ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড সিরিয়া (আইএসআইএস) বর্তমানে কেবলমাত্র ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাদের দখলকৃত ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুলের আল-নুরি মসজিদে রমজানের প্রথম শুক্রবার মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল-বাগদাদী। জুমার নামাজের খুতবায় নিজেকে স্বঘোষিত ইসলামি রাষ্ট্রের খলিফা এবং ইসলাম ধর্মের শেষ নবীর বংশধর দাবী করে সকল মুসলমানকে তাকে অনুসরণ করার আহবান জানান। খুতবার ভিডিও চিত্র প্রকাশের আগ পর্যন্ত বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে অর্থ সম্পদের মালিক এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে তথ্য ছিলো খুব সামান্য। ইসলামী ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী আবু বকর আল-কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২০০৫-২০০৯ সাল পর্যন্ত ইরাকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রনাধীন কারাগারে বন্দি ছিলেন [১]। ২০০৯ সালে মুক্তি পাবার সময়ে তিনি বিচারকদের নিউইয়র্কে আবার আবার দেখা হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন। গত পাঁচ বছরে আবু-বকরের দেখা না মিললেও তার প্রতিষ্ঠিত জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের অকল্পনীয় সন্ত্রাস, আত্মঘাতি হামলা, সাধারণ জনগন হত্যা, নারী-শিশু হত্যা, নির্যাতন, অগুনতি গাড়ি বোমা হামলার জন্য শিরোনাম হয়েছে বারবার। ২০১০ সালের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবু বকরকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং তার সন্ধান কিংবা তথ্যদাতার জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে [২]। দীর্ঘদিন নেতার দেখা না মেলায় এবং জঙ্গি দমনে নিয়োজিত সরকারী বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মনোবল চাঙ্গা করতে অল্প কিছুদিন আগেই ইরাক সরকার ঘোষণা করে, আনবার প্রদেশে সরকারী বাহিনীর হামলায় আবু বকর মারাত্মক আহত হয়ে সিরিয়ায় পালিয়ে গেছেন। আত্মবিশ্বাসে ছাই দিতেই হয়তো স্বশরীরে ইরাকের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে হাজির হয়ে আবু বকর বললেন- ‘দীর্ঘদিনের ধর্মযুদ্ধ এবং প্রতিক্ষার পর আল্লাহ মুজাহিদিনদের জয়ী করেছেন… যোদ্ধারা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেছে এবং খলিফার হাতে রাষ্ট্রকে সমর্পণ করেছে’। আইএসআইএস কর্তৃক রমজানের প্রথমদিন মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণার ঠিক পাঁচ দিন পর নিজেকে সেই প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের খলিফা দাবী করে আবু বকর বিশ্বব্যাপী জিহাদের আহবান জানিয়ে বলেন [৩] –
এই মহান রমজান মাসের ডাক শোনো, হে আল্লাহর বান্দারা! যুদ্ধ শুধু করো। এই সেই মাস যে মাসে রাসুল (সঃ) তার সেনাবাহিনীকে আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে বলেছিলেন, যে মাসে তিনি যুদ্ধ শুরু করেছিলেন বহুশ্বেরবাদীদের বিরুদ্ধে। আল্লাহকে ভয় করো, হে আল্লাহর বান্দারা!
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি এবং নিউইয়র্কে আত্মঘাতি বিমান হামলা চালায় ওসামা বিন লাদেনের আল-কায়েদা জঙ্গি গোষ্ঠী। স্মরণ কালের অন্যতম ভয়াবহ সেই হামলায় নিহত হয় তিন হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ, ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় দশ বিলিয়ন ডলার সম্পদের। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সবাইকে অবাক করে দিয়ে, ২০০৩ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে এবং সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনে তার মিত্রদের নিয়ে তেলসমৃদ্ধ ইরাক আক্রমণ করে। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরাকের জনসংখ্যার বিশ শতাংশ সুন্নী মুসলমান। সাদ্দাম হোসেন ছিলেন এই সুন্নী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং তার উপর ভর করেই ইরাকের ক্ষমতার কাছাকাছি ছিলো সুন্নীরা। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রবাহিনী কর্তৃক সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর শিয়া জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন পর ইরাকের রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিজেদের অধিকার লাভ করে। আমেরিকা এবং এর মিত্র বাহিনীর ইরাক আক্রমণের সময় বলেছিলো, তারা ইরাকের জনগনকে তাদের দেশ ফিরিয়ে দিতে এসেছে। দেশ ফিরিয়ে দেওয়া শেষে তারা যখন ইরাক ছাড়লো তখন ইরাক বিশ্বের সবচেয়ে বড় জঙ্গি প্রজননক্ষেত্র।
২০০৩ সালে আমেরিকা এবং তার মিত্রবাহিনী যখন ইরাক আক্রমণ করে সেই সময়টায় বাগদাদের দক্ষিণে এক মসজিদের ইমাম ছিলেন আবু বকর। তখন থেকেই সুন্নী মতালম্বী বিভিন্ন ইসলামী জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত আবু বকর তৎকালীন ‘ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক’ এর মজলিসে সুরার সদস্য মনোনীত হন। এরপর প্রায় পাঁচ বছর বন্দীত্ব শেষে ২০১০ সালে আবার আত্মপ্রকাশ করেন আবু-বকর, এবার আল-কায়েদার ইরাকের প্রধান হিসেবে [৪]। ২০১০ সালের ষোলই মে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরাকের সরকারী বাহিনীর সম্মিলিত হামলায় তৎকালীন ইরাকের আল-কায়েদা প্রধান আবু ওমর আল বাগবাদী নিহত হলে তার স্থলাভিষিক্ত হন আবু-বকর। এই ভয়ংকর মানুষটির যোগদানে ইরাকে আল-কায়েদা স্মরণকালের ভয়াবহ সব হামলা চালানো শুরু করে। আবু বকরের নেতৃত্বে ২০১১ সালের মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাসেই ২৩ বার হামলা চালানো হয় ইরাকের বিভিন্ন স্থানে। একই বছরের মে মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন কমান্ডোদের হামলায় ওসামা বিন লাদেন নিহত হলে আবু-বকর আল বাগদাদী প্রতিবাদ স্বরুপ ইরাকের হিলা সিটিতে হামলা চালিয়ে ২৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। পরের মাসে তার সংগঠন আইএসআইএস লাদেনকে হত্যার জন্য ইরাকে কমপক্ষে একশটি হামলা চালানোর জন্য তাদের ওয়েবসাইটে ডাক দেয় [৫]। ১৫ ই আগষ্ট আইএসআইএস জঙ্গিদের আত্মঘাতি বোমা হামলায় মসুলে নিহত হয় সত্তর জন সাধারণ মানুষ। ডিসেম্বরে মার্কিন বাহিনী ইরাক ত্যাগ করলে আইএসআইএস গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চলে তেষট্টিজনকে হত্যা করে।
আরব বসন্তের পর থেকে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের নেতৃত্বে যে গৃহযুদ্ধ চলছে সে যুদ্ধে সংগঠনকে নিয়ে জড়িয়ে পড়েন আবু বকর আল বাগদাদী। ২০১৩ এর এপ্রিলে আবু বকর ঘোষণা করেন সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা জাবাত-আল-নুসরা তার সংগঠন আইএসআইএসের সাথে একীভূত হয়েছে এবং এখন থেকে তারাই এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিবে। যদিও আল-নুসরার সংশ্লিষ্টরা এই দাবীকে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু থেমে থাকেন নি আবু বকর। সিরিয়ায় আইএসআইস দখল করে নিতে থাকে একের পর এক উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর। এমনই এক শহর রাক্কা। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসলামী রাষ্ট্রের জঙ্গিদের দখলে থাকা রাক্কার সংখ্যালঘু শিয়া এবং খ্রিস্টান বাসিন্দাদের নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের জিহাদিরা তিনটি সুযোগ দেয়।
এক. তাদের জঙ্গিদের মতো ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে।
দুই. যদি তা না হয় তাহলে জিজিয়া কর প্রদান করতে হবে। নগদ অর্থে এই কর দেওয়া যাবে না, দেওয়া যাবে কেবলমাত্র সোনায়।
তিন. উপরের দুইটি কোনোটি পছন্দ না হলে তাদের সবাইকে হত্যা করা হবে।
যেকোনো শহর দখল করেই ইসলামী রাষ্ট্রের জঙ্গিরা সেখানে কালবিলম্ব না করে শরিয়া আইন চালু করে। একই সাথে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল করে নিজেদের দপ্তর, শরিয়া আদালত স্থাপন করে। অন্ধকারের সেপাইরা সবখানেই উড়িয়ে দেয় তাদের কালো পতাকা। সিরিয়ার সরকার বিরোধী যুদ্ধ জড়িত আল-কায়েদা থেকে শুরু করে সবাই খুব দ্রুত বুঝতে পারে, আইএসআইএস এর সিরিয়ায় আগমন প্রেসিডেন্ট আসাদকে উৎক্ষেপনে বিরোধী শিবিরকে সহায়তা করার জন্য নয় বরঞ্চ তারা সিরিয়ায় এসেছে সিরিয়া দখল করার জন্য। দখলকৃত শহরগুলোর বাসিন্দাদের জনসমুক্ষে হত্যা, ক্রুসিফাই করে ঝুলিয়ে রাখা থেকে শুরু করে হেনো কোনো মনবতা বিরোধী অপরাধ নেই যা দখলদাররা করছে না। শহরগুলোতে আইএসআইএসের মর্মান্তিক নৃশংসতা দেখে আল-কায়েদা সংগঠনটিকে অতিরিক্ত সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে!!
সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলের বেশকিছু শহর নিজেদের দখলে নিয়ে সেই শহরগুলোতে কেন্দ্র করে আবার সুসংগঠিত হয় আইএসআইএস। জুন নাগাদ অস্ত্রসস্ত্রে সুসজ্জিত তিন থেকে চার হাজার জিহাদি সিরিয়া থেকে ইরাকে আক্রমণ চালানো শুরু করে তাদের ভৌগলিক সীমা আরও বিস্তৃত করার উদ্দেশ্য। প্রধান লক্ষ রাজধানী বাগদাদ হলেও জঙ্গিরা প্রথমে সিরিয়া এবং বাগদাদের মধ্যবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর মসুল নিজেদের দখলে নেবার জন্য ধীরে ধীরে আগাতে থাকে। ৫ই জুন সামারা এবং ৬ই জুন পূর্ণ শক্তি নিয়ে তারা মসুল আক্রমণ করে। ইরাকের সরকারী বাহিনীকে দাজ্জালের সেনাবাহিনী আখ্যা দিয়ে ইসলামিক রাষ্ট্রের জিহাদিরা ঘোষণা করে যারা তাদের বিরুদ্ধে যাবে তাদের সবাইকে হত্যা করা হবে। ৭ তারিখ তারা রামাদির আনবার বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১৩০০ শিক্ষার্থীকে বন্দী করে। ইরাকি সেনাবাহিনীর তৎপরতায় যাদের পরবর্তীতে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। আইএসআইএস এর ভয়ে ভীত হয়ে ইরাকি বাহিনী মসুলকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় এবং শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। দুই দিন পরে অর্থাৎ ৯ই জুন, মসুল জিহাদিদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে [৬]। শহরের সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান, বিমানবন্দর থেকে শুরু গুরুত্বপূর্ণ সকল স্থাপনায় টানিয়ে দেওয়া হয় আইএসআইএস এর কালো পতাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে হামলা চালিয়ে প্রায় ৪২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ লুট করে নেওয়া হয় [৭]। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সেখানেও শরিয়া আইন জারি করে বাসিন্দাদের হত্যা, নির্যাতন শুরু করে দেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে ভিন্ন জায়গায় আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়। তেলসমৃদ্ধ মসুল দখলের ফলে রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক বলে যাওয়া জঙ্গি দল খুব দ্রুতই ইরাকের বাকি তেল খনিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিবে এমনটাই সম্ভাবনা। মূল লক্ষ্য বাগদাদের কথা ভুলে না গিয়ে জঙ্গিরা তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে। ১৫ তারিখ জঙ্গিরা নিনেভা প্রদেশের তাল আফার শহরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে আটক হয় ১৭০০ জন ইরাকি সেনা যাদের প্রত্যেককে জিহাদিরা হত্যা করে তার ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। সিরিয়া এবং ইরাক মিলিয়ে দখল নেওয়া বিশাল অঞ্চলকে নিয়ে নতুন ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয় একই মাসের ২৯ তারিখ। অর্থাৎ এক মাসেরও কম সময়ে, তেমন কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই আইএসআইএস ইরাকের আটত্রিশ হাজার বর্গ কিলোমিটার অংশ দখল করে নিতে সমর্থ হয়।
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আইএসআইএসকে লড়তে হচ্ছে ইরাকি সেনাবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, শহর-গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সহ অনেক ধরণের ফ্রন্টের বিরুদ্ধে। আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত এই বাহিনী প্রথম থেকেই ইসলাম রক্ষার জিহাদের প্রপাগান্ডা চালিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা থেকে বিভিন্ন জিহাদি মানসিকতার মানুষকে আকৃষ্ট করা শুরু করে। কয়েকদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক আইএসআইএসের হয়ে আত্মঘাতি বোমা হামলায় অংশ নেয়। আপাত সুসজ্জিত এই ভয়ংকর সেনাবাহিনীর অর্থায়ন কোথা থেকে হচ্ছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০১৪ সালে তাদের অর্থের উৎস খোঁজার নিমিত্তে প্রায় দুইশ’র অধিক দলিল দস্তাবেজের উপর গবেষণা চালায় একটি বেসরকারি সংস্থা (RAND Corporation)। তাদের প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জঙ্গি সংস্থার বাজেটের পাঁচ ভাগ অর্থ এসেছে আশেপাশের দেশগুলোয় অবস্থিত বিভিন্ন ধনী ব্যক্তির ব্যক্তিগত সহায়তা থেকে। বাকি সব অর্থ জোগানো হয়েছে ইরাক থেকেই। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইরাকের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরণের অপরহণ, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলার মাধ্যমে যে অর্থ সংগ্রহ করা হতো, তার ২০ ভাগ দিয়ে দেওয়া হতো জিহাদি বাহিনীর মূল সমন্বয় সেলকে। সেখান থেকে এই অর্থ আবার বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের দেওয়া হতো যাতে করে হামলা, অপরহণ আরও বৃদ্ধি করে আয় বাড়ানো যায়। ২০১৪ সালের মধ্যভাগে ইরাকি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইএসের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের জিহাদিদের তথ্য পর্যালোচনা করে ঘোষণা করে যে, জঙ্গিদের হাতে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে [৮]- পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত কোনো জঙ্গি গোষ্ঠী রাতারাতি এতো বিপুল সম্পদ অর্জন করতে পারে নি। ব্যাংক লুট, সোনার দোকান লুট, অপহরণ, চাঁদাবাজি ছাড়াও গালফ অঞ্চলের বিভিন্ন নাগরিকের কাছ থেকে জঙ্গিরা আর্থিক অনুদান গ্রহণ করে তাদের সম্পদ ক্রমান্বয়ে আরও বৃদ্ধি করছে। ইরাকের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মালিকি কাতার এবং সৌদি আরবকে জিহাদিদের অর্থায়ন করার অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের দখলে রাখা শহরগুলো থেকেও তারা বিভিন্ন উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করেছে। দখলে থাকা তেল পরিশোধনকেন্দ্রগুলোর তেল সিরিয়া সরকারকেও বিক্রি করেছে আইএসআইএস। ২০১২ সাল থেকেই এই জঙ্গি গোষ্ঠী বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মতো বিভিন্ন হামলা, হত্যায় তাদের বার্ষিক খরচের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে অর্থদাতাদের আকৃষ্ট করার জন্য [৯]। আইএসআইএস এখানেই থেমে থাকবে না সেটা তাদের খুব অল্প সময়ের কর্মকান্ড বিবেচনা করলেই বোঝা যায়। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে তারা রোম পর্যন্ত তাদের খেলাফত বিস্তৃত করার ঘোষণা দিয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে তারা পারঙ্গম। উচ্চমানের ভিডিও, অডিওর মাধ্যমে তারা বিশ্বব্যপি জিহাদের জন্য আহবান জানিয়ে যাচ্ছে, আহবান জানাচ্ছে তাদের ইসলামি রাষ্ট্রকে পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার।
