জার্মানি ও অষ্ট্রিয়ার প্রতি গ্রামে গ্রামে কুমার যুবকদের ( অবিবাহিত) একটি দল থাকে। সেই দলটির নাম ”ইয়ঙ্গেসেলেন”। ইয়ঙ্গেসেলেনে ছেলেরা বা পুরুষেরা বিয়ে করার আগ পর্যন্ত এ দলের সদস্য পদ পেয়ে থাকে। সদস্য পদ পেতে হলে, একজন যুবককে ৩টা পেয়াজ এবং ৩টা বিয়ার এক সঙ্গে ঠিক ৩ মিনিটে খেয়ে সাবাড় করতে হয়। যদি না পারে তাহলে আবার তাকে পরের বছর পর্যন্ত আবারো একই পরীক্ষা দিয়ে সদস্য পদ নিতে হয়। বুঝতেই পারছেন, ব্যাপারটা অদ্ভুত হলে সহজ নয়।
ইয়ঙ্গেসেলেনের যুবকদের সারা বছর নানা ধরনের কার্যক্রম থাকে। যেমন, একটি এলাকার তীরন্দাজবাজী বা বন্দুকবাজীতে ও খেলাধুলায় সেরা যুবকটিকে খুঁজে বের করা। এবং তাকে সেই গ্রামের রাজকুমার উপাধি দেয়া। আর সেই রাজকুমার এমনি হওয়া যায় না। সেরা কয়েকজন যুবকের মধ্যে প্রতিযোগীতা করিয়ে বাছাই করা হয় তাকে। আর রাজকুমারের যদি কোন মেয়ে বান্ধবী থাকে সে হয়ে যায় সেই এলাকার রাজকুমারী। যাই হোক, সেই গল্প বলা যাবে আরেকদিন। আজ যে গল্পটি বলবো, তা ভীষণ রোমান্টিক একটা গল্প। যা এখানকার সংস্কৃতির একটা বিশেষ দিক সবার সামনে তুলে ধরবে।
ইয়ঙ্গেসেলেনে সদস্য পদ পাওয়ার পর পাড়ার বা গায়ের সব ছেলেপুলে বন্ধু হয়ে যায়। তারা নিজেদের মধ্যে মনের সব স্বপ্ন, আশা, চাওয়া, পাওয়া, প্রেমানুভূতির গল্প বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়। মানে, গ্রামের কোন মেয়েটিকে কার পছন্দ। কাকে প্রেম প্রস্তাব করতে চায়, এমন সব গল্প। আর ইয়ঙ্গেসেলেনের বন্ধুদের দায়িত্ব হয়ে যায়, তার প্রেমিকার সঙ্গে একটি সম্পর্ক গড়ে দেওয়া, তাও আবার রোমান্টিক পদ্ধতিতে।
কি সেই রোমান্টিক পদ্ধতি? পদ্ধতিটি হলো ঠিক এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ দিনের বেলায় প্রথমে নিজ গ্রামের ইয়ঙ্গেসেলেন ক্লাবের সামনে একটি বড় গাছ লাগানো আর গায়ের সবাইকে জানান দেয় যে, আজ রাত ১২টার পর আমাদের অভিযান শুরু হবে। আজ সেই রাত।
কোন রাত? প্রেয়সীকে প্রেম প্রস্তাব করার রাত। কিভাবে? এইদিন যুবকেরা বড় গাছটার সঙ্গে সারাদিন বনে বনে ঘুরে প্রত্যেকের জন্য একটি করে ছোট গাছের ডালের বা সম্পূর্ণ একটি গাছের ব্যাবস্থা করে। তারপর সেই গাছের মধ্যে নানান রংয়ের ফিতা দিয়ে সাজিয়ে নিজের মনের অবস্থা জানান দেয়। এবং ঠিক মে মাসের ১ তারিখ রাত ১২টা ১ মিনিটে এ তারা গান গাইতে গাইতে হাতে করে সবাই গাছ বহন করে নিয়ে সেই তরুণীটির বাড়ির সামনে রোপন করে বা জানালা বা বারান্দার পাশে বেঁধে গাছটিকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আসে। শুধু যে গাছটা দাঁড় করিয়ে দিয়ে আসে তা নয় তারা সেই তরুণীটির বাসার সামনে দাঁড়িয়ে গানও গায়।
