দোহাই-
আমি খুবই ইমপ্র্যাক্টিক্যাল মানুষ। সেদিন হঠাৎ খেয়াল করলাম এত বছর যা কিছু বলেছি-লিখেছি যা কিছু নিয়ে চিন্তাভনা করেছি তার কোনো কিছুই কোনো প্র্যাক্টিক্যাল মানুষের কোনো কাজে আসেনি। বরং ছোঁয়াচে অসুখের মত সেসবের সংস্পর্শে এসে কেউ কেউ আরো ইম্প্যাক্টিক্যালতর হয়ে উটেছে। দেশ-জাতির তাতে কী ক্ষতিবৃদ্ধি হয়েছে সেটা না হয় সময়ই বলুক। কিন্তু আমার তাতে খুব লাভ হয়েছে। ইমপ্র্যাক্টিক্যাল অনেক মানুষের সাথে পরিচয়-হৃদ্যতা হয়ে গেছে। নক্ষত্র-খচিত আকাশের নিচে বসে যাদের কেউ কেউ স্বপ্ন দেখে এমন একটা পৃথিবীর যার সবগুলো নগর গড়ে উঠেছে একেকটা লাইব্রেরীকে কেন্দ্র করে…
এই দুঃসহ সময়ে, এটাও তেমনই একটা ইমপ্র্যাক্টিক্যাল লেখা। কারণ দেশ যাচ্ছে গোল্লায়, আর আমি লিখতে বসেছি “গরীব দেশের মহাকাশ গবেষণার কী দরকার?” এইটাইপের কথাবার্তা। যাক গিয়ে মূল লেখা শুরু করি।
—-
১)
যতই দিন যাচ্ছে একটা জিনিস আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠছে। “জগৎ এ যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যানকর” তার কোনোটাই নারী বা নররা করেনি। করেছে শিশুরা। (স্যরি, কাজী নজরুল ইসলাম।) কেন এই সিদ্ধান্ত? গ্রীক পণ্ডিত ইরাটোথেনিসের কথাই ধরুন। সে তখন থাকে জ্ঞানবিজ্ঞানের কেন্দ্র মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়া-তে। পৃথিবী যে গোলকাকৃতির সেই ধারনা ততোদিনে পিথাগোরাস, অ্যারিস্টোটলের হাত ধরে চিন্তাবিদমহলে বেশ গেড়ে বসেছে। কিন্তু এই গোলোকের মাপ কত সেটা কেউ জানে না তখনো। এমন সময় ইরাটোথেনিসের কাছে এক ব্যক্তি চিঠি লিখে জানালো যে বছরের দীর্ঘতম দিবসে, মিশরের আসওয়ান নগরীতে সূর্য একেবারে মাথার উপরে থাকে। কারণ ঐ ব্যক্তি একবার তেমন সময়ে কুয়ার নিচে তাকিয়ে সূর্য দেখতে পায়নি। কারণ সেটা এতটাই উলম্ব ভাবে ছিলো যে তার নিজের মাথাটাই কুয়ার তলানি আর সূর্যের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধারণা করি, ঐসব মরূর দেশে, কুয়া অনেক গভীর হয়, এবং পানির লেভেল হয়তো কয়েক তলা নিচে থাকে। তাই কুয়ার তলায় কোনো কিছুর বিম্ব সৃষ্টি হতে হলে জিনিশটাকে আসলেই একেবারে উলম্ববরাবর হতে হবে। যাই হোক, চিঠি পেয়ে ইরাটোথেনিস ভাবলো, মজার ব্যাপার তো! সেই থেকে সে তক্কে তক্কে রইলো, আর পরের বছরের দীর্ঘ্যতম দিনে গিয়ে হাজির হলো বাড়ির পাশের কুয়ার তলাটা ভালোমত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে। ঐ চিঠিপ্রদানকারীর কথা মত, তার মাথাটাও সূর্য আর সূরযের বিম্বের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু ঐ যে একটু পাশেই জলজ্যান্ত সূর্যটা দেখা যাচ্ছে! তাহলে কি ঐ চিঠি প্রদানকারী ভূল লিখলো?