গণমাধ্যমের খবর অনুসরণ করলে অনেকেরই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে ইরাক এবং সিরিয়ায় আইএসআইএস কে কেন্দ্র করে যা হচ্ছে তা কেবলমাত্র জাতিগত সংঘাত। মোটেও কিন্তু তা নয়। যদিও ইসলামি রাষ্ট্রের জঙ্গিরা ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করছে তাদের ভয়াবহ সকল অপকর্ম হালাল করতে কিন্তু তাদের হাতে কেবল খ্রিষ্টান নয়, মারা যাচ্ছে অসংখ্য মুসলমানও। ইরাকে সুন্নী বিভিন্ন আলেমরাও সমগ্র ইরাককে এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অনুরোধ জানাচ্ছেন, অনুরোধ জানাচ্ছেন বৈদেশিক ভাইরাস হতে ইরাককে রক্ষা করার। একই সাথে এই সংঘাতে পশ্চিমা বিশ্বের অবদানও কম নয়। সিরিয়ায় বাশার বিরোধী বিদ্রোহীদের মধ্যে সবচেয়ে সুসংগত শক্তি আল-কায়েদা। সারা পৃথিবীতে আল-কায়েদা নিষিদ্ধ হলেও তারা সিরিয়ায় নিষিদ্ধ নয়, কারণ সেখানে তারা প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। পশ্চিমা বিশ্ব সিরিয়ায় আসাদকে তাড়াতে তাই আল-কায়েদাকেই প্রকারন্তরে অর্থ-অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে আসছে। আইএসআইএস এর দখলে থাকা সিরিয়া এবং ইরাকের সীমান্ত দিয়ে সেসব অস্ত্র সাহায্য চলে আসছে আইএসএসএর হাতে যেগুলো আবার ব্যবহৃত হচ্ছে ইরাকি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যাদের সহায়তা করছে আবার সেই পশ্চিমা বাহিনী। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের যেমন মার্কিনীরা সহায়তা দিচ্ছে ঠিক তেমনি বাশারের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তাকে সহায়তা করছে ইরান, রাশিয়া। অপরদিকে ইরাকে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এক সাথে কাজ করার কথা বলছে ইরান। আইএসআইএস তাই ধর্ম যুদ্ধের কথা বললেও এখানে ধর্মকে পুঁজি করে বিশ্বের বিভিন্ন শক্তি তাদের খেলা খেলছে, প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। পৃথিবী তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে। এমন একটা কঠিন সময়ে হঠাৎ মনে পড়ে যায় মেঘদলের গানের কথা- বল হরি হরি বল, যুদ্ধে যাবো; বিভেদের মন্ত্র স্বর্গ পাবো।
বিভেদের মন্ত্রে স্বর্গ লাভ হয় না। সুন্নীরা যদি শিয়াদের হত্যা করেন, শিয়ারা যদি হত্যা করেন আলোয়াইটসদের, মুসলমানরা যদি হত্যা করে খ্রিষ্টানদের তাহলে কখনই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। কিন্তু পৃথিবীর পরিচালকদের ব্যাংক ব্যালেন্সে ঠিকই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, ইরাক কিংবা সিরিয়া, আইএসআইএস কিংবা আল-কায়েদা সবাই তাদের মানুষ মারার খেলনা দিয়ে শেষ করে দিক সবকিছু। এভাবেই হয়তো একদিন সত্যি সত্যি মানবতার মুক্তি ঘটে যাবে।
তথ্যসূত্র
[১] “Fox’s Pirro: Obama set ISIS leader free in 2009”. PolitiFact.com. Tampa Bay Times. 14 June 2014. Retrieved 20 June 2014. http://www.politifact.com/punditfact/statements/2014/jun/19/jeanine-pirro/foxs-pirro-obama-set-isis-leader-free-2009/
[২] “Terrorist Designation of Ibrahim Awwad Ibrahim Ali al-Badri”. United States Department of State. 4 October 2011. Retrieved 8 October 2011. http://www.webcitation.org/62HxbVjBF
[৩] “BBC News – Profile: Abu Bakr al-Baghdadi”. BBC News. 11 June 2014. http://www.bbc.co.uk/news/world-middle-east-27801676
[৪] “Iraqi Insurgent Group Names New Leaders”. Los Angeles Times. 16 May 2010.
http://atwar.blogs.nytimes.com/2010/05/16/iraqi-insurgent-group-names-new-leaders/?_php=true&_type=blogs&_r=0
[৫] “Terrorist Designation of Ibrahim Awwad Ibrahim Ali al-Badri”. United States Department of State. 4 October 2011.
http://www.webcitation.org/62HxbVjBF
[৬] “Sunni Militants Drive Iraqi Army Out of Mosul”. The New York Times. 10 June 2014. http://www.nytimes.com/2014/06/11/world/middleeast/militants-in-mosul.html?_r=0
[৭] “Mosul Bank Robbery Isn’t The Only Thing Funding ISIS”. IBT. 13 June 2014. http://www.ibtimes.com/mosul-bank-robbery-isnt-only-thing-funding-isis-1601124
[৮] “How an arrest in Iraq revealed Isis’s $2bn jihadist network”. The Guardian. 15 June 2014.
http://www.theguardian.com/world/2014/jun/15/iraq-isis-arrest-jihadists-wealth-power
[৯] “Records show how Iraqi extremists withstood U.S. anti-terror efforts”. McClatchy News Service. 23 June 2014.
http://www.mcclatchydc.com/2014/06/23/231223/records-show-how-iraqi-extremists.html
একটা কথা কেউ বলল না , আই এস কে মার্কিন সেনার পোশাক সরবরাহ করছে কে ? কুয়েত যদি করে তো কুয়েত কোথা থেকে পাচ্ছে ? তবে কি আমেরিকা কুয়েতকে পোশাক সাপ্লাই দিচ্ছে ?
আই এসের অর্থের যোগান দিচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলির ধনী ব্যক্তিরা : এ থেকে কি বেরিয়ে আসে ? এই ধনী ব্যক্তিরা নিশ্চয় ব্যবসায়ী , এরা বাজার দখলের জন্য আই এস কে ব্যবহার করছে | আমেরিকার পাশাপাশি এরাও খেলতে নেমেছে |
আল কায়দা সিরিয়ায় নিষিদ্ধ নয় অথচ বিশ্বে নিষিদ্ধ : কেন ? এই নিষিদ্ধটি কি আমেরিকা করেছিল ? তাহলে সিরিয়ায় যতদিন মার্কিন স্বার্থ থাকবে ততদিন আল কায়দা ওই দেশে নিষিদ্ধ হবে না এমন প্রেডিকশন করাই যেতে পারে | অর্থাৎ বাসরের পতনের পরই সিরিয়ায় আল কায়দা নিষিদ্ধ হবে |
এই প্রেডিকশন যদি সত্যি হয় তাহলে দ্বিধাহীন ভাবে প্রমান হয়ে যাবে যে আমেরিকা মোটেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না বরং সন্ত্রাসকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে |
আই এসের অর্থভান্ডার কি শুধু মধ্য প্রাচ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ? না আমেরিকার অংশটা লুকিয়ে রাখা হচ্ছে ?
সব মিলিয়ে বলা যায় যে ধর্মকে এখন অনেকে স্বার্থসিদ্ধির জন্যই ব্যবহার করে | এইসব লোকেরা ধর্মের নামাবলী গায়ে নাস্তিক | এরা বড় ভয়ঙ্কর নাস্তিক |
মন্তব্য…
লেখকদের কাছে আমার মত পাঠকদের একটাই চাওয়া যে, নিরপেক্ষ এবং সঠিক তথ্যপ্রমাণ সহ আরো কিছু লিখতে থাকেন । যাতে করে আমরা ISIS সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারি । #পুরোপুরি না জেনে কারো সম্পর্কে মন্তব্য করা ইসলাম সমর্থন করে না, তাই আমি এদের সম্পর্কে পুরোপুরি জানি না বিধায় আমার মতামত ব্যক্ত করতে ব্যর্থ হলাম ।।।
খুব চমতকার একটা লেখা পড়লাম
অবাক হবার কিছু নেই। এদেশ যখন হেফাজতের উত্থান ঘটে, কোটি কোটি মুমিন তার পক্ষে দাড়িয়ে ছিল। এখন হেফজতের নানা কুকির্তির কথা ফাস হচ্ছে। মুমিনরাও কেমন উদাস হয়ে গেছে। যেন হেফাজত নামটি তারা জিবনে শোনেনি!
মধ্যপ্রচ্যে নতুন খলিফার আগমনে এই মুমিন গন আসলে ভয়াবহ খুশী, তা সে যতই খুন খারাবী করুক না কেন। শেষে তারা ব্যার্থ হলে, তখন না হয় বলা যাবে- ইহা সহী ইসলাম নহে!
