একটা চোর বেঁধে রাখা হয়েছে মিয়াবাড়ির উঠোনের কোণে বড় পেয়ারা গাছটার সাথে। মোটা দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে তার হাতদুটো একত্রে। তার কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে গাছের সঙ্গে। তাকে দেখতে গাঁয়ের লোকেরা এসে ভীড় করছে মিয়াবাড়িতে। নানান লোকে নানান মন্তব্য করছে তার উদ্দেশ্যে। কেউ কেউ বলছে, আরে এ তো দেখি পুবপাড়ার হাশিম্মা। হাশিম্মা যে ভেতরে ভেতরে এত্ত বড় চোর আছিল তা তো জানতাম না। কেউ কেউ বলছে, চোরের দশদিন তো গেরস্থের একদিন। কেউবা প্রবল ঘৃণায় বাক্যহারা হয়ে চোরের উদ্দেশ্যে একদলা থুথু ফেলে দিয়ে জোরের সাথে বলছে, ছি! ছি! ছি! বড়মিয়ার সাত বছরের মেয়ে মিনুও ঘর থেকে উঠোনে বেরিয়ে এসেছে চোর দেখবে ব’লে। মিনুর খুব উৎসব উৎসব লাগছে আজ। তাদের বাড়িতে এত মানুষের আনাগোনা। মানুষে গমগম করছে, ফিসফাস করছে। তার যেন ঈদ ঈদ লাগছে। সে তার মাকে জিগ্যেস করে, আম্মা, চোর কই? চোর তো দেখলাম না। মা বলে, ওই যে গাছের লগে বান্ধা আছে, সে-ই চোর। মিনু অবাক হয়ে বলে, ও আল্লা! এ তো হাশেম ভাই। চোর কই? আম্মা আমি চোর দেখবার চাই। চোর যে মানুষ, এবং মানুষই চুরি করে চোর হয় তা মিনুর শিশুমন বুঝবে কেন? তার ধারণা ছিল চোর অন্য কোনো জিনিস।
হাশেমকে ধরে এনে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। সারারাত সে গাছে বাঁধা ছিল জন্তুর মত। এ পর্যন্ত কোনো খাদ্য-পানীয় দেওয়া হয়নি তাকে। লাথিগুঁতো, চড়চাপড় দেওয়া হচ্ছে কিছুক্ষণ পরপর। গালিগালাজেও কার্পণ্য নেই কারুর। তবে আসল বিচার এখনো শুরু হয়নি। আজ বাদ মাগরিব তার চূড়ান্ত বিচার-সভা বসবে মিয়াবাড়ির উঠোনেই। বিচার করবেন মিয়া পরিবারের কয়েকজন,ও গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বার। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও বলা হয়েছে উপস্থিত থাকার জন্য। সেই মহেন্দ্রক্ষণ যেন ঘনিয়ে এলো। চারদিক থেকে বাঁধ ভেঙে ছুটে আসছে কৌতূহলী মানুষের ঢল। সকল বয়েসের নারী পুরুষ শামিল হয়েছে এই জনঢলে। মহামান্য বিচারকগণ চলে এসেছেন বিচার সভায়। সবার পরনে ভালো কাপড়, গায়ে আতর, কারুর কারুর বা চোখে সুরমা। চোখেমুখে অনাবিল আনন্দ। যেন সবাই বিয়েবাড়িতে এসেছে। তাদের জন্য বিশাল উঠোনের মাঝখানে গোল করে চেয়ার পাতা হয়েছে। ইতিমধ্যে আসনগুলি অলঙ্কৃত করেছেন তারা। হাশেম চোরার গাছের