কথিত আছে এরপর সে আসওয়ান নগরীতে লোক পাঠিয়ে এই কুয়া-ঘটনা প্রত্যক্ষ করিয়েছে। এবং সেটা চিঠির সত্যতাকেই সাপোর্ট করে। শুধু সে চিঠির সত্যতাই যাচাই করায়নি, লোকজনকে পায়ে হাটিয়ে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে আসওয়ানের দুরত্বও মাপিয়েছে। বোঝাই যায় যে পৃথিবী গোল হয়ে থাকলে, বছরের একই সময়ে সব জায়গায় সূর্য মাথার উপর লম্বালম্বি থাকবে না। কিন্তু কতটুকু দূরত্বে সূর্য কত ডিগ্রি হেলে যাচ্ছে, সেটা থেকে হিসেব করে ইরাটোথেনিসই প্রথম পৃথিবীর পরিধি হিসেব করে ফেলে।
এখন এই ঘটনাকে আমার প্রথমোক্ত “শিশুতত্বের” আলোকে দেখা যাক। যেমন ধরুন যে ব্যক্তি চিঠি লিখেছে, সে পারিবারিক-সামাজিক-রাজনৈতিক-আর্থিক-শারীরিক নানান রকম সমস্যা নিয়ে লিখতে পারতো। কিন্তু লিখেছে, কুয়ার তলায় সূর্য কেন দেখা যাচ্ছেনা তাই নিয়ে। এবং বয়সে যে সে শিশু নয় সেটা সহজেই অনুমেয়। আবার সেই চিঠি পেয়ে ইরাটোথেনিসও, নিজের কুয়ার তলাটা চেক করতে চলে গেছে। এবং সূর্যের বিম্ব কেন ঠিক মাথার উপর নাই সেই ইনভেস্টিগেশন করতে তুলকালাম বাধিয়ে ফেলেছে! এবং রীতিমত লোক-লস্কর, জ্যামিতি-ত্রিকোনোমিতি খাটিয়ে পৃথিবীর পরিধিই বের করে তারপর সে ক্ষান্ত হয়েছে। বোঝাই যায়, ইরাটোথেনিস আর তাকে চিঠিপ্রদাণকারী দুজনই, তাদের বয়সকে ফাকি দিয়ে নিজের মধ্যে একটা শিশুকেই লুকিয়ে রেখেছিলো।
(উল্লেখ্য সীভ অফ ইরাটোথেনিস নামের মৌলিক সংখ্যা বাছাই করার একটা চমৎকার পদ্ধতিও তার আবিষ্কৃত।)
মেন্ডেলের কথাই ধরুন, পাদ্রী মানুষ। ধর্মকর্ম নিয়ে থাকবে। তা না, বাবা মটরশুটি আর মা মটরশুটির ফুলের রং কেমন হলে বাচ্চা মটরশুটির ফুলের রং কি হবে তাই নিয়ে খেলাধুলা করতে করতে বংশগতিবিদ্যারই সুচনা করে ফেলল। আইনস্টাইন তো আলোর তরঙ্গমূখের উপর চেপে বসলে দুনিয়াটা কেমন দেখাবে তাই নিয়ে ভাবতে ভাবতে বের করে ফেললো আপেক্ষিকতার তত্ব।
সাম্প্রতিক লিওনার্দ সাসকিন্ডের ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স লেকচার সূত্রে দারুণ একটা ব্যাপার জানলাম। ক্লাসিক্যাল থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম মেকানিক্স, স্ট্রিং তত্ত, কসমোলোজি, কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রোডাইনামিক্স সবকিছুর মৌলিক সমীকরণই, ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান আর হ্যামিল্টনিয়ান নামক দুই ধরণের গাণিতিক কাঠামোতে ফেলে দেওয়া যায়। সেই ষোড়শ শতাব্দীতে অয়লার আর ল্যাগ্রাঞ্জ যখন তাদের অয়লার-ল্যাগ্রাঞ্জ সমীকরণটা বের করে তখন ভবিষ্যতে এই গণিত যে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবিষ্কারে চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়াবে তা তাদের পক্ষে ধারণা করা সম্ভব ছিল না। এমনকি তারা যখন ক্লাসিক্যাল মেকানিক্সের ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান ফর্ম নিয়ে খেলাধুলা করছিলো, তখন সেটার কোনো প্যাক্টিক্যাল মোটিভেশন ছিলো না। নিউটনের তিনটে সূত্র আর তার সমীকরণ দিয়েই দুনিয়াটা দারুণ চলছিলো। তারপরেও তারা, এই চমৎকার গাণিতিক ফ্রেমওয়ার্কটা তৈরি করেছে স্রেফ খেলাচ্ছলে। সমীকরণগুলোর অপরূপ সৌন্দর্য ছাড়া বাড়তি আর কিছু পাবার আশা না করেই। (আসলে তারা টাউটক্রনে প্রবলেম নামক একটা পাজল সল্ভ করতে চেষ্টা করছিলো যেখানে এমন একটা বক্র তল খুঁজে বের করতে হবে যার যে অংশ থেকেই বল গড়িয়ে দেওয়া হোক না কেন, গড়িয়ে পড়তে একই সময় লাগে)
বিজ্ঞানের বড় যে কোনো আবিষ্কার, উদ্ভাবন, ধারণাগত বিপ্লবই দেখা যাবে খেলাচ্ছলে ঘটা। (বড় বড় শিল্পকর্মেও তাই) কোনো একজন গ্রোন-আপ মানুষ আর দশজনের মত, বাজার- আটা- তেলটা- নুনটা দিয়েই নিজের জগৎটাকে ঘিরে না ফেলে, স্রেফ শিশুসুলভ কৌতূহল মেটাতে গিয়ে এগিয়ে নিয়েছে পুরো সভ্যতাকেই।
আর এ কারণেই বিজ্ঞান গণিত এইসব জিনিসকে “ইয়ং ম্যান্স গেইম” অভিধা দেওয়া হয়। কিন্তু মানুষের বয়স বাড়ে স্রেফ বছর পেরোলেই না। বরং একটা মানুষের বয়স তার জীবনের ট্রাজেডির সমানূপাতিক। ভাগ্যের ফেরে খুব কম বয়সেই কেউ কেউ তার শৈশব হারিয়ে ফেলে। আর কারো কারো ভিতরে একটা শিশু জিইয়ে থাকে আজীবন। নিজের ভিতরে একটুকরো শৈশব বেঁচে না থাকলে কারো পক্ষেই সৃষ্টিশীল হওয়া সম্ভব না। উৎপাদনশীল হওয়া সম্ভব? হ্যাঁ। সৃষ্টিশীল? না।
খুব ট্রাজিক ঘটনার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতেও সৃষ্টিশীলতাকে ধরে রেখেছে দেখি আমরা যাদেরকে, তাদের জীবনী খেয়াল করলে দেখা যাবে, তারা দুঃখ-কষ্ট তেমন একটা স্পর্শিত হতো না। কিন্তু এই ধরণের মানসিক শক্তি সবার থাকে না।
আর এ জন্যই অঞ্জন দত্তের সুরে বলতে হয়, “জানালা দিয়ে আকাশ টাকে দেখ, টিভি দেখ না।” আমাদের টিভি-ফেসবুক-খবরের কাগজ সব যেন দুঃস্বপ্নের আর ট্রাজেডির ভাগাড় হয়ে পড়েছে। না উটপাখি হতে বলছি না। স্রেফ মনে করিয়ে দিতে চাইছি জানালা দিয়ে আকাশটাকে দেখার কথা। তার জন্যে নিয়ম করে খানিকটা সময় টিভি না হয় না-ই দেখলাম। আপনি হয়তো বড় হয়ে গেছেন, বুড়ো হয়ে গেছেন। কিন্তু আপনার মাঝে যে শিশুটা আছে তাকেও বাঁচতে দিন।
২)
গণিত-বিজ্ঞান তাও এদেশে ধুকে ধুকে হলেও কিছু মানুষ শেখে। ওদিকে সামাজিকবিদ্যা, ইতিহাস এইসব অনেক বেশি মানুষ পড়লেও শেখে না সম্ভবত কেউই। নইলে যেকোনো একটা বুদ্ধিমান ছেলে বা মেয়েকে জিজ্ঞেস করুণ দেখুন, সমাজ-ইতিহাস কে স্রেফ একগাদা সাল আর একই ধারনাকে নানান মুনি কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞায়িত করেছেন সেইসব জঞ্জাল মুখস্ত করে উগড়ে দেওয়ার প্র্যাক্টিস হিসাবে জানে। ব্যার্থতা কার সেটা আমরা সবাই জানি। তবে ইদানিং, সেইসব মুখস্ত করা জঞ্জালগুলোর কিছু কিছু অংশ মনে পড়ে,তখন বেশ কৃতজ্ঞতাই বোধ করি। যেমন এই মুহূর্তে মনে