@মুরশেদ, একদম ঠিক বলেছেন।
নতুন খলিফার আবির্ভাবে আমাদের দেশে তেমন কোন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কথা শুনি নি। বড় বড় আলেম ওলেমারাও তেমন কিছু বলেননি।এই নতুন খলিফার উত্থানে,আমরা কি তাহলে খুশি?
ISIS এর আমেরিকান পোষাক ও অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে কুয়েত।ইরান এবং সিরিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য তৈরি ISIS এর মূল অর্থের যোগানদাতারা মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার মিত্ররা।মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোর রাজনৈতিক কূট চালের খেলা খেলতে খেলতে ISIS এর উৎপত্তি।আর এই খেলার মাঠ হল ইসলাম।এটাকে ইচ্ছেমত ব্যাবহার করা যায়।
@প্রাক্তন আঁধারে, আমাদের এখানে প্রতিক্রিয়া যদিও হয় সেটা হয়তো হবে- আমরা সবাই আইএসআইএস, বাংলা হবে ইসলামিক খেলাফত টাইপ কিছু।
সুন্দর আর তথ্যবহুল একটি লেখা। ধন্যবাদ।
ইরাক প্রসঙ্গে ৯৯.৯৯% সুন্নি মুসলমানরা বর্তমানে নিরব; কারন তারা মনে প্রানে আইএসআইএস কে সমর্থন করে।
ইরাক প্রসঙ্গে সব সময় যে তারা নিরব ছিল এমনটা কিন্তু নয়। আমেরিকা যখন ইরাক আক্রমণ করেছিল মিত্রবাহিনী হিসেবে ইরাকের জনগনে সাদ্দাম হোসেনের কালো হাত থেকে মুক্ত করতে তখন আজকে যারা নীরব তারাই কিন্তু প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল।
দিন যত যাবে ইসলামী জঙ্গিবাদ তত বেশী মাথাচাড়া দেবে।
কারন তাদের কাছে আছে অবিকৃত মহাগ্রন্থ; মানবতার একমাত্র সমাধান!!!
@এম এস নিলয়, সুন্নী মুসলমানরা তখনই সরব হয় যখন সুন্নীদের উপর হামলা হয় কোথাও। অপরদিকে আল-কায়েদা, আইএসআইএস এদের কর্মকান্ডের কথা এরা ‘কখনই শুনে না’, ‘দেখে না’। কি আর করা!
তানভীরুল ইসলামের উদ্দেশ্যে বলছি———
ধর্ম
Attribute (এ্যাট্রিবিউট)
‘المهاراة’ (মাহারাত)
এটি রূপকসাহিত্যের বৈক্তিকসদস্য সারণির রূপকপরিবারের অন্যতম একটি ‘রূপকপরিভাষা’। এর মূলকসদস্য ‘স্বভাব’ এবং ছদ্মনামপরিভাষা ‘প্রকৃতি’।
ধর্ম (রূপ)বি স্বভাব, প্রকৃতি, গুণ, পুণ্য, মনুষ্যত্ব, নিয়ম, রীতি, সাধনপথ, সতিত্ব, সৎকর্ম, পুণ্যকর্ম, সদাচার, কর্তব্যকর্ম, প্রত্যেক জীব বা বস্তুর নিজস্ব গুণ, Attribute (এ্যাট্রিবিউট), ‘المهاراة’ (মাহারাত)/ religion (রিলিজন), ‘ﺪﻴﻦ’ (দিন) (প্র) ১.মানুষের কর্তব্য অকর্তব্য সম্বন্ধে জ্ঞান ২.বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শাস্ত্র নির্দিষ্ট বিধি-বিধান ৩.শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন ও সমাজ শাসনমূলক মতবাদ ৪.সাধুশাস্ত্র হতে উৎপত্তি যুগোপযোগী সামাজিক শাসনমূলক সংস্কার বিশেষ (দেপ্র) এটি রূপকসাহিত্যের বৈক্তিকসদস্য সারণির ‘স্বভাব’ পরিবারের ‘রূপকপরিভাষা’ ও রূপকসাহিত্যের একটি দৈবিকা বা প্রতীতি বিশেষ (সংজ্ঞা) ১.কোন বস্তুর গুণাগুণকে ধর্ম বলা হয় ২.নৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ সংস্কারকৃত মতবাদকে ধর্ম বলা হয় (ছনা)বি প্রকৃতি (রূ)বি ধর্ম (দেত)বি স্বভাব।
(প্রপক)
১. ব্রহ্মার দক্ষিণ অঙ্গ হতে ধর্ম উৎপন্ন হয়। বরাহপুরাণে কথিত আছে যে, ব্রহ্মা সৃষ্টি করার মানসে যখন গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হন, তখন তাঁর দক্ষিণ অঙ্গ হতে এক পুরুষের (ধর্ম) আবির্ভাব ঘটে। ব্রহ্মা তখন তাঁকে বলেন- “তুমি চতুষ্পদ ও বৃষভাকৃতি। তুমি বড় হয়ে প্রজাপালন করো।” তখন ধর্ম সত্যযুগে চতুষ্পদ, ত্রেতায় ত্রিপদ, দ্বাপরে দ্বিপদ এবং কলিতে একপদ হয়ে ব্রাহ্মণদের সম্পূর্ণরূপে, ক্ষত্রিয়দের তিনভাগ, বৈশ্যদের দু’ভাগ ও শূদ্রদের একভাগ দিয়ে রক্ষা ও পালন করতে আরম্ভ করেন। গুণ, দ্রব্য, ক্রিয়া ও জাতি এ চারটি শাস্ত্রীয় মতবাদের পদ। বেদে এঁর নাম তৃশৃঙ্গ। এঁর মাথা দু’টি ও হাত সাতটি। বামনপুরাণ মতে ধর্মের স্ত্রী অহিংসা। এঁর গর্ভে চারটি পুত্র জন্মগ্রহণ করে যথা- ১.সন্যকার, ২.সনাতন, ৩.সনক ও ৪.সনন্দ। অন্যান্য পুরাণে এঁরা ব্রহ্মার মানসপুত্র বলে কথিত আছে।
২. মহাতেজস্বী একজন রাজা। এঁর কন্যার নাম ধর্মব্রতা।
Orthodoxly [অর্থডোক্সলি] বি সনাতন, অনন্ত, চিরন্তন, চিরস্থায়ী, বিশ্বজনীন, শাশ্বত, সার্বজনীন, সর্বজন বিধিত, Catholic, eternal, never-dying, ‘أرثوذكسي’ (উর্সুজুক্সি), ‘الأرثوذكس’ (আলউর্সুজুক্স) {ই}
ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি
(A highly important quotations of attribute)
“সবাই কী আর হবেরে মন, ধর্মপরায়ণ, যার যার কর্ম সে সে করে, তোমার বলা অকারণ।” (পবিত্র লালন- ৯১৫/১)।
ধর্মের কয়েকটি সাধারণ উদ্ধৃতি
(Some ordinary quotations of attribute)
১. “কোন্ সাধনে শমনজ্বালা যায়, ধর্মাধর্ম বেদের মর্ম, শমনের অধিকার তায়।” (পবিত্র লালন- ৩৬৯/১)।
২. “ধর্মবাজার মিলাইছে নিরঞ্জনে, এক কানায় এক বোবায়, ভবের হাটে করে বিকিকিনে।” (পবিত্র লালন- ৫৬৭/১)।
৩. “ধর্মাধর্ম নাই যে বিচার, কৃষ্ণসুখে সুখ গোপীকার, হয় যে নিরন্তরি, তাইত দয়াময়- গোপীরে সদায়, মনের ভ্রমে জানতে নারি।” (পবিত্র লালন- ৫৫৮/৩)।
৪. “ধর্মাধর্ম বলতে নাই, শুধু প্রেমের গান গায়, নাই লজ্জা ভয়, জাতির বোল রাখল না সে, সেতো করল একাকারময়।” (পবিত্র লালন- ৪২৩/২)।
৫. “ধর্মাধর্ম সব নিজের কাছে, জানা যায় শাস্ত্র যেচে, লালন কয় আমার ভুল হয়েছে, ভেবে দেখি তাই।” (পবিত্র লালন- ৬৩৭/৪)।
৬. “না মানে সে ধর্মাধর্ম, যার হয়েছে বিচার সাম্য, লালন কয় সাঁই মহামান্য, তবে মানবকরণ সারা।” (পবিত্র লালন- ১৮৫/৪)।
৭. “প্রেম কী সামান্যেতে রাখা যায়, প্রেমে মজলে ধর্মাধর্ম ছাড়তে হয়।” (পবিত্র লালন- ৬৪৩/১)।
