তিনি নাজিল হন রাত গভীর হলে। আলোতে তাকে দেখা যায়না। তার প্রিয় হল অন্ধকার। পবিত্র ভুতানী অন্ধকার। অন্ধকার যত গাঢ় হয়, তাকে তত পষ্ট দেখা যায়। তিনি নিরাকার। তিনি সর্বত্র বিরাজিত ভুতেশ্বর। তাকে দেখতে পাওয়া খুবই ভাগ্যার ব্যাপার। যার তার সাথে তিনি দেখা দেন না। মদন তার অতি প্রিয় বন্ধু ও কারবারী, তাই মদন চাইলেই তিনি নাজিল হন। তিনি সর্বত্র থেকে মুহুর্তে একত্র হন। তারপর আমায় দেখা দেন। সেদিনও দিলেন। দেখা মাত্র তার নির্ধারিত শ্লোক আওরালামঃ ‘ভুতেশ্বর ছাড়া বাকী সব ভুত ফালতু। মদন তাহার একমাত্র ঠিকাদার’।
ভুত বাবা খুশী হলেন না। মেজাজ মনে হয় খুব খারাপ। বললাম- বাবা, রেগে আছেন?
তিনি কোন কথা বললেন না। আবার আওরাতে শুরু করলাম-‘ভুতেশ্বর ছাড়া বাকী সব ভুত ফালতু। মদন তাহার একমাত্র ঠিকাদার’ ; ‘ভুতেশ্বর ছাড়া বাকী সব ভুত ফালতু। মদন তাহার একমাত্র ঠিকাদার’; ‘ভুতেশ্বর ছাড়া ……
তিনি হাত উচু করে থামিয়ে দিলেন। আমি ঢোঁক গিললাম। ‘আজ কতবার শ্লোক পরেছিস?’
কতবার পরেছি? কী উত্তর দেবো? আজ তো মনে হয় পড়িই নাই।আজ সারাটাদিন কাটিয়েছি বিধর্মী মধুমালার সঙ্গে। মধুমালা আমাকে নরকে নেবে। সেও নরকবাসী হবে। আমার নরকের সঙ্গি। সাত সকালেই তার ফোন পেয়েছিলাম।
-মদন, শাহবাগে চলে, আয়।
-কেন, আজ তোর অফিস নেই? কাজ কাম নেই, শাহবাগে বসে আছিস?
ক’মাস হল সে একটা চাকরী নিয়েছে। একটা গার্মেন্টস কোম্পানিতে জুনিয়র কমার্শিয়াল। বেতন বলার মত কিছু না, মা ছেলের চলে যায়। আসছে জানুয়ারীতে ছেলেকে স্কুলে দিতে হবে। পয়সাও কিছু জমাতে হবে। আমি কিছু টাকা পয়সা দিতে চাইলে নেয়না। বলে- ‘ভুতের পয়সায় মুতি’। খুবই বেধার্মিক, বেতমিজ আর বে-ভুত মেয়েছেলে। কবে যে তার উপর ভুতের গজব পড়বে? ভুত অতি উত্তম গজব প্রদানকারী।
পুবালী ব্যাংকের গেটের সামনে তাকে পেলাম।সে যখন খুব ব্যস্ত থাকে, তাকে খুব অদ্ভুত দেখায়। তার ছিপছিপে শ্যামলা শরীর পূবালী বাতাসে উড়ে চলা ঘন মেঘের মত সহসা বিদ্যুৎ হানে।
বললাম- মেঘমল্লিকা, আজ কি ভাসাবে মদনের দুনিয়াদারী।
-পিরিত বন্ধ কর। রিক্সায় ওঠ।
মানুষ গিজগিজ করছে ঢাকা মেডিক্যালে। বেড গুলিতে জায়গা নাই। অনেককে মেঝেতে শোয়ানো হয়েছে। আহত আরও আসছে। একেক জনের শরীরে হাজার হাজার স্প্লিন্টার। কারও চোখ উড়ে গেছে। হাতের কব্জি উড়ে গেছে পাচ বছরের এক শিশুর। সে আর কোনদিন আইসক্রিম ধরে খেতে পারবে না।
কেউ নতুন ভর্তি হচ্ছে। কেউ ভর্তি হয়ে কাতরাচ্ছে। কারও কাতরানি থেমেছে। পাড়ি দিয়েছে ভুতেশ্বরের কাছে। মানুষ তাও বিশ্বাস আনে না। বড় বেঈমান মানুষ!