পড়ছে নীল চাষের ব্যপারটা। ইংরেজ আমল। কৃষকরা অভাবনীয় শোষণের শিকার হচ্ছে নীলচাষকে কেন্দ্র করে। এই অখাদ্যের বাধ্যতামূলক চাষের কারণে, দেখা দিয়েছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। প্রতিবাদ-মিছিল হচ্ছে, “নীলদর্পণ” নাটক লেখা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কিন্তু নীল ঘটিত এইসব শতকোটি ট্রাজেডির সুরহা হয়ে গেল কৃত্রিম নীলের আবিষ্কার আর তার বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবার পরে। অন্যদের কী মনে হয় জানি না। কিন্তু আমার মনে হয় স্রেফ একটা বৈজ্ঞানিক বা প্রযুক্তিগত আবিষ্কার একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠির ভাগ্যে এবং দুর্ভাগ্যে কী পরিমান প্রভাব ফেলতে পারে, এই ঘটনা তার উৎকৃষ্ট নিদর্শন।
বর্তমান সময়েই খেয়াল করা যাক। ফসিল ফুয়েল, মানে প্রেট্রোলিয়াম ঘটিত কারণে পৃথিবীর কতগুলো দেশ নিদারুণ যুদ্ধবিগ্রহে জড়িয়ে পড়ছে। আমি এই লেখা লিখতে লিখতেই হয়তো কত মানুষ মারাগেলো, কতগুলো শিশু চিরতরে হারালো তাদের শৈশব। কিন্তু কাল যদি রিনিউএবল এনার্জির একটা সমাধান হয়ে যায় তাহলেই এক নিমেশে বন্ধ হয়ে যাবে এই ট্রাজেডি। (অবশ্য মানুষের [বিশেষ করে অমানুষের] উদ্ভাবন ক্ষমতা অসাধারণ, তারা হয়তো শোষণ নিপিড়নের নতুন টার্গেট ঠিকই খুঁজে নেবে।) সমাধান না হবার কিন্তু কোনো মৌলিক কারণ নেই। সূর্য প্রতিদিনই পৃথিবীকে অফুরন্ত শক্তি যোগাচ্ছে। সেই শক্তিকে ঘরে তোলার একটা স্কেলেবল উপায় কেউ না কেউ বের করে ফেললেই হবে। এবং সেটা করার ধারণাগত মৌলিক বাধাকে পার হতে হবে খেলাচ্ছলেই। শক্তিসমস্যা সমাধান করে পৃথিবী উলটে ফেলবো, এইসব মহৎ চিন্তা মাথায় নিয়ে গবেষণা করতে বসলে হবে না। ইতিহাস বলে শিশুসুলভ কৌতূহল লাগবে।
আর তাই একটা সভ্য জাতিকে (সে গরীব হোক বা বড়োলোক) কৌতূহল চালিত গবেষণার পথ রোহিত করলে চলবে না। মহাকাশ গবেষণা করা, বা ধান-পাটের জীন ম্যাপ করা, বা ফার্মার লাস্ট থিওরেম প্রমাণ করা, এইসব আপাত ইম্প্র্যাক্টিক্যাল ব্যাপারগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানবজাতির ভবিষ্যত। যে কোনো তৃতীয় বিশ্বের দেশও সেই ভবিষ্যতের ভাগিদার। কারণ উচ্চতর গবেষণার বোঝাপড়াটা এখনই বুঝে না নিলে একটা দরিদ্র জনগোষ্ঠির দারিদ্র বাড়তে থাকবে ব-ই কমবে না। সামরিক গবেষণা বাদ দিলে, একটা ধুকে ধুকে চলা দেশের খরচের আর অপচয়ের তুলনায়, স্রেফ মানবকেন্দ্রীক – কৌতূহলচালিত গবেষণা প্রোগ্রামগুলোর খরচ যে কত নগন্য সেটা যদি গরীবদেশের মহাকাশগবেষণার বিরোধিতাকারীরা জানতো! অবশ্য “তুই গরীব, খবরদার তুই আকাশ দেখবি না!” যারা বলে তারা না হয় টিভি-ই দেখুক।
লেখাটির কোন প্রেক্ষাপট ছিল মনে হয়।
