমরা আহমদ শরীফ, তসলিমা নাসরিন, হুমায়ুন আজাদদেরও পেয়েছি; আজ যেমন আমরা হেফাজতিদের দেখি, একইসাথে আসিফ মহিউদ্দিন- থাবা বাবা সহ অসংখ্য সাহসী নাস্তিক তরুন দেখি! যতই তসলিমা নাসরিন নির্বাসিত হন, হুমায়ুন আজাদ-থাবা বাবাকে মেরে ফেলা হোক- আসিফ মহিউদ্দিনকে মারার চেস্টা করা হোক, এটাই বাস্তবতা যে- আরজ আলী মাতুব্বররা জন্ম নেয়া বন্ধ করে দেননি! এবং আজকের আরজ আলী মাতুব্বরদের আওয়াজ মোল্লারা হাজার চেস্টা করেও স্তব্ধ করতে পারছে না- এটাই হচ্ছে বাস্তবতা! জেলা শহরের লাইব্রেরিতে পর্যন্ত আরজ আলী মাতুব্বরদের বই পৌঁছে গিয়েছে! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেটা দিনে দিনে বাংলাদেশে আরো প্রসার লাভ করছে- বিশেষত তরুন প্রজন্মের কাছে- সেখানেও মুক্তমনারা যথেস্ট সরব!
দেখুন, এই বাস্তবতা যখন তুলে ধরছি- তখন মাথায় নিশ্চয়ই এই ভাবনা নেই যে- বাংলাদেশ একটা উদার দেশে পরিনত হয়েছে বা আমাদের বাংলাদেশ মুক্তমনাদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে! আসল অবস্থাটা- ঠিক উল্টো, এখানে এখনো নাস্তিকরা সংখ্যালঘু, তাদের কন্ঠ রোধ করার সমস্ত আয়োজন এখানে আছে। তদুপরি এমন একটা বাস্তবতা দিয়ে শুরু করার কারণ হচ্ছে এটাই যে, এর মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে চাই যে, কন্ঠরোধ করার সমস্ত আয়োজন থাকার পরেও এই ভূমি আরজ আলী মাতুব্বরদের ঠিকই জন্ম দিয়ে গিয়েছে, কন্ঠ ছিড়ে ফেলেছে বারেবারে- তারপরেও কন্ঠ রোধ করতে পারেনি! এই আশার জায়গাটা প্রথমে উল্লেখ করেই- এবারে তাহলে হতাশার দিকগুলোতে আলোকপাত করা যাক-
১) রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে দেশে মৌলবাদীরা এখন অনেক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে! দিনে দিনে তারা আরো শক্ত পোক্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব পরিস্থিতিও মুসলিমদের আরো মৌলবাদী, আরো জেহাদী বান্দা হতে সাহায্য করছে!
২) মুক্তমনারা কেবল নয়- মোল্লারাও ইসলাম, মোল্লাতন্ত্র, মৌলবাদ ছড়াতে টেকনোলজি ব্যবহার করছে- অনলাইন মিডিয়াতে তারা খুব একটা পিছিয়ে আছে বলা যাবে না।
৩) গ্রামে গঞ্জে শহরে সর্বত্র মাদ্রাসা- মসজিদ যেহারে বেড়েছে- সে হারেই কমেছে সাংস্কৃতিক- সামাজিক কর্মকান্ড! আগে মহল্লার রাস্তা দিয়ে হাটলে বিভিন্ন বাড়ি থেকে হারমোনিয়ামের আওয়াজ যে পরিমাণ শোনা যেত- এখন তার ছিটেফোটা শোনা যায় না- এখন শোনা যায় কোরান তেলোয়াতের শব্দ!
৪) এমনকি আমাদের সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা এখনো আধুনিক নয়; অনেকাংশেই কুপমন্ডুক! ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক! বিজ্ঞানশিক্ষাও খন্ডিত ও একটা লেভেলের পরে ঐচ্ছিক!
৫) রাজনীতি এখন অনেক বেশী ধর্মাশ্রয়ী! ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষে ভোটের হিসেবে মুসলিম ভোট ব্যাংক খুব লোভনীয় উভয় মূল দলের কাছে! দিনে দিনে প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মীর চাইতে সংসদে যেমন ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে- তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাড়ি-টুপির সংখ্যা।
৬) সংবিধানে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এর বিরুদ্ধে যতখানি প্রতিবাদের জায়গা ছিল- পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তাকে নিবিয়ে দেয়া হয়েছে! উল্টো ব্লাসফেমি আইন সংবিধানে এবং অন্যান্য বিভিন্ন আইনে জায়গা করে নিচ্ছে! সেসব আইনের আওতায় অনলাইনের মুক্তমনাদের কারাবাস- হেফাজতিদের দাবির মুখে ২৫ জনের, ৫০ জনের নানা তালিকা করা, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হওয়া রাষ্ট্রের ভয়ানক এক চরিত্রকেই উন্মোচিত করে! তার বিপরীতে আনসারুল্লাহ, হেফাজতি, … ইত্যাদি নানা গ্রুপের নাস্তিক নিধনের দাবি, আহবান, হুমকি এবং তাদের প্রচারিত তালিকা- এসবকে রাষ্ট্র যখন প্রতিহত করার সামান্য উদ্যোগ নেয় না- তখন রাষ্ট্রকে সেই মোল্লাতন্ত্রের পার্ট বলাই যেতে পারে।
৭) গ্রামে গঞ্জে শহরে মহল্লায়- ওয়াজ মাহফিলের সংখ্যা যেমন বেড়েছে- ওয়াজ নসিহতের বিষয়গত পরিবর্তনও তেমন হয়েছে। আগের চাইতে এসব ওয়াজ মাহফিল এখন অনেক বেশি নাস্তিক-বিধর্মী বিদ্বেষী! আল্লাহ প্রেম, মানব প্রেম, নবী রাসুলদের প্রেমের গল্প, ইবাদত বন্দেগীর নানা দিক- এসব ছাপিয়ে এখন ইহকালেই ধর্ম প্রতিষ্ঠা, তার অন্তরায় দূর করা এসব বেশি প্রাধান্য পায়! (নারী ইস্যু অবশ্য আগেও ‘হট’ টপিক ছিল- এখনো ওয়াজ- নসিহতের ক্ষেত্রে যথারীতি ‘হট’)
৮) ভাস্কর্য ভাঙ্গা, বাউলদের উচ্ছেদ করা- তাদের চুল-ঝুটি ছেটে ফেলা- এধরণের কাজেও মোল্লারা লিপ্ত হচ্ছে- যা এককালে কল্পনাও করা যেত না! একসময় ছিল- বাউলদের সামাজিক প্রভাব ছিল অনেক গ্রাম জুড়ে … সেই প্রভাব ছিল ভালোবাসার … এমন গল্প শুনেছি- বাউল ফকির পাগলকে সামান্য অপমান করার কারণে কয়েক গ্রাম ভেঙ্গে এসেছে, পরে গ্রামের সেই অপমানকারী মাতবর/ মোড়লকে হাতজোর করে মাফ চাইতে হয়েছে! আর আজ বাউলদের চুল কেটে, গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিলেও পাশে দাড়ানোর কাউকে পাওয়া যায় না (ঐ ঢাকার চারুকলার সামনে কিছু মানববন্ধন ছাড়া)!
