একদিনের হানিমুন সেরে প্যারিসে ফিরলেন নবদম্পতি। ডি লা গ্লাসিয়ে রোডের একটা বহুতল ভবনের চারতলার সাদামাটা তিন রুমের অ্যাপার্টমেন্টে শুরু হলো পিয়ের-মেরির সংসার।
আসবাবপত্র বলতে তেমন কিছু নেই। পড়ার ঘরটাতে একটা টেবিল আর দুটো চেয়ার, শোবার ঘরে একটা পুরনো খাট আর কিচেনে একটা টেবিল আর কয়েকটা চেয়ার। ঘরের সব কাজ মেরি নিজেই করেন। সকালে একজন ঠিকে ঝি আসেন এক ঘন্টার জন্য; ভারী কাজগুলো করে দিয়ে যান। মেরি তখন দোকানে গিয়ে রুটি চিজ কিনে নিয়ে আসেন।
পিয়েরও হাত লাগান কিচেনে। দু’জনে ব্রেকফাস্ট সেরে লাঞ্চ-প্যাক সাথে নিয়ে বেরিয়ে যান ইপিসিআই’র উদ্দেশ্যে। পিয়ের সারাদিন ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। মেরি ইস্পাতের চৌম্বকধর্মের পরীক্ষা করেন পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষাগারে। বিকেলে দু’জন পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফেরেন। আসার পথে বাজার করে নিয়ে আসেন।
মেরি খেয়াল করে দেখেছেন পিয়ের খাবার দাবারের ব্যাপারে ভীষণ উদাসীন। বাঁচার জন্য খেতে হয় বলেই খাওয়া। এতবছর ধরে নিজের খাবার নিজে রান্না করে খেয়েছেন – কিন্তু কী খেয়েছেন ঠিক জানেনও না। মেরিরও একই অবস্থা। চা আর রুটি খেয়েই তিনি সরবোনের ছাত্রীজীবন কাটিয়েছেন।
এখন তাঁর ইচ্ছে হচ্ছে স্বামীর জন্য ভালো কিছু রান্না করতে। কিন্তু কিছুই তো রাঁধতে জানেন না তিনি। ব্রোনিয়ার শাশুড়ির কাছ থেকে বেশ কিছু রান্না শিখে নিলেন মেরি। বাড়িতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে করতে কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি রান্নায় বেশ দক্ষ হয়ে উঠলেন। নিজস্ব কিছু রান্নার রেসিপিও আবিষ্কার করে ফেললেন যেগুলো খুব কম সময়ে করে ফেলা যায়। মেরির রান্না খেয়ে পিয়ের প্রশংসা করেন ঠিকই – কিন্তু মেরি বুঝতে পারেন পিয়ের রান্নার স্বাদের ভালোমন্দ কিছুই বোঝেন না বা বোঝার প্রয়োজন মনে করেন না।
পিয়েরকে যতই দেখছেন অবাক হচ্ছেন মেরি – মানুষটা পারতপক্ষে একটা পিঁপড়াকেও কষ্ট দিতে চান না। কারো সাথে মতানৈক্য হলে খুবই ঠান্ডাভাবে নিজের মতামত জানান। কখনোই গলায় রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ পায় না। এমন ঠান্ডা মানুষটা আবার ভীষণ জেদি – কোন কিছুর ব্যাপারে মনস্থির করে ফেললে সেখান থেকে কিছুতেই সরানো যায় না তাঁকে।
প্রতিরাতে ডিনারের পর পড়ার ঘরের টেবিলের দু’দিকে দু’জন বসে পড়াশোনা করেন। পিয়ের তাঁর নতুন কোর্স রেডি করেন। আর মেরি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হাসি আনন্দ ভালোবাসা আর ব্যস্ততায় সুখের স্রোতে ভাসতে ভাসতে দ্রুত বছর কেটে যায়।
১৮৯৬ সালের আগস্ট মাসে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফল বেরোয়। মেরি কুরি এখানেও প্রথম হয়েছেন। প্যারিসের মেয়েদের স্কুলে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন মেরি।
আনন্দের কোন ঘটনা ঘটলে তা উদ্যাপনের জন্য মেরি আর পিয়ের সাইকেল ভ্রমণে বের হন। সাইকেলে চেপে কয়েক মাইল ঘুরে এসে আবার নিয়মিত পড়াশোনা। প্রতি সপ্তাহে সাইকেলে চেপে দু’জনে পিয়েরের মা-বাবাকে দেখে আসেন।
পরের বছর কুরি পরিবারে নতুন সদস্য আসার সম্ভাবনা দেখা দিলো। মা-বাবা হবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন পিয়ের ও মেরি। কিন্তু তাতে তাদের প্রাত্যাহিক পড়াশোনা ও গবেষণার রুটিনে কোন পরিবর্তন হলো না।
এত আনন্দের মধ্যেও কষ্টের ছায়া পড়লো – পিয়েরের মায়ের স্তন-ক্যান্সার ধরা পড়েছে। একেবারে শেষ সময়। ছোটবেলায় নিজের মাকে হারিয়ে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন মেরি। বিয়ের পর পিয়েরের মা নিজের মেয়ের মতই স্নেহ ভালোবাসা দিয়েছেন মেরিকে। পিয়ের যতটুকু সময় পাচ্ছেন মায়ের সেবা করছেন। ডাক্তার ইউজিন সারাক্ষণ লেগে আছেন স্ত্রীর সেবায়। কিন্তু ক্যান্সারের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি তখনো। কুরি পরিবারের আবহাওয়ায় একটা দুঃখের ছায়া ঘিরে ধরলো।
আসন্ন সন্তানসম্ভবা মেরি জুলাই মাসে কিছুটা মুক্ত-হাওয়ায় বিশ্রাম নেয়ার জন্য তাঁর বাবার কাছে চলে গেলেন পোর্ট ব্লাঁতে। মেরির বাবা তখন সেখানে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাচ্ছিলেন। বিয়ের পর এতদিন একটা দিনের জন্যও পিয়েরকে ছেড়ে থাকেননি মেরি। এই প্রথম পিয়েরকে ছেড়ে একা কোথাও রাত কাটাচ্ছেন তিনি। পিয়েরকে খুব মিস করছিলেন তিনি। এদিকে মায়ের সেবার জন্য প্যারিসে রয়ে যাওয়া পিয়েরও মেরির জন্য ছটফট করছিলেন। মাসখানেক পর পিয়েরের দাদা জাকো ছুটি নিয়ে মায়ের সেবা করার জন্য বাড়িতে এলে পিয়ের চলে আসেন মেরির কাছে।
