আনুমানিক ২৫ হাজার পাহাড়ি-বাঙালির রক্তের বিনিময়ে সাক্ষরিত শান্তিচুক্তিতেও কী শান্তি হয়েছে পাহাড়ে? তাহলে ক্রেওক্রাডং-এর দুর্গম পাহাড়ে কেন এখনো নিরব দুর্ভিক্ষের হাহাকার? শান্তিচুক্তির পরেও কেন সেখানে সেনা বাহিনী ‘অপারেশন দাবানলের’ পর চালাচ্ছে ‘অপারেশন উত্তোরণ’? তাহলে কি অস্ত্রের ঝনঝনানি থামেনি? পাহাড়ে অভিবাসিত বাঙালি সেটেলাররা কি দৃষ্টিতে দেখেন সাধারণ পাহাড়িদের? এই বৈরি সর্ম্পকের শেকড় কোথায়? কোথায় আজ কল্পনা চাকমা? শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে ‘সন্তুস’, ‘গন্ডুস’ ও ‘ফাল্তুস’ নামের পাহাড়িদের সশস্ত্র সংঘাতেরই বা শেষ কোথায়? কেনোই বা অধরা বহুল কাঙ্খিত শান্তি?
প্রায় দুই দশকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এইসব নানান বিষয়ে ২০০৯ সালের লিখেছিলাম ছোট্ট একটি বই- ‘রিপোর্টারের ডায়েরি: পাহাড়ের পথে পথে’। সে বছর বইমেলায় পাঠসুত্র প্রকাশনী থেকে বের হয় আমার প্রথম বইটি। এরপর গত চার বছর ধরে আগাগোড়া পুনর্লিখন করেছি বইটি। পুরনো বইটি থেকে বাদ দিয়েছি অনেক লেখা। আবার যোগও করেছি বেশ কিছু লেখা। আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি, সব তথ্য ও বিশ্লেষনে সৎ-নির্মোহ থাকার। অসংখ্য পাদটিকা ও তথ্যসূত্রে বইটিকে সমৃদ্ধ করারও চেষ্টা আছে।
পরিশিষ্টে যোগ করা হয়েছে তিনটি অধ্যায়: পাহাড়ের ইতিহাস, ইন্দিরা গান্ধিকে দেওয়া পাহাড়িদের স্মারকলিপি, ১৯৭২ এবং শান্তিচুক্তি। স্মারকলিপিটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। দুর্লভ এই দলিলটি এবারই প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে শেষ হয়েছে নতুন করে লেখা বইটির কাজ। এখন শুধু সম্পাদনা ও মূদ্রনের কাজটুকু বাকী। বন্ধু বরেষু ফিরোজ আহমেদ করছেন এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আশা করছি আগামী জানুয়ারিতে এটি ”সংহতি প্রকাশনী” থেকে বের হবে।
বলা ভালো, প্রতিটি নতুন লেখা ও পুরনো লেখাগুলো পুনর্লিখনের সময় আমি বার বার ফিরে গেছি অতীত স্মৃতিতে, যুদ্ধ-বিক্ষুব্ধ অশান্ত পাহাড়ে, গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার সন্তু লারমার হাইড আউটে, লোগাং, নান্যাচার গণহত্যার ঘটনাস্থলে, বস্তির চেয়েও নোংরা আর ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরে, অপহৃত নারী নেত্রী কল্পনা চাকমার বাড়িতে, তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে শহীদ হওয়া চারজন পাহাড়ি তরুণের শোকসভায়, ক্রেওক্রাডং-এর পাহাড়ে মুখোমুখি হয়েছি মিজো ন্যাশনাল ফ্রনেটর গেরিলা নেতা লাল ডেঙ্গার সঙ্গে, ইঁদুর বন্যায় সর্বস্বান্ত জুম চাষীর বিষন্ন মুখ বা শঙ্খ নদীর তামাক চাষী আমাকে ভাবিয়েছে, প্রীতি কুমার চাকমা বা সুধা সিন্ধু খীসা বা রূপায়ন দেওয়ান বা প্রসিত খীসার মুখগুলো মনে হয়েছে মুখোশের মতোই অবিকল, আমি বাক্যহারা হয়েছি চন্দ্রনাথের পাহাড়ের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির শ্রমদাসত্বে, বাঘাইহাটের আশ্চর্য দেবশিশুরা খুলে দিয়েছে আমার জ্ঞানচক্ষু — এমনি আরো কতো অফুরন্ত কথা…
প্রসঙ্গত, আমার প্রথম বই ‘রিপোর্টারের ডায়েরি: পাহাড়ের পথে পথে’ ২০১০ সালে একই সংগে আমারব্লগ ডটকম এবং মুক্তমনা ডটকম-এ ই-বুক আকারে প্রকাশিত হয়েছে। পাহাড়ের ওপর এটিই এখনো বাংলায় লেখা একমাত্র ই-বুক। আগ্রহীরা অনলাইনে বিনামূল্যে বইটি পড়তে পারেন এই লিংক থেকে।
সকলের শুভেচ্ছা প্রত্যাশী।
সবাইকে বিজু-বিষু-বিহু-বৈষুক-সাংগ্রেং এবং বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।
জয় হোক- আদিবাসীর সংগ্রাম!
—
ছবি : গেরিলা নেতা সন্তু লারমার হাইড আইটে, দুদুকছড়া, খাগড়াছড়ি, ৫ মে, ১৯৯৪, বিপ্লব রহমান।
‘রিপোর্টারের ডায়েরি: পাহাড়ের পথে পথে’ পুনর্লিখনের কপি সংগ্রহের অপেক্ষায়।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ দিদি, এটি ঠিক পুনর্লিখন নয়, আরেকটি নতুন বই লেখার চেষ্টা। তুমি সব সময়ই আমার প্রেরণার উৎস।
শুভ নববর্ষ! (Y)
যেহেতু বইটি আমার সংগ্রহে নেই; তাই আগামী বইমেলায় অবশ্যই মনে কিনে ফেলবো 🙂
শুভ কামনা রইলো (Y)
@এম এস নিলয়,
আগ্রহের জন্য অনেক ধন্যবাদ। চলুক। (Y)
আশা করছি বইটি সম্পুর্ন নির্মোহ হবে… একাডেমিক ভাবে ক্লীব… এই পর্যন্ত ঐ অঞ্চল নিয়ে যা কিছু পড়তে গিয়েছি – অর্ধেক পড়েই বিরক্ত ধরে গিয়েছিল – অনেক মিথ্যা তথ্য না হলেও ক্ল্যাসিক্যাল মুনশিয়ানায় অনেক কিছু “চেপে যাওয়া” ছাড়াও নানা রকম ডিরোগেটোরি শব্দের ব্যবহার – হয়ত ওটাই স্বাভাবিক… কেননা সবগুলোই ছিল যার যার পক্ষের স্টেকহোল্ডার এর দায়িত্বপালন করা ব্যক্তিবর্গের।
অসংখ্য ধন্যবাদ… বইটি শেয়ার করার জন্য।
@সংবাদিকা,
আপনার পর্যবেক্ষণ ঠিকই আছে। অনেক আগেই রং-বেরঙের গোষ্ঠিবাদী সুবিধাবাদী রাজনীতির খপ্পরে পড়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। আমি বরাবরই চেষ্টা করছি এই বলয়ের বাইরে থাকার। আমার লেখনিও একই দর্শনজাত বলেই আমি মনে করি। বাদবাকী বিচারের ভার, পাঠক, আপনার! (Y)