৯) অস্বীকার করার জোর নেই যে, গ্রামে গঞ্জে আজ ইমামদের অনেক প্রভাব তৈরি হয়েছে! লালসালু যেসময়ে লেখা- ঐ সময়ে বাস্তবে মজিদরা ছিল হাতে গোনা, কিন্তু আজ মজিদদের পাওয়া যাবে অধিকাংশ গ্রামেই! ২০/৩০ বছর আগেও ইমামের ভূমিকা ছিল নগন্য, তারা ছিল অনেকটা আশ্রিত, ভিখারী টাইপের, গ্রামের লোকদের দয়ায় চলতে হত! আজ ইমামরা বেশ প্রভাবশালী, মাতবর- মোড়লরা ইমাম পুষে নিজেদের ক্ষমতাকে ধরে রাখতে, নিজেদের ক্ষমতাকে বাড়াতে ইমামদের হাতেও তারা অনেক ক্ষমতা দিয়ে দেয়! ফতোয়াবাজি দিনে দিনে কমছে না, বাড়ছে।
১০) এর বাইরে আরো হতাশার জায়গা আছে! আমাদের প্রচন্ড ভোগবাদী পুঁজিবাদী সমাজ- শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হিসেবে যাদের গড়ে তুলছে- তারা নিতান্তই ব্যক্তিকেন্দ্রিক, সুবিধাবাদী ও ভোগবাদী, একই সাথে প্রচন্ড ভীতু! আমাদের সন্তানেরা গড়ে উঠছে চরম অসুস্থতার মধ্য দিয়ে! খেলার মাঠগুলো নাই হয়ে যাচ্ছে, সেখানে গড়ে উঠছে- বিপণীবিতান, সামাজিকতার জায়গায় এসে হাজির হচ্ছে স্বার্থপরতা, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা! আগেকার আমলের ক্লাবগুলো নেই, মহল্লার কিশোরদের এক হয়ে পিকনিক করা- যাত্রা নাটক করা- ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন টুর্ণামেন্ট ছাড়া- এসব কোথায়? এখনকার পাড়া মহল্লার ক্লাবগুলো হয়েছে- বখাটেদের আখড়া, গাজা- ফেন্সিডিল খাওয়ার আখড়া! সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে যা হয় চাঁদাবাজি আর কিছু টেকা খাওয়া শিল্পীদের ভাড়ায় এনে বাদরামি! আমি বেশ কিছু সংগঠনে যখন যাই- দেখি বয়স্কদের আর দীর্ঘশ্বাসের আধিক্য … তারা এককালে যেভাবে ঘরের খেয়ে পরের মোষ তাড়িয়েছেন- আজ কালকার ছেলেপুলেদের সেই সময় নেই, সবাই খুব ব্যস্ত- ফলে তাদের এখনো হাল ধরতে হয়- এমন অভিযোগই পাই … ফলে, আজকের এই শিক্ষিত গোষ্ঠী সমাজে তেমন করে আলো ছড়াতে পারছেন না- এককালে যেমন করে তারা ছড়াতেন! আগের চাইতে এইরকম শিক্ষিতরা যেমন সংখ্যায় সস্তা হয়েছে, তেমনি মানে গুনেও সস্তা হয়েছে- কেননা তারা আর আগের মত সামাজিক নন! অথচ মনে আছে, আমার কৈশোরেও বেশ কয়েকজনকে পেয়েছিলাম- যারা ছিল আমার ছোটবেলার হিরো! সেইসময়ের ভালোছাত্রদের যেমন বিভিন্ন পরিবারেই অনুসরনীয় হিসেবে পরিচিত করা হত- তেমনি ভালোছাত্ররাও ছিল মিশুক এবং উদ্দীপক, ফলে তাদের দেখে ভালো ছাত্র হওয়ার আগ্রহ তৈরি হত, হাতের লেখা ভালো করার আগ্রহ তৈরি হত, অংকের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হত, বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হত, দাবার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হত, বাইরের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হত, সামাজিক কর্মকান্ডের প্রতি তৈরি হত … সেসময়ের ভালোছাত্ররা অনেক বেশি বহির্মুখি ছিল- অদ্ভুতভাবে তারা খেলার মাঠ- পড়ার মাঠ সবই মাতাতে পারতো- দুষ্টুমিতেও কম যেত না- তুলনায় আজকের ভালোছাত্ররা অনেক বেশি অন্তর্মুখি- মোটা চশমাওয়ালা ভালো ছাত্রের সংখ্যা আগের চাইতে এখন অনেক বেশি- মোটা চশমা তারা চোখে তুলে কাছের জিনিসকেই আরো ভালো করে দেখতে- দূরেরটা দেখার কথা তারা ভাবতেও পারে না … (ঢালাও ভাবে বলছি মনে করবেন না, এখনো হয়তো ব্যতিক্রম আছে- গণজাগরণ তো আজকের বাস্তবতাই- কিন্তু ওভারঅল ট্রেন্ড আমাকে হতাশই করে!)
এরকম চরম হতাশাকর পরিস্থিতিই আমি দেখি চারদিকে! এককালে বামপন্থীরা ছিল, গ্রামে গঞ্জে পর্যন্ত বামদের যাতায়াত ছিল- ঘরে ঘরে যোগাযোগ ছিল; দিনাজপুর, নেত্রকোনা-ময়মনসিং, কুষ্টিয়া-যশোর-রাজবাড়ি, রাজশাহী, খুলনা … একেকটা বেল্ট ধরে ধরে বামদের কৃষক আন্দোলন ছিল, শ্রমিক আন্দোলন ছিল! সমাজে তার ভীষণ প্রভাব ছিল! মোল্লাতন্ত্রের উদ্ভবে তারা বাঁধা হিসেবে কাজ করতো, ভালোমানুষ হিসেবে পরিচিত এইসব লোক নামাজ রোজা না পড়লেও- সুখে দুখে পাশে দাড়াতো- ঈদে- পুজায় সবাইকে নিয়ে ফুর্তি করতো- গ্রামে গঞ্জে মেলা করা- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা- ঘরে ঘরে গিয়ে চাদা তুলে স্কুল- লাইব্রেরি করা … এসব আয়োজনে তারা সামনে এগিয়ে আসতো … ফলে, তাদের নামে নাস্তিক প্রচার/অপপ্রচারে লোকের মধ্যে তেমন ভাবান্তর হতো না! আর, আজ? বামপন্থীরা সব কোথায়? বিরল প্রজাতি হয়ে রাজধানী ঢাকায় উজ্জ্বল হয়ে জ্বলা ছাড়া তাদের দেখা যায় না- এটাও গ্রামে গঞ্জের পরিস্থিতিকে খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে! বামরা কাজ করতে গেলে শুরুতেই নাস্তিক অভিধা দিয়ে তাদের কোনঠাসা করার চেস্টা করা হয়; ফলে তারাও অনেক কৌশলী হয়ে উঠেছেন- ধর্ম টর্ম নিয়ে তারা ভুলেও কিছু বলেন না! অথচ, এককালে এই বামরাই গ্রামে গঞ্জে কত কিশোরদের মাথা নষ্ট করেছে! বামদের কেউ কেউ তো আজ এমন পরামর্শও দেন যে- আপামর মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেই তাদেরকে নিজেদের দিকে টানতে হবে- তাদের মতো হতে হবে, দরকারে যে কৃষকটি জমির পাশে আইলে নামাজ পড়ে, তার সাথে নামাজেও শামিল হতে হবে! আজকের বামপন্থীদের মুখে তাই “ইনশাল্লা”- “মাশাল্লা”- “আল্লা খোদা”র ফেনা উড়তে দেখি, অথচ এরা বুঝে না- এতে করে কোনভাবেই তারা নিজেদের লুঙ্গি ঠিক রাখতে পারবে না! এরা মওলানা ভাসানির ধর্মকর্মের অসিলায় মানুষকে সংগ্রামী বানানোর উদাহরন দেয়- অথচ, এখানকার বড় বড় কৃষি বিদ্রোহের কথা এরা ভুলে গিয়েছে! সেই হিন্দু কমিউনিস্ট নেতারা নিশ্চয়ই আল্লাবিল্লা-মাশাল্লা-ইনশাল্লা ছাড়াই হাজারে হাজারে লাখে লাখে মুসলিম কৃষকদের আন্দোলনে নামাতে পেরেছিলেন, কিভাবে? ইলা মিত্রকে মুসলিম কৃষক যখন মা বলেন, “হিন্দু”দের কায়দায় যখন প্রণাম করেন, কিভাবে এটা সম্ভব হয়েছিল- তা কি তারা ভাবে না? বেশি দূরে না যাই- সিপিবি’র মণি সিং ঐ মুসলমান কৃষকদের নিয়ে কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন কিভাবে? ভুল বুঝবেন না- ভাসানীর প্রতি আমার শ্রদ্ধার এতটুকু কমতি নেই- পীর হয়েও, মওলানা হয়েও, একজন বিশ্বাসী মুসলিম হয়েও- তিনি বামপন্থী আন্দোলনে যে ভূমিকা রেখেছেন, বামদের যে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন এবং তার ধর্মীয় অনুসারিদের যেকায়দায় আন্দোলনের দিকে প্রভাবিত করেছেন- তার তুলনা নেই! আমার আপত্তি কেবল ঐ সিদ্ধান্তে যেখানে আজ বামদের কেউ কেউ মনে করেন- বামপন্থী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্যে মওলানা ভাসানীর মত পীর হওয়া জরুরি বা আধ্যাত্মিক পথ ছাড়া মানুষকে টানা সম্ভব না!