পোর্ট ব্লাঁতে কোন নার্সিং হোম খুঁজে পেলেন না পিয়ের। তড়িঘড়ি প্যারিসে ফিরে এলেন তিনি মেরিকে নিয়ে। কিন্তু ততক্ষণে মেরির প্রসব বেদনা শুরু হয়ে গেছে। মেরিকে নিয়ে দ্রুত বাবার বাড়িতে চলে এলেন পিয়ের। ডাক্তার ইউজিনের হাতে ১৮৯৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জন্ম হলো পিয়ের ও মেরি কুরির প্রথম সন্তান। মা-বাবা মেয়ের নাম রাখলেন আইরিন। পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো। এর দু’সপ্তাহ পর পিয়েরের মা মারা যান।
কয়েক সপ্তাহ বিশ্রাম নিয়েই কাজে ফিরতে চাইলেন মেরি। ব্যক্তিগত কারণে কাজ বন্ধ রাখার পক্ষপাতী তিনি নন। আবার কাজে গিয়েই তাঁর মনে হতে থাকে – আইরিন ঠিক আছে তো? আইরিনের দেখাশোনার জন্য একজন নার্স নিয়োগ দিয়েছেন তাঁরা। তবুও মায়ের মন মানে না। কাজের মাঝে মেয়ের কথা মনে হলে হঠাৎ কাজ থামিয়ে দৌড়ে বাসায় এসে হাজির হন মেরি। আইরিন ঠিক মত ঘুমাচ্ছে দেখে আবার কাজে ফেরেন।
মেরির মনে হতে থাকে আইরিন তাঁর আরেকটি বিজ্ঞানিক প্রকল্প – যার ঠিকমত বেড়ে ওঠার সব দায়িত্ব তাঁদের। তিনি তাঁর গবেষণার ল্যাব-বই এর মত আইরিনের জন্যও একটা বড় খাতা তৈরি করলেন। সেখানে আইরিনের ক্রম-পরিবর্তনের বিস্তারিত বিবরণ লিখে রাখতে শুরু করলেন। দিনে ক’ঘন্টা ঘুমালো – ক’বার বাহ্যি করলো – কী খেলো – বমি করলো কিনা সবকিছু।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর একা হয়ে গেছেন ডাক্তার ইউজিন। এদিকে বাড়িতে শুধুমাত্র নার্সের হাতে মেয়েকে রেখে কাজে গিয়ে শান্তি পান না পিয়ের ও মেরি। তাঁরা গিয়ে বাবাকে বলতেই সানন্দে রাজী হয়ে গেলেন ডাক্তার ইউজিন কুরি। তিনি চলে এলেন পিয়ের ও মেরির বাসায়। দায়িত্ব নিলেন আইরিনের। আইরিনের জীবনে প্রথম ফ্রেন্ড, ফিলোসফার ও গাইড – তার দাদু ইউজিন কুরি। নিজের মা-বাবার চেয়েও দাদুর প্রভাব বেশি আইরিনের জীবনে।
নিশ্চিন্ত মনে কাজ করছেন মেরি ও পিয়ের। পিয়ের কৃস্টালের গঠনের ওপর চৌম্বকত্বের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। মেরি পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট করার জন্য উপযুক্ত বিষয় খুঁজছেন। মেরির আগে শুধু ফ্রান্সে নয় – পুরো ইউরোপেই কোন মেয়ে ডক্টরেট করেননি। পিয়ের সমানে উৎসাহ দিচ্ছেন মেরিকে।
গবেষণা করার জন্য বিষয় নির্বাচন করতে গিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাপত্রগুলো পড়তে পড়তে একটা গবেষণার প্রতি মেরির গভীর আগ্রহ সৃষ্টি হলো। ফ্রান্সের বিজ্ঞানী হেনরি বেকোয়ারেলের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ১৮৯৬ সালে। এর আগের বছর ১৮৯৫ সালে জার্মান বিজ্ঞানী উইলহেল্ম রন্টগেন এক্স-রে আবিষ্কার করে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেছেন। হেনরি বেকোয়ারেল চেষ্টা করছিলেন এক্স-রেকে কাজে লাগানোর। ফটোগ্রাফিক ফিল্ম এর উপর এক্স-রে নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে বেকোয়ারেল দেখলেন ইউরেনিয়াম থেকে স্বতস্ফূর্তভাবে এক প্রকার রশ্মি নির্গত হয়, যা দৃশ্যমান আলোর চেয়ে শক্তিশালী। এই রশ্মি এক্স-রে’র মতোই শক্ত ধাতব পদার্থ ভেদ করে ফটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর ছাপ রাখতে পারে। কিন্তু এক্স-রে এবং এই অজানা রশ্মি এক নয়।
বেকোয়ারেল এই সময় শুধু এইটুকু জানতেন যে অদৃশ্য শক্তিশালী রশ্মিগুলো বের হয়। কিন্তু রশ্মিগুলো কী বা কেন ওগুলো বের হয় তা নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামাননি। এমন কি বেকোয়ারেল নিজেও আর উৎসাহ দেখাননি। মেরি খুবই উৎসাহিত হয়ে উঠলেন এই রশ্মির উৎস সন্ধানে। সমস্ত অজানা প্রশ্ন যেন মেরির জন্যই অপেক্ষা করছিলো।
মেরি যে স্কুলে শিক্ষকতা করেন সেই স্কুলের স্টোর রুমটাকে গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি পেলেন। ছোট্ট সেই রুমটা এত স্যাঁতস্যাঁতে এবং ঠান্ডা যে অনেক যন্ত্রপাতি ঠিকমত কাজ করে না। তারপরও মেরি চেষ্টার ত্রুটি করেননি এতটুকু।
পিয়ের ও জাকো অনেকদিন আগে একটা সুবেদি ইলেকট্রোমিটার বানিয়েছিলেন। মেরি সেটাকে কাজে লাগালেন। ঐ ইলেকট্রোমিটার দিয়ে তিনি বেকোয়ারেলের আবিষ্কৃত ইউরেনিয়ামের রশ্মিগুলোর শক্তিমাত্রা পরিমাপ করতে লাগলেন।
দিনের পর দিন বিভিন্ন ধাতুর নমুনা নিয়ে পরীক্ষার পর পরীক্ষা করে মেরি দেখলেন যে রশ্মিগুলোর শক্তিমাত্রা নির্ভর করে নমুনায় ইউরেনিয়ামের পরিমাণের উপর। এই পরিমাণ যত বেশি হবে রশ্মিগুলোর শক্তিমাত্রাও তত বেশি হবে। ইউরেনিয়ামের সাথে কী মেশানো আছে, বা নমুনাটি শুষ্ক কিংবা ভেজা, শক্ত কিংবা দানাদার, ঠান্ডা বা গরম, এই সমস্ত অনুষঙ্গের উপর মোটেও তা নির্ভর করে না, শুধু নির্ভর করে নমুনায় কতটুকু ইউরেনিয়াম আছে তার উপর।
ইউরেনিয়াম ছাড়া আর কোন মৌল তেজষ্ক্রিয় রশ্মি ছড়ায় কিনা জানার জন্য মেরি সেই সময় পর্যন্ত জানা সবগুলো ধাতুই পরীক্ষা করে দেখলেন। দেখলেন ইউরেনিয়ামের মত থোরিয়াম থেকেও তেজষ্ক্রিয় রশ্মি বের হয়। উৎসাহিত হয়ে মেরি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেন। এবার বিভিন্ন ধরনের যৌগ নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে লাগলেন যদি তেজষ্ক্রিয়তা পাওয়া যায়। বালি, পাথর, খনিজ কিছুই বাদ গেলো না। একদিন ঘটলো অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা।