৮. “প্রেম পিরিতির এমনি ধারা, এক প্রেমে দু’জন মরা, ধর্মাধর্ম চায় না তারা, লালন বলে প্রেমের রীতি তাই।” (পবিত্র লালন- ৬৪৩/৪)।
৯. “বড়াই করে কপাল পোড়া, বুঝে না ধর্মীয়মতবাদ আগাগোড়া” (বলন তত্ত্বাবলী- ২০৪)।
১০. “শাস্ত্রীয় মতবাদ গোত্র জাতির, তুলবে না কেউ জিকির, কেন্দে বলে লালন ফকির, কেবা দেখিয়ে দিবে” (পবিত্র লালন- ২২৮/৪)।
১১. “সবল দেবধর্ম আমার বৈষ্টমী, ইষ্ট ছাড়া কষ্ট পাই, এঁটে দেয়া নষ্টামি।” (পবিত্র লালন- ৯১২/১)।
ধর্মের সংজ্ঞা (Definition of attribute)
কোন কিছুর গুণাগুণকে স্বভাব বা ধর্ম বলে।
ধর্মের আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theosophical definition of attribute)
নৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ সংস্কারকৃত মতবাদকে ধর্ম বলে।
ধর্মের প্রকারভেদ (Classification of attribute)
ধর্ম দুই প্রকার। যথা- ১.সনাতনী ধর্ম ও ২.কৃত্রিমত ধর্ম।
১. সনাতনী ধর্ম (Orthodoxly attribute)
প্রকৃতির নিয়মাবলিকে সনাতনী ধর্ম বলে।
২. কৃত্রিম ধর্ম (Pretended attribute)
সামাজিক, মানবিক, প্রাকৃতিক, দার্শনিক ও নৈতিকতার ওপর নির্মিত মনগড়া সংস্কারাদিকে কৃত্রিম ধর্ম বলে।
ধর্মের পরিচয় (Identity of attribute)
এটি রূপকসাহিত্যের বৈক্তিকসদস্য সারণির ‘স্বভাব’ পরিবারের অধীন একটি ‘রূপকপরিভাষা’ বিশেষ। কোন বস্তুর গুণাগুণকে ধর্ম বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে ধর্ম বলে পুরাণের একটি চরিত্র ভিন্ন কিছুই নেই। ধর্ম নামে যা আছে তা হলো শাস্ত্রীয় মতবাদ। শাস্ত্রীয় মতবাদাদিকেই সাধারণমানুষ ধর্ম নামে ডাকাডাকি করে থাকেন। সামাজিক, মানবিক, প্রাকৃতিক, দার্শনিক ও নৈতিকতার ওপর নির্মিত মনগড়া সংস্কাররূপ এসব শাস্ত্রীয় মতবাদ সারাবিশ্বে প্রায় ২,৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। যেমন- হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট ও ইসলাম। এবং প্রত্যেক শাস্ত্রীয় মতবাদের অনুকূলে আবার রয়েছে কয়েক সহস্র করে পরম্পরা মতবাদ। শাস্ত্রীয় মতবাদকে ইংরেজিতে religion (রিলিজন) এবং আরবিতে ‘ﺪﻴﻦ’ (দিন) বলা হয়।
শাস্ত্রীয় মতবাদের পরিচয় (Identity of schismatic doctrine)
পূর্বকাল হতেই দেখা যায় একদল লোক শাস্ত্রীয় মতবাদকে অত্যধিক প্রাধান্য দেয় আবার একদল লোক একেবারেই গ্রহণ করেন না। যারা কোন শাস্ত্রীয় মতবাদকে প্রাধান্য দেন না তারা প্রায়ই বলে থাকেন শাস্ত্রীয় মতবাদ বলতে কিছুই নেই। তারা এও বলেন যে- “Religion is nothing only blindly faithful” (রিলিজন ইজ নাথিং অনলি ব্লাই-লি ফেতফুল)” অর্থ- “শাস্ত্রীয় মতবাদ কিছুই না কেবল অন্ধবিশ্বাস।” প্রকৃত ব্যাপারটিও তাই। ব্যক্তি বিশেষের মনগড়া মতামত সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়াকেই ধর্ম বলা হয়। আর এ ধর্মকেই শাস্ত্রীয় মতবাদ বলা হয়। তবে এসব শাস্ত্রীয় মতবাদ আধুনিকযুগের পূর্বে পরিবার ও সমাজে শান্তি ও শৃংখলা বিধানের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রয়োজন ছিল। তখন রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল না। তাই শাস্ত্রীয় মতবাদ অনেক উপকারী ছিল। কিন্তু বর্তমানে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত থাকায় মানুষ আর অন্ধবিশ্বাসের অধীনতা স্বীকার করতে চায় না।
এ ছাড়াও বর্তমানে একই রাষ্ট্রে শাস্ত্রীয় বিধান ও রাষ্ট্রীয় বিধান উভয় একসঙ্গে চালু রাখা কোন মতেই সম্ভব নয়। যে কোন একটি বিধান মান্য করা সবার একান্ত প্রয়োজন। উল্লেখ্য শাস্ত্রীয় বিধানাদি প্রায় রূপকার্থে নির্মিত কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিধানাদি বাস্তবভাবে নির্মিত। এ জন্য শাস্ত্রীয় বিধান কখনই রাষ্ট্রীয় বিধানের তুল্য হতে পারে না। তাছাড়া শাস্ত্রীয় বিধান কেবল একটি গোত্রের জন্য নির্মিত কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিধান রাষ্ট্রের সর্ব শ্রেণির জনগণের জন্যই সমান অধিকার নিশ্চিত রেখে নির্মিত। বিগত আদিমযুগ ও মধ্যযুগেই শাস্ত্রীয় বিধানের অধিক অধিক প্রয়োজন ও গুরুত্ব ছিল। এর অন্যতম কারণ ছিল তখন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় বিধান উভয়ই ছিল না। আধুনিক যুগের প্রথমদিক হতে রাষ্ট্র গঠন ও রাষ্ট্রীয় বিধান নির্মাণ করা আরম্ভ হয়। তখন হতেই শাস্ত্রীয় বিধানের প্রয়োজনও ক্রমে ক্রমে শিথিল হতে আরম্ভ করে। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই শাস্ত্রীয় বিধানের তেমন ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না।
অন্ধবিশ্বাসের বিষবৃক্ষ রোপণ
(Transplanting the venom-tree of fanaticism)
সর্ব প্রথমে রূপকসাহিত্য শিল্পের সূত্রাদির দ্বারা বিশ্ববিখ্যাত একজন রূপকার কর্তৃক একটি রূপকসাহিত্য নির্মিত হয়। তারপর কয়েকশত বছর বা কয়েক শতাব্দি অতিবাহিত হয়। অতঃপর আধ্যাত্মিকজ্ঞান বা আত্মতত্ত্ব জ্ঞানহীন পণ্ডিতব্যক্তি অতিব পুণ্যের কাজ মনে করে উক্ত রূপক সাহিত্যটির আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা আত্মতত্ত্বভিত্তিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ব্যতীত কেবল বাহ্য প্রকৃতিনির্ভর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রণয়ন করা আরম্ভ করেন। অন্ধবিশ্বাসপ্রবণ মূঢ় ব্যক্তিরা দিব্যজ্ঞানের দৈন্যতার জন্য রূপকসাহিত্যের প্রপকাদির মধ্যে ব্যবহৃত দৈবিকা বা প্রতীতিদের হঠাৎ করে ঐশিদূত বা দৈবদূত বা ঐশিমহামানব বা স্বর্গীয়াবতার বলে আখ্যায়িত করতে আরম্ভ করেন। তারপর নীতি নৈতিকতাপূর্ণ ও আত্মশুদ্ধির পরম শিক্ষামূলক প্রপকাদিকে চমৎকার বলে এবং দৈবিকা বা প্রতীতিদের চরিত্রকে বাস্তব জীবনাদর্শ বলে প্রচার প্রসার করতে বা লেখালেখি করতে আরম্ভ করেন।