যাহোক, এই সমস্ত পরিস্থিতিই বেশ হতাশাজনক এবং কিছুটা ভয়ের! ভয়ের- কারণ তা অন্ধকার ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকেই সামনে আনে! এমন কেন হলো? এই প্রশ্নটি খুব জরুরি! আমি ইতিহাসকে যতখানি দেখেছি- আমার বারেবারেই মনে হয়েছে, এমনটা হওয়ার কথা ছিল না মোটেও! অন্তত ৪৭ এর সাম্প্রদায়িক দেশভাগকে পিছনে ফেলে ২৪ বছরের যে লড়াই সংগ্রাম করলাম- তা চরিত্রের দিক থেকে এমনই সেক্যুলার- স্বাধীন বাংলাদেশের এমন পরিণতি হওয়াটা আশ্চর্যজনকই বটে! অনেকে ৭৫ থেকে আমাদের উল্টোপথে যাত্রা শুরু বলে মনে করেন! ৪৭ থেকে ৭১ পর্যন্ত আমাদের চলার যে গতি- সেটা ৭৫ এ ঘুরে গেল, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত গতিপথটা কেমন ছিল? এর জবাব আমার কাছে হচ্ছে- সেই উল্টোরথেই চলেছে ৭২-৭৫ এ, অর্থাৎ আমার মতে আমরা আজকের এই বাংলাদেশে পরিণত হয়েছি ৭২ থেকেই বিপরীত দিকে চলা শুরু করে (৭৫ থেকে শুরু না) … রাজনৈতিক দিক থেকে অনেকে ৭৫ কে সামনে আনতে চাইবেন- বড় দ্বিমত না করে বলবো- ৭৫ সংঘটিত হওয়ার পেছনেও ৭২-৭৫ এর ভূমিকা আছে! তাজুদ্দিনকে বাদ দিয়ে মোশতাক-মনিদের উপরে নির্ভর করা একটা উদাহরণ মাত্র! ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাওয়া, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরেও নির্বাচনে ১০-১২ টা আসন হারানোও সহ্য করতে না পারা- ভোট ডাকাতি করা- ঢাবি সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করা, রক্ষীবাহিনী, বাকশাল, সংবিধান রচনায় অন্যদের যুক্ত না করা, নিজেদের সংবিধান নিজেরাই কাটাছেড়া করা … এমন আরো অনেক কিছুই বলা যেতে পারে- যা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্যে প্রথম হয়ে আছে এবং বাংলাদেশ যে ধারাবাহিক সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে- তাতে এসব একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না! ওআইসিতে যোগদান, মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার এই সময় থেকেই, ৭৫ এর পর তার কেবল কন্টিনিউএশন! হ্যাঁ, ৭৫ এর পর থকে রাজনৈতিক পালা বদলে একেবারে পাকাপোক্তভাবে বাংলাদেশের পিছনদিকে যাত্রা শুরু হয়, কিন্তু ৭৫ তৈরির প্রেক্ষাপট তৈরিতে বা সামনে এগুনোর যে বিপুল সম্ভাবনা ছিল তা নষ্টতে আমি ৭২ থেকে ৭৫ কে অভিযুক্ত না করে পারি না। আর, অর্থনৈতিক দিকটি যদি দেখি- তাহলেও ঘুরেফিরে ৭২ থেকে ৭৫ এর ইতিহাসে আমাদের যেতে হয়!
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমাদের যে অর্থনীতি আমরা গড়ে তুললাম, তা পুরোটাই লুটপাটের অর্থনীতি! অথচ অন্যরকম হতে পারতো! উৎপাদনমুখী অর্থনীতিতে পাকিস্তান আমলেই আদমজীরা বড় বড় কারখানা তৈরি করতে পেরেছিল! আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট হিসেবে যেসব বিষয় সামনে আসে- তার মধ্যে অর্থনৈতিক শোষণ অন্যতম! বিস্তারিত আলোচনায় না যাই, স্বাধীন হওয়ার পরে আমাদের দেশে ধনিক শ্রেণী যেটা গড়ে উঠেছে- সেটা মূলত লুটপাটের মাধ্যমে! একটা কারখানা আমরা গড়তে পারিনি! পশ্চিম পাকিস্তানিদের গড়া লাভজনক শিল্প কারখানাগুলো আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত করে লুটপাটের মহোতসবে মাতি- যার ফলে ক্রমাগত এগুলো সব অলাভজনক হতে থাকে! শিল্পায়ন হয় না, ফলে কর্মসংস্থানও বাড়ে না! লুটপাটের অর্থনীতি স্বাধীন বাংলায় ৩ বছরের মাথায় দুর্ভিক্ষ উপহার দেয়! ঐ দুর্ভিক্ষ হচ্ছে তাৎক্ষনিক ফলাফল- কিন্তু তার সুদুরপ্রসারী ফলাফল আরো ভয়ানক! যেটা আজো আমরা ভোগ করছি! আমাদের ধনিক শ্রেণী মানে বুর্জোয়ারা ঐ ৭২ থেকে (আদতে ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকাল থেকেই- হিন্দু সম্পত্তি দখলের মাধ্যমে) যে লুটপাটের অর্থনীতি চালু করলো- সেটা আমাদের রাজনীতি- সংস্কৃতি সবকিছুই দূষিত করেছে! এই লুটপাটের কারণে একদিকে আমাদের মেরুদন্ড বাকা হয়েছে, আমরা দান খয়রাতে আর ঋণের উপরে নির্ভরশীল হয়েছি- অন্যদিকে লুটপাটকৃত অর্থ উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ না হয়ে কালোবাজারি, মজুতদারি, চোরাকারবারি এসবে লেগেছে- ফলে আমাদের দেশের প্রাথমিক যুগের পুজির সাথে সমস্ত অসদোপায়, চুরি- বাটপারি- দুই নাম্বারি যুক্ত! বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ শুরু করেছে, ৭৫ এর পরে জিয়া- এরশাদ সবাই একই ধারা চালিয়ে নিয়েছে! এমনকি আজো আমাদের পুজি যখন লুটপাটের অর্থনীতি থেকে বের হয়ে উৎপাদনমুখী হওয়ার চেস্টা করছে- তখনো সেই যেনতেন প্রকারে পুজি বাড়ানোর লোভ- সেই লিগেসি চলে আসছে, যার ফল তীব্র হয়ে দেখা দিচ্ছে- তাজরীন গার্মেন্ট এ- রানাপ্লাজায়।
আলোচনা ছড়িয়ে যাচ্ছে বলে দুঃখিত। যাহোক, মূল আলোচনায় ফিরি আবার! এই লুটপাটের অর্থনীতি সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও আমাদের ভীষণ ক্ষতি করেছে! লুটপাটের অর্থনীতি যেহেতু কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেনি, সেহেতু শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনও সেভাবে অনুভূত হয়নি! সুতরাং এদেরকে ধারণ করার জন্যে মাদ্রাসা শিক্ষা ছাড়া উপায় ছিল না রাষ্ট্রের! রাষ্ট্রীয়ভাবে মাদ্রাসা শিক্ষাকে পৃষ্ঠপোষকতা সে কারণেই দরকার হয়ে পড়ে! আর স্বাধীনতার পরে যারা ধনীক হয়ে উঠলো- তারা যেহেতু লুটপাট, চুরি- বাটপারি করেই ধনীক, সেহেতু তাদের ইমেজ পরিস্কার করার প্রয়োজনেই হোক আর পরকালের জন্যে পাপমুক্তির আশায়ই হোক- তারা মাদ্রাসা আর মসজিদে টাকা ঢালতে শুরু করে! আজ ঢাকা মসজিদের শহর নামে বিশ্বে পরিচিত, গোটা বাংলাদেশেই যত মসজিদ- মাদ্রাসা আছে, হয়েছে, হচ্ছে- তা দুনিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থানীয়! স্বাধীন বাংলাদেশে কালো টাকা, লুটপাটের টাকা যত বেড়েছে- হাজীর সংখ্যা আর মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা ততো বেড়েছে! এটা খুব ভয়ানক! এই বাংলায়, এককালে ধনীকরা স্কুল দিত, কলেজ দিত, গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি দিত, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ব্যয় করতো, থিয়েটার- যাত্রায় ব্যয় করতো, মেলা- উৎসব- পার্বনে ব্যয় করতো- স্বাধীন বাংলায় দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র! ৭২ থেকে আজ পর্যন্ত ব্যক্তি উদ্যোগে যে কয়টি স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- তার কয়েক হাজার গুন মাদ্রাসা- মসজিদ- এতিমখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মাদ্রাসায়- এতিমখানায় ডোনেশন যত দিয়েছে- তার ক্ষুদ্রাংশও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যায়নি! আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ এভাবেই বপিত হয়েছে; আজ আমাদের কাছে সেটাই বটবৃক্ষ হয়ে ধরা পড়ছে! শেখ হাসিনা যে বড় গলায় বলে, আওয়ামীলীগই মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ করেছে, তা আসলে অসত্য নয়- যারাই ক্ষমতায় থেকেছে- মাদ্রাসা শিক্ষায় পাল্লা দিয়ে বরাদ্দ করেছে, সেটা সেই ৭২ থেকেই! ইসলামিক ফাউন্ডেশনও আওয়ামীলীগের অবদান বলে দাবী করা হয়! মাদ্রাসায় ব্যক্তিগত ডোনেশন দেয়াতে আওয়ামী লীগ- বিএনপি কেউ কারো চাইতে কম এগিয়ে নেই! অর্থাৎ, লুটপাটের ঐ অর্থনীতি এভাবেই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও প্রভাব বিস্তার করেছে! আজ যখন অর্থনীতি কিছুটা উতপাদনমুখী হওয়ার চেস্টা করছে- কর্ম সংস্থান তৈরি হচ্ছে, শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ছে (এবং যেকোন প্রকারে পাশ করে দেয়ার চেস্টা হচ্ছে)- তখনো আগের সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারছে না, কেননা- বাংলার আপামর জনসাধারণের যা ক্ষতি তাতো হয়েই গিয়েছে- এখন ধর্মীয় সুড়সুড়ি দেয়া, জনগণের ধর্মীয় আবেগকে নিয়ে খেলা করা খুব সহজ- আর এটা রাজনীতিবিদরা ভালো করে জানে বলেই- একে হাতে রাখতে চায়, একে হারানোর রিস্ক নিতে চায় না!