পিচব্লেন্ড পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখলেন ইউরেনিয়ামের চেয়ে চারগুণ শক্তিশালী তেজষ্ক্রিয় রশ্মি বের হচ্ছে। মাপতে ভুল করলেন না তো? আবার পরীক্ষা করলেন। বার বার, দশবার, বিশবার – প্রতিবারই একই ফল পাওয়া গেল। পরীক্ষা নির্ভুল। পিচব্লেন্ডে এমন কোন তেজষ্ক্রিয় মৌল আছে যা থোরিয়াম বা ইউরেনিয়ামের চেয়ে ভিন্ন এবং অধিক তেজষ্ক্রিয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা যেসব মৌলের কথা জানেন সেসব মৌলের সবগুলোকেই তো তিনি পরীক্ষা করে দেখেছেন। তবে কি নতুন কোন মৌলের সন্ধান পেতে চলেছেন তিনি? উত্তেজিত হয়ে উঠলেন মেরি।
উত্তেজনা ছড়িয়ে গেল পিয়েরের মধ্যেও। তিনি নিজের গবেষণা একপাশে সরিয়ে রেখে এগিয়ে এলেন মেরির গবেষণায় সাহায্য করতে। থোরিয়াম ও ইউরেনিয়ামের তেজষ্ক্রিয়তা সম্পর্কিত মেরির গবেষণাপত্র ফ্রেন্স একাডেমি অব সায়েন্সে পড়া হয়েছে এবং প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞান জগতে মেরির সার্থক প্রবেশ ঘটে গেছে। কিন্তু বিজ্ঞান জগতে নতুন কোন কিছুই তর্কাতীত নয়। কোন কোন বিজ্ঞানী সন্দেহ করলেন – মেরি হয়তো কোথাও ভুল করছেন। নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে হলে মেরিকে অবশ্যই অজানা মৌলটি আবিষ্কার করে দেখাতে হবে। পিচব্লেন্ডে যে অজানা মৌলটি আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাহলে পিচব্লেন্ড থেকে জানা মৌলগুলোকে আলাদা করে ফেললেই অজানা পদার্থটি পাওয়া যাবে।
শুরু হলো দিনরাত্রি পরিশ্রম। ১৮৯৮ সালের ৬ই জুন পাওয়া গেল একটি তেজষ্ক্রিয় নতুন মৌল যার তেজষ্ক্রিয়তা ততটা শক্তিশালী নয়। তাহলে? আরো একটা মৌল নিশ্চয় আছে। আবার কাজ। কাজের অগ্রগতি ল্যাব-বইতে লিখে রাখেন। এদিকে আইরিনের বেড়ে ওঠাও লিখে রাখেন সমান গুরুত্বের সাথে। যেমন ১৮৯৮ সালের ২০ জুলাই মেরি লিখছেন – “দশ মাস বয়সী আইরিন চার হাত-পা দিয়ে বেশ দ্রুত হাঁটতে পারে। কথা বলতেও শিখছে। আজ বললো – ‘গুগলি, গুগলি, গু’।”
১৮৯৮ সালের ডিসেম্বরে পাওয়া গেল সেই অতিশক্তিশালী মৌল – মেরি যার নাম রাখলেন রেডিয়াম। আগে পাওয়া মৌলটির নাম রাখলেন জন্মভূমি পোল্যান্ডের নামানুসারে পোলোনিয়াম।
মেরি ও পিয়েরের আগে আর কেউ দেখেননি রেডিয়াম। একতাল পিচব্লেন্ডের মধ্যে একটিমাত্র বালুকণার মত রেডিয়াম বর্তমান। তার শক্তিই এতো! কিন্তু বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেখাতে গেলে তো মোটামুটি কিছু পরিমাণ রেডিয়াম আলাদা করা দরকার। তারজন্য তাদের দরকার প্রচুর পরিমাণ পিচব্লেন্ড। পিয়ের ও মেরি খুঁজতে লাগলেন কোথায় পাওয়া যাবে প্রচুর পিচব্লেন্ড।
জানা গেলো অস্ট্রিয়ার একটি কারখানায় বর্জ্য হিসেবে পিচব্লেন্ড পাওয়া যায় এবং তারা তা ফেলে দেয়। কিন্তু তা বলে অন্য একটা দেশে গিয়ে টন টন পিচব্লেন্ড নিয়ে আসা তো সম্ভব নয়। সরকারি দপ্তরে অনেক দেনদরবার করে পিয়ের হাঙ্গেরিয়ান সরকারের অনুমোদন পেলেন কয়েক টন পিচব্লেন্ড নিয়ে আসার। হাঙ্গেরিয়ান কর্মকর্তারা মনে করলেন পিয়ের ও মেরি পাগল হয়ে গেছেন – তাই পয়সা খরচ করে মাটি নিয়ে যাচ্ছেন ফ্রান্সে। এদিকে আরেক সমস্যা দেখা দিলো। মেরির স্কুলের যে ভাঙা শেডে এতদিন কাজ করেছেন – তা এত ছোট যে সেখানে কাজ করা তো দূরের কথা পিচব্লেন্ড রাখার জায়গাও হবে না। কাজের জায়গা দরকার মেরি ও পিয়েরের। সমস্ত যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে সরবোন ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেন পিয়ের ও মেরি।
সরবোনের এলিট কর্মকর্তারা পিয়ের ও মেরিকে পাগল-দম্পতি হিসেবে নামকরণ করে ফেলেছে। সবাই আড়ালে হাসি-তামাশা করে পিয়ের ও মেরিকে নিয়ে। তাঁরা কোন সাহায্য করলেন না।
পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের নতুন পরিচালক প্রফেসর গ্যাব্রিয়েল আরো এককাঠি এগিয়ে গিয়ে ডিপার্টমেন্টে নোটিশ জারি করে দিয়েছেন – তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ যেন পিয়ের-মেরির সাথে কথা না বলেন। সরবোনের কোন ল্যাবে জায়গা হলো না মেরি ও পিয়েরের।
শেষ পর্যন্ত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মেরি ও পিয়েরকে সরবোন বিশ্ববিদ্যালয় যে জায়গাটি কাজ করার জন্য দিতে সম্মত হলো তা একটা পরিত্যক্ত শেড – যা মেডিকেল ফ্যাকাল্টির মর্গ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখন তার ছাদ ফুটো, মেঝে ভাঙা। গরমের দিনে উত্তপ্ত চুলা হয়ে ওঠে ঘরটি আর শীতে পানি জমে বরফ হয়ে হয়ে। অনন্যোপায় হয়ে সেখানেই কাজ শুরু করলেন মেরি ও পিয়ের।
গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে সিদ্ধ হতে হতে, শীতে প্রচন্ড ঠান্ডায় বরফ হতে হতে মেরি আর পিয়ের কাজ করতে লাগলেন। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। এক খাবলা পিচব্লেন্ড নিয়ে সোডার দ্রবণে মিশিয়ে সিদ্ধ করার পর পানিতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় অংশ পৃথক করেন। পরে অদ্রবণীয় অংশকে এসিডে দ্রবীভূত করেন। তার সাথে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে অনাকাঙ্খিত বস্তুকে একটার পর একটা আলাদা করে ফেলে দেন। এইভাবে বিরামহীন মিশ্রণ, দ্রবীভূতকরণ, তাপন, ছাঁকন, বিশুদ্ধীকরণ, কেলাসন চলতে থাকলো। যে কোন মৌল আলাদা করার পর পিয়ের তাঁর ইলেকট্রোমিটারে তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা মেপে দেখেন। পরীক্ষণীয় পিচব্লেন্ডের অবশেষ যতই কমতে থাকে তেজষ্ক্রিয়তার পরিমাণ ততই বাড়তে থাকে। বস্তা বস্তা পিচব্লেন্ড ছেঁকে তাঁরা বিন্দু বিন্দু রেডিয়াম সংগ্রহ করতে লাগলেন।
এদিকে বাসায় আইরিন বড় হচ্ছে তার দাদুর কোলে। সন্ধ্যায় ডিনারের জন্য যখন বাসায় আসেন মেরি ও পিয়ের – আইরিন ছুটে এসে মেরির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেরি তখন কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলে যান তাঁর রেডিয়ামের কথা। কিন্তু পিয়েরের তর সয় না। তিনি ছটফট করতে থাকেন কখন ফিরে যাবেন কাজের শেডে।
আইরিনকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে ঘুম পাড়ান মেরি। তারপর ঘুমন্ত মেয়েকে শ্বশুরের কোলে দিয়ে স্বামীর হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসেন পরিত্যক্ত মর্গে – তাঁদের গবেষণাগারে। কিছুক্ষণ আলো না জ্বালিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখেন – তাঁদের তিল তিল করে জমানো রেডিয়াম থেকে নীলাভ দ্যোতি বেরুচ্ছে।
১৮৯৯ সালে কাজ শুরু করেছিলেন তাঁরা। ১৯০২ সালে দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ মাস পর কুরি দম্পতি এক ডেসিগ্রাম (এক গ্রামের দশ ভাগের এক ভাগ) পরিমাণ বিশুদ্ধ রেডিয়াম সংগ্রহ করতে সমর্থ হলেন। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন এই অত্যাশ্চর্য শক্তিশালী তেজষ্ক্রিয় মৌলের আবিষ্কারে। রেডিয়ামের উজ্জ্বল নীলাভ আলোর মতই আলোকিত হয়ে উঠলেন মেরি ও পিয়ের কুরি।
ডক্টরাল থিসিস লেখার কাজ চলছে মেরির। ইতোমধ্যে তাঁরা রেডিয়াম ও রেডিও-অ্যাক্টিভিটি সংক্রান্ত বেশ কিছু যুগান্তকারী গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন পিয়ের ও মেরির যুগল নামে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক সমাজ মনে হচ্ছে মেরির চেয়ে পিয়েরকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে বক্তৃতা দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে পিয়েরকে।
১৯০৩ সালে মেরির থিসিস যখন প্রায় কমপ্লিট – তখন ইংল্যান্ডে রয়েল সোসাইটিতে রেডিয়াম সংক্রান্ত বক্তৃতা দেয়ার জন্য আমন্ত্রিত হলেন পিয়ের। মেরিও সাথে গেলেন তাঁর।
পিয়েরের বক্তৃতা শোনার জন্য লন্ডনের সব বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীই উপস্থিত হলেন। মেরি বসেছেন সামনের সারিতে লর্ড কেলভিনের পাশে। বক্তৃতায় পিয়ের মেরির অবদানের কথা খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করলেন। মেরির চোখ বার বার চলে যাচ্ছিলো বক্তৃতা শুনতে আসা সালংকারা প্রসাধনচর্চিত ব্রিটিশ মহিলাদের গায়ের ভারী ভারী দামী অলংকারের দিকে। মেরি ভাবছিলেন – কী পরিহাস জগতের। এরকম একটা গয়না বিক্রি করলে তাঁদের প্রয়োজনীয় ল্যাবোরেটরি তৈরি করে ফেলা যায়। মেরি অস্বস্তির সাথে এটাও খেয়াল করলেন যে সবাই তাঁর দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছেন যেন ভিন গ্রহের কোন প্রাণী দেখছেন – যিনি মহিলা হলেও বিজ্ঞানচর্চা করেন এবং যিনি এত দরিদ্র যে গায়ে একটাও অলংকার নেই! বক্তৃতাশেষে পিয়ের ও মেরিকে ১৯০৩ সালের ড্যাভি মেডেল প্রদান করা হলো।
জীবকোষের ওপর রেডিয়ামের প্রভাব চোখে পড়তে শুরু করেছে বিজ্ঞানীদের। পিয়ের নিজের বাহুতে রেডিয়াম চেপে ধরে দেখেছেন তাঁর চামড়া পুড়ে গেছে। ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার কাজে যে রেডিয়াম বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে তা বোঝা যাচ্ছে।
আমেরিকান ইঞ্জিনিয়াররা রেডিয়াম তৈরির পদ্ধতি জানতে চেয়ে চিঠি লিখেছেন পিয়েরের কাছে। রেডিয়ামের প্যাটেন্টের জন্য বিরাট অংকের টাকা অফার করছেন তারা। মেরির সাথে দীর্ঘ আলোচনা করলেন পিয়ের। রেডিয়াম আবিষ্কারের স্বত্ব নিজেদের নামে করে নিলে ঘরে বসেই কোটি কোটি টাকা উপার্জন করতে পারবেন তাঁরা। গবেষণা করার জন্য একটা ল্যাবোরেটরি নেই তাঁদের। রেডিয়ামের টাকাতেই তাঁরা তৈরি করতে পারবেন অত্যাধুনিক গবেষণাগার। আইরিনের ভবিষ্যত অনেক বেশি সুরক্ষিত হবে যদি তাঁদের টাকা থাকে।