পরবর্তিকালে তার পাঠক বা অনুসারিরাও প্রপকাদির মধ্যে চরিত্ররূপে ব্যবহৃত প্রতীতিদেরকে স্বর্গীয়দূত, প্রপকাদিকে স্বর্গীয়দূতগণের ঘটনাবহুল চমৎকার এবং প্রপকাদির মধ্যে বর্ণিত ঘটনাদিকে প্রতীতিগণের বাস্তব জীবনাদর্শ বলে অন্ধবিশ্বাস করতে আরম্ভ করে। এভাবেই সর্ব প্রথম অন্ধবিশ্বাসরূপ বিষবৃক্ষের বীজ রোপিত হয়। অতঃপর দৈবিকা বা প্রতীতিগণের প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে তার অনুসারিরা প্রপকাদির প্রচার ও প্রসার করা অনেক পুণ্যের কাজ বলে মনে করেন। এভাবেই সুসংগঠিত হতে থাকে একটি সম্প্রদায়। কয়েক শতাব্দি পরে এটি একটি বড় দলে পরিণত হয়ে যায়। সাথে সাথে সঞ্চিত হতে থাকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নীতিমালা। অতঃপর থরে-বিথরে সঞ্চিত নীতিমালা একত্রিত করে গড়ে উঠে একটি শাস্ত্রীয় মতবাদ। অভিনবরূপে নির্মিত শাস্ত্রীয় মতবাদ ও শাস্ত্রীয় নীতিমালা গ্রহণকারী শাস্ত্রীয় অনুসারির সংখ্যাও দিনের পরদিন বাড়তে থাকে।
একটি রূপকসাহিত্য নির্মাণের কয়েক শতাব্দি পর এভাবেই ঐ সাহিত্যটির ওপর নির্ভর করে এক বা একাধিক শাস্ত্রীয় মতবাদ বা শাস্ত্রীয় সম্প্রদায় আত্মপ্রকাশ করে থাকে। অন্ধবিশ্বাসরূপ এ বিষবৃক্ষের ডালপালা যুগেযুগে চারদিকে কেবল বাড়তেই থাকে। বিষবৃক্ষরূপ এ দ্রুতগামী ঘোড়াটি একদিন সারাবিশ্বে পরিভ্রমণ করতে সক্ষম হয়। এভাবেই অন্ধবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত শাস্ত্রীয় মতবাদরূপ বৃক্ষের ছায়া একসময় সারাবিশ্বব্যাপী পতিত হয়।
মানবসভ্যতার ঊনবিংশ শতাব্দিটি দার্শনিক ও বিজ্ঞানিরা এ অন্ধবিশ্বাসের ঘোড়ার পিঠে চড়েই অতিক্রম করেছেন। এ দ্রুতগামী ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেই তারা তাদের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার অন্বেষণ করতেছিলেন। গত ঊনবিংশ শতাব্দির পূর্বে দীর্ঘ আড়াইসহস্র বছর এভাবেই অতিবাহিত হয়েছিল। তখন অধিকাংশ দার্শনিক ও বিজ্ঞানীও ধারণা করতেন যে, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে পরিভ্রমণ করে। কিন্তু আজ অন্ধবিশ্বাসের সে লৌহনিগড় কেটে ও অন্ধবিশ্বাসের কাল্পনিক ঘোড়াটিকে হত্যা করে আধুনিক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে না বরং পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘুরে।
শাস্ত্রীয় মতবাদ নির্মাণ পদ্ধতি
(Construction methodology of schismatic doctrine)
বিশ্বের যে কোন একটি রূপকসাহিত্যকে কেন্দ্র করে একটি শাস্ত্রীয় মতবাদ নির্মাণ করতে হলে এবং তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে একজন সুবিজ্ঞ শাস্ত্রীয় মতানুসারিকে উক্ত রূপকসাহিত্যটি হাতে নিয়ে অবশ্যই বলতে হবে যে এসব কোন মানুষের নির্মিত বাণী নয় বরং এসব স্বয়ং স্রষ্টার পক্ষ হতে মহামানবের নিকট অবতীর্ণ। তাকে আরো বলতে হবে যে, কেবল স্রষ্টার পক্ষ হতে প্রতীতির নিকট যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছিল তিনি কেবল তা-ই প্রকাশ করে ছিলেন। এ পবিত্র গ্রন্থের মধ্যে মানুষের নির্মিত বা রচিত কোন বাণী নেই। কারণ মানুষের নির্মিত বাণী এমন হতে পারে না। আর মানুষ যদি এরূপ বাণী রচনা করতে পারতেন তবে বিশ্বে অনেকেই এরূপ বাণী নির্মাণ করে দেখাতেন। কেউ শতবছর চেষ্টা করলেও এরূপ একটি বাণী নির্মাণ বা রচনা করতে অবশ্যই পারবেন না। এবার শাস্ত্রীয় মতবাদ নির্মাতা শাস্ত্রীয় মতানুসারী ব্যক্তির উচিৎ যে সর্ব প্রথমে উক্ত রূপকসাহিত্যের মৌলিক সদস্যদের (The basic elements of ‘Fabulous literature’. দি বেসিক ইলিমেন্টস ওফ ফ্যাবুলাস লিটারেচার)। যথা- ১.আদিমানব, ২.আদিমানবী, ৩.বর্থ্য, ৪.সাংবাদিক (১-৩), ৫.সৃষ্টিকর্তা, ৬.পালনকর্তা, ৭.সংহারকর্তা, ৮.দৈবকর্মী, ৯.মুক্তি, ১০.স্বর্গ ও ১১.নরক- এ এগার (১১)টি সদস্যের জীবনযাপন প্রণালি, আকার প্রকার, আয়তন অবস্থান, আবাস নিবাস, বংশসারণী, সংখ্যা পরিমাণ ও কার্যক্রম যেক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য তা নির্ধারণ করা। অতঃপর স্রষ্টাদের সম্মেলন ও দৈব সম্মেলন দ্বারা প্রয়োজনীয় সংস্কার করা আরম্ভ করা।
এক্ষেত্রে শাস্ত্রীয় মতবাদী পণ্ডিতকে সদস্যদের জীবনী, বংশ, জন্মস্থান, অবস্থান ও আকার প্রকার নির্মাণের সময় অবশ্যই সাতন্ত্রতা রক্ষা করতে হবে। যাতে অন্যান্য শাস্ত্রীয় মতবাদের সদস্যদের ছদ্মনাম বা রূপক উপমাদির সাথে মিলে না যায়। একটি নতুন শাস্ত্রীয় মতবাদ নির্মাণের ক্ষেত্রে তার অভিনবত্ব অটুট রাখার জন্য নিচে শাস্ত্রীয় মতবাদ নির্মাণের একটি অভিনব মৌলিকসদস্য নির্ঘণ্ট তুলে ধরা হলো।
শাস্ত্রীয় মতবাদ নির্মাণের মৌলিক সদস্য নির্ঘণ্ট
(Fundamental member index of schismatic doctrine methodology)
রূপকসাহিত্যে বর্ণিত নরদেহের আদিকারণকে (শুক্র) ধরা হলো আদিমানব (আদিম (রূ)বি জানিক) এবং নারীদেহের আদিকারণকে (রজ) ধরা হলো আদিমানবী (আদিমা (রূ)বি জানিকা)। মুখের কথাকে ঐশিসাংবাদিক এক (১) এবং নারীদের রজকে ঐশিসাংবাদিক দুই (২) ধরে শাস্ত্রীয় মতবাদ নির্মাণ করা হলো। মুখের কথা দেহ ও মনের দ্বারা পরিবার, সংসার ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় বলে এ তিনটিকে স্বর্গ (১.বৈচনি, ২.দৈহিকা ও ৩.মৈনাক) ধরা হলো এবং বাচালতা, অপকর্ম ও মুখবন্ধ করে থাকা হতে পরিবার, সংসার ও সমাজে তীব্র অশান্তি সৃষ্টি হয় বলে এ তিনটিকে নরক (১.বৈচাল, ২.কৈজাক ও ৩.গোমড়া) ধরা হলো। অতঃপর দেহধামের বিভিন্ন প্রকার সদস্য যেমন দেহ, আত্মা, মন, জ্ঞান, ইন্দ্রাদি, রিপু, রুদ্র, মন্দা, দশা ও ভালা মাত্রিকার সদস্যদের ঐশিকর্মী বা দেবকমী (প্রতীতি, দৈবিকা, জ্যোতিকা) ধরা হলো । এছাড়া অন্যান্য সদস্যদের রূপকসাহিত্যে বর্ণিত অর্থের মতোই রেখে দেওয়া হয়।