লাইন ধরে রক্ত দিলাম। অনেকেই এসেছে রক্ত দিতে। দিচ্ছে। কিন্তু যথেষ্ট নয়। আরও রক্ত লাগবে। এত রক্ত ভুতেশ্বররে রাজ্য মিলবে না। শরিরের অঙ্গ দান মহা পাপের বিষয়। বাচা মরা ভুতের হাতে। ভুতের উপর ভুতগিরি ভুতশ্বরের না পছন্দ।
তবুও রক্ত দিতে হল। মধুর কথা ফেলতে পারিনা। মধুমালার অবাধ্য হবার সাধ্য নেই মদনের।
বিকেলে মধুর সাথে ব্যাংকে গেলাম। তার সেখানে কাজ ছিল। কয়েকটা ডকুমেন্ট এসেছে। র-ম্যটেরিয়ালস পড়ে আছে পোর্টে। ডেমারেজ খাচ্ছে। আগামী তিন সপ্তার মধ্যে এই শিপমেন্ট করতে না পাড়লে তাদের কম্পানির তিন হাজার শ্রমিকের বেতন হবে না। মধুকে খানিত অসহায় মনে হল।
মধুর জন্যে খারাপ লাগল। কিন্তু বাকী তিন হাজারের জন্যে না। তারা মুলত নারী শ্রমিক। নারীদের কেন বেতন পেতে হবে? তাদের কাজ স্বামীদের টাকা পয়সা হিসেব রাখা।
ঐ ব্যাংকের সিনিয়র ক্যাশিয়ার মতলব আলি ভুতেশ্বরের দারুন ভক্ত। বছর তিনেক আগে এ টি এম বুথে জাল নোট সরবরাহের একটা মিথ্যে মামলায় ফেসে গিয়ে চাকুরী যায় যায়। শেষে ভুতবাবার কৃপায় আর একজন ডাইরেক্টর সাহেবে সুপারিশের সুবাদে টিকে গেছে।সেই থেকে সে নিয়মিত ভুতের চাদা দেয়। আজও দিল। আমার পকেট স্বর্গিয় কৃপায় ভরে গেল।
ব্যাংক থেকে বেরিয়ে ছুটলাম টঙ্গি। মধুদের ফাক্টরিতে। আজ কেন জানি মধুর নেশা ধরে গেছে। সে যেখানেই যায়, তার সাথে যেতে হবে। মধু অবশ্য মানা করেছিল। কিন্তু আমি বললাম- রাস্তা ঘাটের অবস্থা ভাল না। আব্দুল্লাহপুরে বাস পূরানো হচ্ছে। আজকে ঢাকায় টার্গেট আছে তিনটি, দুটি পুরেছে, আরও একটি পুড়বে। আমি তোর সাথে থাকি।
-আমার সাথে কেন?
-যদি পুড়ি, দুজনে একসাথেই পুড়ব। এক চিতায় মধুমালা আর মদন কুমার!
-তোর ভুতবাবা মাইন্ড করবে না!
-করুক। মধুমালার জন্যে আমি পুড়তে পুড়তে নরকে যাব। সেখানেও পুড়ে পুড়ে মদন শুধু মধুর হবে। আর হিংসার আগুনে পুড়বে ভুতেস্বর!
-বাসের জানালা দিয়ে একচিলতে ম্রিয়মান রোদ্দুর মধুমালাকে ভরিয়ে দিল।তার চিবুক ছুয়ে দিয়ে বললাম- তুই আমাকে ভাসিয়ে দিলি মধু।
ভুতেশ্বর বললেন- ঐ বেধর্মি মেয়েটা যখন এতই যাদু মন্ত্র করেছে, তাকে হরন কর। হরন করে ইচ্ছে মত ভোগ কর। বেধর্মি নারী ভোগ করতে তো আর আমি বারন করিনি। তারে বান্দী বানিয়ে রাখ। বান্দির গর্ভে যা জান্মাবে তা হবে তো দাস। ইচ্ছে করলে তাকে রাখতেও পারিস, কিম্বা বেচতেও পারিস।চউদি দেশে বেচলে ভাল দাম পাবি। অযথা ভুত রাজ্য অশ্লিলতা ছড়ানোর মানে কী ?