তাহলে, ভবিষ্যৎ কি? আশার কিছুই কি নেই?
বর্তমানের অর্থনীতি যদি দেখি, তাহলে আশার কিছু বিষয় পাওয়া যায় বৈকি! অন্তত আগের আমলের ঐ লুটপাটের অর্থনীতির বাইরে উৎপাদনমুখী অর্থনীতিও দেখা যাচ্ছে! অনেক উদ্যোক্তাদের দেখা যাচ্ছে- তারা ভালোও করছে! কর্মসংস্থান আগের চাইতে অনেক বাড়ছে, সাধারণ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও সমাজে অনুভূত হচ্ছে- মাদ্রাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নানাভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে! গার্মেন্ট সেক্টরে বিপুল নারীর অংশগ্রহণও একটা বড় ঘটনা! বাম বন্ধুদের বলবো- আমাকে ভুল বুঝবেন না, এই ভালোকে আমি তুলনামূলক অর্থেই বলেছি, আমি মোটেও বুর্জোয়া অর্থনীতির সমর্থক নই- শ্রম শোষণের বিরুদ্ধেই আমার অবস্থান, কিন্তু একটা পুঁজিবাদী দেশে লুটপাটের অর্থনীতির তুলনায় উৎপাদনমুখী অর্থনীতি আমার কাছে অধিক কাম্য! হ্যাঁ, এখনো আমাদের অর্থনীতিতে কালো টাকার দৌরাত্ন কমেনি, এখনো এখানে উৎপাদনমুখী অর্থনীতির শক্ত ভিত গড়ে ওঠেনি, এখনো আমাদের অর্থনীতি সাম্রাজ্যবাদীদের খপ্পড়ে বাঁধা, এখনো আমাদের অর্থনীতির মূল দুই চালিকা শক্তি গার্মেন্টস সেক্টর নামক দর্জিগিরি আর আর রেমিটেন্স নামের বিদেশে সস্তায় গতর বেচা- যেকোন সময়েই এই দুই খাত তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান! তারপরেও, এখানকার সস্তা শ্রমের লোভেই হোক আর যেকারণেই হোক- দেশে বিদেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে, গার্মেন্টসের দর্জিগিরির মাধ্যমে রেডিমেড গার্মেন্টস হোক আর সিমেন্ট- ওষুধ- ইস্পাত- গ্লাস – ফুডস হোক কিংবা হাঈ টেক আইটি উৎপাদনই হোক- এমন নানা উৎপাদন হচ্ছে, দিনে দিনে বাড়ছে, উদ্যোক্তরা কথিত লুটপাট ছাড়াই বাড়ছে- সে রাষ্ট্রীয় নানা ছাড় বা রেয়াদ পেয়ে হোক না কেন! এখানে বুর্জোয়ারা যত উৎপাদনমুখী হবে, ততই তাদের ইহজাগতিক শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে, কিছুটা মাত্রায় হলেও বিজ্ঞান প্রসারে ভূমিকা নিতে হবে! লুটপাট থেকে যত বের হবে- তত সে পাপমোচনের চিন্তা বাদ দিবে (শ্রম শোষণ তার চোখে পাপ নয়, বরং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে মানুষের সেবা করছেন- এমন ধারণাই বুর্জোয়া সমাজ প্রচার করে)- যত পাপমোচনের চেস্টা বাদ দিবে, তত সে ইমেজ উজ্জ্বল করার জন্যে (পরিস্কার করার জন্যে না কিন্তু)- সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিবে (সিএসআর), এটা অন্তত আগের ঐ আমল থেকে বেটার! ফলে, উল্টোদিকটাও আমরা দেখছি! আজ আর কর্পোরেটরা মাদ্রাসা- মসজিদ প্রতিষ্ঠা করছে না, তারা নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেই ফান্ডিং করছে (এটা ঠিক- এসমস্ত সামাজিক কর্মকান্ড তাদের ব্রান্ডিং এর স্বার্থে এবং এর মাধ্যমে এক ভোগবাদী পণ্যসংস্কৃতি তৈরি করছে তারা), এ যুগে একক ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কমেছে, যদিও এতদিনের ধারাবাহিকতায় মাদ্রাসা- মসজিদ- এতিমখানায় নানাভাবে ডোনেশন এখনো প্রচুর- তবে এই সংখ্যা কমতে থাকবে! এই বাস্তবতাতেই আজ কিন্তু আমরা সমাজে কিছু নাড়াচড়া দেখছি! যদিও শহর গ্রামের তফাতটা দিনে দিনে বাড়ছে, তথাপি শহরাঞ্চলে অন্তত ধর্ম এমনকি ধর্মবিশ্বাসী নাগরিককেও আটকে রাখতে পারছে না, যতই হিন্দুয়ানি- বেদাতি বলে বাঁধা দেক- পয়লা বৈশাখে লাখো মানুষের ঢল থামাতে পারছে না, আমি দেখেছি- এমনিতে হিজাব বা মাঝে মধ্যে বোরখাও পরে এমন নারী পয়লা বৈশাখে বা বসন্তে শাড়ি পরে- খোপায় ফুল দিয়ে – কপালে বড় টিপ দিয়ে বেরুচ্ছে … হিন্দুদের রথযাত্রার অনুকরণ- এসব আর কেউ কানে তুলছে না, মঙ্গল শোভাযাত্রা জাতীয় উদযাপনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে! জাতীয় দিবসগুলোতেও মানুষের ঢল নামা শুরু হয়েছে! এসবই লক্ষণ যে, এদেশের মানুষকে ধর্মব্যবসায়ীরা আটকে পারবে না! গ্রাম- মফস্বলের অবস্থাও পালটে যাচ্ছে, অন্তত গার্মেন্টসের নারী শ্রমিকদের দেখলে বুঝতে পারি! একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রীদের মধ্যে হিজাব পরার প্রবণতা অনেক বেড়েছে- বিপরীতে দেখি- গার্মেন্টসের লাখ লাখ নারী শ্রমিকরা গ্রাম থেকে আসার পথে বোরখা- হিজাব ছুড়ে ফেলেছে … এসবও বাস্তবতা … এমনকি, হেফাজতি কান্ডের সময়ে গার্মেন্টসের এই নারী শ্রমিকদেরই মোল্লাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে দেখি …
সে কারণেই বলেছি- আমাদের অবস্থাটা মিশ্র! দীর্ঘদিনে প্রাকটিসের লিগেসি যেমন বহন করছি, সাম্প্রতিক সময়ে মোল্লারা যেমন নিষ্ক্রিয় দশায় থেকে সক্রিয় দশায় পরিবর্তিত হচ্ছে – তেমনি অর্থনীতি যতটুকু সচল হয়েছে বা হচ্ছে-তার প্রভাবও কিছু কিছু মাত্রায় দেখা যাচ্ছে! স্বাভাবিক- সুস্থ গণতান্ত্রিক (আপাত অর্থে, মানে পর্যায়ক্রমে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা স্থানান্তরের গণতন্ত্র) ব্যবস্থা বজায় থাকলে, ৫ বছর পর পর জনগণের কাছে যাওয়ার দায়বদ্ধতা থেকে হলেও রাজনীতিতে ফ্যাসিজম কম আসে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেহেতু পুঁজিবাদী, বুর্জোয়ারা রাষ্ট্রের কাছ থেকে নানা সুবিধা আদায়ের মাধ্যমে একটা শোষণমূলক ব্যবস্থা চালু করলেও- শোষণ করার মত শ্রমিক যেহেতু তার জন্যে জরুরি, কিছুটা হলেও লিখিয়ে পড়িয়ে শিখিয়ে তাদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেয়, পণ্য বেচা যেহেতু জরুরি- বাজার সম্প্রসারণের লক্ষে আয়ক্ষমতা বাড়াতে চায় … আর এসমস্ত কারণেই আজকের এই রাষ্ট্রব্যবস্থা (মানে, সরকার- পুলিশ বাহিনী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় বাহিনী সমূহ, বুর্জোয়ারা তথা তাদের মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী) হেফাজতিদের উত্থানের বিরুদ্ধেও দাঁড়ায়, কেননা হেফাজতিরা এসবে বাঁধা তৈরি করে … এও এক বাস্তবতা! ধর্মকে রাষ্ট্র ব্যবহার করে, এখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মানুষকে ধর্মীয় সুড়সুড়ির প্রয়োজনীয়তা রাজনৈতিকদলগুলোর কাছে ব্যাপকমাত্রায় বজায় আছে, ফলে- একটা মাত্রা পর্যন্ত ধর্মব্যবসায়ীদের তারা নিজেদের প্রয়োজনে অনুমোদন করে, এখনো যতটুকু লুটপাটের- কালো টাকার অর্থনীতি বজায় আছে- ততটুকু মাত্রায় ধর্মকে হাতিয়ার করতে হয়- এতদিনের ধর্মের গাছে পানি- বাতাস দেয়ায় সাম্প্রদায়িকতার চারাগাছটি যে বৃক্ষে পরিণত হয়েছে, তার সাথে তাল মিলাতে গিয়েও ধর্মকে আকড়ে ধরে! আর কর্পোরেটরা উৎসব, পালা পার্বন, সংস্কৃতি নিয়ে যেমন- ধর্ম নিয়েও তেমনি ব্যবসা ফাদিয়ে বসে, ধর্মও তাদের ছোয়ায় পণ্য হয়ে দাঁড়ায়- এবং দেখেছে যে, নাস্তিকতার চাইতে ধর্ম ভালো ব্যবসা- অন্তত আমাদের মত ধর্মভীরু দেশে … ফলে, মোটের উপরে রাষ্ট্র, তার সরকার, বুর্জোয়ারা বাংলাদেশকে একটা মডারেট মুসলিম দেশ বানাতে চায়- মানে ধর্ম থাকবে- ইসলাম থাকবে, কিন্তু জঙ্গি টঙ্গি থাকবে না- এমনই চাওয়া তাদের, এতে আখেরে সবারই লাভ …
কিন্তু, একটা ভয়ানক ভবিষ্যতের সম্ভাবনাও দেখি আমি! বিশেষ করে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে যাচ্ছে- তা আরেকটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে! গণতন্ত্রের ভয়ানক বিষয় হচ্ছে- বহুদল, বহুমতকে ছাড়া এ স্বৈরাচারী রূপ নিতে থাকে! বিএনপির ধ্বজভঙ্গ অবস্থা দেখে তাই আমি খুশি হতে পারি না, উদ্বিগ্নই হই! আওয়ামীলীগ ধীরে ধীরে স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছে, আরো বেশি করে হচ্ছে! সম্প্রচার নীতিমালা করেছে, বিচারপতিদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করছে, র্যাব- মিলিটারিদের উপর নির্ভরশীল হতে গিয়ে তাদের নানা উপঢৌকন দেয়া হচ্ছে, খোলামেলাভাবে খুনীদের- গডফাদারদের পক্ষে দাড়াচ্ছে, ভারত- আমেরিকার সমর্থনের লক্ষে তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে- দেশের সম্পদ অসম চুক্তিতে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে, জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র করছে, ট্রানজিট করছে; ব্যবসায়িদের খুশি করতে গিয়ে শ্রমিকদের পেটে লাথি দিচ্ছে, সাধারণ জনগণের পেটে লাথি দিচ্ছে … এ সমস্তই মানুষের ক্ষোভকে বাড়িয়ে দিচ্ছে! যেহেতু, এর বিরুদ্ধে এখানে কোন গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রাম নেই, জনগণের ক্ষোভকে কাজে লাগানোর মত বিরোধীদলও অনুপস্থিত, বামপন্থীদের আন্দোলন সামগ্রিকতায় ‘টেন্ডস টু জিরো’ হিসেবে মনে হয় বা মনে করানোর আয়োজন উপস্থিত- যে আয়োজনকে চ্যালেঞ্জ করার সামর্থ্যও বামদের নেই- সেহেতু, এর শেষ ভয়ানক পরিণতিতে হওয়ার সম্ভাবনা দেখি! হেফাজতি কান্ড তার ছোট একটা ঝলক দিয়ে গেছে! ৭৫ এ একবার আমরা এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি! আওয়ামীলীগ যত দিন যাচ্ছে – তত স্বৈরাচারী রূপ নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে- যত স্বৈরাচারী রূপ নিচ্ছে- বাস্তবে ততই নিজের পতন ডেকে আনছে! মুশকিল হচ্ছে- আওয়ামীলীগের এই পতন কেবল আওয়ামীলীগকে ডুবাবে না সাথে দেশকেও! এই পতনের সূত্রপাত ঘটবে আরেকটি ১৪ ডিসেম্বর দিয়ে- আরো ভয়াবহ আকার নিয়ে- অনেকটা ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলেশনের মত করে, তাতে কেবল বুদ্দিজীবি- শিক্ষক- সাংবাদিকরা না, অনলাইন- অফলাইন সব একটিভিস্ট- মুক্তমনারাও কচুকাটা হবে! এই আশংকায় আমাদের বুদ্ধিজীবীরা ভয়ে আরো বেশি করে আওয়ামীলীগের পিঠে সওয়ার হয়- আওয়ামীলীগের সমস্ত অপরাধ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে বা দেখতে বাধ্য হয় এবং আদতে আওয়ামীলীগকে আরো ফ্যাসিস্ট করতে সহযোগিতার করে- যার মাধ্যমে পতনকে আরো তরান্বিত করে! কি এক ট্রাজেডি, তাই না? অনেকটা ইনফিনিট লুপের মত! গত হেফাজতিদের সময়ে- বিশেষ করে আওয়ামী সরকার যখন হেফাজতিদের সাথে সমঝোতার তাগিদে নাস্তিকদের তালিকা করা শুরু করে, আসিফ- রাসেল- বিপ্লবকে জেলে পুরে- আমাদের অনেক মুক্তমনাই ভয় পেয়েছিল (ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক না, বেশিরভাগই নিরীহ- নিসঙ্গ- অনলাইন যোদ্ধা)- কিন্তু তাদের অনেকের সাথে কথা বলে অবাক হয়েছি এই জায়গায় যে, তারা তাদের ভয়ের রিমেডি পাচ্ছিল- আওয়ামীলীগকে ঘিরেই! কেননা, আওয়ামীলীগের বিপরীতে তারা এই হেফাজতিদের দেখছিল- যতই তাদের বলছিলাম, এই আওয়ামীলীগই আমাদের নামের তালিকা বানিয়েছে, এই আওয়ামীলীগই হেফাজতিদের সাথে সমাঝোতার চেস্টা করেছে, এই আওয়ামীলীগই হেফাজতিদের ঢাকায় আসার অনুমতি দিয়েছে … ততই তারা হিস্টেরিয়াগ্রস্তের মত, আওয়ামীলীগ আওয়ামীলীগ জপছিল! আমাদের বুদ্ধিজীবীরা, আমাদের মুক্তমনাদের অনেকেই কেন যে এই কাজটি করেন, জানি না! কেন যে তারা বুঝেন না যে, এভাবে আওয়ামীলীগের বিপরীতে জামাতি- হেফাজত জুজু দেখে আওয়ামীলীগের উপর ভরসা করতে গিয়ে পায়ের নীচ থেকে আমাদের আরো মাটি সরে যাচ্ছে, আওয়ামীলীগের কাছে এইসব অসহায়- অথর্বদের বড়জোর মুখে মুখে সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া ভরসা হওয়ার চাইতে মুসলিম ভোট ব্যাংকের স্বার্থে দুচারটা মুক্তমনা, কয়েকটা বুদ্ধিজীবীকে উতসর্গ করা অধিক লাভজনক (আসিফদের আটক রেখে হেফাজতিদের ঠান্ডা করার প্রচেস্টার কথা মনে করুন), তারচাইতেও এভাবে আমরা যাবতীয় ধর্মব্যবসায়ী নোংরা রাজনীতিকে সমান ত্যাগ না করার মাধ্যমে বিকল্প রাজনীতির সম্ভাবনাকে নষ্ট কি করছি না?