১. সৃষ্টিকর্তা = কাঁই
২. পালনকর্তা = সাঁই
৩. সংহারকর্তা = যম
৪. দৈবকর্মী = প্রতীতি, দৈবিকা, জ্যোতিকা
৫. সাংবাদিক (১) (মুখের কথা) = বলন
(২) (নারীদের রজ) = বসিধ
(৩) (কামরস) = জলোষ্ণ
৬. বর্থ্য (ব্যত্যয়কারী) = বর্থ্য
৭. আদিমানব = আদিম (রূ)বি জানিক
৮. আদিমানবী = আদিমা (রূ)বি জানিকা
৯. মুক্তি = অখণ্ডতা (রূ)বি জিষ্ণু
১০. স্বর্গ = স্বর্গ
স্বর্গের পরিমাণ = ৩টি
স্বর্গের ছদ্মনাম = ১.বৈচনি, ২.দৈহিকা ও ৩.মৈনাক
১১. নরক = ৩টি
নরকের পরিমাণ = ১.বৈচাল, ২.কৈকাজ ও ৩.গোমড়া
এবার ওপরোক্ত বিষয়বস্তু দ্বারা অত্যন্ত অভিনবরূপে একটি রূপকসাহিত্য নির্মাণ করি। অতঃপর উক্ত গ্রন্থের মধ্যে ব্যবহৃত ১.কাঁই, ২.সাঁই, ৩.যম, ৪.প্রতীতি, ৫.বলন, ৬.বর্থ্য, ৭.আদিম, ৮.আদিমা, ৯.জিষ্ণু, ১০.স্বর্গ ও ১১.নরক- এ ১১টি সত্তার সম্পূর্ণ অভিনব ব্যাখ্যা প্রদান করি। অতঃপর রূপকসাহিত্যে বর্ণিত রূপক চরিত্রাদির রূপক জীবনী নির্মাণ করি। এবার এ নতুন শাস্ত্রীয় মতবাদটি সার্বজনীন বা চিরস্থায়ী করার জন্য গ্রন্থটির মধ্যে ব্যবহৃত কঠিন ও দুর্বোধ্য শব্দাদি ও নতুন নতুন পরিভাষাদির অভিনব ব্যাখ্যা প্রদান করি। এবার আমাদের একটি নতুন শাস্ত্রীয় মতবাদ নির্মাণ করা শেষ হলো।
অতঃপর রূপক সাহিত্যের সারগর্ভ ও শিক্ষামূলক চমৎকারাদি সমাজে ও লোকসমাজে বা পথেঘাটে পুনঃপুন প্রচার-প্রসার করতে আরম্ভ করি। ফলে অত্র অঞ্চলের লোকজন উক্ত চমৎকারাদির দ্বারা বর্ণিত প্রতীতি ও শিক্ষামূলক উপাখ্যাদির প্রতি ক্রমে ক্রমে দুর্বল হতে থাকবে ও সে সব বিশ্বাস করতে থাকবে এবং লৌকিকাদির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকবে। শাস্ত্রীয় অন্ধবিশ্বাসের লৌহ নিগড়ে একবার মানুষকে আবদ্ধ বা বশীভূত করতে পারলেই তার ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় সে সংস্কার অকাতরে মাথা পেতে নিতে বাধ্য করতে হয়। শাস্ত্রীয় মতবাদ নির্মাণ শিল্পটিও অতি প্রাচীন শিল্প। তবে এরও আরো অনেক প্রাচীন হলো রূপকসাহিত্য নির্মাণ শিল্প। এ জন্য রূপকসাহিত্য শিল্পকে মানবসভ্যতার প্রথমশিল্প বা ‘আদিশিল্প’ বলা হয়।
এ শিল্পটির নাম শাস্ত্রীয় মতবাদ নির্মাণ শিল্প। তবে বিশিষ্ট শাস্ত্রীয় মতবাদী পণ্ডিতগণের অভাবে বর্তমানে এ শিল্পটি মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। নতুন কোন শাস্ত্রীয় মতবাদ নির্মাণ করা হলে বা প্রতিষ্ঠা করা হলে একসঙ্গে এখানে অনেক লোকের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে একদিকে ভুয়া মতবাদকর্মও করা হয় অন্যদিকে কিছু অজ্ঞ ও মূর্খ শাস্ত্রীয় মতানুসারির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা বা রুটিমুটিরও ব্যবস্থা হয়। আবার কিছুকিছু অজ্ঞলোক ও মূর্খলোকের মৌখিকভাবে শাস্ত্রীয় মতবাদ প্রচারের মাধ্যমেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। আবার কিছু লেখক, গবেষক, মতবাদ বিশারদ, শাস্ত্রীয় পরিভাষাদির বৈখ্যিক ও টৈকিকগণের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার রূপক লৌকিকাদির আলোচনার দ্বারাও অনেক গায়ক-বক্তার কর্মসংস্থানের উত্তম ব্যবস্থা হয়ে থাকে। কোন শাস্ত্রীয় মতানুসারী পণ্ডিত একবার মাত্র যুক্তি, দর্শন ও বিজ্ঞানের সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর শাস্ত্রীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে তা আর ঠেকাই কে? শাস্ত্রীয় মতবাদ এরূপ অবস্থায় উন্নীত হলে তা কখনই বিলুপ্ত হয় না। অত্যন্ত সহজসরল ও শ্রমহীন এবং আরামপ্রিয় ভাবে জীবিকা নির্বাহের অফুরন্ত সুযোগ থাকায় সমাজের অল্পজ্ঞানী বা খুষ্কজ্ঞানিরা ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় উক্ত শাস্ত্রীয়দর্শন গ্রহণ করতে থাকেন এবং স্বস্ব প্রচেষ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে জনমত সৃষ্টি করার দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। ফলে শাস্ত্রীয় দর্শনের প্রচার ও প্রসার দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে।
পরিশেষে বলা যায়- পদার্থের গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে ধর্ম বলা হয়। যেমন আগুনের ধর্ম দাহ্য করা, চুম্বকের ধর্ম আকর্ষণ করা, কম্পাসের ধর্ম দিকদর্শন করা, জলের ধর্ম নিম্নগমন করা ও বাতাসের ধর্ম উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের বাংভারতীয় উপমহাদেশে যাকে ধর্ম বলা হয়/ হচ্ছে সেগুলো আদৌ ধর্ম নয় বরং সেগুলো হলো শাস্ত্রীয় মতবাদ বা সাম্প্রদায়িক মতবাদ। ধর্ম চিরন্তন, শাশ্বত, সার্বকালীন ও সার্বজনীন। কিন্তু শাস্ত্রীয় মতবাদ বা সাম্প্রদায়িক মতবাদ চির আপেক্ষিক। যেমন আমাদের বঙ্গদেশে পূর্বকালে হিন্দু মতবাদ ছিল। আমরা সবাই ছিলাম হিন্দু। বর্তমানে অধিকাংশই রয়েছি মুসলমান। আবার কিছুদিন পর আজকের ইসলামী মতবাদও হয়ত থাকবে না। এখানকার অধিকাংশ লোক হয়ত আবার গ্রহণ করবে লালন কিংবা বলন মতবাদ। তাই আসুন আমরা না জেনে ও না বুঝে ধর্মকে মতবাদ এবং মতবাদকে ধর্ম বলা হতে বিরত থাকি।
শাস্ত্রীয় গ্রন্থকে (ধর্মগ্রন্থ) ঐশীগ্রন্থ বলার কারণ কী?
(What is the cause to say schismatic book the celestial book?)