বাঁধন মুক্ত করে তাকে বিচারসভায় হাজির করেছে গ্রামের চৌকিদার। তার কোমর এখনো দড়িতে বাঁধা। দড়িটি শক্ত করে ধরে রেখেছে চৌকিদার। দিন মজুরের কাজ করে হাশেম। শক্ত-সমর্থ পিটনো দেহ তার। কাজলের মত কালো গায়ের রঙ। পরনে একটু লুঙ্গি। ঊর্ধ্বাঙ্গে কোনো কাপড় নেই। দড়ি বাঁধা অবস্থায় তাকে দেখাচ্ছে একটি মহিষের মত।
শুরু হল সওয়াল-জবাব ও উত্তমভাবে অধম মারের পালা। বিচারকমণ্ডলির মধ্য থেকে একেকজনে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করছেন হাশেমকে। আবার সবাই একত্রেও করছেন বিভিন্ন প্রশ্ন। প্রশ্ন করেন বড়মিয়া, কী রে হাশিম্মা, তোর এতো সাহস! ছোড বেলায় আমগোর ঘরে চাকর আছিলি। শরীল বানাইছোস আমগোর খাইয়া। অহনো আমগোর জায়গা দিয়া হাঁটস। আমগোর গাছের পাতা দিয়া ভাত রান্ধস। আবার আমগোর ধান চুরি করস? হাশেম বললো, মামা, আমি তো চুরি করি নাই। বড়মিয়া চৌকিদারকে বললেন, মার হালারে। মাইরা হাড্ডিগুড্ডি ভাইঙ্গা ফালা এক্কেরে। সঙ্গে সঙ্গে চৌকিদার অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে লাঠি দিয়ে হাশেমের আপাদমস্তকে পেটাতে লাগলো। হাশেম হাউমাউ করে চেঁচাতে চেঁচাতে বলতে থাকলো, ও মামা গো, ও আব্বা গো, আমি চুরি করি নাই গো। আর মাইরেন না গো। এরমধ্যে কচি ডাবের পানি চলে এসেছে বিচারকমণ্ডলি ও উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য। সবার হাতে হাতে মুখকাটা ডাব দেয়া হয়েছে। চুমুক দিয়ে পরম তৃপ্তির সাথে খাচ্ছেন সবাই। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, বাহ! মিয়াসাহেব, ডাবের পানি তো খুবই মিঠা।পরানডা জুড়াইয়া গেলো গা। একটু পরে চা ও সঙ্গে কয়েক রকমের হাতে বানানো পিঠা চলে এলো। ছোটমিয়া চায়ে চুমুক দিয়ে মুখ ভেটকি দিয়ে বললেন, চা বানাইছে কেডা রে? চিনি হয় নাই একটুও। এই কে আছোস? আমার চায়ে বেশি কইরা চিনি দিয়া যা। জানস না, আমি চিনি বেশি খাই? চিনির বোয়াম নিয়ে দৌড়ে এলো একজন। কাল সন্ধ্যা থেকে আজ রাত অবধি হাশেম উপোস। খিদা-তৃষ্ণায় সে কাহিল। তার উপরে তখন থেকে মারের উপরেই আছে। সবার খাওয়া দেখে তার পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো। সে জানে খাবার তাকে কেউ দেবে না। অন্তত একটু পানি তো সে পাবে। তৃষিত মানুষকে একটু পানি দেবে না, এমন নির্দয় তো আর কেউ হয় না। সে সাহস করে বলে ফেললো, মামা তিয়াসে বুকডা ফাইটা যাইতাছে। একটু পানি