কিন্তু দু’জনের কারোরই মন সাঁয় দিচ্ছে না বিজ্ঞানকে অর্থোপার্জনের হাতিয়ার করতে। তাঁরা বিশ্বাস করেন – বিজ্ঞান হবে মুক্ত। প্রকৃতিতেই আছে যে পদার্থ – তা খুঁজে পেলেই আমার নিজের বলে রেজিস্ট্রি করে নেবো – তা কীভাবে হয়? অনেক পরিশ্রম করে যে রেডিয়াম তাঁরা আবিষ্কার করেছেন – তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। কোন ধরনের প্যাটেন্ট করালেন না তাঁরা। এর আগে উইলহেল্ম রন্টগেনও এক্স-রে আবিষ্কারের কোন প্যাটেন্ট নেন নি। পিয়ের আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ারদের জানিয়ে দিলেন কীভাবে রেডিয়াম সংগ্রহ করতে হবে।
সরবোন ইউনিভার্সিটিতে ডক্টরাল থিসিস জমা দিলেন মেরি কুরি। ১৯০৩ সালের ১২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলো মেরির থিসিস বক্তৃতা শোনার জন্য। ব্রোনিয়ারা ফ্রান্স ছেড়ে পোল্যান্ডে চলে গেছেন। তাঁরা পোল্যান্ড থেকে এসেছেন মেরির বক্তৃতা শোনার জন্য। পিয়েরের বাবাও এসেছেন, বসেছেন পিয়েরের পাশে। পিয়েরের বন্ধু অধ্যাপক জাঁ পেরি ও পল লাঁজেভি এবং পিয়ের ও মেরির অনেক ছাত্র-ছাত্রীর সাথে সরবোনের অধ্যাপকরা।
বক্তৃতা ও প্রশ্নোত্তর শেষে পরীক্ষকদের সর্বসম্মতিক্রমে প্রফেসর লিপম্যান মেরিকে ডক্টরেট ঘোষণা করলেন। বিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক স্থাপন করলেন মেরি কুরি – শুধু সরবোন বিশ্ববিদ্যালয় নয় – পুরো ইউরোপের প্রথম নারী ডক্টরেট হয়ে।
অতি-পরিশ্রম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম ও শরীরের প্রতি অযত্নের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করলো। পিয়ের ও মেরি উভয়েরই শরীর খুব খারাপ হয়ে গেছে। ওজন কমে গিয়ে কংকালসার হয়ে গেছেন দু’জনই। বন্ধু ও সহকর্মীরা সবাই খুব চিন্তিত তাঁদের ব্যাপারে। অত্যধিক তেজষ্ক্রিয়তা শরীরের ভেতরটা ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে তাঁদের। কিন্তু তাঁরা তা বুঝতে পারছেন না।
ইতোমধ্যে মেরি দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ করেছেন। কিন্তু যেটুকু যত্ন নিজের নেয়া উচিত তা তিনি নিচ্ছেন না। পাঁচ মাসের গর্ভবতী অবস্থায় সাইকেলে চড়তে গিয়ে মারাত্মক রকমের আহত হন মেরি। অতিরিক্ত অন্তঃক্ষরণে তাঁর মিসক্যারেজ হয়ে যায়। খুবই মুষড়ে পড়েন তিনি।
এত কষ্টের মধ্যেও আনন্দের সংবাদ আসে সুইডেনের নোবেল কমিটির কাছ থেকে। ১৯০৩ সালের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন যৌথভাবে হেনরি বেকোয়ারেল, পিয়ের এবং মেরি কুরি।
পিয়ের অনেক বেশি খুশি হন এই সংবাদে। কারণ এর কিছুদিন আগে নোবেল কমিটির এক সদস্য সুইডেনের গণিতবিদ ম্যাগনাস মিট্যাগ-লেফ্লার পিয়েরকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে নোবেল কমিটি নোবেল পুরষ্কারের জন্য বিবেচনা করছে বেকোয়ারেল ও পিয়েরের নাম। মেরি কুরির নাম নেই কোথাও। মিট্যাগ-লেফ্লার বিজ্ঞানে মেয়েদের অংশগ্রহণের পক্ষে কাজ করেন। তিনি মেরির যোগ্য পুরষ্কার থেকে মেরিকে বঞ্চিত করার চেষ্টা সহজে মেনে নিতে পারেননি। পিয়ের তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন তেজষ্ক্রিয়তার কাজের জন্য নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্য হলে তা পিয়ের ও মেরি দু’জনেরই প্রাপ্য। নোবেল কমিটি পিয়েরের চিঠিকে গুরুত্ব দিয়েছে।
১৯০৩ সালের জন্য মেরি কুরির নাম প্রস্তাব করেননি কেউ। অথচ ১৯০১ ও ১৯০২ সালে তাঁর নাম প্রস্তাবিত হয়েছিল। সেখান থেকে একটি প্রস্তাবকে কাজে লাগিয়ে ১৯০৩ সালে মেরি কুরিকে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হলো। বিজ্ঞানের ইতিহাসে আরেকটি মাইলফলক স্থাপন করলেন মেরি কুরি। তিনিই হলেন প্রথম নারী নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী।
নোবেল পুরষ্কার পাবার পর রাতারাতি প্রচার-মাধ্যমের নজরে চলে এলেন মেরি ও পিয়ের। সাক্ষাৎকার নেবার জন্য সাংবাদিকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। পিয়ের ও মেরি ভীষণ বিরক্ত। তাঁদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দিন-রাত নানারকম অনুষ্ঠান সংবর্ধনা ভোজ-সভায় যোগ দিতে হচ্ছে অনিচ্ছাসত্ত্বেও।
প্রতিদিন শত শত চিঠি আসছে মেরি আর পিয়েরের ঠিকানায়। ডিনারের পর চিঠির স্তূপ সামনে নিয়ে বসেন মেরি – সবগুলো চিঠি খুলে খুলে পড়েন। যেগুলোর উত্তর দিতে হবে মনে করেন – আলাদা করে রাখেন। তবে সেরকম চিঠির সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগ চিঠিই অভিনন্দন বার্তা, প্রশংসা আর কিছু কিছু একেবারেই অর্থহীন বিরক্তিকর। যেমন আমেরিকা থেকে একজন চিঠি লিখে জানাচ্ছেন তিনি তাঁর রেসের ঘোড়ার নাম রেখেছেন ‘কুরি’। পিয়ের বিরক্ত হয়ে উঠছেন – কারণ নোবেল পুরষ্কার পাবার পর থেকে গবেষণা করারই সময় পাচ্ছেন না তাঁরা। কিছুটা বিরক্ত হয়ে তিনি মেরিকে বলেন – “এসব চিঠি পড়ার কি কোন দরকার আছে মেরি?”