সুকুমার রায়ের দুটো প্রবন্ধের কথা মনে পড়ে গেল। একটি ছিল “পন্ডিতের খেলা”; তাতে খেলাচ্ছলে বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের বিখ্যাত কিছু আবিষ্কারের কথা ছিল। আরেকটি ছিল আরো মজার, নামটি মনে নেই; সেটি অনেকটা স্বপ্নে প্রাপ্ত মহৌষধ জাতীয়। স্বপ্নের মধ্যে পাওয়া কিছু বড় বড় আবিষ্কারের কাহিনী। বিজ্ঞানী বা ইনভেন্টাররা হয়ত কোন সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করেও সমাধান পাচ্ছিলেন না, ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে কোন আইডিয়া পেয়ে তাতেই সমাধান পেয়ে যান।
মনের ভেতর শিশুর বসবাস খুবই দরকারী।
তানভীরুল,
চমৎকার লেখা! হ্যাঁ বিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কার গুলো কিন্তু খেলাচ্ছলেই। ঐযে তেল নিয়ে তেলেসমাতির কথা বলছিলেন, সেটাও ঠিক মিটে যাবে অচিরেই। সে জন্যে প্রকৃতির উদারতার দিকে আমিও তাকিয়ে থাকি। আকাশটাকে দেখি। তবে কি জানেন, রসায়নবিদরাও আজকাল এগিয়েছেন অনেক। এই আপাতঃ অধরার খুব কাছে বলেই আমার ধারনা। তবে আপনার ব্র্যাকেট বন্দী এই কথাটুকুই হলো ভয়:
গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে সহজ করে কি চমৎকার লেখা। বেশ স্বচ্ছন্দে পড়ে ফেললাম।
‘আমার বিশেষ কোন ক্ষমতা নেই, আমি শুধুমাত্র একজন একাগ্র কৌতুহলী মানুষ’
অথবা
‘কৌতুহল জ্ঞানের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ন’
এলবার্ট আইনস্টাইন এই কথাগুলো এমনি এমনি বলেনি নিশ্চই। খুব সাধারণ প্রশ্ন, নির্দোষ কৌতুহল, জানবার সরল ইচ্ছেগুলোও অন্য কি সব তুচ্ছ্প্রায় কারণেও চাপা পড়ে যায়। বেশিরভাগ মানুষ কেমন যেন একটা সবজান্তা ভাব ধরে বসে থাকে। অদ্ভুত।
ধন্যবাদ তানভীরুল (C)
“নক্ষত্র-খচিত আকাশের নিচে বসে যাদের কেউ কেউ স্বপ্ন দেখে এমন একটা পৃথিবীর যার সবগুলো নগর গড়ে উঠেছে একেকটা লাইব্রেরীকে কেন্দ্র করে” লেখাটা চমৎকার ।কিছু বানান ভুল আছে যদিও । যেমন: দারিদ্র্য, দারিদ্র নয়। সমানুপাতিক,সমানূপাতিক নয়।তবে লেখার উৎকর্ষে বানান ভুলটাকে অগ্রাহ্য করা যায়। পরের লেখাগুলোতে সর্তক থাকবেন আশা করি। 🙂
বিভাগে দর্শন আর ব্লগাড্ডা হলেও লেখাটি বিজ্ঞান নিয়ে।আর আমি বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা এড়িয়ে চলি নিজের বিজ্ঞান নিয়ে অযোগ্যতার কারণে।তবে লেখার শিরোণাম লেখাটি পড়তে উদ্ধুদ্ধ করল।পড়লাম এবং ভাল লাগল।
শিশুমনের কৌতূহলই মানুষকে আবিষ্কারের দিকে নিয়ে যায় ধারণাটি পোক্ত হল।
@গীতা দাস,
দর্শন বলতে বিজ্ঞান বিষয়ক ব্যক্তিগত দর্শন বুঝিয়েছি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 🙂
বহুদিন পর চমৎকার একটি লেখা দেয়ার জন্য অভিনন্দন! আগে নিয়মিত খবরের সাইটগুলো দেখলেও এখন দগ্ধ মানুষগুলোর খবর এত চাপ সৃষ্টি করে যে দেখা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি, আমি খবর রাখলেতো আর হরতালও বন্ধ হবেনা বা মানুষগুলো বেচে যাবেনা, কি দরকার এই চাপ মাথায় নিয়ে নিজের ফোকাস নষ্ট করা!