যদি খাওয়াইতেন। ছোটমিয়া হুংকার দিয়ে বললেন, হালার চোরের বাচ্চা চোরের সাহস দ্যাখছো নি। পানি খাইবার চায়। একটু পরে তো পোলাও কোর্মা চাওয়া শুরু করবো। আমগোর অতিথ আইছোস নি হালার পো? এই চৌকিদার, এই হালার মুখের ভিত্রে মুইতা দে। চৌকিদার কষে একটা লাথি মারে হাশেমের পেটে। বলে, আরেকবার পানি চাইলে মুইতা দিমু কিন্তুক।
খাওয়া শেষে বিচারকগণ আবার শুরু করলেন প্রশ্ন করা। ছোটমিয়া প্রশ্ন করেন, আমাগোর ধান চুরি কইরা তুই কার কাছে বেচছোস? উত্তরপাড়ার করিমের কাছে, তাই না? কতো বেচছোস? সাত’শো টেকা? নাকি আট’শো টেকা? হাশেম বলে, মামা, আমি তো বাড়িত আছিলাম না। চাডিগাঁ কাম করবার গেছিলাম। একমাস আছিলাম ওইখানে। কালকাই আইছি। আপনেরা আমাগো বাড়ির হগলরে জিগান। ছোটমিয়া বারুদের মত জ্বলে ওঠেন। বলেন, হারামির বাচ্চা, তুই যে তিনদিন আগে আমাগোর দক্ষিণ পুকুরের পার দিয়া হাঁইট্টা গ্যাছোস হেইডা আমার কাকি তার নিজের চোক্ষে দ্যাখছে। পুকুরের পানির ভিত্রে পাঁচ বস্তা ধান ভিজান আছিল। তুই রাইতে আইয়া ওই ধানগুলান কান্ধে কইরা তুইলা নিয়া উত্তরপাড়ার করিমের কাছে সাত’শো কেটা বেছছোস। হাশেম বললো, পুকুরের পার দিয়া হাঁটলে আমি পুকুরের পানির নিচে যে ধান ভিজাইন্না আছে হেইডা দ্যাখলাম ক্যামতে? তিনদিন আগে আমি যদি কোনো পুকুরপারে হাঁইট্টা থাকি হেইডা চাডিগাঁর কোনো পুকুর হইবো। আমি তখন এইহানে আছিলামই না। বিচারকরা সবাই হাশেমের বেয়াদবি দেখে ভিমরি খেয়ে গেলেন। বলতে লাগলেন অগ্নিকণ্ঠে, হারামজাদা আমাগোরে যুক্তিবিদ্যা শিখাইতে আইছে। মার হালারে। হালার মুখের মইদ্যে লাথি মার। চৌকিদার তার সর্বশক্তি দিয়ে হাশেমকে লাথি মারতে মারতে ধরাশায়ী করে দিয়ে তার মুখের মধ্যে সজোরে লাথি মারলো। হাশেমের একটা দাঁত পড়ে গেল। মুখের ভেতর থেকে রক্তের স্রোত বইতে লাগলো। হাশেম গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো, চুরি করি নাই মামা। আমি বাড়িত আছিলাম না। চাডিগাঁর পাহাড়ে কাম করবার গলিলাম। মার চলতে থাকে। বিচারকদের কয়েকজন এসেও হাশেমকে লাথি ঘুষি মেরে মেরে কিছুটা দায়িত্ব পালন করেন। হাশেমের বৌ, বোন ও মা এসে বিচারকদের পায়ে লুটিয়ে কাঁদে। আহাজারি করে বলে, ওরে মাফ কইরা দ্যান, ছাইড়া দ্যান আল্লার ওয়াস্তে। মহামান্য বিচারকমণ্ডলি তাদেরকে বলছেন, সইরা যা হারামজাদিরা, নইলে পাছার মইদ্যে লাথি মারুম। ওরা তবুও পা আঁকড়ে ধরে রাখে। বিচারকরা লাথি মেরে সরিয়ে দেন ওদের। হাশেমের দুটি শিশু সন্তান আব্বা গো, আম্মা গো বলে কাঁদতে থাকে।