“অবশ্যই আছে। ধরো পৃথিবীর কোন এক প্রান্ত থেকে কেউ একজন এমন কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য জানতে চাচ্ছেন যা পেলে তাঁর গবেষণার উন্নতি হবে। বিজ্ঞানের উন্নতি মানে তো সবারই উন্নতি। তার জন্য এতটুকু কষ্টতো আমাদের করতেই হবে পিয়ের।”
সাংবাদিকরা দিনরাত মেরি আর পিয়েরের খবর পাবার জন্য ঘুরছে। বাসায় এসে তাঁদেরকে না পেয়ে ছয় বছরের শিশু আইরিনকেও নানা-রকম প্রশ্ন করে। ডিনারে তারা কী খায়, মেরি রান্না করেন কিনা, কখন ঘুমান এই জাতীয় সব ব্যক্তিগত তথ্যের প্রতিই বেশি আগ্রহ সাংবাদিকদের। প্যারিসের সংবাদপত্রে নানারকম সংবাদ বেরোতে থাকে মেরি-পিয়েরের সম্পর্কে। সবগুলো সংবাদপত্রে ফ্রান্সের ‘মেধাবী সন্তান’ পিয়েরের ভূয়সী প্রশংসার পাশে মেরির উল্লেখ এমন যেন মেরি পিয়েরের কাজে সামান্য কিছু সাহায্য করেছেন মাত্র। অনেক কাগজে মেরির কোন উল্লেখই নেই। আবার কয়েকটা কাগজে মেরির কড়া সমালোচনা – মেরি সংসারের প্রতি অমনযোগী। শিশু সন্তানের প্রতিও তাঁর মনযোগ নেই। শিশু সন্তানকে একা একা খাবার খেতে হয়। মেরি যে পোল্যান্ড থেকে আগত বিদেশিনী, ফ্রান্সের কেউ নন – তাও প্রচার করে অনেক রিপোর্টার।
মেরি অবশ্য এসবে তেমন গুরুত্ব দেন না। তাঁর দুঃখ – এত অর্জনের পরেও পিয়ের বা তাঁর একাডেমিক স্বীকৃতি নেই। পিয়ের নোবেল পুরষ্কার পাবার পরেও ইপিসিআই’র ‘অধ্যাপক’ নন – একজন ল্যাবোরেটরি টেকনিশিয়ান মাত্র। আর মেরি কুরি একটা মেয়েদের হাইস্কুলের ফিজিক্সের শিক্ষক।
এদিকে সারাপৃথিবীর প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হয়ে চলেছে মেরি ও পিয়েরের অর্জনের খবর। তার চেয়েও বেশি প্রচারিত হচ্ছে এই যে তাঁরা কীরকম কষ্ট করে একটা ভাঙা শেডের মধ্যে গবেষণাকাজ চালিয়েছেন। ইপিসিআই কর্তৃপক্ষ পিয়ের কুরিকে দ্রুত প্রফেসর পদে প্রমোশন দিল। ফরাসি সরকার নিজেদের লজ্জা ঢাকার জন্য পিয়েরকে সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর পদে নিয়োগের প্রস্তাব দিলেন। পিয়ের সেই প্রস্তাবে রাজি হবার আগে শর্ত দিলেন – তাঁর ল্যাবোরেটরি লাগবে। সরকার শর্ত মেনে নিল। সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটো পদ তৈরি হলো পিয়ের কুরির জন্য অধ্যাপক পদ আর মেরি কুরির জন্য তাঁর গবেষণা সহকারির পদ।
সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য নানারকম কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন পিয়ের। মেরি তাঁকে বুঝিয়ে রাজি করালেন ইপিসিআই’র পদটি ছেড়ে দিতে। পিয়ের তাই করলেন। মেরি তাঁর স্কুলের চাকরিটি ছাড়লেন না। সরবোনের গবেষণা সহকারির চাকরি আর স্কুলের চাকরি দুটোই রইলো তাঁর।
নোবেল পুরষ্কার নিতে মেরি বা পিয়ের কেউই স্টকহোমে যেতে পারেননি শারীরিক অসুস্থতার কারণে।
সরকার কথা দিলেও পিয়েরের ল্যাবোরেটরি তৈরির সরকারী আদেশ আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার ফাঁসে আটকা পড়ে আছে। এরমধ্যে ফরাসি সরকার পিয়েরকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘লিজিয়ন অব অনার’ দিতে চাইলে পিয়ের তা প্রত্যাখান করে বলেন, “আমাদের এখন এরকম অলংকারের চেয়েও বেশি দরকার গবেষণা করার ল্যাবোরেটরি। দয়া করে তার ব্যবস্থা করেন।”
১৯০৪ সালের ৬ই ডিসেম্বর মেরি ও পিয়েরের দ্বিতীয় কন্যা ইভ কুরির জন্ম হয়। আইরিন ও ইভকে নিয়ে বৃদ্ধ ইউজিন কুরির আনন্দে সময় কাটে। মেরি ও পিয়ের একাডেমিক ও বৈজ্ঞানিক কাজকর্মে ব্যস্ত। নোবেল পুরষ্কারের টাকার একটা অংশ দিয়ে তাঁরা একটা গবেষণা-কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছেন। সরবোনে তেজষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত নতুন কোর্স তৈরি করছেন পিয়ের। মেরিও চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাঁর রেডিয়ামের ভবিষ্যৎ ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছেন, গবেষণাপত্র রচনা করছেন।