এমন হতাশার মাঝে আশার কিছুই কি দেখি না? অবশ্যই দেখি! গণজাগরণ সেই আশা দেখিয়ে গিয়েছে! হেফাজতি কান্ড যেমন একটা ঝলক, গণজাগরণও তেমন একটা ঝলক! এই পোস্টের শুরুতে যেমন বলেছিলাম- এত এত সব প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এখানে আরজ আলী মাতুব্বরেরা জন্মায়! এখানে, শুধু আরজ আলীরা না- ক্ষুদিরাম- সূর্যসেন- সালাম- বরকত- আসাদ- মতিউর- রুমি- তাহেররাও জন্মায়! নচেত কে ভেবেছিল- ৪০ বছর পরে রাজাকারদের বিচারের দাবিতে এভাবে বাংলা জেগে উঠবে! কে ভেবেছিল- তরুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও এমন আবেগ ধারণ করে? হ্যাঁ, গণজাগরণকে আমি এক অর্থে ব্যর্থই মনে করি, সুচতুর আওয়ামীলীগ একে সফলভাবে ব্যর্থ করে দিয়েছে, কিন্তু এই গণজাগরণের মধ্যেই আমি এক বিশাল পোটেনশিয়াল দেখেছি … এই তরুন প্রজন্মই এগিয়ে আসবে- বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে – এমন প্রত্যাশাই করি… গতবারের ভুল শুধরাতে পারে কি না- সেটাই শুধু দেখার বিষয় …
এ তো দেশকে চুড়ান্ত ডুবার হাত থেকে রক্ষা করার শেষ আশ্রয়, কিন্তু উদার বাংলাদেশ কি এমনি এমনিই হয়ে যাবে? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন না হলে তা তো সম্ভব না! সেটাও হবে হয়তো একদিন, কিন্তু তার আগ পর্যন্ত কি হবে? এই শিক্ষাব্যবস্থা মোল্লা তৈরির কারখানা হয়ে নির্বিঘ্নে মোল্লা তৈরি করে যেতে পারলে- শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনটা আপনা আপনি কখনোই হবে না বলেই মনে হয়! এই জায়গাটিতেও মনে হয়- আমাদের মুক্তমনাদের করণীয় অনেক কিছু আছে! মুক্তমনাদের জানা বোঝার আগ্রহ প্রচুর, সেই তুলনায় জানানোর- বুঝানোর আগ্রহ বেশ কম! এট বাড়ানো দরকার! ‘বলি কম, শুনি তারচে বেশি, পড়ি আরো একটু বেশি, চিন্তা করি আরেকটু বেশি’- একটা পর্যায়ে এ থেকে বেরিয়েও আসা দরকার! চিন্তা করা, পড়া, শুনার পাশাপাশি বলা ও লেখার পরিমাণও বাড়ানো দরকার! আমাদের দেশে রিচার্ড ডকিন্স, স্যাম হারিস, ভিক্টর স্টেঙ্গর প্রমুখদের খুব দরকার, মানে আরো আরো আরজ আলী মাতুব্বর, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ, তসলিমা নাসরিনদের দরকার! অসংখ্য অভিজিৎ রায়, আসিফ মহিউদ্দিন, বন্যা আহমেদদের দরকার! আজকের মুক্তমনাদের প্রতি আমার প্রত্যাশা- তারা প্রচুর পড়াশুনা করুক, নিজেদের প্রস্তুত করে তুলুক- একেকজন আগামির আরজ আলী মাতুব্বর, হুমায়ুন আজাদ বা অভিজিৎ রায় হয়ে উঠুক! আরেকটা প্রয়োজন খুব দেখি- আমাদের শিশু কিশোরদের জন্যে মুক্তমনারা যদি কিছু সময় ব্যয় করতো তাহলে কতো না ভালো হতো! দেশের বাইরে গেলে বাচ্চাদের জন্যে এত চমৎকার সব বই দেখি যে, মন খারাপ হয়ে যায়! তার একটা বড় অংশই বিজ্ঞানের উপরে! আমাদের এখানে শ্রেনীকক্ষের বই আমরা সহসা পাল্টাতে না পারি- বাইরের বই কেন পাল্টাতে বা যুক্ত করতে পারবো না? কিশোর উপযোগী বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্মের লৌকিক ইতিহাস, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে লৌকিক- অলৌকিক এর ব্যাখ্যা, প্রশ্ন করতে শেখে এমন লেখাপত্র, অংক, লজিক, কুসংস্কারের বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা … এরকম কত কি যে শিশু কিশোরদের মাঝে নেয়া দরকার … আমরা কিছুই শুরু করতে পারিনি … আমাদের প্রিয় মুক্তমনা ওয়েবসাইটে “কিশোর মুক্তমনা” নামে একদম আলাদা একটা সেকশন/ পেজ/ ট্যাব কি হতে পারে না? “মুক্তমনা” ওয়েবসাইট যেমন আজ বাংলাদেশের অসংখ্য অনলাইন মুক্তমনাদের জন্ম ও আশ্রয়স্থল, তেমনি “কিশোর মুক্তমনা”ই হতে পারে আগামীর “উদার বাংলাদেশ” এর কারিগর!
রাঙামাটি যাচ্ছি, পথে কুমিল্লায় ক্ষণিকের বিরোতি। চায়ের টেবিলের যুবক যাচ্ছেন আরেক বাসে চট্টগ্রাম। আমার গাড়ি “শ্যামলী পরিবহন” শুনে বললেন, “হিন্দুর বাস!” ভেতরে ভেতরে চমকে উঠলাম। বাসেরও যে জাতপাত আছে তাই-ই তো জানা ছিল না। মুখে বললাম, “তালেবানের বাস হলেই বা কি হতো? পথ যাত্রায় ছোয়াব কামাতে তো চাইছি না। নিরাপদ ভ্রমণ দিয়ে কথা।” এবার যুবক স্পিকটি নট!
মানুষ নাই রে দেশে। আছে কিছু হিন্দু-মুসলমান, “উপজাতি”-বাঙালি, আর খ্রিষ্টান। 😛
সমর্থন জানাই। প্রয়োজনে শিশু কিশোরদের জন্য লেখাগুলো একত্রে করে বিনামূল্যের বা স্বল্পমূল্যের বই আকারেও বের করা সম্ভব।
@আসিফ মহিউদ্দীন, উত্তম প্রস্তাব
আর্থ সামাজিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে মানুষের চেতনা।আপনারা বলছেন এ দেশে উৎপাদনমুখী অর্থনীতির বিকাশ হচ্ছে।এবং এই বিকাশের ফলে এ দেশের মানুষ উদার হবে।আসলেই কি তাই?