দর্শকেরা অপার আনন্দ পাচ্ছে এই রকম অপূর্ব দৃশ্য দেখে। মনে হয়, এমন অভূতপূর্ব আনন্দঘন দৃশ্য তারা আগে কখনও দেখেনি। তুলোর মত ধুনা হচ্ছে হাশেমকে। আর বলা হচ্ছে, ধান চুরি করছোস, কিন্তুক স্বীকার করোস না ক্যান? সে একই উত্তর দিচ্ছে, আমি চুরি করি নাই। বাড়িত আছিলাম না। বিচারকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় হাশেমের বেয়াদবি দেখে। সামান্য চোর সকল গণ্যমান্য ব্যক্তির কথা নাকচ করে দিচ্ছে। বড়মিয়ার চোখমুখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বেরুচ্ছে। এই সামান্য কীটটাকে তার পায়ের তলে পিষে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে। তিনি চিৎকার দিয়ে বললেন, এই কেউ গিয়া ঘরের থনে সুঁই লইয়া আয় তো। হালার নখের ভিত্রে দিয়ে হান্দাইয়া দিলে হাঁচা কতা কইবো। একজন স্বেচ্ছাসেবক দৌড়ে গিয়ে ঘর থেকে কয়েকটা বড় বড় সুঁই এনে বড়মিয়ার হাতে দিলো। তিনি হাশেমের ডানহাতের তর্জনির নখের ভেতর দিয়ে একটি সুঁই ঢুকিয়ে দিলেন। হাশেম আকাশ কাঁপিয়ে চিৎকার করতে করতে বললো, আমি চুরি করছি গো মামা, চুরি করছি। পুকুরের পানির তলে ৬ বস্তা ভিজাইন্না ধান আমি রাইতকা আইয়া কান্ধে কইরা নিয়া উত্তরপাড়ার করিমের কাছে বেচছি। সাত’শো টেকা বেচছি। বড়মিয়া এবার তার মনমতো হাশেমের স্বীকারোক্তি শুনে বিজয়ের উল্লাস বোধ করেন। তার চোখ চকচক করতে থাকে খুশিতে। তবুও রাগ হয় তার। রাগ হয় অন্যান্য বিচারকদেরও। এতক্ষণ কেন স্বীকার করলো না চোরা? রাগ তো হবারই কথা। সবার একটা সহ্যের সীমা তো আছে। কীরে হালার চোর, এতক্ষণ কেন স্বীকার করলি না? এবার তিনি চৌকিদারকে বললেন আরো কয়েকটি সুঁই হাশেমের আরো কয়েকটি আঙুলের নখে ঢুকিয়ে দিতে। চৌকিদার হুকুম তামিল করতে শুরু করলো সাথে সাথে। হাশেম প্রথম কিছুক্ষণ বলি দেওয়া পশুর মত মাটিতে ধড়ফড় করলো, গোঙালো। তারপর নিথর হয়ে পড়ে রইলো মাটিতে। সেই নিথর দেহের উপরেও চলতে লাগল বিচার, চলতে লাগলো তাণ্ডব। বিচারকগণ সংজ্ঞাহীন হাশেমকে বলছেন, ধান ফেরত দে, টেকা ফেরত দে হালার পো। মিয়াবাড়ির ধান আর চুরি করবি? হাশেমের মা, বোন ও বৌ একে একে সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে গেল মাটিতে। উপস্থিত দর্শকের অনেকেই বললো, চোরের মা বোন বৌ’র আবার ঢং কতো!