এত ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁরা একটা নিয়মিত সামাজিক আড্ডা দেবার সময় বের করে নিয়েছেন। নিজেদের বাড়ির বাগানে বসে রবিবার বিকেলে সবাই মিলে আড্ডা দেন। সেই আড্ডায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে যোগ দেন প্রতিবেশী বন্ধু ও অধ্যাপকেরা। আইরিনের বয়স এখন আট, ইভ মাত্র একবছর। অধ্যাপক জাঁ পেরি কুরিদের পাশেই থাকেন। [জাঁ পেরি ১৯২৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন।] পেরির স্ত্রী হেনরিয়েট মেরির বন্ধু। হেনরিয়েটের মেয়ে আলিন আইরিনের বন্ধু। আড্ডায় আরো একজন নিয়মিত যোগ দেন – তিনি হলেন ইপিসিআই এর পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পল লাঁজেভি।
শুরুতে সামাজিক হালকা কথাবার্তা হলেও কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায় আলাপ আলোচনা সব বৈজ্ঞানিক কর্মকান্ড সংক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানচর্চা যে কখনোই মানবতাবর্জিত হয়ে পারে না সে ব্যাপারে সবাই একমত। বিজ্ঞানকে টাকা উপার্জনের অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করার ঘোর বিপক্ষে সবাই। তাই তো দেখা যায় ডাক্তারি করে যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করতে পারতেন – সেখানে মানুষকে ভালোবেসে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করেননি পিয়েরের বাবা ইউজিন কুরি।
তাঁর ছেলেরাও হয়েছেন তেমনি। নোবেল পুরষ্কার পাবার পরেও দুটো চাকরি করতে হচ্ছে মেরি কুরিকে। রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কারের প্যাটেন্ট নিলে কোটি কোটি ফ্রাঙ্ক উপার্জন করা কোন ব্যাপারই ছিল না মেরি ও পিয়েরের জন্য।
দুর্দান্ত বিজ্ঞানী পল লাঁজেভি। স্বয়ং আইনস্টাইন বলেছেন লাঁজেভি সম্পর্কে – “আমি যদি আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিষ্কার না করতাম তাহলে লাঁজেভি তা আবিষ্কার করতেন।” লাঁজেভি স্ত্রী ও চার সন্তানের ভরণ-পোষণ মেটাতে ইপিসিআই’র অধ্যাপনা ছাড়াও মেরির স্কুলেও পার্ট-টাইম পড়ান।
১৯০৬ সাল এসে গেলো। সরবোনে পিয়েরের ল্যাব এখনো তৈরি হয়নি। সরকারের নানা টালবাহানা চলছে তো চলছেই। পিয়ের ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন ধনীলোকের কাছে আবেদনও করেছেন। কিন্তু তেমন কোন সাড়া মেলেনি। বিজ্ঞানের সুফল ভোগ করে সবাই, প্রশংসা করে কেউ কেউ, কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নয়নে গাঁটের পয়সা খরচ করতে রাজি নয় কেউ। নানা কাজে প্রচন্ড ব্যস্ত পিয়ের। মেরিও সমানে ব্যস্ত। বাড়িতে আইরিন ও ইভকে দেখার জন্য একজন সার্বক্ষণিক আয়া রাখা হয়েছে। পিয়ের দিন দিন ভুলোমনা হয়ে যাচ্ছেন। গবেষণা, ল্যাব, ইউনিভার্সিটির কাজ ছাড়া ব্যক্তিগত সুখদুঃখের কোন ব্যাপারই যেন তাঁর নেই। এক সাথে খেতে বসলেও দেখা যাচ্ছে কেবল কাজের কথাই হচ্ছে। মেরি বিশেষ দিনে হয়তো পিয়েরের জন্য ভালো কোন খাবার তৈরি করলেন। পিয়ের খেতে বসে ঠিকমত খেয়ালই করলেন না কী খেলেন।
ইস্টারের ছুটিতে সবাই মিলে প্যারিস থেকে এক ঘন্টার দূরত্বে একটা ফার্ম হাউজে কাটিয়ে এলেন কয়েকদিন। মেরি বিশ্বাস করেন খোলামেলা পরিবেশেই ছেলেমেয়েদের মেধার বিকাশ ঘটে। ওখান থেকে প্যারিসে ফিরলেন ১৮ এপ্রিল। এসেই সন্ধ্যাবেলা ছুটলেন ফিজিক্যাল সোসাইটির অ্যানুয়েল ডিনারে। সেখানে গণিতবিদ হেন্রি পয়েনকেয়ারের সাথে অনেক কথা হলো কুরিদের। ফেরার পথে ঝুম বৃষ্টি। প্রায় আধভেজা হয়ে ঘরে ফিরলেন মেরি ও পিয়ের। সারা রাত ধরে অঝোরে বৃষ্টি হলো প্যারিসে।
পরদিন সকালেও বৃষ্টি থামেনি। ইউনিভার্সিটিতে যাবার জন্য ছাতা হাতে রেডি হলেন পিয়ের। মেরি তখন দোতলায় আইরিনকে রেডি করাচ্ছেন। নিচে বেরোবার মুখে পিয়ের ডাকলেন মেরিকে,
“তুমি কি দুপুরে ইউনিভার্সিটিতে যাবে? আমার সাথে কি দেখা হবে?”
