বাংলাদেশের হিন্দুরা ঠিক কী রকমের আতঙ্কে দিন কাটান তা তাঁদের একজন না হলে ঠিকমতো বুঝতে পারা সম্ভব নয়। সংবেদনশীল বিবেকবান মানুষ সহানুভূতি অনুভব করবেন ঠিকই – কিন্তু সামান্য হলেও বোধের তারতম্য একটু থাকবেই।
বাংলাদেশের হিন্দুরা ‘মালাউন’ শব্দের সাথে বিশেষভাবে পরিচিত। কারণ জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে তাঁদের এই শব্দটা শুনতে হয় এবং বেশির ভাগ সময় শুনে হজম করে ফেলতে হয়। প্রতিকারের অক্ষমতা মানুষকে প্রতিবাদে নিরুৎসাহিত করে। ক্ষমতাহীন মানুষ ‘মাইন্ড’ করলেও কারো কিছু যায় আসে না। ফলে হিন্দুদের মালাউন বললে এখন আর তাঁদের ‘মাইন্ড’ করার উপায় নেই।
বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের পরিমার্জিত সংস্করণের ৯৮১ পৃষ্ঠায় মালাউন শব্দের তিনটি অর্থ দেয়া আছে। ১. লানতপ্রাপ্ত; অভিশপ্ত; বিতাড়িত; কাফের। ২. শয়তান। ৩. মুসলমান কর্তৃক ভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের লোককে দেয় গালিবিশেষ। লানত শব্দের অর্থ নিয়ে সমস্যায় ছিলাম। অভিধানের ১০৫৪ পৃষ্ঠায় সে সমস্যার সমাধান মিললো। লানত শব্দেরও তিনটা অর্থ দেয়া আছে। ১. অভিশাপ। ২. অপমান; লাঞ্ছনা; ভর্ৎসনা। ৩. শাস্তি।
মনে হচ্ছে মালাউন শব্দের অর্থের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার চলছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের হিন্দুরা প্রতিদিনই বুঝতে পারছে বাংলাদেশে হিন্দু হয়ে জন্মনেয়াটা অভিশাপের শামিল, প্রতিদিনই তাঁদের কোন না কোনভাবে অপমানিত হতে হয়। অপরাধ না করলেও শাস্তি পেতে হয় – মালাউন হওয়ার চেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে পারে?
ছবিতে যে অপমানিত লাঞ্ছিত ক্রন্দনরত প্রাণভয়ে পলায়নরত মানুষগুলোকে দেখতে পাচ্ছেন তাঁদের অপরাধ কী? অপরাধ একটাই – তাঁরা সবাই হিন্দু। এই মানুষগুলোর কেউই পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেননি, নির্বাচন প্রতিহত করার ‘জেহাদ’-এও অংশ নেননি। হিন্দুর ঘরে জন্মনেয়ার ব্যাপারেও তাঁদের নিজেদের কোন হাত ছিল না। কিন্তু বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে নাকি লেখা আছে – মানুষের ভাগ্যে কী ঘটবে তা পূর্ব-নির্ধারিত। তাই কি এঁদের সারাজীবনের তিল তিল করে গড়ে তোলা আশ্রয়টুকুরও এই অবস্থা করে দেয়া যায়?
আমি জানি উপরের দুটো ছবির বিষয়বস্তুর সাথে আমার মতো আরো অনেকেরই অনেকদিনের পরিচয়। ১৯৭১ সালে আমাদের গ্রামে এই ছবিটা তোলা হলে এই অসহায় মানুষগুলোর ভীড়ে আমার বাবার আতঙ্কিত মুখও দেখা যেতো। দেখা যেতো তাঁর শিশুসন্তানদের কোলে পিঠে নিয়ে যাত্রা করেছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। লক্ষ্য একটাই কীভাবে বাঁচাবেন নিজের সন্তানদের প্রাণ। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া এই বাড়িটার সাথে আমাদের বাড়ির পোড়া-ছাইয়ে কোন পার্থক্য নেই। কেবল পার্থক্য সময়ের – ১৯৭১ থেকে ২০১৪।
১৯৭১-এ শত আতঙ্কের মধ্যেও একটা স্বপ্ন ছিল – একদিন বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। সেই স্বপ্নে মানুষ কষ্টকে কষ্ট মনে করেননি। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও যখন বারবার অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি ঘটে বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর, কিসের স্বপ্ন দেখবে আজকের আতঙ্কিত হিন্দুরা?
বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবীর উর্বর ক্ষেত্র। এইদেশে কাজের মানুষ নেই – কিন্তু কথা বলার মানুষের অভাব নেই। যে কোন বিষয়েই বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণে কান ঝালাপালা করে দেয়ার মানুষের অভাব নেই। কিন্তু সেই বিশ্লেষণ আতঙ্ক বাড়াতে হয়তো কিছুটা সহায়তা করে – কিন্তু হিন্দুদের আতঙ্ক কমাতে পারে না কিছুতেই।
রাউজানের ফজলুল কাদের চৌধুরি তাঁর এলাকার হিন্দুদের তুলনা করতেন তাঁর পুকুরের মাছের সাথে – যেগুলো তাঁর পুকুরে ভীষণ নিরাপদে স্বাধীনভাবে বাস করে। সালাহ্উদ্দিন কাদের চৌধুরিও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাঁর আব্বার কথাগুলোই বলতেন। তাঁরাই এলাকার হিন্দুদের রক্ষাকর্তা!
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকাতেই এরকম কিছু রক্ষাকর্তা জন্মেছেন বা বেড়ে উঠেছেন গত ৪২ বছরে। বাংলাদেশের হিন্দুরা এখন এসব রক্ষাকর্তার পুকুরের মাছ। প্রাণভয়ে আক্ষরিক অর্থেই পুকুরের ঠান্ডা পানিতে গলা ডুবিয়ে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশের আতঙ্কিত হিন্দুদের।
এখন অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রভাবশালী মুসলমানরা বলতে শুরু করেছেন তাঁরা হিন্দুদের রক্ষা করবেন। এই বীরেরা অবশ্যই আতঙ্কিত হিন্দুদের রক্ষা করবেন। বার্টোল্ট ব্রাখ্টের গ্যালিলিও নাটকের দুটো সংলাপ মনে হয় প্রাসঙ্গিক হবে এখানে:
– দুর্ভাগা সেই জাতি যে জাতি বীরের মর্যাদা দিতে জানে না।
– না, দুর্ভাগা সেই জাতি যে জাতির বীরের প্রয়োজন হয়।
ধর্মীয় বিভাজন যতদিন থাকবে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ‘মালাউন’ হয়েই থাকবে। তাদের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকবে এবং তাদের ওপর সংখ্যাগুরুদের অত্যাচার ক্রমশ বাড়তে থাকবে। তারপরেও মাঝে মাঝে তারা কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে – যেমন পুকুরের মাছেরা স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে।
এসব সংখ্যাগুরু জনগণের সমাজপতিদের নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার স্ট্যান্ড বাজি যারা নিজেদের হীন স্বার্থে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার এবং সমাজে বিষেদগার ছড়ায়…
@সংবাদিকা,
কারা? কোন দল? পরিষ্কার করে বলুন না!
কেউ বলতে পারেন কি আজকের ভৌগোলিক বাংলাদেশে কতগুলো পাঠশালা, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, লঙ্গরখানা, কল্যাণ ট্রাস্ট, অনাথ আশ্রম ইতাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি হিন্দুদের দান?
সংবিধানের মাথায় বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রৰ্ধম ইসলাম রেখে কি রাষ্ট্রে ৰ্ধমীয় বিভাজন রোধ করা সম্ভব ? কিংবা,
শিশু-কিশোরদের ৰ্ধমশিক্ষার নামে সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দিয়ে পরবৰ্তীতে তাদের কাছ থেকে অসাম্প্রদায়িক মনোভাব আশা করা কি উচিৎ ?
আমাদের রাষ্ট্রের শাসনভার যাদের উপর রয়েছে তারা কথায় কথায় অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার কথা বলে কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার মূল বিষয়গুলো অজানা কারন বশতঃ এড়িয়ে যায়। সরকারের কাছে সকল বাঙ্গালির এখন দাবী হওয়া উচিৎ অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার কথা বলার আগে দেশগঠনের মূলনীতি, সংবিধানকে অসাম্প্রদায়িক করা হোক।
হে তারা সবসময় পুকুরের মাছ। যখন খুশী জাল ফেলে ভূরিভোজ সম্পন্ন করে তাদের রক্ষাকর্তারা।
আমি হতে চাই “মানুষ”
অমল রায়
আমি শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন,
আমি সেই মুসলমানদের দলভুক্ত নই –
যে মুসলমান আক্রমন করে কোন হিন্দু, হিহুদী, বৌদ্ধ, বা খ্রিষ্টানকে –
কারণ আমি হতে চাই কেবল একজন মানুষ !