যেসব মানুষের শিশুমন নেই তারা সবকিছুতে লাভ-ক্ষতি খুজে, সৃষ্টিশীল কিছু করবে কি করে?
@রামগড়ুড়ের ছানা,
সেটাই।
@রামগড়ুড়ের ছানা ভাই,
আমারও খবরের কাগজ বা টিভির খবরে একদম চোখ রাখতে ইচ্ছে করে না। এককালে যে খবর গিলতাম ভাতের মত, এখন সেখানে ভীষন অরুচি!
চমৎকার তানভীরুল।
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সুফলকে কাজে লাগিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর যেকোন মৌলিক আবিষ্কারের পেছনে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁরা মূলত শিশুসুলভ কৌতূহলের কারণেই তা করেছেন। যেমন পল ডিরাককে যখন নোবেল পুরষ্কার দেয়া হলো – সাংবাদিকরা ডিরাককে জিজ্ঞেস করলেন “আপনার কোয়ান্টাম মেকানিক্স জনগণের কী কাজে লাগবে?” ডিরাক সরাসরি উত্তর দিয়েছিলেন – “হয়তো কোন কাজেই লাগবে না। কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে আমি কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে কাজ করছি না।কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিজে যে কাজ করছে তাতেই আমি খুশি।”
শতশত গৎবাঁধা অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার অত্যাচারে আমাদের দেশের শিশুদের শিশুমন বিষিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং তার ফল তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি।
@প্রদীপ দেব,
শিশুদের আজকাল কী যে হয়রানি! ক্লাস ফাইভেই বোর্ড পরীক্ষা। যেখানে পৃথিবীর অনেক দেশে ক্লাস নাইন-টেনে ওঠার আগে পরীক্ষাই নেয় না। বাচ্ছাদের মোরাল নষ্ট হবে বলে। এই শিশুদের কথা ভাবি আর তীব্র হতাশা গ্রাস করে। আমি নিজেই ক্লাস ফাইভ-সিক্সে থাকতে সবগুলো পরীক্ষায় কখনো পাস করতে পারতাম না। এ যুগে হলে কী করতাম!
চমৎকার লেখা এটি। লেখক কে সাধুবাদ।
@শফি আমীন, ধন্যবাদ আপনাকে।
একদম আমার মনের কথা বলেছেন তানভীর। মানুষ যে কেনো বুড়ো আচরণ করে বুঝি না। মনের বয়সটা হচ্ছে আসল বয়স। শারীরিক বয়সকে ঠেকানো যায় না, কিন্তু মনের বয়সকে সম্ভব। ওটাকে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
অনেক দিন পরে অসাধারণ একটা লেখা নিয়ে ফিরে এসেছেন। শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন রইলো। (F)
@ফরিদ আহমেদ,
মনের বয়স বাড়ানো ঠেকানো সম্ভব। তবে খুবই কষ্টসাধ্য। এই কারণেই বেশিরভাগ মানুষই আর পেরে ওঠে না একটা সময়ের পরে। নিজের বয়সই কেমন হু হু করে বেড়ে চলেছে দেখে হতাশ হই।
@তানভীরুল ইসলাম,
কষ্ট সাধ্যের চেয়েও, নিজের ইচ্ছার উপর নির্ভরই বেশি নির্ভরশীল এটি। আপনি যদি নিজে নিজেকে বুড়ো না ভাবেন, আপনার মনের বয়স বাড়বে না। আমি যেমন আমার মনের বয়স তিরিশে স্থির করে রেখেছি মাসুদ রানার মতো। দিন যতই যাক, বছর যতই গড়াক, আমি ওই তিরিশেই থাকবো। নট নড়ন চড়ন। দয়াল কাজী অবশ্য আমার চেয়েও চালু মাস্তান। সত্তর পার হয়ে যাবার পরেও সতেরোতে ঠেকিয়ে রেখেছে তাঁর বয়স, প্রতিদিন টিন এজ কবিতা লিখে লিখে। 🙂