সাধারণত ঐশীগ্রন্থ বলে কোন গ্রন্থ নেই। তবে কেবল মানব দেহকেই ঐশী গ্রন্থ বলা যায়। যেহেতু দেহ জঠররূপ ঐশীধাম হতে অবতরণ করে থাকে। আর আদিকাল হতে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সব মানুষ কেবল দেহকেই পাঠ করে চলেছে। মানব দেহের রোগ পড়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও দেহের রেখা ও তিলক পড়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে জ্যোতির বিজ্ঞান। এ ছাড়াও যোগ, ইয়োগা, অ্যাকুপ্রেসার ও ধ্যান সবই কেবল দেহকে পাঠন-পঠন বিদ্যা। তবে শাস্ত্রীয়রা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যই মানবরচিত রূপকসাহিত্যকে ঐশীগ্রন্থ বলে প্রচার প্রসার করে থাকে। এর অন্যতম কারণ হলো- মানবরচিত গ্রন্থগ্রন্থিকা সাধারণত সাধারণ মানুষ মেনে নিতে চায় না। কিন্তু ঐশীগ্রন্থ বললে সাধারণ মানুষ দ্রূত মেনে নিতে চায়। সারা বিশ্বের সর্ব শ্রেণির সাম্প্রদায়িকরা এ কৌশলটিই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে থাকে।
কার্যত দেখা যায় বিশ্বের কোন সাম্প্রদায়িকই স্বস্ব শাস্ত্রীয় গ্রন্থকে মানব রচিত বা মানব নির্মিত বলতে চায় না। আপনি পুরাণীদের প্রশ্ন করে দেখুন তারা বলবে তাদের গীতা স্বয়ং মহামতি শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী। অন্যদিকে ত্রিপিটকীদের প্রশ্ন করে দেখুন তারা বলবে ত্রিপিটক স্বয়ং বুদ্ধদেবের বাণী। আর বুদ্ধদেব স্বয়ং ব্রহ্মা প্রেরিত মহামানব। আপনি কুরানীদের প্রশ্ন করে দেখুন তারা বলবে পবিত্র কুরান স্বয়ং আল্লাহর বাণী। ইহুদিদের প্রশ্ন করে দেখুন তারা বলবে তৌরাত স্বয়ং প্রভুর বাণী। কারণ শাস্ত্রীয়রা জানে যে, মানুষের বাণী বললে শাস্ত্রীয় গ্রন্থের সম্মান অনেক হ্রাস পায়। আর সাধারণত মানব রচিত বাণী মানুষ কখনই শাস্ত্রীয় গ্রন্থরূপে মেনে নিতে চায় না। পরিশেষে বলা যায় শাস্ত্রীয় গ্রন্থের মান বাড়ানো এবং পুণ্য-ব্যবসা ও স্বর্গ ব্যবসার জন্যই শাস্ত্রীয় গ্রন্থকে ঐশীগ্রন্থ বলা হয়।
(সংক্ষিপ্ত সংকলন)
সূত্রতথ্যঃ
আত্মতত্ত্ব ভেদ (৬ষ্ঠ খণ্ড)
লেখকঃ বলন কাঁইজি
ভাল লিখেছেন। (Y)
শুধু এক ধর্মের উপ-ধর্ম গুলোর মধ্যে না, ধর্মে ধর্মে বিভেদ কমাতে হবে এবং পাশাপাশি ধার্মিকদের মধ্যে লিবেরালিজম এর চর্চা শুরু করতে হবে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, তারিক।
অনেক গবেষণামূলক এই প্রবন্ধটি পাঠ করে পাঠকদের অনেক কিছু জানার আছে বলেই আমার মনে হয়েছে। সে জন্য লেখকের প্রতি প্রেমভক্তি রইল।
—————————————————
প্রবন্ধটির মাত্রিকা (শিরোনাম) কিংবা আলোচনা যাই হোক না কেন, আমাদের বক্তব্য হলো ধর্ম পরিভাষাটিকে এরূপ ঢালাওভাবে ব্যবহার করা কোন গবেষকেরই উচিৎ নয়। কারণ আমরা যাকে ধর্ম বলছি তা কখনই ধর্ম নয় বরং তা হলো শাস্ত্রীয় মতবাদ। আর শাস্ত্রীয় মতবাদ যে ধর্ম নয় এবং ধর্মও যে শাস্ত্রীয় মতবাদ নয় এ বিষয় নিচে আমার লেখা ধর্ম প্রসঙ্গ হতে সামান্য অংশ তুলে ধরলাম।
শাস্ত্রীয় মতবাদের পরিচয় (Identity of schismatic doctrine)
“পূর্বকাল হতেই দেখা যায় একদল লোক শাস্ত্রীয় মতবাদকে অত্যধিক প্রাধান্য দেয় আবার একদল লোক একেবারেই গ্রহণ করেন না। যারা কোন শাস্ত্রীয় মতবাদকে প্রাধান্য দেন না তারা প্রায়ই বলে থাকেন শাস্ত্রীয় মতবাদ বলতে কিছুই নেই। তারা এও বলেন যে- “Religion is nothing only blindly faithful” (রিলিজন ইজ নাথিং অনলি ব্লাই-লি ফেতফুল)” অর্থ- “শাস্ত্রীয় মতবাদ কিছুই না কেবল অন্ধবিশ্বাস।” প্রকৃত ব্যাপারটিও তাই। ব্যক্তি বিশেষের মনগড়া মতামত সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়াকেই ধর্ম বলা হয়। আর এ ধর্মকেই শাস্ত্রীয় মতবাদ বলা হয়। তবে এসব শাস্ত্রীয় মতবাদ আধুনিকযুগের পূর্বে পরিবার ও সমাজে শান্তি ও শৃংখলা বিধানের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রয়োজন ছিল। তখন রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল না। তাই শাস্ত্রীয় মতবাদ অনেক উপকারী ছিল। কিন্তু বর্তমানে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত থাকায় মানুষ আর অন্ধবিশ্বাসের অধীনতা স্বীকার করতে চায় না।
এ ছাড়াও বর্তমানে একই রাষ্ট্রে শাস্ত্রীয় বিধান ও রাষ্ট্রীয় বিধান উভয় একসঙ্গে চালু রাখা কোন মতেই সম্ভব নয়। যে কোন একটি বিধান মান্য করা সবার একান্ত প্রয়োজন। উল্লেখ্য শাস্ত্রীয় বিধানাদি প্রায় রূপকার্থে নির্মিত কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিধানাদি বাস্তবভাবে নির্মিত। এ জন্য শাস্ত্রীয় বিধান কখনই রাষ্ট্রীয় বিধানের তুল্য হতে পারে না। তাছাড়া শাস্ত্রীয় বিধান কেবল একটি গোত্রের জন্য নির্মিত কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিধান রাষ্ট্রের সর্ব শ্রেণির জনগণের জন্যই সমান অধিকার নিশ্চিত রেখে নির্মিত। বিগত আদিমযুগ ও মধ্যযুগেই শাস্ত্রীয় বিধানের অধিক অধিক প্রয়োজন ও গুরুত্ব ছিল। এর অন্যতম কারণ ছিল তখন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় বিধান উভয়ই ছিল না। আধুনিক যুগের প্রথমদিক হতে রাষ্ট্র গঠন ও রাষ্ট্রীয় বিধান নির্মাণ করা আরম্ভ হয়। তখন হতেই শাস্ত্রীয় বিধানের প্রয়োজনও ক্রমে ক্রমে শিথিল হতে আরম্ভ করে। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই শাস্ত্রীয় বিধানের তেমন ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না।”
পরিশেষে বলন চাই, পণ্ডিত, বক্তা, লেখক, গবেষক, বৈখ্যিক, টৈকিক, অনুবাদক ও অভিধানবেত্তা সবারই পূর্ব প্রচলিত ধর্ম পরিভাষাটির ক্ষেত্রে শাস্ত্রীয় মতবাদ বা সাম্প্রদায়িক মতবাদ পরিভাষাটির প্রচলন আরম্ভ করা একান্ত প্রয়োজন।
@বলন কাঁইজি,
তাইলে ধর্ম কোনটা?
বিচ্ছিন্ন ভাবে ঘটনাগুলো জানলেও, লেখা থেকে একটা সামগ্রিক চিত্র পাওয়া গেল!
এমনকি আলকায়েদার চোখেও এরা উগ্র সন্ত্রাসবাদী শুনে তব্ধা খেয়ে গেলাম!
আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া এই স্কেলের সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড চালানো সম্ভব নয়। আর এইসব আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কোনো ফেরেশ্তা এসে দিয়ে যায় না এদের হাতে। বানিয়ে নেওয়ার মুরদও এদের কারো নেই। তাই লেখার শেষ প্যারার কথাগুলো বলে হাল ছেড়ে বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করার আছে বলে মনে হয় না।
কীভাবে বাংলাদেশকে এই ধরনের পরিণতির হাত থেকে রক্ষা করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।
@তানভীরুল ইসলাম, যেভাবে এই অস্ত্রগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর হাতে চলে আসছে তাতে করে শুধু বাংলাদেশ না, সমগ্র পৃথিবীর ভাগ্যে কী আছে বলা মুশকিল। আমেরিকানদের দেওয়া বারো বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রের এক বিশাল অংশ রেখে কিন্তু ইরাকি সেনাবাহিনী পালিয়েছে। রাশিয়াদের অস্ত্র যেমন ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের হাতে তেমনি আমেরিকার অস্ত্র এখন আইএসআইএসের হাতে।