“না, তুমি যাও। আমি কোথায় ব্যস্ত থাকি জানি না। আমার জন্য অপেক্ষা করো না” – দোতলা থেকে জবাব দেন মেরি। ছাতা মাথায় বেরিয়ে যান পিয়ের।
ইউনিভার্সিটিতে অনেক কাজ ছিল তাঁর। লাঞ্চটাইমে প্রফেসর্স অ্যাসোসিয়েশনের মিটিং। পিয়ের অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। প্রফেসরদের অনেকের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধুত্বও আছে। তাঁদের অনেকের সেই রাতে পিয়ের-মেরির বাসায় ডিনারের নিমন্ত্রণ।
বেলা আড়াইটার দিকে মিটিং শেষ করে বন্ধুদের ডিনারের নিমন্ত্রণের কথা মনে করিয়ে দিয়ে পিয়ের জাঁ পেরিকে সাথে নিয়ে ছুটলেন গ্রান্ড অগাস্টিনের উদ্দেশ্যে। সেখানে একটি বই প্রকাশকের সাথে তাঁর প্রুফ দেখার কথা। গিয়ে দেখলেন প্রকাশকের অফিস বন্ধ। জাঁ পেরি সেখান থেকে নিজের বাসায় চলে গেলেন। পিয়ের ‘সন্ধ্যায় দেখা হবে’ বলে বিদায় দিলেন পেরিকে। বাসায় ফেরার পথে লাইব্রেরি হয়ে যাবার জন্য ইউনিভার্সিটির দিকে হাঁটতে শুরু করলেন।
রাস্তায় প্রচন্ড ভীড়। বৃষ্টিতে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে আছে রাস্তা। ঘোড়ায় টানা গাড়ি ছুটে চলেছে দু’দিক থেকেই। বড় বড় ওয়াগন টেনে নিয়ে যাচ্ছে অনেকগুলো ঘোড়া। প্রচন্ড ভীড়ে ঘোড়াগুলোকে সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে চালক। এমন সময় সেনাবাহিনীর পোশাক-ভর্তি বড় একটা ওয়াগন আসতে দেখা গেল।
দ্রুত রাস্তা পার হতে গিয়ে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেলেন পিয়ের। লোকজন হৈ চৈ করে ঘোড়ার গাড়িটাকে থামতে বললো। চালক ঘোড়াদের থামানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। ঘোড়াগুলো চলতেই থাকলো। চালক কোনরকমে গাড়ির সামনের চাকা থেকে পিয়েরকে বাঁচালেন। কিন্তু পিয়ের উঠে বসার আগেই পেছনের চাকা তাঁর ঠিক মাথার খুলির উপর দিয়ে গড়িয়ে গেল। রাস্তায় ছিটকে পড়লো পিয়েরের মগজ। সাথে সাথেই মৃত্যু হলো তাঁর। কপালের উপর থেকে মাথার খুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল শরীর থেকে। অথচ চোখ নাক মুখ সহ শরীরের বাকি অংশ অক্ষত।
পিয়েরের পকেট থেকে ইউনিভার্সিটির পরিচয়পত্র দেখে তাঁকে শনাক্ত করলেন স্থানীয় পুলিশ। দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়লো প্যারিসের একাডেমিক জগতে। ইউনিভার্সিটি থেকে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই ছুটে এলেন ঘটনাস্থলে।
এদিকে পিয়েরের বাড়িতে একের পর এক অফিসার এসে মেরির খোঁজ করছেন। মেরি আর আইরিন তখনো স্কুলে। ষোল মাস বয়সী ইভকে নিয়ে বাসায় আছেন পিয়েরের বাবা। কেউ তাঁকে কিছু বলছেন না। কিন্তু তিনি বুঝতে পারছেন কিছু একটা হয়েছে। শেষে জাঁ পেরিকে দেখে বুঝলেন পিয়েরের মারাত্মক কিছু হয়েছে। পিয়ের আর নেই। মাত্র ৪৭ বছর বয়সেই তাঁর ছেলে মরে গেলো! এভাবেই শেষ হয়ে গেল বিপুল সম্ভাবনাময় এক বিজ্ঞানীর জীবন। শোকে বুক ভেঙে যাচ্ছে ডাক্তার ইউজিনের। অবুঝ নাতনিকে বুকে ধরে নিজেকে শক্ত করে রেখে অপেক্ষা করছেন মেরির জন্য।
সেদিন অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা আগেই শেষ হয়ে গেলো মেরির কাজ। আইরিনকে সাথে নিয়ে বাসায় ফিরলেন একটু তাড়াতাড়ি। সন্ধ্যায় প্রফেসরদের ডিনারের ব্যবস্থা করতে হবে বাসায়। কিন্তু বাসার কাছে আসতেই লোকজনের ভীড় দেখে কিছুটা অবাক হয়ে গেলেন তিনি।
শুরুতে মনে হলো পিয়েরের বাবার কিছু হলো না তো? কিন্তু ঘরে ঢুকতেই দেখলেন ইভকে কোলে নিয়ে ম্লানমুখে বসে আছেন ইউজিন। তবে কি পিয়ের? বুকটা ধক্ করে উঠলো মেরির।
সরবোন ইউনিভার্সিটির সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডিন পল আপ্পেল মেরিকে জানালেন পিয়েরের দুর্ঘটনার কথা। স্তব্ধ হয়ে সব শুনলেন মেরি। জাঁ পেরির স্ত্রী হেনরিয়েটকে অনুরোধ করলেন আইরিন আর ইভকে নিয়ে যেন তাঁদের বাসায় চলে যান এবং কয়েকদিন তাদের দেখাশোনা করেন। হেনরিয়েট আইরিন আর ইভকে নিয়ে চলে গেলেন নিজের বাসায়। এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না ইউজিন। উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলেন তিনি। মেরি শোকে পাথর হয়ে গেছেন।
থানা থেকে এক অফিসার এসে পিয়েরের জিনিসপত্র দিয়ে গেলেন। পিয়েরের কলম, চাবি, ওয়ালেট। চশমাটাও অক্ষত আছে। কেবল পিয়েরই নেই।
রাত আটটায় পিয়েরের মৃতদেহ বাসায় আনা হলো। পিয়েরের শরীর ধরে শক্ত হয়ে বসে রইলেন মেরি। তাঁকে কিছুতেই ছাড়ানো যাচ্ছিল না। শেষে জোর করে সরিয়ে নেয়া হলো মেরিকে। পরদিন সমস্ত আত্মীয়স্বজন শুভাকাঙ্খী সহকর্মী সাংবাদিক রাষ্ট্রনেতাদের উপস্থিতিতে পিয়েরের শেষকৃত্য সম্পন্ন হলো। পিয়েরের বাড়ির কাছে স্সো’র কবরস্থানে কবর দেয়া হলো পিয়েরকে।
[পর্ব – ৪]
আপনার বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখা গুলী হয়ে উঠুক ঘরে ঘরে বিজ্ঞানের প্রতি উৎসাহ ব্যজ্ঞক।
@বাবু, অনেক ধন্যবাদ। বিজ্ঞানের প্রতি বাঙালিদের উৎসাহ দিনে দিনে কমে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তবুও আশা – আমাদের সবার প্রচেষ্টা হয়তো বিফলে যাবে না।
এই পর্বটা পড়ে নিজেকে সামলানো সত্যিই কঠিন, পিয়েরে আর মেরির কাহিনী সত্যিকার অর্থেই যেকোন গল্পকেও হার মানায়।
লেখকের প্রশংসা করার মতো নতুন আর কোন শব্দ আমার কাছে নেই, তাই আর কিছু না বলি!
@রামগড়ুড়ের ছানা, অনেক ধন্যবাদ।