মধ্যরাত পেরিয়ে গেল। মহামান্য বিচারকগণ তাদের দায়িত্ব পালন করতে করতে শ্রান্ত হয়ে পড়লেন। গা এলিয়ে পড়ছে তাদের। সংজ্ঞাহীন হাশেমকে কয়েকজনে ধরাধরি করে বাড়ি নিয়ে গেল। সবাই যার যার বাড়ি ফিরে গেল। যেতে যেতে বলাবলি করলো সবাই, এমন উত্তম বিচার হয় না সাধারণত। বিচারকরা অত্যন্ত বিজ্ঞ ছিলেন। স্বীকার করিয়েই ছেড়েছেন। সুঁই ঢুকানোর ব্যাপারটা খাসা ছিল। কিন্তু বড়মিয়ার মেয়ে মিনুকে পাওয়া যাচ্ছে না কেন কোথাও? এই রাত দুপুরে হেজাক বাতি জ্বালিয়ে তাকে তন্ন তন্ন করে বাড়ির আশপাশ সবখানে খোঁজা হলো। ঘরের আনাচকানাচ খোঁজা হলো। কোথাও পাওয়া গেল না। অবশেষে তাকে পাওয়া গেল খাটের নিচে দুই কানে আঙুল গোঁজা অবস্থায়। খাটের তলে দুই কানে আঙুল দিয়ে সে গুটিসুটি মেরে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে তার। গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। তার কানের আঙুল সরিয়ে নিলে আবার সে চিৎকার দিয়ে কানে আঙুল চেপে ধরছে। আর বলছে, আব্বা তুমি হাশেম ভাইরে আর মাইরো না। তারে মাইরা ফালাইয়ো না। তার নখে সুঁই ঢুকাইয়ো না। মিনুর গা মুছিয়ে দেওয়া হলো। মাথায় পানি ঢালা হলো। কিন্তু তার জ্বর কমলো না। সকালে ডাক্তার ডাকা হলো। ডাক্তার অষুধপত্র দিলেন। বললেন, ছোট্ট বাচ্চা অমন নিষ্ঠুর দৃশ্য দেখে ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মিনুকে অষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। যত্ন করা হচ্ছে চূড়ান্তভাবে। কিন্তু জ্বর তার করছে না কিছুতেই। সে বলে যাচ্ছে অনর্গল, আম্মা, তুমি আব্বারে কও হাশেম ভাইরে মাইরা না ফালাইতে। তারে সুঁই না দিতে। সে মইরা যাইবো। তার বাচ্চাগুলান কানতাছে। হাশেম ভাই কানতাছে। আব্বা, আর মাইরো না আব্বা। চারদিন অনবরত প্রলাপের পর মিনুর প্রলাপ থেমে গেল চিরতরে। সেই সাথে থেমে গেল তার হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন।
ওদিকে হাশেম পঙ্গু হয়ে গেল চিরতরে। তার বৌ আমিনা পঙ্গু স্বামী দুটি ছোট শিশু ও বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে অকুল পাথারে পড়লো। এতগুলি মুখ। কিন্তু কোনো উপার্জন নেই। কাজ খুঁজতে বের হলো সে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে। কিন্তু চোরের বৌকে কাজ দেয় কে? তার একটি নাম ছিল ‘আমিনা’। সেই নামটি এখন ঘুচে গেল। তার নাম হলো এখন চোরের বৌ। হাশিম্মা চোরার বৌ। সবাই তাকে এই নতুন নামেই ডাকে। তার শিশুসন্তানদেরও আগের নাম ঘুচে গিয়ে নতুন নাম হলো। হাশিম্মা চোরার পোলা ও হাশিম্মা চোরার মাইয়া।
বড় নির্মম
@সুমন,
কারো কারো কাছে নির্মমতাই উৎসব।
আজ সহকর্মী এক আপু তাদের গ্রামের ডাকাত ধরা পরার গল্প বলছিল। সেখানে সাতজন ডাকাত ধরা পরার পর বিচারে তাদের এক অতি বিদঘুটে শাস্তি প্রদান করা হয়।সাত জনের সকলের চোখে ভেজা চুন কাপড় দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।ফলাফল সম্পূর্ণ অন্ধ। তাদের এখন জীবিকা ভিক্ষা।
গল্পটা কষ্ট লাগলো।
@শুভ মাইকেল ডি কস্তা,
শারীরিক শাস্তি দেয়ার বর্বর অপসংস্কৃতি আমাদের দেশের মানুষের মন থেকে কবে যে দূর হবে।
এরকম কয়েকটি ঘটনার সাক্ষী আমি,দেখতে পারতামনা,পালাতাম,আপনার লেখাতা বড্ড বেশি রকমের সজীব,ভালো ও লাগল,খারাপ ও।
@Sarowar Laskar,
ধন্যবাদ আপনাকে।
হাশেমের জন্য মনটা কেমন কেমন জেনো করছে 🙁
আমার মন বলছে সে চোর না; দৃশ্য গুলো সিনেমার মতন ছখের সামনে ভাসছে।
আমার অসুস্থ লাগছে।
আমি কখনোই “চোর” দেখতে যাইনি; আর কোনদিন যাওয়াও হবেনা মনেহয়।
শুনেছি চোরের কপালে আগে গরম পয়সার ছেঁকা দেয়া হতো; খেজুর কাঁটা দিয়ে চোখ গেলে দেয়া হতো; পায়ের চামড়া তুলে লবন দিয়ে দেয়া হতো। আর গ্রামের মানুষ উৎসবের মতন চোর পেটানো দেখতো।
কিভাবে পারতো ???