আপনি হতাশ হলেতো, আমার মড়াকান্না শুরু করে দেওয়া উচিত। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
ও তাইতো কই; আমার ফরিদ দাদা কই পলাইলো। ভালো একটা লেখায় আইস্সা গিলটি মিয়া মাসুদ রানা সাইজ্যা; আমার বয়স তিরিশ আমার বয়স তিরিশ করতাসো না? আমারে পচাও ক্যান দাদা? প্যাট ভরা খালি হিংসা। আমার বয়স সত্তর হৈলে তো তুমি দাদা তিহাত্তর। এই বয়েসে এই সব করতে হয় না দাদা। আল্লা আল্লা কর, গোঁফ রাখো, কোবতে লিখো, আঙ্গুর ফল মিঠা মানো, হুদা কামে ভ্যাজাল বন্দ কইরা কৌতুহলী হও। দ্যাহ কি হয় :-[
@কাজী রহমান,
ভালো লেখা সেতো জানি। বলছিও সেটা তানভীরকে। কিন্তু, এই লেখার মূল সুরইতো নিজের ভিতরের শিশু মনটাকে বাঁচিয়ে রাখা। সে কারণেইতো ওজনদার এই লেখায় লঘু মন্তব্য করার সাহস পেলাম। বয়স হয়ে গেছে বলে কি হুতোম পেঁচার মতো সবসময় হাঁড়িপনা মুখ করে গম্ভীর ভাব নিয়ে থাকতে হবে নাকি? আমাকে দিয়ে অন্তত ওটা হবে না।
@ফরিদ আহমেদ,
বুড়াইতো হলো তাহলে ফরিদদা :)) , ১৮ বা ২০ রাখতে পারলে একটা কথা ছিলো!
@রামগড়ুড়ের ছানা,
বুড়া একটা আপেক্ষিক টার্ম রামগড়ুড়ের ছানা। তোমার মতো বাচ্চা ছেলের কাছে আমার মতো মাসুদ রানা বুড়োই হতে পারে, কিন্তু দয়াল কাজীর মতো শুভ্র চুল আর রাজত গোঁফের রাহাত খানদের কাছে আমি ছোকরাই।
গল্প শোনো একটা। আমার তখন বিশ বছর বয়স। সূর্যসেন হলের আধা আবাসিক ছাত্র আমি। আমার বন্ধু এক ফটকাবাজি প্রেম শুরু করেছে ঢাকাইয় কুট্টি মেয়ের সাথে। ওই মেয়ে একদিন তার কিশোরী ছোট বোনকে সাথে নিয়ে হলে এসেছে। আমার বন্ধু এই কিশোরী মেয়েটার সাথে আমার প্রেম করিয়ে দেবার জন্য নানান কথা বলছে তাকে। আমাতে যেন মুগ্ধ হয় মেয়েটা, সে জন্য রাজ্যের ভালো ভালো কথা শুরু করেছে আমার সম্পর্কে। ও খুব ভালো ছাত্র, মদ, গাঁজা, সিগারেট খায় না, কারো সাথে মারপিট করে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়েটা মনোযোগ দিয়ে সব শুনছে। তারপর আমার বন্ধু বলছে যে, ‘ও তোমার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছে। ঠিকমত খায় দায় না, সারাদিন উদাস হয়ে থাকে। দেখো না, বুকের হাড্ডিগুড্ডি পর্যন্ত গোনা যায়। এখন তুমি রাজি হলেই হয়। কি, রাজি তুমি?
মেয়ে আড়চোখে একবার আমার দিকে একবার তাকালো। তারপর ঠোঁটের কোণা বাকা করে বলে যে, ‘হ্যায়তো বুঢঢা।’
আমার বন্ধুর আকাশ থেকে পড়ার দশা। বিস্মিত হয়ে বলে যে, ‘বুঢঢা?’
‘হ, বুঢঢা।’ নির্বিকার স্বরে বলে মেয়েটা।
‘বুঢঢা তো সমস্যা কী হয়েছে? টুকটাক একটু প্রেমইতো করবা, আরতো কিছু না।’ আমার বন্ধু সামলে নিয়ে বলে।
‘বুঢঢার লগে পিরিতের খ্যাতা পুরি আমি।’ মুখ ঝামটা দিয়ে কিশোরী বলে। 🙁
বাহ, বহুদিন পরে তানভীরুলের লেখা!
লেখার থিমটাও দুর্দান্ত।
(Y)
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ। আবার লেখালিখিতে ফেরার প্রচেষ্টা আরকি। কাজের কিছু তো লিখতে পারি না। তাই এইসব আবজাব।