আমি সুধাংশু শেখর ঠাকুর,
আমি সেই হিন্দুদের দলভুক্ত নই –
যে হিন্দু আক্রমন করে কোন মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা ইহুদিকে –
কারণ আমি হতে চাই কেবল একজন মানুষ !
আমি অচিন্ত্য কুমার বড়ুয়া,
আমি সেই বৌদ্ধদের দলভুক্ত নই –
যে বৌদ্ধ আক্রমন করে কোন মুসলিম, হিহুদী, খ্রিষ্টান বা হিন্দুকে –
কারণ আমি হতে চাই কেবল একজন মানুষ !
আমি ক্রিস্টফার রোদ্রিক্স গোমেজ,
আমি সেই খ্রিস্টানদের দলভুক্ত নই –
যে খ্রিষ্টান আক্রমন করে কোন হিন্দু, মুসলিম, হিহুদী, বা বৌদ্ধকে –
কারণ আমি হতে চাই কেবল একজন মানুষ !
আমি সুধাংশু-হুমায়ুন-অচিন্ত্য-ক্রিস্টোফার,
আমি সেই বাঙালিদের দলভুক্ত নই –
যে বাঙালি আক্রমন করে কোন সাঁওতাল – আজং- গারো বা চাকমাকে –
কারণ আমি হতে চাই কেবল একজন মানুষ !
আমি আচং প্রু – সুমিত চাকমা – সমীর সাংমা,
আমি সেই পাহাড়িদের দলভুক্ত নই –
যে পাহাড়ি আক্রমন করে কোন বাঙালিকে –
কারণ আমি হতে চাই কেবল একজন মানুষ !
আমি হুমায়ুন, সুধাংশু, অচিন্ত্য, ক্রিস্টোফার, আচং, সুমিত ও সমীর !
আমি অপেক্ষায় আছি –
কবে আসবে সেই শুভদিন –
যেদিন আমার পরিচিতি হবে – আমি কেবল একজন মানুষ !
যেদিন আমার নামটি হবে ধর্ম-নিরপেক্ষ –
আমার নামটি হবে কেবল একজন মানুষের নাম !
কারণ আমি যে হতে চাই কেবলই একজন মানুষ !
৯ জানুয়ারী, ২০১৪
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের সূক্ষ্ম সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত আর কালো চিন্তার প্রতিফলন অথবা অভূতপূর্ব ফলাফল দ্বি-জাতিত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভাগ । ইতিহাসের চড়াই-উতরাই থেমে ছিল না এক মুহূর্তের জন্য । কত কি ঘটে গেল । ৭১ এল ; আমাদের স্বাধীনতা এল । আজ ২০১৪; পেছন ফিরে সেই ৪৭ এর দিকে তাকালে দেখি পেরিয়ে এসেছি প্রায় ৬৭/৬৮ বছর। দুঃখ জনক হলেও বলতে হয় আমরা আজও বাঙ্গালী বা বাংলাদেশী হতে পারিনি! আমরা এখনও হিন্দু-মুসলমানই রয়ে গেলাম ! আমরা এখনও মানুষ হতে পারিনি; ব্রিটিশরা যেভাবে আমাদেরকে নিম্ন শ্রেণির কোন প্রাণী হিসেবে মুল্যায়ন করত আমরা এখনও সেই নিম্ন শ্রেণির প্রাণীতেই রয়ে গেলাম । কেননা নিম্ন শ্রেণির প্রাণী ব্যাতিত কোন মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয় নির্বিচারে মানুষ হত্যা, মানুষের স্বপ্ন হত্যা এবং মানুষের সর্বস্ব অতি আনন্দের সঙ্গে ধ্বংস করে দেয়া । অবশ্য নিম্ন শ্রেণির প্রানিদের সাথে এদের তুলনা করার ক্ষেত্রে বরং ঐ প্রাণীরাই যে লজ্জিত হবে এ কথা বলাই বাহুল্য । তাই এদেরকে শুধু রুখে দেয়া নয় বরং এদেরকে নিঃচিহ্ন করার শপথ নিতে হবে ।
@রোমেন রুমি,
হা হা হা………… এতদিন পরও সবকিছুর জন্য ব্রিটিশদের দোষ দেওয়া একপ্রকার জাতিগত মনোবৈকল্য……… সুতরাং চিন্তা করে…
মালাউন শব্দটা আরবি মালউন শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ অভিশপ্ত।
এই লেখার সাথে আপনার হৃদয়ে একাত্তর – বাবার মুখ , লেখাটার লিংক থাকা উচিত প্রদীপ দা। কোন নরকের অগ্নিকুণ্ডের মধ্য দিয়ে আপনাদের যেতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে জানা দরকার সবার।
আগুন লেগেছে রক্তে মাটির গ্লোবে
মানুষের হাতে হত্যার অধিকার?