আমার তো কাউকে পেটানোর কথা চিন্তা করলেই গা গুলিয়ে বমি আসে।
আমার রক্ত দেখা নিয়ে ভীতির রোগ আছে; আমি রক্ত দেখলে প্রেশার কমে অজ্ঞান হয়ে যাই।
কিভাবে পারে মানুষ ???
@এম এস নিলয়,
সব মানুষ তো মানুষ নয়। মানেষের মধ্যে পিশাচও আছে। যারা বর্বরতাকে উৎসব মনে করে।
আচ্ছা লেখাটায় আসল চোর গেল কোথায়? এক দু লাইনে আসল চোর অমুক তমুক সেজে মিঞা বাড়ীর উঠোনেই হুক্কা টানছে বা এই রকম কিছু একটা কি বলা যেত না? হাশেমও পাঠকদের চোখে সন্দেহ-মুক্ত হত; নয় কি? 🙂
আসল চোর কে, এমন কি হাশেমও চুরি করেছে কিনা তার চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে বিচার ব্যবস্থা। কী অমানবিক ভাবুন। হাশেম যদি চুরি করেও থাকে তাকে এভাবে পেটাতে হবে? সুঁই ঢোকাতে হবে তার নখ দিয়ে?
আমার দেশের মানুষ বান্ধা চোর পিটানোর সময় বাঘ হয়ে যায় আর রাস্তায় ছিনতাইকারী ধরলে বিড়ালের মত মিউ মিউ করে … টিপিক্যাল বাঙালি !!! :-O
@হয়রান,
আমাদের দেশে কত ছিনতাইকারীকে মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে তার কি কোনো হিসেব আছে?
ভালো লেগেছে। জামায়েতের মধ্যে আনডিসক্লোজড আসল চোরের বর্ণনা ঢুকিয়ে দিতে পারলে ক্লাইমেক্সটা আরো জমতো। এনিওয়ে, (Y)
@দেব প্রসাদ দেবু,
আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে সালিশ বা আইনি আওতায়ও বিচার হয় তাতে আসল দোষী যে কে তা কি প্রমাণিত হবার উপায় আছে দেবু? ক্ষমতা খাটিয়ে যেখানে কাঠবিড়ালিকে হাঙড়, চড়ুইকে বাজপাখি বানিয়ে দেওয়া যায় এবং হয়ও হরহামেশা সেখানে দোষী-নির্দোষ বা বিচারের ন্যয্যতা নিয়ে প্রশ্ন করবো কার কাছে? ধন্যবাদ আপনাকে।
লেখাতে গ্রাম্য সালিশের একটা সুন্দর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, খুব ভালো লাগলো পড়ে। এই নিন আমার পক্ষ থেকে (F)
@নিলয় নীল,
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। আমার পক্ষ থেকেও আপনার জন্য (F) (F) , নিয়ে নিন।
দারুন হয়েছে গল্পটা।এরকম একচি করুন কাহীনি অামি ও সচোখ্যে দেখে ছিলাম।
@কমরেড,
এই গল্পটিও আমার কিছুটা চোখে দেখা বলতে পারেন। ধন্যবাদ আপনাকে।