মানুষ যখন প্রতিক্রিয়াশিল হয় তখন সাম্প্রদায়িক চেতনা দ্বারা প্রভাবিত হয়। আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার কারনে একটি হতাশ এবং প্রতিক্রিয়াশীল প্রজন্মের সৃষ্টি হচ্ছে।দারিদ্রতার কারনে অনেকেই সন্তানকে মাদ্রাসায় ভর্তি করাচ্ছেন। মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুরা ঘৃণা নিয়ে বড় হচ্ছে।
অপরদিকে ধনীদের ছেলেমেয়েরা আজকাল সাম্প্রদায়িক চেতনার রোমান্টিকতায় উদ্দীপিত।তাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে রাষ্ট্রকে ভাঙতে হবে।
উপমহাদেশ, আফ্রিকা ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ যতদিন পশ্চিমা দেশগুলোর পর্যায়ে শিল্পোন্নত না হবে ততদিন ধর্মের দাপট কেউ ঠেকাতে পারবেনা। এটা বোঝার জন্য নিশ্চয় এত বিস্তার গবেষণা না করে বাইরের আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ দেশগুলোর দিকে তাকালেই হয়। যেমন পশ্চিমা দেশগুলোতে ধর্মের প্রভাব শুধু বিয়ের অনুষ্ঠানের ধরন আর ক্রিসমাসেই দেখা যায়। এশিয়ার উন্নত দেশ জাপান অফিসিয়ালি ও সামাজিকভাবে ভালোমত ধর্মনিরপেক্ষ হলেও সাংস্কৃতিক যেকোন অনুষ্ঠান বা বিয়েতে শিনতো ধর্মীয় মন্দির সংশ্লিষ্টতা থাকেই। ওদের মন্দিরগুলোও সরকারিভাবে চালিত। আবার ওদিকে চীনের মত কট্টর নাস্তিক দেশেও বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রভাবের সংস্কৃতি, সরকারীভাবে কনফুসিয়াসের ভাবাদর্শের প্রচার, বিদেশে বৌদ্ধধর্মের প্রাচীন স্হাপনায় সাহায্য থেকে বোঝা যায় ধর্ম প্রীতি থেকে এরাও বেরোতে পারেনি। নব্য উন্নত দেশ কোরিয়াতে এমনিই খ্রিস্টধর্মের বিপ্লব ঘটেছে যে অচিরেই এটি এশিয়ার প্রথম খ্রিস্টান দেশে পরিণত হতে পারে।
আসলে একটা বাস্তবতা হল মধ্যযুগে ধর্ম ছিল বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করার এক মোক্ষম কিন্তু অদৃশ্য অস্ত্র আর আধুনিক যুগে ধর্ম হল ব্যবসার একটা বিরাট উপায়। ধর্মকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতি, উৎসবের আয়জন হয়ে থাকে। আর ভোগ্যপণ্য বা সেবামূলক ব্যবসার গতি এনে দেয় যেকোন উপলক্ষ যেখানে ধর্মীয় উৎসব, পালা-পার্বণ বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে। কাজেই ব্যবসায়ীরা ব্যবসার স্বার্থেই চাইবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান টিকে থাকুক। ধর্মীয় অনুশাসন ও ভাবাবেগ দিন দিন থিতিয়ে পড়াটাই সবার জন্য মঙ্গল কিন্তু ধর্মীয় আচার ও উৎসবগুলো পর্যটন শিল্প, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র ও পণ্যের বিকিকিনির জন্য কিন্ত একেবার লক্ষ্ণী!
(1) কিশোর কেন একদম ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞান ছেলে মেয়েদের মাথায় ঢোকানোদরকার।
এর জন্য শিশু বিজ্ঞান সাহিত্য, শিশু বিজ্ঞান ডকুমেন্টারী দরকার। আমি আগে একটা উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভেবেছিলাম-সেটা হচ্ছে পি বি এস কিডস এর যত বিজ্ঞান ভিডিও আছে, সেগুলোর বাংলা ভয়েস ওভার।
মানুষ নাস্তিক হয়েই জন্মায়। সমাজ তাকে আস্তিক করে ভয় দেখিয়ে। এটা ঘটে যখন একজনের বয়স ৪-৭ বছর। ঈশ্বরের আল্লার ধারনা দিয়ে তার ব্রেইন ড্যামেজ করানো হয়।
কিন্ত বাচ্চাদের মনে যুক্তিবোধ খুব প্রবল। আমি নিজের ছেলের ক্ষেত্রেই দেখেছি। সে একদম পাচ ছবছরেই ঈশ্বর যে মেক বিলিফ স্টোরী-লোকে তাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে -ধরে ফেলে। এর কারন পি বি এস কিডস এর বিজ্ঞান ডকুমেন্টারী-যেখান থেকে সে জেনে গেছে কিভাবে তৈরী হয়েছে আমাদের এই উনিভার্স, পৃথিবী, মানুষের বিবর্তন। এগুলো একজন বাচ্চা জানার পর যখন কেও ধর্মের গাঁজাখুরী দেবে-সে বিস্বাস করবে না।
(২) আমি বাকী লেখাটির সাথে একমত নই। বই এর ভূমিকা খুব বেশী হ তে পারে বলে মনে করি না। বরং অধুনা টিভি এবং স্যোশাল মিডিয়ার বৃহত্তর ভূমিকা থাকতে পারে। তবে এসব গৌন। মার্কেট না চাইলে, সেই সামাজিক পরিকাঠামো না এলে, লোকে কেন খামোকা নাস্তিক হতে যাবে নিজের পেছেন বাঁশ ঢোকাতে ?
মার্কেট নাস্তিক হয়ত চাইবে না-কিন্ত খুব দ্রুত চাইবে সেই ধরনের লোক যারা সব ধর্ম বর্ন সব দেশের লোকের সাথে সহজে মিশতে সক্ষম। সেই টাইপের লোকের ইশ্বর বিশ্বাস থাকতেই পারে-কিন্ত তারা ধার্মিক বা ধর্মান্ধর কোনটাই হবে না। কারনটা সেই মার্কেট ম্যাজিক। একজন বোরখা পরা মহিলা কি করে সেলস গার্লের চাকরি করবে?
সুতরাং সেলস গার্লের চাকরিটা অনেক বেশী দরকার নাস্তিকতার বই এর থেকে।
বাংলাদেশ যদি কৃষি অর্থনীতিতেই পড়ে থাকে, হাজার হাজার ডিরোজিও অভিজিত রায় জন্মালেও কিছু হবে না বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ যদি উদার না হয়, বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ আসন্ন। তবে সেই আশঙ্কা নেই-কারনটাও আমি আগেই বলেছি।
ভারতেও মন্দিরের উৎপাত ধর্মের উৎপাত বেড়েছে। আগে আমাদের ছোট্ট সীমান্ত শহরে মোটে ৩ টে মন্দির ছিল-এখন আছে ৩০টার ওপরে। আগে কোন দিন মাইকে আজান শোনা যেত না। এখন সর্বত্র মাইক দিয়ে উচু করে এসব হয়। এগুলো কোন ফাক্টর বলে আমি মনে করি না। লোকের টাকা হয়েছে তাই সামাজিক প্রতিষ্ঠা পেতে এসব করে। আগামীতেও করবে। উদারতা প্রশ্ন আসে ক্রিটিক্যালি-সে তার ছেলে মেয়েকে কি আধুনিক শিক্ষা দিতে চায় না দিতে চায় না? আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থায় চাকরি পেতে গেলে, তাকে আধুনিক শিক্ষা এবং আধুনিক হওয়ার শিক্ষাটাও নিতে হছে। ফলে একদিকে মন্দির ও যেমন বাড়ছে, তেমন বাড়ছে আধুনিক যুবক যুবতীর সংখ্যা।
“কিশোর উপযোগী বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্মের লৌকিক ইতিহাস, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে লৌকিক- অলৌকিক এর ব্যাখ্যা, প্রশ্ন করতে শেখে এমন লেখাপত্র, অংক, লজিক, কুসংস্কারের বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা … এরকম কত কি যে শিশু কিশোরদের মাঝে নেয়া দরকার…” আর এইসব কাজ শুধু মুক্তমনাদের ই কেনো করতে হবে?