-মধু কে হরন করতে পারব না।
-কেন?
এর উত্তর কী দেব। এই সর্বজ্ঞানী ভুতেশ্বরকে কে বলে দেবে ভালবাসা হরন করা যায় না।
মদনের রসালো কথন,
ভালো লাগলো রম্যযাত্রা,
শুভ কামনা জানবেন !
@বলন কাঁইজি, ধন্যবাদ। শুভকামনা।
খুব সুন্দর একটা গল্প,আমার ভাল লেগেছে। বিভাগে রম্যগল্প লেখা হলে এটা আসলে একটা সূক্ষ্ম ম্যাসেসওয়ালা গল্প।এত সুন্দর একটা গল্প অথচ এত কম বার পঠিত হওয়ার কারণ বুঝতে পারছি না।
@প্রাক্তন আঁধারে, মেসেজটা খুব পরিস্কার। চারিদকে ছড়িয়ে আসে অগনন মদন। যাদের মস্তিস্ক আছে, আছে যুক্তিবোধ, সৌন্দর্য্য চেতনা। অথচ সে আটাকা পড়ে আছে প্রগৈতিহাসিক বদ্ধতায়। সারাক্ষন সে যুদ্ধ করে নিজের ভিতরে ১৮০ ডিগ্রী কৌনিক বিন্নাসে!
মধুমালা হল পৃথিবী আর তার নান্দনিকতা। মানুষ ফিরবেই নান্দনিক ভালবাসায়।
সুন্দর মান্তব্যে জন্য ধন্যবাদ।
মদনার বালিকা বান্ধবী’রে খুবই পসন্দ হৈসে; শাব্বাস , ত্যাজ আছে (F)
মদ্নারেও দিলাম একখান (W) সত্যকথনের জৈন্ন্য
হাহ , তিন হাজার, ব্যাতন , ব্লা ব্লা; সবকিছুর মালিক তো ভুতশ্বরেরই, কে ব্যাতন পাইলো না পাইলো তাতে খেদমতকারীদের কি বা আসে যায়। মালবাবুদের মত খ্যাদমতকারীরা ইতরদের হিসাব দিয়া কি করব। ক্ষ্যামতার হিসাব পাইলেই চল্ব। শ্রমিক মানে দ্যাশের মালিক; নারী মানে রোজগারী মালিক, এদের ভুজুং ভাজুং দিয়া বল্লেই তো হৈল; তোমাদের সকল কিছুর মালিক ভুতশ্বর; এম্বেই দাও আর অম্বেই দাও; ডাজ নট ব্যপার (H)
শফিবাদিরা নারী অর্জিত তেতুলই শুয়ে বসে খাচ্ছে আর ৭২ রকম স্বপ্ন দেখে লুঙ্গি নাপাক করছে; কিসের মধ্যে কি; অস্তাগ্ফেরুল্লা 😕
হ্যা; জনসমক্ষে ভুতশ্বরের লুঙ্গিহরন, ক্যামনে পছন্দ হপে? :-s
@কাজী রহমান, আপনি যতক্ষন আমার লেখা না পড়েন, ততক্ষন মনে হয় কে যেন পড়েনি।
বেশী পছন্দ হইলে আবার বিপদ! লালা পড়ছে নি, কাজীদা? লালা পীররে খবর দেই?
এই তেতুলেরাই একদিন ঝামা ঘসে দেবে শফিবাদীদের মুখে।
ঈশ্বর অনেক আগেই লুঙ্গি হারিয়েছেন।তার কোন কেরামতি এখন আর কাজ করছে না। গজব তত্ব ক্রমাগত ফেল মারেছে। ফিস প্লেট না খুলা পর্যন্ত একটা রেলগাড়িও ফেলতে পারেন না এই দিগম্বরেশ্বর!
@মুরশেদ,
আরে হগল পীরের খবর খারাপ; ওরা নানান চাপের ভিত্রে আছে
এক্কেবারে দশে দশ
হা হা হা, তাইলে প্রমান হৈল হ্গলেস্বরই চাপাবাজ; মধুবালার সমান ত্যাজও নাই।
ন্যান, আপনের জন্য ডবল চিনি দিয়া (C)
গল্পটা ভাল হয়েছে। 😕
@তারিক, ধন্যবাদ, পড়ার জন্যে।