পুষ্পের নিচে নিহত শিশুর শব,
গোরস্থানেও ফসফরাসের আলো
অর্জুন সবে স্বপ্নের সম্ভবে,
আগুন লেগেছে রক্তে মাটির গ্লোবে।
(উন্নত হাত – নির্মলেন্দু গুণ)
আপনার লেখা টি পড়ে মনে পড়ে গেল গভীর বেদনায় আমার লেখা একটি কবিতা কবিতার কথা
অশান্তির তাণ্ডবে কাঁদে মা জননী
সংসারে অভাবের তাড়নায় চন্দ্রমল্লিক যখন হরতাল আর অবরুধ ভেঙ্গে খুলতে গেল তার ঝির্ন শির্ন মুদীর দোকান
তখনই লুটহল সব
ধর্মিও বিষাক্ত গ্যসিও আগুনে পুড়ে গেল রাত্রি জাপনের শেষ আশ্রয় টুকুও
এবার কোথায় যাবে চন্দ্রমল্লিক ?
আট বছরের শিশু কন্যাটি ধর্ষীতা হবার ভয় তার
দুবছরের পুত্রসন্তানটি কটিন শীতে নিউমুনিয়ায় মারা যাবার আশঙ্কা, অসুস্থ স্ত্রি আর অভাবে নিশ্য
চন্দ্রমল্লিক কোথায় যাবে এখন ?
সে এখন আত্নহত্যা করেও পাবেনা শান্তি
সারা বাংলাদেশ জুড়ে অশান্তির তুফান
লণ্ডভণ্ড করে দিরে যায় অনাহারি মানুষের মুখের খাবর, বাসস্থান ,মা হারা শিশুর বেঁচে থাকার স্বপ্ন !
কি অপরাধ ছিল ঐ শিশুটির বোমার আঘাথে ওড়ে গেল দুহাতের কবজি
কি অপরাধ ছিল ঐ ভেন চালকের
কি অপরাধ ছিল ঐ ট্রাক চালকের
কি অপরাধ ছিল ঐ বাস চালকের
কি অপরাধ ছিল ঐ ট্রেনের ভেতরের যাত্রী গুলীর
তারাত নিতান্ত পেটের দায়ে বের হয়েছিল অনাহারি অই দুধের শিশুটির মুখে তুলেদেবার জন্য এক চামচ নরম খাবার ।
অশান্তির তাণ্ডবে কাঁদে মা জননী
জন্ম দিয়েছ আমাদের দুষ করনি
তবে কেন আজ তোমার বুকে এত বোমা হমালা ?
কেন তোমাকে আজ করা হচ্ছে বর্বর অত্যাচার ?
আজ তবে কেন তোমার সবুজ চাদরে ককটেলের আগুন ?
আজ কেন তুমি ঝর ঝরিত?
আজ কেন তুমি আহত ?
আজ কেন তোমার চোখ বিজে যায় জলে ?