কিছুদিন আগেই, আনিস রহমান এর ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেখেও বেশ আশাহত হই। সেইখানেও তিনি মুক্তমনাদের দায়ী করছেন বন্যা দুর্গতদের জন্য কিছু না করার কারনে।
বাংলাদেশ আসলেই রাজতন্ত্র বিহীন অন্য যে কোন মুসলমান প্রধান দেশের মতই ইসলামী এবং সেক্যুলার ব্যাবস্থার এক জগাখিচূড়ি দেশ। সামান্য লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে ধর্মীয় ব্যাবস্থা এবং সেক্যুলার ব্যাবস্থার সাপোর্ট বেজ কেন্দ্র করে দেশে পোলারাইজেশন হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকেই, যার চরম প্রকাশ দেখা গেছে গত বছর হেফাজতি উত্থানের সময়। দেশে আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেন্দ্রিক বিভাজন নেই, আছে ধর্মকেন্দ্রিক বিভাজন – এ দুইকে অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। দিনে দিনে এই বিভাজন সংঘাতের দিকে যাচ্ছে এবং আরো যাবে। এই অবস্থা হঠাত করে শুধু বাংলাদেশেই হয়নি, ইতিহাস বলে একই অবস্থায়ই পার হচ্ছে যেসব দেশ রাজতন্ত্রের বাইরে তার প্রায় প্রতিটাই। সে সব দেশেই ধর্মীয় এবং সেক্যুলার ব্যাবস্থার নিরন্তর সঙ্ঘাত; আফগানিস্তান (এখনকার তালেবান ঘটিত নয়, আরো প্রায় ১০০ বছর আগের ঘটনা), আলজেরিয়া, তুরষ্ক, মিশর, তিউনেশিয়া, লিবিয়া সবখানেই এক কাহিনী। দুই বিপরীত ধর্মী মূল্যবোধ পাশাপাশি চর্চার ফলে প্রায় প্রতিটা দেশেই তৈরী হয়েছে দুই পরস্পর বিরোধী ধারা যার অবধারিত ফল হল সদা অস্থিতিশীল পরিবেশ। দূঃখজনকভাবে এর কোন সহজ পরিত্রান নেই।
বিপ্লব পালের লেখাটির মধ্যে বেশ চিন্তার বিষয় রয়েছে। এই আমি ৬ বছর পর দেশে এসে যা দেখছি তা ঐ লেখাটির সাথে মেলাতে পারছি না। এখানে স্কুলের সকল ছেলেদের মাথায় ধর্মীয় টুপি আর মেয়েদের মাথায় হেজাব যা আগে দেখি নাই। তবে এই ধর্মীয় পোশাকের আড়ালে কি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে তা একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। মানুষ যখন বিচার পায় না তখন সে মানসিক সান্তনার জন্য বিশ্বাসীর জায়গায় আশ্রয় নেয়। রাষ্ট্র যখন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় তখন সে নিজের মনের মধ্যেই বিকল্প আশ্রয় স্থান খুজে বের করে নেয়। এই অবস্থায় মানুষ অধিক ঈশ্বর বিশ্বাসী হয়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে তো মৌলবাদ মাথা চাড়া দেবে। জীবন জীবিকার পাশা পাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থাও একটি দেশের মৌলবাদ উত্থানের জন্য অনেকটা দায়ী। বাংলাদেশ তো এর বাইরে মনে হচ্ছে না। এই বিষয়টি আপনি কি মনে করেন?
বেশ বড়ো লেখা, নতুন পুরোন তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গির একটি সমাহার।
যাহোক, শেষের অনুচ্ছেদ দিয়ে শুরু করি। চিন্তার ক্ষেত্রটি ঋদ্ধ হতে হলে দেশ বিদেশ সব ভাষারই প্রাসঙ্গিক লেখাগুলি তরুণদের পড়া থাকা উচিত। কিন্তু উঠতি বয়সের এদের অন্যান্য বিষয় নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত থাকতে হয়, যে সকলেই এসব বই সংগ্রহ ও পড়া হয়ে উঠবে না। অভিজিৎ’দা একলাই যে কতগুলি বই নতুন প্রজন্মের জন্য লিখেছেন, তার সমসাময়িক আর কেউ তেমন একটা চেষ্টা করেন নাই। আর এজন্য আপনার উল্লেখিত বাম ঘরানার কর্মীদের তত্ব-অতিনির্ভরশীতা, ‘মুক্ত-মনা’ শব্দটির প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন উন্নাসিক মনোভাবকে দায়ী করবো।
পৃথিবী এগিয়ে গেছে, সে সাথে বাক-স্বাধীনতা, মুক্ত-চিন্তার পথগুলিতেও এসেছে অনেক নতুন কান্ডারী। কিন্তু আজকে বাঙলা ভাষী চিন্তার ক্ষেত্রটিতে নতুন এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাঠামোবদ্ধ আলোচনা, বই রচনার মতো দুরূহ কর্ম খুব বেশি লোকে সম্পাদন করছেন না।
যাদের হাতে এই কাজগুলি আরো বিস্তার লাভ করতে পারতো, তারা দেখছি এক ধরনের অন্ধকার চক্করে আটকে গেছেন। শুধু আটকেই যাননি, সেই টাইম ডাইলেশন ফিল্ডের বাইরে যারা দ্রুতগতির পৃথিবীকে ধারন ও বাঙলা ভাষী অঞ্চলে আনবার জন্য সচেষ্ট হয়েছেন, তাদের বরঞ্চ শত্রুজ্ঞাণ করছেন।
এই হঠকারী আচরন আরো জন্ম দিয়েছে তথাকথিত ‘ধর্মবিদ্বেষী’ শব্দ, এর অপব্যবহারকারী এক শ্রেণীর মোল্লা, মাতবর, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীর। ওহাবী, মউদুদী, ইত্যাদি কু-মতবাদের হাতে বাউল কিংবা সুফীদের নির্যাতনের পরিবেশ সৃষ্টিতে ওই ধর্ম তোষণের হঠকারিতাই মুখ্য হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।
বাসি তত্বে আমাদের ‘সেইরকম’ বুৎপত্তি না দেখা গেলে সরাসরি মুর্খ গাল দেয়া, আমরা কি বলতে চাইছি, তা বোঝার কোন প্রকার চেষ্টা না করে মোল্লাদের সাথে গলা মিলিয়ে মুক্ত-মনাদের ধর্মবিদ্বেষী তকমা দিয়ে এক ধরনের হীন করবার অপচেষ্টা কিন্তু আমরা বামদের বর্তমান তরুণ প্রজন্মটির অনেকের কাছ থেকেই দেখেছি।
অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে, কিন্তু যে প্রজন্মটি বড়ো হয়েছে সত্তর, আশি, নব্বইয়ের দশকে, যারা আগের বাম-প্রজন্মের বই পড়ে ঋদ্ধ হয়েছেন, সেই বইগুলি, সেই চিন্তার ধারাটির কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এসে এক ধরনের অপমৃত্যু হয়েছে। চিন্তা আটকে গেছে বদ্ধতায়।
আসিফ সহ অন্য আরেকটি প্রজন্ম একই সাথে বেড়ে উঠেছিলো, যারা বিজ্ঞাণকে প্রামান্য মনে করে, যারা যুক্তিকে প্রয়োজনীয় মনে করে, যারা ধর্মের কোন প্রকার উপযোগিতা দেখতে পায় না। এই দলটিকে আপনারা, মানে প্রাচীন বাম ঘরানার জনগন প্রথমে মনে করলেন ফুট সোলজার, তারপরে যখন দেখলেন আপনাদের ভাষার সাথে তাদের বিপুল পার্থক্য, উদ্দেশ্যে মিল থাকলেও তাদের আপনার ত্যজ্য করলেন। আজকের বাংলাদেশে সেকুলার তকমাধারী আওয়ামী মুসলিম লীগ আপনাদের নীরবতাকেই সন্মতি ধরে নিয়ে ৫৭ ধারা বলবৎ করবার সাহস দেখাতে পারে। অথচ প্রগতিশীলতার ঝান্ডাধারী হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে আপনাদেরই কিন্তু মাঠে আগুন লাগিয়ে দেবার কথা ছিলো। কিন্তু ওইযে, পুঁথিপড়োতা, বাকস্বাধীনতা ধর্মকে লাথি দেয়, তাতে ধর্মচাড়ালের শিকার নিরীহ মুমিন ক্ষেপে ওঠে বলে আপনাদের একটা ভয় রয়েছে, তার বলি হয়ে গেলেন আপনারা।
অথচ চোখের সামনেই দেখতে পেলেন, ধর্ম নিয়ে চিৎকার করছে শুধুমাত্র মোল্লা, তাদের ফুট সোলজার মাদ্রাসার দরিদ্র কিশোরেরা, যাদের ভয় দেখিয়ে আনা হয়েছিলো টুপির কার্পেট তৈরিতে।
যাহোক, আপনার মতো আমারও কথা একটু ছেতরে গেলো। বন্ধু কে, আর শত্রু কে, তা যতোদিন আমরা না চিনবো, আমাদের নিজস্ব ন্যারেটিভ আমরা যতোদিন না নিজেরা লিখবো, ততোদিন লেনিন সে তুং কিংবা মোহাম্মদের ন্যারেটিভেই আমাদের চলতে হবে।
আর এতোদিনে নিশ্চয়ই আমরা জেনে গেছি, এইসব আমাদানীকৃত ন্যারেটিভ কোন কাজে তো আসেই না, লাভ হয় শুধু রাজনীতিব্যবসায়ীদের।
[ আপনার চেষ্টা বানানটা দুইবার চেস্টা হয়ে গেছে। ]