জার্মান ও অস্ট্রিয়ান পুরুষদের তাদের প্রেয়সীকে প্রেম প্রস্তাব করার এটা এক ধরনের কৌশল। আরো অনেক কৌশলও আছে। অন্য কোনদিন, অন্য কোন সময় সে গল্পও জানানো যাবে সবাইকে। এখন নিশ্চয়ই কৌতুহল হচ্ছে, এত চমৎকার ভাবে প্রেম প্রস্তাব করার পর কি কোন মেয়ে তার প্রতি উত্তরে না করতে পারে? উত্তর হলো, হ্যা পারে। আর মেয়েটি না বললে, ছেলেটি খুব সহজে তা মেনে নেয়। সে চেষ্টা করে আবার পরের বছর যদি তার কল্পিত প্রেয়সী তার মনের কথা মেনে নেয়। আবারো তাকে সাহায্য করে গোটা গ্রামের যুবক দল। আর যদি না মানে, তখন তারা যুবকটিকে তার বন্ধুরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে, জীবন কারো জন্য থেকে থাকে না। তখন তারা অন্য কোন তরুণীর সঙ্গে সেই তরুণের পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। প্রেমের প্রস্তাবে ব্যার্থ হয়ে কেউ কারো মুখে এসিড ঢালার চেষ্টা করে না বা মেয়েটির যেন আর বিয়ে না হয়, সেজন্য নোংরা কথাও ছড়ায় না।
ফারজানা কবীর খান (স্নিগ্ধা)
(বিঃ দ্রঃ – আমার নিজের করা একটি অনলাইন রিপোর্ট আছে, আপনারা তা শুনে দেখতে পারেন। কেমন লাগলো মতামত জানাতে ভুলবেন না।
http://training.dw.de/ims/blogs/wordpress/2011/12/the-young-bachelor/ )
ইন্টারেস্টিং!
ছবিসহ চমৎকার লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। নব্বুই-র দশকে জার্মানীর কলোন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করার সময় একদিন সকালে ল্যাবে ঢুকেই আমার চোখ চড়কগাছ হয়ে গিয়েছিল। ‘কে বা কাহারা’ রাতের বেলা প্রায় শেকড়-সমেত একটা আস্ত বার্চগাছ ল্যাবের ভেতর রেখে গিয়েছে। তার ডালপালায় আবার লাল,নীল, হলুদ ফিতে বাঁধা। আমি তো হতভম্ব, এর মানে কি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পরে জানা গেল আমাদেরই এক সহপাঠী ল্যাবের এক টেকনিশিয়ানের জন্য এভাবে তার অনুরাগ প্রকাশ করেছে। আমিসহ অন্য অনেকেই এই ঘটনায় যথেষ্ট আমোদিত হলেও আমাদের পিআই বিষয়টি খুব সহজভাবে নেননি। অবশ্য বন্ধ দরজার ওপারে কি আলোচনা হয়েছিলো তা আমি জানিনা; আমি শুধু দেখেছি দুজন সুঠাম জেনিটরকে ফিতে বাঁধা গাছটি কাঁধে নিয়ে ল্যাব থেকে বের হয়ে যেতে।
@মনজুর মুরশেদ, আপনাকেও ধন্যবাদ। 🙂
জার্মানীর আরও লোকাচার জানতে চাই।
@গীতা দাস,
দিদি উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ। আশা করছি আরো লিখবো ভবিষ্যতে।
ভালো লেগেছে, আকাঙ্খা রয়ে গেলো আরও জানার :-s
@নিলয় নীল,
ধন্যবাদ। আশা করছি আরো লিখবো ভবিষ্যতে। 🙂
বেশ মজার ব্যাপার তো!
@তামান্না ঝুমু, ধন্যবাদ। :guru: (F)
ইন্টারেস্টিং 🙂
@এম এস নিলয়,
ধন্যবাদ। (F)