দুঃখিনী মা আমার তোমার চোখের জল ছুয়ে শপথ করছি মা
আর তোমার বুকের জমিনে করতে দেবনা কোন দেশ দ্রোহীর ষড়যন্ত্র চাষ
আমরা অদের করব শর্বনাস
বইয়ে দেব দেশে এক শান্তির সুবাতাস ।
কারা যে প্রকৃত “মালাউন” বা লানতপ্রাপ্ত; অভিশপ্ত; বিতাড়িত; শয়তান তা আশা করি একটু চিন্তা না করলেও এমনি এমনি বুঝতে পারার কথা। কিন্তু পাগলের সুখ মনে মনে। তারা নিজেকে ছাড়া বাকি সবাইকে অসুস্থ মনে করে। কিন্তু প্রকৃত সত্যি হল যে ফেরাউনকে এতো গালি দেয় এই প্রকৃত মালাউনরা সেই ফেরাউনের চুল সমতুল্য জ্ঞান রাখেনা। রাখলে মালাউন গালি আয়নার সামনে দাড়িয়ে দিত।
ধ্বংস হল প্রকৃত মালাউনদের কালো অমানুষের হাত; ভোঁতা হোক তাদের দুর্গন্ধযুক্ত মুখ।
মালাউন শব্দের আভিধানিক বা ধর্মীয় মানে জানার পরে কেন এই শব্দ ব্যাপক হারে নির্দ্বিধায় ব্যাবহৃত হয় বুঝেছি। ভাল মন্দ, উদার সংকীর্ন সব গ্রুপের সদস্যের মাঝেই থাকে, ধারনা ছিল তেমন কিছু। বাংলার হিন্দুরাও এক সময় যবন ম্লেচ্ছ এ ধরনের শব্দ ব্যাবহার করত, পশ্চীম বংগেও সম্ভবত এসবের ব্যাবহার এখন আর হয় না। সে কারনে ধারনা ছিল যে আমাদের দেশ থেকেও শিক্ষা দীক্ষার প্রসারের ফলে এসব বন্ধ হবে।
প্রকৃত মানে জানার পর বুঝতে পেরেছি এই শব্দের ব্যাবহার আদৌ কোনদিন বন্ধ হবে এমন আশা করা বাতূলতা মাত্র, কারন এই শব্দ পূর্ন ধর্ম সম্মত যার সাথে কোন আপোষ করা যাবে না। সাময়িকভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন হট ইস্যু হিসেবে বাজারে থাকলে এর ব্যাবহার হয়ত কিছুটা স্থগিত রাখা হবে কৌশলগত কারনে। সাম্প্রতিক সময়ের মত নগ্ন হামলা হলে তখন মানবাধিকারের ঢেউ দেখা যাবে, ধর্ম এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সমর্থন করে না তার ভুরি ভুরি প্রমানও অনেকে দেবেন। শুধু ধর্মের নামে যে বিভাজন, ঘৃনা ছড়ানোর যে সংস্কৃতি চালু আছে তার বিরুদ্ধে কেউ রাও কাড়বেন না।
কোন জাতি গোষ্ঠীকে হীন বিবেচনা করা, তাদের সম্পর্কে প্রকাশ্যে ঘৃনা বিস্তার করায় কোন সাম্প্রদায়িকতা নেই, সাম্প্রদায়িকতা হয় তখনই যখন তাদের ওপর হামলা করা হয় তখন। যার সমাধান আশা করা যায় জামাত নির্মূল হলেই হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী হিন্দুরা এখন আক্ষরিক অর্থেই পুকুরের মাছ। অত্যাচারিত অগ্নিদগ্ধ অনেক হিন্দুই নাকি প্রাণ বাঁচাতে সেদিন পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। সাকা ও তার মতন ঈমানদার মানুষেরা হিন্দুদের শখ করে পুকুরে মাছের মত পুষতে পারে। আবার ইচ্ছা করলে তাদের বারবিকিউও বানাতে পারে পুড়ে পুড়ে।
@তামান্না ঝুমু,
পুকুরের মাছ তাও ত জালে ঢোকার আগ পর্যন্ত স্বাধীণ, আর হিন্দুরা জন্ম থেকেই পরাধীণ।
@কাজি মামুন,
তাদের জলে কুমীর, ডাঙায় বাঘ।
@তামান্না ঝুমু,
আকাশেও শকুন।
সেই বীর পুঙ্গবদের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, এদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠী কি এদেশের আলো-বাতাস, আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, অধিকার বহির্ভূত নাকি? দেশ ও দেশের অন্য ধর্মাবলম্বী জনগনের মতো এরাও কি স্বাধীন নয় নাকি? ধর্মীয় পরিচয় কেনো, আমাদের জাতীয় পরিচয়ে আমরা পরিচিত নই কেনো?
মানবজন্মের এই এক অভিশাপ। বিজ্ঞান-গণিত-সৃষ্টি-সুন্দর নিয়ে মেতে থাকার বদলে কেউ কেউ কী নিকশ অন্ধকারের চাষ করছে নিজের ভিতর! আর তাতেই বার বার হোচট খাচ্ছি আমরা।
এই লেখাটা কাউকে লিখতে হলো বলে প্রচণ্ড খারাপ লাগছে।
একদিন মানুষ এই আঁধার কাটিয়ে উঠবে।
@তানভীরুল ইসলাম, আমরা এত সপ্ন দেখতে পছন্দ করি কেন?
মালাউন শব্দের অর্থ পড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমি একবার এক জায়গায় মালাউন গালি ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় একজন ব্যাখ্যা দিল মালা যারা পড়ে তারা ই তো মালাউন। কি কৌশলী গোজামিল!
@গীতা দাস,
আপনাকে তো দেখি ভাল হাইকোর্ট দেখিয়েছিল :)) । আপনি আসলেই এতদিন এই শব্দের মানে জানতেন না?